ট্রাম্পের মদদে গাজায় অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ-এর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
ট্রাম্পের মদদে গাজায় অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ-এর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ, আজ (২১/০৩/২০২৫) শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে ট্রাম্পের মদদে গাজায় অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। নির্লজ্জ অন্তর্বতি সরকার কাগজে কলমে ইসরাইলের হামলার নিন্দা জানালেও এই সমাবেশ ও মিছিল থেকে রোজাদার মুসল্লিদেরকে গ্রেপ্তার করে ক্রুসেডার আমেরিকা ও অভিশপ্ত ইহুদিগোষ্ঠীর পক্ষ অবলম্বন করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী” [সূরা আল-মুনাফিকূনঃ ১]। আমরা এসব মুসল্লিদের দ্রুত মুক্তি দাবী করছি যারা তাদের ইমানি দায়িত্ব থেকে এই সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে। সমাবেশগুলোতে হিযবুত তাহ্রীর-এর বিভিন্ন সদস্য বক্তব্য প্রদান করেন এবং সমাবেশ পরবর্তী মিছিলগুলো শহরের বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে। সমাবেশগুলোতে বক্তাগণের বক্তব্য ছিল নিম্নরুপ:
গত মঙ্গলবার রাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের অনেকেই তখন গভীর ঘুমে। কেউ কেউ সেহরীর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন, আর কারো কারো সেহরী শেষ। এমন সময় শুরু হয় একের পর এক বোমা হামলা। রাতের অন্ধকারে চলতে থাকে আহত রক্তাক্ত মানুষের আর্তনাদ আর আতঙ্কিত মানুষের দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। মোয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনিতেও ভেসে আসে কান্নার রোল। ট্রাম্পের মদদে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় নতুন করে হামলা চালিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ ফিলিস্তিনীকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েল। ইসরায়েলী বাহিনীর সেই হামলায় হতাহত হতে থাকেন নারী-শিশুসহ সব বয়সী ফিলিস্তিনী। ‘মা, আমি ক্লান্ত, মরে যেতে চাই!’ ইসরায়েলী আগ্রাসনে মানসিক বিপর্যয়ে গাজার শিশুরা। উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে যাওয়ার প্রধান পথও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল, যেন গাজাবাসী তাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পেতে না পারে। এই হামলায় যখন বিশ্ববাসী প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে তখন নেতানিয়াহু স্পর্ধা দেখিয়ে বলছে, “এটা কেবলমাত্র শুরু”। এই আকস্মিক হামলার পর গাজায় নতুন করে স্থল অভিযানও শুরু করেছে ইসরায়েল।
একতরফা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে এই হামলায় প্রত্যক্ষ সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার (১৯ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টামি ব্রুস বলেছে, “যুক্তরাষ্ট্র সব পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের পাশে থাকবে। এটি দুঃখজনক যে হামাস এই যুদ্ধকে আবার শুরু হতে দিয়েছে”। সোমবার (১৭ মার্চ) ফক্স নিউজের ‘হ্যানিটি’ শোতে হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছে, “সোমবার রাতে গাজায় হামলা সম্পর্কে ইসরায়েলকে পরামর্শ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন এবং হোয়াইট হাউজ”। এই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ থাকা সত্ত্বেও যারা গাজাবাসীর মুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ‘জাতিসংঘ’-এর কাছে আহ্বান জানায় তারা পশ্চিমাদের দালাল ছাড়া আর কি হতে পারে? মুসলিম রাষ্ট্রের এসব দালাল শাসকগোষ্ঠীরা পশ্চিমাদের, বিশেষ করে ক্রুসেডার যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনকে তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেছে। অথচ, আল্লাহ্ ﷻ স্পষ্ট করে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ্ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না [সূরা আল-মায়িদাঃ ৫১]। হে দেশবাসী, গাজার হামলায় যখন বিশ্ব কাঁদছে, তখন ইসরায়েলী বন্দিদের মুক্তি চাইল ভারত! [সময় নিউজ, ১৯ মার্চ ২০২৫] । আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “ঈমানদারদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় সমগ্র মানবমন্ডলীর মধ্যে অবশ্যই তুমি ইহুদি ও মুশরিকদের সর্বাধিক কঠোর পাবে” [সূরা আল-মায়িদাঃ ৮২]।
হে দেশবাসী, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “নিশ্চয়ই ইমাম (খলিফা) হলেন একটি ঢাল যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ করো এবং যার দ্বারা নিজেদের রক্ষা করো” (সহীহ্ মুসলিম)। এখান থেকে পরিষ্কার একমাত্র খলিফাই হচ্ছেন মুসলিমদের প্রকৃত অভিভাবক। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, ১৮৯৬ সালে ইহুদি নেতা থিওডোর হার্জল (Herzl Tivadar) খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের বসবাসের জন্য একটি চুক্তিপত্র অনুমোদনের প্রস্তাব করে। এর বিনিময়ে খলিফাকে ২০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২.২ মিলিয়ন ডলার) দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। জেরুজালেম বিক্রয়ের এই প্রস্তাব খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “হার্জলকে এই বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ না নিতে বলে দাও। আমি তা বিক্রি করতে পারব না। এমনকি এক মুষ্ঠি পরিমাণও নয়। কারণ এই ভূমি আমার নয়, মুসলিমদের। মুসলিমরা নিজেদের রক্ত দিয়ে এই ভূমি ক্রয় করেছে। তাদের রক্ত এর মাটিতে মিশে আছে। আমাদের থেকে তা ছিনিয়ে নেয়ার আগে আমরা পুনরায় নিজেদের রক্ত দিয়ে তা সিক্ত করব”। ১৯২৪ সালে কাফির উপনিবেশবাদী ব্রিটেন তার দালাল ধর্মনিরপেক্ষ মোস্তফা কামাল পাশার সহযোগীতায় মুসলিমদের এই ঢাল খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে। খলিফার অনুপস্থিতে মুসলিম উম্মাহ্ অভিভাবকহীন, মুসলিম ভূমি পঞ্চাশটিরও বেশী ভাগে বিভক্ত এবং নির্বোধ শাসক দ্বারা পরিবেষ্টিত, ফিলিস্তিনের পবিত্রভূমি ও আল-আকসা মসজিদ অভিশপ্ত ইহুদিগোষ্ঠী দ্বারা দখলকৃত, ফিলিস্তিন-কাশ্মীর–রোহিঙ্গা মুসলিমসহ সর্বত্র মুসলিমগণ রক্তাক্ত, মুসলিমগণের ঈমান-আক্বিদা-মর্যাদা ভুলন্ঠিত এবং সম্পদ ও সার্বভৌমত্ব লুণ্ঠিত। আমাদের সবাইকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ফিলিস্তিনের মুসলিমদের মুক্ত করতে আপনারা যেসব মিছিল-সমাবেশ করছেন এসব মিছিল-সমাবেশ থেকে ‘জাতিসংঘ’ কিংবা দালাল শাসকগোষ্ঠীকে আহ্বান না জানিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জোর দাবী তুলুন। কারণ শুধু দোয়া করলে আসমান থেকে ফেরেস্তা এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করবে না, বরং আল্লাহ্ ﷻ একাজে আমাদেরকে ফেরেস্তা দিয়ে সাহায্য করবেন। “নিশ্চয়ই আমি সাহায্য করবো রাসূলদেরকে ও মু’মিনগণকে পার্থিব জীবনে এবং সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে” [সূরা গাফিরঃ ৫১]।
হে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত মুসলিম উম্মাহ্’র সাহসী সন্তানগণ! হে সালাউদ্দিন আইয়ুবীর উত্তরসূরী! আপনারা জানেন, খিলাফতের অধীনে মুসলিম সামরিক বাহিনীর গর্জনই অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে যথেষ্ট। উম্মতের মধ্যে এমন লাখো-কোটি সাহসী সৈনিকরা রয়েছেন, যারা আল্লাহ্’র রাস্তায় মৃত্যুকে সেভাবে পছন্দ করে যেভাবে তাদের শত্রুরা জীবনকে পছন্দ করে। শাসকগোষ্ঠী মুসলিম সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে বন্দি করে রেখেছে। ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার পথে এই শাসকগোষ্ঠীই প্রধান বাধা। তাই, আপনাদেরকে সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবী’র পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে। যিনি মুনাফিক শাসকদের উৎখাত ও মুসলিম ভূমিগুলোকে একীভূত করে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে ১১৮৭ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের দখল থেকে জেরুজালেমকে মুক্ত করেন। আপনাদের কর্তব্য হচ্ছে, দালালগোষ্ঠীকে পাহারা না দিয়ে, মুসলিম উম্মাহ্’র জন্য দায়িত্বশীল খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ (ক্ষমতা) প্রদান করা। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্র মুসলিম উম্মাহ্’র সামরিক বাহিনীগুলোকে একত্রিত করবে এবং ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে সামরিক অভিযানে প্রেরণ করবে।
﴿وَمَا لَكُمْ لاَ تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنْ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا﴾
“আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ অসহায় নর–নারী এবং শিশুরা চিৎকার করে বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে উদ্ধার করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন উদ্ধারকর্তা (অভিভাবক) নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী” [সূরা আন-নিসা: ৭৫]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস