নির্বাচনে পদপ্রার্থীদের মধ্যে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ এবং সচেতন জনগণের উদ্দেশ্যে হিযবুত তাহ্রীর, উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর খোলা চিঠি
নির্বাচনে পদপ্রার্থীদের মধ্যে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ এবং সচেতন জনগণের উদ্দেশ্যে
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর খোলা চিঠি
আসন্ন নির্বাচন এবং গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জনগণ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে যখন তাদের সঠিক সিদ্ধান্ত ও সক্রিয় পদক্ষেপের উপরই তাদের আগামীর ভাগ্য নির্ভর করছে। আল্লাহ্ (ﷻ) বলেন, “আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে” [ সূরা আর-রা’দ : ১১]। এই ভাগ্যের পরিবর্তন তখনই সম্ভব যখন নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদগণ এদেশের জনগণের পক্ষে অবস্থান নিবে। তারা এদেশের জনগণের ইসলামী বিশ্বাস রক্ষা, তাদের ন্যায্য অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং দেশের স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি করবে। জনগণকেও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে সক্রিয় থাকতে হবে এবং নির্বাচনে পদপ্রার্থীদের মধ্যে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদের নিকট তাদের দাবীকে জোরালো করতে হবে। অনেকে দাবী করছে, জনগণের চলমান দুর্দশা ও অনিশ্চয়তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা। জনগণকে মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্রের সামগ্রিক পরিবর্তন ছাড়া শুধু নির্বাচনের মাধ্যমে অতীতের মত চেহারা পরিবর্তন হবে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।
যে প্রশ্নগুলো জনগণকে বার বার নাড়া দিচ্ছে: অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অভ্যুত্থানের পরেও এখনও কেন তাদেরকে ন্যায্য অধিকারসমূহ পূরণে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হচ্ছে? এখনও কেন পশ্চিমা কাফির উপনিবেশবাদী শক্তি আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও গতিপথ নির্ধারণ করে দিচ্ছে? এখনও কেন এদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে মার্কিন-বৃটেন-ভারতের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে? গত পাঁচ দশকে বার বার অভ্যুত্থান করেও কেন জনগণ প্রতিবারই প্রতারিত হয়েছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরের আলোকে আসন্ন নির্বাচনের পদপ্রার্থীরা এবং তাদের দলসমূহ এখনও কেন ইসলামের পক্ষে, জনগণের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে এবং মার্কিন-বৃটেন-ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে না?
প্রকৃতপক্ষে, গণঅভ্যুত্থানের পরে যালিম শাসকের চেহারা পরিবর্তন জনগণের মধ্যে সাময়িক স্বস্তি আনলেও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত যুলুমমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় এই ব্যবস্থা জনগণের জীবনে যে ক্ষত তৈরি করেছে, সে ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ এখনও অব্যাহত আছে। কারণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী বৃহত্তর জনগণের উপর যুলুম করে নিজেদের, কতিপয় পুঁজিপতিদের এবং কাফির উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ক্যান্সারের মতো যা সমূলে উৎপাটন না করা পর্যন্ত এই রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না।
নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদদেরকে বৈষম্য ও যুলুমমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করে জনগণকে দেখভালের রাজনীতি করতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত উর্বর ভূমি, অফুরন্ত জ্বালানী সম্পদ, ব্যাপক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী এবং কৌশলগত ভূমি ও সামুদ্রিক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণকে গরীব করে রাখা হয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার Trickle Down অর্থনৈতিক মডেলের মূলনীতি হচ্ছে, বৃহত্তর জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করা। দেশের পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সহযোগীতায় পশ্চিমা উপনিবেশবাদীরা আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর পুঁজিবাদী নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন করছে, আর স্থানীয় পুঁজিপতিরা জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করছে। দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের শোষণের কারণে দেশের জনগণ দিন দিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সরাসরি শ্রম ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর শর্ত অনুযায়ী পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী কৃষিতে পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করে দিয়েছে, কৃষির উপকরণ পুঁজিপতি কোম্পানীর উপর ন্যস্ত করেছে এবং কৃষি নির্ভর রাষ্ট্রীয় শিল্পসমূহ (যেমন, চিনি, পাট শিল্প, ইত্যাদি) বন্ধ করে দিয়ে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে বেকার করেছে। আর অন্যদিকে গার্মেন্টস শিল্পে ভর্তুকি দিয়ে কতিপয় পুঁজিপতিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে এবং বেকার জনগোষ্ঠীকে গার্মেন্টস শিল্পের সস্তা শ্রমের উৎসে পরিণত করেছে। এই নীতির কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য ভোক্তা পর্যায়েও জনগণের দারিদ্রতা ও দুর্দশাকে বৃদ্ধি করেছে। পুঁজিপতিদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, আর সাধারণ জনগণকে সস্তা শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার Trickle Down অর্থনৈতিক মডেলের একটি ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত।
স্বনির্ভর অর্থনীতি ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে রাজনীতিবিদদেরকে দেশে ভারী শিল্পায়ন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিদেশী বিনিয়োগ নীতি (FDI) এর কারণে বিদেশী পণ্য দেশের বাজার দখল করে রেখেছে এবং দেশ বহুজাতিক কোম্পানীর অবাধ চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। একদিকে ইপিজেড ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এই বহুজাতিক কোম্পানীসমূহ নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী এবং বিশেষ কর সুবিধা পাচ্ছে। আর অন্যদিকে নিজস্ব শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় কোন উদ্যোগ নাই।
আমাদেরকে দেশের জ্বালানী খাতকে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি কোম্পানীসমূহের কবল থেকে উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে হবে। পুঁজিবাদী বেসরকারীকরণ নীতির আলোকে, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে তুলনামূলক বেশী সফলতা থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান Petrobangla-BAPEX কে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। আর দেশের জ্বালানী সম্পদ (তেল-গ্যাস) উৎপাদন-বন্টন চুক্তি (PSC) এর আওতায় বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানী দখল করে আছে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী শেভরন (Chevron) একাই দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করা গ্যাসের ৬০ শতাংশ সরবরাহ করছে, আরেকটি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী ExxonMobil গভীর সমুদ্রের ১৫ টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ইজারার জন্য অপেক্ষা করছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে মার্কিন কোম্পানী, এক্সিলারেট এনার্জিকে এলএনজি টার্মিনাল করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও একটি টার্মিনাল নির্মাণের বিষয় বিবেচনাধীন আছে। বিপুল রাজস্বের উৎস ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরসমূহ বেসরকারীকরণের নামে বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া আমাদের দেশের জন্য আত্মঘাতী। এসব দেশী-বিদেশী চক্রান্তের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের সুস্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।
পশ্চিমাদের ওয়েস্টফেলিয়ান (Westphalian) জাতি রাষ্ট্র (Nation State) ও সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) নীতি একটি মহা প্রতারণা। এই নীতির আড়ালে পশ্চিমা উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রসমূহ ছোট রাষ্ট্রসমূহকে তাদের স্যাটেলাইট স্টেট (Satellite State) হিসেবে ব্যবহার করে। এই নীতি অনুসরণ করে ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পশ্চিমা উপনিবেশবাদী রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেনকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করে। প্রকৃতপক্ষে, এই জাতীয় পররাষ্ট্রনীতি দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পরিবর্তে মার্কিন-বৃটেনের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করে। চীনের উত্থানকে নিয়ন্ত্রণ এবং খিলাফতের আবির্ভাবকে প্রতিহত করতে মার্কিনীদের অন্যতম পররাষ্ট্র নীতি (“Pivot to Asia” Policy)। এই নীতির আলোকে মার্কিনীরা তাদের আঞ্চলিক চৌকিদার ভারতকে শক্তিশালী করছে এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সামরিক জোট (QUAD)-এ ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সুতরাং, যারা ভারতের আগ্রাসন মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মিত্র হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করছে, তারা জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিনীদের অনুগত রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীরা জনগণের ভারতবিরোধী মনোভাবকে ব্যবহার করে এই অঞ্চলে উপনিবেশবাদীশক্তি মার্কিনীদের উপস্থিতি ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলকে ন্যায্যতা দেয়ার অপচেষ্টা করছে। বিভিন্ন সামরিক চুক্তির মাধ্যমে তারা আমাদের সামরিক বাহিনীকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পরিবর্তে বিশ্বে পশ্চিমাদের স্বার্থ রক্ষার জ্বালানী হিসেবে অপব্যবহার করছে। অতএব, এদেশের নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদদেরকে পশ্চিমাদের ওয়েস্টফেলিয়ান (Westphalian) জাতি রাষ্ট্র (Nation State) ও সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) নীতিকে প্রত্যাখ্যান করে মার্কিন-বৃটেন-ভারতকে মোকাবেলায় শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং তাদের বিপরীতে মুসলিম রাষ্ট্রসমূহকে একীভূত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে । আল্লাহ্ (ﷻ) বলেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা মু’মিনদেরকে ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তোমরা কি আল্লাহ্’র জন্য তোমাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ দিতে চাও?” [সূরা আন-নিসা : ১৪৪]। বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ, যাদের অধিকাংশ তরুণ। এদেশের জনশক্তি, কৌশলগত অবস্থান এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার করে আমাদের পক্ষে অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে নেতৃত্বশীল হওয়া সম্ভব, যার জন্য দরকার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা। আমাদের নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদদেরকে এই লক্ষ্যসমূহ তাদের ইশতিহারে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
সর্বোপরী, বাংলাদেশের জনগণের ৯০% হচ্ছে মুসলিম এবং তারা ইসলামপ্রিয়। ইসলাম এদেশের বৃহত্তর জনগণের মৌলিক বিশ্বাস এবং আবেগ-অনুভূতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আর ইসলাম আল্লাহ্ (ﷻ) মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থা। আল্লাহ্ (ﷻ) বলেন, “আর আপনি (হে মুহাম্মদ) আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী শাসন (বিচার-ফয়সালা) করুন এবং তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না” [সূরা আল-মায়িদা : ৪৯]। দেশের জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করতে হলে রাজনীতিবিদদেরকে অবশ্যই ইসলামের ভিত্তিতে রাজনীতি করতে হবে। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিক রাষ্ট্রসমূহের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিতে হবে। তাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে, এদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ ইসলামের বিষয়ে কখনও আপোষ করে নাই, ভবিষ্যতেও করবে না।
নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদের বুঝতে হবে, স্রষ্টাবিবর্জিত এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা সহজাতভাবে ত্রুটিপুর্ণ। এই ব্যবস্থায় শাসকগণ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হলেও তারা আইন তৈরির করার সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আর মানুষ সহজাতভাবে সীমাবদ্ধ ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফলে বর্তমান ব্যবস্থায়, শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের, কতিপয় পুঁজিপতির এবং পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকে, আর সাধারণ জনগণের উপর যুলুম করে; এমনকি জনগণকে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মত মৌলিক চাহিদা থেকেও বঞ্চিত করে, নিরাপত্তা-ন্যায়বিচার ও উচ্চ জীবন মানতো দূরের কথা। আল্লাহ্ (ﷻ) বলেন, “আর আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন, সে অনুযায়ী যারা শাসন করে না, তারাই যালিম” [সূরা আল-মায়েদা : ৪৫]। আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন, গত পঞ্চাশ বছরে এই ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠীর চেহারা পরিবর্তন হলেও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি।
ইসলামে আল্লাহ্ (ﷻ) একমাত্র আইন তৈরির (খবমরংষধঃরড়হ) সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী: “বিধান দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ্” [সূরা ইউসুফ : ৪০]। আর মানুষের হাতে শাসনভার ন্যস্ত করা হয়েছে: “স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি” [সূরা আল-বাক্বারা : ৩০]। ইসলামী ব্যবস্থায় জনগণ শারী’আহ্ আইন অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিকে প্রতিনিধি (খলিফা) নির্বাচিত করেন যিনি আল্লাহ্’র (ﷻ) বিধান অনুযায়ী শাসন করেন। আবার বিচারকগণও আল্লাহ্’র (ﷻ) আইন অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেন। তাই ইসলামী ব্যবস্থা সহজাতভাবে ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা। “যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? অথচ তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবহিত” [সূরা মূলক : ১৪]; আল্লাহ্ (ﷻ) প্রদত্ত বিধান মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, মানুষের তৈরি আইনের মত সীমাবদ্ধ ও পক্ষপাতদুষ্ট বা বৈষম্যমূলক নয়। তাই, এই ব্যবস্থা মানব জাতির জন্য একমাত্র সঠিক ব্যবস্থা। অতএব, নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদদেরকে ইসলামের ভিত্তিতেই রাজনীতি করতে হবে এবং জনগণকেও ইসলামী ব্যবস্থা অনুযায়ী জীবনযাপন করার আকাঙ্ক্ষাকে তাদের জনপ্রতিনিধিদের নিকট জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে।
হে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ এবং সচেতন জনগণ! হিযবুত তাহ্রীর কুর’আন-সুন্নাহ্ এর ভিত্তিতে খিলাফত রাষ্ট্রের সংবিধান (খসড়া) প্রণয়ন করেছে। ইসলামী সংবিধান, কীভাবে জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে, কীভাবে ভারী শিল্পায়নের মাধ্যমে স্বনির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা ও ব্যাপক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে, এবং কীভাবে মার্কিন-বৃটেন-ভারতকে মোকাবেলায় প্রভাবশালী পররাষ্ট্রনীতি ও সমরভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠাসহ শক্তিশালী সামরিক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করবে, তার রূপরেখা প্রদান করেছে। নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম ভিত্তিক জীবনযাপন করা এবং উপনিবেশবাদ থেকে মুসলিম উম্মাহ্’কে মুক্তির লক্ষ্যে হিযবুত তাহ্রীর রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সবশেষে, আমরা হিযবুত তাহ্রীর আপনাদের নিকট উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, এই রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে আপনারা হিযবুত তাহ্রীর-এর সাথে ঐক্যবদ্ধ হউন।
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে খিলাফত (শাসনকর্তৃত্ব) দান করবেন, যেমন তিনি খিলাফত (শাসনকর্তৃত্ব) দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে…” [সূরা আন-নূর : ৫৫]।
শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
২০ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরী
