Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৬৬ তম সংখ্যা । ৯ অক্টোবর, ২০২২
এই সংখ্যায় থাকছে:
“সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে রাস্তায় পেতে রাখা বোমায় তিনজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত”
“ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলঃ চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশের জোরালো অংশীদারি চায় যুক্তরাষ্ট্র”
“মূল্যস্ফীতির বিশ্বায়ন: বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র”
“সরকারি কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণ-উচ্চশিক্ষাঃ পেশাগত জীবনে কাজেই আসছে না দক্ষতা উন্নয়ন”
“কার্ল কুবেল পুরস্কার পেলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস”
“নীতি সুদহার বাড়ালো বাংলাদেশ ব্যাংক”
“মেয়ে শিশুদের উপর উদ্বেকজনক হারে যৌন সহিংসতা”
“সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে রাস্তায় পেতে রাখা বোমায় তিনজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত”
খবরঃ
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে মোতায়েন করা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর তিন বাংলাদেশি সেনা এক বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন। গত সোমবার ৩ অক্টোবর স্থানীয় সময় রাত আটটায় দেশটির পশ্চিম সেক্টরে বোয়ার এলাকায় মোতায়েন বাংলাদেশি সেনা ইউনিটটি এই হামলার মুখে পড়ে।বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ দফতর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি সেনাদলকে বহনকারী গাড়িটি একটি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বা আইইডি’র বিস্ফোরণের মুখে পড়ে। এতে তিন জন বাংলাদেশি শান্তি রক্ষী নিহত এবং একজন আহত হন।…বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এই মূহুর্তে আফ্রিকার ৮ টি দেশে মোতায়েন রয়েছে। যেসব দেশ জাতিসংঘে সবচেয়ে বেশি শান্তিরক্ষী পাঠায় বাংলাদেশ তাদের মধ্যে শীর্ষে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে গিয়ে এপর্যন্ত প্রায় দেড়শো বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিভিন্ন দেশে নিহত হয়েছে। (www.bbc.com/bengali/news-63133240)
মন্তব্যঃ
জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী সেনা সদস্যদের আত্মহুতির খবর প্রায়ই আমরা শুনে থাকি। এ ধরনের সংবাদ আমাদেরকে ব্যথিত করে। মেনে নিতে কষ্ট হয়। কষ্টের কারণ শুধু এটা নয় যে কয়েকটি প্রাণ অকালে ঝরে গেল। বরং কষ্ট লাগে এটা চিন্তা করে মুসলিম সামরিক বাহিনীর বীর সন্তানদের কীভাবে মার্কিন-ব্রিটেন তাদের নিজেদের স্বার্থরক্ষায় স্যেকুরিটি গার্ডে পরিণত করেছে! কীভাবে পশ্চিমা উপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোর অপকর্মের ফলে সৃষ্ট অশান্ত জনপদগুলোকে নিরাপদ রাখতে আমাদের সেনাদের ভাড়াটিয়া বাহিনীর মত ব্যবহার করা হচ্ছে! জাতিসঙ্ঘ যে একটা অথর্ব প্রতিষ্ঠান সেটা এ দেশের শাসকেরা নিজেরাই স্বীকার করে ( দেখুনঃ “ জাতিসঙ্ঘ ইদানিং অনেক দুর্বল হয়ে গেছেঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী” – কালেরকন্ঠ, ৪ অক্টোবর ২০২২); আবার সেই প্রতিষ্ঠানের উপর তারা আস্থা রাখে, তার মিশনে সেনা প্রেরণ করে। আসলে, জাতিসঙ্ঘ ঔপনিবেশিক পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থায় পশ্চিমাদের শোষণের একটি হাতিয়ার। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর শোষণমূলক পুঁজিবাদী নীতির বাস্তবায়ন এবং তার ফলে বিশ্বব্যাপী যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করাই এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজ। এটা এখন একেবারে দিবালোকের মতই পরিষ্কার যে শান্তি প্রতিষ্ঠা বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিরোধ নিরসন ইত্যাদির নামে আসলে জাতিসঙ্ঘ পশ্চিমাদের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার ওয়াচম্যান হিসেবে কাজ করে আসছে। অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের রেজুলেশন ভঙ্গ করেছে ২৮ বার, অথচ তার বিরুদ্ধে কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি; জাতিসংঙ্ঘ কাশ্মীরের বা আরাকানের নির্যাতিত মুসলিমদের নিরাপত্তার বিষয়ে আজ অবধি কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আমরা কি করে ভুলে যাই যে এই জাতিসঙ্ঘের ডাচ শান্তিরক্ষীদের নিষ্ক্রিয়তার মুখে ও গ্রিক সেচ্ছাসেবী বাহিনীর সহায়তায় সার্বরা ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই বসনিয়াতে বর্বর মুসলিম গণহত্যা চালিয়েছিল (দেখুনঃ ‘ বসনিয়া গণহত্যাঃ সাম্প্রতিক পূর্ব ইউরোপের বৃহত্তম মুসলিম গণহত্যা” https://alfirdaws.org/2022/07/14/57980/)। মুসলিমরা তাই কোনভাবেই জাতিসঙ্ঘের উপর আস্থা রাখতে পারে না। তারপরও আমাদের দেশে দালাল শাসকগোষ্ঠী কেবলমাত্র নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার কাঠামোকে মেনে নেয়, জাতিসঙ্ঘের মিশনে আমাদের বীর সেনাদের পাঠায়! এটা মুসলিম উম্মাহ্’র সাথে নির্মম প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।
আমাদের সেনাবাহিনী আমাদের জন্য গর্বের, তারা আমাদেরকে নিরাপত্তা দিবে, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে এদেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করবে, এটাই তাদের প্রধান কাজ হবার কথা। আমাদের সেই নিরাপত্তা আজ বিপন্ন। দেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় আগ্রাসন তো আছেই, তার সাথে ইদানিংকালে বার্মার মত একটা দুর্বল ও ভঙ্গুর রাষ্ট্র আমাদের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। মিয়ানমারের মর্টার শেল আঘাত হানছে আমাদের ভূমিতে, তাদের পুতে রাখা স্থলমাইনে প্রাণ যাচ্ছে এ দেশের মানুষের, গোলাগুলির শব্দে সীমান্তবাসী আতংকিত, নিরাপত্তার ইস্যুতে আমরা বসতি স্থানান্তরে বাধ্য হচ্ছি, চরম অশান্তি আর উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে দিন কাটাচ্ছে দেশের মানুষ, আর আমাদের সেনারা আত্মহুতি দিচ্ছে জাতিসঙ্ঘের মার্কিন-ব্রিটিশ স্বার্থরক্ষার মিশনে!
প্রসঙ্গক্রমে মুসলিম সেনাবাহিনীর দায়িত্ব আর তাদের ঐতিহ্যকে একটু স্মরণ করা আবশ্যক। মুসলিম সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিল আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ)-এর হাতে; তাদের প্রধান দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়, বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে মুসলিম উম্মাহ্’র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আল্লাহ্’র দ্বীনকে বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে সামরিক বাধাকে অপসারণ করা। এই বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছেন খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.), সালাউদ্দিন আইয়ুবি, মুহাম্মদ আল-ফাতেহ্’র মত মহান সাহসী বীর। আমরা জানি তারা দুনিয়াবি কোন স্বার্থে বা কোন জালিম শাসককে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে লড়াই করেননি, বরং তাদের উদ্দেশ্য ছিল জুলুমকে অপসারণ করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই আকিদাগত আদর্শিক ভিত্তি তাদেরকে সমসময়িক পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক ও অপ্রতিরোধ্য বাহিনীতে পরিণত করেছিল। আজ তাদেরই উত্তরসূরীদের ভাড়াটিয়ে বাহিনী করে রেখেছে পুঁজিবাদী সেকুলার শাসকগোষ্ঠী, এরচেয়ে লজ্জা ও পরিতাপের বিষয় আর কি হতে পারে?
এই শাসকগোষ্ঠীর নিজেস্ব কোন মিশন ও ভিশন নেই, তারা নিজেরা চিন্তায় ও বুদ্ধিতে পরজীবী। তাদের অধীনে আমাদের সেনারা অন্যের স্বার্থে ব্যবহৃত হবে এটাই স্বাভাবিক। এর চেয়ে বেশিকিছু আশাও করা যায় না। মুসলিম সেনাবাহিনীকে তাদের প্রকৃত দায়িত্বে নিয়োজিত করতে পারবে খলিফা কারণ খিলাফতের একটা নিজস্ব রাজনৈতিক ভিশন আছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই মুসলিম সেনাবাহিনীর সকল বিজয়গাথা খিলাফতের অধীনে। তাই কেবলমাত্র খিলাফতই পারবে মুসলিম সেনাবাহিনীর হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে। আর তখন তাদের লড়াই, তাদের আত্মত্যাগ সবই হয়ে উঠবে অর্থবহ ও আল্লাহ্’র কাছে গ্রহণযোগ্য, ইনশাল্লাহ্।
“যারা ঈমানদার তারা আল্লাহ্’র পথে সংগ্রাম করে এবং যারা অবিশ্বাসী তারা তাগূতের পথে সংগাম করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কর। নিশ্চয়ই শয়তানের কৌশল দুর্বল” (সূরা আন-নিসা: ৭৬)।
- আবু যায়েদ
“ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলঃ চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশের জোরালো অংশীদারি চায় যুক্তরাষ্ট্র”
খবরঃ
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের সর্বশেষ এক প্রতিবেদন থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনকে ঠেকাতে বাংলাদেশের মত দেশসমূহের জোরালো অংশগ্রহণ চায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক অনুশীলন ও বিনিময় কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এখানে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের সাথে করা সামরিক অনুশীলনকে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্টের (জিসোমিয়া চুক্তি) সাক্ষরসহ ঢাকার আরো ভূমিকা চেয়েছে ওয়াশিংটন। (https://www.kalerkantho.com/online/national/2022/10/03/1189655)
মন্তব্যঃ
প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে নানা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করলেও হাসিনা যে এখনও কৌশলগত বিষয়ে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার মোড়ল এই দেশটির নীতি বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করছে এটি পরিস্কার। যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশসহ হরমুজ প্রণালী অঞ্চলে যৌথ নৌ-মহড়ায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ করা এর একটি প্রমাণ। দ্বিতীয়ত, আমেরিকার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিশেষায়িত বাহিনী র্যাব গঠন করা এবং তাদের ট্রেনিং ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের নামে দেশে ইসলামের পুনর্জাগরণ ঠেকাতে এই র্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে, এটা এখন শেখ হাসিনা প্রকাশ্যেই বলছেন। তৃতীয়ত, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা সন্মেলন যা এই অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পার্টনারশিপের মূল ফোরাম তার আয়োজক হয়ে বাংলাদেশ যে এই অংশীদারিত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তা হাসিনা সরকারই প্রমাণ করেছে।
প্রকৃতপক্ষে বর্তমান পশ্চিমা পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার অধীনে থেকে কোন জাতিরাষ্ট্রের পক্ষেই আমেরিকা, বৃটেন, ইউরোপ, চীন কিংবা রাশিয়ার মত শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর অংশীদারী নীতির বাইরে থাকা সম্ভব না। কারণ এই বিশ্বব্যবস্থায় নীতি-নৈতিকতার কোন স্থান নেই, এখানে ‘জোর যার মুল্লুক তার’, এটাই শেষ কথা। এই বিশ্বব্যবস্থার পরাশক্তিগুলো অনেক দেশকেই তাদের আঞ্চলিক-বৈশ্বিক স্বার্থে ধ্বংস করে দিয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে শুরু করে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত এমন দেশের সংখ্যা প্রচুর। বাংলাদেশসহ বেশীরভাগ ইন্দো-প্যাসিফিক দেশই অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ছিল। যখনই আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নকারী খিলাফতের নেতৃত্বাধীন ইসলামী বিশ্বব্যবস্থা দুর্বল হলো এবং পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থা শক্তিশালী হতে থাকলো তখনই ওলন্দাজ, পর্তুগীজ, ফ্রেন্স, বৃটেন সবাই এই অঞ্চলের উপর ঝাপিয়ে পড়লো এবং এই অঞ্চলের মানুষগুলোকে পিস্ট করে তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ অর্জনে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলো। তাদের এই ভয়ংকর প্রতিযোগিতার ফলে এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণের হাত বারবার বদল হয়েছে, সংগঠিত হয়েছে অসংখ্য যুদ্ধ, বয়ে এনেছে ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ যুদ্ধ এমনই একটি বিপর্যয়ের নামান্তর, যা সংগঠিত হয়েছে আমেরিকা এবং সোভিয়েত রাশিয়ার শক্তির প্রতিযোগিতার ফলস্বরুপ। আর তাদের ঐকাজের অংশীদার ছিল তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী। একই কারণে বর্তমান দালাল শাসকগোষ্ঠী কিংবা জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোন শাসকের পক্ষেই বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার এই শক্তির প্রতিযোগিতায় নিজের নিরাপত্তা এবং স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই শেখ হাসিনা মুখে অনুযোগের সুর রাখলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের আমেরিকা-বৃটেন-চীনের বর্তমান শক্তির প্রতিযোগিতা থেকে তিনি দেশ এবং দেশের জনগণকে রক্ষা করতে পারবেন না। বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের যুদ্ধ ও প্রাণহানি এবং অসংখ্য বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের বসতিচ্যুত হওয়া তারই প্রমাণ।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “পৃথিবীতে (বিপর্যয়) ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে। কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারই (ধ্বংস) অপেক্ষা করছে” (সুরা ফাতির ৪৩)। আল্লাহ্‘কে এবং আল্লাহ্র দেয়া বিশ্বব্যবস্থা ইসলামকে বিশ্বের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে এসব পরাশক্তিগুলো নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় বিশ্বকে পিস্ট করার অবাধ লাইসেন্স পেয়ে গেছে। আমেরিকা-বৃটেন কিংবা চীন-রাশিয়া এসব হায়নাদের শক্তির প্রতিযোগিতায় আজ যে শুধু দুর্বল দেশের মানুষরা আক্রান্ত তা নয়, তাদের ধর্ম-বর্ণের তথাকথিত আধুনিক বিশ্বের লোকেরাও আজ আক্রান্ত হচ্ছে; ইউক্রেন যুদ্ধ যার অন্যতম নজির। তাই এদের হাত থেকে দেশ, অঞ্চল বা বিশ্বকে রক্ষা করতে হলে শক্তিশালী আরেকটি দেশ গঠন করে আসলে লাভ নাই। গঠন করতে হবে আল্লাহ্’র প্রদত্ত জীবনাদর্শ ইসলামের আলোকে একটি বিশ্বব্যবস্থার। আর এই বিশ্বব্যবস্থার নামই হচ্ছে খিলাফত।
খিলাফত একটি দেশের সীমারেখায় প্রতিষ্ঠিত হলেও পুরো বিশ্বের মানুষগুলোর জন্য এর আছে একটি আদর্শিক দৃষ্টিভংগী। খিলাফতের বিশ্বনীতি হচ্ছে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে বিশ্বকে জুলুম মুক্ত করা। এটি একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও সামরিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করে, যা সত্য-ন্যায় প্রচার এবং বাস্তবায়নে প্রয়োজনে যেকোন বাধাকে সরিয়ে দিতে পারে। খিলাফতের প্রায় ১৩০০ বছরের ইতিহাস এরই স্বাক্ষী হয়ে আছে। বাংলাদেশসহ এই পুরো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে সাম্রাজ্যবাদী হায়নাদের হাত থেকে রক্ষায় এখানে আবার নব্যুয়তের আদলে খিলাফতে রাশেদাহ্ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই খিলাফত রাষ্ট্র দ্রুততম সময়ে ইসলাম ও মুসলিমদের শক্তি ও সম্পদকে ব্যবহার করে এই ‘জোর যার মুল্লুক তার’ ভিত্তির বিপর্যয় থেকে বিশ্বকে উদ্ধার করবে।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“মূল্যস্ফীতির বিশ্বায়ন: বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র”
খবরঃ
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী অর্থনীতির ততোধিক প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে তার প্রভাব শুধু সে দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, সেই প্রভাব গড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের প্রায় সর্বত্র। ফেডের অনুসরণে অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে এবং অনিয়ন্ত্রিত ডলারের প্রভাবে অন্যান্য দেশের মুদ্রার অবনমন—এটাই এখন বাস্তবতা। গ্লোবাল টাইমস-এর এক সংবাদে বলা হয়েছে, এবারের বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি ডলারবাহিত মূল্যস্ফীতি। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এর সূত্রপাত। আর সেই ডলারের হাত ধরে মূল্যস্ফীতি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, এমন কথাই বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, নীতি সুদের হার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামান্যতম সাফল্য মিলছে না, বরং এতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। (www.prothomalo.com/business/bank/umroewxc5b)
মন্তব্যঃ
মুল্যস্ফীতি বিপর্যয় কাগুজে মুদ্রা ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কাগুজে মুদ্রানীতিতে (Fiat Curency) অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রা ছাপানোর ক্ষমতাই বিশ্ব মূল্যস্ফীতির প্রকৃত কারণ। ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বর্ণমান ভিত্তিক (Gold Standard) মুদ্রাব্যবস্থা থেকে সরে আসে এবং ইচ্ছামাফিক ডলার ছাপানোর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। ডলারকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি, মুদ্রাবাজার ও বাণিজ্যকে ডলারের উপর নির্ভরশীল করে তোলে। ফলে সারাবিশ্বের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া শুরু করে। বিভিন্ন দেশ স্বর্ণের পরিবর্তে মার্কিন ডলারকে রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে রেখে তাদের নিজস্ব মুদ্রার প্রচলন শুরু করে এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবেও কাগুজে মুদ্রা ডলারকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে US Federal Reserve প্রতিবছর ৮-১২% ডলার ছাপানো বৃদ্ধি করে। ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। কোভিড মোকাবেলা এবং জনগণকে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ার অজুহাতে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র আগের কয়েক দশকের তুলনায় অনেকগুণ বেশি ডলার ছেপেছে—১৮ ট্রিলিয়ন বা ১৮ লাখ কোটি ডলার। ফলশ্রুতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির (৯%) মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এই অনিয়ন্ত্রিত ডলার ছাপানো সারা পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছে মুদ্রাস্ফীতি। বিশ্বের অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়ছে।
এমতাবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রন করার লক্ষ্যে নীতি সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধি করা ছাড়া পুঁজিবাদী মনিটারি পলিসিতে অন্যকোন সমাধান অবশিষ্ট নেই। ফলশ্রুতিতে ফেডারেল রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য আক্রমণাত্মকভাবে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বাড়ায় বিশ্বজুড়ে স্থানীয় মুদ্রাগুলোর ধ্বস নামছে। কারণ ফিয়াট মুদ্রাব্যবস্থায় মুদ্রার মূল্য নির্ধারিত হয় মুদ্রার সরবরাহ ও চাহিদা এবং মুদ্রা ইস্যুকারী সরকারের আর্থিক স্থিতিশীলতার উপর ভিত্তি করে, মুদ্রার অন্তর্নিহিত মূল্যের (Intrinsic Value) উপর ভিত্তি করে নয়। চাহিদা বাড়লে মুদ্রার মূল্য বেড়ে যায়। অন্যদিকে খুব বেশি সরবরাহ থাকলে মুদ্রার মান পড়ে যায়। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার বাড়িয়েছে তাই ডলারের উচ্চ চাহিদার কারণে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। নীতি সুদহার বৃদ্ধির আরেকটি দিক হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি পাওয়া। তাই বড় বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ট্রেজারী বন্ডে বিনিয়োগ করার জন্য অন্যান্য দেশের ঋণবাজার এবং বিশ্ব ঋণবাজার থেকে তাদের ডলার প্রত্যাহার করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি মার্কিন ট্রেজারী বন্ডে বিনিয়োগের জন্য মিশরের বাজার থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পুঁজি প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার থেকে ডলার প্রত্যাহারের ফলে বিশ্বব্যাপী ডলারের সংকট তৈরি হচ্ছে, ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ছে এবং দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। স্থানীয় মুদ্রার দরপতনের ফলে আমদানি ব্যয়বহুল হচ্ছে, পরিণামে অবধারিতভাবে সমগ্র বিশ্ব মূল্যস্ফীতির ফাঁদে পড়ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধির এই পুঁজিবাদী পলিসি বারবার ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার বৃদ্ধি এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট এশিয়ান ক্রেডিট ক্রাঞ্চ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতিকে ধ্বসিয়ে দিয়েছিল। সুতরাং, বিশ্বব্যাপী মার্কিনীদের ডলার কর্তৃত্ব (Hegemony) টিকিয়ে রেখে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার নির্ভরশীলতা বজায় রেখে যেকোন প্রকার মনিটরি পলিসি আরোপের অর্থ হল মূল্যস্ফীতির শিকড়কে জিইয়ে রাখা। তাই বিকল্প মুদ্রাব্যবস্থার বাস্তবায়ন এখন অবশ্যম্ভাবী।
মুদ্রাস্ফীতি স্থায়ীভাবে নির্মূল করা যাবে না যতক্ষণ না আমরা আমাদের মুদ্রাব্যবস্থাকে ঔপনিবেশিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দাসত্ব থেকে মুক্ত করি এবং ইসলামী শারীয়াহ্ কর্তৃক নির্ধারিত স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করি। ইসলাম স্বর্ণ ও রৌপ্যকে মুদ্রার মান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক ভিত্তিক মুদ্রানীতিতে মুদ্রা ছাপানো হয় স্বর্ণ ও রৌপ্যের মজুদের ভিত্তিতে। যেহেতু স্বর্ণ ও রৌপ্যের সরবরাহ কৃত্রিমভাবে বাড়ানো সম্ভব নয়; এগুলো প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত মূল্যবান ধাতব পদার্থ সেহেতু স্বর্ণ ভিত্তিক মুদ্রানীতি অনুযায়ী মুদ্রা ছাপানো অত্যন্ত কদাচিৎ একটি বিষয়। ফলে দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে এবং ক্রমান্বয়ে তা কমতে থাকবে। ফলে স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রানীতিতে মুদ্রা সরবরাহজনিত মুদ্রাস্ফীতি (Monetary Inflation) বলে কিছু নেই। অন্যদিকে খিলাফত রাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবহারের জন্য একটি মুদ্রা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য আলাদা কোন মুদ্রাব্যবস্থা নেই। স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রাতেই দেশীয় এবং বিদেশী উভয় বাণিজ্য পরিচালিত হয়। এই মুদ্রাব্যবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীল বিনিময় হার বৈদেশিক বাণিজ্যে মুদ্রা ঝুঁকিকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করবে। ডলার, পাউন্ড বা এই ধরনের কাগুজে মুদ্রা বিশ্ব বাণিজ্যে ক্রমাগতভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে এবং তৃতীয় বিশ্বসহ বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রসমুহ খিলাফতের ছায়াতলে এসে অনাকাঙ্খিত অর্থনৈতিক বিপর্যয় মুক্ত ও লাভজনক বৈদেশিক ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে।
- মোহাম্মদ সিফাত নেওয়াজ
“সরকারি কর্মচারীদের বিদেশে প্রশিক্ষণ-উচ্চশিক্ষাঃ পেশাগত জীবনে কাজেই আসছে না দক্ষতা উন্নয়ন”
খবরঃ
