দুর্নীতির মহামারী বর্তমান নষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনিবার্য ফল; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মনোনীত খিলাফত ব্যবস্থাই মুক্তির পথ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
দুর্নীতির মহামারী বর্তমান নষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অনিবার্য ফল; আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মনোনীত খিলাফত ব্যবস্থাই মুক্তির পথ
হাসিনা সরকারের প্রায় দুই দশকের টানা গণতান্ত্রিক যুলুমের শাসন আমলে দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্তম্ভ নিরাপত্তা বাহিনী এবং সামরিক বাহিনীর সাবেক প্রধান যথাক্রমে বেনজির আহমেদ এবং আজিজ আহমেদের উপর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রেক্ষিতে হাসিনা সরকারের ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি আবারও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আমরা সবাই জানি, অত্যাচারী হাসিনা সরকার জনগণকে দমনে বেনজির-আজিজসহ দুর্নীতিবাজ এই গোষ্ঠীকে জল্লাদ হিসেবে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের শীর্ষ সংবাদপত্রের সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, “আমরা এসব দুর্নীতি সম্পর্কে জানতাম কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি…”। এখানে উল্লেখ করা জরুরী যে, উপনিবেশবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থেই এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যাতে এর মাধ্যমে তারা হাসিনা সরকারের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। মুলতঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উপনিবেশবাদী প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে আরও গতিশীলতা আনতে তৎপর এবং পাশাপাশি তারা হাসিনা সরকারকে সমর্থন দেয়ার কারণে হতাশাগ্রস্থ বিএনপিগোষ্ঠীর আস্থা অর্জন ও প্রাণ সঞ্চার করতে চায়। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের সময় ইনডিপেনডেন্ট টিভিতে প্রচার হওয়া সাক্ষাৎকারে পরিষ্কারভাবে বলে, “বিশ্বজুড়ে আমরা আমাদের স্বার্থ দেখি…” । এছাড়া ACSA (Acquisition and Cross-Servicing Agreement), GSOMIA (General Security Of Military Information Agreement) প্রতিরক্ষা চুক্তি দুটির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার দাবী করে। অথচ যেকোন দেশের সামরিক বিষয়সমূহ কৌশলগত এবং গোপনীয়। এভাবে, যুক্তরাষ্ট্র হাসিনা সরকারের আপাদমস্তক দুর্নীতিকে হাতিয়ার করে এই সরকারের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার উপনিবেশবাদী স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টায় লিপ্ত। প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান স্রষ্টাবিবর্জিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিবিদ ও শাসক তৈরির কারখানা, যেখানে শাসনক্ষমতা এবং রাষ্ট্রীয় পদসমূহকে আমানত কিংবা পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নয়, বরং সম্পদের পাহাড় বানানোর সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। কারণ সৃষ্টিকর্তা থেকে বিচ্ছিন্ন এই জীবনাদর্শ মানুষকে সর্বোচ্চ পার্থিব সুবিধা অর্জনের প্রতি মোহাচ্ছন্ন করে এবং পরকালের বিচার দিবসকে তার চিন্তা থেকে বিতারিত করে। আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও” [আত-তাকাসুরঃ ১-২]।
হে দেশবাসী, বিশেষত যারা নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকগণ! দুর্নীতির মূল কারণ– এই ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং এর স্বার্থপর মূল্যবোধ- এই সত্য সম্পর্কে অন্ধ হবেন না। “এবং যে ব্যক্তি এই দুনিয়াতে সত্যের প্রতি অন্ধ, সে আখিরাতেও অন্ধ এবং সৎপথ থেকে অধিকতর বিচ্যুত” [সূরা আল-ইসরাঃ৭২]। স্রষ্টাবিবর্জিত এই পুঁজিবাদ হচ্ছে একটি পশ্চাদপদ (backward) আদর্শ যা মানুষকে সৃষ্টিকর্তার উপাসনা থেকে সৃষ্টজীব মানুষ (যেমন, অভিজাত শ্রেণী) কিংবা বস্তুর (যেমন, সম্পদ) উপাসক-এ পরিণত করেছে, যেভাবে আইয়্যামে জাহেলিয়্যাতের যুগে মানুষ স্রষ্টার পরিবর্তে মুর্তি বা আগুনের মত বস্তুর উপাসনা করতো। ইসলাম হচ্ছে সত্য ও অগ্রবর্তী (forward) আদর্শ যা মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মহিমান্বিত সৃষ্টিকর্তার উপাসনায় উন্নীত করেছে। ফলে ইসলামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা-খিলাফতের অধীনে হাসিনার মত নিকৃষ্ট শাসকের যেমন অস্তিত্ব থাকবেনা, আবার মাহফুজ আনামের মত অভিজাত কাপুরুষ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হতে পারবে না, যারা দুর্নীতির মূলহোতা হাসিনার দিকে আঙ্গুল তুলাতো দূরের কথা বেনজির-আজিজের মত বর্তমানে যারা কর্মরত আছে তাদের দুর্নীতির তদন্তের দাবী তুলতেও সাহস পায় না। খিলাফত শাসনব্যবস্থায় সকল আইন-কানুন আল্লাহ্’র আদেশ-নিষেধের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়; ফলে কোন শাসক যেমন আইন করে তার লুটপাটকে বৈধতা দিতে পারে না, ঠিক তেমনি কারো অপরাধ থেকে তাকে দায়মুক্তি ও শাস্তি থেকে অব্যাহতিও দিতে পারে না। মক্কার সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী বানু মাখযুম গোত্রের একজন মহিলা চুরির অপরাধে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত হলে মুসলিমদের কেউ কেউ শাস্তি হিসেবে তার হাত না কাটার সুপারিশ নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর নিকট হাজির হলে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে বলেন: “তুমি কী আমার কাছে এমন বিষয়ে সুপারিশ করতে এসেছ যেখানে আল্লাহ্’র বিধান প্রযোজ্য?” “তোমাদের পূর্বের অনেক জাতিকে আল্লাহ্ ধ্বংস করে দিয়েছেন এই কারণে যে তারা তাদের সম্ভ্রান্ত ও ধনীরা চুরি (অপরাধ) করলে মাফ করে দিত, কিন্তু কোন গরীব অপরাধ করলে তার উপর আল্লাহ্’র নির্ধারিত শাস্তি কার্যকর করত। আল্লাহ্’র কসম! যদি আমার মেয়ে ফাতিমার বিরুদ্ধেও চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হত তাহলে আমি তার হাতও কেটে দিতাম” (বুখারী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্)। বর্তমান এই দুর্নীতির মহামারী থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং ন্যায়পরায়ণ শাসনব্যবস্থা- খিলাফত ফিরিয়ে আনতে হিযবুত তাহ্রীর-এর সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আল্লাহ্ ﷻ বলেন,
﴿أَفَلاَ يَتُوبُونَ إِلَى اللَّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ﴾
“তবে কি তারা তওবা করে আল্লাহ্’র দিকে ফিরে আসবে না এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ্ যে বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” [সূরা আল-মায়েদাহঃ ৭৪]।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস