তথাকথিত “সংস্কার” নিয়ে উপনিবেশবাদী আমেরিকার জবরদস্তি বাংলাদেশে তার আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়!
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
তথাকথিত “সংস্কার” নিয়ে উপনিবেশবাদী আমেরিকার জবরদস্তি বাংলাদেশে তার আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়!
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন চলমান সংস্কার উদ্যোগ ও সেগুলোর অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গত সপ্তাহে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজের সাথে বৈঠক করে। জ্যাকবসন ও তার ডেপুটিরা প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সাথেও ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছে। বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রের উন্নয়নে’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার নামে বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে আমরা ঘনঘন বৈঠক ও বিবৃতি লক্ষ্য করছি, যেখানে আমাদের শাসনব্যবস্থায় সংস্কারের আহ্বান জানানো হচ্ছে। আমাদের এবিষয়ে সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে, সংস্কার ও তথাকথিত ‘গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা’ নিশ্চিতের নামে আমেরিকার এই চাপ কোনক্রমেই আমাদের জনগণের জন্য মঙ্গলজনক নয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, নব্য-উপনিবেশবাদী আমেরিকা একদিকে যখন ‘গণতন্ত্র’ ও ‘মানবাধিকারের’ কথা বলেছে, তখন অন্যদিকে সর্বদা নিজ স্বার্থে স্বৈরশাসকদের সমর্থন দিয়েছে। মার্কিনীরা এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বা মানবাধিকার প্রচারের চেয়ে তাদের কৌশলগত ও প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে (যেমন: ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’— যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির একটি স্তম্ভ)। আমরা মার্কিন নীতিতে তাদের এই দ্বিচারিতা প্রত্যক্ষ করেছি, যেমন: তারা একদিকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের সাথে কূটনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং অন্যদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত কিছু বাংলাদেশী নিরাপত্তা কর্মকর্তার উপর ‘প্রতীকী’ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এই ধরনের প্রতারণামূলক কৌশল গভীরভাবে প্রোথিত। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মুখোশের আড়ালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা তার প্রতারণা লুকিয়ে রাখে, এবং তার নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করার জন্য অন্যান্য দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে। তাই, ‘সংস্কার’ নামক এই রাজনৈতিক ‘পুতুলনাচ’ নিয়ে আমেরিকার পক্ষ থেকে ঘন ঘন ফলো-আপের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশের উপর তার আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম, এবং হাসিনার চেয়ে অধিক সহযোগিতা প্রদানের মনোভাবসম্পন্ন একটি সরকার এই অঞ্চলে আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থকে আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করতে পারবে। তাই, উপনিবেশবাদী আমেরিকা বাংলাদেশের সংস্কারকে ‘সমর্থন’ করার নামে মূলত চীনকে মোকাবেলা করতে এবং আদর্শিক রাজনৈতিক ইসলাম তথা নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্’র উত্থান ঠেকাতে মার্কিন নিরাপত্তা কাঠামোর সাথে একত্রিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে।
হে দেশবাসী, যে কারণে আপনারা হাসিনার অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, রক্ত দিয়েছিলেন, এবং প্রকৃত পরিবর্তনের আশা করেছিলেন, তার সবই বৃথা যাবে, কারণ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী আপনাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, তারা এখনও স্বীকার করতে রাজি নয় যে, এই নিপীড়নের ‘প্রকৃত কারণ’ শুধু স্বৈরাচারী হাসিনা নয়, বরং যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন এবং যে ‘নতুন রাজনৈতিক সমাধানই’ প্রণয়ন করা হোক না কেন, আমরা মুক্ত হতে পারবো না, যদিনা আমরা এই পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার কবল থেকে মুক্ত হতে পারি—যা আমাদের দুর্দশার আসল কারণ। তাই, হাসিনা উৎখাত হলেও আপনাদের কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসেনি, বরং কেবলমাত্র আমেরিকার এজেন্ডাই এখানে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হবে। হে দেশবাসী, আপনাদের আন্দোলন ইতিমধ্যেই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, এবং পুরোনো ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। আপনারা এরকম কোন ভুল ভাবনা ভাববেন না যে পুরনো ব্যবস্থার মানে হচ্ছে হাসিনার ব্যবস্থা। বরং আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা রাজনৈতিক সমাধানই হচ্ছে সেই মূল ব্যবস্থা, যা তাদের স্বার্থে স্বৈরাচারী কিংবা গণতান্ত্রিক সব ধরনের রাজনীতিবিদদের লালন করে। এই বিশ্বব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা। কিন্তু এরপরও মার্কিনীদের প্রতি নতজানু এই দেশের রাজনৈতিক চিন্তাবিদগণ আপনাদেরকে ‘বাস্তববাদী’ হতে বলছেন। তাদের দৃষ্টিতে, ভারত আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি, এবং এর ‘বাস্তবসম্মত’ সমাধান হলো আমেরিকার কোলে আশ্রয় নেয়া! হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ, আপনাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছে—‘সংস্কার’ নামক এই ফাঁদ ও সার্কাস প্রত্যাখ্যান করুন। নবুয়তের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে জোরালো আওয়াজ তুলুন, এটি প্রকৃত পরিবর্তন আনয়ন নিশ্চিত করবে এবং কাফির-উপনিবেশবাদীদের কবল থেকে আমাদেরকে মুক্তি দেবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ …﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তিনি তোমাদেরকে এমনকিছুর দিকে আহ্বান করেন যা তোমাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে…” [সূরা আল-আনফাল: ২৪]
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস