Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৬৫ তম সংখ্যা । ৩রা অক্টোবর, ২০২২
এই সংখ্যায় থাকছে:
“ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ে কেন এত আলোচনা?”
“পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যুর জেরে ইরানে হিজাব পুড়িয়ে বিক্ষোভ”
“নারী ফুটবল দলের জয় নিয়ে কিশোরের কার্টুন”
“জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনও সুযোগ নেই: ওবায়দুল কাদের”
“বসুন্ধরা, স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই-সহ ৩৬ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা”
“‘সার্টিফিকেট জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে’ বলেই ছিঁড়ে ফেলেন বাদশা”
“সাফ ফুটবলে ‘নারী বিপ্লব’”
“ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ে কেন এত আলোচনা?”
খবরঃ
ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে আবার উত্তপ্ত ইডেন ক্যাম্পাস। ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়ার বিরুদ্ধে সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মেয়েদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করাসহ বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে আন্দোলন করেছে একটি গ্রুপ। রোববার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদেরই শুধু স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। রহস্যজনক কারণে সব সময়ই ‘নীরব দর্শকের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। কখনোই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার নজির নেই। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, ইডেনের কমিটি গঠনে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের তদবির থাকে। তাদের ‘আর্শীবাদ’ পেয়ে নেতা হওয়ার পর ওই নেত্রীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। (https://www.jugantor.com/campus/campuses/600047/ইডেন-কলেজ-ছাত্রলীগ-নিয়ে-কেন-এত-আলোচনা)
মন্তব্যঃ
ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ নিয়ে এত আলোচনা, এত মতামতের মধ্যে ছাত্ররাজনীতির উদ্দেশ্য ও করণীয় নিয়ে কোন কথা নেই। বিরোধী পক্ষ ছাত্রলীগের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে আর সরকারী পক্ষ এই দায় কতিপয় সংগঠনবিরোধী দুষ্ট নেতাকর্মীর উপর চাপিয়ে দিয়ে দায়মুক্তির চেষ্টায় লিপ্ত। ছাত্ররাজনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল ছাত্রসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পরা হতাশা, আত্মহত্যা, শিক্ষা ও গবেষণার অনুপযুক্ত পরিবেশ, শিক্ষার চরম বাণিজ্যিকীকরণ, ছাত্রীদের রেইপ ও সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট প্রভৃতি নিয়ে কথা বলা এবং এগুলোকে অনতিবিলম্বে কার্যকরভাবে সমাধান করার জন্য শাসকশ্রেণীকে বাধ্য করা। কিন্তু বর্তমান শাসনব্যবস্থায় ছাত্ররাজনীতিকে বানিয়ে ফেলা হয়েছে স্বার্থসিদ্ধির কালো হাতিয়ার। সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি এমন প্রত্যন্ত এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বর্বর ডাকাতের দল যেভাবে লাঠিসোটা, রামদা প্রভৃতি নিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলে পরে ঠিক একই কায়দায় ছাত্র-নামধারী কতিপয় বর্বরেরা তাদের দলীয় হাইকমাণ্ডের আদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রামরাজত্ব কায়েম করার নামই এখন ছাত্ররাজনীতি।
এই ছাত্ররাজনীতিতে নারীদের ভূমিকা হল বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় মিছিলের ‘মানবঢাল’ হওয়া, আর দল ক্ষমতায় গেলে মিছিলের শোভাবর্ধন ও দলীয় রাজনীতিবিদদের মনোরঞ্জনের উপকরণ হওয়া। ইডেনের ঘটনায় এরই কদর্যরূপ সম্প্রতি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। দৈনিক মানবজমিনের প্রতিবেদন বলছে, এক ছাত্রীকে টেনেহিঁচড়ে হলের সামনে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার বাইরে নিয়ে গিয়ে তাকে লাঠি দিয়ে পেটানো, লাথি, চড়-থাপ্পড়সহ বিভিন্নভাবে আঘাত করা হয় এবং তার আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয় যাতে পরবর্তীতে মারধরের বিষয়ে সে কথা না বলে। (ইডেন কলেজে হচ্ছেটা কি! ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, মানবজমিন)। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই ঘটনায় তথাকথিত নারীবাদী ও প্রগতিবাদীদের চেতনা জাগ্রত হয়নি। তারা এখন নিশ্চুপ। কারণ তারা মূলত ভন্ড। এই চেতনাজীবি ভন্ডদের মতে নরসিংদির পোশাক-কান্ডে বা তেজঁগাও কলেজের টিপ-কান্ডে নারীর অবমাননা হলেও নেতাদের মনোরঞ্জনে নারী ব্যবহৃত হলে তা নারীর প্রতি কোন অবমাননা হয়নি! তাদের কাছে এটা দলীয় বিষয়, সংগঠনের শৃংখলার বিষয়! মূলতঃ তাদের নারীবাদ ও প্রগতিবাদ হল ইসলামের বিরুদ্ধে নব্য-ক্রুসেডের হাতিয়ার।
শুধু নারীবাদী ও প্রগতিবাদীদের কর্মকান্ডের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। এখন সময় এসেছে, কেমন সমাজে আমরা বসবাস করছি, কোন ব্যবস্থা দিয়ে চলছি আমরা, যেখানে নারী এতটাই অবমূল্যায়িত, সেটার দিকে দৃষ্টি দেবার। যেমন, হাইকোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছে- কোন নারী নূন্যতম ১৮ বছরের হলে এবং যৌন ব্যবসাই তার একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে তিনি বৈধভাবে এ ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন (বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ, না অবৈধ?, ২৩ আগস্ট ২০২০, দৈনিক সংবাদ)। ১৪টি নিবন্ধিত যৌনপল্লি আছে বাংলাদেশে যাদের আয় থেকে সরকারী কোষাগারে নিয়মিত অর্থ জমা হচ্ছে, যার অংশবিশেষ রয়েছে সকল সরকারী বেতন-ভাতা ও উন্নয়ন ব্যয়ে। এত নিকৃষ্ট ব্যবস্থায় বসবাস করছি আমরা!? এটা নিয়ে কারো নূন্যতম কোন লজ্জাবোধও হয় না!! যৌনকর্মীরা তাদের পেশায় সহিংসতার শিকার হয় এটা নিয়ে প্রকাশ্যে সভা-সেমিনার করার মানুষ এই ব্যবস্থায় রয়েছে, কিন্তু তাদেরকে এই পেশা থেকে বের করে আনার কথা বলার মত কেউ নেই (Justice elusive, violence not: Almost all sex workers fall victim to violence, finds study, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ডেইলিস্টার)। কার্পেট ময়লাকে ঢেকে রাখতে পারে, কিন্তু দুর্গন্ধকে নয়। যে ব্যবস্থার ধারক-বাহকরা কয়েক হাজার নারীর ভরনপোষনের দায়িত্ব না নেওয়ার জন্য পতিতাবৃত্তিকে একটি ‘পেশা’ হিসেবে বৈধতা দিতে পারে তারা তাদের নিজেদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য রাজনৈতিকভাবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নেতা-কর্মীদেরকে ব্যবহার করবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়? সময় কী এখনো আসেনি এই মানবরচিত নোংরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উৎপাটন করার? সমাধান নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন নেই। মু’তাসিম বিল্লাহ যদি একজনমাত্র মুসলিম নারীর সম্ব্রম রক্ষা করার জন্য শত্রুর দেশে আক্রমন করতে পারেন, তাহলে তার উত্তরসূরীরা কী নিজ দেশের মুসলিম নারীদের সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য এই চরিত্রহীন হায়েনাদেরকে প্রতিহত করতে পারবে না! আবশ্যই পারবে। ছাত্ররাজনীতির আড়ালে পতিতাবৃত্তির শিকলে বন্দি এই নারীদের বুকফাটা অব্যক্ত আর্তনাদ কী এযুগের মুহাম্মদ বিন কাসিমরা শুনতে পায়না!! কেউ কী নেই যে তাদের কাছে এই আহ্বান পৌঁছে দিবে?
-রিসাত আহমেদ
“পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যুর জেরে ইরানে হিজাব পুড়িয়ে বিক্ষোভ”
খবরঃ
হিজাব আইন ভঙ্গের জের ধরে ইরানে একজন নারীর মৃত্যুর পর সেদেশে যে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে তাতে অংশ নেয়া নারীরা হিজাব পুড়িয়ে দিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। দেশটিতে গত পাঁচদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে এবং অনেক শহরে, নগরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। তেহরানের উত্তরের শহর সারিতে শত শত নারী বিক্ষোভের অংশ হিসাবে হিজাবে আগুন ধরিয়ে দেন। ইরানের রাজধানী তেহরানে গত সপ্তাহে মাশা আমিনিকে হিজাব আইন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ। আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি অচেতন হয়ে যান। তিনদিন কোমায় থাকার পর গত শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই ইরানে হিজাববিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। (www.bbc.com/bengali/news-62977143)
মন্তব্যঃ
মাশা আমিনিকে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা সন্দেহাতীতভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে একটি গর্হিত অপরাধ। কিন্তু বরাবরের মতই সেকুলারিস্টরা ইসলামের বিরুদ্ধে তাদের চিরন্তন ঘৃণাকে উগড়ে দিতে এই ঘটনাটিকে ব্যবহার করছে। তারা প্রচার করে বেড়াচ্ছে, ইসলাম ও এর শারীয়াহ আইন নারীদেরকে জুলুমের মধ্যে রেখেছে মাশা আমিনির মৃত্যু হচ্ছে তারই উদাহরণ। যেমন, ব্রিটিশ সাংবাদিক Janice Turner তার এক নিবন্ধে বলেন, “The headscarf is not just a dress code, it’s an instrument of control designed to frighten and divide an entire nation.” অর্থাৎ সেকুলারদের ভাষ্যমতে ইসলামী ড্রেস-কোড ইরানের মত অত্যাচারী সরকারগুলোকে টিকিয়ে রেখেছে। মূলত তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির উৎস হচ্ছে ইউরোসেন্ট্রিক ইসলামোফোবিয়া এবং ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা। তাই, তারা ইরান কিংবা সৌদি আরবের মত রাষ্ট্র যারা দুই-একটি ইসলামী হুকুম বাস্তবায়নের মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রেখেছে, তাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে মনে করে তাদের সমালোচনাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে ইরান কি আদৌ এমন কোন রাষ্ট্র যারা ইসলামের বাস্তবায়ন ও সংরক্ষনের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়? উত্তর হচ্ছে, না। বরং ইরানী সরকার হচ্ছে সেই সরকার যারা কসাই আসাদকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ও সিরিয়ার মুসলিমদেরকে হত্যা করতে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া ইরাক ও ইয়েমেনের নিরীহ মুসলিমদের হত্যায় তারা সরাসরি নিয়োজিত হয়েছে। এমনকি আফগানিস্তানের অনেক মুসলিম যারা নিজ দেশের বসবাস-অযোগ্য অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ইরানে পাড়ি জমিয়েছিল তাদেরকেও তারা হত্যা করেছে। যদিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “একজন মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও সম্মান অন্য মুসলিমদের নিকট পবিত্র।”
অন্যদিকে, অনেক সেকুলার ও নারীবাদীদের মতে ইরানের নারীরা যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সেগুলোর মূল কারণ হচ্ছে সেখানে হিজাব ও অন্যান্য ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করা এবং এর পাশাপাশি লিঙ্গ সমতার অনুপস্থিতি। যদিও এর মূল কারণ হচ্ছে সেখানে একটি ‘ধর্মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা’র উপস্থিতি যেখানে ধর্মীয় নেতাদের প্রদান করা মনগড়া বিধান দ্বারা দেশকে পরিচালিত করা হচ্ছে, যার সাথে পবিত্র কুর‘আন ও সুন্নাহ্’র কোনরকম সম্পর্কই নেই। মূলত যেকোন ব্যবস্থা যেখানে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা দ্বারা শাসন করা হবে, হোক সেটা গণতন্ত্র কিংবা স্বৈরতন্ত্র, সেখানেই ফলাফল হিসেবে জুলুম-নির্যাতন দৃশ্যমান হবে এবং জনগণের অধিকারকে কেড়ে নেয়া হবে। তা হোক সেটা আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইরান কিংবা বাংলাদেশ। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই যালিম” [সূরাঃ আল-মায়েদা-৪৫]।
যদিও এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় যে ইরানের সাধারণ জনগণ তাদের অত্যাচারী ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করা কিছু মুসলিম নারী কেন তাদের হিজাব পুড়িয়ে ফেলেছে এবং প্রকাশ্যে উল্লাস করে হিজাবের বিরুদ্ধে তাদের রাগ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছে? মূলত তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন যে, গায়রে মাহরামদের (বিবাহ করা যায় এমন পুরুষ) উপস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের হাত ও মুখমন্ডল বাদে সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে ফেলা একটি অত্যাবশ্যকীয় ফরজ, যা কুর’আন ও সুন্নাহ্’র অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। এটি ইরানী কর্তৃপক্ষ কিংবা অন্য কোন সরকার কর্তৃক ঘোষিত কোন নির্দেশনা নয় যে তা মন চাইলেই মানলাম, আর মন না চাইলেই মানলাম না।
