ধিক্কার আপনাদের প্রতি, হে মুসলিম উম্মাহ্, গাযাবাসীর এই চরম অনাহারের জন্য! এর চেয়েও বড় ধিক্কার, যখন ট্রাম্প যেই হাত দিয়ে তাদেরকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করতে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, সেই একই হাত দিয়ে খাদ্য ভিক্ষা দিচ্ছে
ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে হিযবুত তাহ্রীরের মিডিয়া অফিস হতে ইস্যুকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তি হতে অনুবাদকৃত:
ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে হিযবুত তাহ্রীরের মিডিয়া অফিস হতে ইস্যুকৃত প্রেস বিজ্ঞপ্তি হতে অনুবাদকৃত:
ধিক্কার আপনাদের প্রতি, হে মুসলিম উম্মাহ্, গাযাবাসীর এই চরম অনাহারের জন্য!
এর চেয়েও বড় ধিক্কার, যখন ট্রাম্প যেই হাত দিয়ে তাদেরকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করতে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, সেই একই হাত দিয়ে খাদ্য ভিক্ষা দিচ্ছে
যখন গাযার মুসলিমরা দীর্ঘ অনাহারে রয়েছে, যখন ক্ষুধা নিবারণের জন্য তারা পেটে পাথর বেঁধে রেখেছে, যখন ক্ষুধার তীব্রতা তাদের চর্বি গলিয়ে হাড়গুলোকে খেয়ে ফেলেছে, যখন জীবন্ত কংকালের মত মানুষগুলো গাযার এক সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়েছে, যখন পরিবার প্রধানরা তাদের শিশুদের কান্না থামাতে একমুঠো খাবারের জোগাড়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এবং যখন ট্রাম্প দম্ভভরে তাদের দিকে কিছু খাদ্য ছুঁড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে; তখন উদ্ঘাটিত হলো এই খাদ্য সহায়তা প্রকল্পটি, গাযার মুসলিমদের ক্ষুধাকে লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত করতে একটি মার্কিন কোম্পানীর ব্যবসা- যা গঠিত হয়েছে ইরাক ও আফগানিস্তানে নিয়োজিত দুর্বৃত্তদের অবশিষ্টাংশ এবং আমাদের ভূমিগুলোতে কুখ্যাতির রেকর্ডধারী কতিপয় সিকিউরিটি কোম্পানীর সমন্বয়ে।
এটি এমন একটি কোম্পানী- যা এক হাতে খাবার বিতরণ করে, আর অন্য হাতে অস্ত্র তাক করে রাখে; এবং নিরাপত্তা যাচাইয়ের নামে আত্মমর্যাদাপূর্ণ এই মানুষগুলোকে চরম অপমানজনক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করে যাতে দখলদার ইসরায়েলের ইচ্ছামাফিক লোক ছাড়া আর কেউ এই খাবার না পায়, এবং খাদ্যপ্রার্থীদের মনে আশঙ্কা থাকে, তারা হয়তো সেখান থেকে ফিরে যাবার পূর্বেই মিসাইল হামলার শিকার হবেন বা মারা যাবেন। তাদেরকে এমনভাবে লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে যেন তারা মূল্যহীন মানুষ, কিছু খাবার দিয়ে যাদেরকে আবার গাযার দক্ষিণ দিকে ঠেলে দেয়া হবে- এ যেন আরেক নতুন উচ্ছেদের সূচনা; বিশেষ করে যখন ট্রাম্প গাযাকে নিজের বলে দাবী করা বা তাদেরকে উচ্ছেদের ঘোষণা থেকে সরে আসেনি, যেমনভাবে অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রটি প্রতিদিনের গণহত্যা ও নিধন চালানোর মধ্যেও তাদের বাস্তুচ্যুত করার কথা বন্ধ করেনি।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, গাযার জন্য খাদ্য সহায়তার কোন অভাব নেই। হাজার হাজার খাদ্য বোঝাই ট্রাক রাফাহ্ সীমান্তে আটকে রয়েছে। মিশরের শাসকগোষ্ঠী যদি সীমান্ত খুলে দিত, আর সেগুলোর সুরক্ষা দিত, তাহলে গাযার এই ক্ষুধা দিনের এক ঘণ্টার মধ্যেই মিটিয়ে ফেলা যেত। কিন্তু খাদ্য বোঝাই ট্রাকগুলো প্রবেশ করতে দেয়ার পরিবর্তে, তারা অবৈধ ইহুদীরাষ্ট্রকে এই ক্রসিং দখল করতে দিয়েছে এবং তাদেরকে কোন রাখঢাক ছাড়া, তাদের সম্মতি ও সহায়তায় গাযার অধিবাসীদের নিঃশ্বাস চেপে ধরার সুযোগ করে দিয়েছে।
