হে মুসলিমগণ, নির্বাচনী সার্কাস এখন তেমনই প্রহসন, গণতন্ত্র নিজে যেমন! নির্বাচন তখনই সুষ্ঠু ও অর্থবহ হবে, যখন তা হবে খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
হে মুসলিমগণ, নির্বাচনী সার্কাস এখন তেমনই প্রহসন, গণতন্ত্র নিজে যেমন!
নির্বাচন তখনই সুষ্ঠু ও অর্থবহ হবে, যখন তা হবে খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে
২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতন্ত্রের নামে রাজনৈতিক সার্কাস আবারও বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। রাজপথে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ হঠাৎ করে হাসিনা সরকার প্রধান বিরোধী দল বি.এন.পি-কে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সমবেত হওয়ার অনুমতি দিচ্ছে। জনগণ যেহেতু হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের কবল থেকে মুক্তি চায়, তাই অনেকে একটি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ নিশ্চিত করাকেই শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনের একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচনা করে। তারা আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার দাবিতে সারাদেশে বিএনপির মহাসমাবেশ দেখে আশাবাদীও হচ্ছে। কিন্তু, তাদের চোখে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ‘শুভ লক্ষণের’ মধ্যে, ব্যাপক ভোট কারচুপি ও ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগে (গত বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২) হঠাৎ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গাইনবান্ধা-৫ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে তাদেরকে সংশয়পূর্ণ করে তুলেছে।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বিরোধী-রাজনৈতিক দলসমূহ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে বিদেশী দেশসমূহের সর্বাত্মক হস্তক্ষেপ কামনা করছে। এমনকি আমরা প্রত্যক্ষ করছি, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা RAB ও পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে কিভাবে আমলাদেরকে এক কঠিন সংকেত দিল। তাদের নিকট আমেরিকার সুস্পষ্ট চাওয়া যে তারা তার দাবী অনুযায়ী কাজ করুক, এমনকি যদি এতে সরকারের বিরুদ্ধেও যেতে হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা সর্বজনবিদিত যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাসিনা সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে কিংবা পরিবর্তনের মাধ্যমে হলেও তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ ত্বরান্বিত করার উপর জোর দিচ্ছে; আর অন্যদিকে যুক্তরাজ্য সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ হাসিলের কাড়াকাড়িতে তার অংশটুকু ঠিক রাখতে তার বিশ্বস্ততম দালাল শেখ হাসিনাকে প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছে। আমরা পুলিশ বাহিনী এবং হাসিনার নির্বাচন কমিশনের দালালদের মধ্যে প্রকাশ্য উত্তেজনা লক্ষ্য করছি, এসব দালালেরা পুলিশকে “নখহীন” এবং “দন্তহীন” বলে অভিহিত করেছে (“নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডিসি, এসপি’র মতানৈক্য একটি ভুল বোঝাবুঝি: সিইসি”, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ১১ই অক্টোবর, ২০২২)।
মূলধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় সম্পৃক্ততা বজায় রাখতে, এসব রাজনৈতিক দল এবং সমাজের আপোষকামী অংশের কেউই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি উত্থাপন করে না। ঔপনিবেশিক-পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার (ওরফে নব্য-উপনিবেশবাদের) অধীনে গণতান্ত্রিক নির্বাচন কি আদৌ জনগণের ইচ্ছা ও প্রতিনিধিত্বকে প্রতিফলিত করতে পারে এবং বাংলাদেশকে কি উপনিবেশবাদীদের কবল থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে – তাদের থেকে যারা আমাদের কৌশলগত সম্পদে হানা দেয় এবং আমাদের সেনাবাহিনীকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে? গত পঞ্চাশ বছরে আমরা বাংলাদেশে অনেক নির্বাচন দেখেছি, কিন্তু সেগুলো কি আমাদেরকে আই.এম.এফ-বিশ্বব্যাংকের সম্পদ লুটপাটের, অর্থনীতি ধ্বংসের ও জনগণকে চিরতরে দুর্দশায় নিমজ্জিত রাখার নীতি থেকে মুক্তি এনে দিয়েছে? প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশের কোনো নির্বাচিত সরকারই আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়নি।
হে দেশবাসী, পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার অধীনে এটাই গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রকৃত বাস্তবতা। নষ্ট পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ না করে কেবল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ কিংবা ‘হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়’- এই দাবিতে আন্দোলন করা অর্থহীন। অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে কেবলমাত্র একপেশে নির্বাচনকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করলে তা যথার্থ হবে না, কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যবস্থার পরিবর্তন হয় না, বরং এটি কেবল একই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত রেখে শাসকদের চেহারা পরিবর্তনের উপায় মাত্র। আপনারা বারংবার পশ্চিমাদের তৈরি করা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মায়ায় বিপথে চালিত হতে পারেন না। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন: “একজন মু’মিন একই গর্তে দু’বার দংশিত হয় না” (বুখারী)। কিন্তু আপনারা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ এবং কতিপয় নির্বোধ বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা অসংখ্যবার দংশিত ও প্রতারিত হয়েছেন, যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে আপনাদের জীবনের মাপকাঠি হিসেবে নির্ধারণ করতে চায়। কেবলমাত্র এই ব্যবস্থা উপড়ে ফেলার মাধ্যমেই প্রকৃত পরিবর্তন ও মুক্তি অর্জন সম্ভব, যা পশ্চিমা আধিপত্য ও এই ব্যবস্থা থেকে জন্ম নেয়া দালাল শাসকদের বিদায়ঘণ্টা বাজাতে পারে।
হে মুসলিমগণ, ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থা তথা নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় খিলাফত রাশিদাহ্’র অধীনে সুষ্ঠূ ও অর্থবহ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, যা জনজীবনে প্রকৃত পরিবর্তন বয়ে আনবে। খিলাফতের অধীনে সার্বভৌমত্ব (sovereignty) কেবলমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র (অর্থাৎ, বিধি-বিধান ঐশ্বরিক উত্স থেকে উদ্ভূত হয়)। তাই, এই ব্যবস্থায় কাফির-উপনিবেশবাদীদের পক্ষে তো দূরের বিষয়, এমনকি দেশীয় কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের সুবিধা অনুযায়ী আইন প্রণয়নেরও সুযোগ নেই। এতে শাসনের কর্তৃত্ব (authority) জনগণের, যারা নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা ও প্রতিনিধিত্বকে সত্যিকার অর্থে প্রতিফলিত করতে সক্ষম। গণতন্ত্রের বিপরীতে, খিলাফত ব্যবস্থায় শাসনের কর্তৃত্ব জনগণ ধারণ করে এবং তারা শাসকদের (খলিফা ও গভর্নরদের) সাথে ঐশী শারী‘আহ্ মোতাবেক শাসন করার চুক্তি সম্পাদন করে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে শারী‘আহ্ পরিষ্কারভাবে জনগণের অনুমোদন গ্রহণকে অপরিহার্য করেছে। মাহকামাত আল-মাজালিমের আদালত (the Court of Unjust Acts) সাংবিধানিক চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য যেকোনো শাসককে অপসারণ করতে পারে। এই আদালত নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন, এবং জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে নাগরিকদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত যেকোন অভিযোগ শ্রবন করার অধিকার রাখে। খিলাফতের অধীনে থাকা নাগরিকগণ প্রতিটি প্রদেশে (উলাইয়াহ্) সরাসরি নির্বাচিত আঞ্চলিক পরিষদের (মাজলিস উল-উলাইয়াহ্) মাধ্যমে প্রকৃত জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার উপভোগ করবে। এই পরিষদ নিজেদের মধ্য থেকে একটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচিত করে যা উম্মাহ্ কাউন্সিল (মাজলিস আল-উম্মাহ্ বা শুরা কাউন্সিল) নামে পরিচিত। তারা জাতীয় পর্যায়ে শাসককে এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে নিযুক্ত গভর্নরদেরকে (ওয়ালী) জবাবদিহি করবে ও পরামর্শ প্রদান করবে। এভাবেই খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সমাজে সুবিচার, স্থিতিশীলতা ও সমন্বয় আনয়ন করবে। অতএব, খিলাফত ব্যবস্থায় সত্যিকারের জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার বিদ্যমান। সুতরাং, গণতন্ত্রের অধীনে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ নামক মায়াজালের ফাঁদ থেকে জেগে উঠুন এবং খিলাফত রাশিদাহ্’র অধীনে নির্বাচনের আহ্বান জানান। আল্লাহ্ আজ্জা ওয়া জ্বাল বলেন:
*إِنِ ٱلْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوٓا۟ إِلَّآ إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ*
“শাসনের যাবতীয় কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহ্’র। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করবে না; এটাই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না” [সূরা ইউসুফ: ৪০]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়