Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৫৮ তম সংখ্যা । ২৭ জুন, ২০২২
এই সংখ্যায় থাকছে:
“পদ্মা সেতুর উদ্বোধন কাল চার জেলার উদযাপন ব্যয় ৫ কোটি টাকা”
“শেষ হল এক্সারসাইজ সম্প্রীতি-১০ ও টাইগার শার্ক-৩৯”
“সিলেটে বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: হাসিনা”
“র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের বিস্ময়ে যুক্তরাষ্ট্র অবাক: পিটার হাস”
“সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়া অনুমোদন”
“পদ্মা সেতুর উদ্বোধন কাল চার জেলার উদযাপন ব্যয় ৫ কোটি টাকা”
খবরঃ
আগামীকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান খুবই জমকালো করতে চার জেলার ডিসিদের নামে প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প থেকে এসব জেলার ডিসিকে অর্থছাড় দিতে প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।… বরাদ্দকৃত জেলাগুলো হচ্ছে, ঢাকা জেলার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, মুন্সিগঞ্জ জেলার জন্য ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, মাদারীপুর জেলার জন্য ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা এবং শরীয়তপুর জেলার জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৬০ জেলায় উদযাপন ব্যয় কত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেতু বিভাগ থেকে সেটি বলা হচ্ছে না। (https://m.dailyinqilab.com/article/496229/পদ্মা-সেতুর-উদ্বোধন-কাল-চার-জেলার-উদযাপন-ব্যয়-৫-কোটি-টাকা)
মন্তব্যঃ
হাসিনা সরকার যখন পদ্মাসেতু উদ্বোধন উৎযাপন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক ভূ-খন্ড ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে এবং অকল্পনীয় মানবিক সঙ্কটে নিপতিত। সরকার মেগা-লুটপাটের এই প্রকল্প উদযাপনের জন্য বহু কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, উদাহরণস্বরূপ: উদ্বোধনের দিনে জনসমাবেশের জন্য নব্বইটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে নয় কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যেখানে বন্যা কবলিত এলাকার ৪০ লক্ষ মানুষের জন্য মাথাপিছু মাত্র ৬.৫৫ টাকা এবং আধা কেজিরও কম চাল বরাদ্দ করা হয়েছে (দ্য ডেইলি স্টার, ২২শে জুন, ২০২২)! এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকেরা কতটা নিষ্ঠুর ও উদাসীন হয়ে উঠেছে যে তারা এখন জনগণের দুঃখ- দুর্দশা নিয়েও উপহাস করে। হেলিকপ্টার থেকে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট ‘পরিদর্শন’ করার পর প্রধানমন্ত্রী চলমান বন্যা পরিস্থিতিকে “নতুন কিছু নয়” বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে যে “(বন্যার) কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে”। পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারের মেগা দুর্নীতি ও লুটপাট আড়াল করার জন্য তারা চায় যে জনগণ যেন উৎসবের আমেজে মজে থাকে।
এটাই হচ্ছে পুঁজিবাদী শাসকশ্রেণী কর্তৃক গৃহীত পুঁজিবাদী নীতির কুৎসিত চেহারা, যেখানে ‘উন্নয়ন’-এ গণমানুষের কোন স্থান নেই, বরং তা শুধুমাত্র শাসকগোষ্ঠী, তাদের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী এবং উপনিবেশবাদীদের জন্য নিবেদিত। এটা সর্বজনবিদিত যে, সরকার পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় মূল প্রাক্কলন ব্যয়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি বৃদ্ধি করে এই প্রকল্প থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার লুট করেছে। আর ভারত তার স্বার্থে এই প্রকল্পের জন্য হাসিনা সরকারকে ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে প্রদান করেছে, কারণ এটি কলকাতা থেকে ঢাকা হয়ে আগরতলা পর্যন্ত ট্রানজিট রুট এবং তার দীর্ঘদিনের লালিত ভূ-রাজনৈতিক ও সংযোগ স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে। সেতু নির্মাণের কাজ পাওয়ায় চীনও খুশি হয়েছে, কারণ এর মাধ্যমে সে তার অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে পারবে। সকল বৃহৎ অংশীদারদেরকে খুশি করে এবং জনগণের টাকা লুটপাট করে হাসিনা সরকার প্রকল্প ব্যয়ের পুরো বোঁঝা জনগণের কাঁধে তুলে দিয়েছে এবং উচ্চ হারে সেতু টোল আরোপ করেছে।
ধর্মনিরপেক্ষ শাসনের অধীনে উন্নয়ন যদি সত্যিই গণমানুষ-কেন্দ্রিক হত, তবে এই পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দকৃত বাজেটের একটি ক্ষুদ্র অংশ সরিয়ে নিয়ে হাওর (জলাভূমি) অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জীবিকা, ফসল ও সম্পদ রক্ষার উদ্দেশ্যে মানসম্পন্ন বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ থাকত। এবং, প্রতি বছর বর্ষার সময়ে বন্যার ঝুঁকিতে থাকা নিচু অঞ্চলগুলিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ড্রেজিং ও বাঁধ নির্মাণের মতো সমাধানসমূহ ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়ে যেত। জনগণের প্রতি ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের অবহেলা এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে, বন্যাকবলিত অঞ্চলে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করার জন্য সামরিক উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী দলসমূহকে “কলা গাছের ভেলা” ব্যবহার করতে হচ্ছে এবং নৌকার অভাবের কারণে উদ্ধার অভিযানে বেগ পেতে হচ্ছে।
ইতিহাস সাক্ষী যে, কেবলমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই আন্তরিকতার সাথে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতির দেখাশোনা করেছে। খিলাফতের অধীনে উন্নয়ন ছিল সত্যিকার অর্থে গণমানুষ-কেন্দ্রিক, এবং তখন মেগা প্রকল্পগুলোকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য কোন অভিজাত শ্রেণীর অস্তিত্ব ছিল না। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) জনগণের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে নানাবিধ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। দুর্ভিক্ষের সময় মদিনার নাগরিকদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে তিনি মিশরের গভর্নর আমর ইবনুল আস (রা.)-কে নীলনদ ও লোহিত সাগর সংযোগকারী একটি খাল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। উমর (রা.)-এর নেতৃত্বে ১৩৮ কিলোমিটার (৮৫.৭ মাইল) দীর্ঘ ‘আমির আল-মুমিনীন খাল’ মাত্র ছয় মাসের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। দুটি সমুদ্রকে যুক্ত করা হয়েছিল, যা পূর্ববর্তী পারস্য ও রোমান সম্রাটদের অবাস্তবায়িত স্বপ্ন ছিল। এছাড়াও, উমর (রা.)-এর শাসনামলে ইরাকের বসরা শহর প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি (রা.) সেচ ও খাওয়ার পানি সরবরাহের জন্য টাইগ্রিস থেকে নতুন শহর পর্যন্ত নয় মাইল দীর্ঘ একটি খাল নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
- ইমাদুল আমিন
“শেষ হল এক্সারসাইজ সম্প্রীতি–১০ ও টাইগার শার্ক–৩৯”
খবরঃ
বাংলাদেশ ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ ‘এক্সারসাইজ সম্প্রীতি-১০’ এর সমাপনী অনুষ্ঠান যশোর সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ অনুশীলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘২০ মাউন্টেন ডিভিশনের’ জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল প্রবীণ চাব্রা। অন্যদিকে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মধ্যে আয়োজিত যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ ‘এক্সারসাইজ টাইগার শার্ক-৩৯’ এর সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ও সিলেট এরিয়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল হামিদুল হক। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন হেলেন গ্রেইস লাফেব। এ প্রশিক্ষণ দুটির মূল উদ্দেশ্য ছিল কাউন্টার-টেরোরিজম (সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা) এবং শান্তিরক্ষা-মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত ও বিশেষ জ্ঞান বিনিময়। (www.tbsnews.net/bangladesh/joint-training-exercise-sampriti-10-exercise-tiger-shark-39-end-441082)
মন্তব্যঃ
সেনাবাহিনীর কাজ হল দেশ ও দেশের জনগণকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য শত্রুর সাথে যুদ্ধ করা ও শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করা। কিন্তু, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল: কারা আমাদের শত্রু? কাদের ক্ষতিসাধন থেকে আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন? আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “নিশ্চয়ই, তোমরা মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে মু‘মিনদের সাথে শত্রুতার ব্যাপারে ইহুদি ও মুশরিকদেরকে সবচেয়ে কঠোর অবস্থানে পাবে” (সূরা: আল-মায়িদাহ্: ৮২)। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মু‘মিন ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। কাফিররা তোমাদেরকে ক্ষতি করার কোন সুযোগই হাতছাড়া করবে না। তোমাদের কষ্ট তাদেরকে আনন্দিত করে” (সূরা: আলি ইমরান: ১১৮)। সুতরাং, আল্লাহ্সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র বিধান অনুযায়ী মুশরিক ভারত এবং কাফির সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা আমাদের শত্রুদের মধ্যে অন্যতম। তারা আমাদের ক্ষতি করতে চায়। তাদের ক্ষতি থেকেই আমাদের নিরাপত্তা দরকার। আমাদের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হল আমাদের নিরাপত্তার জন্য ভারত, আমেরিকাসহ অন্যান্য সকল শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা ও তাদেরকে পরাজিত করা। কিন্তু, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী যেভাবে আমাদের সামরিকবাহিনীকে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণের নামে শত্রুদেরকে হাসিমুখে আপ্যায়ন করাতে, তাদের সাথে একই ডরমিটরিতে ঘুমাতে, একই ডাইনিং-এ খাবার খেতে বাধ্য করছে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে প্রয়োজনের সময় তারা কিভাবে এই শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করবে? বস্তুত: শত্রুদের প্রতি আনুগত্য বা দাসত্বের মনোভাব রেখে কখনোই তাদেরকে পরাজিত করা যায় না। আমাদের সামরিক বাহিনীর সাথে আমাদের শত্রুদের এরকম দহরম-মহরম থাকা আর সামরিক বাহিনী না থাকার মধ্যে কোন তফাৎ নেই, আর এটাই বর্তমান শাসকগোষ্ঠী চায়।
মুশরিক ভারত এবং কাফির-সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার নিকট থেকে সন্ত্রাস দমন এবং শান্তিরক্ষার কৌশল শিখা আদতে ইবলিসের নিকট থেকে নামাজ শিখার মত। তাদের শান্তি ও আমাদের শান্তি কিংবা তাদের নিরাপত্তা ও আমাদের নিরাপত্তা এক হয় কি করে?! যেখানে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহ্’র পথে যুদ্ধ করে। আর যারা কাফির তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে। সুতরাং তোমরা শয়তানের অনুসারীদের (কাফিরদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হও (আন-নিসা: ৭৬)। মূলত সন্ত্রাস দমন এবং শান্তিরক্ষার নামে তারা আমাদের সামরিক বাহিনীকে তাদের ভাড়াটে বাহিনীতে পরিণত করতে চায়, যেন প্রয়োজন মাফিক কখনো তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে আবার কখনো ইসলামের বিরুদ্ধে তাদেরকে ব্যবহার করতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সামরিক বাহিনীর উচিত সচেতন হওয়া এবং এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা। যারা টাকার জন্য (ভাড়ায়) যুদ্ধ করে তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “… তোমাদের মধ্যে এক যোদ্ধা ইসলামের জন্য যুদ্ধ করা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিবে। সে বিভিন্ন জাতির কাছে গিয়ে বলবে, ‘তোমাদের মধ্যে কে আমাকে তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য ভাড়া করবে? তোমাদের মধ্যে কে আমাকে তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য ভাড়া করবে?’ দেখে নিও! সে তার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত ভাড়াটে সৈনিকই থেকে যাবে (অপমান অর্থে)” (আবু আইয়্যুব থেকে আবু দাঊদ বর্ণনা করেন)।
আমাদের নাকের ডগায় এসে আমাদের শত্রুরা ছড়ি ঘুরাতে পারছে, আমাদের মুসলিম সামরিক বাহিনীর সামনে তারা হেঁসে-খেলে, নিরাপদে ঘুরাফেরা করছে এটা আমাদের জন্য অপমানজনক এবং আমাদের মুসলিম পরিচয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। আমাদের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এর জন্য দায়ী, কেননা তারাই তাদের বৈদেশিক প্রভুদের খুশি করতে আমাদের ইসলাম-প্রিয় সামরিক বাহিনীকে শত্রুদের সামনে পদানত করছে। একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই সকল বৈদেশিক প্রভাব থেকে আমাদের সামরিক বাহিনীকে মুক্ত করবে এবং ইসলাম ও মুসলিমদের রক্ষায় এমনভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলবে যে এই বাহিনীর নাম শুনলেই শত্রুদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। আমাদের সামরিক বাহিনীর সাথে একই ডরমিটরিতে ঘুমানো দূরের কথা, খলিফার লিখিত নিরাপত্তার সার্টিফকেট ছাড়া তারা আমাদের ভূমিতে পা ফেলতেও রাজি হবে না!
- রিসাত আহমেদ
“সিলেটে বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: হাসিনা”
খবরঃ
অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বন্যা মোকাবেলায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, বন্যায় মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসময় তিনি আরো বলেন, এখনকার ছেলে-মেয়েরা ডাংগুলি, হাডুডু খেলা ভুলতে বসেছে। এসব খেলা তারা খেলেনি। ডাংগুলি ভাল খেললে বেসবলটাও ভাল খেলতে পারবে (https://desh.tv/national/details/71318-সব–ধরনের–ব্যবস্থা–নেওয়া–হয়েছে–বন্যা–মোকাবেলায়–প্রধানমন্ত্রী)
মন্তব্যঃ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের মানুষ দেখেছে সরকারের ‘সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার’ বাস্তব রূপ। বন্যা সংঘটিত হওয়ার দুই সপ্তাহ আগেই অতিবৃষ্টি ও বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার ধীরগতির কারণে সিলেট অঞ্চলে বন্যার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু সরকার জনগণকে সতর্ক করা কিংবা কোনো পূর্ব প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি; কেননা এই সরকারের কাছে জনগণের জীবনের চেয়ে পদ্মা-সেতুর মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাছাড়া এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য পরিকাঠামো হল: উদ্ধার-ভরণপোষণ-পুনর্বাসন। সেই হিসেবে সরকারের প্রথম ও প্রধান পদক্ষেপ হওয়া দরকার ছিল দুর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোকে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী ভাগ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদেরকে উদ্ধার করে দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা; উদ্ধার ও স্থানান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যবর্তী সময়ে সকল ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদগ্রস্থ মানুষদেরকে যথাযথ খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করা এবং পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রয়োজনমাফিক নগদ টাকা এবং অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা করে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। তা না করে সরকার তড়িঘড়ি করে শুরুতেই চাল ও নগদ টাকা পাঠানোর ঘোষণা দেয় যা মূলত ‘পুনর্বাসন’ পর্যায়ের একটি কাজ। নগদ টাকা দিয়ে ডুবন্ত মানুষ কি করে তার জীবন বাঁচাবে! সম্পূর্ণ ডুবে যাওয়া ঘরের মধ্যে মানুষ কিভাবে চাল দিয়ে ভাত রান্না করবে কিংবা সেই ভাত তারা খাবেইবা কি দিয়ে! যদিও সেই টাকা ও চাল বাস্তবে কেউই পায়নি।
শুধুমাত্র সিলেট বিভাগেই বন্যাকবলিত ৪৫ লাখ মানুষের মধ্যে অন্তত ৫ লাখ মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যাদের উদ্ধার করার জন্য সরকারের দায়িত্ব ছিল সেনা ও নৌবাহিনীকে পর্যাপ্ত নৌযান সরবরাহ করা। বন্যা পরিস্থিতিতে নাব্যতার কোন সংকট না থাকায় ছোট, মাঝারি কিংবা বড় (সরকারি বা বাণিজ্যিক) যেকোনো নৌযানকে উদ্ধার কাজে নিয়োগ করা সম্ভব ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব স্বল্পসংখ্যক নৌযান, কলাগাছের ভেলা, ভাড়া করা নৌকা ও রিক্সা/ভ্যান (!) দিয়ে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে। নৌযানের জন্য সেনা ও নৌবাহিনীকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে দেখা গিয়েছে। উদ্ধারের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক নৌযান সরবরাহ না করেই সেনা ও নৌবাহিনীকে নামিয়ে সরকার মূলত এ বাহিনীগুলোর ওপর জনগণের আস্থা ও নির্ভরতার উপর ভর করে দায়মুক্তি পেতে চেয়েছে, যা যেকোন দুর্ঘটনা-দুর্যোগেই আমরা প্রত্যক্ষ করি। বন্যাকবলিত লোকজন যতটুকুই সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছে তা মূলত ব্যক্তিগত ও সামাজিক উদ্যোগের ফল, যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি সাহায্য শুধুমাত্র ফটোসেশন কিংবা হেলিকপ্টার দিয়ে আকাশ থেকে ত্রাণ ফেলার স্ট্যান্টবাজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
হাসিনা সরকার তার সকল অপকর্ম, অন্যায়-অত্যাচারকে আড়াল করতে উন্নয়নের যে শ্লোগান জনগণকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে সেই উন্নয়নের সংজ্ঞায় নদীর নাব্যতা এবং গতিপ্রবাহকে অক্ষুন্ন রাখার কোনো স্থান নেই, যদিও নদীমাতৃক বাংলাদেশে তা একটি জীবন-মরণ ইস্যু। বরং সরকার হাওরের মধ্যে যত্রতত্র বিভিন্ন সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করে উজান থেকে নেমে আসা পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ করেছে। যার জন্যই মূলত বন্যার ভয়াবহতা এত বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, প্রতিবছরই আমরা দেখতে পাই নদী-তীরবর্তী লক্ষ লক্ষ মানুষ নদীভাঙ্গনের কারণে গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। কিন্তু নদীভাঙ্গনের মূল কারণ- নদীর নাব্যতা হ্রাসকে প্রতিহত করা কিংবা নাব্যতাকে বৃদ্ধি করার কোন কার্যকরী বা দৃশ্যমান উদ্যোগ সরকার নেয়নি। বরঞ্চ সরকারের সুবিধাভোগী নদীখেকো লোকজন নদীর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীপথে বিপদজনক ঘূর্ণীর সৃষ্টি হয়েছে যা লঞ্চ ও ট্রলার ডুবির প্রধান কারণ। পাশাপাশি হাওরে ফসল রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণের নামে সরকারদলীয় ক্যাডার-সন্ত্রাসীদেরকে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়ায় প্রতি মৌসুমে নামসর্বস্ব এসকল বাঁধগুলো ভেঙে হাজার-হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে এবং অনেক কৃষক তার শেষ সম্বলটুকুও হারাচ্ছে। এই বাস্তবতায় ‘বন্যা মোকাবেলায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে’ কিংবা ‘বন্যায় ক্ষতির পাশাপাশি অনেক লাভও আছে’ শেখ হাসিনার এসকল উক্তি দুর্ভোগের শিকার প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষের প্রতি নিদারুণ উপহাস ছাড়া কিছুই নয়।
মূলত জনগণের সকল দুর্ভোগের কারণ হলো বর্তমানে বিদ্যমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা যা অত্যাচারী শাসকদের জন্ম দেয়, যাদের জনগণের প্রতি নূন্যতম দায়িত্ববোধও নেই। এসকল দুর্ভোগ থেকে চিরতরে মুক্তির একমাত্র উপায় হল নবুওয়াতের আদলে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামী শরীয়াহ্ খলিফার দায়িত্বকে সুনির্দিষ্ট করে দিয়ে বলেছে, “প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং (শেষ বিচারের দিন) প্রত্যেককেই তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।…খলিফা হচ্ছে জনগণের উপর দায়ীত্বশীল” [বুখারী]। এই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা দেখেছি খলীফা ওমর (রা.)-এর শাসনামলে মদিনা ও সন্নিকটবর্তী অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে এই দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় নিয়োজিত করেছিলেন এবং তার ব্যক্তিগত পছন্দনীয় খাবার গ্রহণ ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত না দুর্ভিক্ষ পরিপূর্ণভাবে দূরীভূত হয়েছিল। বাংলাদেশে ঘন ঘন বন্যা হওয়ার কারণসমুহকে চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য খলিফা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদেরকে নিয়োগ প্রদান করবেন। তারপরও যদি বন্যা প্রতিহত করা না যায় তাহলে ওমর (রা.)-এর উদাহরণকে অনুসরণ করে খলিফা রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে এই দুর্যোগ মোকাবেলায় নিয়োজিত করবেন যেন উদ্ধার-ভরণপোষণ-পুনর্বাসন মডেল অনুসরণ করে জনগণকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্বস্তি প্রদান করা যায়।
- রিসাত আহমেদ
“র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের বিস্ময়ে যুক্তরাষ্ট্র অবাক: পিটার হাস”
খবরঃ
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশ বিস্ময় প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্র অবাক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে টানা বেশ কয়েক বছর ধরে উদ্বেগ প্রকাশের পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। … (https://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article2077677.bdnews)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন দৃষ্টিতে দেখে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য থেকে তা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের ধর্মনিরেপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর সম্পর্ক প্রভু-ভৃত্যের। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর সেই দলই দেশের ক্ষমতায় আসতে পারে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনান্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থরক্ষায় অধিকতর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভৃত্যদের শাসন করার জন্য প্রয়াসই বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। র্যাব এবং তার কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এরকম অনুশাসনেরই অংশ। প্রভুর অনুশাসনের বিরুদ্ধে ভৃত্যের উচ্চবাচ্য নিঃসন্দহে বেয়াদবি এবং বিস্ময়কর ঘটনা। পিটার হাসের মন্তব্যে থেকে এটাই ফুটে উঠেছে।
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন স্তরের নেতা-নেত্রীরা বিভিন্ন সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কড়া কড়া মন্তব্য করলেও বাস্তবে এই সকল মন্তব্যগুলো অসার মন্তব্য ছাড়া আর কিছুই নয়। এই সরকার কখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষার কৌশলগত প্রতিষ্ঠান যেমনঃ USAID, বিশ্বব্যাংক (WORLD BANK), আই এম এফ (IMF) কার্যক্রমকে বন্ধ বা সীমিত করার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি এবং করবেও না। বরং, এই সরকারের সময়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপারেশান টাইগার শার্কসহ অনেকগুলো যৌথ সামরিক মহড়া ও দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি সম্পাদন করার মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর উপর তাদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই শাসকগোষ্ঠী তাদের ক্ষমতাকে সুসংহত করার জন্য তারা প্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৃপা ও সহযোগিতাও ভিক্ষা করে। গত কিছুদিন আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন-এর বক্তব্যে তাদের কৃপা ভিক্ষার নমুনা উঠে এসেছে (দেখুনঃ “বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা চাইলেন মোমেন” মানবজমিন, ৬ এপ্রিল ২০২২)। সুতরাং, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার মধ্যে আমরা কখনও সাম্রাজ্যবাদীদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারবো না।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “…আল্লাহ কখনোই মুমিনদের উপর কাফেরদের কর্তৃত্ব মেনে নেবেন না” (সূরা নিসাঃ ১৪১)। সাম্রাজ্যবাদীদের নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে আমাদের অবশ্যই ইসলামের নেতৃত্বে নতুন বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে মুসলিমরা এক খলিফার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল রাষ্ট্রে বসবাস করবে। ইসলামের নেতৃত্বে নতুন বিশ্বব্যবস্থায় রাজনীতি করবেন ইসলামী আদর্শে বলীয়ান রাজনীতিবিদগণ যাদের কাছে পার্থিব লাভ-ক্ষতি থেকে আল্লাহ সুবাহানা’তায়লার সন্তুষ্টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা কখনও কাফির-সাম্রাজ্যবাদীদের কর্তৃত্ব মেনে নিবে না, বরং সকল সাম্রাজ্যবাদী কুফরশক্তিকে পদানত করবে। যার অসংখ্য ইতিহাস আমরা ১৩০০ বছরের খিলাফতে দেখতে পাই। ইতিহাস সাক্ষী ১৭৯৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভূ-মধ্যসাগরের তাদের বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপদ চলাচলের জন্য উসমানী খিলাফতের সাথে চুক্তি করে। উল্লেখ্য এই চুক্তিটি লিখা হয়েছিল খিলাফত রাষ্ট্রের ভাষায়। এটাই ছিল প্রথম ঘটনা যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের ভাষা ব্যতীত চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল।
- মো: জহিরুল ইসলাম
“সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের খসড়া অনুমোদন”
খবরঃ
‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২২’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা এই পেনশন স্কিমের আওতায় আসবে। তবে এর বেশি বয়সীদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ৬০ বছরের পর থেকে এ পেনশন কার্যকর হবে। (https://www.jugantor.com/national/564430/সর্বজনীন-পেনশন-ব্যবস্থাপনা-আইনের-খসড়া-অনুমোদন )
মন্তব্যঃ
অসহায় ও অক্ষম জনগণকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু, বাংলাদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সর্বজনীন পেনশনের নামে শুধুমাত্র জনগণের প্রতি তাদের অর্পিত দায়িত্বের অবহেলা করছে না, বরং জনগণের সাথে তামাশা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫ কোটি ৭৭ লাখের বেশী জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে (বিস্তারিত জানতেঃ দেশে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা আসলে কত? যুগান্তর, জুন ১৮, ২০২১)। দেশের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বড় সংখ্যক বেকার (বিস্তারিত জানতেঃ স্নাতক পাস ৬৬% শিক্ষার্থীই বেকার, প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১)। তাদের জন্য প্রতিদিনের নূন্যতম প্রয়োজনগুলো পূরণ করাই দায়, সেখানে তাদের পক্ষে প্রতি মাসে নূন্যতম ১ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়া কি কোনোভাবে সম্ভব? এছাড়া, এই স্কিমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের জমাকৃত টাকা কখনও এক সাথে উত্তোলন করতে পারবে না যার অর্থ দাঁড়ায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থের উপর পূর্ণ অধিকার হারাবো। কোন ব্যক্তির জরুরী প্রয়োজনে আবেদনের প্রেক্ষিতে জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করতে পারবে, যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। এই স্কিমে অংশগ্রহণকে বাধ্যতামূলক করা আরও একটি যুলুম। জনগণ যদি উপকৃত হবে বলে বিশ্বাস করে, তাহলে তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করবে। তাহলে কেন তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে এই প্রকল্পে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে?! কারণ এইসব শাসকেরা ভালো করেই জানে জনগণের কাছে তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অসাড়তা প্রকাশিত হয়ে গেছে এবং তাদের প্রতি আস্থা শূন্যের কোঠায়; সুতরাং, জনগণকে বাধ্য না করে কোনভাবে এই স্কিম চালু করা যাবে না।
ইসলামি শারী’আহ্-তে প্রতিটি বিষয়ের রয়েছে সুনির্দিষ্ট হুকুম, যা মেনে চলতে শাসক ও জনগণ বাধ্য। দায়িত্ব পালনের দোহাই দিয়ে জনগণের ঘাড়ে নতুন আর্থিক বোঝা চাপানো যাবে না। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র অসহায় বয়স্কদের দেখভালের দায়িত্ব তাদের সন্তানাদির উপর অর্পণ করবে। যদি তারা অক্ষম হয় অথবা সন্তানাদি না থাকে, সেক্ষেত্রে তাদের নিকটাত্নীয়দের উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করবে। যদি আত্নীয়রা অপারগ হয় বা না থাকে, সেক্ষেত্রে খিলাফাত রাষ্ট্র নিজেই নিঃস্ব, অসহায় বয়স্কদের জন্য অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে এবং তার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব বহন করা হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ “প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। শাসক তার জনগণের জন্য দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জবাবদিহী করবে …” [বুখারী, মুসলিম]। তাই আমরা দেখেছি খলিফা ‘উমার ইবন্ আল-খাত্তাব (রা.)-এর শাসনামলে, “একদা তিনি এক বৃদ্ধ ইয়াহুদীকে তার দুয়ারে ভিক্ষা করতে দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ ‘তোমার এ অবস্থা হলো কেন?’ সে বললঃ ‘জিযিয়া দেয়ার বাধ্যবাধকতা, প্রয়োজন, অভাব এবং বার্ধক্য।’ খলীফা তার হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন এবং নিজের নিকট থেকেই তার প্রাথমিক ও তাৎক্ষণিক প্রয়োজন পূরণ করে দিলেন এবং বায়তুল মাল পরিচালককে এই ব্যক্তির অবস্থানুযায়ী প্রয়োজন পূরণের জন্য মাসিক ভাতা নির্ধারণের নির্দেশ দিলেন এবং বললেনঃ ‘লোকটির যৌবন ও কর্মক্ষমতার কালে তো তাকে কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু সে যখন বৃদ্ধ ও অক্ষম হয়ে পড়েছে, তখন তাকে ভিক্ষা করে রুজী রোজগার করার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে! এটা কখনই ইনসাফ হতে পারে না।’” শুধু বয়স্কদের জন্যই নয়, খিলাফত রাষ্ট্র মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করবে এবং এর জন্য নাগরিকদের কোনোরূপ চাঁদা প্রদান করতে হবে না।
- সুজন হোসেন