নিপীড়ন মূলক আইন যেমন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা, সন্ত্রাস বিরোধী আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন উপনিবেশবাদী যুলুমের ব্যবস্থার একটি প্রতিফলন
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
নিপীড়ন মূলক আইন যেমন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা, সন্ত্রাস বিরোধী আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন উপনিবেশবাদী যুলুমের ব্যবস্থার একটি প্রতিফলন
জনগণের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং সর্বশেষ ছাত্র-জনতার তীব্র গণআন্দোলনের মুখে যালিম হাসিনার পতনে জনগণের মধ্যে আপাতত স্বস্তি বিরাজ করছে। এখন হাসিনা সরকার যেসকল আইন ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাধ্যমে জনগণকে দমন করতো সেখানে দ্রুত পরিবর্তন আনা দরকার। জনগণের মধ্যে হাসিনা ও তার দোসরদের যেমন বিচারের দাবী উঠেছে, তেমনি যে আইনসমূহ দিয়ে সে জনগণকে দমন করেছে, দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে সে আইনসমূহ অনতিবিলম্বে বাতিল করাও জনগণের অন্যতম দাবী। বিশেষ করে, বহুল সমালোচিত হাসিনা সরকারের প্রণীত দমনমূলক কুখ্যাত সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ এখনও বলবৎ রয়েছে। এগুলো বাতিল করা জনগণের একান্ত কাম্য। কারণ এসব আইনের ভিত্তিতে হাজার হাজার আলেম-ওলামা-তৌহিদী জনতা, নিষ্ঠাবান সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, বুদ্ধিজীবিসহ সচেতন ও প্রতিবাদী সাধারণ জনগণ গুম-গ্রেপ্তার ও যুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। এসব আইনের আলোকেই “আয়না ঘর” প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা তারা এ বিষয়ে তাড়াতাড়ি মনোনিবেশ করবেন।
জনগণের নিকট দশকের পর দশক ধরে প্রতীয়মান হয়েছে, দমনমূলক কালা-কানুন সমূহ পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ব্যবস্থার অনিবার্য প্রতিফলন, যা ধর্মনিরপেক্ষ দালাল শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় গিয়ে বাতিল না করে, বরং ব্যবহার করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের নির্বিচারে গ্রেপ্তারের যে ক্ষমতা পুলিশের উপর অর্পণ করা হয়েছে। আমরা জানি, ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলনকে দমন করতে ১৮৯৮ সালে ইংরেজরা সর্বপ্রথম এই আইন তৈরি করে। তারা ওই আইনের ৫৪ ধারা তৈরি করে লাখ লাখ মানুষকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে (বাংলা নিউজ ২৪, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৪)। অথচ বিগত দশকের পর দশক কোনও শাসকগোষ্ঠী এই আইন পরিবর্তন করে নাই। আবার, সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে পশ্চিমাদের বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। এর মাধ্যমে মুসলিম ভূখণ্ডে দালাল শাসকগোষ্ঠী পশ্চিমাদের আধিপত্য বজায় রাখতে মুসলিম উম্মাহ্’র পুনঃজাগরণ ও রাজনৈতিক ইসলামকে মোকাবিলা করছে। যেমন, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে ভারতের স্বার্থে হাসিনা সরকার কর্তৃক পিলখানায় মেধাবী সামরিক অফিসারদের হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে হিযবুত তাহ্রীর দৃঢ় ও সাহসী প্রতিবাদ গোড়ে তোলে এবং ২০০৯ সালের অক্টোবরে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তার নাম করে অনুষ্ঠিত মার্কিন-বাংলাদেশ যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার-সার্ক’-এর বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করে। এসবের পরপরই হাসিনা সরকার তার বিদেশী প্রভুদের নির্দেশে এই আইনের আওতায় নিয়মতান্ত্রিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহ্রীর-এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে, যদিও হিযবুত তাহ্রীর রাজনৈতিক সংগ্রামে কখনোই পিছপা হয় নাই। জনগণ আরও প্রত্যক্ষ করেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ ও এর পরবরতিতে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩-এর মাধ্যমে কীভাবে রাজনীতিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবিদের উপর যুলুম-নির্যাতন ও কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।
ইসলামী (খিলাফত) ব্যবস্থায় শাসকদের জবাবদিহি করা ঈমানী দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন, “অত্যাচারী শাসকদের সামনে সত্য কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ” (আহমদ, তিরমিজি)। তাই খিলাফত ব্যবস্থায় এই জাতীয় দমনমূলক আইনের অস্তিত্ব থাকবে না। এছাড়া ইসলামী শারী‘আহ্ নীতি হচ্ছে, “একজন ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ”। তাই শারী‘আহ্আইন মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং তাদের মর্যাদা রক্ষায় পূর্ণতার উচ্চতায় পৌঁছেছে, সে ব্যক্তি নির্দোষ হোক বা অভিযুক্ত হোক। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “ …তারপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে, অতপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফতের শাসন-নবুয়তের আদলে” (হাদিসঃ মুসনাদে আহমদ)। তাই, বিদ্যমান যুলুমের ব্যবস্থা থেকে চিরতরে মুক্তির লক্ষ্যে হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবী তোলা প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। আল্লাহ্ ﷻ বলেন,
﴿كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنْ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ﴾
“তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে; তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহ্’র উপর ঈমান আনবে” [সুরা আলি ইমরানঃ ১১০]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস