Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 67

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

৬৭ তম সংখ্যা । ১৬ অক্টোবর, ২০২২

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

“র‍্যাব তো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে, ট্রেনিংও তাদের: প্রধানমন্ত্রী”

“তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত আলোর মুখ দেখবেঃ চীনা রাষ্ট্রদূত”

“দুর্ভিক্ষ আসছে, যে যা পারেন উৎপাদন করেন: প্রধানমন্ত্রী”

“সরকারের কাছে ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা প্রাইভেট বিদ্যুৎ কোম্পানীগুলোর, তাই উৎপাদন বন্ধ রেখেছে তারা”

“‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ ও ‘সাংসারিক চাপে’ই কি বিয়েতে অনাগ্রহী তরুণ সমাজ”

 

  

 

র‍্যাব তো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে, ট্রেনিংও তাদের: প্রধানমন্ত্রী

খবরঃ

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘র‍্যাবের ওপরে তারা যখন স্যাংশন দিল, আমার প্রশ্নটা হচ্ছে র‍্যাব সৃষ্টি করেছে কে? আমেরিকা র‍্যাব সৃষ্টি করার পরামর্শ দিয়েছে। আমেরিকা তাদের ট্রেনিং দেয়। তাদের অস্ত্রশস্ত্র, তাদের হেলিকপ্টার, এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম-সবই আমেরিকার দেয়া।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমেরিকা যখন স্যাংশন দেয়, বা অভিযোগ আনে, আমার একটাই কথা, যেমন আপনারা ট্রেনিং দিয়েছেন, তেমন তারা কার্যক্রম করেছে। এখানে আমাদের করার কী আছে? আপনাদের ট্রেনিংটা যদি একটু ভালো হতো, তাহলে না কথা ছিল।’ (www.newsbangla24.com/news/208816/RAB-has-been-trained-on-the-advice-of-the-United-States-Prime-Minister)

মন্তব্যঃ

একটি রাষ্ট্রের শাসকের জন্য একটি প্রাথমিক ও মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে একটি দেশের নিরাপত্তা বাহিনী গঠন এবং এটির নিয়মনীতি, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র-সরঞ্জাম প্রদান করা হয়ে থাকে। জন্মলগ্ন থেকে একটি বাহিনী (র‍্যাব) বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার মোড়ল আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় আছে কথাটিকে প্রধানমন্ত্রীর অকপটে বলাটা যে কতটা লজ্জাজনক সেটা বুঝার সক্ষমতাও এই শাসকদের নাই। বিএনপি সরকারের সময় এই র‍্যাব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী সরকারও বাহিনীটিকে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণমুক্ত না করে একইভাবে পরিচালিত করে গেছে। অর্থাৎ এই বাহিনীর উদ্দেশ্য, কর্মপরিধি ও কর্মপদ্ধতির বিষয়ে এই তিনপক্ষই একমত ছিলেন।

মূলতঃ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে  দেশে তথাকথিত জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন এবং আইনশৃঙ্খলার মানোন্নয়নে র‍্যাব গঠন করা হয়েছিল। অতঃপর ২০০৫ সালে সারাদেশে ৬৪ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমাদের তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তথা রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবেশ করানো হয়। তৎকালীন বিএনপি জোট সরকার দাবি করেছিল, ‘বাংলা ভাই’, ‘ইংলিশ ভাই’ নামে কেউ এদেশে নেই। তখন ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত দাবি করছিল, এদেশে ‘বাংলা ভাই’ নামে এক ভয়ংকর জঙ্গি রয়েছে। আত্মপ্রকাশের পর র‍্যাবের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ে র‍্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেন। যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবকে তথাকথিত জঙ্গি দমনে প্রশিক্ষণ দেয়। অতঃপর আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করে। যার ধারাবাহিকতায় নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহ্‌রীর-কে নিষিদ্ধ করা হয় এবং এর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও যুলুম নির্যাতন করা হয়। বহু আলেম-উলামা ও ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের, এমনকি নারীদেরকে গ্রেফতার, গুম, খুন করতেও তারা দ্বিধা করেনি। বহু নিরিহ মানুষ, আলেম কিংবা মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে দিয়ে জঙ্গী ও আত্মঘাতী নাটক সাজিয়ে পশ্চিমাদের স্টাইলে দেশব্যাপী ইসলামোফবিয়া (ইসলামভীতি) তৈরি করা হয়। এসমস্ত কাজে বর্তমান সরকার এই এলিট ফোর্সকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করে।