অপরদিকে এমন অনেকেই আছেন যারা বলতে চায় যে, ইরান হচ্ছে একটি মডেল রাষ্ট্র যেখানে দেখা যাচ্ছে ইসলাম বাস্তবায়ন হলে নারীসহ অন্যান্যদের জীবনযাপনের অবস্থা কেমন হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ইরানের এই ধর্মতান্ত্রিক-প্রেসিডেন্সিয়াল-পার্লামেন্টারি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে রয়েছে একজন ‘সুপ্রিম লিডার’ এবং যার নেতৃত্বে রয়েছে কিছু ধর্মীয় নেতা, এর কোন ইসলামী ভিত্তিই নেই। বরং, কুর’আন ও সুন্নাহ্ দ্বারা পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার নাম হচ্ছে, ‘খিলাফত ব্যবস্থা’। যেখানে জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত একজন শাসক থাকবেন যিনি জনগণের নিকট নিজের কাজের জন্য দায়বদ্ধ থাকবেন এবং অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে কুর’আন ও সুন্নাহ দ্বারা শাসন করবেন, ইরানের মত ধর্মীয় নেতাদের মনগড়া বিধান অনুযায়ী না। সুতরাং ইরানকে ইসলামী রাষ্ট্রের মডেল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এর ব্যর্থতার দায় ইসলামের উপর চাপিয়ে দেয়া অযৌক্তিক এবং হাস্যকর।
প্রকৃতপক্ষে, ইরানের ক্ষমতাসীন শাসকরা হচ্ছেন একটি স্বৈরাচারী নেতৃত্ব যাদেরকে অতিসত্বর ক্ষমতাচ্যুত করা উচিত যেমনভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা উচিত মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য সকল শাসকদেরকে। কিন্তু ইরানের বিক্ষোভকারীরা যারা তাদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য লিবারেলিজম প্রতিষ্ঠার জন্য আহবান জানাচ্ছে এই আশায় যে, সেখানে নারী ও অন্যান্যদের জীবন উন্নততর হবে তারা নিঃসন্দেহেই ভুল পথে এগোচ্ছেন। কারণ এটি আমাদের সামনে দৃশ্যমান যে, পশ্চিমাসহ বিশ্বের অন্যান্য স্থানের লিবারেল দেশসমূহ কিভাবে একটি সমস্যা থেকে আরেকটি সমস্যায় পতিত হচ্ছে এবং এর সাথে যোগ হচ্ছে ব্যাপক সামাজিক ও নৈতিক দুর্দশা। এর মধ্যে রয়েছে, নারী নির্যাতন, পারিবারিক ভাংগন, যৌন হয়রানি, পুরুষ সংগীদের দ্বারা নারী হত্যা, পারিবারিক নির্যাতনের পর হত্যা ইত্যাদি অপরাধ। মূলত এসকল সমস্যার মূল হচ্ছে ব্যক্তি স্বাধীনতা ও যৌন স্বাধীনতার মত উদারনৈতিক মূল্যবোধ যা পুরুষদেরকে পশুতে পরিণত করে। অন্যদিকে পশ্চিমা সমাজে নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণে কোনরকম বিধি-বিধান নেই এবং পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যর বিষয়টিও সংজ্ঞায়িত করা নেই। ফলে সেখানে নারী-পুরুষদের মধ্যে কোনরকম সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে উঠেনা যেখানে একজন আরেকজনকে সহযোগীতা করবে। পক্ষান্তরে, ইসলাম তার সামাজিক বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে একটি সুস্থ, সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার পরিবেশ তৈরী করে যেখানে হিজাব একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়।
মূলত, ইরান ও অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহের নারীসহ অন্য সবার জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরনের একমাত্র উপায় হচ্ছে খিলাফত ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলামের পরিপূর্ণ এবং সঠিক বাস্তবায়ন করা। আমরা যদি ইসলামী ব্যবস্থার দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে, এটির রয়েছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারীর প্রতি একটি যত্নশীল দৃষ্টি যা সমাজের মধ্যে নারীদের সম্মান প্রতিষ্ঠা করে, নির্যাতনের হাত থেকে তাদের সুরক্ষা দেয়, এর পাশাপাশি নারীদের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক প্রদত্ত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, আইনগত, এবং সামাজিক অধিকার সমূহের সুরক্ষা দেয়। পক্ষান্তরে, সেকুলার রাষ্ট্রসমূহ, যেমন ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড ইত্যাদিতে মুসলিম নারীদের শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে হিজাব এবং নিকাব পরিধান নিষিদ্ধ করনের মাধ্যমে। সুতরাং, আমাদেরকে এটি বিশ্বাস করতে হবে যে, একমাত্র ইসলাম বাস্তবায়ন ব্যতিত অন্য কিছুতেই দুনিয়া এবং আখিরাতে মুসলিমদের সফলতা সম্ভব নয়। তাই আমরা আন্দোলন কিংবা বিক্ষোভ যাই করি না কেন তা করতে হবে ইসলাম বাস্তবায়নের জন্য, অন্য কিছু নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর ও তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার” [সূরা আল মায়েদাহ-৩৫]।
-মো. হাফিজুর রহমান
“নারী ফুটবল দলের জয় নিয়ে কিশোরের কার্টুন”
খবরঃ
সেক্যুলাররা সাফ নারী ফুটবল দলের বিজয়ের মাধ্যমে এটাকে নারীর প্রগতি, রাষ্ট্রীয় সম্মান ও বিজয়ের বিষয় হিসেবে দেখছে। তারা এটাও বুঝানোর চেষ্টা করছে ইসলাম এই বিজয়ের পথে অন্তরায়। অনেক আলেম নারী ফুটবল দলের খেলা বন্ধ করার আন্দোলনও করেছে। তাছাড়া তারা আরো বুঝানোর চেষ্টা করছে হিজাব থেকে বেরিয়ে আসার ফলেই তারা এধরণের অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। একজন তথাকথিত বুদ্ধিজীবি ফেসবুকে পোস্ট করেছে সাফের একজন নারী খেলোয়াড় ফুটবলকে সজোরে লাথি মারার ছবি, যার মধ্য দিয়ে সে বুঝিয়েছে এই লাথি হচ্ছে ইসলমের ধ্যান-ধারণাকে ঝেড়ে ফেলা প্রতীক। (https://www.youtube.com/watch?v=3CkBFv6RLlQ)
মন্তব্যঃ
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়াকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের জন্ম দেয় একট কার্টুন বা ক্যারিকেচার। যেখানে দেখা যায়, একটা মেয়ে এক হুজুরকে লক্ষ্য করে ফুটবলে কিক করছে। আজকে আমরা এই কার্টুনের মর্ম উদ্ধারের চেষ্টা করবো। তারা বুঝাতে চায় ইসলাম নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে একমাত্র বাধা। কোন একটা অদ্ভুত কারণে অন্যান্য ধর্মের সাথে তাদের কোন শত্রুতা দেখা যায় না। শুধু ইসলামকে নারী বিদ্বেষী হিসাবে উপস্থাপন করাই যেন তাদের লক্ষ্য। সেক্যুলার নারীবাদীরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কথা বলে যাকে মূলত দুভাগে ভাগ করা যায়। জেন্ডার ইকোয়ালিটি এবং জেন্ডার রোল। এই দুটি বিষয় নিয়ে আমাদের ধারনা থাকলে আমাদের কাছে পুরো আলোচনাটার ভিত্তিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
প্রথমে আসি জেন্ডার ইকোয়ালিটির আলোচনাতে। এটা বলতে তারা বোঝায় নারী-পুরুষের মধ্যে সকল ক্ষেত্রে সমতা থাকতে হবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকলক্ষেত্রে। ১) একটি ছেলে ও একটি মেয়েকে প্রয়োজন অনুসারে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। যেমনঃ শিক্ষা, খাদ্য, চিকিৎসা ইত্যাদি। এই জায়গাতে সবাই আমরা একমত। ২) এরপর আসে, একজন পুরুষ যতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করবে একজন নারীকে তা করতে দিতে হবে। যেমন বলা যেতে পারে, একজন পুরুষ যদি টপলেস হয়ে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে পারে তাহলে একজন নারীকে কেন হিজাব পড়ে যেতে হবে। এখানেই বিতর্ক ও বিভাজনের শুরু। এর কারণ কি? যেহেতু সেক্যুলার সমাজে মানুষের জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে মজা করা আর তাই যে যত মজা করতে পারবে সে তত বেশী সফল বা হ্যাপি। সমাজের চোখে সে তত স্মার্ট। তাই এখন যদি মজা করার স্বাধীনতাই দেওয়া না হয় তখন জীবনতো বৃথা। সেটা তারা মেনে নিতে পারে না। এজন্য তারা বলে, ‘হোয়াই শুড বয়েস হ্যাব অল দা ফান?’ ৩) এবার আসি, দায়িত্ব পালনের সমতার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, একজন পুরুষ যে সকল দায়িত্ব পালন করছে একজন নারীকেও তা করতে দিতে হবে। সেক্যুলার সমাজে দায়িত্ব একটা সুযোগ যার মাধ্যমে মুনাফা পাওয়া যায় বা অন্যের উপর খবরদারি করা যায়। যেমনঃ পুরুষ ইনকাম করে তাই সে নারীকে পাত্তা দিতে চায় না, নারীদের উপর খবরদারি করে; তখন নারীরাও চিন্তা করে আমি যদি রোজগার করতাম তাহলে আমি এই অবস্থা থেকে বের হতে পারতাম। যদিও এখানে দুইজনেরই চিন্তার ভিত্তিটা ভুল। জেন্ডার ইকোয়ালিটির ধারনাটা আসলে কতটুকু বুদ্ধিবৃত্তিক? আমাদের মানতে হবে নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা আছে। তাদের মধ্যে অনেক মিল আছে, আবার অমিলও আছে। নারী ও পুরুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমান সমান যেমনঃ বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা; কিছুক্ষেত্রে পুরুষরা এগিয়ে, আবার কিছু ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে। আবেগ, সাইকোলজি, ফিজিক্যাল ক্যাপাসিটি বিভিন্ন দিক দিয়ে নারী ও পুরুষ আলাদা। তাই সুযোগ-সুবিধা, কি করতে পারবে আর কি করতে পারবে না, কার কি দায়িত্ব এসকল ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকাটাই যৌক্তিক।
এবার আসি, জেন্ডার রোল বা নারী-পুরুষের কাজ নিয়ে। সেক্যুলাররা প্রশ্ন করে কেন একজন নারীকে বাচ্চা দেখতে হবে? পুরুষরা কেন বাচ্চা দেখবে না? অথবা নারীরা কেন পুরুষের তত্ত্বাবধানের অধীনে থাকবে? তারা বলে সেটা আসলে সমাজ দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া বা স্যোশাল কন্স্ট্রাক্ট। নারী-পুরুষ যে যেভাবে ইচ্ছা সে রোল পালন করবে। এই যুক্তিগুলো আসলে কতটা সত্য? একটা অফিসে যেরকম প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট রোল থাকে ঠিক সেভাবেই একটি সমাজে ও পরিবারে নারী ও পুরুষের সুনির্দিষ্ট রোল থাকতে হবে, আর তা না হলে পরিবার ও সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। কার অভিভাবক কে হবে, কার কার কি কি দায়িত্ব থাকবে সেটা সুনির্দিষ্ট থাকতে হবে। যদি এগুলো যে যার মত ছেড়ে দেয় তার পরিণতি হবে ভয়াবহ, যা আমরা পশ্চিমা সমাজে দেখতে পাচ্ছি। সেখানকার পুরুষরা বাচ্চার পিতার দায়িত্ব পালনে আগ্রহী না। এভাবে পরিবার বা সমাজ ধংস হয়ে যাচ্ছে। সেখানে হতাশা এখন চরম আকার ধারণ করেছে, সুইসাইড ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
যেহেতু নারী-পুরুষের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে, তাই তাদের জন্য আইন-কানুন আলাদা হতে হবে। সমাজের তাদের দায়িত্বগুলোও আলাদা আলাদাভাবে নির্ধারণ হতে হবে। এটাই যুক্তিপূর্ণ। কিন্তু কথা হচ্ছে এটা কে নির্ধারন করবে। পুরুষ নির্ধারন করলে সেটা নারীদের উপর জুলুম হবে, আর নারীরা নির্ধারণ করলে পুরুষদের জন্যে জুলুম হবে। আর তারা কেন একে অন্যের কথা শুনবে। তাই হয় মানুষ এগুলো নির্ধারন করতে পারে, আর তা না হলে সৃষ্টিকর্তা নির্ধারন করে দিতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা যেহেতু আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনিই একমাত্র আমাদের নির্ভুল গাইডলাইন দিতে পারেন।
আমাদের মধ্যে অনেকে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করার পরও তার কাছ থেকে সমাধান নিতে চাই না, অথবা অনেকে বলে এখানে সৃষ্টিকর্তার সমাধান গ্রহনযোগ্য না। এর কারণ কি? সেটা বুঝতে হলে আমাদের স্যাকুলারিজমের ইতিহাস জানতে হবে। ইউরোপের অন্ধকার যুগে খ্রিস্টান ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হতো। তারা অরিজিনাল সিন নামক একটা চিন্তায় বিশ্বাস করতো, যেখানে আদম যে জান্নাতে ফল খেয়েছিলেন তার জন্য ইভ অর্থাৎ হাওয়াকে দায়ী করা হয়। অর্থাৎ সকল সমস্যর কারণ হলো নারীরা। এই কারণেই খ্রিষ্টানরা নারীদের নীচুভাবে দেখতো। তাই ইউরোপের বুদ্ধিজীবিরা নারীদের উন্নতির সাথে ধর্মকে সাংঘর্ষিক মনে করে। আর তাদেরই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে ইসলামের উপর চাপিয়ে দেয়, যার ধারাবাহিকতাই অনুসরণ করে চলেছে এদেশের সেক্যুলাররা।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ কেউ স্বাধীন না? সকলকেই সৃষ্টিকর্তার প্রণীত নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। অন্যদিকে আমাদের দেখা উচিত ইসলামের স্বর্ণযুগে নারীদের অবস্থান কোথায় ছিলো। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় নারী ও পুরুষ উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতো। জ্ঞান বিজ্ঞান এর চর্চা ও আইন শাস্ত্রে নারীরা ছিলেন অগ্রগামী। শেখ আকরাম নদভী নারী মুহাদ্দিস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখতে পান এই সংখ্যা দশ কিংবা বিশ নয়, বরং ৮০০০। পৃথিবীর সর্বপ্রথম ডিগ্রী প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় একজন মুসলিম নারী প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেক্যুলাররা যে বলে ইসলাম চর্চা করে নারীরা এগোতে পারবে না এটা ইসলামের বাস্তবতা নয়, বরং মধ্যযুগের খ্রিস্টান ইউরোপের বাস্তবতা। যার সাথে ইসলামের বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নাই।
-নাবিল আহমেদ
“জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনও সুযোগ নেই: ওবায়দুল কাদের”
খবরঃ
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন ও জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া সরকার পরিবর্তনের কোনও সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ যখন রাজপথে নামবে, জনগণকে সঙ্গে নিয়েই নামবে। তিনি বলেন, ‘সরকার একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হয়েছে, যাথাসময়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার পরিবর্তন চাইলে বিএনপিকে ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকার পরিবর্তনের দুঃস্বপ্ন দেখে কোনও লাভ নেই। (www.banglatribune.com/politics/awami-league/764921/জনগণের-ম্যান্ডেট-ছাড়া-সরকার-পরিবর্তনের-কোনও-সুযোগ)
মন্তব্যঃ
রাষ্ট্র পরিচালনায় বর্তমান সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতায় অতিষ্ঠ জনগণ চলমান জুলুমের শাসন থেকে পরিত্রাণ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের গুঞ্জন। অতীতে বিভিন্ন সরকার কর্তৃক দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতার কারণে একইরকম পরিবর্তনের আকাঙ্খা আমরা দেখেছি। অতীতে অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম, গণঅভ্যুত্থান, নির্বাচন হয়েছে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আজও সম্ভব হয়নি। সবাই আমরা কমবেশী অনুধাবন করতে পারছি যে কেবলমাত্র সরকারি দলের পরিবর্তন দেশ ও জনগণের জন্য কোন প্রকৃত পরিবর্তন বয়ে আনবে না। কিন্তু কিভাবে আসবে সে পরিবর্তন?
‘জনগণের ম্যান্ডেট’ আর ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটো বহুল ব্যবহৃত শব্দ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠী তাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে এই শব্দগুলোর আশ্রয় নেয়। এসব আসলে জনগণের সাথে নিছক প্রতারণা। জনগণকে যদি তারা আসলে রাষ্ট্রের মালিক মনে করেন তাহলে একটা দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যর্থ সরকারকে হটাতে জনগণকে কেন ৫ বছর পর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মূলত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ একটা দ্ব্যর্থবোধক শব্দ (vague term) যার নাম দিয়ে সকল কুকর্মকে জায়েজ করা যায়। মোট জনসংখ্যার কত শতাংশের সমর্থনকে জনগণের ম্যান্ডেট বলা যায়? মেজরিটি? কিন্তু মেজরিটিতো ভোটে অংশগ্রহণই করে না। ভোটারদের মেজরিটি? অনেক প্রার্থী থাকলে দেখা যায় মোট ভোটের মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পেয়ে সরকার নির্বাচিত হয়। যদি ধরে নেই নির্বাচনটি অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, সেক্ষেত্রেও কি এটাকে জনগণের ম্যান্ডেট বলা চলে?
জনগণ অবশ্য ইতোমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থার উপর আস্থা হরিয়ে ফেলেছে। গণতান্ত্রিক এই শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না। দুষ্ট লোকেরা টাকার দাপটে দলীয় নমিনেশন বাগিয়ে নেয় আর মিডিয়া ও প্রশাসনের বরাতে নির্বাচনের বৈতরণী পাড়ি দেয়। এতদিন নির্বাচন মানে ছিল মিথ্যে মিথ্যে কথা দিয়ে ভোটারদের বোকা বানানোর একটা মজার খেলা। এখন সে মজাটাও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন একপাক্ষিক খেলা হয়; পশ্চিমা পরাশক্তিদের পাতানো খেলা। নির্বাচনে মানুষের তাই আর আগ্রহ নেই। আসলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন দিয়ে সত্যিকারের কোন পরিবর্তন আসে না। বড় জোর ব্যক্তির পরিবর্তন হয় (দু)র্নীতির পরিবর্তন হয় না, সাধারণ মানুষের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয় না। তাই নির্বাচন নিয়ে জনগণ তেমন কোন উৎসাহ বোধ করছে না। খামাখা সংলাপ, ইভিএম নিয়ে আলোচনা করে ইসি দেশে একটা নির্বাচনী আবহ তৈরির চেষ্টা করছে। নির্বাচন হলেই কি আর না হলেইবা কি? ফেয়ার হলেই কি আর কারচুপি হলেইবা কি? হয় আওয়ামী জোট, না হয় বিএনপি জোট, মোড়ক আলাদা কিন্তু ভিতরের প্রোডাক্টতো একই। প্রকৃতপক্ষে, ব্যাপক পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন একেবারেই একটা অকার্যকর পদ্ধতি।
একটা সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। এটা কেবল তাত্ত্বিক বা আধ্যাত্মিক বিষয় নয়, এটা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) তার জীবদ্দশায় তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করে আমাদেরকে ব্যবহারিক শিক্ষা দিয়েছেন। সহজভাবে বলতে গেলে, রাসূলের জীবনী বা সীরাত অধ্যয়ন করলে আমরা সমাজ পরিবর্তনের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবো। একটি রাষ্ট্র কেবল জনগণ ও শাসকদের নিয়ে গঠিত হয় না। রাষ্ট্রের ভিত্তিতে থাকে কিছু চিন্তা চেতনা (thoughts) এবং আবেগ অনুভূতি (emotions)। বাংলাদেশের বেশিভাগ জনগণ মুসলিম হলেও এই রাষ্ট্রের বর্তমান কাঠামোর মূলে আছে পশ্চিমা ধর্মহীনতাবাদ ও গণতন্ত্র নামক কুফর ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার প্রতি জনগণের ম্যান্ডেট নেই কিন্তু শাসকগোষ্ঠী পশ্চিমা পুঁজিবাদী পরাশক্তিগুলোর স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে শাসনকর্তৃত্বে অধিষ্ঠিত আছে। ইসলামের পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রথমে পশ্চিমা ভ্রান্ত মতবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে, সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান সদস্যদের সাহায্যে দালাল শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করতে হবে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই, সত্যিকার পরিবর্তন সূচিত হবে। ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে।’’ (সূরা রা‘দ-১১)
-আবু যায়েদ
“বসুন্ধরা, স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই-সহ ৩৬ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা”
খবরঃ
নিত্যব্যবহার্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরীর অভিযোগে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা, এস আলম, স্কয়ার, প্রাণ, এসিআই, সিটি, আকিজ, মেঘনাসহ ৩৬ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। প্রতিযোগিতা কমিশনের নিজস্ব আইনে গত বৃহস্পতিবার এ মামলা করা হয়। এই কোম্পানি ও ব্যবসায়ীগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে কমিশনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যে তারা বাজারে চাল, আটা, ময়দা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও টয়লেট্রিজ পণ্যের ‘অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরি করেছে। (https://www.prothomalo.com/business/bg1jc1dvmx)
মন্তব্যঃ
দেশে বিদ্যমান পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কারণে সৃষ্ট সকল অনাচার, অত্যাচার ও দুঃশাসনের দুর্গন্ধকে ডাকার জন্য বেশ কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে; যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ভোক্তা অধিকার, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মত কিছু প্রতিরক্ষা-ঢাল, যেগুলোকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে এই ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন’ হল এমনই আরেকটি ঢাল, যদিও জনসাধারণের কাছে নামটি নতুন। দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধ্বগতির কারণে চরম কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করা দেশের আপামর জনগণ যখন সরকার ও তার শাসনব্যবস্থার উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ, তখন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণে সৃষ্ট এই জনদুর্ভোগের দায় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর চাপিয়ে এই ব্যবস্থার দায়বদ্ধতাকে আলোচনার বাইরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগেও এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অপশাসনের কারণে রিজার্ভ-সংকটে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যখন হুমকির মুখে পড়েছিল (যা এখনো বিদ্যমান) তখন হুন্ডি ব্যবসায়ীদের উপর এর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছিল (গত এক বছরে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে : সিআইডি, সূত্র: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, এনটিভি)। তাছাড়াও জ্বালানীকাণ্ডে দেশের বিদ্যুৎখাতে যখন অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল তখন পেট্রোবাংলা ও বাপেক্সকে কাজ না দিয়ে বিদেশী কোম্পানীকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ দেওয়ায় সরকারের সমালোচনা শুরু হলে সরকার তার ভুল-নীতির দায় বাপেক্স-এর দুর্নীতির উপর চাপাতে চেয়েছিল (জ্বালানি খাতে লুটপাট: পাওয়া যাবে গ্যাস, তাই নির্দ্বিধায় টাকা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি কিছুই। তবে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় কয়েকশ কোটি টাকা। সূত্র: ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, সময় নিউজ)।
এই ধরণের কোম্পানী ও ব্যবসায়ীগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে মামলার অতীত ইতিহাস বলে যে, এই মামলাগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। এর কারণ হল, প্রথমতঃ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আইনগত সত্তা রয়েছে। ফলে ব্যক্তির কোন দায় নেই। মামলা হয় প্রতিষ্ঠানের নামে। আর, মামলার কবলে পড়লে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে দেয়া হয়; নতুন কর্তকর্তা এসে বলে এটা আমার আমলে হয়নি, আমি এর কিছুই জানি না। আর টাকার জোর তো রয়েছেই; টাকা দিয়ে তারা ‘ম্যানেজ’ করে নেয়। দ্বিতীয়তঃ পুঁজিপতিদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা রেখেই এই আইনগুলো তৈরী করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা আইন-২০১২ বলছে, কমিশনের মামলায় কেউ দোষী প্রমাণিত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত (জরিমানার সম্মুক্ষীন) হলে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে রিভিউ আবেদন করা যাবে। রিভিউতে সাজা বহাল থাকলে তা নিয়ে সেশন-কোর্টে আপিলের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই আপিল নিস্পত্তির কোন সময়সীমা নেই! মূলত এই প্রক্রিয়া কখনোই শেষ হয় না। আর যদিওবা কদাচিৎ শাস্তি বা জরিমানা হয় তা টাকার অংকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নিতান্তই নগণ্য। তাছাড়া সম্প্রতি ডলার কারসাজি করে ৭৭০% পর্যন্ত অতিলাভ করা ৬ ব্যাংককে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকগুলোর গত মে-জুন মাসে ডলার কেনাবেচায় যে অতিরিক্ত মুনাফা করেছিল (১৪২৭ কোটি টাকা), তার অর্ধেক তাদের আয় হিসেবে গণ্য করতে ও বাকি অর্ধেক টাকা সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে (সিএসআর) বরাদ্দ রাখতে বলা হয়েছে! (ডলারে অতি মুনাফাঃ ছয় ব্যাংককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি, কাজে ফিরবেন ট্রেজারি প্রধানেরা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, প্রথমআলো)। সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে (সিএসআর) ব্যয়ের সুবিধা সুদে-আসলে (!) ব্যাংকগুলোর ভান্ডারে জমা হবে। শাস্তির নমুনা যদি এই হয় তাহলে অপরাধ না করার মত বোকামি কয়জন করবে!
মূলতঃ ইসলামে বাজার মনিটর ও স্থিতিশীল রাখার জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র ও সামগ্রীক (holistic) একটি ব্যবস্থা। খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে কোন প্রকার কর্পোরেট ট্যাক্স (৩০-৪৫%), ভ্যাট (১৫%), অগ্রীম আয়কর, উৎসে কর, সম্পুরক শুল্ক ইত্যাদির অস্তিত্ব নেই। ফলে ব্যবসায়ীদেরকে এসকল খাতে কর বাবদ অতিরিক্ত অর্থ সরকারকে দেওয়ার জন্য জনগণের সাথে প্রতারণা করে অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রয়োজনই হবে না। এরপরও যদি কেউ বাজার নিয়ন্ত্রণ বা কারসাজি করে অতিরিক্ত মুনাফা করতে চায় তাহলে তা প্রতিহত করতে কাযি আল মুহতাসিবকে দায়িত্ব প্রদান করা হবে। হিসবাহ আদালতের কাযি ও তার সহকারীগণ বাজারকে প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং অপরাধ সংঘটিত হওয়া মাত্র প্রমাণ সাপেক্ষে অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করবেন। কাযি আল মুহতাসিব ও তার সহকারীগণের সাথে সার্বক্ষণিক পুলিশফোর্স থাকবে যারা এই শাস্তি তাৎক্ষণাৎ বাস্তবায়ন করবেন। খিলাফতের বিচারব্যবস্থায় কোন আপিলের সুযোগ নেই, ফলে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাকে কাজে লাগিয়ে কারো পার পাওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন আইনগত সত্ত্বা থাকবে না, দোষী সাব্যস্ত করা হবে ব্যক্তিকে। ফলে বাজার থাকবে স্থিতিশীল ও দ্রব্যমূল্য থাকবে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এবং এটা এমন এক আদর্শ ও কাঙ্খিত অবস্থা যা কেবলমাত্র ইসলামী জীবনব্যবস্থা তথা খিলাফতের মধ্যেই অর্জন করা সম্ভব; কেননা ইসলাম এসেছে বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র কাছ থেকে। “তিনি আকাশকে সুউচ্চে স্থাপন করেছেন এবং (সবকিছুতে) নির্ধারণ করে দিয়েছেন সুষ্পষ্ট ভারসাম্য (মিজান)। যেন তোমরা সেই ভারসাম্য লঙ্ঘন না কর। সুতরাং, তোমরা পরিমাপে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কর এবং আল্লাহ্’র নির্ধারিত ভারসাম্য নষ্ট করো না”। (আর রাহমান: ৭-৯)।
-রিসাত আহমেদ
“‘সার্টিফিকেট জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে’ বলেই ছিঁড়ে ফেলেন বাদশা”
খবরঃ
চাকরি না পাওয়ায় হতাশায় একাডেমিক সব সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলেছেন বাদশা মিয়া নামে নীলফামারীর এক যুবক। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে শিক্ষা জীবনে অর্জিত সব একাডেমিক সনদপত্র ছিঁড়ে ফেলেন তিনি। ভিডিও ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। (https://thedailycampus.com/career/100837/সার্টিফিকেট-জীবনে-কাল-হয়ে-দাঁড়িয়েছে-বলেই-ছিঁড়ে-ফেলেন-বাদশা)
মন্তব্যঃ
যে শিক্ষাব্যবস্থা শুধু ভোক্তা আর কেরানী তৈরি করে সে শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে বাদশা মিয়ার মত ব্যক্তিদের আর কিইবা করার থাকতে পারে। এই শিক্ষাব্যবস্থায় অধিকাংশরাই কর্মজীবনে দক্ষ না হয়ে, উল্টো ‘শিক্ষিত’ নামক একটা মিথ্যা মূল্য অর্জন করে। এর মূল্য এতই বেশী হয় যে, এই মূল্য ধরে রাখতে গিয়ে শিক্ষিতরা কোন শ্রমিকের কাজ করতে পারে না। ফলতঃ সমাজে শিক্ষিত হিসেবে দাম পেলেও জীবনধারনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পাওয়া যায় না। আর তার চেয়েও জঘন্য হল আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেটা উৎপাদনমুখী নয়। একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত গড়ে উঠে দেশে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। এখানে অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে উৎপাদনমুখী না করে আমদানি নির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলতঃ এখানে জীবিকা উপার্জনের সুযোগ বিদ্যমান সামান্য কিছু খাত যেমন, ট্রেডিং ও তথাকথিত সেবাখাত যেমন, ব্যাংকিং, নাটক-সিনেমা, বিজ্ঞাপনের মডেলিং, পর্যটন, রন্ধন ইত্যাদিতে। একসময়ের উৎপাদনশীল কৃষিখাতকে এখন সার, বীজ, কীটনাশক, মেশিনারিজ, জ্বালানি ইত্যাদি বিষয়গুলোতে আমদানি নির্ভর করার মাধ্যমে এটাকেও মূলত আমদানি নির্ভর খাত বানিয়ে ফেলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যংকের হিসাব অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশী পন্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো এত বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি না করে দেশে উৎপাদন করলে কী পরিমাণ চাকরির বাজার তৈরি হতো? এর মাধ্যমে ব্যাপক শিল্পায়ন হত। এতে তিন কোটি বেকারের এই বিশাল মানবসম্পদ কাজে লাগানো যেতো। বাদশা মিয়ার মত অগণিত মানুষ প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারতো ও পর্যাপ্ত কাজ পেতো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, এসব পন্য উৎপাদনের জন্য নুন্যতম পদক্ষেপতো দূরে থাক, দেশে কোন পণ্যের কি চাহিদা রয়েছে, সেটাও এযাবৎকালে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো বের করতে পারেনি। এজন্য না হয় কোন গবেষণা, আর না হয় কোন বিনিয়োগ। ফলতঃ শিক্ষাব্যবস্থাটি হয়ে ওঠে একটি অদক্ষ ও অকর্মা নাগরিক তৈরীর কারখানা।
তাই বর্তমান আমদানি নির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে একটি সুষ্ঠু উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা খুবই জরুরি। যেটি বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ করবে। এই কর্মসংস্থানের শূন্যতা পূরণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে উঠবে দক্ষ লোক তৈরীর কারখানা। তখন রাষ্ট্রকে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে বিদেশি শক্তির মুখাপেক্ষী হতে হবে না। আবার একটি নেতৃত্বশীল জাতি হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ ব্যতীত একটি সুষ্ঠু উৎপাদনমূখী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপগুলোও নেয়া সম্ভব না। কারণ এতে উপনিবেশিক-সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ বিরাগভাজন হবে। কারণ, জাতিসমূহকে পরনির্ভরশীল করার মাধ্যমেই তাদের প্রকৃত স্বার্থ উদ্ধার হয়। একমাত্র ইসলামী জীবনাদর্শই একটি জাতিকে নেতৃত্বশীল হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠার রোডম্যাপ দিয়েছে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক নির্দেশিত ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোন বিকল্প নেই, যা কোন ক্ষেত্রেই কুফর শক্তির মুখাপেক্ষী হবে না। এ কারণে এটি শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের নাগরিকদের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে এক চমৎকার সেতুবন্ধন রচনা করবে, যেন স্বনির্ভর অর্থনীতি ও দক্ষ সুনাগরিক তৈরি হয়। এই রাষ্ট্র সকল ক্ষেত্রে বিদেশি কুফর শক্তির পরাধীনতা মুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী ও নেতৃত্বশীল জাতি তৈরি করবে। তারপর মুসলিমদেরতো বটেই, কাফিরদেরকেও আলোর পথ দেখাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ “আলিফ-লাম-রা; এই কিতাব, যা আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষকে তাদের রবের অনুমতিক্রমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আন, পরাক্রমশালী সর্বপ্রশংসিতের পথের দিকে” (সূরা ইবরাহীমঃ ০১)।
-মো: জহিরুল ইসলাম
“সাফ ফুটবলে ‘নারী বিপ্লব’”
খবরঃ
সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়শিপে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। নেপালকে ৩-১ গোলে ধসিয়ে দিয়ে সাফ নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছে। এই প্রতিবেদক বলছে, “দেশের জন্য এই অনন্য গৌরব বয়ে আনা এই ফুটবল দলের সদস্যদের এই পথ চলাটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। অন্তত আমাদের মত পশ্চাদপদ, মৌলবাদী ধ্যানধারণাপুষ্ট বাংলাদেশে। একটি মেয়ে এবং তার শরীর এমনই নিরাপত্তার বলয়ে পরিবেষ্টিত, যা শেষ পর্যন্ত রক্ষণশীলতার নামান্তর। জার্সি পড়ে মেয়েরা খেলবে, দৌড়াবে, শরীর দোল খাবে, অংসখ্য লোলুপ দৃষ্টি তাকিয়ে দেখবে-অভিভাবকরা তা মানবেন কীভাবে? পুরুষ কোচও একটা বিরাট সমস্যা। যদি গায়ে হাত দেয়! কানে ফিসফিসিয়ে মন্ত্রটি পড়ে দেওয়ার জন্য বহু খালা-ফুপু মজুত থাকে”। (https://bangla.bdnews24.com/opinion/f7fsimeets)
মন্তব্যঃ
আমাদের সমাজে আবহমান ইসলাম এবং ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে তথাকথিত নারী অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে তুলে ধরে একটি শ্রেণী এই বিজয়কে ইসলামের বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এক বিশাল মুক্তি, বিজয়, সফলতা বা এক বিপ্লব হিসেবে তুলে ধরেছে। কেউ কেউ আবার কার্টুন এঁকে মেয়েদের ফুটবলে লাথি মারাকে অনেকটা ইসলাম, ইসলামী মূল্যবোধ এবং ইসলামের ধারকবাহক এবং আলেম সমাজকে লাথি মারার সামিল হিসেবে তুলে ধরেছে। এই শ্রেণীটি আর কেউ নয়, এরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত সেক্যুলার শ্রেণী, যারা সুযোগ পেলেই ইসলামকে পশ্চাদপদতা, মধ্যযুগীয় ও অন্ধকারের নামান্তর হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে এবং ইসলামের বিভিন্ন হুকুম-আহকামকে কটাক্ষ করে সমাজে ইসলাম বা শারীয়াহ বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করে। নারী ফুটবল দলের সাফ বিজয়ের ঘটনায় অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একই কাজ করা হয়েছে।
সেক্যুলাররা সবসময় যেটা করে সেটা হচ্ছে, ইসলামকে আঘাত করে একধরনের ইসলামভীতি তৈরি করে স্যেকুলারিজমকে টিকিয়ে রাখতে চায়। এবং দ্বিতীয়ত হচ্ছে, এর মাধ্যমে তারা বর্তমান সেক্যুলার সমাজে নারীর চরম দুর্দশার চিত্রকে আড়াল করতে চায়। বাস্তবতা হচ্ছে, জীবন থেকে ধর্ম বা ইসলামকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে স্যেকুলারিজম নারী থেকে সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তাকে বিচ্ছিন্ন করে কেবল নির্দিষ্ট উপযোগিতার বাহক অর্থাৎ একটি পন্যে পরিণত করেছে। একারণেই তাদের কাছে সাফের ট্রফি বিজয়ী নারীরা অনেক মূল্যবান কিন্তু নোয়াখালীর আদিতাদের মত যারা নিজ ঘরেও নিরাপদ না তাদের নিয়ে আলোচনা অপ্রিয়। সেক্যুলার রাষ্ট্র কয়েকজন নারীকে ট্রেনিং করিয়ে খেলা জিতিয়ে নিজেদেরকে তথা স্যেকুলারিজমকে নারী প্রগতির রুপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। অথচ অসংখ্য নারী যে সকাল-সন্ধা গার্মেন্টসে অমানসিক পরিশ্রম এবং বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজের মত কস্টকর কাজ করার পরও নিজেদের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করতে পারছে না, অনেককে এমনকি খাদ্যের জন্য পতিতাবৃত্তি করতে হচ্ছে; এসব নিয়ে তারা নিশ্চুপ। স্যেকুলারিজম মুলতঃ আইয়ামে জাহেলিয়ার থেকেও খারাপ বাস্তবতা নিয়ে এসেছে। এখন একদিকে আলট্রাসনোগ্রাম করে শিশু মেয়ে জানতে পারলে অহরহ গর্ভপাত করছে, অন্যদিকে এমনকি সন্তানের বয়স ১৪ মাস পার হওয়ার পরও অমর্যাদা ও অনিরাপত্তার কারণে বাবা তার মেয়ে সন্তানকে হত্যা করছে। (www.kalerkantho.com/online/country-news/2022/09/27/1187677)। তাহলে বর্তমান সেক্যুলার রাষ্ট্র কি প্রগতি নিয়ে আসলো? পশ্চিমা বিশ্বের নারী প্রগতির যে উদাহরণ দেয়া হয়, সেখানেতো চিত্র আরও ভায়াবহ।
সেক্যুলার বিশ্ব নারীকে ঘর থেকে বের করে নারীর সৌন্দর্যকে পুঁজি করে গড়ে তুলেছে বিশাল বিশাল ব্যবসায়িক সম্রাজ্য। নারী স্বাধীনতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের নামে আসলে তারা নারীর ভরণপোষণ, নিরাপত্তা এমনকি সন্তান লালনের দায় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারীর উপর চাপিয়ে নারীকে একরকম নাভিশ্বাসের জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে তারা ফুটবল মাঠের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়ানোর মত দৌড়াচ্ছে, আর অন্যরা তাদের সৌন্দর্যকে পুঁজি করে মজা বা লাভ নিচ্ছে। ইডেন কলেজের নারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পুরুষ রাজনৈতিক নেতাদের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হওয়াটা এটারই বহিঃপ্রকাশ। বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসে এবং রাজনৈতিক দলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী যেন সৌন্দর্য বর্ধনের একটা বস্তু। বৃহত্তর নারী সমাজের এই অন্ধকার ও করুণ বাস্তবতাকে ঢেকে রাখতেই তারা দুই একটা এক্সেপশনাল ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে দেখায়।
ইসলামে শাসক প্রতিটি নারীর মান-মর্যাদা, মৌলিক চাহিদা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শারিয়াহগতভাবে বাধ্য। আর ইসলাম নারীকে কিছু বিশেষ দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতা দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকার ও দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়েছে। ইসলামে পুরুষের মত নারীরও রাজনীতি করার অধিকার ও দায়িত্ব আছে। নারীর পড়াশোনা করা পুরুষের মতই ফরজ। নারী এখানে চাইলে ব্যবসা চাকরি করতে পারে কিন্তু এটি করতে সে বাধ্য নয়। ইসলাম নারীর সৌন্দর্য ও সম্মানকে পরিপূর্ণ সুরক্ষা দেয়। ইসলামে মেয়েরা এমনসব কাজ করতে পারবে না যাতে তার সৌন্দর্যকে ব্যবহার করা হয় অথবা সৌন্দর্য উন্মোচিত হয়।
-মোহাম্মদ তালহা হোসেন