Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৭৬ তম সংখ্যা । ১৭ জানুয়ারী, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“নতুন পাঠ্যবই এর ট্রান্সজেন্ডার শরিফার গল্পের পেছনে কী?”
“আ. লীগ ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে: প্রধানমন্ত্রী”
“পাঠদান হইতে মন্ত্রীপুত্রের বউভাত উত্তম!”
“আসুন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি: শেখ হাসিনা”
“পুলিশ শুনলে মানুষ আগে ভয় পেতো এখন ভরসা পায়”
“বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র: রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লাউবেখার”
“নতুন পাঠ্যবই এর ট্রান্সজেন্ডার শরিফার গল্পের পেছনে কী?”
খবরঃ
২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার লক্ষ্যে সরকার প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে এবছর নতুন বই দিয়েছে। এই বইগুলোর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে ‘সম্প্রদায়’ নামক অধ্যায়ের (পৃষ্ঠা ৪৪-৬১) ‘নতুন পরিচয়’ নামক পাঠে শরিফা নামক একজন ‘ট্রান্সজেন্ডার’ এর গল্প উপস্থাপন করা হয়। গল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি নতুন প্রশ্নের উদ্রেক ঘটানো হয়েছে। (https://drive.google.com/file/d/1H5TCzUhmgAJxX03-fKLz8l5OApeeY4Y-/view)
মন্তব্যঃ
আমাদের পাঠ্যবইয়ে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ ধারণা প্রদান শুধুমাত্র হিজড়াদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি আসলে ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা বিশ্বের ‘Genderism’ আন্দোলনের অংশ। শাসক ও চার্চের দ্বিমুখী জুলুমের যে প্রেক্ষাপটে তৎকালীন খ্রীস্টিয়ান ফ্রান্সে ধর্মনিরপেক্ষাতাবাদের উত্থান হয় তার অন্যতম ছিল নারীর প্রতি অমানবিক জুলুম ও নিপীড়ন। অতঃপর তারা ধর্মকে সব সমস্যার মূল হিসেবে আখ্যায়িত করে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে একে আলাদা করে ফেলে। কিন্তু শতকের পর শতক পার হলেও তারা যখন তাদের সমাজেই নারীর মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সমতা নিশ্চিত করতে পারেনি তখন তারা দীর্ঘদিনের নারী-পুরুষ এই দুই লিঙ্গের সমতা প্রতিষ্ঠাকেন্দ্রীক আন্দোলনকে ‘Genderism’ আন্দোলনে পরিণত করে। ‘Genderism’ এর ধারনা মতে একজন মানুষের লিঙ্গ নির্ধারিত হয় সৃষ্টিগত শারীরিক বাস্তবতার ভিত্তিতে নয় বরং ব্যক্তির ইচ্ছা ও নিজেকে সে কিভাবে দেখতে চায় তার ভিত্তিতে। ফরাসী দার্শনিক ‘সিমনে ডি বিয়োভয়ের’ তার ‘The Second Sex’ নামক বইতে বলে, “কেউ নারী হিসেবে জন্ম নেয় না, বরং সে একজন নারীতে পরিণত হয়”। এই আদলেই সপ্তম শ্রেনীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় রনির মা বলেন, “ছোটদের কোন ছেলে-মেয়ে হয় না। বড় হতে হতে তারা ছেলে বা মেয়ে হয়ে উঠে”। পশ্চিমা অভিনেত্রী Ellen Page ২০২০ সালের শেষে নিজেকে Elliot Page হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে যেভাবে বলে, “I want to share with you that I am trans, my pronouns are he/they and my name is Elliot.” [https://news.sky.com/story/ellen-page-comes-out-as-transgender-and-changes-name-to-elliot-12148275]। ঠিক একই আদলে উপরোক্ত বইয়ের শরীফা বলে, “ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময়ে বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে”। ট্রান্সজেন্ডারের অধিকারের আন্দোলন নারীর অধিকার ও হিজড়াদের অধিকারের কথা বলে শুরু হলেও পশ্চিমা বিশ্বে দ্রুতই এই আন্দোলন সমকামীদের অধিকার আন্দোলনে পরিণত হয়। শরিফার মত ট্রান্সজেন্ডাররা যদি নিজেই নিজের লিঙ্গ নির্ধারণ করার অধিকার রাখতে পারে সমকামীরা একইভাবে সমলিঙ্গের প্রতি তাদের যৌন আকর্ষনকেও যুক্তিসংগতভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। এভাবেই পশ্চিমা বিশ্বে সমকামিতা বৈধ হয়ে উঠে। এবং বলাবাহুল্য আমাদের সরকার কর্তৃক গৃহীত এই পাঠ্যক্রম ট্রান্সজেন্ডারের অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে আমাদের সমাজেও আসলে ধীরে ধীরে সমকামিতার মত সমাজ ধ্বংসকারী বিষয় প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