তাছাড়া বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ যে যখন ক্ষমতায় ছিল সে তখন সরকারবিরোধী আন্দোলন বা বিরোধী নেতাকর্মীদের দমন করার জন্য বাহিনীটিকে ব্যবহার করেছে। এভাবেই তিনপক্ষই বাহিনীটিকে ব্যবহার করেছে। তাই স্বভাবতই ততদিন পর্যন্ত বাহিনীটির ব্যাপারে তিনপক্ষ একমত থাকবে যতদিন পর্যন্ত তাদের নিজ নিজ সন্ত্রাসের সংজ্ঞার মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব থাকবে না। আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এবং তার জবাবে শেখ হাসিনার আমেরিকাকে খোচা দেয়া এসবই কেবল প্রতারণা। কারণ এটা এখন প্রকাশিত যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শুধু বিচারবহির্ভূত হত্যা কিংবা গুমের জন্যই দেয়া হয়নি, বরং বাহিনীটি ইসলাম ও মুসলিমদের দমন করার পাশাপাশি কিছু মার্কিনপন্থী রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারী বিরোধীদলকে দমনেও ব্যবহৃত হচ্ছিল। সেজন্য আমেরিকান রাস্ট্রদূত কিছুদিন আগে প্রকাশ্যেই পরিস্কার করেছে যে, র‍্যাবের উপরে দেয়া নিষেধাজ্ঞা শাস্তি দেয়ার জন্য নয়, দেয়া হয়েছে তাদের আচরণ পরিবর্তন করার জন্য৷ (দেখুন দৈনিক ইত্তেফাক, https://www.ittefaq.com.bd/614968/)। আর অবশ্যই শেখ হাসিনার র‍্যাবের হত্যা, গুম ইত্যাদির জন্য আমেরিকাকে দায়ী করা সত্য উন্মোচনের স্বার্থে বা আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ থেকে বাহিনীটিকে মুক্ত করার জন্য নয়, বরং এই বাহিনীকে আরও মার্কিনী তত্ত্বাবধানের মধ্যে ঠেলে দেয়ার জন্য। সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে, সমস্যা থাকলে র‍্যাবকে নতুন করে প্রশিক্ষণ দিন। (দেখুন দৈনিক যুগান্তর, https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/513172/)।

মুসলিমদের একটি ভুখন্ডের নিরাপত্তা হতে হবে পরিপূর্ণভাবে ও একমাত্র মুসলিমদের হাতে৷ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের পূর্বে এটা নিশ্চিত হন যে, আনসার সাহাবীদের সহযোগিতায় মদিনার পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা মুসলিমদের হাতে এসেছে। এই নিরাপত্তার উপর ভর করে রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। পরবর্তীতে তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশ বা সুরতা বাহিনী গঠন করেন। এগুলো গঠন করতে, এদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে তিনি (সাঃ) কখনোই বিদেশি বা অমুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতা নেননি। একটি মুসলিম দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা বিদেশী এবং আল্লাহ্‌’র শত্রুদের হাতে দিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্‌ এবং মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। সাধারণ মুসলিমদের কর্তব্য হচ্ছে এই ষড়যন্ত্রকে কখনই সফল হতে না দেয়া। আমরা যদি চেষ্টা করি আল্লাহ্‌ নিশ্চিতভাবেই একাজে আমাদের সহযোগিতা করবেন। এবং কিছুতেই আল্লাহ্‌ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের কোন পথ রাখবেন না (সুরা নিসা ১৪১।

  • মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

 

 

 

তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত আলোর মুখ দেখবেঃ চীনা রাষ্ট্রদূত

খবরঃ

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। রবিবার (৯ অক্টোবর) সকালে তিস্তা ব্যারেজ ও কমান্ড এলাকা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত আলোর মুখ দেখবে’। রাষ্ট্রদূত বলেন, “প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যারেজ এলাকার সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সবদিক দিয়ে উত্তর অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, অর্থনীতি, প্রকৃতি ও পরিবেশ যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে।” (www.banglatribune.com/country/rangpur/767139/তিস্তা-মহাপরিকল্পনা-দ্রুত-আলোর-মুখ-দেখবে-চীনা)

