working to establish khilafah

পুঁজিবাদী বাজেট হচ্ছে জনগণের অর্থ পদ্ধতিগতভাবে লুটপাটের একটি হাতিয়ার, যার মাধ্যমে সংঘবদ্ধ লুণ্ঠনের অর্থের যোগান দেয়া হয়

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

পুঁজিবাদী বাজেট হচ্ছে জনগণের অর্থ পদ্ধতিগতভাবে লুটপাটের একটি হাতিয়ার, যার মাধ্যমে সংঘবদ্ধ লুণ্ঠনের অর্থের যোগান দেয়া হয়

১লা জুন, ২০২৩ তারিখে হাসিনা সরকার ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য “উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পর স্মার্ট বাংলাদেশের পথে” শিরোনামে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৭.৬ ট্রিলিয়ন টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন, যা বিগত ২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ১৩.৫ শতাংশ বেশি, এই বাজেটে ৪০টি নতুন মেগা প্রকল্পসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ উল্লেখ করে মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের প্রয়াসের উপর ‘অনুমিতভাবে’ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মিথ্যা বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ক্ষমতাসীন পুঁজিবাদী সরকার এই বাজেটকে আরেকটি প্রতারণামূলক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটের লক্ষ্য হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যার সমাধান এবং তাদের জীবনযাত্রার মান বর্তমান অবস্থা থেকে আরও উন্নীত করা। অথচ বাস্তবে, চলমান অর্থবছরে বাজেট ব্যয় মেটানোর জন্য সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবহার করে অর্থনীতিতে নতুন করে ৭০,০০০ কোটি টাকার প্রচলন ঘটিয়েছে, যা ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করেছে, ফলে ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পেয়েছে। আসন্ন বাজেটেও সরকার ঘাটতি মেটানোর জন্য আবারও ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১৩২,৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা মুদ্রাস্ফীতির অবস্থাকে আরও খারাপ করবে। অধিকন্তু, জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে, কারণ সরকার জনস্বার্থবিরোধী কঠোর শর্তসমূহ বাস্তবায়নের বিনিময়ে বাংলাদেশকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানকারী সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-কে খুশি করতে বদ্ধপরিকর। IMF-এর দেয়া রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির শর্ত বাস্তবায়নের জন্য সরকার ৪.৩ ট্রিলিয়ন টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, এবং এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তারা অভিজাত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের লুটপাট, দুর্নীতি ও নিয়মতান্ত্রিক অর্থপাচার বন্ধ করার পরিবর্তে প্রত্যক্ষ কর (TAX) ও পরোক্ষ কর (VAT) এবং ভর্তুকি প্রত্যাহারের মাধ্যমে জনগণকে নির্যাতন করার উপর অধিক নির্ভরশীল হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তথাকথিত বিদ্যমান মেগা বিদ্যুৎ প্রকল্পসমূহের জন্য মানুষ ইতিমধ্যেই দুঃখ-কষ্টের মধ্যে রয়েছে, কারণ এগুলো বছরে ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ তৈরি করেছে। দেশব্যাপী চলমান লোডশেডিং জনগণের জীবনকে নরক করে তুললেও বিভিন্ন মেগা ‘উন্নয়নমূলক’ প্রকল্পের জন্য গৃহীত বৈদেশিক ঋণের সুদ এবং ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি)-এর সক্ষমতা চার্জ প্রদানের জন্য জনগণকে আরও বেশি পরিমানে কর দিতে হবে। একদিকে, এই প্রতারক মিথ্যাবাদীরা বলছে যে, তারা জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে কর ছাড়ের বার্ষিক সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করেছে, অথচ অন্যদিকে এক বছরে ৩.৫ লাখ আয় না করলেও ২০০০ টাকা ন্যূনতম আয়কর ধার্য করেছে। এছাড়াও, গৃহস্থালিতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে এবং জনগণকে এল.পি গ্যাস ব্যবহারে বাধ্য করে এখন নিষ্ঠুর পুঁজিবাদী সরকার এল.পি.জি সিলিন্ডার তৈরীর কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক অব্যাহতি প্রত্যাহার করেছে এবং রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাটের পরিমান বাড়িয়েছে (৫% থেকে ৭%)। অতএব এখন স্বাভাবিকভাবেই এল.পি গ্যাস কোম্পানিগুলো চলমান ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার সংকটের মধ্যে গ্যাসের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের কাঁধে এই বোঝা চাপিয়ে দেবে।

