আমাদের সামরিক বাহিনীর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকার ঘোষণা দিয়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া হাসিনা সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ‘ঘুটি’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে চায়
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
আমাদের সামরিক বাহিনীর কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকার ঘোষণা দিয়ে বিক্রি হয়ে যাওয়া হাসিনা সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ‘ঘুটি’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে চায়
বাংলাদেশ গত ১২ই মে হতে দুই দিনব্যাপী ‘ইন্ডিয়ান ওশান কন্ফারেন্স ২০২৩’ (IOC) আয়োজন করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন সম্মেলনের এই ষষ্ঠ সংস্করণটি আয়োজন করে। ভারতের ক্ষেত্রে এই আইওসি’র (IOC) কৌশলগত তাৎপর্য রয়েছে, কারণ এটি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের সামুদ্রিক দর্শন – ‘এই অঞ্চলে সকলের জন্য নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি’ বা Security and Growth for All in the Region (SAGAR)–এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত যে, এই আই.ও.সি এবং ভারতের সামুদ্রিক দর্শন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “ফ্ল্যাগশিপ” নীতি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (আই.পি.এস) সাথে সন্নিবদ্ধ। এবং এই সম্মেলনটি এমন এক সময়ে আয়োজন করা হয়েছে যখন হাসিনা সরকার সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক’ ঘোষণা করেছে। মার্কিন ডেপুটি এ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার বিশেষভাবে আই.ও.সি-তে যোগ দেয়ার জন্যই বাংলাদেশে আসে, এবং মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যানও সম্মেলনটিতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিল (সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন, ১৩ই মে, ২০২৩)। উপরন্তু, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ মার্কিন সেনাবাহিনীর আমন্ত্রণে ‘ল্যান্ড ফোর্সেস প্যাসিফিক কনফারেন্স (LANPAC)’ নামে পরিচিত একটি সামরিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য গত রবিবার একটি সরকারি সফরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা হন, আর এই সম্মেলনটি মূলত মার্কিন সেনা সমর্থিত একটি ফোরাম যার লক্ষ্য হচ্ছে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিকে শক্তিশালী করা। যুক্তরাজ্যের দালাল বিশ্বাসঘাতক হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাহসী বক্তব্য দিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে, কিন্তু দরজার আড়ালে সে আসলে ক্ষমতায় থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষি করছে।
হে দেশবাসী, ক্রমবর্ধমান মার্কিন আধিপত্যে বাংলাদেশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে, এবং বিক্রি হয়ে যাওয়া হাসিনা সরকার সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দেশের সার্বভৌমত্ব সমর্পণ করে তার সিংহাসন রক্ষার চেষ্টা করছে। ঠিক যখন বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের বেড়াজালে আমাদেরকে টেনে আনা হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম এই সম্মেলনে (আই.ও.সি-তে) বলেছে যে: বাংলাদেশের কোনো সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই, কিংবা আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার কোন ইচ্ছাও পোষণ করে না। কী লজ্জার বিষয় যে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য আমাদের সাহসী মুসলিম সেনাবাহিনীর সামরিক দর্শন বিরোধী! তার সরকার চায় না আমরা সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ করি, বরং তারা চায় আমাদের সেনাবাহিনী সাম্রাজ্যবাদী কাফির-মুশরিক শত্রুদের সামনে নতজানু হয়ে থাক। তারা এই অঞ্চলে চীনের মোকাবেলায় আমাদের সাহসী সামরিক বাহিনীকে মার্কিন যুদ্ধের বলি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। অতএব এসব পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ দালাল শাসকদের দ্বারা আমাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়।
হে মুসলিমগণ, এই ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে খিলাফতের বরকতময় শাসনের অধীনে ছিল। উমাইয়াহ্ খলিফা আল-ওয়ালিদ বিন আবদ আল-মালিক ৭১১ খ্রিস্টাব্দে সাহসী সামরিক জেনারেল মুহাম্মাদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে ইরাক থেকে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী প্রেরণ করে এই অঞ্চল জয় করেছিলেন। এইভাবে, এই উপমহাদেশের মুসলিমগণ ইসলাম, রক্তের বন্ধন এবং গৌরব-বিজয়ের অংশীদারিত্বের ইতিহাসের মাধ্যমে অবিচ্ছেদ্যভাবে একে-অপরের সাথে আবদ্ধ। কিন্তু, ১৯২৪ সালে খিলাফত ধ্বংস হওয়ার পর ধর্মনিরপেক্ষ দালাল শাসকদের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগে পশ্চিমা কাফিরগোষ্ঠী বিভেদ সৃষ্টিকারী সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদভিত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে এই উপমহাদেশে উম্মাহ্’র ঐক্য চূর্ণ করে দিতে সক্ষম হয়। এসব ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী এই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে এবং জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে পশ্চিমা কাফির ও মুশরিকদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে ক্ষমতায় বিদ্যমান থাকে। যতক্ষণ না আমরা এই দাসসুলভ শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের হাত থেকে পরিত্রাণ পাই, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই অঞ্চলের ঔপনিবেশিক প্রভাব ছিন্ন করতে পারব না। হিযবুত তাহ্রীর নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনতে ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে জনগণকে অত্যাচার-নিপীড়নের অন্ধকার থেকে মুক্ত করে ইসলাম ও এর ন্যায়বিচারের আলোয় উদ্ভাসিত করতে পারে। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন: “সুলতান হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহ্’র ছায়া” [আল-জাম‘আ আস-সাগীরে এটি সহীহ্ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ]। আসন্ন খিলাফত এই অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোর কৃত্রিম সীমানাকে উপড়ে ফেলবে এবং তাদেরকে আবারও তাওহিদের পতাকাতলে নিয়ে আসবে। এটি পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে পুনরায় একত্রিত করবে, এবং এই অঞ্চলে মুশরিক ও কাফিরদের আধিপত্যের অবসান ঘটাতে মহানবী ﷺ-এর সুসংবাদ অনুযায়ী ভারতকে জয় করবে। সমগ্র বিশ্বে ইসলামের আধিপত্য বিস্তারের যে পররাষ্ট্রনীতি খিলাফত রাষ্ট্রের রয়েছে তাতে এটির সামরিক দর্শন দৃঢ়ভাবে প্রোথিত থাকবে। এটির পররাষ্ট্রনীতিতে তথাকথিত ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কোনো অবকাশ নেই। খিলাফত রাষ্ট্র তার সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে শক্তিশালী করবে যাতে কাফির-সাম্রাজ্যবাদীদের হৃদয়ে ভীতি জাগ্রত হয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পবিত্র কুর‘আনে বলেন:
* وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ * “আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যা দ্বারা তোমরা ভীত–সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ্’র শক্রকে ও তোমাদের শক্রকে” [সূরা আল-আনফাল: ৬০]। সুতরাং, এটি স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলের উপর থেকে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও তাদের সংস্থাসমূহের সকল প্রকার প্রভাব দূর করবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে খিলাফতের পররাষ্ট্রনীতি হবে যুদ্ধভিত্তিক নীতি। ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও শাসনের অধীনে সকল মানব-সমাজকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে খিলাফত জিহাদের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের কাছে ইসলামী দাওয়াহ্ পৌঁছে দেবে, যুদ্ধরত কাফির শত্রুদের সাথে মিত্রতা করা এবং আমাদের ভূমিতে তাদের অশুভ উপস্থিতির সুযোগ দেয়া তো দূরের বিষয়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: *هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا* “তিনিই তাঁর রাসূলকে দিক–নির্দেশনা ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এই দ্বীন অন্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী হয়। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট” [সূরা আল-ফাতহ: ২৮]।
হে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারগণ, আপনারা কি বুঝতে পারছেন না যে, এই বিক্রি হয়ে যাওয়া শাসকগোষ্ঠী তাদের কাফির প্রভুদের যুদ্ধে আপনাদেরকে বলির পাঁঠা হিসেবে ব্যবহার করছে? কাফিরদের যুদ্ধে আপনাদেরকে খরচের খাতায় ফেলে দেয়া হয়েছে দেখে কি আপনাদের রক্ত টগবগ করে না? এসব নিচু শাসকেরা নির্লজ্জভাবে বলে, তাদের কোন সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। সাহসী সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) এবং মহান আনসারগণের উত্তরসূরী এই আপনারা তাদের দৃষ্টিতে কেবল কাফিরদের স্বার্থ রক্ষার সস্তা হাতিয়ার মাত্র! আমরা আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, মুসলিম হিসেবে আপনাদের রক্ত কি কাফিরদের স্বার্থ রক্ষায় প্রবাহিত হওয়ার কথা নাকি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে প্রবাহিত হওয়ার কথা? আল্লাহ্’র সন্তুষ্টির জন্য যে জিহাদ করার কথা তা পরিত্যাগ করে চীনের মোকাবেলায় আমেরিকার স্বার্থে ব্যবহৃত হয়ে আপনারা কিভাবে পরকালে মুক্তির কথা ভাবতে পারেন? আপনাদের যুদ্ধ কেবলমাত্র আল্লাহ্’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জিহাদ করা হতে পারে; এছাড়া অন্য যেকোন কিছু আপনাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে অপমান ব্যতিরেকে আর কিছুই বয়ে আনবে না। আল্লাহ্’র রাসূল ﷺ সতর্ক করে বলেছেন, “কোন মানুষ যেন জিহাদ পরিত্যাগ না করে, এটা ব্যতীত তাদের জন্য রয়েছে অপমান” [আহমাদ]। সুতরাং, সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ আল-কাওউয়ি-এর উপর ভরসা রাখুন এবং বিশ্বাসঘাতক ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও তাদের শাসনব্যবস্থা অপসারণ করতে তৎপর হোন। ন্যায়নিষ্ঠ খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সাহসী ও সত্যবাদী দল হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ (সামরিক সহায়তা) প্রদান করুন। সমগ্র উপমহাদেশকে মুক্ত করে এই অঞ্চলকে ইসলামের দুর্গে পরিণত করার উদ্দেশ্যে খলিফা আপনাদেরকে জিহাদে নেতৃত্ব দিবেন।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়