মন্তব্যঃ

তিস্তা নদী সম্পর্কিত যেকোন ইস্যু আমাদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা অতিগুরুত্ব সহকারে সমাধান জরুরী। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী মুশরিক রাষ্ট্র ভারতের আগ্রাসী নীতির কারণে আমরা বিগত চার দশক ধরে এর ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। সাম্রাজ্যবাদীদের আঞ্চলিক দোসর ভারতকে খুশি রেখে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তিস্তা নদীর পানির হিস্যা আদায়ে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা বরাবরই দেখে আসছি শাসকগোষ্ঠী তিস্তা-চুক্তির মূলা দেখিয়ে ভারতে যায়, আর গিয়ে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ভারতকে করিডর দেয়, ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি ‘লাইন অফ ক্রেডিট’-এর মত আত্মবিধ্বংসী চুক্তি করে, আর বলে তিস্তা-চুক্তি না হলেও আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে অনেক! এমতাবস্তায়, তিস্তাচুক্তি নাটকের পর্ব শেষ না করে, এখন তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের নামে দেশের উত্তারাঞ্চলকে চীনের মত আরেক আগ্রাসী দেশের হাতে তুলে দেওয়াটা কতটুকু দেশের স্বার্থ সুরক্ষা করবে?

প্রশ্ন হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে যদি তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প তিস্তার পানির সংকট সমাধান করে তাহলে কেন তা আমরা নিজেরাই করতে পারিনা? টাকার বিনিময়ে টেকনোলজি ও দক্ষ লোক আমদানী করে যেকোন প্রকল্পই তো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তাহলে, সেক্ষেত্রে কেন নিজেদের অঞ্চলের ভিতরের প্রকল্পকে অন্যদেশের হাতে তুলে দিতে হবে, যেখানে কিনা তাদেরই নিয়ন্ত্রণ থাকবে? চীনের অর্থায়নের প্রকল্পগুলো কিভাবে শ্রীলংকার অর্থনীতিকে টালমাটাল করেছে তা কি আমরা ভুলে গেছি? ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে শ্রীলংকার দক্ষিণাঞ্চলীয় হামবানটোটা জেলায় ১৪০ কোটি ডলারের চীনা ঋণে নির্মিত গভীর সমুদ্ররকে চীনের কাছেই ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিতে বাধ্য হয় শ্রীলংকা। রাজধানী কলম্বোর পাশে ৬৬৫ একর জায়গায় দুবাইয়ের মত বিলাসবহুল শহর নির্মাণ প্রকল্পও শ্রীলংকাকে আরও বেশি চীনা ঋণের বেড়াজালে বন্দি করেছে। ৫ জুন ২০২২, সময়ের আলোর রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট তৈরির পিছনেও সরাসরি চীনকে দায়ী করছে বিশ্লেষকরা। চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) এর আওতায় পাকিস্তানে ৩০টিরও বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। যার মধ্যে গত ৯ মে ২৪ টিরও বেশি চীনা কোম্পানী তাদের ১৫৯ কোটি ডলার বকেয়া পাকিস্তান পরিশোধ করতে না পারলে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। অথচ, এই প্রকল্পগুলোও আমাদের এখানে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের মত অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলে শুরু হয়েছিল, যা পরে উল্টো দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতিকে যদি অন্যকোন দেশ এসে নড়বড়ে করে দেয় তাহলে আমাদের সুরক্ষা থাকলো কই? তারপরেও কেন জেনেশুনে এই শাসকগোষ্ঠী এধরনের পদক্ষেপের দিকে এগুচ্ছে?

প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান ইন্দো-প্যাসিফিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। তাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো এই অঞ্চলকে তাদের হস্তগত করে এখানে নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা চালাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন ভারতকে সাথে নিয়ে চীনের উত্থান ঠেকাতে তৎপর, ঠিক একইভাবে চীনও তা মোকাবেলা করতে এঅঞ্চলের দেশসমূহের অভ্যন্তরে নানামূখী তৎপরতায় লিপ্ত। আর বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দালাল শাসকগোষ্ঠীরা ক্ষমতায় টিকে থাকার নিমিত্তে নিজেদের দেশকে কখনো আমেরিকা, কখনো চীন, কিংবা কখনো বৃটেনের মত সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ হাসিলে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে, যা মুসলিম উম্মাহ্‌’র জন্য ভয়াবহ সার্বভৌমত্ব সংকট বয়ে আনছে। আর, এই ভয়াবহ সংকট থেকে উম্মাহ্‌র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এধরণের শাসকগোষ্ঠীকে দ্রুত অপসারণ করে খিলাফত ফিরিয়ে আনা ছাড়া কোন বিকল্প নাই। কেননা, রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেছেন, “সুলতান (খলিফা) হচ্ছেন (পৃথিবীতে আল্লাহ্) ঢাল (রক্ষাকবচ) যার পিছনে থেকে মুসলিমরা নিজেদেরকে রক্ষা করে এবং জিহাদ করে (মুসলিম)।

  • আসাদুল্লাহ্নাঈম

 

 

 

 

“দুর্ভিক্ষ আসছে, যে যা পারেন উৎপাদন করেন: প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে যে যা পারেন উৎপাদন করার আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, রানী এলিজাবেথের শেষকৃত্যে গিয়ে আমি সবার মুখে শুনেছি, আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে। তাই যে যা পারেন উৎপাদন করেন। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। এক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছি। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের একটু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পণ্যের দাম যেমন বেড়েছে, পরিবহন খরচ তেমনই বেড়েছে। তারপরেও কৃষকদের ভর্তুকি বন্ধ করিনি।  (https://www.ittefaq.com.bd/616325/দুর্ভিক্ষ-আসছে-যে-যা-পারেন-উৎপাদন-করেন)

মন্তব্যঃ

শেখ হাসিনা জনগণকে ২০২৩ সালের কঠিন পরিস্থিতি ও দুর্ভিক্ষের ভয় দেখিয়ে জনগণকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন, বিষয়টি এমন যেন তিনি এতদিন দেশবাসীকে মাছে-ভাতে রেখেছেন! ধর্মনিরপেক্ষ শাসকেরা কখনোই নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার নিতে চায় না, বরং সমস্ত দায় এবং দায়িত্ব দুটোই তারা জনগণের উপর চাপায়, বর্তমান সরকার যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই এটা বুঝতে পারে যে, কোভিড ১৯ কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট ত্বরান্বিত করলেও তা এই সংকটের মূল কারণ নয়। বরং সরকারের সীমাহীন লুটপাট এবং পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলেই দেশ আজ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। সরকার খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার নীতি বাস্তবায়নের পরিবর্তে দেশের সম্ভাবনাময় কৃষিখাত ও কৌশলগত প্রাকৃতিক সম্পদ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের হাতে সমর্পন করে চলেছে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের আরোপিত স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসির বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষির উপর ভর্তুকী প্রত্যাহার করে আমাদের কৃষি ও কৃষককে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। উচ্চমূল্যের হাইব্রিড বীজ ও সার এবং কৃষিক্ষেত্রে বৃহৎ বহুজাতিক ও স্থানীয় কর্পোরেশনগুলোকে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ দিয়ে কৃষি উৎপাদনকে করে তুলেছে ব্যয়বহুল। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে উর্বর ভূমি থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে চাল, ডাল, পিয়াজ, তেল, নুন ও চিনির মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য আমদানি নির্ভর করে তোলার মাধ্যমে আমাদের সকল প্রকার আত্মনির্ভরশীলতাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দেশকে অনুৎপাদনশীল মেগাপ্রকল্পের অভয়ারণ্যে পরিণত করে এসব প্রকল্পগুলোতে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি ক্ষুদ্রগোষ্ঠীকে অবাধ লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকেরা এরকম দুর্বৃত্ত প্রকৃতিরই হয়ে থাকে, যারা লুটপাট করে দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনছে কিন্তু দুর্ভিক্ষের বোঝা জনগণের কাঁধেই অর্পণ করছে।

ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর নেতৃত্বের অধীনে সর্বদাই আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে থাকবে, কারণ যতদিন তারা বহাল থাকবে ততদিন তাদের পুঁজিবাদী নীতি এবং একইসঙ্গে লুটপাটও বহাল থাকবে। এমতাবস্থায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদেরকে অপসারণ করে খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ছাড়া কোন গত্যন্তর নাই। খিলাফত রাষ্ট্র শারীয়াহ্‌ নির্দেশিত সুনির্দিষ্ট নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন ও দক্ষ বন্টনের উপর জোর দিবে। ভূমির পূর্ণাঙ্গ ও সর্বোচ্চ মাত্রার ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক কৃষি উৎপাদনে মনোনিবেশ করার আলোকে খিলাফত রাষ্ট্রের কৃষিনীতি প্রণীত হয়। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, তিনিই তোমাদের জন্য মাটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে দিয়েছেন সুতরাং, তোমরা এর দিকদিগন্তে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিযিক থেকে আহার কর(সুরা মুলকঃ ১৫)। তাই খিলাফত রাষ্ট্র আবাদি জমিগুলোর প্রকৃতি অনুসারে চাহিদা মোতাবেক খাদ্য শস্য, ফলমূল এবং শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে কৃষকদেরকে উন্নত বীজ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত সাপোর্ট এবং বিনা সুদে ঋণ (কর্জে হাসানা) প্রদান করবে যাতে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। সেচ, বীজ, সার ইত্যাদি উৎপাদন উপকরণের দাম ঠিক রেখে কৃষকদের পরাধীন করে রাখা দুষ্ট পুঁজিবাদী নেটওয়ার্কের সাথে দুর্নীতিবাজ মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণের অবসান ঘটিয়ে খিলাফত রাষ্ট্র কৃষিক্ষেত্রকে পুনরুজ্জীবিত করবে। এর মাধ্যমে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এবং দেশের উৎপাদন ব্যাপক ও গুণগতভাবে বৃদ্ধি পাবে। দেশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে আত্মনির্ভরশীল হবে। সর্বোপরি, খিলাফত রাষ্ট্র কৃষিখাতকে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও নির্ভরতার বলয় থেকে বের করে এনে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার নীতি বাস্তবায়ন করবে এবং একটি স্বনির্ভর ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের দিকে অগ্রসর হবে। আত্মনির্ভরশীল কৃষিনীতির ফলে অতীতেও খিলাফত রাষ্ট্রকে দুর্ভিক্ষ কিংবা আপদকালীন সময়েও ভেঙ্গে পড়তে হয়নি কিংবা বিদেশী রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করতে হয়নি। এক উলাই‘য়াহ্‌ অন্য উলাই‘য়াহ্‌’কে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। মদীনায় দুর্ভিক্ষের সময় খলীফা উমর (রা.)-এর নির্দেশে মিশরের গভর্ণর আমর ইবনে আল আস কর্তৃক মদিনার নাগরিকদের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করার ঘটনায় এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

  • মোহাম্মদ সিফাত

 

 

 

 

সরকারের কাছে ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা প্রাইভেট বিদ্যুৎ কোম্পানীগুলোর, তাই উৎপাদন বন্ধ রেখেছে তারা

খবরঃ

শুধুমাত্র তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কোম্পানীগুলোর পাওনা ১৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। মে-জুন থেকে গত পাঁচ মাসে এই পাওনা বকেয়া হয়েছে। পাওনা টাকার অভাবে তেল আমদানী করতে পারছে না কোম্পানীগুলো, ফলে তেলের অভাবে দশটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে, আর বাকি সাতটি কেন্দ্র তাদের ৭০ ভাগ সক্ষমতা বসিয়ে রেখেছে। পিডিবির বোর্ড মেম্বার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাইভেট বিদ্যুৎ কোম্পানীগুলো এই জ্বালানী সংকটকে কাজে লাগিয়ে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে’। (https://www.thedailystar.net/environment/natural-resources/energy/news/pvt-power-plants-heavy-fuel-standoff-over-unpaid-bills-hurts-consumers-3141151)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কমমূল্যে তেল আমদানী করে জনগণের কাছে চড়ামূল্যে বিক্রয় করলেও, প্রাইভেট বিদ্যুৎ কোম্পানীগুলোকে তাদের অধিক মুনাফার সুবিধার্থে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যে আমদানীর সুযোগ দিয়ে রেখেছে। আবার সরকারের সহায়তায় গত তিনবছরে প্রাইভেট বিদ্যুৎ কোম্পানীগুলো ক্যাপাসিটি চার্জের নামে জনগণের ট্যাক্সের ৫৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ফলে এখন তেল আমদানী ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বসিয়ে রাখলেও তাদের কোন ক্ষতি নেই, কারণ ক্যাপাসিটি চার্জের পাওনা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে এবং ইতিমধ্যে জনগণের কাছ থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা তারা লোপাট করেছে তা দিয়ে চলতে তাদের কোন কষ্টই হবে না। দেশের জ্বালানী সম্পদ উত্তোলনের কোন কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে আমদানী নির্ভরতার উপর ভর করে ২০২৪ সালের মধ্যে ১৬,৮৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন আরো ৪৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করবে সরকার (সূত্রঃ আমাদের সময়, ২৩ জুলাই ২০২০)। সুতরাং ক্যাপাসিটি চার্জ বেড়ে বর্তমান অংকের প্রায় দ্বিগুন হবে। এই দায় জনগণের ঘাড়ে সরাসরি চাপানো হবে ক্রমাগত বিদ্যুতের দাম ও অন্যান্য খাতের ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়ে কিংবা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করে চিরস্থায়ী গোলামীর শিকল পরানোর মাধ্যমে।

বাস্তবতা হল জ্বালানী তেল বাংলাদেশে একটি আমদানী পণ্য এবং দেশের মোট জ্বালানী তেলের ৬৩ শতাংশ ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে এবং ১৬ শতাংশ ও ৭ শতাংশ ব্যবহৃত হয় যথাক্রমে কৃষি ও শিল্প খাতে। বিদ্যুৎ খাত ব্যবহার করে ১০ শতাংশ জ্বালানী তেল। জ্বালানী তেল, সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের জন্য চলতি অর্থবছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন। এ ভর্তুকির বিপরীতে চলতি বছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের ব্যয়ভার মেটাতে না পারার কারণে জ্বালানী তেলের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, ফলে অর্থনীতির সকল খাতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা এবং জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বাংলাদেশের জ্বালানী নীতির স্বনির্ভরতা কিংবা আমদানী নির্ভরতা নিয়ে যত আলোচনাই করা হয় তার সবই করা হয় জাতীয়তাবাদকে মেনে নিয়ে। স্বনির্ভর জ্বালানী নীতির কথাও যখন আলোচিত হয় তা সাম্রাজ্যবাদীদের এঁকে দেওয়া মানচিত্রগুলোকে মেনে নিয়েই করা হয়। কিন্তু মহান আরশের অধিপতির বান্দা হিসেবে বাংলাদেশের মুসলিমরাতো একা নয়। এদেশের মুসলিমরা হল ১.৭ বিলিয়ন উম্মতে মুহাম্মদীর অংশ যাদের ভূমিগুলোতে রয়েছে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের ভান্ডার। রাশিয়ার তেল রফতানী নিয়ে সম্প্রতি অনেক আলোচনা হলেও দেশটি পৃথিবীর জ্বালানী তেলের চাহিদার মাত্র ১১.৬% রফতানী করে। অথচ সৌদি আরব, ইরাক, আরব আমিরাত ও কুয়েতের মত ছোট কয়েকটি মুসলিম ভুখন্ড মিলেই পৃথিবীর মোট চাহিদার ৪৩% জ্বালানী তেল রফতানী করে। উল্লেখ্য বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩৩০ বিলিয়ন টাকা) মূল্যের জ্বালানী তেল আমদানী করে। ইন্দোনেশিয়া, কাতার ও ওমান থেকে বাংলাদেশ বর্তমানে এলএনজি আমদানী করে, যার জন্য ২০২২-২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্তত ১১ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১২১০ বিলিয়ন টাকা) পরিশোধ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিমের তিনটি সম্পদের উপর সমান অধিকার আছে; পানি, চারণভূমি আগুন (জ্বালানী)” (মুসনাদে আহমাদ)। অর্থাৎ, সৌদি আরবের তেলে বাংলাদেশের মুসলিমদেরও সমান অধিকার রয়েছে এবং ইন্দোনেশিয়া ওমানের গ্যাসের উপরও বাংলাদেশের মুসলিমদের সমান অধিকার রয়েছে অথচ জাতীয়তাবাদের কারণে বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে তার ‘নিজের’ সম্পদ ব্যবহার করার জন্য ‘হাজার বিলিয়ন’ অংকের এই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের মুসলিমদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না, যতদিন পর্যন্ত তারা জাতীয়তাবাদ নামক কুফর চিন্তা অন্তরে ধারণ করবে এবং এর দিকে আহ্বানকারী শাসকদেরকে মেনে নিবে, যারা মুসলিমদেরকে বিভক্তকারী সাম্রাজ্যবাদীদের এঁকে দেওয়া মানচিত্রগুলোকে জান-প্রাণ দিয়ে রক্ষা করে চলেছে। এদেশের মুসলিমদের জন্য এখনই প্রকৃষ্ট সময় জাতীয়তাবাদকে পরিত্যাগ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার, যা মুসলিম ভূ-খণ্ডগুলোকে একত্রিত করবে এবং সকল গণমালিকানাধীন সম্পদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে। “আল্লাহ্তোমাদেরকে যা (সম্পদ) দিয়েছেন তা ব্যবহার করে তোমরা আখিরাতের উত্তম আবাসস্থল অনুসন্ধান (অর্জন) কর; এবং তোমরা তোমাদের দুনিয়ার সম্পদের কোন অংশ ছেড়ে দিও না (সূরা আল-ক্বাসাস-৭৭)।

  • রিসাত আহমেদ

 

 

 

 

“‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ ও ‘সাংসারিক চাপে’ই কি বিয়েতে অনাগ্রহী তরুণ সমাজ

খবরঃ

জাপানে রেকর্ডসংখ্যক তরুণ-তরুণী জানিয়েছেন, তারা বিয়ে করবেন না। তাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ৩৪ বছরের মধ্যে। ২০২২ সালের ওই সমীক্ষায় বিয়েতে অনীহা প্রকাশকারীর সংখ্যা সর্বোচ্চ। মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বিয়ে করতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। কেন বিয়েতে অনীহা তাদের? উত্তরে বলেছেন, তারা নিজেদের ‘সিঙ্গেল’ জীবন উপভোগ করতে চান, ‘ব্যক্তি স্বাধীনতায়’ ছাড় দিতে চান না এবং পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে চান। জাপানের ওয়ার্কোহলিক তরুণ-তরুণীরা বিয়ে করে সংসার করার চেয়েও নিজেদের পেশাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ………. বাংলাদেশের মতো সমাজে বিয়ে মানে শুধু স্বামী-স্ত্রী নয়, বিয়ে মানে একটি পরিবার, একটি বন্ধন। সেই পরিবারে আরও অনেকে থাকতে পারেন। সেই অনেকের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়, নানা জনের নানা মত বুঝে চলতে হয়। অথচ বিয়ের পর প্রায় সব ছেলে-মেয়েই চায় নিজের মতো থাকতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের মতো সমাজব্যবস্থায় তা হয়ে ওঠে না। তখনই তৈরি হতে থাকে ভুল বোঝাবুঝি এবং ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকে। বিয়ে পরবর্তী দায়িত্ব, নিয়ম-কানুন, কিছু সমঝোতা ও শেয়ারিংকে এখন অনেক ছেলে-মেয়েই ঝামেলা মনে করে। তারা এতটাই ব্যক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে যে বিবাহিত জীবনের ছাড় দেওয়া তাদের কাছে অপছন্দের। (bangla.thedailystar.net/opinion/views/news-400976)

মন্তব্যঃ

ব্যক্তি স্বাধীনতার চিন্তা এবং জীবনকে সর্বোচ্চ উপভোগ করার স্বার্থে দায়িত্ব এড়িয়ে চলা – এগুলোই মূলত পশ্চিমাদেশসমূহে এবং হাল সময়ে পূর্বদিকের দেশসমূহে বিয়ের ব্যাপারে তরুণ-তরুণীদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণ। ফলে একদিকে যেমন পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি হুমকির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে মানুষের জন্মের হার হ্রাস পেয়ে মানবসভ্যতার ভবিষ্যতও হুমকির সম্মুখীন। অপরদিকে, সিঙ্গেল মাদারের সংখ্যা যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি বেড়ে চলেছে গর্ভপাত কিংবা ডাস্টবিনে নবজাতকের লাশের সংখ্যা বৃদ্ধির ঘটনা। এবং এই একই চিন্তার ভিত্তিতে মানুষ তার ‘প্রজনন প্রবৃত্তি’ (Procreational Instinct) পূরণে বিয়ের মত বন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে লিভ টুগেদার, চুক্তিভিত্তিক বিয়ে কিংবা ‘হোয়াইট ম্যারেজ’-এর মত ক্ষণস্থায়ী সম্পর্কে জড়াচ্ছে। এখানে পারস্পরিক সম্মান, দায়িত্ব-কর্তব্য কিংবা সন্তান উৎপাদন ও লালন-পালনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সচেতনভাবেই এড়িয়ে চলা হয়েছে। এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল হিসেবে বৃহৎ পরিবারসমূহ ভেঙ্গে একক পরিবার কিংবা পরিবারহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অপরদিকে বেড়ে চলেছে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা।

মূলত ব্যক্তিস্বাধীনতার এই চিন্তার সাথে ধর্মহীনতার অর্থাৎ সেকুলারিজমের একটি সম্পর্ক রয়েছে। সেকুলার চিন্তা মানুষকে স্রষ্টার নিয়মকানুন থেকে মুক্ত করে নিজের মর্জিমাফিক যা ইচ্ছা তা করার স্বাধীনতা দিয়েছে। ফলে, মানুষ নিজের জীবনকে সর্বোচ্চ ভোগ বিলাস ও ইন্দ্রিয়গত সুখ লাভের মেশিন হিসেবে মনে করতে শুরু করেছে। তার সর্বোচ্চ ইন্দ্রিয়গত সুখলাভের পথে যা কিছুই বাধা হয়ে দাড়াক না কেন তা সে দুই হাতে ঠেলে দিয়ে নিজের ভোগ বিলাসের নিশ্চয়তা বিধান করবে, এমনকি যদি এই বিধান সৃষ্টিকর্তা থেকেও আগত হয়। যেহেতু বিয়ে মানুষকে একটি দায়িত্ব কর্তব্যের বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেলে, সেহেতু পশ্চিমা লিবারেল চিন্তা অনুসারে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটি খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ফলে তারা বিবাহকে পরিত্যাগ করে অন্যান্য পাশবিক উপায়ে তাদের প্রবৃত্তির পূরণ করে চলেছে। আধুনিকতার নামে পশ্চিমারাষ্ট্রসমূহ এই ব্যক্তিস্বাধীনতার চিন্তা গ্রহণ করে সঠিক পথ হারিয়ে উদ্দেশ্যহীন এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে জনসংখ্যা হ্রাস হয়ে তাদের জাতিগত অস্তিত্বই আজ হুমকীর সম্মুখীন।

পক্ষান্তরে ইসলাম মানুষকে ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’র ধারণা থেকে মুক্ত করে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র দাসত্বের মধ্যে মানবজীবনের প্রকৃত স্বার্থকতাকে সংজ্ঞায়িত করেছে। একমাত্র স্রষ্টার পক্ষেই সম্ভব মানুষের প্রবৃত্তিগুলোকে পুরণ করার সঠিক মেকানিজম তৈরী করা। মানুষের হাতে তার প্রবৃত্তি পূরণের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সে স্বাভাবিকভাবেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে এমনসব সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে যা অদূর ভবিষ্যতে মানবসভ্যতার জন্যই হুমকি হয়ে দাড়াবে। ইসলাম মানুষকে তার প্রজননপ্রবৃত্তি পূরণের জন্য একটি সুনির্ধারিত পদ্ধতি বাতলে দিয়েছে। এক্ষেত্রে ইসলাম বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে তৈরী করেছে যার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবজাতির ক্রমধারাকে চলমান রাখা। পশ্চিমা সভ্যতা যখন মানুষকে সেক্স মেশিনে পরিণত করে পশুর কাতারে নামিয়ে দিয়েছে তখন ইসলাম মানুষের এই প্রবৃত্তিকে সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে মানবসভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদানকে চলমান রেখেছে। উপরন্তু, পশ্চিমাদের উদারনৈতিক মূল্যবোধ ও ব্যক্তিস্বাধীনতার চিন্তার বিপরীতে ইসলাম বিয়ে পরবর্তী সময়ে নারী পুরুষের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্ধারিত করে দিয়েছে। ফলে, ইসলামী সভ্যতায় পরিবার হচ্ছে মানব সভ্যতাকে চলমান রাখা ও এর বিকাশের মূল প্রতিষ্ঠান যা ইসলামী আকীদা থেকেই উৎসারিত। সারাবিশ্বের এই সমস্যা সমাধানে ইসলামের সঠিক গাইড-লাইন সারা বিশ্ববাসীকে জানানো উচিত এবং ইসলামী ব্যবস্থার ছায়াতলে সবাইকে এনে পূঁজিবাদের নষ্ট চিন্তা থেকে সবাইকে মুক্ত করে মানবসভ্যতাকে আসন্ন এই বিপদ থেকে উদ্ধার করা উচিত।

  • মো. হাফিজুর রহমান