পশ্চিমাদের প্রতি তার দাসত্বকে গোপন করতে স্মার্ট প্রতারক শেখ হাসিনা নিজেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের তথাকথিত রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করছে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
পশ্চিমাদের প্রতি তার দাসত্বকে গোপন করতে স্মার্ট প্রতারক শেখ হাসিনা নিজেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের তথাকথিত রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করছে
একটি চীনা প্রবাদ আছে, “চতুর কাক সর্বদা তার পালকে কালো রঙ করে” প্রতিকূলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে। শেখ হাসিনা হলো সেই কাকের মত, যে জনগণের রোষানল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রহরীর চেহারায় নিজেকে রঙিন করার অপচেষ্টা করছে। সে গত বুধবার ২১ জুন সুইজারল্যান্ড ও কাতারে তার সাম্প্রতিক সফরের বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, “আমি সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ দিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চাই না”; অথচ এটা দিবালোকের মত পরিষ্কার যে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে তার সরকার তথাকথিত বহুপাক্ষিক সমঝোতা ও চুক্তির নামে দেশের কৌশলগত সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সমর্পণ করছে এবং দেশের উপর ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে আসছে। গত ২৪শে এপ্রিল ২০২৩, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের ঠিক আগে তার সরকার ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, ইতিমধ্যেই তার সরকার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র জাপানের হাতে বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত মাতারবাড়ি গভীর-সমুদ্র বন্দর তুলে দিয়েছে এবং বাংলাদেশের গভীর-সমুদ্রে অবস্থিত ১৫টি হাইড্রোকার্বন ব্লকের সবগুলোই মার্কিন এনার্জী জায়ান্ট কোম্পানী এক্সনমোবিল-এর হাতে তুলে দিতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে (দৈনিক যুগান্তর, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৩)।
হাসিনা সরকারের এই প্রতারণামূলক কৌশল নতুন নয়! ভারতে গ্যাস রপ্তানির মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারে নাই বলে শেখ হাসিনা জনগণের মিথ্যা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করেছিল। অথচ তারপর “ভারতের সাথে বাংলাদেশের রক্তের সম্পর্ক” কিংবা “স্বামী-স্ত্রীর” সম্পর্ক ইত্যাদি বিভিন্ন অবমাননাকর বক্তব্যের মাধ্যমে তার সরকারের নির্লজ্জ ভারত তোষণ নীতি জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। ভারতের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি দ্বিধাহীনভাবে স্বীকার করে শেখ হাসিনা বলেছিল, “আমরা ভারতকে যেটা দিয়েছি তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে”। সুতরাং, দেশ ও জনগণের স্বার্থ হাসিনা সরকারের কাছে যে মূল্যহীন এটা ইতিমধ্যে প্রমাণিত সত্য। এমতাবস্থায় দেশের কৌশলগত সম্পদ ও সার্বভৌমত্বকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার আঞ্চলিক চৌকিদার ভারতের কাছে তুলে দিয়ে নিজের ক্ষমতাকে সুরক্ষিত করার এই প্রাণান্তকর চেষ্টা যখন ক্রমশই উন্মোচিত হয়ে পড়ছে তখন শেখ হাসিনা সেন্টমার্টিন দ্বীপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইজারা দিবে না ঘোষণা দিয়ে নিজেকে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপোসহীন হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, *كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لاَ تَفْعَلُونَ * “আল্লাহ্’র কাছে এটা অতিশয় ক্রোধজনক ব্যাপার যে, তোমরা বলবে এমন কথা যা তোমরা কর না” (সূরা আস-সফঃ ৩)।
অপরদিকে, মার্কিন দালাল বিএনপিগোষ্ঠীর প্রতারণা রংধনুর মতই বহুমাত্রিক, মার্কিনীদের স্বার্থের পরিবর্তনের সাথে সাথে তার রাজনৈতিক অবস্থানও পরিবর্তিত হয়। ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী তথাকথিত জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে তাদের জন্ম এবং তারা জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী ক্ষোভকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে; কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে নয়া মার্কিন-ভারতের সম্পর্কের কারণে তারা দেশের উপর মার্কিন–ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে নাই। ফলে তারা অত্র অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নব্য-উপনিবেশিক প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে আসছে। প্রকৃতপক্ষে, জনগণের সাথে প্রতারণা করা আর পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের স্বার্থরক্ষা করাই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কলা-কৌশল এবং আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীর রাজনীতির শেষকথা।
হে দেশবাসী! ইসলামে রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহ তত্ত্বাবধান করা এবং বহিঃশত্রুর আগ্রাসন থেকে জনগণকে রক্ষা করা। ইতিহাস সাক্ষী, শুধুমাত্র খিলাফতই এমন ন্যায়নিষ্ট ও সাহসী শাসক এবং নেতা তৈরি করেছে যারা মুসলিম উম্মাহ্’র স্বার্থ রক্ষা করতে চুল পরিমাণও বিচ্যুত হননি। খিলাফত রাষ্ট্র খলীফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের মত নেতৃত্ব তৈরি করেছিল যাকে ১৯০১ সালে ইহুদি নেতা থিওডর হার্জল ফিলিস্তিনে ইহুদিদের বসতি স্থাপনের বিনিময়ে প্রায় ২.২ মিলিয়ন ডলার পরিমাণ সম্পদের প্রস্তাব দিয়েছিল। খলীফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ হার্জলের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেন এবং একটি কড়া জবাব পাঠান, “হার্জলকে তার প্রকল্পে আর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার পরামর্শ দিন। ফিলিস্তিনের এই ভুমির একমুঠো মাটিও আমি দিতে পারব না কারণ এই ভূমি আমার নয়, এটা সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্’র ভূমি যারা এই ভূমির জন্য লড়াই করেছে এবং তাদের রক্ত দিয়ে এটিকে সিক্ত করেছে। ইসলামী খিলাফত একদিন ধ্বংস হয়ে গেলে তারা বিনা মূল্যে ফিলিস্তিন দখল করতে পারবে। যতদিন আমি বেঁচে আছি, ফিলিস্তিনের ভূমি খিলাফতের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া দেখার চেয়ে আমি আমার শরীর তরবারির আঘাতে জর্জরিত হওয়াকে পছন্দ করব”। প্রত্যেক যুগেই খিলাফত এরকম দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব তৈরি করেছে, যারা তাদের অন্তিমকালেও পরাশক্তির কাছে মাথা নত করেন নাই; তারা কেবল আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র কাছেই সুরক্ষা চেয়েছেন। হিযবুত তাহ্রীর হলো খলিফা আব্দুল হামিদের উত্তরসূরি যারা জনগণকে মিথ্যা বলে না এবং খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্-কে কাফির উপনিবেশবাদীদের কবল থেকে মুক্ত করার শপথ নিয়েছে। তাই মুসলিম উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব রক্ষার একমাত্র উপায় হচ্ছে হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গৌরবময় খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
* هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ *
“তিনিই তাঁর রাসূল-কে হিদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এই দ্বীন (জীবনব্যবস্থা) সকল দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করে, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে” (আস-সাফ: ৯)।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়