‘Genderism’ এর চিন্তা দুটি কারণে স্পষ্টভাবে ভ্রান্ত। প্রথমত, এটি মানুষের বাস্তবিক প্রকৃতি ও প্রবণতারকে অস্বীকার করে। এর প্রভাবে ইতিমধ্যেই পশ্চিমা বিশ্বে ছেলে-মেয়ের স্বাভাবিক বাস্তবতাকেন্দ্রীক ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভুমিকাগুলো এবং পরিবারের মত মানবজাতিকে সুরক্ষা দেবার মৌলিক ইউনিটটি হুমকির মুখে পড়েছে। দ্বিতীয়ত, এটি এসেছে ব্যক্তি স্বাধীনতার পশ্চিমা চিন্তা থেকে, যার উৎস আসলে জীবন থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করা বা ধর্মনিরপেক্ষাতাবাদ। আর ধর্মনিরপেক্ষাতাবাদের ভিত্তি হচ্ছে, এটি একটি আপোসমূলক চিন্তা যা এমনকি মানুষের স্বাভাবিক চিন্তার সাথেও সাংঘর্ষিক। মহাবিশ্বের একজন স্রষ্টা আছেন যিনি সর্বজ্ঞানী ও ভুলের ঊর্ধ্বে, এটি বিশ্বাস করার পরও স্রষ্টাকে চার্চে বা মসজিদে আবদ্ধ রেখে বলা হচ্ছে সমাজে বা রাষ্ট্রের বিষয়াদির ব্যাপারে স্রষ্টার চেয়ে মানুষ বেশী জ্ঞানী, এমন সাংঘর্ষিক অসত্যের উপরেই ধর্মনিরপেক্ষাতাবাদ দাঁড়িয়ে আছে। এটি এতই ধ্বংসাত্মক যে এর গভীর থেকে গভীরতর বাস্তবায়নের ফলে ২০২১ সালে ফ্রান্সের ৬৩% এর বেশি সন্তান জারজ হিসেবে জন্ম নিয়েছে, আর তাদের ১৮-৩৪ বছরের নারীদের ৪৪% এবং পুরুষদের ২৮% বলেছে যে তারা হয় সমকামিতায় জড়িত অথবা এটাকে সঠিক মনে করে (সূত্রঃ statista.com), অথচ কিছুদিন আগেও ফ্রান্সে এমনটি কল্পনা করা যেত না। এভাবেই একটি ভ্রান্ত আক্বিদা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ জাতিগুলোকে মিথ্যায় ডুবাতে ডুবাতে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এদের ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “অথবা (তাদের কর্ম) প্রমত্ত সমুদ্রের বুকে গভীর অন্ধকারের ন্যায়, যাকে উদ্বেলিত করে তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, যার উপরে ঘন কালো মেঘ আছে। একের উপর এক অন্ধকার। যখন সে তার হাত বের করে, তখন তাকে একেবারেই দেখতে পায় না। আর আল্লাহ্ যাকে নূর দেন না তার জন্য কোন নূর নেই” (সূরা আন-নূরঃ ৪০)।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা লুত (আঃ)-এর জাতিকে লক্ষ্য করে বলেন, “তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছ। প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি” [সূরা আ’রাফ ৮১]। সমকামিতা এতই ঘৃন্য অপরাধ যে এজন্য ঐ পুরো জনপদকে উল্টো করে জমিনে ধ্বসিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর আল্লাহ্’র পক্ষ থেকে প্রত্যেক পাপীর নাম লেখা পাথর বর্ষণ করা হয়, এমনকি যেসব পাপী বাসিন্দা কোন কাজে সেই নগরীর বাইরে ছিল তাদের উপরও প্রস্তর খণ্ড এসে পড়ে। ইসলামে মানুষের পরিচয় কেবল নারী অথবা পুরুষ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “এবং পুরুষরা নারীদের মত নয়” (সুরা আল-ইমরান ৩৬)। এবং এই পরিচয় নির্ধারিত হয় শুধুমাত্র বাস্তবিক শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে, কারো ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার ভিত্তিতে নয়। যদি কেউ হিজড়ার মত কোন প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম নেয় তাহলে ইসলামী রাষ্ট্র বিশ্বস্থ দক্ষ ডাক্তার দ্বারা তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার লিঙ্গকে অনুসন্ধান করে তাকে নারী অথবা পুরুষ হিসেবে ঘোষণা করবে। ইসলামে ট্রান্সজেন্ডারের ধারনা হারাম। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ভর্তসনা করেছেন সেসব পুরুষকে যারা নারীদের অনুকরণ করে এবং সেসব নারীকে যারা পুরুষদের অনুকরণ করে”।
-মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“আ. লীগ ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে: প্রধানমন্ত্রী”
খবরঃ
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে এবং জনগণের সেবা করবে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের সহকারী মন্ত্রী চেন ঝোয়া আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে আমরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারি, তাহলে আমরা দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখব এবং জনগণের সেবা করব’… (https://www.deshrupantor.com/national/2023/01/11/402182/)
মন্তব্যঃ
যেকোন রাষ্ট্রের সরকার তার দেশের উন্নয়নে কাজ করবে এটাইতো স্বাভাবিক। এটা তাদের দায়িত্ব এবং জনগণের অধিকার। কিন্তু আমরা প্রায়শঃই দেখি বিদেশী শাসক, রাজনৈতিক নেতা বা কূটনৈতিকদের সাথে বৈঠককালে এদেশের শাসকদের তাদের কাছে উন্নয়নের সাফাই গাইতে হয়। এসব বিদেশী শাসক-কূটনৈতিকরা কি এদেশের উন্নয়ন নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন? মোটেই না। তাই এদেশের কথিত ‘উন্নয়নের’ ধারার সাথে বিদেশী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সম্পর্কটা একটু বিশ্লেষণ করা দরকার।
উন্নয়নের নামে এদেশে যেসব মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার প্রায় সবটাই করা হচ্ছে বিদেশী সংস্থাগুলোর পরামর্শে। এখানে তারা এদেশের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টির চেয়ে তাদের বিনিয়োগ-মুনাফা, তাদের অলস পড়ে থাকা নির্মাণ যন্ত্রপাতি-সামগ্রী-টেকনোলজির লাভজনক ব্যবহারকেই গুরুত্ব দেয়। তাই একটা প্রজেক্ট যদি এদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সার্বিক বিবেচনায় প্রাধান্য নাও পায় কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান তবে তারা এদেশের শাসকগোষ্ঠীকে দিয়ে সেটাকে এদেশের জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়। শাসকগোষ্ঠী তার কমিশন ঠিকই পেয়ে যায় বিদেশী কোন এক ব্যাংক একাউন্টে, প্রজেক্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান পায় তার মুনাফা, বিনিয়োগকারী রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক ব্যাংক পায় তাদের সুদ। কেবল এদেশের জনগণের উপর গিয়ে পড়ে এসব ‘বিলাসী উন্নয়ন’ ঋণের বোঝা। ভর্তুকি কমিয়ে, কর বৃদ্ধি করে, তেল-গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের মত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে শাসকগোষ্ঠী উন্নয়ন উদযাপন করে।
প্রকৃতপক্ষে, একটি পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের মালিকানা চলে যায় পশ্চিমা পরাশক্তির কাছে। এদেশের শাসকগোষ্ঠী পশ্চিমা পরাশক্তি ও তার আঞ্চলিক দোসরদের নিকট এমনভাবে আবদ্ধ যেন তারা তাদের নিয়োগকৃত কর্মচারী। কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক পরিদর্শনে আসলে ম্যানেজার যেভাবে তার কাজ-কর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তারাও সেই একই স্টাইলে পশ্চিমা পরাশক্তি বা তাদের আঞ্চলিক দোসরদের কাছে জবাবদিহিতার সন্মুখীন হতে হয়। অথচ নিয়ম অনুযায়ী যে জনগণের কাছে শাসকদের জবাবদিহি করার কথা তাদেরকে উল্টো হুমকির উপর রাখে (দেখুনঃ‘যারা কুইক রেন্টাল নিয়ে বেশি কথা বলবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেব: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’-যুগান্তর, ১১ জানুয়ারী ২০২৩; ‘উন্নয়নে যাদের গাত্রদাহ তারাই শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চায়’ (https://www.news24bd.tv/details/122700)
উন্নয়ন তখনই কার্যকর ও অর্থবহ হবে যখন আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা আমরা নিজেরাই করতে পারব। তার জন্য দরকার পশ্চিমাদের পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের আক্বীদা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। খলিফার জবাবদিহিতা কেবল বিশ্ব জাহানের মালিক আল্লাহ্’র কাছে এবং জনগণের কাছে, কোন বিদেশী শক্তির কাছে নয়। আজ যদি চীনা নেতা খলিফার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসত খলিফা নিশ্চয়ই বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মত নম নম সুরে উন্নয়ন উন্নয়ন জপে তাদেরকে তুষ্ট করতে যেতেন না, বরং তাদের দেশের উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের বিষয়ে তাদেরকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করতেন। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারা, ইসলামী বিধানের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া যা কোনদিনই আমাদের পক্ষে অর্জন করা সম্ভব হবে না।
-আবু যায়িদ
“পাঠদান হইতে মন্ত্রীপুত্রের বউভাত উত্তম!”
খবরঃ
…ওই তিনটি উপজেলা নিয়ে কুড়িগ্রাম-৪ নামের যে আসন, সেই আসনের এমপি হলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। আর জাকির হোসেনের ছেলে সাফায়েত বিন জাকির সৌরভের বউভাত ছিল সেই রোববারই।… স্কুলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল, সেই স্কুলগুলোর ১ হাজার ২৮০ জন শিক্ষকের সবাই বউভাতে দাওয়াত পেয়েছিলেন। তারা চাঁদা তুলে ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন ও স্বর্ণালংকার সহযোগে দলে দলে সেই বউভাতে শরিক হয়েছেন।… কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেছেন, প্রধান শিক্ষকদের হাতে বছরে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি থাকে। তারা সেখান থেকে রোববার বিদ্যালয় ছুটি দিয়েছেন।… (https://www.prothomalo.com/opinion/column/9o20dtgsqi)
মন্তব্যঃ
যেকোন মিথ্যা ব্যবস্থা যা জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার বৈধতা দানের জন্য লোক জড়ো করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপায়ে গণজমায়েত করানোর প্রয়োজন পড়ে। যেন জনগণ মনে করে যে, এই ব্যবস্থা এবং এটির ধারক-বাহকদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থায় বিশ্বব্যাপী এটাই বর্তমানে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এবং এই লোক জড়ো করাটাই বর্তমানে রাজনীতির সফলতার মাপকাঠি। যে যত বেশি লোক জড়ো করতে পারে সে তত সফল রাজনীতিবিদ। তাই এখানে এভাবে বিভিন্ন উপায়ে পাতানো গণজমায়েত আয়োজন করে জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এই লক্ষ্যেই মানবরচিত এই জনবিচ্ছিন্ন মিথ্যা পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এর ধারক ও বাহকেরা যেকোনো উপায়ে লোক জড়ো করে বিভিন্ন সমাবেশ করে। এমনকি আর ধারক ও বাহকদের একান্ত কোন ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে-শাদী, খৎনা কিংবা জানাযাতেও পদ-পদবীর লোভে ভাড়া করে, জোর করে কিংবা চাকুরী টিকিয়ে রাখার লোভ দেখিয়ে ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে জনসাধারণকে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হয়। আর রাজনৈতিক সভাগুলোতে ঘন্টা হিসেবে ভাড়ায় লোক পাওয়ার বিষয়টিতো রয়েছেই। আলোচিত এই ঘটনাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশে মন্ত্রীর অনুগ্রহ লাভের আশায় ক্লাস ফেলে শিক্ষকদের মন্ত্রীপুত্রের বৌভাতে যেতে হয়েছে। যেন এর মাধ্যমে তারা দেখাতে পারে এই লুটেরা নেতা-এমপিরা এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত ব্যবস্থা এখনো কত জনপ্রিয়! বর্তমান পুঁজিবাদের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মোড়কে গড়ে ওঠা কোন শাসনব্যবস্থাই (গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, উন্নয়নের গণতন্ত্র কিংবা রাজতন্ত্র ইত্যাদি) জনগণের জন্য গড়ে ওঠেনি। ফলত এই রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলোতে কখনোই গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে না। এই ব্যবস্থা এতটাই ঘৃণ্য যে মাত্র আটজনের হাতে পৃথিবীর সাড়ে তিনশো কোটি মানুষের সম্পদ তুলে দিয়েছে। (প্রথম আলো, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭)। তাইতো দেখা যায় পৃথিবীব্যাপী সাধারণ মানুষ ব্যাপক হারে এই ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ইন্ডিয়ান কৃষক আন্দোলন, আমেরিকার ‘ব্লাক লাইভস মেটার’ আন্দোলন ও ‘ওমেন মার্চ’ ইত্যাদি সহ বিভিন্ন গণমানুষের আন্দোলনগুলোতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
এর মূল কারণ হল, বর্তমান এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতিবিরুদ্ধ। মানুষের স্বাভাবিক প্রকৃতি হলো, সে তার প্রবৃত্তি এবং প্রয়োজনগুলোর কাছে অসহায়। ফলে যখন তাকে বিধান প্রণয়নের অধিকার দেয়া হয়, তখন সে তার প্রবৃত্তি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়। ফলে তার গৃহীত বিধান সমগ্র দেশের মানুষের জন্য এমনকি তার জন্যও কল্যানকর হয় না। মানুষ তখন জুলুমের শিকার হয়। তাই মানুষকে বিধান দেওয়ার ক্ষমতা থেকে মুক্ত রাখতে হবে। বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র। যে ব্যবস্থা তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বিধানগুলো বাস্তবায়ন করে তার নাম খিলাফত ব্যবস্থা, যেখানে শাসকগণ শাসন করেন আর জনগণ তাকে জবাবদিহিতা করে ও তার ভুল-ত্রুটি শুধরে দেয়। আল্লাহ্ প্রেরিত এই ব্যবস্থার বিধানসমূহ বাস্তব জীবনে কার্যকরী হওয়ার সাথে সাথে এর সাথে মানুষের আধ্যাত্মিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়। জনগণ মজলিস আল উম্মাহ্’র মাধ্যমে শাসককে জবাবদিহিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে নিজেকে কর্তৃত্বহীন মনে করে না, এটা তার উপর চাপিয়ে দেওয়া কোন ব্যবস্থাও মনে করে না। তখন জনগণ শাসকের জন্য দোয়া করে, আর শাসকও জনগণের জন্য দোয়া করে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে উৎকৃষ্ট শাসক হচ্ছে সেই শাসক, জনগণ যার জন্য দোয়া করে, সেও জনগণের জন্য দোয়া করে…। এখানে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মিথ্যা জনপ্রিয়তা প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন উপায়ে লোকজন জড়ো করার প্রয়োজন পড়ে না।
-মো: জহিরুল ইসলাম
“আসুন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি: শেখ হাসিনা”
খবরঃ
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে ‘অনেক’ এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; বলেছেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা। তিনি বলেন, “আমাদের দেশ এগিয়েছে অনেক। তবে আরও এগিয়ে নিতে হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুসঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি।” কীভাবে হবে সেই স্মার্ট বাংলাদেশে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্মার্ট গভার্মেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্যি, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে রোবোটিকস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। (bangla.bdnews24.com/politics/6yaeiq85pm)
মন্তব্যঃ
স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে হাসিনা সরকার যা অর্জন করতে চাচ্ছে তা হচ্ছে মূলত তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশেরই বর্ধিতাংশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রজেক্টের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর মুল ছিল পশ্চিমাদের হাতে অর্থাৎ ইন্টারনেট সেবা, কম্পিউটার, মোবাইল, সার্ভার ইত্যাদি যা ছাড়া ডিজিটালাইজেশন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এর কোনটির-ই উৎস নয়, বরং ডিজিটালাইজেশনের কাস্টমার মাত্র। আর ইন্টারনেটভিত্তিক যে সকল কাজে পশ্চিমাদের খরচের পরিমাণ বেশী সে কাজগুলো মূলত বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ থেকে আউটসোর্সিং করা হয়। এর ফলে তৈরী হচ্ছে বিদেশী কাজ নির্ভর ফ্রিল্যান্সার। ফলে হাসিনা সরকার যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের স্বপ্ন আমাদেরকে দেখাচ্ছে তা মূলত সস্তা শ্রমের বাজার তৈরী করা ছাড়া আর কিছু নয়। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে বিদেশী টেকনোলোজির উপর আমাদের নির্ভরতাকে আরও বৃদ্ধি করা এবং আমাদের অর্থ বিদেশে চলে যাওয়ার অবস্থা তৈরী করা। পাশাপাশি এসকল প্রজেক্ট বাস্তবায়নের সময় দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের যে বিশাল মুনাফা অর্জিত হয় তা-তো বলাই বাহুল্য।
প্রশ্ন হচ্ছে ইতিপূর্বে ঘোষিত ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কি অর্জিত হয়েছে? মূলত এর মাধ্যমে আমরা পশ্চিমা দেশসমূহ ও চীনের টেকনোলজি বাজারের কাস্টমারে পরিণত হয়েছি। একইভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রজেক্টের মাধ্যমেও আমরা পশ্চিমাদের টেকনোলজির ভোক্তায় পরিণত হবো। অন্যদিকে, ডিজিটালাইজেশনের মত বিষয়গুলোর মাধ্যমে হাসিনা সরকারের ক্রেডিট নেয়ার কিছু নেই। পশ্চিমারা তাদের নিজেদের ব্যবসায়িক কারণেই বাংলাদেশের মত দেশসমূহকে ডিজিটালাইজড করতে আগ্রহী। যেমনভাবে, বৃটিশরা ভারতবর্ষে রেলব্যবস্থার সূচনা করেছিল। বৃটিশদের ভাষায় অসভ্য ভারতীয়দের সেবা দিতে নিশ্চয়ই বৃটিশরা ভারতবর্ষে ট্রেন নিয়ে আসেনি। বরং তারা তা নিয়ে এসেছিল তাদের শাসন, শোষন ও অর্থনৈতিক সুবিধাকে বৃদ্ধি করার জন্য। একইভাবে এই ডিজিটালাইজেশন, আধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো (মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু ইত্যাদি), স্মার্ট বাংলাদেশ ইত্যাদিও একই ধারণা থেকে উদ্ভূত। অর্থাৎ এসবকিছুই আমাদের প্রয়োজনে করা হচ্ছে না, বরং সাম্রাজ্যবাদীদের সাম্রাজ্যবাদকে প্রসারিত ও দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনারই একটি অংশ মাত্র।
হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ কিংবা বিএনপির রেইনবো নেশনের মত পশ্চিমা প্রজেক্টগুলোর মাধ্যমে কখনোই আমাদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে পশ্চিমাদের দাসে পরিণত হবো। পরিবর্তনের জন্য আমাদের ফিরে যেতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক প্রেরিত দ্বীন ইসলামের কাছে। ইসলামই একমাত্র আদর্শ যা আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়কে সুসংজ্ঞায়িত করে দিয়েছে। তেমনিভাবে ইসলাম বলেছে উন্নয়ন কিভাবে হবে। ইসলাম উন্নয়ন বলতে শুধুমাত্র অবকাঠামো আর প্রযুক্তির উন্নয়নকে বুঝায় না। বরং প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, নিরাপত্তা ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করা এবং বিলাসী পণ্যের চাহিদা পূরণেও মনোযোগী হওয়া। উপরন্তু ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নে স্বাভাবিক পরিণতি হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ও এর ধারাবাহিকতায় অবকাঠামো ও প্রযুক্তির উন্নয়ন। ইতিহাস থেকে এটি সর্বজনবিদিত যে, যতদিন খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত ছিল ততদিন মুসলিমরা ছিল প্রযুক্তির দিক থেকে অগ্রগ্রামী। যেমন, আব্বাসী খিলাফতের সময় বিজ্ঞানের চর্চায় মুসলিমরা ছিল সারাবিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। উসমানী খিলাফত ছিল গান পাউডার টেকনোলজিতে অগ্রগামী। কন্সট্যান্টিনোপলের দেয়াল ভাঙার জন্য তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কামানও তৈরী করেছিল উসমানী সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ্। ফলে, খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে, ডিজিটালাইজেশন এর মত বিষয় নিয়ে শাসক বড়াই করবে না বরং তা হবে আদর্শ বাস্তবায়নের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফলাফল।
-মো. হাফিজুর রহমান
“পুলিশ শুনলে মানুষ আগে ভয় পেতো এখন ভরসা পায়”
খবরঃ
পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগে মানুষ পুলিশকে ভয় পেতো। কিন্তু এখন কাছে আসে। মানুষকে পুলিশ সেবা দেয়, পাশে দাঁড়ায়। পুলিশ বাহিনী জনগণের পুলিশ হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। (https://mzamin.com/news.php?news=36866)
মন্তব্যঃ
পুলিশ প্রতি মানুষের ভরসার নিদর্শন হচ্ছে, রাজধানীর শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত কলেজ ছাত্রীর বাবা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘বিচার নাই, কার কাছে চাইবো?’ (২৫মার্চ, ২০২২, প্রথম আলো)। তার এই আক্ষেপ এদেশের অগণিত মানুষের আর্তনাদের প্রতিধ্বনী। গুম, খুন, তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গী দমনের নামে ইসলামভীতি তৈরি, ইসলামের রাজনৈতিক কর্মী ও আলেমদের দমন-পীড়ন, সমাবেশে গুলি, এহেন ন্যাক্কারজনক কাজ নেই যেখানে এই সরকার পুলিশকে ব্যবহার করেনি। পুলিশী হয়রানির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে সাংবাদিক, পেশাজীবি, ব্যাবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, নারী, কৃষক সকলেই। তাহলে পুলিশ কার জন্য ভরসার জায়গা হলো? এবং পুলিশের জুলুম পুলিশকেও ছাড় দেয়নি, যেমন পুলিশেরই জরিপে এসেছে আন্তত ৪০% নারী পুলিশ তার সহকর্মী দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়। টিআইবির জরিপ অনুযায়ী ৯২% সেবা গ্রহণকারী ট্রাফিক পুলিশ দ্বারা হয়রানির শিকার হয় আর থানায় সেবার জন্য প্রতিজন সেবা গ্রহণকারীকে গড়ে ৮৭০৯/- ঘুষ দিতে হয়। (দেখুনঃ https://www.dhakapost.com/amp/national/138836)।
বর্তমান পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা আসলে উপনিবেশবাদের ধারাবাহিকতা। বর্তমান পুলিশকেও চালানো হচ্ছে বৃটিশদের রেখে যাওয়া প্রাতিষ্ঠানিক রুপ ও আদর্শ দ্বারা। পুলিশের এক সাবেক ডিআইজি ‘Growth and Evolution of Bangladesh Police: An Institutional Overview’ নামে এক গবেষণায় তিনি উল্লেখ করেছেন, “বৃটিশ রাজ এই অঞ্চল থেকে তাদের আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পুলিশে সংস্কার নিয়ে আসে। ফলে ১৭৭০ সালে আগের সুপারভাইজার হয়ে পড়ে কলেক্টর। ১৭৯২ সালের ৭ ডিসেম্বর লর্ড কর্নোওয়ালিস ‘Police Regulation’ আইন প্রণয়ন করেন যা অনুযায়ী প্রতি ৪০০ বর্গমাইল এলাকায় একজন ‘দারোগা’ নিয়োগ দেয়া হয় যে চুরি যাওয়া মাল উদ্ধার করতে পারলে ১০% কমিশন পেত”। বর্তমান পুলিশকেও একই ধারাবাহিকতায় শাসকের লাঠি ও পুঁজিপতিদের টাকার গাছের পাহাড়াদারে পরিণত করা হয়েছে। বিনিময়ে কমিশন হিসেবে বিভিন্ন পদবী ও পুরস্কার, এবং পুঁজিপতিদের উপহার দিয়ে পুলিশকে নষ্ট করা হয়েছে। বসুন্ধরা ও ওয়ালটনের মত কোম্পানিগুলো পুলিশকে গাড়ি উপহার দেয়, এমনকি অনেক অফিসারের রুমের এসিও এসব কোম্পানির অনেকে লাগিয়ে দেয়। শেখ হাসিনা যেহেতু সেই বৃটিশদের আদর্শেরই ছাত্র তাই পুলিশের প্রতি তার এই উক্তির অর্থ হচ্ছে, এই পুলিশের প্রতি তার ও তার আশপাশের প্রভাবশালী ও পুঁজিবাদী ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর আস্থা।
অথচ বৃটিশদের আগে এই ভারতবর্ষ যখন ইসলামী শাসনের অধীনস্থ ছিল তখনই মূলত প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখানে পুলিশ প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় ও মানুষের সেবায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ১৯৬২ সালে Razvi,N.A কর্তৃক করা ‘Our Police Heritage’ নামক গবেষণায় বলা হয়, “তৎকালীন সময়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার বাস্তবতায় বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যের অপরাধ নির্মূল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ছিল একটি বিশাল কাজ। মুসলিম শাসকরা সেটি সহজেই করতে পেরেছিলেন জনহিতৈষিতা, ন্যায়বিচার, শাসক কর্তৃক সরাসরি তদারকি, অভিযোগের দ্রুত নিস্পত্তি, অপরাধ করার সুযোগ বন্ধ করে দেয়া, অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, শাসনব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ও আইনের প্রতি জনগণের স্বশ্রদ্ধ ভয় ধরে রাখার মাধ্যমে”। এইসবগুলোই ছিল শাসনব্যবস্থায় ইসলাম বাস্তবায়নের ফলস্বরূপ। কিন্তু পরবর্তীতে বৃটিশরা এরকম একটি শান্তিপূর্ণ জনপদে ঢুকে তাদের লুটেরা ব্যবস্থা দিয়ে আমাদের সেই জনবান্ধব ও ন্যায়পরায়ণ সুরতা বা পুলিশ বাহিনীকে নষ্ট করেছে এবং এখন তাদের দালাল শাসকরা সেই নষ্ট ধারা অব্যাহত রেখেছে। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র শুধু এই বৃটিশ দাস শাসকদেরই অপসারণ করবে তা নয়, বরং তাদের কুফর ব্যবস্থা পুঁজিবাদকেও উৎখাত করবে; এবং পুলিশ বাহিনীকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ও তাঁর পবিত্র শারিয়ার প্রতি দায়বদ্ধ করবে। ফলে জালেমের হাতিয়ার হওয়ার পরিবর্তে এই হাতগুলোই পরিণত হবে আল্লাহ্’র বাহিনীতে।
-মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র: রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লাউবেখার”
খবরঃ
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল এইলিন লাউবেখার চার দিনের সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার সামর্থ্য বাড়াতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিতভাবে কাজ করছে। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী, যাতে বাংলাদেশ নিজের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসওএমআইএ এবং এসিএসএ চুক্তির প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ জিএসওএমআইএ স্বাক্ষরের ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত। (https://samakal.com/opinion/article/2301150490/বাংলাদেশের-আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনীর-সক্ষমতা-বাড়াতে-আগ্রহী-যুক্তরাষ্ট্র)
মন্তব্যঃ
মার্কিন কর্মকর্তাদের সিরিজ সফর ও আলোচনার মাধ্যমে ACSA ও GSOMIA নামক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, এবং তথাকথিত সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতা, ইত্যাদি নামে যে চুক্তিগুলোর কথা বলা হচ্ছে এগুলোকে এঅঞ্চলকে ঘিরে মার্কিনীদের ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের আলোকে পর্যালোচনা করতে হবে। মার্কিনীরা বিশ্বব্যাপী পরিচালিত তাদের তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে এই অঞ্চলে ইসলামী শাসন তথা খিলাফতের প্রত্যাবর্তন রোধ করতে চায়, এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় চীনকে মার্কিন প্রভাব বলয়ের অধীনের দেশগুলো দ্বারা বেষ্টিত রাখতে চায়, যা “Asian Pivot” নীতি নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনা অর্জনে মার্কিনীরা বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মত মুসলিম দেশসমূহের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে ট্রেনিং দিয়ে থাকে, যাতে তাদের দালাল শাসকেরা এই বাহিনীগুলোকে দিয়ে রাজনৈতিক ইসলাম ও ইসলামের রাজনৈতিক কর্মীদের উপর দমন-নিপীড়ন চালাতে পারে। খিলাফতের রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও সাজা প্রদান, আলেম সমাজের উপর নিষ্ঠুর নিপীড়ন, জঙ্গী নাটকের মাধ্যমে জনমনে ইসলামভীতি ছড়ানো, ইত্যাদির যার জ্বলন্ত উদাহরণ। দ্বিতীয়ত, নিরাপত্তা সহযোগিতার নামে ACSA এবং GSOMIA’র মত প্রতিরক্ষা চুক্তির পেছনে মার্কিনীদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি সামরিক ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করা যাতে আমেরিকা এই ভূখণ্ডে ইচ্ছামাফিক সামরিক প্রশিক্ষণ ও মহড়া আয়োজন করতে পারে যেন বাংলাদেশকে তার মালিকানাধীন বাড়ির উঠোন হিসেবে ব্যবহার করতে পারে! এছাড়া ACSA’র মত চুক্তির দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের মুসলিম সেনাবাহিনীকে আমেরিকান সেনাবাহিনীর একটি রেজিমেন্টে রূপান্তর করা যার মাধ্যমে আমেরিকা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আমাদের সামরিক বাহিনীকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।
অতীতে সাম্রাজ্যবাদীরা কোন দেশের উপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেটিকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করত, কিন্তু এই নব্য-ঔপনিবেশিক যুগে তারা তাদের দালাল ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা, সামরিক চুক্তি ও জোটের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করে সেই দেশের সক্ষমতাকে তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ব্যবহার করছে। এটা স্পষ্ট যে, হাসিনা সরকার ইতিমধ্যেই আমেরিকার পরিকল্পনার কাছে নতি স্বীকার করেছে এবং ক্রুসেডার মার্কিনীদের খুশি করে আগামী নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আরোহণ করতে এসব দেশবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি প্রদান করেছে, এক্ষেত্রে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র কঠোর নিষেধাজ্ঞাকে পরোয়া করছে না: “তারা যদি তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে তবে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় লিপ্ত হবে, তাদের হস্ত ও রসনাসমূহ প্রসারিত করে তোমাদের ক্ষতিসাধন করবে এবং তারা চায় যেন তোমরা কাফিরদের কাতারে শামিল হও” [আল-মুমতাহিনা: ২]।
যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষ দালাল শাসক ও রাজনীতিবিদদের উপর ভর করেই এখনো কাফির উপনিবেশবাদীরা তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছে, সুতরাং তাদের বিদায় করে দেশের শাসন ও রাজনীতির ভার খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক কর্মীদের হাতে অর্পন করা ছাড়া কোন বিকল্প নাই। খিলাফত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহ্’র শারীয়াহ্, কাফিরদের সমর্থন কিংবা সহযোগিতা নয়। যেসব সংলাপ, চুক্তি ও জোটের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে মুসলিমদের উপর কাফিরদের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয় সেগুলো ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র আলোকে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯০ এ বলা হয়েছে, “সকল সামরিক চুক্তি এবং সন্ধি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এর মধ্যে রাজনৈতিক চুক্তি ও সমঝোতা যেখানে সেনাঘাঁটি ও বিমানঘাঁটি লিজ দেয়ার বিষয়গুলোও অর্ন্তভূক্ত। তবে, বন্ধুত্ব, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, অর্থব্যবস্থানা, সাংস্কৃতিক এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমতি রয়েছে”।
-মোহাম্মদ সিফাত