Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 64

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

৬৪ তম সংখ্যা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

 

 

 

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

কুয়েট কর্তৃপক্ষের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে কেরুর মদের সেলস সেন্টার চালু হবে

“শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে”

সার না পেয়ে রাস্তার মাঝে শুয়ে পড়লেন কৃষকরা

“গাজীপুরের পানি বিষাক্ত, শিল্পায়নের মূল্য দিচ্ছে স্থানীয়রা

 

 

 

 

মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

খবরঃ

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না, শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়। তবে কাজ না হলে জাতিসংঘকে জানানো হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডি আহসানিয়া মিশনে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের দেশের কনফ্লিক্ট, গুলি তাদের সীমানায় থাকা উচিত। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ হচ্ছে। মিয়ানমার ভবিষ্যতে সংযত থাকবে আশা করছি।’ বাংলাদেশ যুদ্ধে জড়াবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় বাংলাদেশ।’ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি কঠোর রয়েছে বলেও জানান তিনি। (www.banglatribune.com/national/763640/মিয়ানমারের-সঙ্গে-যুদ্ধ-চাই-না-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশ সীমান্তে একটি দুর্বল, অভ্যন্তরীণ সমস্যায় বিপর্যস্ত ও গৃহযুদ্ধে প্রায় অকার্যকর রাষ্ট্র মিয়ানমারের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফল। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বলা হলেও এটি খুব পরিস্কার যে, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কৃপানির্ভর সরকারের পক্ষে কোন স্থির, শক্ত ও মর্যাদাশালী পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করা সম্ভব নয়। সরকার বলছে, মর্টার হামলার প্রক্ষাপটে সরকার সাবধান থাকবে যাতে সে কোন অপ্রত্যাশিত কনফ্লিক্টে জড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সে নির্লজ্জ নির্লিপ্ততার মাধ্যমে এই কনফ্লিক্টে একটি অবস্থান গ্রহণ করেছে। কিন্তু এই অবস্থানটি তার নিজ দেশের স্বার্থরক্ষার নয়, বরং সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর আঞ্চলিক লক্ষ্য অর্জনের ক্রিড়ানক হিসেবে কাজ করার। এর আগেও বারবার যখন মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিধন করেছে তখন সরকার চুপচাপ তা করতে দিয়েছে। শুধু তাই নয় ভিটেমাটি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাটাতারের বেড়া বেস্টিত এবং সমূদ্র বেস্টিত অনাবাদি জনমানবহীন দ্বীপের মধ্যে ‘বন্দি’ করে মূলত আরাকানকে খালি করার বৃটেন ও চীনের সাম্রাজ্যবাদী আঞ্চলিক পরিকল্পনায় মিয়ানমারের হাতে হাত রেখে কাজ করেছে। কারণ বর্তমান সরকার এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তা উভয়ই সাম্রাজ্যবাদী বৃটেনের দালাল। তাই মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যুদ্ধরত বিদ্রোহীগোষ্ঠী দমনে বারবার বাংলাদেশের সীমানা লঙ্ঘনে বিন্দুমাত্রও কুন্ঠাবোধ করছে না, কারণ তারা ভালোভাবেই জানে হাসিনা সরকার তার বৃটিশ প্রভুকে খুশি রাখতে মিয়ানমারের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই নিবে না।

মুলতঃ বাংলাদেশসহ মুসলিমদেশসমূহের পররাষ্ট্রনীতি আবর্তিত হয় পশ্চিমা পরাশক্তিসমূহ এবং তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের স্বার্থকে ঘিরে, কারণ তাদের দালাল শাসকেরা এদেশগুলোর ক্ষমতার আসীন হয়ে আছে। এর ফলে এই দেশগুলোকে সম্পদ, সামর্থ্য ও শক্তি থাকার পরও পুরোপুরি পরনির্ভরশীল ও সাম্রাজ্যবাদীদের দাসে পরিণত হয়ে থাকতে হয়। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয় একই বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই পাকিস্তান, মিশর, তুর্কি ইত্যাদি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও। ভারতকে শায়েস্তা করার যথেষ্ট শক্তি থাকার পরও পাকিস্তান তার অভ্যন্তরে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ভারত ভুলে এটি করেছে বলে মেনে নিয়ে বালুতে নিজের মাথাগুজে রাখে, কারণ তার পররাষ্ট্রনীতি আমেরিকার স্বার্থকে ঘিরে আবর্তিত, আর সেটা হচ্ছে এই অঞ্চলে চীনকে মোকাবেলায় ভারতকে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। অথচ এই পাকিস্তানকেই আমরা আফগানিস্তানে মার্কিন স্বার্থে সর্বাত্মক সামরিক সহযোগীতা করতে দেখেছি। মিশরসহ অন্যান্য আরব দেশও তেমনি সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকাকে খুশি রাখতে বার বার ইসরায়েল কর্তৃক সীমানা লঙ্ঘন করা সত্ত্বেও নীরব থাকতে দেখেছি। তুরষ্ক এখন আমেরিকার হাতের কোদালে পরিণত হয়েছে। সে আমেরিকার জন্যই কথা বলে, আমেরিকার জন্যই যুদ্ধে জড়ায়, আমেরিকা যা কাটতে বলে তাই কাটে।

৫০টিরও অধিক জাতিরাষ্ট্রে বিভক্ত থাকা মুসলিমদের রয়েছে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার গৌরবজনক অতীত, যখন আমরা খিলাফত রাষ্ট্রের একক নেতৃত্বের অধীনে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। এই দেশগুলো যদি আবার ইসলামী চিন্তার ভিত্তিতে আদর্শিক খিলাফত রাষ্ট্র গঠন করে তবে বর্তমানেও তাদের ঐ সকল সম্পদ ও সামর্থ্য রয়েছে যা দ্বারা তারা আবার নেতৃত্বশীল অবস্থানে পৌছুতে পারে। আদর্শিক খিলাফত রাষ্ট্রের থাকবে একটি স্থির মর্যাদাশালী বিদেশনীতি যার ফলে মিয়ানমারের মত দুর্বল রাষ্ট্রতো দূরে থাক আমেরিকা-বৃটেনের মত সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোও খিলাফতের সীমান্তে কোন ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে দশবার চিন্তা করবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের সূচনা করেন তখন সেটি দুর্বল থাকার পরও ইসলামের সৌন্দর্য, সক্ষমতা এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর  সুচারু বুদ্ধি ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় রাষ্ট্রটি অল্পদিনের মধ্যে এমন অবস্থানে পৌছে যায় যে, কুরাইশ বাহিনীর পক্ষে মদিনার কাছে ঘেঁষা সম্ভব হয়নি। তিনি (সাঃ) তাঁর বর্ডারের দেশ বা গোত্রগুলোর সাথে দ্রুত চুক্তি করে বরং উল্টো কোরাইশের বাণিজ্য কাফেলাগুলোকে আক্রমণ করা শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্র পুরো আরব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং তৎকালীন পরাশক্তি রোমান ও পারসিয়ানদের অন্তরে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী আবার যখন ফিরে আসবে নবুওয়াতের আদলে খিলাফত, তখন ঐ রাষ্ট্রটি দ্রুততম সময়ে পুরো মুসলিম উম্মাহ্‌’র সম্পদ, ভূমি এবং সেনাবাহিনীকে একত্রিত করে আমেরিকা-বৃটেন-চীনসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশসমূহের বলয় থেকে বের হয়ে আসবে এবং আরাকান, ফিলিস্তিন, কাশ্মিরের মত দখলকৃত মুসলিম ভুমিগুলোকে মুক্ত করবে।

  • মো: তালহা হোসেন

 

 

 

 

 

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক

খবরঃ

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে আজ শুক্রবার থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এই তিন দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন। আজ শুক্রবার, কাল শনিবার ও আগামী রোববার দেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হবে। লন্ডনে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে বাকিংহাম প্যালেস। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। কয়েক মাস আগেই তার সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় সিংহাসনে আরোহণ করেছেন। বিবিসির খবর অনুসারে রানীর শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হবে ১০ থেকে ১১ দিন পর।  (https://www.prothomalo.com/bangladesh/a7odtqqwl9)

মন্তব্যঃ

বৃটিশ সাম্রাজ্যের রাণীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণার মাধ্যমে এটাই ফুটে উঠেছে যে, পশ্চিমাদের বাস্তবায়িত ঊপনিবেশিক ব্যবস্থা এবং তাদের দাস শাসকগোষ্ঠী এখনো বলবৎ রয়েছে। একই সাথে এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের নৃশংসতার সুদীর্ঘ এবং রক্তাক্ত ইতিহাসকেও আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। সদ্য প্রয়াত রাণী উপনিবেশিক দাসত্ব, পরাধীনতা ও সম্পদ লুটপাটের সেই কুখ্যাত অধ্যায়েরই প্রতিনিধিত্ব করেন। বাণিজ্যের কথা বলে ভারতবর্ষে আসলেও উপনিবেশিক ব্রিটিশরা এ অঞ্চলকে তাদের উপনিবেশে পরিণত করে এবং দীর্ঘ ২৫০ বছর এ উপমহাদেশকে গোলামীর জিঞ্জিরে বেঁধে রাখে। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষকে উপনিবেশে পরিণত করার অভিপ্রায়ে ১৬০০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে। এই উপমহাদেশের ৭০০ বছরের মুসলিম শাসন বিলুপ্ত করে ১৭৫৭ সালে ব্রিটিশরা তাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়ার মাধ্যমে ভারতবর্ষে তাদের শাসন শুরু করে। এ সময় থেকেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিভিন্ন সামরিক ইউনিট গঠন করা শুরু করে। এই  ইউনিটগুলিকে ১৮৯৫ সালে ব্রিটিশ সরকারের সরাসরি নির্দেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী গঠনের জন্য একত্রিত করা হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখা এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যেকোন বিদ্রোহ দমন করা। সারাবিশ্বে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক আধিপত্য টিকিয়ে রাখতেও এই প্রক্সি আর্মি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। ব্রিটিশদের সীমাহীন লুটপাট ও যুলুমে ১৭৭০ সালের দুর্ভিক্ষে ভারতবর্ষে ১ কোটি জনগণ মারা যায় যা ছিল তৎকালীন জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। পরবর্তীতে ধারাবাহিক আরও কয়েকটি দুর্ভিক্ষের (১৮৬৬, ১৮৭৩, ১৮৯২) পর ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে (Bengal Famine) ৩০ লক্ষাধিক লোক প্রাণ হারায়। শোষণ ও লুটপাটের এই সুদীর্ঘ সময়ে (১৭৬৪-১৯৩৮) উপনিবেশবাদী ব্রিটেন ভারতবর্ষ থেকে ৪৫ ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ সম্পদ লুট করে যা বৃটেনের বর্তমান জিডিপির চেয়েও ১৭ গুণ বেশি। পরবর্তীতে জনগণের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মুখে ব্রিটিশরা এ উপমহাদেশ ছাড়ার সময় ভারতবর্ষকে তাদের বলয়ে রেখে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানে তাদের দালাল শাসক বসিয়ে নামেমাত্র স্বাধীনতা দেয়। ক্ষমতাসীন হয়ে এ উপমহাদেশের দালাল শাসকেরা বৃটেনের নক্সা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রের সরকার ও নীতি প্রণয়ণ করতে থাকে। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও এখনও উপনিবেশবাদীদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। আমরা বৃটিশ উপনিবেশবাদীদের কাছ থেকে তথাকথিত স্বাধীনতা লাভ করলেও গত ৫০ বছরেও বিগত ২৫০ বছরের শোষণ ও যুলুম থেকে মুক্তি পাইনি। এখনো দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রেই ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের নগ্ন হস্তক্ষেপের কোন পরিবর্তন হয়নি। এমনকি কে ক্ষমতায় বসবে তাও নির্ধারণ করে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তিসমূহ। তাই আমরা প্রত্যক্ষ করছি, ঔপনিবেশিক পরম্পরা হিসেবে আওয়ামী-বিএনপি উভয় রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় থাকতে অথবা ক্ষমতায় আসীন হতে জনগণের দ্বারস্থ না হয়ে ইঙ্গ-মার্কিন সমঝোতার পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে। সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করার প্রতিযোগিতা থেকে স্পষ্ট যে উপনিবেশবাদীরাই তাদের প্রকৃত ক্ষমতার উৎস। এছাড়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে বন্দুকযুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার অধীনে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরাই Human Sovereignty, Independence, Liberty, freedom ইত্যাদির পূর্ণ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। তাই জনগণ এখনও উপনিবেশবাদীদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও জনগণের উপর এই ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়ার হাতিয়ার দালাল ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের কবল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। উপনিবেশবাদী শক্তি তাদের দালাল শাসকদের মাধ্যমে এখনও আমাদের উপর কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখছে, আমাদের সম্পদ লুন্ঠন করছে। কার্যত, রাষ্ট্রীয় শোক পালনের এই আয়োজনের মাধ্যমে দালাল শাসকগোষ্ঠী চায় এদেশের মুসলিমগণ বৃটিশ উপনিবেশিক দাসত্বের রক্তাক্ত ইতিহাসকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুক এবং বৃটিশ নিষ্পেষণের দগদগে ক্ষত ভুলে গিয়ে তাদেরকে সহজভাবে আলিঙ্গন করুক।

          ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল থেকে প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে আমাদেরকে অবশ্যই উপনিবেশবাদীদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বের হয়ে আসতে হবে। উপনিবেশবাদীদের আনুগত্য ও তাদের রাজনৈতিক প্রেস্ক্রিপশন এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও দালাল শাসকগোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তি আসবে না। প্রকৃত মুক্তির জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামের কাছে ফেরত যেতে হবে। খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দালাল শাসকগোষ্ঠীর অপসারণ ও পশ্চিমা উপনিবেশবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করতে হবে, কেবলমাত্র তখনই উপনিবেশবাদীদের আধিপত্যও বিলুপ্ত হবে এবং জনগণ প্রকৃত মুক্তি লাভ করবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: আল্লাহ্কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যদি না তারা নিজেরা তা পরিবর্তর করে (সূরা আর-রা’দ: ১১)।

  • সিফাত নেওয়াজ

 

 

 

 

 

“কুয়েট কর্তৃপক্ষের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার”

খবরঃ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষের করা মামলায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমানকে (২২) গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। কুয়েটের সিকিউরিটি অফিসার সাদেক হোসেন প্রামাণিকের দাবি, ‘জাহিদুরসহ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ২ শিক্ষার্থী টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করতো।’ ড. এমএ রশিদ হলের প্রভোস্ট মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর কাছে দেশ বিরোধী কিছু বার্তা ও খেলাফত টাইপের বই পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু কথোপকথনে সন্দেহ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’ (bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/crime-justice/news-393131)

মন্তব্যঃ

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী জাহিদুর রহমানের ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ ও ‘দেশ বিরোধী কিছু বার্তা’র সারমর্ম ছিল মূলত “আমি খেলাফতে বিশ্বাস করি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি না” বাক্যটি। প্রশ্ন হচ্ছে খিলাফত তথা ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং পশ্চিমা কুফর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবিশ্বাস করা কবে থেকে এই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে অপরাধ হয়ে দাঁড়াল? আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র জমীনে তাঁরই দেয়া জীবনবিধান বাস্তবায়ন করতে চাওয়া কি এমনই অপরাধ যে, একজন মুসলিম তরুণকে তিন ঘন্টা অমানবিকভাবে নির্যাতন করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে হবে? মূলত জাহিদূর রহমান ও ছাত্রলীগ নামক সরকারের পেটোয়া বাহিনীর মধ্যে চিন্তার যে সংঘাত তা শুধুমাত্র ছাত্রলীগ বনাম ইসলামী চিন্তায় বিশ্বাসীদের মধ্যে সংঘাত নয়, বরং এর বীজ বপন করা হয়েছে আরো অনেক আগেই। এটি মূলত ইসলাম ও কুফরের মধ্যে সংঘর্ষ। হাসিনা-খালেদা কিংবা তাদের পেটোয়া বাহিনীসমূহ হচ্ছে কেবলমাত্র পশ্চিমাদের কুফর চিন্তাসমূহের স্থানীয় রক্ষক। তাই, আমরা অবাক হইনা যখন কুফর রাষ্ট্র ভারতের সমালোচনা করার কারণে বুয়েটের আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্য করা হয় কিংবা এদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন করার অপরাধে যখন ঠুনকো অজুহাতে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়। এই সংঘর্ষের গোড়া অনুসন্ধানে আমাদেরকে কমপক্ষে একশত বছর পেছনে যেতে হবে।

১৯২৪ সালে পশ্চিমাদের বিশেষ করে বৃটিশদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পশ্চিমাদের দালাল মোস্তফা কামাল কর্তৃক খিলাফত ধ্বংসের মধ্য দিয়েই মূলত এ যুদ্ধের সূচনা। খিলাফত ধ্বংসের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্‌‘কে বিভক্ত রেখে পশ্চিমাদের কর্তৃত্ব ধরে রাখাই ছিল মূলত প্রধান উদ্দেশ্য বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। এবং কোনভাবেই যেন মুসলিমরা আর একত্রিত হতে না পারে সেটা নিশ্চিত করাই ছিল তাদের মূল এজেন্ডা। খিলাফত ধ্বংসের পর সাবেক বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড কার্জন বৃটিশ পার্লামেন্টে তার বক্তব্যে বলেন, “The situation now is that the Islamic Caliphate in Turkey is dead and will never rise again, because we have destroyed its moral strength, the Caliphate and Islam. We must put an end to anything which brings about any Islamic unity between the sons of the Muslims. As we have already succeeded in finishing off the Caliphate, so we must ensure that there will never arise again unity for the Muslims, whether it be intellectual or cultural unity.”

খিলাফত ধ্বংসের পর থেকেই পশ্চিমারা মুসলিমদেরকে খিলাফতের চিন্তা থেকে দূরে রাখার জন্য নানারকম উপায়-উপকরণের দ্বারস্থ হয়। এর মধ্যে রয়েছে মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন অনৈসলামী চিন্তা যেমন গণতন্ত্র, সেকুলারিজম, সমাজতন্ত্র, দেশপ্রেম, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদির প্রবেশ ঘটানো; মুসলিম বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে পশ্চিমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া যাতে পশ্চিমা ধ্যান-ধারনায় বিশ্বাসী একদল বুদ্ধিজীবীর সৃষ্টি হয় যারা পশ্চিমাদের চিন্তা এবং আবেগকে প্রচার করতে থাকবে এবং সর্বোপরি পশ্চিমা মদদপুষ্ট এমন দালাল শাসক নিয়োগ করা যারা পশ্চিমাদের আনুগত্য করে বৃটিশ রানীর মৃত্যুতে তিন দিনের শোক প্রকাশ করবে এবং পাশাপাশি ইসলাম তথা খিলাফতের পক্ষে সকল আন্দোলনকে কঠোরভাবে হাতে দমন করবে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, খিলাফতের প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের এত পরিকল্পনা ও অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও মুসলিমরা বিশেষ করে তরুণরা ক্রমশঃই মানব কল্যানে ব্যর্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অবিশ্বাস করতে শুরু করেছে এবং উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ হিসেবে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত খিলাফত ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছে। ফলে পশ্চিমারা এবং তাদের স্থানীয় দালালরা খিলাফতের বার্তাকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে এর আন্দোলনকারী এবং সমর্থকদেরকে ভয়-ভীতি ও শারীরিক নির্যাতন করার মাধ্যমে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে যে, হযরত বেলালের উত্তরসূরীরা কখনোই ভয়ের সামনে নিজেদের দ্বীনকে ত্যাগ করবে না, বরং কাফিররা ও তাদের দালালরাই লেজ গুটিয়ে পালাবে ইনশা’আল্লাহ্‌। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে, তারা আল্লাহ্‌’ পথ থেকে লোকদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য তাদের ধনসম্পদ ব্যয় করে, অচিরেই তারা তা ব্যয় করবে; তারপর সেটা তাদের আফসোসের কারণ হবে, এরপর তারা পরাভূত হবে [সূরা আল-আনফাল-৩৬]। পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে তরুণরা আজ দ্বিধাহীনভাবে খিলাফতের রাজনীতির সাথে যুক্ত হচ্ছে; সুতরাং সেই দিন আর খুব বেশী দূরে নয় যখন আল্লাহ’র ইচ্ছায় খিলাফত বাস্তবায়ন হবে এবং এই তরুণরাই সারাবিশ্বে ইসলামের সত্য ও ন্যায়ের বাণী পৌছে দিয়ে পশ্চিমা কাফিরদের গণতান্ত্রিক-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অন্ধকার যুগের অবসান ঘটাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তারপর আবার ফিরে আসবে খিলাফত – নবুয়্যতের আদলে” (আহমদ)।

  • মো. হাফিজুর রহমান

 

 

 

 

কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে কেরুর মদের সেলস সেন্টার চালু হবে

খবরঃ

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) আওতায় পরিচালিত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড ছাড়া সবগুলোই লোকসানে রয়েছে। কেরু অ্যান্ড কোং তাদের ডিস্টিলারি ইউনিটে নয়টি ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ তৈরি করে এবং শুধু মদ বিক্রয় করে ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় করেছে ৩৬৭ কোটি টাকা এবং এতে লাভ হয় ১০০ কোটি টাকারও বেশি। এর আগের টানা পাঁচ বছর মদ থেকে ৬০ কোটি টাকা করে লাভ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে কেরু অ্যান্ড কোং-এর ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় মদের তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। মদের বিক্রয় ও লাভ বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজার ও পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটায় আরও দুটি বিক্রয়কেন্দ্র এবং তিনটি গুদাম স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

(https://www.youtube.com/watch?v=z9yKNFMcKlY)

মন্তব্যঃ

চিনির উপজাত হিসেবে সৃষ্ট চিটাগুড় থেকে খুবই উন্নতমানের পশুখাদ্য তৈরী করা সম্ভব, যা দেশের পশুপালন শিল্পের চেহারাই পাল্টে দিতে পারে। তাছাড়া এ থেকে উন্নতমানের জৈবসার তৈরী করা যায় বাজারে যার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অথচ এই চিটাগুড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মদ! যেখানে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা স্পষ্টভাবে মদকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং এ নিয়ে আল্লাহ্, তাঁর রাসূল (সাঃ) ও শেষবিচারে বিশ্বাসস্থাপনকারী কারো মনে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুর‘আনে বলেন: হে ইমানদারগণ! মদ, জুয়া, মুর্তিপুজার বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ ঘৃণ্যবস্তু ও শয়তানের কাজ; এগুলো তোমরা পরিত্যাগ কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার শয়তানতো মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ তৈরী করতে এবং আল্লাহ্‌’ স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে দূরে রাখতে চায় তবুও কী তোমরা (মদ ও জুয়াকে) পরিত্যাগ করবে না!”  [আল-মা‘য়িদা: ৯০-৯১]। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, সকল প্রকারের মদ হারাম (বুখারী ও মুসলিম)। আব্দুল্লাহ্‌ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণীত: রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “যে মদ পানে অভ্যস্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, আখিরাতে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য তাকে কোন পানীয় প্রদান করা হবে না (মুসলিম)। আব্দুল্লাহ্‌ ইবন উমর (রা.) থেকে আরও বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন,মদ ও মদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৮ শ্রেণির ব্যক্তির ওপর আল্লাহর লানৎ বা অভিশাপ(ইবনে মাজাহ ও আবু দাঊদ)।

আল্লাহ্‌’র পক্ষ থেকে এত সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও লাভের অজুহাতে মদকে ছড়িয়ে দেওয়ার কারণ হল বর্তমান ধর্মনিরেপেক্ষ ব্যবস্থায় আল্লাহ্‌’র আদেশ-নিষেধের কোন মূল্য নেই। আল্লাহ্‌ প্রদত্ত আইন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক বাধা প্রদানকারী এই সরকার মদের ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। কেরু অ্যান্ড কোং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোসারুফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ কোম্পানির মদ বিক্রি বাড়াতে সহায়ক হয়েছে’। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে কেরুর মদের প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছেন  (যারা মদ খান, অবশ্যই কেরু খাবেন বিদেশি মদ ভেজাল: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (https://www.youtube.com/watch?v=T-Bl0Z_kETE)।

কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় মদ বিক্রির জন্য কেরুর নতুন দুটি বিক্রয়কেন্দ্র ও তিনটি গুদাম স্থাপনের কারণ হিসেবে মদের বিক্রয় ও লাভ বৃদ্ধি পাওয়াকে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও বর্তমান ইসলাম বিদ্বেষী ব্যবস্থায় অন্যান্য লাভজনক খাতগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে লোকসানে ফেলে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে টেলিকম ইন্ডাস্ট্রিতে বছরে মুনাফা হয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, যার পুরোটাই যায় গ্রামীন, রবি ও বাংলালিংকের পকেটে। অপরদিকে একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক গত চার অর্থবছরে লোকসান দিয়েছে ৯৯৩ কোটি টাকা। অথচ, দেশের টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির মোট লাভের মাত্র ১০% পেলেও টেলিটক বাৎসরিক মুনাফা করত প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অথচ এই লাভজনক খাতের দিকে চোখ না দিয়ে এগুলোকে তিনটি পুঁজিপতিগোষ্ঠীর হাতে জিম্মি রেখে, কেরু মদের মাত্র ১০০ কোটি টাকার লাভকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখিয়ে সরকার নিজের বগল বাজাচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায় মদের ব্যবসায় লাভ বৃদ্ধি একটি অজুহাত মাত্র, এর মাধ্যমে মদকে সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে বিশেষ করে তরুন সমাজকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার মদ রপ্তানির কথাও বলছে! অথচ, মদ তৈরী করে লাভের আশায় অমুসলিমের কাছে তা বিক্রয় করাও ইসলামে হারাম হিসেবে নির্ধারিত। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত: উমর (রা.) জানতে পারলেন সামুরা নামক এক মুসলিম ব্যক্তি মদ বিক্রি করে তিনি বললেন, তার (সামুরার) উপর আল্লাহ্‌’ লানত সে কি জানে না যে, আল্লাহ্‌’ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ইহুদিদের উপর আল্লাহ্সুবহানাহু ওয়া তাআলা অভিশম্পাত করেছেন; কারণ আল্লাহ্তাদের জন্য পশুর চর্বি খাওয়া হারাম করেন, কিন্তু তারা সেই চর্বি গলিয়ে মন্ড তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে দিত (বুখারী, মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদ)। মদ বিক্রির অপরাধে উমার (রা.) তায়েফের রুয়াইসীদ নামক এক মুসলিম ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে বেত্রঘাত করেছিলেন ও মদসংরক্ষণাগার হিসেবে তার ঘরটিকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন (মুসনাদে আহমাদ)

  • রিসাত আহমেদ

 

 

 

 

“শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে”

খবরঃ

গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে করোনাভাইরাসের লকডাউন শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। কেন বাড়ছে এমন প্রবণতা এই প্রশ্নের খোঁজে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা ট্রিবিউনের কন্টেন্ট পার্টনার ডয়চে ভেলে। …সারাদেশে গত ৮ মাসে আত্মহত্যা করেছেন ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী। আঁচল ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখে গেছে ২০২১ সালে দেশে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। …আত্মহত্যার এই প্রবণতা সমাজের নানা স্তরের মানুষের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, দেশে বছরে প্রায় ১৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। সংস্থাটির হিসেব অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার এই প্রবণতা বাড়ছে। …আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাকে আত্মহত্যার অন্যতম বড় কারণ হিসেবে দায়ী করেন আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ। (https://bangla.dhakatribune.com/bangladesh/2022/09/11/1662916462210)

মন্তব্যঃ

দিন দিন আত্মহত্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি খুব স্পষ্টভাবেই সমাজের মানুষের মধ্যে ভয়াবহ অস্থিরতা বিরাজ করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু, কেন এই অস্থিরতা বিরাজ করছে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা দেখি যারা আত্মহত্যা করছে তারা কেউ পড়াশুনার চাপে, কেউ অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারণে, কেউ ভালো ক্যারিয়ার গড়তে না পারার কষ্টে, কেউ প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, কেউ পারিবারিক কলহে, কেউ বেঁচে থাকার আনন্দ হারিয়ে, কেউবা সম্মান হারিয়ে …এমন নানা কারণে আত্মহত্যা করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এই পরিস্থিতিগুলো মানুষের আবেগকে অস্থির করে বিষণ্ণতা কিংবা মনমরা অবস্থায় নিয়ে যায়। যখন সে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ পায়না তখন একপর্যায় গিয়ে প্রচন্ড অবসাদগ্রস্থ হয়ে আত্মহনন করে। এমতাবস্থায় দেখি, বিভিন্ন মটিভেশনাল কাউন্সিলর কিংবা স্পিকার মটিভেশন দিচ্ছে যাতে তরুণরা হতাশার এই চোরাবালি থেকে বের হয়ে আসতে পারে। কিছুদিন আগে, শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা রোধে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অন্তত ২ জন করে সারাদেশে ২ লক্ষ কাউন্সেলিং শিক্ষক রাখা হবে। কিন্তু, এতে কি আসলেই সমস্যার সমাধান হবে?

প্রকৃতপক্ষে, দুনিয়ায় মানুষের জীবন নানা ধরনের বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যায়। এর মধ্যে যেসব বাস্তবতা মানুষের জন্য কষ্টদায়ক তা মানুষকে হতাশাগ্রস্থ করে। আর এই হতাশা থেকে বের হওয়ার জন্য মানুষ সাধারণত নিজের থেকে শক্তিশালী কোন সত্ত্বার আশ্রয় কিংবা সাহায্য খোঁজে, যা তাকে দূরাবস্থা থেকে বের করে হতাশামুক্ত করবে। আর এর জন্য মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল বেশি। মানুষ কোন দূরাবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তার মত মহাশক্তিশালী সত্ত্বার উপর যেমন ভরসা রাখে, আর কোন সত্ত্বার উপর তেমনটা রাখেনা। তাই দেখা যায় যখনই মানুষ হতাশাগ্রস্থ থাকে তখনি দৌড়ে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে আশ্রয় ও সাহায্য খোঁজে। এবং এর মাধ্যমেই সে নিজের মনের অস্থিরতাকে শান্ত করে দুনিয়াতে বেঁচে থাকে। কিন্তু, সৃষ্টিকর্তার কাছে এই সাহায্য এবং আশ্রয় খোঁজার প্রবণতা ১৮শ শতাব্দির দিকে ইউরোপীয়দের তথাকথিত আধুনিক যুগ শুরুর মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়া শুরু করে। কেননা, তৎকালীন ইউরোপে খ্রিস্টান পাদ্রীরা ধর্মের নামে বর্বরতা চালাতো। আর এই বর্বরতার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ইউরোপের মানুষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে বর্জন করার প্রবণতা তৈরি হয়, ফলশ্রুতিতে তারা এমন এক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গ্রহণ করে যা মানুষের জীবনে পুরোপুরি সৃষ্টিকর্তার প্রভাবকে অস্বীকার করে। যেই ব্যবস্থার নাম দেওয়া হয় সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা। নতুন এই ধর্মনিরপেক্ষ জীবন অনুসারে ইউরোপে মানুষ পুরোপুরি সৃষ্টিকর্তার বিধান থেকে মুক্ত এক নতুন জীবনের সূচনা করে যাকে তারা নাম দেয় আধুনিক যুগ (Age of Modernity) । যে আধুনিক যুগে মানুষ সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের পরিবর্তে বস্তুগত তুষ্টি অর্জনে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করা শুরু করে। এরপর থেকেই কে কত বেশি বস্তুগত তুষ্টি অর্জন করতে পারলো তার ভিত্তিতেই মানুষের জীবনের স্বার্থকতা পরিমাপ হওয়া শুরু হয়। এর ফলে ইউরোপে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্টিকর্তার সাথে সম্পর্কের অবনতির ফলে এক ভয়াবহ আধ্যাত্মিক সংকট তৈরি হয়। আর যখন তাদের এই সৃষ্টিকর্তা বিবর্জিত ব্যবস্থা ১৯২৪ সালে খিলাফত ব্যবস্থা ধবংসের পর আমাদের মুসলিম বিশ্বের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তখন আমাদের অঞ্চলগুলোতেও এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। যার ফলে, অনেক মুসলিমরা বিপদগ্রস্থ বা হতাশাগ্রস্থ হয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে আশ্রয় না খুঁজে হতাশার চোরাবালিতে আটকে যায়। আর পরিণতিতে নিজেকে হত্যা করে। মূলত, মানুষ হতাশাগ্রস্থ হলে তার মধ্যে আবেগীয় অস্থিরতা কাজ করে। আর এই অস্থিরতা থেকে মুক্তি লাভের জন্য দরকার একটা গাইডলাইন যা তাকে পথ বাতলে দিবে কিভাবে এর থেকে মুক্তি সম্ভব। যেই গাইডলাইন সীমাবদ্ধ মানব মস্তিষ্ক থেকে আসতে পারে না, বরং সৃষ্টিকর্তার মত অসীম শক্তিশালী সত্ত্বার কাছ থেকেই আসা সম্ভব। কিন্তু, বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থার ফলে সৃষ্টিকর্তার সাথে মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই মানুষ হতাশা থেকে বের হতে পারছে না, ফলশ্রুতিতে আত্মহত্যাও ক্রমবর্ধমান। তাই বলা যায়, প্রকৃতপক্ষে আত্মহত্যা প্রতিরোধের একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে এই ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থাকে অপসারণ করে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার অধীনে মানুষেকে ফিরিয়ে আনা, যা মানুষের জীবনের পারিবারিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সকল কাজকে স্রষ্টার সন্তুষ্টির সাথে সম্পৃক্ত করে অন্তরকে প্রশান্ত করবে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহ্‌’ স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখ, আল্লাহ্‌’ স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয় (সূরা রা‘দ: ২৮)।

  • আসাদুল্লাহ নাঈম

 

 

 

 

সার না পেয়ে রাস্তার মাঝে শুয়ে পড়লেন কৃষকরা

খবরঃ

জামালপুরে ইউরিয়া সার না পেয়ে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। রোববার সকালে জামালপুর সদরের শরিফপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকজন কৃষক সড়কের মাঝে শুয়ে পড়েন। বিক্ষুব্ধ কৃষকদের অভিযোগ, ইউরিয়া সার বিক্রির মাইকিং শুনে রোববার সকালে সার কিনতে শরিফপুর বাজারের ডিলার আব্দুস সালামের গুদামের সামনে উপস্থিত হন কয়েকশ কৃষক। উপস্থিত ২০-২৫ জন কৃষকের মাঝে প্রতি বস্তা সার ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রির পর গুদাম বন্ধ করে দেন ডিলার। এরপর বিক্ষুব্ধ কৃষকরা সারের দাবিতে জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কের শরিফপুর বাজার এলাকায় অবরোধ করেন। কয়েকজন কৃষক সড়কের মাঝে শুয়ে পড়ে সার না দেওয়ার প্রতিবাদ জানান। (https://www.jugantor.com/country-news/591354/সার-না-পেয়ে-সড়কের-মাঝে-শুয়ে-পড়লেন-কৃষকরা)

মন্তব্যঃ

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে বিষয়গুলো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বারবার আসছে তা হচ্ছে, আমন চাষের ভরা মৌসুমে সারের মূল্যবৃদ্ধি ও সারের সংকট যেখানে বাড়তি টাকায় মিলছে না সার। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্ধবছরে ইউরিয়ার চাহিদা ২৬ লক্ষ টন। যার মধ্যে দেশের চারটি সার কারখানা ১০ দশমিক ৫ লাখ টন উৎপাদন করতে সক্ষম, বাকি ১৬ লাখের জন্য আমদানি নির্ভর হওয়া  ছাড়া কোন উপায় নেই। গত বছরেও এই আমদানি বাবদ ২৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সারের দাম আকাশচুম্বী হয়ে ওঠায় গত অর্থবছরে মে মাস পর্যন্ত আমদানি খরচ হয়েছে ৪ বিলিয়ন যা এক বছরের তুলনায় ২২৩% বেশি। সারের মতো একই সংকট দেখা যায় চাল এর ক্ষেত্রেও। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত ১২বছরে দেশের প্রধান দুই খাদ্যশস্য  ধান ও গমের গড় আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ টন। বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম উর্বরা জমি, ৬ টি স্বতন্ত্র ঋতু,  ৭০০ নদীর সমাহার, শ্রমশক্তির বৃহৎ পুল– যা বাংলাদেশের মধ্যে তৈরি করেছে অবারিত কৃষি সম্ভাবনা এবং এ জমির মাত্র ৫৯.৮% চাষের মাধ্যমে আমরা ২০২১ সালে ৩৫ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন করতে সক্ষম হই। BRRI rice journal 2021 এ প্রকাশিত হয়েছে যে, বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ডাবল করা সম্ভব, সেখানে উল্টো প্রতিবছর আমাদের চাল আমদানি করে আনতে হয়। এই অনুশীলন শুরু হয়েছে বহু আগে, গত শতকের ষাটের দশক থেকেই সবুজ বিপ্লবের নামে বৈদেশিক সার এবং হাইব্রিড বীজের মত বন্ধ্যা বীজ ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রচারণার মাধ্যমে হাইব্রিড বীজের গুণাগুণ তুলে ধরেছে। সেই ধারাবাহিকতায় হাইব্রিড বীজের বেশিরভাগ আমরা চীন থেকে আমদানি করি, আর সার আসে রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে। তাছাড়া যুদ্ধ সংঘাত বা যেকোন অস্থিতিশীলতাতেই এই আমদানি চরমভাবে ব্যাহত হয়, যার প্রভাব এসে পড়ে আমাদের খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে; যেমনটি এখন আমরা ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে সার, গমের প্রাপ্যতা ঝুঁকির মধ্যে প্রত্যক্ষ করছি।

সুতরাং, যে কৃষি থেকে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব ছিল, শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন সম্ভব ছিল এবং যে কৃষি হতে পারত বৈদেশিক বাণিজ্যের ভিত্তি – সেই কৃষিই হয়ে পড়ল আমদানিনির্ভর – অন্যের মর্জির উপর নির্ভরশীল। এভাবে পরিকল্পিতভাবে আমাদের কৃষিখাতকে পঙ্গু করার মাধ্যমে আমাদেরকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং পরনির্ভরশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, যখন পুরো বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত করতে মরিয়া, চীনের মতো রাষ্ট্র তার ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আফ্রিকা মহাদেশের আবাদি জমি ক্রয় করছে, সেখানে আমাদের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেন আমদানিনির্ভর কৃষিখাত গড়ে তোলা হচ্ছে? কারণ হচ্ছে আমাদের শাসকেরা মুসলিম ভূমিতে আইএমএফের মত পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানের আত্মঘাতি নীতি বাস্তবায়ন করছে, কৃষিতে ভর্তুকি উঠিয়ে এবং কৃষকদের সবধরনের অসহযোগিতার মাধ্যমে উর্বর মুসলিম ভূমিতে খাদ্যের মরুভূমি তৈরি করেছে, আবার বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সাহায্যের নামে ভিক্ষা নিয়ে হাজির হওয়ার নাটকের মঞ্চায়নও হচ্ছে। একই নীতিমালা বাস্তবায়ন বিশ্বের খাদ্যের ঝুড়ি হিসেবে পরিচিত সুদানকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গম আমদানিকারকে পরিণত করেছে। অথচ, তাদের রয়েছে ২০০ মিলিয়ন একরেরও বেশি উর্বর জমি, ভূগর্ভস্থ পানিসহ বিপুল  জলসম্পদ।

ইতিহাস সাক্ষী যখন মুসলিম ভূমি আল্লাহ্‌ কর্তৃক প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছিল তখন তারা ছিল পৃথিবীর কৃষি বিস্ময়। যখন ইউরোপ অনাহার ও দুর্ভিক্ষে জর্জরিত ছিল, তখন যে বিষয়টি তাদেরকে আস-শাম এর আশীর্বাদ পূর্ণ ভূমি আক্রমণে লালায়িত  করেছিল তা ছিল তার বিপুল কৃষি সম্পদ। আস-শামকে ক্রুসেডাররা বলতো “land of milk and honey”। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ ইসলামের অধীনে ছিল কৃষির পাওয়ার হাউস, যা একাই বিশ্বের জিডিপির ২৩% উৎপাদন করতো, তার ছিল শক্তিশালী রপ্তানি প্রফাইল, তার মসলা এবং কৃষি সম্পদ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের লোভকে উস্কে দেয়। অথচ, ব্রিটিশদের শাসন আমলে এই একই অঞ্চলে ব্যাপক আকারে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল যাতে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছিল। ব্রিটিশরা চলে গেলেও, তাদের শোষনমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা রয়ে যায়, যা আমাদের আশীর্বাদপূর্ণ কৃষিখাতকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। খিলাফত ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন আবাদি কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে। জমির উৎপাদন ক্ষমতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী: যারা জমির মালিক প্রত্যেকেই এটি ব্যবহার করতে বাধ্য, এবং যাদের আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন তাদের বায়তুলমাল থেকে অর্থ প্রদান করা হবে যাতে তারা তাদের জমি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়, তিন বছর ধরে কেউ জমি ব্যবহারে অবহেলা করলে তাদের কাছ থেকে তা নিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া  হবে। তাছাড়াও, খিলাফত হাইব্রিড বীজ, বৈদেশিক সারের ফাঁদ থেকে কৃষকদেরকে মুক্ত করবে, প্রয়োজনে উদ্ভিদ প্রজননবিদদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজস্ব গবেষণায় উচ্চ ফলনশীল ধান ও বীজ উৎপাদন করবে।  আসন্ন খিলাফত এই কৃষিনীতির সম্পূর্ণ পুনর্গঠন নিশ্চিত করবে, আমাদের উর্বর ভূমি, জলসম্পদ, জনসম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত কৃষি এবং ভারী শিল্প সহ নেতৃত্বশীল অর্থনীতি করে তুলবে।

  • নাসরিন জাহান

 

 

 

 

“গাজীপুরের পানি বিষাক্ত, শিল্পায়নের মূল্য দিচ্ছে স্থানীয়রা

খবরঃ

পরিবেশের মুল দূষণকারী বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাদের যে নিদারুণ অবহেলা সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। গাজীপুরের যে পানি সেটা বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই জনপদ একটা বিষাক্ত জনপদে পরিণত হয়ে গেছে। শিল্পায়নের যে প্রাইস বা মূল্য এটা স্থানীয় লোকেরা দিচ্ছে। একসময় সারা বাংলাদেশই দিবে। সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় মেঘনা নীট কম্পোজিটর লিমিটেডের ইটিপি (পানি বিশুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া) পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।… তিনি বলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে কখনোই বলবনা ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দেওয়া হোক। অথবা আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করতে বলব। দোষ হচ্ছে যারা এটা পরিচালনা করে ম্যানেজাররা। তাদের প্রতি আহবান জানাতে চাই আগামী প্রজন্মের কথা মনে রেখে আপনারা দূষণমুক্ত শিল্প গড়ে তোলুন। (https://www.amarsangbad.com/country/news/233393)

মন্তব্যঃ

টেকসই উন্নয়ন (sustainable development) কিংবা পরিবেশ (environmental) ইস্যু এখন আন্তর্জাতিক ফোরামে বহুল আলোচিত বিষয়, যা পুঁজিবাদী বিশ্বনেতাদের মুখে আমরা অনেক শুনে থাকি। তাদের এসব বয়ান শুনলে মনে হতে পারে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা হয়তো একটা মানবিক ব্যবস্থা। মনে হতে পারে তারা পরিবেশ সচেতন এবং আগামী প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে নিরাপদ রাখতে আগ্রহী। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক তার বিপরীত, এই ব্যবস্থা পুঁজিপতিদের মুনাফা কিভাবে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করা যায় কেবল সেটাই নিশ্চিত করে তাতে সাধারণ মানুষ, পরিবেশ বা আগামী প্রজন্মের জন্য কি ক্ষতি হয়ে গেল এ ব্যবস্থায় সেটা নিয়ে ভাবার কোন সুযোগ নেই। মানবাধিকার নিয়ে তারা যেমন ভণ্ডামি করে, পরিবেশও তাদের ভণ্ডামির আরেকটি ইস্যু। নিজেদের জন্য এক স্ট্যান্ডার্ড আর তৃতীয় বিশ্বের জন্য অন্য স্ট্যান্ডার্ড। ডাইয়িং বা জাহাজ ভাঙ্গার মত পরিবেশ বিধ্বংসী শিল্পগুলো তারা ইচ্ছে করে আমাদের দেশে ঠেলে দিয়েছে কারণ তারা জানে এসব দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত প্রবিধানসমূহ (Compliance) না মানলেও চলে। ওসব মানতে গেলে যে তাদের মুনাফা কমে যায়। প্রকৃতপক্ষে, স্থানীয় পুঁজিপতি ও পশ্চিমা পুঁজিবাদী মোড়ল রাষ্ট্রের অনুগ্রহে বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশের দালাল শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় ঠিকে থাকে; তাই জনগণের জন্য কেবলমাত্র মায়াকান্না দেখানো ছাড়া পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার মুরোদ শাসকগোষ্ঠীর নেই। ফলাফল, পশ্চিমারা এসব শিল্পের পণ্য সুলভ মুল্যে ভোগ করতে পারে এবং পুঁজিপতিরা অধিক মুনাফা তৈরি করতে পারে। আর পুঁজিবাদী দালাল শাসকগোষ্ঠী আমাদের দেশে এসব শিল্পের বিকাশে উৎফুল্লিত বোধ করে।

পুঁজিবাদী জীবনাদর্শ স্রষ্টাবিবর্জিত একটা স্বার্থপর রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম দিয়েছে। যে রাষ্ট্র পুঁজিপতিদের তুষ্ট করতে জনগণের স্বার্থকে উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। সকল ক্ষমতা পুঞ্জিভূত থাকে পুঁজিপতিদের হাতে, তারাই ইচ্ছে মত আইন তৈরি করে আর নিজেরা থাকে আইনের ঊর্ধ্বে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাকে একটা ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তারা মনে করে সম্পদ সীমিত আর মানুষের চাহিদা অসীম তাই তারা কেবল উৎপাদনের উপর জোর দেয় যদিও তাতে পরিবেশের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা তাই কখনোই পরিবেশের প্রতি সদয় হতে পারে না। পরিবেশের বিপর্যয় থেকে আমাদের দেশকে ও আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই এই নিষ্ঠুর পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এবং আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ্‌ প্রদত্ত খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খেলাফত রাষ্ট্র পরিবেশ সংক্রান্ত ইসলামিক বিধিবিধানকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করবে। আল্লাহ্‌ সর্বস্রষ্টা, সর্বজ্ঞাত তার বিধান ভারসাম্যপূর্ণ। উৎপাদন, বণ্টন, প্রকৃতি ও পরিবেশের মধ্যে তিনি তার বিধানে এমন ভারসাম্যের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন যা মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব না।

মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে (সুরা আর রুম, আয়াত ৩০)

  • আবু যায়েদ