হে দেশবাসী! এই ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী বাজেটের নামে শোষণমূলক কর চাপিয়ে দিয়ে দরিদ্র মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ লুটপাট করে সেই অর্থ পুঁজিবাদী ও রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থে ব্যবহার করা বন্ধ করবে না, যতক্ষণ না আমরা মানুষের খেয়াল-খুশির ভিত্তিতে গড়ে তোলা এই ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সমূলে উৎখাত করতে সক্ষম হবো। আমরা এই দুর্দশা ও অপমানজনক পরিস্থিতির শিকার হয়েছি, কারণ আমরা আমাদের জীবন থেকে ইসলাম ও এর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বাদ দিয়েছি এবং মানবসৃষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আঁকড়ে ধরেছি। এই ব্যবস্থায় শাসকশ্রেণী তাদের নিজস্ব খেয়াল-খুশির দ্বারা পরিচালিত হয়, ফলে তারা জনগণের উপর কঠোরতা কর্মসূচি বা করের বোঝা চাপানোর মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা আরোপে দ্বিধাবোধ করে না। কেবল এই পুঁজিবাদী বাজেট প্রত্যাখ্যান করাই যথেষ্ট নয়, যদি না আপনারা এর পাশাপাশি পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকেও উপড়ে ফেলে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্-এর অধীনে আদর্শিক ইসলামী অর্থনৈতিক মডেল দ্বারা এটিকে প্রতিস্থাপন করেন। ইসলামের একটি অনন্য অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা নাগরিকদের উপর অতিরিক্ত বোঝা না চাপিয়ে রাষ্ট্রের জন্য সর্বোচ্চ রাজস্ব নিশ্চিত করতে পারে। খিলাফত সরকারের ‘পাবলিক ফাইন্যান্স’ নীতি অনুসারে, খিলাফত রাষ্ট্র রাজস্ব আহরনের উৎস হিসেবে জনগণের আয় ও ভোগের উপর আরোপিত করের উপর নির্ভরশীল হবে না। ইসলামে জনগণের ব্যক্তিগত সম্পদের পবিত্রতা ও নিরাপত্তা রয়েছে এবং খিলাফত রাষ্ট্র “করারোপের” নামে তার নাগরিকদের অর্থ ও সম্পদ লুট করতে পারে না। এটি মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের শাস্তি প্রদান করে না। খিলাফত রাষ্ট্রের বাজেটে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের খাতসমূহ শারী‘আহ্ বিধান দ্বারা চিরস্থায়ীভাবে নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। খিলাফতের অধীনে আসা নতুন দেশসমূহ হতে প্রাপ্ত আল-গানা’ইম (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), খারাজ (ভূমি কর), ফাই (যুদ্ধ ব্যতিরেকে অর্জিত সম্পদ), সক্ষম দেহের অধিকারী অমুসলিম পুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত যিজিয়া, গণ-মালিকানাধীন সম্পদ (তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, খনিজ সম্পদ, তৃণভূমি, খাল, ঝর্ণা, সংরক্ষিত জমি বা হিমা) থেকে অর্জিত আয়, সাদাকা (উৎপাদিত কৃষি শস্য থেকে প্রাপ্ত উশর, নগদ অর্থ, ব্যবসার পণ্য ও পশুসম্পদের উপর যাকাত) থেকে আয়, এবং সুনির্দিষ্ট চাহিদা মেটানোর জন্য শুধুমাত্র ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর আরোপিত কর থেকে খিলাফত রাষ্ট্র বিপুল রাজস্ব আয় করবে। ইসলামের অনন্য কোম্পানি কাঠামো প্রাইভেট কোম্পানিসমূহের আর্থিক ক্ষমতাকে সীমিত করে, যাতে রাষ্ট্র অর্থনীতিতে বৃহৎ রাজস্ব উৎপন্নকারী ও পুঁজি নিবিড় শিল্পসমূহ, যেমন: বৃহৎ পরিবহন, টেলিযোগাযোগ ও নির্মাণের উপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারে। এভাবে, খিলাফত রাষ্ট্র স্বাভাবিকভাবেই এসব খাতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করবে, যা নাগরিকদের বিষয়াদি দেখাশোনা করার জন্য যথেষ্ট রাজস্ব উৎপাদন করবে। এছাড়াও, খিলাফত রাষ্ট্র গণ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন শিল্প ও কারখানা হতে প্রয়োজনীয় রাজস্ব উৎপন্ন করবে, যেমন: উচ্চতর প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক্স ও গাড়ি উত্পাদন শিল্প। গণ-মালিকানাধীন সম্পদ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে (বায়তুল মাল) রাখা হয় এবং খলিফার মতামত ও ইজতিহাদ অনুযায়ী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং রাষ্ট্র কর্তৃক তত্ত্বাবধানকৃত গণ-মালিকানাধীন সম্পদ হতে প্রাপ্ত বিপুল পরিমান রাজস্ব সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করবে এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যেভাবে গুটিকয়েক মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয় তা রোধ করবে। উপরন্তু, ইসলাম সুদভিত্তিক ঋণকে হারাম করেছে, হোক তা দেশীয় ট্রেজারি বন্ড কিংবা বিদেশী ঋণ। উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে গৃহীত ঋণের ধ্বংসাত্মক চক্রের দরজা চিরতরে বন্ধ করার মাধ্যমে খিলাফত রাষ্ট্র আমাদের অর্থনীতিকে ঔপনিবেশিক কাফেরদের আধিপত্য থেকে মুক্ত করবে। এর ফলে আমাদের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:

*وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنْ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ*

আর যদি সেসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম [আল-আরাফ: ৯৬]।

 

হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশএর মিডিয়া কার্যালয়