এটা বিস্ময়কর যে, গাযার মানুষ অনাহারে আছে। অথচ মুসলিম উম্মাহ্ যদি তাদের ভাইদের প্রতি সামান্য সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিতো, তাহলে মানুষ তো মানুষ এমনকি গাযার পশু-পাখিরাও না খেয়ে থাকতো না।
এটা বিস্ময়কর যে, গাযার মানুষ ততক্ষণ অনাহারে আছে, যতক্ষণ না ট্রাম্প তাদের প্রতি খাবার আর হত্যার হাত বাড়িয়েছে- যেখানে এই উম্মাহ্’র মধ্যে এমন সামরিক শক্তি বিদ্যমান, যারা চাইলে দিনের এক ঘন্টা বা তার কম সময়ের মধ্যে অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রটিকে উপড়ে ফেলতে সক্ষম।
কিভাবে গাযার মানুষ ক্ষুধার্ত থাকতে পারে, তাদেরকে দুর্বৃত্ত আমেরিকা আর ইহুদীদের হাতে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে, যেখানে একজনকেও ক্ষুধার্ত রাখার বিধান এই উম্মাহ্’র দ্বীনের মধ্যে নেই, কিংবা মুসলিমদের সম্মানের সঙ্গে যায় না? তাহলে, কিভাবে দুই মিলিয়ন মুসলিম না খেয়ে আছে? কিভাবে এই দুই মিলিয়ন মুসলিম অনাহারে থাকতে পারে, যখন দালাল মুসলিম শাসকেরা মুসলিমদের টাকায় দুই মিলিয়ন মার্কিনীদের চাকুরীর সুযোগ করে দিচ্ছে?
ইহুদী এবং মার্কিনীরা গাযার উপর মৃত্যুর আর ক্ষুধার আগুন ঢেলে দিতে পারতো না, যদি এই শাসকেরা বিশ্বাসঘাতকতা না করতো, আর এই অপরাধের ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ্ নীরবতা অবলম্বন না করতো; কিংবা উম্মাহ্ বা তার সেনারা এমন অবস্থান নিতো, যা এই অপরাধীদের অন্তরে কাঁপন তৈরি করতো এবং আগ্রাসনকারীদের হাতগুলো কেটে দিতো।
মার্কিন এবং ইহুদীরা কি গাযার শিশুদের মুখের খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো, যদি না এই শাসকেরা ইহুদীদের চেয়েও কঠোরভাবে গাযাকে অবরোধ করে রাখতো এবং তাদেরকে সবধরনের সহায়তা দিত যেন তারা গাযার মুসলিমদের হত্যা করতে পারে? তাদের এই ভূমিকা তাদেরকে গাদ্দার থেকে সরাসরি সুস্পষ্ট শত্রুর কাতারে নামিয়ে এনেছে।
সত্যিই মুসলিম উম্মাহ্’র জন্য এটা চরম লজ্জার যে, গাযার মানুষ অনাহারে দিন কাটায় এবং আরও লজ্জার বিষয় এই যে, তাদের সামনে ট্রাম্প এক হাতে খাবার ভিক্ষা দেয়, আর অন্য হাতে হত্যা ও উচ্ছেদ করে। এই লজ্জা শুধুমাত্র এই উম্মাহ্’র সত্যনিষ্ঠ পদক্ষেপের মাধ্যমেই ধুয়ে ফেলা সম্ভব, যেখানে তারা এগিয়ে যাবে, এবং তাদের সামনে এগিয়ে যাবে তাদের সেনাবাহিনী- এই শাসকদের উৎখাত করবে, এবং বায়তুল মাকদিসের অভিমুখে রওনা হবে, প্রতিটি ফোটা রক্তের বদলা নিবে, পবিত্র ভূমির প্রতিটি পাথর ও প্রতিটি প্রান্তকে অভিশপ্ত ইহুদীগোষ্ঠীর অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করবে, এবং বিষাক্ত টিউমারকে উপড়ে ফেলার মতো করে এটিকে উপড়ে ফেলবে। শুধুমাত্র তখনই উম্মাহ্ তার এই লজ্জা ধুয়ে ফেলতে পারবে। অন্যথায় ক্ষুধা, তৃষ্ণা, আর ব্যথার প্রতিটি চিৎকার, প্রতিটি আর্তনাদ, আল্লাহ্’র সামনে এই উম্মাহ্’র বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে।
মিডিয়া অফিস
হিযবুত তাহ্রীর, ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি
২৮ মে, ২০২৫