নিরূপায়ের চেয়ে দুর্বল কেউ নেই, তবে তারা ব্যতীত যারা শারীআহ্ বাধ্যবাধকতাকে এড়িয়ে যেতে নিরূপায় হওয়ার ভান করে; দেশব্যাপি মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা সত্ত্বেও, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গাজার ভাই-বোনদের পরিত্যাগের মধ্যে এটি সুস্পষ্ট
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
নিরূপায়ের চেয়ে দুর্বল কেউ নেই, তবে তারা ব্যতীত যারা শারীআহ্ বাধ্যবাধকতাকে এড়িয়ে যেতে নিরূপায় হওয়ার ভান করে; দেশব্যাপি মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা সত্ত্বেও, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গাজার ভাই–বোনদের পরিত্যাগের মধ্যে এটি সুস্পষ্ট
ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে আমেরিকা ও তার অভিভাবকত্বাধীন অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র কর্তৃক মুসলিমদের উপর চলমান নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে গত ১২ই এপ্রিল, রোজ শনিবার লক্ষ-লক্ষ বিক্ষুব্ধ মুসলিম ঢাকার রাস্তায় নেমে আসার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে বাংলাদেশী পাসপোর্টে “ইসরায়েল ব্যতীত” বাক্যাংশটি পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এই সিদ্ধান্তটি কার্যকরভাবে বাংলাদেশের নাগরিকদের অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যালিম হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির উপর দাঁড়ানো এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হতে প্রাপ্ত এই প্রতিক্রিয়া নিতান্তই দুর্বল প্রতিক্রিয়া, কারণ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে অন্যদের তুলনায় তার অধিক সংবেদনশীল হওয়ার কথা ছিল, যা পূর্ববর্তী যালিম শাসকের অধীনে জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের পারফরমেন্স কোনভাবেই যেসব নিরস্ত্র সাধারণ জনগণের চেয়ে কম হওয়াটা কাম্য ছিল না, যারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, আমেরিকা ও অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে সাধ্যমত বিক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে। যাহোক, কেবলমাত্র এই ঘোষণার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা পবিত্র ভূমিতে আমাদের ভাই-বোনদের সমর্থনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতাকে স্পষ্ট করেছে, এবং এমনকি তা সেই অবস্থানেরও পেছনে পড়েছে যা ইসলামের সাথে সম্পর্কহীন দেশ ব্রাজিল ও বলিভিয়া নিয়েছে। সরকারের এই অবস্থান আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি তাদের সহায়তার মনোভাব প্রকাশ করে না। বরং, এটি সেই ব্যর্থ অবস্থানকে নিশ্চিত করে যা বাংলাদেশকে মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দালাল রাষ্ট্রের কাতারে শামিল করেছে।
হয়তো অজ্ঞ কোন পর্যবেক্ষক ধরে নিতে পারে বাংলাদেশ একটি দুর্বল দেশ, যা নিজেকেই রক্ষা করতে অক্ষম, আর পবিত্র ভূমির ভাই-বোনদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়াতো দূরের বিষয়। এই ধারণাটি অসত্য। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে শীর্ষ তিন অবদানকারী দেশের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশও স্থান পেয়েছে, আর এই প্রতিটি দেশ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন জাতিসংঘ মিশনে প্রায় ৮,০০০ সামরিক সদস্য প্রেরণ করে থাকে। বাংলাদেশ “বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (BIPSOT)” নামে একটি সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছে, যা শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য তার বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয় এবং এই ক্ষেত্রে এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি কেন্দ্র। তাছাড়া বাংলাদেশ লেবাননে “ইউনাইটেড নেশনস্ ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন (UNIFIL)” মিশনে প্রায় ১২০ জন সামরিক সদস্য প্রেরণ করেছে, যা এই মিশনে অবদানকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২০১০ সাল থেকে UNIFIL মেরিটাইম টাস্ক ফোর্সে (MTF) অবদান রেখে চলেছে, বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ফ্রিগেট (BNS) ওসমান, বৃহৎ টহল জাহাজ BNS মধুমতি, ফ্রিগেট BNS আলী হায়দার, বৃহৎ টহল জাহাজ BNS নির্মূল, কর্ভেট BNS বিজয়, এবং সম্প্রতি কর্ভেট BNS সংগ্রাম যা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মোতায়েন করা হয়েছে। অতএব, গাজা সীমান্তের কাছে অবস্থানরত এই সামরিক নৌ জাহাজগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ গাজার মুসলিম ভাই-বোনদের সহায়তা করতে সক্ষম। অথচ, এর পরিবর্তে এগুলোকে ইহুদী রাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষা ও অখণ্ডতা রক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে! বিশ্ব কুখ্যাত বাহিনীগুলো কর্তৃক আমাদের এই সশস্ত্র বাহিনীগুলো সেসব নোংরা সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হচ্ছে যা পরাশক্তিরা নিজেরা পরিচালনায় অক্ষম, কিংবা তাদের বাহিনীগুলোকে প্রেরণে ভয় পায়, যেমন: লেবাননের মুসলিমদের কাছ থেকে অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সীমান্ত রক্ষা করা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সেনাবাহিনীর দায়িত্ব শুধু এতটুকুই ছিল না যে, কেবলমাত্র বাংলাদেশী পাসপোর্টে “ইসরায়েল ব্যতীত সকল রাষ্ট্রের জন্য বৈধ” বাক্যাংশটি পুনর্বহাল করা, বরং তাদের দায়িত্ব ছিল আমাদের জাহাজগুলোতে, ট্যাঙ্কে, এবং বাংলাদেশ মুসলিম সেনাবাহিনীর মুজাহিদদের কপালে “ফিলিস্তিনের মুক্তির (তাহ্রীর) জন্য” বাক্যটি লিপিবদ্ধ করা, যারা ইসলামী জেনারেল সালাহ্উদ্দিনের উদাহরণ অনুসরণ করে আল-কুদসকে মুক্ত করতে এবং দুই কিবলার প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্র মসজিদ, আল-আকসায় নামাজ পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। যাহোক, এটা পরিষ্কার যে এই সরকার তার পূর্বসূরী যালিম হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের চেয়ে কোন অংশেই কম প্রতারক, কম কাপুরুষ, ও কম বিশ্বাসঘাতক নয়। সুতরাং, ঢাকার রাস্তায় লক্ষ-লক্ষ বিক্ষুব্ধ জনতার জনস্রোতের পরে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ফিলিস্তিনে আমাদের ভাই-বোনদের সহায়তার পথে আসল বাধা হচ্ছে এই সরকার। বাংলাদেশের দুর্বলতা, অক্ষমতা, কিংবা সম্পদ ও সৈন্যের অভাব কোন বাধা নয়।
অতএব, বাংলাদেশের মুসলিম সামরিক বাহিনীর প্রতিটি নিষ্ঠাবান সদস্যের জন্য ইসলামী শারীআহ্’র এই মূলনীতি –“একটি দায়িত্ব পালনের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তা নিজেই একটি দায়িত্ব”-এর অনুসরণ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এই মুহূর্তে তাদের শারী‘আহ্ বাধ্যবাধকতা হলো এই সরকারকে অপসারণ করা এবং এটিকে এমন একটি নিষ্ঠাবান ও ন্যায়নিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যারা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করার গৌরবের দিকে পরিচালিত করবে। এটি কেবলমাত্র সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান সদস্যদের দ্বারাই অর্জন করা সম্ভব, যারা নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ (ক্ষমতা) প্রদান করবে। খিলাফত রাষ্ট্র সামরিক বাহিনীকে নেতৃত্ব দিবে এবং ফিলিস্তিনে আমাদের নির্যাতিত ভাই-বোনদের রক্ষা করবে।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হলো, যখন তোমাদেরকে আল্লাহ্’র পথে অভিযানে বের হতে বলা হয়, তখন তোমরা জমীনের (দুনিয়ার) প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে যাও? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের ভোগের উপকরণতো অতি নগণ্য” [আত-তাওবাঃ ৩৮]।
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস