Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 54

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৫৪ তম সংখ্যা । ১৬ মে, ২০২২

এই সংখ্যায় থাকছে:

                          “জয়শঙ্করকে প্রধানমন্ত্রী: চট্টগ্রাম বন্দর কাজে লাগাতে পারে উত্তর-পূর্ব ভারত”

                         “গণকমিশনের শ্বেতপত্রে ১১৬ ‘ধর্ম ব্যবসায়ী”

                          “মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৮২৪ ডলার, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.২৫%”

                          “ঈদযাত্রার ১৪ দিনে ২৮৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৬”

                          “বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ৭০০০ কোটি রুপির দ্বিতীয় রেলরুটের কথা ভাবছে ভারত”

                          “ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম, তারা কথা রাখেনি: বাণিজ্যমন্ত্রী”

                          “বাংলাদেশে ঈদের ছুটির সময় বাসাবাড়িতে চুরি ঠেকানোর দায় কার?”

                          “ঈদ উল ফিতর: বিশ্বের সব মুসলিম দেশে কি একই দিনে ঈদ পালনের সুযোগ আছে?”

 

“জয়শঙ্করকে প্রধানমন্ত্রী: চট্টগ্রাম বন্দর কাজে লাগাতে পারে উত্তর-পূর্ব ভারত”

খবরঃ

    পারস্পরিক সুবিধার জন্য ভারতের সঙ্গে কানেক্টিভিটি (সংযোগ) বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কানেক্টিভিটি বাড়ালে আসাম ও ত্রিপুরার মতো ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধা পেতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী তাকে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ তথ্য জানায়।…. (https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2022/04/29/1142537)

মন্তব্যঃ

    ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের বাংলাদেশ সফরকালে শেখ হাসিনা ভারতের ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের প্রধান বন্দর -চট্টগ্রাম বন্দর- হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাব দেয়! বৈঠকে শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলে, এই সংযোগটি ‘বিশেষত’ ভারতকে উপকৃত করবে (টাইমস অফ ইন্ডিয়া, এপ্রিল ২৯, ২০২২)। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের এই সুযোগ ভারতের জন্য অত্যাবশ্যক, কারণ ভারতের আসাম ও ত্রিপুরার মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ হতে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর রুটে ভারতের কলকাতা বন্দর রুটের চেয়ে কম দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। ভারত বিগত কয়েক দশক ধরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দর ব্যবহারের চেষ্টা করে আসছে এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদনে সফলও হয়, কিন্তু পরবর্তীতে এক্ষেত্রে আর কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি। এই প্রস্তাব হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে এমন এক সময়ে দেয়া হলো যখন ‘এস.এ.জি.এ.আর’ (সিকিউরিটি এন্ড গ্রোথ ফর অল ইন দ্য রিজিওন) মতবাদের অধীনে ভারতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা বলয় শক্তিশালী করতে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রচারণা জোরদার করছে, যা ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব মোকাবিলার লক্ষ্যে প্রণীত ইউ.এস ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির সাথে সংগতিপূর্ণ। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ সফর শেষ করে জয়শঙ্কর ভুটান সফরের একদিন আগে হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গেছে।

    দেশের জনগণ ইতিমধ্যে হাসিনা সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর উদ্দেশ্যে বাইডেন সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ প্রত্যক্ষ করেছে, যার ফলস্বরূপ Rapid Action Battalion (RAB)-এর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, কারণ এই কুখ্যাত বাহিনীই হাসিনা সরকারের ক্ষমতা অটুট রাখতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জোরপূর্বক গুম-এর মতো বেআইনি কাজ করে থাকে। জনগণ এটাও প্রত্যক্ষ করেছে, হাসিনা সরকারের মন্ত্রীরা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং তাদের প্রতি মনোভাব পরিবর্তনের জন্য কিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করুণা ভিক্ষা করেছে। কিন্তু তাদের আবেদনে কর্ণপাত না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাসিনা সরকারকে তার আঞ্চলিক পাহারাদার ভারতের অধীনে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে (“RAB-এর উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে ঢাকা সাহায্যের জন্য দিল্লির মুখাপেক্ষী”, দ্য ডেইলি অবজারভার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২২)। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র হাসিনা সরকারকে অপদস্থ করেছে এবং দেখিয়েছে যে তার সরকার আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার যোগ্য নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায়, চীনের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে ভারতের অবস্থান মজবুত করার মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়ন করার কাজে বাংলাদেশ ভারতের অনুগত থাকবে। হাসিনার সরকারের এই বিপর্যস্ত ও অপমানকর পরিস্থিতি অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী দলগুলোর জন্য একটি কঠোর সতর্কবার্তা যারা মূর্খের মতো মনে করে, বাংলাদেশের উচিত ভারতের আগ্রাসনের কবল থেকে মুক্তি পেতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করা!

    এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে জনগণের আর কিইবা আশা থাকতে পারে, যাদের মূর্খতা ও অযোগ্যতার কোন সীমা নেই। তারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিশ্বাসঘাতকতা ও মূর্খতার যেকোন পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রস্তুত, যদিওবা তারা জানে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাদেরকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হবে। আর কতকাল আমরা এই অযোগ্য (রুওয়াইবিদাহ্) নেতাদের সহ্য করবো, যারা কখনোই উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্বের সাথে আপস করা হতে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত শত্রুদের হাতে আমাদের কৌশলগত সম্পদ ও অবকাঠামো তুলে দেয়া হতে বিরত হবে না? কেবলমাত্র ইসলামের প্রকৃত অভিভাবক – নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনার মাধ্যমেই আমরা এই বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি এবং কাফির-মুশরিকদের প্রতি আনুগত্যের অবসান ঘটিয়ে ইসলামের নেতৃত্বে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারি। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “এবং কিছুতেই আল্লাহ্ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের কোন পথ রাখবেন না” [আন-নিসা: ১৪১]। 

  -ইমাদুল আমীন

“গণকমিশনের শ্বেতপত্রে ১১৬ ‘ধর্ম ব্যবসায়ী”

খবরঃ

    মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত ১১৬ ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ ও মৌলবাদী তৎপরতায় যুক্ত এক হাজার মাদ্রাসার নামের তালিকা সংবলিত ‘শ্বেতপত্র’ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে জমা দিয়েছে দেশের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত গণকমিশন। সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে গণকমিশনের চেয়ারপারসন দুদক চেয়ারম্যানকে উদ্ধৃত করে বলেন, তিনি জানিয়েছেন, অর্ধশতাধিক ‘ওয়াজ’ ব্যবসায়ীর দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, মৌলবাদীগোষ্ঠীর অর্থের প্রবাহ চলমান রয়েছে। এতে তরুণ সমাজ বিপথে যাচ্ছে। গণকমিশন সব মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির চেহারা উন্মোচন করছে। গণকমিশন সূত্র জানায়, গত ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আনুষ্ঠানিকভাবে শ্বেতপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেন। (https://samakal.com/asia/article/2205110851/গণকমিশনের-শ্বেতপত্রে-১১৬-ধর্ম-ব্যবসায়ী)   

মন্তব্যঃ

    বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও কুফরের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্রতর হচ্ছে এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের তত্ত্বসমূহের অসাড়তা একের পর এক উন্মোচিত হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায়, স্রষ্টাবিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষগোষ্ঠী তাদের পতনশীল আদর্শের পক্ষে অবস্থান নিতে এবং ইসলামের পুনঃজাগরণকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ইসলাম ও এর রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি উম্মাহ্‌’র ক্রমবর্ধমান অবস্থানকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিষ্ঠাবান আলেম সমাজকে ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। অথচ এটা সর্বজনবিদিত যে, ধর্মনিরপেক্ষবাদীরাই এদেশের প্রকৃত ধর্ম ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিবাজ। তারা সবসময় জনগণকে ধোকা দিতে তাদের স্রষ্টবিবির্জিত মুখোশকে আড়ালে রেখেছে এবং বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি সরকার তাদের জনসমর্থন আদায় ও ক্ষমতায় আরোহণের জন্য জনগণের ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করেছে। ইতিপূর্বে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে আমরা কুফর ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে “বিসমিল্লাহ্” সংযোজন করতে দেখেছি। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে অক্ষুণ্ণ রেখে হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদকে আমরা ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করতে দেখেছি। এরপর খালেদা জিয়ার প্রতিটি রমজান মাসে ওমরা হজ্বে যাওয়ার রেওয়াজ চালু করা,  ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পূর্বে শেখ হাসিনা কর্তৃক মাথা ঢেকে নিজেকে ধার্মিক মহিলা হিসেবে উপস্থাপন করা এবং ‘মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা ও এই সরকার কুর‘আন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না’- এই প্রতারণাপূর্ণ বক্তব্যের কথা কারোই অজানা নয়। শুধু তাই নয়, দেশের বামপন্থী রাজনীতিবিদ বিশেষত ইনু ও মেননদেরকেও জাতীয় নির্বাচনেও পূর্বে বৈধতা অর্জনের জন্য জনগণকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাতে এবং পবিত্র হজ্ব পালন করতে দেখা যায়। ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী সর্বদাই ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অর্জনের উদ্দেশ্যে জনগণের ইসলামী আবেগকে কাজে লাগিয়েছে, কিন্তু কোন ঘটনায় ইসলামকে আক্রমনের সুযোগ খুঁজে পেলে এই শাসকগোষ্ঠী ও তাদের অনুসারীগণ সেটার ফায়দা হাসিলের সুযোগকে কখনোই হাতছাড়া করেনি। তাই আমরা প্রত্যক্ষ করলাম সম্প্রতি টিপকান্ডে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে এই ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা কিভাবে ধার্মিক ও ধর্মান্ধ হিসেবে তীব্রভাবে আক্রমণ করে। নারীর টিপ পড়ার অধিকার নিয়ে সোচ্চার ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা মুসলিম নারীর হিজাবের প্রশ্নে কি নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে! বর্তমান শাসকরা ধর্মের’ সাথে তাদের কোন সমস্যা নেই বলে প্রচার করে অথচ ওয়াজ মাহফিল কিংবা সোশাল মিডিয়ায় আলেম সমাজ যাতে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবং রাজনৈতিক ইসলামের পক্ষে কোন বক্তব্য না দিতে পারে সে জন্য তাদেরকে নজরদারী, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গ্রেফতার, নির্যাতন ও কুখ্যাত ডিজিটাল আইনের নামে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এসব ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের অনুসারীরগণ ইসলামকে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে পশ্চিমাদের পরিচালিত ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্মুখসারীর সৈনিক হিসেবে নিজেদেরকে অত্যন্ত খোলামেলাভাবে উপস্থাপন করে। তাই ১১৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে দুদকে শ্বেতপত্র প্রদানের ঘটনায় মূল প্রতিপক্ষ গণকমিশন বনাম দুর্নীতি নয় বরং এই লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বনাম ইসলাম। প্রকৃতপক্ষে এসব ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা চায় আমাদের সমাজ থেকে ইসলাম বিচ্যুত হোক এবং তারা হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে তাদের ইসলাম বিদ্বেষকে টিকিয়ে রাখুক।

    ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের অনুসারী এসব দ্বৈত চরিত্রের শাসকগণ ও তাদের অনুসারীদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। দেশের আলেম সমাজকে অবাহতভাবে তাদের খুতবা, বক্তব্য ও ওয়াজে ইসলাম ও এর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। রাজনীতি বা সিয়াসাত (জনগণের বিষয়াদি দেখাশুনা করা) একটি পবিত্র দায়িত্ব; যে দায়িত্ব অতীতে নবীগণ পালন করতেন। তাই নবীগণের উত্তরসূরী হিসেবে রাজনীতি করা আলেমদের ঈমানী দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “বনী ইসরাইলকে শাসন করতেন নবীগণ, যখন এক নবী মৃত্যুবরণ করতেন তখন তাঁর স্থলে অন্য নবী আসতেন, কিন্তু আমার পর আর কোন নবী নেই। শীঘ্রই অসংখ্য খলীফা আসবেন। তাঁরা (সাহাবীরা) জিজ্ঞেস করলেন তখন আপনি আমাদের কী করতে আদেশ দেন? তিনি (সাঃ) বললেন, তোমরা (তাদের) একজনের পর একজনের বায়’আত পূর্ণ করবে, তাদের হক আদায় করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাদেরকেও তাদের উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে” (সহীহ্‌ বুখারী)। সুতরাং, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে জনগণকে মুক্ত করে ইসলামী রাজনীতিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা আলেমদের কর্তব্য। আলেমগণকে অবশ্যই কুফর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের অসাড়তা জনগনের সামনে উন্মোচন করা অব্যাহত রাখতে হবে এবং ইসলামী আকীদা পরিপন্থী এই কুফর ব্যবস্থাকে অপসারণ করার কাজে নিজেদের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কাফির সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠী ১৯২৪ খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের পর মুসলিমদের উপর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও গণতন্ত্র চাপিয়ে দেয়ার পর তৎকালীন আলেমগণ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সর্বোপরি গ্রেপ্তার-হয়রানী, জেল-যুলুম এবং ভয়ভীতির প্রেক্ষাপটে আত্মরক্ষা করতে অথবা তুচ্ছ দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিল করতে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সাথে যেকোন প্রকার সমঝোতা পরিহার করে, জনসম্মুখে বর্তমান কুফর ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থাকে পরিবর্তন ও খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার নির্দেশনা প্রদান অব্যাহত রাখা এই মুহুর্তে দেশের নিষ্ঠাবান আলেম সমাজের উপর অর্পিত ঈমানী দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, “লোকের ভয় যেন তোমাদেরকে হক্ব কথা বলা হতে বিরত না রাখে যখন তা তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়; সত্য বলা এবং সৎকর্ম করা কখনই মৃত্যুকে তরান্বিত করে না এবং রিজিককেও সংকুচিত করে না” (আহমদ, ইবনে হাব্বান, ইবনে মাজাহ)।

    -মোহাম্মদ সিফাত

  

“মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৮২৪ ডলার, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.২৫%”

খবরঃ

    দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় এক বছরের ব্যবধানে ২৩৩ ডলার বেড়েছে। .. আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনামন্ত্রী এও জানিয়েছেন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি চলতি অর্থবছর শেষে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। (www.prothomalo.com/business/economics/মাথাপিছু-আয়-বেড়ে-২৮২৫-ডলার-জিডিপি-প্রবৃদ্ধি-৭২৫

মন্তব্যঃ

    পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মাথাপিছু আয়, জিডিপি ইত্যাদি সূচক দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিকে মূল্যায়ন করা হয়। আমরা প্রায় সকলেই জানি, যেহেতু এটা গড় আয় (মাথাপিছু আয় না) বা গড় মোট উৎপাদন তাই এসব সূচক দিয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র বোঝা সম্ভব না। তারপরও এসব পরিসংখ্যান কেন নিরূপণ করা হয় এবং এত ফলাও করে কেন প্রচার করা হয়, ভেবে দেখেছেন কি? পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সম্পদসমূহ ক্রমাগতভাবে একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর হাতে পুঁঞ্জিভূত হতে থাকে এবং অধিকাংশ মানুষ বাজার অর্থনীতির অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ক্রমাগতভাবে সেই ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর দাসে পরিণত হতে থাকে, তাদের দয়া-দাক্ষিণ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। ফলে সে সমাজে সুবিধাভোগী ও সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় তা নিরসনের জন্য একটি সামষ্টিক সফলতা তুলে ধরা খুব জরুরী হয়ে পড়ে। অনেকটা এরকম সান্ত্বনা যে “আমি পিছিয়ে পরলে কি হবে আমরা সবাই মিলে তো এগিয়ে যাচ্ছি”। এটা করা হয় যাতে সুবিধাবঞ্চিতরা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ফুঁসে না উঠে, ধৈর্য্য ধারনের বাহানা খুঁজে পায়। আরেকটি কারণ এই যে, যেহেতু তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের নব্য উপনিবেশ রাষ্ট্রগুলোতে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের দালাল শাসকদের মাধ্যমে পুঁজিবাদী বৈশ্বিক নীতি বাস্তবায়ন করে শোষণ ও লুণ্ঠন চালিয়ে যাচ্ছে, ফলে জনগণ তাদের সম্পদ ও সক্ষমতা হারিয়ে ত্রমাগতভাবে একটি পরনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হচ্ছে। জনগণের বোধোদয়কে রুখতে সাফল্যের গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ানো জরুরী। এক্ষেত্রে সাফল্যের এই পরিসংখ্যানকে যে অযাচিতভাবে স্ফীত করে দেখানো হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দালাল শাসকরাও সবসময় ব্যর্থতাকে ঢেকে মেকি সফলতাকে হাইলাইট করতে চায়, যাতে তাদের ক্ষমতার চেয়ার দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই ইচ্ছেমত সফলতার গল্প রচিত হয়। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, “মিথ্যে কথা তিন প্রকার, মিথ্যে, ডাহা মিথ্যে ও পরিসংখ্যান”। আরেকটি কারণ হল, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে না বরং একটা সংখ্যা বা উপাত্ত হিসেবে দেখে। তাই, কয়জন মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করছে, কয়জন বেকার যুবক চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করল, কতজন অর্থকষ্টে নিজের সন্তান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হল তাতে কিছু যায় আসে না। গড় উৎপাদন ও গড় আয় বাড়ল কিনা এটাই তাদের কাছে বড় কথা। মানুষকে মানুষ হিসেবে না দেখাটাই পুঁজিবাদী তত্ত্বের একটা মস্ত দুর্বলতা। ব্যক্তি জীবন যখন দুর্বিষহ হয়ে উঠে সামষ্টিক সাফল্য তখন তুচ্ছ – ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। শ্রীলংকার মাথাপিছু আয় ৪ হাজার মার্কিন ডলার পরিসংখ্যানটি ক্ষুধার্ত মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। 

    গোটা পৃথিবীর সচেতন বুদ্ধিমান মানুষ আজ একটি মানবিক শাসনব্যবস্থার তালাশ করছে, যা প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদাকে মূল্য দিবে, তা পূরণের ব্যবস্থা করবে এবং একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই পারে সেই মানবিক শাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “বাস করার জন্য একটি গৃহ, আব্রু রক্ষার জন্য এক টুকরা কাপড়, আর খাওয়ার জন্য এক টুকরা রুটি ও একটু পানি এসবের চেয়ে অধিকতর জরুরী কোন অধিকার আদম সন্তানের থাকতে পারে না” (তিরমিযী)। খলিফার প্রথম ও প্রধান কাজ হবে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের (জাত, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে) মৌলিক চাহিদাকে পূরণ করা। এরপর মানুষ তার মেধা ও যোগ্যতা অনুসারে যেন সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়ে সমাজের সামষ্টিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা। কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৫-এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে: “রাষ্ট্রের অবশ্যই প্রতিটি ব্যক্তির সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের সামগ্রিক নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি ব্যক্তির বিলাসী জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রার সন্তুষ্টির সুযোগ করে দিতে হবে”।

    –আবু যায়েদ

“ঈদযাত্রার ১৪ দিনে ২৮৩ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৭৬”

খবরঃ

    ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ১৪ দিনে সারা দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জন নারী ও ৫১ শিশু রয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত সংঘটিত এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ জন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানিয়েছে। ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫৬ জন নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ৫৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, অর্থাৎ ১৩ শতাংশ। (www.thedailystar.net/bangla/সংবাদ/বাংলাদেশ/দুর্ঘটনা-অগ্নিকাণ্ড/ঈদযাত্রার-১৪-দিনে-২৮৩-সড়ক-দুর্ঘটনায়-নিহত-৩৭৬-রোড-সেফটি-ফাউন্ডেশন)

মন্তব্যঃ

    শুধু যে ঈদের সময়েই দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়। বরং সড়ক দূর্ঘটনা এখন আর দূর্ঘটনা নয় বরং স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এর তথ্যমতে ২০২০ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন ৫৪৩১ জন এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন ৭৩৭৯ জন। ২০২১ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৬২৮৪ জন এবং আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন ৭৪৬৮ জন। অন্যদিকে বিভিন্ন মহাসড়কে তীব্র যানজট এড়াতে বাসের বিকল্প হিসেবে যোগ হয়েছে মোটরসাইকেল। অনিরাপদ সড়ক ও অদক্ষ ড্রাইভারের কারণে মোটরসাইকেলের দূর্ঘটনাতেও মৃত্যু থেমে নেই। ২০২২ সালের প্রথম চার মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে মোট ৮৩০ জন। 

    কিন্তু ক্রমবর্ধমান এই সড়ক দুর্ঘটনা দূর করতে সরকার কি ভূমিকা রাখছে? বিভিন্ন সময়ে সড়ক দূর্ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে নতুন আইন তৈরীর আশ্বাস আর ফুট-ওভারব্রীজ নির্মানের মধ্যেই সরকারের কার্যক্রম স্থির হয়ে আছে। উপরন্তু সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য বিশাল বাজেট থাকলেও জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় হচ্ছে আমলা আর মন্ত্রীদের সুযোগ সুবিধা প্রদানে এবং ব্যাপক দূর্নীতির খোরাক জোগাতে। পক্ষান্তরে আমরা দেখেছি সড়ক-মহাসড়কে লাইসেন্সবিহীন ও ভূয়া লাইসেন্সধারী চালক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়া নিয়োজিত চালকদের সহকারীদের দিয়ে যানবাহন পরিচালনা করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ী চালানোর অনুমতি প্রদান, অপ্রশস্ত সড়ক, খানা-খন্দে ভরা ভাঙ্গা সড়ক ইত্যাদির অস্তিত্ব। কিন্তু তারপরও এত মৃত্যুর পরেও এসকল দূরবস্থা দূরীকরণে সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময়ই দায়িত্বহীন।

    উপরন্তু রেল ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে দূরবস্থার মধ্যে রেখে সরকারদলীয় নেতা শাহজাহান খানদের মত উপকারভোগীরা সড়কপথে লোকজনকে চলাচল করতে বাধ্য করে নিজেদের পকেট ভারী করছে। ফলে সড়কপথ বাদে অন্যান্য যোগাযোগ খাতগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। একদিকে সড়কপথ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই আবার সড়কপথে নৈরাজ্যের কারণে সড়কে দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালিকপক্ষের স্বল্প বিনিয়োগে অধিক মুনাফার লোভ, আইনকানুন ম্যানেজ করে চলার প্রবণতা, সরকারের বিভিন্ন মহলকে হাত করে এমন বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, তাদের উপার্জনের পথ নিশ্চিত করলেও যাত্রীদের জীবন অনিশ্চিত করে তুলেছে বারবার। কদাচিৎ দুর্বল পরিবহন শ্রমিকরা আইনের আওতায় আসলেও রাঘব বোয়ালরা সবসময় থাকে ধরাছোয়ার বাইরে। ফলে পরিবহন খাতের এই ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠী আর দায়িত্বহীন রাজনীতিবিদদের কারণে সড়ক ও পরিবহন খাত হয়ে উঠেছে এক বিভীষিকাময় মৃত্যুফাঁদ।

    জনগণের নিরাপত্তার ব্যাপারে চুড়ান্ত উদাসীন এই গণতান্ত্রিক-পূঁজিবাদী ব্যবস্থার রাজনীতিবিদ আর ক্ষুদ্র পূঁজিপতিগোষ্ঠীর হাত থেকে গণপরিবহনের মত এমন গুরুত্বপূর্ণ খাতকে রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ইসলামী ব্যবস্থার দিকে ফিরে যেতে হবে যেখানে শাসক হবেন তাক্বওয়াবান এবং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে থাকবেন সদা সচেষ্ট হোক সেটা তার নিজ গৃহের নিরাপত্তা কিংবা সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা। ইসলাম তথা খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থায় খলিফারা শুধুমাত্র মানুষের চলাচলের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত থাকবেন না বরং একটি পশু রাস্তা চলতে গিয়ে হোচট খাচ্ছে কিনা তা নিয়েও চিন্তিত থাকবেন। খিলাফত রাষ্ট্র জনগণ থেকে অর্জিত রাজস্বকে সঠিকভাবে কাজে লাগাবে। প্রশস্ত ও টেকসই রাস্তা, রাস্তা দ্রুততম সময়ে সংস্কার করা, দক্ষ ড্রাইভার তৈরী করা ইত্যাদি নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি সড়ক ব্যবস্থার উপর চাপ কমানোর জন্য রেল যোগাযোগ ও নৌ-পরিবহনকে আধুনিকায়ন করবে। উপরন্তু আকাশপথে চলাচলকেও সহজলভ্য করা হবে ফলে রাজশাহী কিংবা চট্রগ্রাম থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে ঢাকায় এসে অফিস বা ব্যবসা করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। উপরন্তু পূঁজিবাদী রাষ্ট্রের মত পরিবহন খাতের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতকে প্রাইভেট সেক্টরের হাতে তুলে না দিয়ে রাষ্ট্র নিজের হাতে দেখভাল করবে।

    –মো. হাফিজুর রহমান

“বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ৭০০০ কোটি রুপির দ্বিতীয় রেলরুটের কথা ভাবছে ভারত”

খবরঃ

    বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে দ্বিতীয় রেলরুটের মাধ্যমে উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্য মেঘালয়কে সংযুক্ত করার কথা ভাবছে ভারত। এ প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ৭০০০ কোটি রুপি। এর উদ্দেশ্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের হিলি দক্ষিণ দিনাজপুরকে মেঘালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা। বর্তমানে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে তাতে কাউকে দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে শিলিগুড়ি হয়ে তুরা পৌঁছাতে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত রুট চালু হলে এই দূরত্ব নেমে আসবে ১২০ কিলোমিটারে। জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি ফর করিডোর (জেএমসিসি) প্রধান নবকুমার দাস বলেছেন, যেহেতু প্রকল্পটি বাংলাদেশের ভূমির ভেতর দিয়ে অতিক্রম করবে, তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় সব সহায়তা করবে- এ বিষয়ে আমরা তাকে অনুরোধ জানাতে চাই। (https://mzamin.com/news.php?news=1529)     

মন্তব্যঃ

    দেশের রেলপথ, সমুদ্রবন্দর, অবকাঠামো খাত ও কৌশলগত সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুশরিক শত্রুরাষ্ট্র ভারত আমাদেরকে একের পর এক তার ভূ-রাজনৈতিক শিকারে পরিণত করছে। ইতিপূর্বে ত্রিপুরার বিলোনিয়া থেকে বাংলাদেশের ফেনী পর্যন্ত এবং আগরতলা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেল সংযোগ প্রকল্পে ভারত ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। এছাড়া গত এক দশকে ট্রান্সশিপমেন্টে পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন রোড প্রজেক্ট, রেলরুট এবং স্থলবন্দরের মত অবকাঠামো খাতে ভারতীর বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ বিলিয়ন ডলার। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, এগুলোকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন, আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদার করা কিংবা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন এগুলোর পেছনে কৌশলগত উদ্দেশ্য বিদ্যমান, যে বিষয়টিকে অবশ্যই এই অঞ্চলকে ঘিরে মার্কিনীদের ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের আলোকে পর্যালোচনা করতে হবে, অর্থাৎ চীনকে মোকাবেলার পাশাপাশি এই অঞ্চলে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্‌’র মোকাবেলায় ভারতকে শক্তিশালী করে তোলা, যেহেতু খিলাফতের প্রত্যাবর্তন অতি আসন্ন, বি‘ইযনিল্লাহ্‌। তাই ভারত আমাদের দেশের রেলপথ, সমুদ্রবন্দর, জ্বালানী খাত, অবকাঠামো ও কৌশলগত সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে কাফির সাম্রাজ্যবাদীদের আঞ্চলিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বর্তমান দালাল শাসকগোষ্ঠী এই মুশরিক শত্রু রাষ্ট্রকে আমাদের উপর আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে। ভারতকে তুষ্ট করে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতার গদি টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসেবে শেখ হাসিনা সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। বর্তমান মেরুদন্ডহীন শাসকগোষ্ঠীর এই ক্রীতদাসতুল্য নীতি ও আচরণেই ভারত এবার বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে দ্বিতীয় রেলরুটের মাধ্যমে উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্য মেঘালয়কে সংযুক্ত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশকে ভারত তার ভূ-রাজনীতির শিকারে পরিণত করার জ্বলন্ত উদাহরণ বিদ্যমান রয়েছে। ২০১১ সালে ভারত উত্তর শ্রীলংকার কঙ্কনসন্তুরাই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়, আর এখন তারা এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলার জন্য পূর্ব ত্রিনকোমালী বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে (“শ্রীলংকাকে নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে টানাপোড়েন”, দ্য ডিপ্লোম্যাট, ২৩শে মে, ২০১৭)। ত্রিনকোমালী বন্দরকে একটি কৌশলগত ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছাড়াও ভারত শ্রীলঙ্কায় রেল ও সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে সহায়তা করছে -বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ভারত একই পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। কার্যত, বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার করে নিরাপদে ভারতীয় পণ্য স্থানান্তরের (ট্রান্সশিপমেন্ট) উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নকৃত এসকল রেলরুট ও অবকাঠামো প্রকল্প ভারতের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা ব্যতীত আর কোন কিছুই নিশ্চিত করবে না।

    আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র আমাদের এই মুসলিম ভূ-খন্ড থেকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের আধিপত্যবাদের চির অবসান ঘটাবে। খিলাফত রাষ্ট্র যেহেতু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের মিত্রদের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করেই আসবে তাই এই রাষ্ট্র আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে কাফির শক্তিসমূহের কোন কর্তৃত্ব সহ্য করবে না। খিলাফত রাষ্ট্র ভারতের মত মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত শত্রুরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমাদের সম্পদ পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি আমাদের উপর তাদের কোনরূপ কৌশলগত সুবিধা না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে এবং আমাদের কৌশলগত ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে এই শত্রুরাষ্ট্রের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করবে। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,  “এবং, কিছুতেই আল্লাহ্ মুমিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের কোন পথ মেনে নিবেন না” (আন-নিসা: ১৪১)। খিলাফতের প্রত্যাবর্তনে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা নিজেদের অস্তিত্ব ও আধিপত্যের সংকট নিয়েই থাকবে তটস্থ, মুসলিম ভূমিতে হস্তক্ষেপ করা তো দূরে থাক। খিলাফত রাষ্ট্র দাওআহ্ ও জিহাদের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ইসলাম প্রচারের দায়িত্বের উপর ভিত্তি করে প্রণীত পররাষ্ট্র নীতির অংশ হিসেবে মুসলিম ভূ-খন্ডসমূহকে কাফির-মুশরিকদের অবৈধ দখল ও আধিপত্য থেকে মুক্ত করে সেগুলোকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করবে। 

    –মোহাম্মদ সিফাত

“ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম, তারা কথা রাখেনি: বাণিজ্যমন্ত্রী”

খবরঃ

    সয়াবিন তেল নিয়ে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেছেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কারচুপির কারণে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি হয়েছে। দামও বেড়েছে। তবে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/ব্যবসায়ীদের-বিশ্বাস-করেছিলাম-তারা-কথা-রাখেনি-বাণিজ্যমন্ত্রী)

মন্তব্যঃ

    তেলের দাম সহনীয় পর্যায়ে না রাখতে পারার ব্যর্থতা ঢাকতে বাণিজ্যমন্ত্রী “বিশ্বাস” নামক এক শব্দের ব্যবহার করেছেন এবং যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে/নিজেদেরকে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে তুলে ধরে দায়মুক্তির চেষ্টা করেছেন। যদিও সবাই জানে তারা জনগণের দুঃখ-কষ্টকে পরোয়া করে না। তেলসহ সকল পণ্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য যখন জনগণের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে তখন তাদের একজন বলেন: “মাথাপিছু আয় ঠিকই আছে, মানুষ আনন্দ নিয়ে বাজার করছেন: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী” (প্রথমআলো, ১০ মে ২০২২)। তারা বিশ্বাস করেন এমন এক দর্শনের যেখানে জনগণের প্রাধান্য থাকে না, সেখানে প্রাধান্য শুধু রক্তচোষা মুনাফালোভী একটি গোষ্ঠীর। এই দর্শনের মুলকথা হলো যেকোন কিছুর মাপকাঠি হলো “বেনিফিট বা লাভ-ক্ষতি”। আর এই মাপকাঠির জন্যই শাসক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সকলেই জনগণের দুর্দশার কথা বিবেচনা না করে তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মুনাফা নিশ্চিত করে নিচ্ছে। ফলে কিছুদিন পরপর একেকটা করে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের শাসকেরা এটাকে ব্যক্তির দায় হিসাবে দেখাতে চাচ্ছে। যেন আমরা কিছু ব্যক্তিকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করি এবং তাদের সেই পুঁজিবাদী বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে মানবসৃষ্ট পুঁজিবাদী এই দর্শন যে সকল ব্যক্তি বা রাষ্ট্র আকঁড়ে ধরেছে তারা কেউই ভাল অবস্থানে নেই। বর্তমান শ্রীলংকা থেকে শুরু করে উন্নতদেশ নামধারী কেউই ভাল নেই। খোদ আমেরিকায় একই চিত্র দেখা যাচ্ছে “Us consumer prices rise at fastest rate in nearly 40 years” (BBC, 12 january 2022)।

    ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কখনোই মানবসৃষ্ট কোন মতবাদকে আকঁড়ে ধরবে না কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন: “হে জনগণ! আমি তোমাদের নিকট এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি, যা মজবুতভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনই পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহ্‌’র কিতাব (কুর‘আন) ও তাঁর নবীর সুন্নাহ্‌” (মুয়াত্তা)। তাই আমরা দেখেছি পরবর্তীতে খলিফাগণ ইসলামকে আঁকড়ে ধরার কারণেই যেকোন সংকটময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছেন, উসমানীয় খিলাফতের খলিফা আবদুল হামিদের সময়ে বাজারে রুটির দাম বেড়ে গেলে তা জনগণের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ালে খলিফা নিজ বাসভবনের সকল কর্মচারী দিয়ে রুটি বানিয়ে মানুষের কাছে সরবরাহ করতে থাকেন, যতক্ষণ না রুটির দাম স্বাভাবিক হয়। ইসলামের মধ্যে খলিফা হচ্ছে নাগরিকদের জন্য, “ইমাম (খলিফা) হলেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল” (বুখারী/মুসলিম)। তাই খলিফা কোন পক্ষকে বিশ্বাস করে ছেড়ে দেয়ার মত গর্হীত কাজ করবেন না বরং ক্রেতা-বিক্রেতা দুইপক্ষ যাতে লাভবান হতে পারে সেই ব্যবস্থার জন্য বাজার মনিটরিং করবেন এবং বাজারে বাজারে “কাজী আল হিজবা” নিয়োগ দিবেন।

    –ইরফান আবিদ

“বাংলাদেশে ঈদের ছুটির সময় বাসাবাড়িতে চুরি ঠেকানোর দায় কার?”

খবরঃ

    বাংলাদেশের ঢাকার বাসিন্দাদের প্রতি পুলিশ আহ্বান জানিয়েছে যেন ঈদের ছুটির সময় বাসা-বাড়ির নিরাপত্তায় তারা বাড়তি সতর্কতা নেন। পুলিশের কর্মকর্তা বলেছেন, ঈদের সময় বহু ঢাকাবাসী নগর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে বা বেড়াতে যান। এই সময় ঘরবাড়ি ফাঁকায় থাকায় চুরি-ডাকাতির সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই পুলিশ সদস্যদের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি নগরবাসীকেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কর্মকর্তারা।… (www.bbc.com/bengali/news-61220317)

মন্তব্যঃ

    সমাজে সংগঠিত চুরিসহ অন্যান্য অপরাধসমূহ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এগুলো সামগ্রিক সমাজ ব্যবস্থাপনার ত্রুটির ফল। একটি সমাজে মানুষের মৌলিক চাহিদা যখন পূরণ না হয়, একজন মানুষ যদি বৈধ উপায়ে তার পরিবারের জন্য খাদ্য–বস্ত্র-বাসস্থানের সংস্থান না করতে পারে, যখন রাষ্ট্র এই ক্ষেত্রে উদাসীন থাকে, তখন চুরির মতো অপরাধসমূহ বেড়ে যায়। অধিকন্তু, যখন সমাজে ভোগবাদী-বস্তুবাদী চিন্তার ব্যাপক চর্চা করা হয়, যেখানে সম্পদ ও খ্যাতিকে মর্যাদা ও সাফল্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, তখন মানুষের মধ্যে এগুলো অর্জনে ব্যাপক প্রতিযোগিতা দেখা দেয়। কিছু মানুষ তখন অবৈধ উপায়ে অর্থাৎ, চুরি, ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করতে চায়। তারপর যখন রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে মিডিয়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ‘বস্তুগত সুবিধাসমূহ অর্জন করাকে’ই মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য বলে প্রচার করতে থাকে, তখন আজকের সমাজের মত সর্বত্রই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই ইত্যাদি মহামারী আকার ধারণ করে। তখন শাসক থেকে শুরু করে সকল পেশার মানুষ, এমনকি আদালতের কিছু বিচারকগণকেও চুরি বা দুর্নীতিতে লিপ্ত হতে দেখা যায়। তাই চুরির ঘটনার দায় শুধু চোরের নয়, বরং একটি রাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শাসনব্যবস্থা, সবশেষে বিচারব্যবস্থা, প্রত্যেকটি অংশই সমভাবে দায়ী।

  মূলত, ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদায় বিশ্বাসী রাষ্ট্রসমূহে ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণাকে মহিমান্বিতকরণ করা হয়। এখানে ব্যক্তি মানুষ স্বাধীনভাবে সমাজে বিচরণ করে। সৃষ্টিকর্তার নিকট জবাবদিহিতার বিষয়টি এখানে গৌণ। স্বার্থ অন্বেষণের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও বিচারব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারলে একজন মানুষের চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হতে আর কোনো বাধা থাকে না। আবার যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষ আক্বিদা একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক আক্বীদা, সেহেতু, সততা, সচেতনতা ইত্যাদি ব্যাক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই চুরি ঠেকাতে এই আক্বীদায় বিশ্বাসী লোকজনের কাছ থেকে আসা সমাধানও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়। যেমন, চোরকে কঠোর শাস্তি দেওয়া, কমিউনিটি পুলিশিং, নাগরিকদের সতর্ক থাকা, পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি। এখানে প্রতিষ্ঠানসমূহের কিংবা ব্যবস্থার ব্যর্থতা কিংবা অযোগ্যতা বিবেচ্য হয় না। তখন পুলিশ, নাগরিক, বিচারক, সকলে একে অন্যের ওপর দায় চাপাতে থাকে। তাই ‘অযোগ্য ও অক্ষম’ এই ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদা ও তার থেকে উৎসারিত দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাধানগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা জরুরি। এই ব্যবস্থা চুরিসহ সকল অপরাধের মূল কারণ মানুষের ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সন্তুষ্টি অর্জন’-এর ধারণাকে বাস্তবায়ন করে এবং এর পক্ষে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগুলোর মাধ্যমে জনমত তৈরী করে। অধিকন্তু, একটি শক্তিশালী ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করে দেয়। পাশাপাশি হালাল উপায়ে সাধ্যমত প্রত্যেককেই বিলাসী দ্রব্য উপার্জনের সুযোগ করে দেয়। তারপর সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনী-গরিব ও শাসক-শাসিত নির্বিশেষে প্রত্যেক অপরাধীকে তার অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদান করা হয়। তাইতো ইতিপূর্বে ওয়াদ্দান উপত্যকার প্রখ্যাত ডাকাতদের গোত্র, ‘গিফার গোত্র’ ইসলামী ব্যবস্থার অধীনে এসে তাদের সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করে মানবজাতিকে সত্যের পথে নেতৃত্ব দান করেছিল।

    –মো: জহিরুল ইসলাম

“ঈদ উল ফিতর: বিশ্বের সব মুসলিম দেশে কি একই দিনে ঈদ পালনের সুযোগ আছে?”

খবরঃ

    বাংলাদেশে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল ফিতরের দিন চূড়ান্ত হয় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। সাধারণত ২৯ রোজার দিন বিকেলে এ কমিটি বৈঠকে বসে।… (https://www.bbc.com/bengali/news-61292110)

মন্তব্যঃ

    কুফর ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা বিভিন্ন জাতিতে মুসলিম উম্মাহ্‌‘কে বিভক্তির ফলাফল যে কত নিকৃষ্ট হতে পারে কিংবা উম্মতের ঐক্যে যে কত বড় ফাটল ধরাতে পারে তা এই চাঁদ দেখা বিতর্কের মাঝে উঠে এসেছে। ১৯১৬ সালে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মধ্যেকার সাইকস-পিকট চুক্তির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ মুসলিম উম্মাহর একক খিলাফত রাষ্ট্রের ভূমিসমূহকে বিভক্ত করে তাদেরকে জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম ও আঞ্চলিকতাবাদের ভিত্তিতে আলাদা আলাদা পরিচয় দান করে তাদেরই অনুগত দালাল শাসকগোষ্ঠীর মাধ্যমে উম্মতের এই বিভক্তিকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এই দালাল শাসকেরা শিক্ষাব্যবস্থা ও মিডিয়াকে ব্যবহার করে আমাদের মন ও মগজকে জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম ও আঞ্চলিকতাবাদের বিষাক্ত ধারণা দ্বারা আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ফলশ্রুতিতে রোজা এবং ঈদ উদযাপন করা ইবাদতমূলক বিষয় হলেও সেগুলোতেও পর্যন্ত আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র হুকুমকে অবহেলা করে জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিতে সেগুলো পালন করা হচ্ছে। জাতিসমূহে আলাদা আলাদা ইসলামিক কাউন্সিল (যেমন, বাংলাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন) তৈরি করা হয়েছে এবং জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিতে ইসলামী চিন্তাবিদ তৈরি হয়েছে যারা এই চেতনার ভিত্তিতে জঘন্য সব ফতোয়া প্রদান করছে যেগুলো সরাসরি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত ইসলামী শারীয়াহ্‌-এর সাথে সম্পূর্ণ সংঘর্ষিক। এর ফলে মুসলিমদের ভেতরে এই উদ্ভট ধারণা হয়েছে যে, আফগানিস্তানে চাঁদ দেখা গেলে সেটা আফগানিস্তানবাসীর চাঁদ, সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেলে সেটা সৌদিআরববাসীর চাঁদ এবং বাংলাদেশ চাঁদ দেখা গেলে সেটা বাংলাদেশীদের চাঁদ। এমনকি দুই দেশের মধ্যে সময়ের ব্যবধান না থাকলেও কিংবা এক মিনিট বা দুই মিনিটের পার্থক্য থাকলেও তারা একত্রে রোজা কিংবা ঈদ পালন করেনা এই অজুহাতে যে, চাঁদ তাদের দেশে দেখা যায়নি। যেমন ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যেকার সময় ব্যবধান শূন্য হলেও তারা এই বছর একই দিনে ঈদ পালন করেনি। তাই এটা সুস্পষ্ট ভাবে বলা যায়, ঔপনিবেশিক সাইকস-পিকট চুক্তি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই সকল জাতিরাষ্ট্রের অধীনে বসবাস করে মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে ঐক্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ফরজ করেছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহর রজ্জুকে সমবেতভাবে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না…” (আলি-ইমরান: ১০৩)। এই আয়াতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুসলিমদেরকে এই নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেই ভূমিতেই থাকুক না কেন নিজেদেরকে যেন এক উম্মত হিসেবে বিবেচনা করে। মুসলিমদের জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম ও আঞ্চলিকতাবাদের ভিত্তিতে নিজেদের চিহ্নিত করার কোন অনুমতি নেই, কারণ এই ভয়ঙ্কর মতবাদগুলো জাতিসমূহের মধ্যে বিভক্তি ও সংঘাতের সৃষ্টি করে।

    তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্‌ উপনিবেশবাদীদের তৈরি সীমারেখাগুলো মুছে ফেলে একক খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে বসবাস করছে, যে রাষ্ট্রের নেতৃত্বদানকারী খলিফার বক্তব্যই যেকোন বিষয়ে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধরনের বিতর্ক থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়। তাই নবুওতের পদ্ধতিতে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা জরুরি, যা সকল বিরোধের পরিসমাপ্তি ঘটাবে এবং উম্মতের মধ্যে ঐক্য পুনরুদ্ধার করবে।

    –মো: জহিরুল ইসলাম