স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিডি) জ্যেষ্ঠ সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন হেলাল উদ্দিন আহমেদ। কর্মদক্ষতা বাড়াতে নেদারল্যান্ডস ও স্পেন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চলতি বছরের ২২ মে দেশে ফেরেন। তার পরদিনই অর্থাৎ ২৩ মে অবসরকালীন ছুটিতে চলে যান। ফলে এ কর্মকর্তার পেছনে করা সরকারের সেই খরচ কোনো কাজেই আসেনি। হেলাল উদ্দিন আহমেদের মতো বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অবসরে যাওয়ার উদাহরণ যেমন রয়েছে, একইভাবে দপ্তর পরিবর্তনের ঘটনাও কম নয়। এতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিদেশে গিয়ে অর্জিত দক্ষতা তেমন কাজে আসছে না তাদের পেশাগত জীবনে। (bonikbarta.net/home/news_description/315540/পেশাগত-জীবনে-কাজেই-আসছে-না-দক্ষতা-উন্নয়ন)
মন্তব্যঃ
এদেশে যেমন দেশের প্রয়োজনীয় সবকিছুই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় তেমনিভাবে রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত করতে হবে তার জ্ঞানও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দেশ পরিচালনা করার মত দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি! অন্যদিকে, এসকল শিক্ষা সফরে আমলারা যে শুধুমাত্র ট্যাকনিকেল বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করে তাই শুধু নয়, বরং এর পাশাপাশি পশ্চিমা চিন্তাও এদেশে আমদানি করে। ফলে এরা একইসাথে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার যে হেজেমনি রয়েছে তা ধরে রাখতে সহায়তা করে। গণতন্ত্র, সেকুলারিজম, ফ্রীডম, জাতীয়তাবাদ, ইসলামবিদ্বেষ ইত্যাদি পশ্চিমা কুফর চিন্তা এরা তাদের এই শিক্ষাসফরের মাধ্যমেই বহন করে নিয়ে আসে। কিছু কিছু কর্মকর্তার আচরণ দেখে মনে হবে দেশের জনগণ তাদের কষ্টার্জিত অর্থের মাধ্যমে বৃটিশ উপনিবেশবাদের লিগ্যাসি ধরে রাখা বঙ্গীয় লর্ড, স্যার আর ভাইসরয়দের অর্থের যোগান দিয়ে যাচ্ছে। এর স্পর্ধা এতদূর পৌছিয়েছে যে, স্যার না ডাকায় বৃদ্ধকেও কান ধরিয়ে সরি বলতে বাধ্য করতে আমরা দেখেছি।
মূলত, যেকোন রাষ্ট্র যার এগিয়ে চলার পথে কোন আদর্শিক ভিত্তি নেই, সেই রাষ্ট্র কখনোই বিশ্বের বুকে নিজের অবস্থান কি হবে তা নির্ধারন করতে সক্ষম হবে না। ফলে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের অনুসারী হয়েই তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়ার পদবী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এদেশের শাসকবৃন্দ সবকিছুই পশ্চিম থেকে ধার করে চলে। নিজেদের কোন উদ্ভাবনী ক্ষমতা নেই। পশ্চিম যদি করোনা প্রতিরোধে লকডাউন দিতে বলে তাহলে এরাও লকডাউন দেয়। পশ্চিম যদি বলে নারীর উন্নয়নের জন্য পর্দা ত্যাগ করে হাফপ্যান্ট পড়ে ফুটবল খেলতে হবে তাহলে তারা সেটাকেই ওহী বলে মনে করে তা পালন করে। মূলত এই আদর্শহীনতাই অন্যান্য সকল সমস্যার মত এই সরকারী কর্মকর্তাদের অদক্ষতার সমস্যারও মূল কারণ।
তাই আমলাদের অদক্ষতাসহ অন্যান্য সকল সমস্যার সমাধানকল্পে আমাদেরকে আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। আর সেই আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র একমাত্র ইসলামী আদর্শ থেকেই উৎসারিত হতে পারে। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনী থেকে দেখতে পাই যে, তিনি মদীনাতে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি আদর্শিক রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিলেন যে রাষ্ট্র নিজস্ব সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেদের আদর্শ অর্থাৎ ইসলামের দ্বারস্থ হত এবং এর ভিত্তিতেই প্রশাসন সাজানো হয়েছিল। প্রশাসকরা নিজেদেরকে ইসলামী ব্যবস্থার বিষয়ে শিক্ষিত করে তা দিয়েই জনগণকে শাসন করতেন। অন্যদিকে পরকালের ভয় তাদেরকে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম গণমুখী প্রশাসক হিসেবে গড়ে তোলে। অপরদিকে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান হওয়ায় তাদেরকে অন্যকোন রাষ্ট্রে প্রশাসন পরিচালনার প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য যাওয়ার দরকার পরেনি। যদিও কখনো কোন বিষয়ে অন্যদেশে শিক্ষা-প্রশিক্ষনের জন্যে যাওয়ার দরকার পড়ত তাহলে তা ছিল শুধুমাত্র বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও অনাদর্শিক বিষয়সমূহ যেমন, দাওয়ার জন্য হিব্রু ভাষা শিক্ষা, উন্নতমানের তলোয়ার কিংবা ক্যাটাপাল্ট বানানো শেখা ইত্যাদি। সুতরাং খিলাফত রাষ্ট্র কখনোই এধরনের প্রমোদভ্রমণের আয়োজন করবে না, বরং প্রয়োজন অনুসারে উপযুক্ত লোককে দেশের বাইরে প্রশিক্ষনের জন্য পাঠানো যেতে পারে।
- মো. হাফিজুর রহমান
“কার্ল কুবেল পুরস্কার পেলেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস”
খবরঃ
কার্ল কুবেল ফাউন্ডেশন ফর চাইল্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি, সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে কার্ল কুবেল পুরস্কারে ভূষিত করেছে। ইউনূস সেন্টার সোমবার (৩ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফাউন্ডেশন সারা বিশ্বের পরিবারের প্রতি তার অসাধারণ এবং বহুমুখী প্রতিশ্রুতিকে সম্মানিত করেছে। কার্ল কুবেল ফাউন্ডেশনের বোর্ডের ডেপুটি চেয়ার-ওম্যান ড. কার্স্টিন হামবার্গ বলেছেন, “ইউনূস তার নারী গ্রাহকদের সন্তান ও পরিবারের জন্য আরও ভাল জীবনযাপন সম্ভব করেছেন”। কার্ল কুবেল ফাউন্ডেশন, কোভিড-১৯ মহামারী ও বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে নতুন যুদ্ধ পর্যন্ত প্রসারিত বৈশ্বিক সংকটের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদকে (ইউনূসকে) একটি বড় আশার উৎস হিসেবে প্রশংসা করেন। ড. কার্স্টিন হামবার্গ বলেন, “তিনি সত্যিই একজন গেম চেঞ্জার এবং আশার স্রষ্টা”। (https://www.voabangla.com/a/6773885.html)
মন্তব্যঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ও পরে মুসলিম ভূখণ্ডগুলো থেকে বৃটেন তার সাম্রাজ্য গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হলে বিভিন্ন দালাল পরিবার তৈরি করে তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে স্বাধীনতার ‘নাটক’ মঞ্চস্থ করে। এই পরিবারগুলো হয়ে দাঁড়ায় ব্রিটেনের স্বার্থের রক্ষাকবচ। অপরদিকে ঠিক একই সময়ে আমেরিকার উত্থান হয়। দীর্ঘদিনের দখলদারিত্ব বজায় থাকায় বৃটেনের পক্ষে যেভাবে দালাল পরিবার তৈরি করা সহজ ছিল আমেরিকার জন্য তা এতটা সহজ ছিল না এবং তা ছিল সময়সাপেক্ষ। ফলে আমেরিকা ভিন্ন পথে অগ্রসর হয়। আর্মি অফিসারদেরকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সামরিক অভ্যুত্থান করে বৃটেনের তৈরি করা দালাল পরিবারগুলোর কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে থাকে আমেরিকা। তদানীন্তন পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ নিয়ে ব্রিটেন এবং আমেরিকার মধ্যে তৈরি হয় এক রক্তক্ষয়ী সংঘাত যার বলি হতে থাকে এই মুসলিম উম্মাহ্’র সন্তানেরা। আমেরিকা বুঝতে পারে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে খুব বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখা সুবিধাজনক নয়, ফলে সে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব তৈরি করার দিকে মনোযোগ দেয়। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপি নামক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে, যা এর পরবর্তী সময়ে এই দেশে আমেরিকার স্থানীয় চৌকিদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
বিনিয়োগকারীরা যেভাবে সব ডিম একই ঝুড়িতে না রেখে একাধিক ঝুড়িতে রাখে, ঠিক তেমনিভাবে আমেরিকাও একাধিক দালাল তৈরি করে, যেন একজন ব্যর্থ হলে আরেকজনকে দিয়ে স্বার্থ হাসিল বা সংরক্ষণ করা যায়। ডক্টর ইউনুস এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ইতিপূর্বে বিএনপির অতি-অজনপ্রিয়তার প্রেক্ষাপটে ১/১১-এর সময় ইউনুসকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার ব্যর্থ চেষ্টার পর আমেরিকা দীর্ঘদিন বিরতি নেয়। এই সময়ের মধ্যে তাকে একজন সজ্জন এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা যা করা দরকার তার সবই করে। ড. ইউনূসের কার্ল কুবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়া এরই ধারাবাহিকতা মাত্র। বৃটেন-ভারতের দালাল আওয়ামী লীগও আমেরিকার ফন্দি বুঝতে পেরে ইউনূসের বিরুদ্ধে লেগেছে। পদ্মা সেতু থেকে ইউনূসকে টুস করে ফেলে দেওয়ার বক্তব্য এরই ফসল। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদকের‘ (সূত্র: ২৮ জুলাই ২০২২, এনটিভি)। বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয় ডিবি পুলিশের বক্তব্যে: ‘প্রধানমন্ত্রী হবেন ড. ইউনূস, এমন বার্তা ছড়ানো হয়েছিল: ডিবি’ (সূত্র: ২৮ আগস্ট ২০২২, একুশে টেলিভিশন)। নতুন রাজনৈতিক দল তৈরী ও বিএনপিকে পুনরায় জনপ্রিয় করার ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি আমেরিকা পাশার ঘুঁটি হিসেবে ড. ইউনুসকেও সংরক্ষনে রেখেছে।
খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের পর থেকে এখন পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা-বৃটেন মুসলিম ভূমিগুলোর উপর তাদের দখলদারিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে মূলত তিনটি কারণে; কুফর সংস্কৃতি, অর্থ এবং দালাল শাসকশ্রেণী। বিশেষ করে দালাল শাসকদের ব্যাপারে মুসলিমদের অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে এবং তাদের মুখোশ জনগণের সামনে উন্মোচন করে দিতে হবে। তাহলে তাদের সস্তা জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে কাফির শক্তিগুলো বারবার উম্মাহ্কে প্রতারিত করতে পারবে না। নিজের পারিবারিক জীবনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে স্ত্রী-সন্তানবিহীন জীবনযাপন করা ড. ইউনুস নাকি তার গ্রাহকদের সন্তান ও পরিবারের জন্য একজন গেম চেঞ্জার! আমূল পরিবর্তনের কথা বলে আমেরিকা ইমরান খানকে পাকিস্তানে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবেই ক্ষমতায় এনেছিল যার উদ্দেশ্য ছিল উম্মাহ্কে প্রতারিত করে মানবরচিত কুফর ব্যবস্থাকে আরো ক’টা দিন টিকিয়ে রাখা। চেহারা পরিবর্তনের এই পুরনো খেলা থামিয়ে দেওয়ার এখনই সময়। কালেমা খচিত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর আল-উকাব পতাকা হল এই উম্মাহ্’র প্রকৃত ‘গেম চেঞ্জার’, যা কোষমুক্ত বর্শার মাথায় পুনরায় উন্মোচন (unfurl) করার কাজে সবাইকে দ্রুত অগ্রসর হতে হবে।
- রিসাত আহমেদ
“নীতি সুদহার বাড়ালো বাংলাদেশ ব্যাংক”
খবরঃ
মুদ্রানীতি সুষ্ঠুভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে রেপো বা নীতি সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো টাকা ধার করতে হলে আগের চেয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি সুদ গুনতে হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী, ওভারনাইট রেপো সুদহার আগের চেয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫.৭৫ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছরের ২৯ মে সুদের হার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছিল। পরে ৩০ জুন এ সুদের হার আবার বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে আনা হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রেপো সুদের হার আরেক দফা বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। (https://mzamin.com/news.php?news=23049)
মন্তব্যঃ
সুদের হার বাড়ানোর ব্যাপারে যুক্তি হিসেবে, করোনার প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করতে নীতি সুদহার (Repo rate) দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত কমানোর জন্য, US Federal Reserve নীতি সুদহার (Repo rate) বাড়িয়ে চলেছে এবং এর প্রভাব শুধু সে দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, সেই প্রভাব গড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের সর্বত্র। Federal Reserve এর অনুসরণে অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে এবং অনিয়ন্ত্রিত ডলারের প্রভাবে তাদের দেশের মুদ্রার অবনমন (বিপরীতে ডলার শক্তিশালী) এখন ভয়াবহ বাস্তবতা। পুঁজিবাদী মুদ্রানীতি নির্ধারণে যদিও অন্যদেশগুলোর কোন ভূমিকা নেই, তবুও এই মুদ্রা শৃঙ্খলের কারণে প্রতিটি দেশের মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে, তীব্র অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। কোভিড-১৯ ভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না থাকলেও পুঁজিবাদী ডলারভিত্তিক অর্থনীতি যেকোন দেশকে দরিদ্র্যতা ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে, এটাই বাস্তবতা। যার প্রমাণ, ১৯৩৪ সালে মার্কিন ডলারের জন্য স্বর্ণভিত্তিক মান বাতিল করার ৬৭ বছর পর, মুদ্রাস্ফীতির জন্য CPI (ভোক্তা মূল্য সূচক) ৬২৫% বেড়েছে। অথচ, ১৯৩৪ সালের আগের ৬৭ বছরে, CPI মাত্র ১০% বৃদ্ধি পেয়েছিল।
প্রকৃতপক্ষে, মুদ্রাস্ফীতির বর্তমান তরঙ্গের পিছনে প্রধান কারণ হল, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের কয়েক দশকের তুলনায় অনেক গুণ বেশি ডলার ছেপেছে (১৮ ট্রিলিয়ন বা ১৮ লাখ কোটি ডলার)। করোনা মহামারি মোকাবিলায় আমেরিকান সরকার জনগণকে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা দিয়েছে। এ অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে তারা যেমন একদিকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তেমনি সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক Federal Reserve বিপুল পরিমাণ মুদ্রা ছেপেছে। অতিরিক্ত ডলারের কারণে সারা পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। প্রকৃতপক্ষে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কাগুজে মুদ্রা (Fiat money) ডলার নিজেই মুদ্রাস্ফীতি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর কারণ। এটি এমন একটি মুদ্রা যার কোন প্রকৃত অন্তর্নিহিত নিজস্ব/স্বাভাবিক মূল্য নেই। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র তার ব্যয়ভার বহন করার জন্য নিজের ইচ্ছামত মুদ্রা ছাপাতে ও তা সরবরাহ করতে পারে, এক্ষেত্রে কোন সম্পদের মজুদ (reserve) কিংবা উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর হ্রাস-বৃদ্ধির তোয়াক্কা করে না। মুদ্রা নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং সরকারগুলো তাদের উপলব্ধ তহবিল (কোন সীমাবদ্ধতা ছাড়াই) বাড়াতে যতটা ইচ্ছা তত মুদ্রা মুদ্রণ করতে পারে। ফলে কাগুজে মুদ্রা (ডলার) নীতিতে উৎপাদনের তুলনায় অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহের সৃষ্টি হয়, যা মুদ্রা সরবরাহজনিত মুদ্রাস্ফীতি তৈরী করে এবং অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রা সরবরাহের ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। অন্যদিকে অধিকাংশ দেশ বাধ্যতামূলকভাবে কাগুজে মুদ্রা ডলারকে তার রিজার্ভ হিসাবে রাখতে রাখছে, ফলে তাদের মুদ্রার স্থিতিশীলতা সরাসরি ডলারের স্থিতিশীলতার সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়েছে, আমরা মার্কিনীদের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে আছি।
বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি স্থায়ীভাবে নির্মূল করা কখনোই সম্ভব হবে না, যতক্ষণ না আমরা আমাদের মুদ্রা ব্যবস্থাকে ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দাসত্ব থেকে বের করে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা প্রদত্ত শারী’আহ্ ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করছি। শারী’আহ্ টাকা ছাপানোর সুনির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় নিয়ম প্রদান করেছে, আর তা হলো স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক দ্বি-ধাতব (Bi-Metallic Standard) মুদ্রা ব্যবস্থা। ডলারের পরিবর্তে স্বর্ণ ও রোপ্যভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থায় এধরণের সমস্যা সহজেই এড়ানো সম্ভব। শারী’আহ্ খিলাফত রাষ্ট্রকে ইচ্ছামত টাকা ছাপানোর অনুমোদন দেয় না। ফলে রাষ্ট্রের হাতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ তথা ইচ্ছামত সংকোচন ও সম্প্রসারণের নীতি অনুসরণের কোন হাতিয়ার নেই। স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রানীতিতে স্বর্ণ ও রৌপ্যের নির্দিষ্ট মজুদের (reserve) বিপরীতে মুদ্রা ছাপানো হবে এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যের সাথে মুদ্রার একটি অনুপাত নির্ধারণ করা হবে। কোন ধরনের ঘাটতি বা কোন প্রয়োজন দেখা দিলে স্বর্ণের মজুদ (reserve) না বাড়া পর্যন্ত মুদ্রা ছাপানো যাবে না। স্বর্ণ ও রূপা উভয়েরই নিজস্ব মূল্য রয়েছে, যা বর্তমানে প্রচলিত মুদ্রার নেই। যেহেতু স্বর্ণ ও রৌপ্যের সরবরাহ কৃত্রিমভাবে বাড়ানো সম্ভব নয়; এগুলো প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত মূল্যবান ধাতব পদার্থ এবং রাষ্ট্র স্বর্ণ ও রৌপ্যের মজুত ব্যতীত নিজের ইচ্ছামত মুদ্রা ছাপানো ও সরবরাহ করতে পারে না, তাই মৌলিকভাবে এই মুদ্রা ব্যবস্থা স্থিতিশীল। ফলে দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে এবং ক্রমান্বয়ে তা কমতে থাকবে। কারণ যেহেতু মুদ্রা সরবরাহ স্থিতিশীল থাকবে এবং উৎপাদন বাড়বে, ফলে একই পরিমাণ অর্থ সরবরাহে উৎপাদন বাড়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাবে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমতে থাকে। সুতরাং স্বর্ণ-রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রানীতিতে মুদ্রা সরবরাহ জনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে কিছু থাকবে না। যার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই উসমানীয় খিলাফতে আশি বছরেরও অধিক সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে মাত্র ৭ শতাংশ, যেখানে প্রতি বছর আমাদের দেশে ৫-১০ শতাংশ করে মূল্যস্ফীতি ঘটছে।
- সুজন হোসেন
“মেয়ে শিশুদের উপর উদ্বেকজনক হারে যৌন সহিংসতা”
খবরঃ
… জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী জানুয়ারী-আগস্ট (২০২২) পর্যন্ত ৫৭৪ জন মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এরমধ্যে, ৮৪ জনকে গ্যাংরেপ করা হয়, ৪৩ জন শিশু এমন আছে যারা কিনা প্রতিবন্ধী। ২০ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়, এবং ৮৭ জন শিশু আরও আছে যাদেরকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে, ১৯ বছরের কম বয়সী মেয়ে শিশুরা লিঙ্গ-ভিত্তিক অন্যান্য আরও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। অন্ততপক্ষে, ১৮৬ জন মেয়ে পারিবারিক কলহের কারণে নিহত হয়েছে এবং ১৩৬ জন গুম এবং মানব পাচারের ক্ষপ্পরে পড়েছে। … বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, ভুক্তভোগীদের পরিবার আইনি ব্যবস্থা নিতে নারাজ। কেননা, যখন আইনি মামলা দায়ের করা হয়, তখন অপরাধীদের খুব কমই বিচারের আওতায় আনা হয়। যা বর্তমান সময়ে মেয়ে শিশুদের জন্য নিরাপদ সামাজিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। (অনুবাদকৃতঃ source: www.newagebd.net/article/182551/alarming-sexual-violence-against-girl-child)
মন্তব্যঃ
এভাবে ক্রমবর্ধমান কন্যাশিশুদেরকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের চিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে কি ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতায় বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা আমাদের সন্তাদেরকে নিয়ে গিয়েছে! যার থেকে খুব দ্রুত পরিত্রাণ না পেলে হয়ত আর কিছুদিন পরেই মানুষজন তাদের সন্তানদেরকে দুনিয়ার আলো দেখাতেই ভয় পাবে। পশ্চিমা ভোগবাদী জীবনব্যবস্থার অনুকরণে গড়ে উঠা আমাদের তথাকথিত আধুনিক সমাজ মুলতঃ আমাদেরকে প্রাক-ইসলামী আরবের যুগে ফেরত নিয়ে গেছে, যেখানে কন্যাশিশুকে সামাজিকভাবে অপমানজনক, অপবিত্র এবং বোঝা হিসেবে ভাবা হতো আর যৌন-সুখ অর্জনে ভোগের বস্তু হিসেবে দেখা হত। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কিভাবে আবার সেই অন্ধকার যুগে ফিরে গেলাম? বর্তমান পশ্চিমা ভোগবাদী জীবনব্যবস্থার সাথে আইয়্যামে জাহিলিয়্যাহ্ যুগের তুলনা করলে আমরা সেই সুত্র খুঁজে পাবো। মানুষজন সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনা থেকে পথভ্রষ্ট হওয়ায় সেখানে ভয়াবহ সামাজিক অধঃপতন হয়। ঠিক একইভাবে, বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ তথা ধর্মহীন জীবনব্যবস্থা ১৮শ শতাব্দী থেকে যখন আবার সৃষ্টিকর্তার বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে মানবজাতিকে চলার জন্য পুরাতন আদর্শ নতুন মোড়কে নিয়ে আসে তখন আবার আমরা সেই পুরনো অন্ধকার যুগে ফিরে যাই।
মূলত, ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থা আমাদের সমাজ ও সন্তানদের জন্য এক ভয়ঙ্কর মরণব্যাধী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সবকিছুকেই টাকার মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করার কারণে নারী-বৈষম্য অন্তর্নিহিতভাবেই এইব্যবস্থার স্থায়ী সমস্যা। আবার, জীবনে সুখ পাওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা মানুষকে অতিমাত্রায় বাধাহীন এবং হেডোনিস্টিক অর্থ্যাৎ আনন্দবাদী জীবন অতিবাহিত করতে উদ্বুদ্ধ করায় নারীর প্রতি দৃষ্টি এই ব্যবস্থায় সবসময় যৌন ভোগ্য-পণ্য। তাই এই ব্যবস্থায় মানুষ এই ভোগ্যপণ্য ভোগ করতে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, যার ফলশ্রুতিতে ধারাবাহিকভাবে নারী-শিশু নির্বিশেষে ধর্ষণের শিকার হয়। আমরা যদি এই ব্যবস্থার বর্তমান ধারক-বাহক খোদ আমেরিকার চিত্র দেখি তাহলে দেখা যায়, শেয়ার্ড হোপ ইন্টারন্যাশনাল এর মতে, প্রতি বছর ১ লক্ষেরও বেশি শিশু পতিতা বৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ে আমেরিকার ৯.৮ বিলিয়ন ডলারের সেক্স ট্রাফিকিং ইন্ড্রাস্টিকে চালাতে। সাইট অ্যাডভোকেটিং চাইল্ড প্রটেকশন এর মতে, বিশ্বের ৫০% বাণিজ্যিক শিশু পর্ণোগ্রাফি সাইট আমেরিকার দখলে। চাইল্ড হেল্পের সূত্র মতে, আমেরিকায় প্রতিদিন ৪-৭ টা শিশু নির্যাতন এবং অবহেলার শিকার হয়। প্যাসিফিক ইন্সটিটিউট ফর রিচার্স এন্ড ইবাল্যুয়েশন এর জেসিকা এডওয়ার্ডসের মতে কমপক্ষে ৬৫০০০০ টিনএজ শিশু আমেরিকাতে কোন সাহায্যের বিনিময়ে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছে।
সুতরাং, এই ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থা যতদিন থাকবে ততদিন আমরা কোনভাবেই আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো না। শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের দরকার ইসলামী জীবনব্যস্থা যা কন্যা শিশুকে জান্নাতের দরজা হিসেবে অবিহিত করে নারীদেরকে পরিপূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে। এবং সম্পূর্ণ তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ তৈরির মাধ্যমে মানবজাতিকে হেডোনিস্টিক তথা ভোগবাদী জীবন থেকে মুক্ত করে সমাজকে যৌন সহিংসতার হাত থেকে রক্ষা করবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দু’টি মেয়ে বা বোন থাকে, আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্‘কে ভয় করে এবং তাদের সঙ্গে সদাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে” [মুসনাদে আহমদ]।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম