working to establish khilafah

“নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল”-এর কার্যক্রম উপনিবেশবাদী মার্কিন প্রভাবাধীন কোম্পানী “ডিপি ওয়ার্ল্ড”-এর কাছে হস্তান্তর করলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল”-এর কার্যক্রম উপনিবেশবাদী মার্কিন প্রভাবাধীন কোম্পানী ডিপি ওয়ার্ল্ড”-এর কাছে হস্তান্তর করলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে

দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার, বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) এর মোড়কে বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধির নামে দেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ও টার্মিনাল বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে, চট্টগ্রাম বন্দরের স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণকারী নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এন.সি.টি)-কে দুবাইভিত্তিক অপারেটর কোম্পানী ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে (দৈনিক যুগান্তর, ৬ই মে, ২০২৫)। চট্টগ্রাম বন্দর বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের মুখোমুখি বাংলাদেশের কৌশলগত অঞ্চল। ফলে এই বন্দর শুধুমাত্র অর্থনৈতিক লাইফলাইন হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নয়, ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক দৃষ্টিকোন থেকে এই বন্দর কৌশলগত সম্পদ। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৯০% এই বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয় এবং এর মূল আয়ের ৬০ ভাগই আসে নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল থেকে, তাই এটিকে বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়ার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে কেবল যে দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে যাবে তা নয়, বরং আমাদেরকে ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক, ও কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও বিপদে পড়তে হবে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, ডিপি ওয়ার্ল্ড দুবাইভিত্তিক একটি বৈশ্বিক লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান, যা বন্দর উন্নয়ন, সামুদ্রিক সেবা, আধুনিক লজিস্টিক ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিনির্ভর বাণিজ্য সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত হলেও, কাফির উপনিবেশবাদী শক্তি বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন তাদের ভু-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে এটিকে সামরিক কাজে ব্যবহার করে থাকে। এখানে উল্লেখ্য, দুবাই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কৌশলগত মিত্র এবং অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রের সহযোগী। উদাহরণস্বরূপ, গত ৩১ মার্চ, ২০২৫ থেকে এপ্রিল ১১, ২০২৫ পর্যন্ত  গ্রীসের “Andravida Air Base” –এ অনুষ্ঠিত বহুজাতিক বিমান মহড়া “INIOCHOS-25”-এ যুক্তরাষ্ট্র, অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র এবং ভারতের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দুবাই এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছে [THE ECONOMIC TIMES, 13 April 2025]। এখান থেকে স্পষ্ট, নব্য মীরজাফর গোষ্ঠী অত্র অঞ্চলে মার্কিন উপনিবেশবাদ প্রতিষ্ঠার প্রকল্প হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের “নিউ মুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল”-এর কার্যক্রম “ডিপি ওয়ার্ল্ড”-এর কাছে হস্তান্তরের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলিমদের উপর কাফিরগোষ্ঠীর আধিপত্যের বিষয়ে আল্লাহ্‌ ﷻ আমাদেরকে সতর্ক করে বলেন, যদি তারা তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, তবে তারা তোমাদের শত্রু হবে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের হাত জিহ্বা মন্দভাবে প্রসারিত করবে এবং তারা কামনা করবে যে, কোনরূপে তোমরাও কাফির হয়ে যাও [সূরা আল-মুমতাহিনাঃ ২]।

হে দেশবাসী, আপনারা অবগত আছেন, পতিত স্বৈরাচারী হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রক্সি জাপানের হাতে বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত মাতারবাড়ি গভীর-সমুদ্র বন্দর তুলে দেয়, যা মূলত জাপানের অংশীদারিত্বের আড়ালে বাংলাদেশের গভীর-সমুদ্র বন্দরে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত। এর পাশাপাশি হাসিনা সরকার বাংলাদেশের গভীর-সমুদ্রে অবস্থিত ১৫টি হাইড্রোকার্বন ব্লকের সবগুলোই মার্কিন এনার্জি জায়ান্ট কোম্পানী এক্সনমোবিল-এর হাতে তুলে দিতে নীতিগতভাবে সম্মতিও প্রদান করে (দৈনিক যুগান্তর, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৩), যে এক্সনমোবিল মার্কিন কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও পতিত হাসিনা সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগের নামে এন.সি.টি-কে ডিপি ওয়ার্ল্ড-এর হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যে ডিপি ওয়ার্ল্ড বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরসমূহে মার্কিন নেভীর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে তাদের কার্যক্রমে সহযোগিতা করে। অতএব, বাংলাদেশের জলসীমার অভ্যন্তরে এবং কৌশলগত স্থাপনায় এধরনের শক্তিশালী মার্কিন প্রভাবাধীন কোম্পানীসমূহের উপস্থিতির অর্থ হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ আরো সুসংহত করা, যা সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার শামিল।

হে দেশবাসী, যেখানে আমাদের শ্রমিকরা প্রতি মাসে অন্ততঃ দুই বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স প্রেরণ করে সেখানে ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’-এর এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করা প্রতারণা মূলক। বন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনা ও প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ বিদেশী দখলদারিত্বের হাত থেকে রক্ষায় আমাদের সক্ষমতা ও নিজস্ব বন্দর ব্যবস্থাপনা জোরদার করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা হবে এবং দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। অথচ, পশ্চিমাদের অনুগত রাজনীতিবিদদের দেশের জনগণের জন্য কোন রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নাই। বরং তারা নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনের পরিবর্তে বিদেশী কোম্পানী ও তাদের উপনিবেশবাদী প্রভুদের স্বার্থ রক্ষার জন্য মুখিয়ে থাকে। একারণেই তাদের সকল সিদ্ধান্ত ও কর্ম তাদের উপনিবেশবাদী প্রভুদের স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা সুরক্ষিত রাখার ভিত্তিতে নির্ণীত হয়ে থাকে। তাই, এই ধর্মনিরপেক্ষ সরকারগুলোর হাতে দেশের কৌশলগত সম্পদসমূহ নিরাপদ নয় এবং তারা আপনাদেরকে দেশের সম্পদসমূহের যথাযথ সুবিধা উপভোগ করতে দেবে না। আমরা হিযবুত তাহ্‌রীর, আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কেবলমাত্র নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ব্যবস্থাই শারীআহ্ অনুযায়ী শাসন করতে পারে এবং বিদেশী শত্রুদের আধিপত্য থেকে আমাদের তেল-গ্যাস-বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সম্পদসমূহকে মুক্ত করতে পারে। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র মুসলিম উম্মাহ্‌-কে একীভূত করার মাধ্যমে তার কৌশলগত সম্পদসমূহ ব্যবহার করে বিশ্বের বুকে একটি নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হবে।

﴿هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا

তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়েত (সঠিক পথ নির্দেশ) এবং সত্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) সহকারে প্রেরণ করেছেন যাতে একে অন্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট[সূরা আল-ফাত্‌হ: ২৮] ।

 

হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশএর মিডিয়া অফিস