Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৫১ তম সংখ্যা । ৭ এপ্রিল, ২০২২
এই সংখ্যায় থাকছে:
“টিপ পরা আমার স্বাধীনতা”
“ফের ডলারের বিপরীতে মান হারাল টাকা”
“তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা: ডিএমপি কমিশনার ”
“উন্নয়ন না দেখলে চোখের চিকিৎসা করুন: প্রধানমন্ত্রী”
“দশম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে দেওয়া শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত”
“পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে কমিটি”
“টিপ পরা নিয়ে নারীকে হেনস্তায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য বরখাস্ত”
“টিপ পরা আমার স্বাধীনতা”
খবরঃ
কপালে টিপ পরায় ঢাকার রাস্তায় হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার গতকাল শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অন্তত প্রতিবাদটা হোক। লতা সমাদ্দারের সেই আন্দোলন গতকাল শনিবার থেকেই ছড়িয়ে গেছে ফেসবুকের দেয়ালে। ফেসবুকে নারীরা টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। সংখ্যায় খুববেশি না হলেও পুরুষেরাও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। শুধু ফেসবুক নয়, নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বিবৃতি এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেও লতা সমাদ্দারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, টিপ পরা আমার স্বাধীনতা। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/টিপ-পরা-আমার-স্বাধীনতা)
মন্তব্যঃ
টিপ পরা নিয়ে দেশের মিডিয়াতে এমন শোরগোল হচ্ছে যেন এ মুহূর্তে আমাদের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হলো নারীর টিপ পরা নিয়ে কটাক্ষ। ভাবটা এমন যেন, দেশের মানুষ বর্তমান সেক্যুলার (স্রষ্টা বা ধর্মকে জীবন থেকে আলাদা) সংবিধান অনুযায়ী কেবলমাত্র টিপ পরার অধিকার ব্যতীত খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, কথা বলার অধিকারের মত সব অধিকার ঠিকঠাক মত পাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, টিপ পরায় কেবলমাত্র একটি নারীর কটাক্ষের শিকার হওয়াকে স্রষ্টাবিবর্জিত সেক্যুলারগোষ্ঠী কেন এতো সিরিয়াসলি নিল? ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে স্কুল-কলেজে হিজাব পরিধানের উপর বিধি-নিষেধের প্রতিবাদে মুসলিমদের বিক্ষোভ, বিশেষ করে মুসকান খান নামক সাহসী এক মুসলিম তরুণীর “আল্লাহু আকবার” ধ্বনী দ্বারা সবাই মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হওয়া এবং পরবর্তীতে হিজাব নিষিদ্ধ বহাল রেখে ভারতের হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদের হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুসলিম জনগণ সোচ্চার হয়ে উঠা, যা দেখে স্রষ্টাবিবর্জিতগোষ্ঠীর গাত্রদাহ হচ্ছে। তাই তাদেরও একটা মুসকান দরকার, নইলে যেভাবে এদেশে ইসলামের জাগরণ হচ্ছে তাতে করে তাদের স্রষ্টাবিবর্জত মূল্যবোধগুলো না আবার চাপা পড়ে যায়। লতা সমাদ্দারই তাদের মুসকান। তাই তাকে স্রষ্টাবিবর্জিত সেক্যুলার চেতনার আইকন বানানোর সুযোগটা তারা কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চায়নি।
হিজাবকে যদি মুসলিম মেয়েরা সেক্যুলার সংবিধানিক অধিকার হিসেবে উপস্থাপন করে তাহলে কিন্তু তাদের কোন আপত্তি নাই। কারণ তখন টিপ আর হিজাবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। দুটোই নারীর স্বাধীনতা। সমস্যা হলো হিজাবকে মুসলিমরা একটি ফরয বা অবশ্যপালনীয় হুকুম হিসেবে দেখে, যেটা কোনভাবেই সেক্যুলার ব্যক্তিস্বাধীনতা তত্ত্বের সাথে যায় না। আসলে, টিপ পরা বা হিজাব পরা নিয়ে যে বিতর্ক তা এ সমাজের একটি মৌলিক সমস্যাকেই ইঙ্গিত করে। আর তা হলো ইসলামী আক্বীদায় বিশ্বাসী একটি জনগোষ্ঠীকে মানবরচিত বিধি-বিধান দিয়ে শাসন করা। তারা করে মুসলিম মেয়েরা কেন হিজাব পরবে? নিশ্চয়ই তাদেরকে জোর করে পরানো হয়েছে, তারতো যা ইচ্ছে তাই পরার অধিকার আছে, শরীর তার অধিকারও তার। তাই অবশ্যই তাদেরকে হিজাব-ওড়না থেকে মুক্ত করতে হবে; দেখুনঃ এবার ছাত্রীদের ওড়না খুলে ক্লাসে ঢুকালেন, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষক রুবিনা সুলতানার কান্ড, দৈনিক ইনকিলাব, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০। অন্যদিকে, ইসলামী আক্বীদা‘য় বিশ্বাসী মুসলিমরা নিজেদেরকে আল্লাহ্র বিধি-বিধানের কাছে সমর্পন করে। তার জান-মাল সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ্, তাই পোশাকও পরতে হবে তাঁর বিধান মতে। তাই আল্লাহ্’র বিধান পরিপন্থী সেক্যুলার সংবিধানিক আইন-কানুনের প্রতি মুসলিমদের শ্রদ্ধাবোধ না থাকাটাই স্বাভাবিক। মূলত স্রষ্টাবিবর্জিত ব্যবস্থার কারণেই সমাজে এই দ্বন্দ্ব জারি আছে এবং থাকবে। তাই যতদিন না আমরা এই ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলে তার স্থলে আমাদের ঈমানের স্বাভাবিক দাবী তথা খিলাফত ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব, সমাজে এই দ্বন্দ্ব চলমান থাকবে, সমাজ অস্থিতিশীল থাকবে। স্রষ্টাবিবর্জিত সেক্যুলার দর্শন এবং সেটা থেকে নির্গত শাসনব্যবস্থা কখনই একটি সমাজকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একত্রিত করতে সক্ষম হয় না, ইতিহাস তার সাক্ষী। খোদ পশ্চিমাদের তথাকথিত ‘মুক্ত’ সমাজে আমরা দেখি ধর্ম, বর্ণ নিয়ে, বিশ্বাস নিয়ে প্রবল নিপীড়ন এবং বৈষম্য। একমাত্র ইসলামী জীবনব্যবস্থাই সক্ষম ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠীর ভেতর তফাত না করে বিশ্ব মানবতাকে নব্যুয়তের আদলে খিলাফতের সুশীতল ছায়ায় ঐক্যবদ্ধ রাখতে।
– আবু যায়েদ
“ফের ডলারের বিপরীতে মান হারাল টাকা”
খবরঃ
যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরেক দফা কমলো। এক দিনেই ২০ পয়সা দর হারাল টাকা। মঙ্গলবার আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা খরচ করতে হয়েছিল; বুধবার লেগেছে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। দেড় মাস ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ থাকার পর গত ৯ জানুয়ারি টাকার বিপরীতে ডলারের দর ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকায় ওঠে। এরপর আড়াই মাস সেই দরে ‘স্থির’ থেকে বুধবার ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় উঠেছে। আমদানি বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শক্তিশালী হচ্ছে ডলার; বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে টাকা। তবে পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকায় এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা।(https://mzamin.com/article.php?mzamin=320895)
মন্তব্যঃ
মানবরচিত পশ্চিমা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কাগুজে মুদ্রানীতির ফলে অর্থের মূল্যসংকট চরম আকার ধারণ করেছে। ধাতব মুদ্রানীতির (স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক) পরিবর্তে যখন থেকে ছাপানো কাগুজে মুদ্রানীতির প্রচলন শুরু হয় তখন থেকে এ সমস্যার সূত্রপাত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৪ সালে ব্রেট্টন উড এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী তার ডলারের সমপরিমাণ স্বর্ণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে এই চুক্তি থেকে সরে আসে এবং ইচ্ছামত ডলার ছাপানোর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। কারণ এই সময় থেকে ডলার ছাপানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর কোন সীমাবদ্ধতা থাকে না। ডলার আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং পুরো বিশ্বের মুদ্রাবাজার, অর্থ ও বাণিজ্য ডলারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। International Monetary Fund (IMF) আমাদের দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তার মুদ্রানীতি অনুসরণ করতে বাধ্য করে। যে মুদ্রানীতি অনুসারে দেশের টাকার মুল্য কাগজী মুদ্রা ডলারের উপর নির্ভরশীল। ডলারের মত অস্থিতিশীল কাগুজে মুদ্রার উপর নির্ভরশীলতার দরুণ টাকার মূল্যমান ক্রমশঃই কমছে। ফলে সময়ের আবর্তনে টাকার মূল্য প্রতি বছর, মাস এমনকি প্রতিদিন উঠানামা করছে। প্রথমত, ইচ্ছামত ডলার ছাপানোর ক্ষমতার ফলে আমেরিকা লেনদেনের ভারসাম্য নিজের অনূকূলে আনার জন্য অনেক সময় অতিরিক্ত ডলার ছাপিয়ে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি করে। এর ফলে টাকার মুল্য কমে যায় এবং ডলার সরবরাহজনিত এই মুদ্রাস্ফীতির দায়ভার আমাদের দেশের উপরে এসে পড়ে। আমাদের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে দেশের বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যায় এবং টাকা তার ক্রয়ক্ষমতা হারায়। জনগণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাড়তি চাপে নিষ্পেষিত হয়। গত ১৩ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ২৫%। অর্থ্যাৎ, ১৩ বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা লাগত এখন তা কিনতে ১২৫ টাকা লাগবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য করে থাকে ডলারে। দেশে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় এই আমদানি ব্যয় মেটাতে বাড়তি ডলার লাগছে এবং ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমদানি বাড়ার ফলে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শক্তিশালী হচ্ছে ডলার, বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে টাকা। ডলার সঙ্কট সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফরেক্স রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে বাজার সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়ে দেশের ফরেন রিজার্ভের অবমূল্যায়ন হচ্ছে এবং দেশের সম্পদ দিন দিন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির ফলে ২০২১ সালে দেশের ফরেন রিজার্ভের পরিমান ৪৮ বিলিয়ন থেকে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তৃতীয়ত, দেশের মেগা প্রকল্পে মাত্রাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ এবং বকেয়া ঋণ ও ঋনের সুদ ডলারে পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি তৈরি করে যা টাকার অবমূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈদেশিক ঋণের বাড়তি দায় পরিশোধ করতে ডলারের উপর যেমন চাপ বাড়ে অন্যদিকে ফরেন রিজার্ভের উপরেও চাপ বেড়ে যায়। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরো কমে যায়। তুরস্ক বৈদেশিক ঋণ ফাঁদের নিকট অতীতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তুরস্কের লিরার মান ৪০% অবমূল্যায়ন হয়েছিল এবং তারা স্থাবর সম্পদ বিক্রয় করে এই ঋণ শোধ করে। এভাবে, মানবরচিত পুঁজিবাদী মুদ্রানীতির মাধ্যমে আমেরিকা বিশ্বব্যাপী তার ডলারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে এবং আমাদের দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে রেখেছে।
ডলারের আধিপত্য থেকে বাঁচতে হলে আমাদের মুদ্রার ভিত্তি হতে হবে স্বর্ণ ও রৌপ্য। স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রানীতিতে মুদ্রা ছাপানো হয় স্বর্ণ ও রৌপ্যের মজুদের ভিত্তিতে, তাই এই মুদ্রাব্যবস্থা মৌলিকভাবে স্থিতিশীল। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এক দিনার মুদ্রা ছাপাতে ৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ এবং ১ দিরহামের জন্য ২.৯৭৫ গ্রাম রৌপ্যের রিজার্ভ রাখাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত স্বর্ণ ও রৌপ্যভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ডলারভিত্তিক শোষণমূলক ও অস্থিতিশীল মুদ্রা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসবে। ফলে দেশের মুদ্রাব্যবস্থার উপরে যুক্তরাষ্ট্রের অশুভ নিয়ন্ত্রণ নির্মূল হবে। স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা কাফের সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের কাগজে মুদ্রাব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করবে; এর ফলে তাদের মুদ্রার মান বিশ্ববাজারে পতন হবে এবং বিশ্বব্যাপী ডলারের যে Hegemony সেটা ভেঙ্গে যাবে। স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিনিময় হারের হেরফের বন্ধ করবে এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ খিলাফত রাষ্ট্রের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে আকৃষ্ট হবে কারণ এই মুদ্রাব্যবস্থা হবে স্থিতিশীল। এর ফলে খিলাফত রাষ্ট্র খুব দ্রুত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নেতৃত্বশীল ভুমিকা রাখবে। স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রানীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে খিলাফতের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় শুধু শক্তিশালী ভূমিকাই রাখবে না বরং বৈদেশিক বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পুঁজিবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর অনৈতিক আধিপত্য খর্ব করবে। ডলার, পাউন্ড বা এই ধরনের কাগুজে মুদ্রা বিশ্ব বাণিজ্যে ক্রমাগতভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে এবং তৃতীয় বিশ্বসহ বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রসমুহ খিলাফতের ছায়াতলে এসে তাদের সম্পদ ও বাজারসমূহকে লোভী ও আগ্রাসী পুঁজিবাদী রাষ্ট্র থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হবে।
– মোহাম্মদ সিফাত
“ইচ্ছা করেই লোকসান!”
খবরঃ
দেশের ১৫টি সরকারি চিনিকলের একটি বাদে সবই বর্তমানে চলছে লোকসানে। এসব চিনিকলের দেনার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। অথচ চিনিকলগুলোর কর্মী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকসানের জন্য সরকারের নীতি ও ব্যবস্থাপনা অনেকটাই দায়ী। সময়োপযোগী পরিকল্পনা হলেই চিনিকলগুলো হয়ে উঠতে পারে দেশের রপ্তানি আয়ের বড় একটি উৎস। সরকারি চিনিকলগুলোতে এই মুহূর্তে পৌনে ছয় হাজার লোকবল ঘাটতি রয়েছে। সেকেলে প্রযুক্তি বদলে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন ও বেশি চিনি হয় এমন প্রজাতির আখ লাগানোর ব্যাপারেও নেই কোনো উদ্যোগ। এমনকি চিনিকলগুলোতে আখের উপজাত বা বাইপ্রোডাক্ট থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা দামী পানীয় তৈরি করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সে ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। (https://www.deshrupantor.com/first-page/2022/03/30/352956)
মন্তব্যঃ
উন্নতমানের চিনি উৎপাদনে আমাদের স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ থাকার পরেও সরকারের দূর্বল নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদেরকে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত নিম্নমানের চিনির উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হচ্ছে। ৫০/৭০ বছর আগে স্থাপন করা চিনিকলগুলোর বেশীরভাগের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল কয়েক দশক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। চিনিকলগুলোর আধুনিকায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ হলেও জনবিরোধী সরকার কারখানাগুলোর আধুনিকায়নের জন্য কোনপ্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই। বরং, সরকার কতিপয় রক্তচোষা পুঁজিপতিদের বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানির জন্য অনুমতি প্রদান করে চিনির বাজারকে তাদের খেয়ালখুশির উপর ছেড়ে দিয়েছে। তারা আমদানীকৃত নিম্নমানের চিনি স্বল্পদামে বিক্রি করা শুরু করে, যার ফলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনি অবিক্রিত থাকতে শুরু করে। যার ফলে দেশের চিনির বাজার ক্রমান্বয়ে পুরোপুরি আমদানিরনির্ভর হয়ে পড়ছে।
এছাড়াও, মৌসুমের উৎপাদিত চিনি বিক্রয় করে ঐ মৌসুমে আখ সরবরাহকারী কৃষকদের দায় পরিশোধ করার সরকারের ভ্রান্ত নীতির ফলে চিনিকলগুলো খুবকম সময়ই সঠিক সময় আখ চাষীদের বকেয়া পরিশোধ করতে পারে। সঠিক সময়ে উৎপাদিত আখের মূল্য না পেয়ে কৃষকরাও আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে আখের সরবরাহ ঘাটতি। আখের অভাবে মিলগুলো বছরে মাত্র কয়েক মাস আখ মাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে, যা চিনির উৎপাদনকে ঋণাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে এবং চিনিকলগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসান আরও বৃদ্ধি করছে। সরকারী চিনিকলগুলোর ব্যর্থতা এবং সরকারের পলিসিগত সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে, কতিপয় রক্তচোষা পুঁজিপতিরা মজুতদারি, কৃত্রিম সংকটসহ নানাবিধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিনির মূল্য নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে জনগণের পকেটের অর্থ লুট করছে। এই পাইকারি লুটপাটে সরকার শুধু চুপ থাকেনি বরং তারা রাষ্ট্রীয় পলিসির মাধ্যমে এই গোষ্ঠীর অপরাধের দোসর হিসাবে কাজ করছে। কারণ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পুঁজিই হচ্ছে সরকারের পলিসি নির্ধারণের মূল নিয়ামক।
শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এই নিয়মতান্ত্রিক নৈরাজ্য থেকে মুক্তি পেতে আমাদের এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রয়োজন যা সমাজের কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর স্বার্থের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় না, যা পক্ষপাতদুষ্ট নয় এবং সমাজের সকল সদস্যদের প্রয়োজন পূরণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এই মানদন্ড একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব কারণ এটা এসেছে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র কাছ থেকে হুকুম শারীয়াহ্ হিসাবে। শারীয়াহ্‘তে রয়েছে মানুষের সকল সমস্যার সমাধান। চিনি একটি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য। উম্মাহ্’র অভিভাবক হিসাবে ন্যায্যমূল্যে পণ্যটির সরবরাহ অবারিত রাখা খলিফার দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “ইমাম (খলিফা) হলেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল” (বুখারী/মুসলিম)। খলিফা শুধুমাত্র বিদ্যমান মিলগুলোকে আধুনিকীকরণ করবে না বরং রাষ্ট্রের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সমগ্র চিনি শিল্পকে পুনর্গঠন করবে। চিনি শিল্পের জন্য, কৃষকদের ব্যাপক সম্পৃক্ততা প্রয়োজন এবং এই ধরনের বৃহৎ ব্যবস্থাপনা ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য খুবই কঠিন। তাই সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চিনির কল স্থাপন এবং চিনির মূল উপকরণ আখ উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের অর্থনৈতিক এবং কারিগরি প্রণোদনা প্রদান করবে। জনগণের প্রয়োজন বিবেচনা করে খিলাফত রাষ্ট্র প্রয়োজনে ভর্তুকি প্রদান করে হলেও কৃষকদের সময়মত অর্থ প্রদান নিশ্চিত করবে যাতে তারা আখ উৎপাদন চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত বোধ করে। ফলশ্রতিতে, রাষ্ট্র যেমন চিনির উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে তেমনি জনগণও তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ন্যায্যমূল্যে চিনি পাবে। চিনি শিল্পে প্রচুর জনশক্তি নিয়োগের সুফলও জনগণ পাবে।
– মো: সিরাজুল ইসলাম
“তাদের নেত্রী নাকি এক নম্বর মুক্তিযোদ্ধা: ডিএমপি কমিশনার”
খবরঃ
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবির বিষয়ে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একটি পার্টির খুব সিনিয়র এক নেতা বলা শুরু করেছেন, তাদের নেত্রী নাকি একনম্বর মুক্তিযোদ্ধা। এর চেয়ে হাস্যকর…। যাকে তার স্বামী পরিত্যক্ত করে বলেছিলেন, পাকিস্তানের ওখানে কী করছ…। আর এখন সে নাকি বড় মুক্তিযোদ্ধা। আর না বলি।’… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/তাদের-নেত্রী-নাকি-এক-নম্বর-মুক্তিযোদ্ধা-ডিএমপি-কমিশনার)
মন্তব্যঃ
দেশে বেকারত্বের সমস্যা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা যত তীব্র হচ্ছে, পাবলিক সার্ভিসে (সরকারি চাকরি) জড়িত হওয়ার জন্য মানুষের আগ্রহ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর একবার এখানে ঢুকে গেলেই সবাইকে একবিংশ শতাব্দীর নব্য গোলামে পরিণত হতে বাধ্য করা হয়। তখন তারা জনগণের সেবার কথা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক বিচার বিশ্লেষণ ক্ষমতা হারিয়ে উর্ধতন কর্মকর্তা কিংবা শাসকগোষ্ঠীর বৈধ- অবৈধ সকল নির্দেশ পালনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে। তাদের তোষামোদ করাটাই যেন এদের প্রধান কাজ। এতেই মিলে পদোন্নতি, বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা কিংবা কাঙ্খিত স্থানে পোস্টিং এর সুযোগ। তাই, কথাবার্তা কিংবা কর্মকান্ডে তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে কিভাবে সরকারপ্রধানকে খুশি করা যায়। কিছুদিন আগে ফেসবুকে এই ট্রলও হয়েছে যে ‘সরকারী চাকুরিজীবিরা সবাই যেন এক একটা বিটিভি’। এমনকি এই কাজে তারা একে অপরের সাথে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। তারা সরকারের দলীয় ক্যাডারে পরিণত হয়ে সরকারের ক্ষমতার খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হন। এই কাজে প্রয়োজনে খুন করতেও দ্বিধা করে না। যেমন, টেকনাফ থানার বহুল আলোচিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ কথিত বন্দুকযুদ্ধের জন্য ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ বা বিপিএম পেয়েছিলেন। পদক পাওয়ার জন্য তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে ছয়টি কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। সবকটি ঘটনাতেই আসামি নিহত হন। আর এর ব্যতিক্রম ঘটলে বরখাস্ত হতে হয়। যেমন; দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনকে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করায় চাকুরী থেকে অপসারণের পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এমনকি তিনি গুম হওয়ার ভয়ে আত্মগোপনও করতে বাধ্য হন।
স্রষ্টাবিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদায় জীবনকে সৃষ্টিকর্তার প্রভাবমুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। তখন ইন্দ্রিয়ের পরিতুষ্টি তথা স্বার্থসিদ্ধি হয়ে উঠে ব্যক্তির সকল কাজের মূল উদ্দেশ্য। এই আক্বীদায় বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করে যে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিংবা শাসকদের সন্তুষ্টি অর্জন স্বার্থ উদ্ধারের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তখন তারা কথাবার্তা কিংবা কর্মকান্ডে প্রায়শই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়। তাই যে শাসকেরা নিজেদের ইন্দ্রিয়ের পরিতুষ্টি না খুঁজে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি খুঁজবেন, তাদের অধীনে তাক্বওয়াবান, নিষ্ঠাবান ও দক্ষ প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব তৈরি হবেন। আর এই ধরনের শাসক কিংবা কর্মকর্তা কখনোই বর্তমান এই স্রষ্টাবিবর্জিত আক্বীদার ভিত্তিতে তৈরি মানবরচিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় তৈরি হবে না। কারণ এখানে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে শাসকের হাতে। এই ক্ষমতা পেয়ে তারা জনগণের প্রভুর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়। ১৪০০ বছরের ইতিহাস সাক্ষী, আল্লাহ্’র (সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা) প্রতিনিধিত্বকারী খিলাফতের শাসনব্যবস্থায় অগণিত তাক্বওয়াবান, নিষ্ঠাবান ও দক্ষ প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়েছিলো, আল্লাহ্’র ইচ্ছায় যাদের কাঁধে ভর করে এই শাসনব্যবস্থা টিকে ছিলো। ওমর (রা.) ঘরভর্তি স্বর্ন যা আল্লাহর পথে ব্যায় করা হয়, তার চাইতে তিনি আবু উবায়দা (রা), মুয়ায বিন জাবাল (রা), সালিম (রা) এর মতো তাক্বওয়াবান ও দক্ষ প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বদের মুল্যবান মনে করতেন।
– মো: জহিরুল ইসলাম
“উন্নয়ন না দেখলে চোখের চিকিৎসা করুন: প্রধানমন্ত্রী”
খবরঃ
যারা সরকারের উন্নয়ন দেখে না তাদের চোখের চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তাদের চোখে কোনো উন্নয়নই নাকি দেশে হয় নাই। এখন বলতে হয় যে, আমরা তো একটা আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। যারা বক্তৃতা দেয় উন্নয়ন হয় নাই, চোখে দেখে না, আমার মনে হয় তাদের চোখ পরীক্ষা করা দরকার। তাহলে হয়তো দেখতে পাবে যে, উন্নয়ন হয়েছে কিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের চোখে পড়ে না যে শতভাগ বিদ্যুৎ, ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ তো বিদ্যুৎ ছাড়া চলতে পারে না। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ তারা ব্যবহার করছে। এটা উন্নতি না?” আজকে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র এগুলো চোখে পড়েনা। (www.google.com/amp/s/www.bd-pratidin.com/amp/national/2022/03/27/753986)
মন্তব্যঃ
“উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ” ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারের প্রতিপাদ্য বিষয়, আর এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের যত প্রচারণা। অন্যদিকে, বিরোধীদলগুলোর প্রচারণার বিষয়বস্তু হচ্ছে এদেশে উন্নয়ন হয়নি। এই রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ জনগণকে এটা বুঝাতে মরিয়া যে, তারাই একমাত্র দল যারা জনগণের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং জনগণের জন্য প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চত করতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে তারা একে অপরকে বিষোদাগার করে, ব্যক্তিগত আক্রমণ করে; অন্যদিকে নিজেদেরকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক, একনম্বর মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি কিংবা মাদার অব হিউমেনেটি/ডেমোক্রেসি নামে আখ্যায়িত করে। বস্তুত এই রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই উন্নয়নকে সংজ্ঞায়িত করেনি, বরং কিছু স্থাপনা ও গাণিতিক পরিসংখ্যানকে জনগণের সামনে উন্নয়ন হিসেবে তুলে ধরেছে। এবং যারাই এই উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করছে তাদেরকে অসুস্থ/রোগী সাব্যস্থ করে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করতে বলছে। যদিও এই উন্নত আই হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী নিজেই চোখের চিকিৎসা করান না, তিনি লন্ডনে গিয়ে চোখের চিকিৎসা করান (“লন্ডনে চোখের চিকিৎসা করাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী”, ১৪জুন, ২০১৫ প্রথমআলো)।
মুলত সৃষ্টিকর্তাবিহীন জীবনব্যবস্থায় “মিথ্যা উপস্থাপনা” বাদে অন্য কোন মানদন্ড নাই যা দিয়ে জনগণ নিজেদের অবস্থাকে মাপতে পারে। তাই টিসিবির ট্রাকের পিছনে ঝুলে, ৮৫ হাজার টাকা মাথাপিছু ঋনের বোঝা নিয়ে, দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি ও ৪ কোটি ৮৫ লক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী, সীমাহীন দুর্নীতি, বিচারহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, ধর্ষণ ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও শাসকগোষ্ঠী আমাদের উপর তাদের কথিত উন্নয়ন চাপিয়ে দিচ্ছে এবং জুলুমের এই শাসনকালকে “সোনার বাংলা” নাম দিয়ে বৈধতা পাবার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা বৈধতা পাবে না, কারণ এই ইসলামপ্রিয় জনগণের কাছে বৈধতার মাপকাঠি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা। “আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তদানুযায়ী যারা বিচার–ফায়সালা করে না, তারাই তো যালিম” (সুরা আল মায়িদাহ্ঃ ৪৫)ভ
ইসলামী জীবনাদর্শে “উন্নয়ন” আলাদা কোন শব্দ নয়, বরং ইসলামী শাসনব্যবস্থায় উন্নয়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা ইসলামী শারিয়াহ্ বাস্তবায়নের ফলে অটোমেটিক নিশ্চিত হয়ে যায়। তাই আমরা দেখেছি সম্পদবিহীন মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র ২৭ বছরের মাথায় হযরত উমর ফারুক (রা.)-এর শাসনামলে অর্ধেক পৃথিবী ইসলাম দ্বারা শাসিত হয়েছে। এবং কোন ব্যক্তিকে খাদ্যের জন্য (লাইন ধরাতো দুরের কথা) বায়তুল মালের নিকটে গিয়ে খাদ্য চাইতে পর্যন্ত হয়নি। এমনও সময় অতিক্রম হয়েছে যখন বায়তুল মাল মানুষের যাকাত সংগ্রহে হাপিয়ে উঠে নিজ দায়িত্বে যাকাত বিলিয়ে দিতে বলতে বাধ্য হয়েছিল। তাই আমাদের উন্নয়ন এর মিথ্যা ফাঁদে পা না দিয়ে, ইসলামের অধীনে শাসিত হবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং বর্তমান শাসকদের মিথ্যা ও প্রতারণামূলক ধারণাগুলোকে ছুড়ে ফেলে ইসলামী আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
– ইরফান আবিদ
“দশম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ে দেওয়া শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত”
খবরঃ
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় দশম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই সহকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানা গেছে, ওই স্কুলশিক্ষিকা নিজের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলের বউ করে আনবেন বলে কিছুদিন ধরে সহকর্মীদের জানিয়ে আসছিলেন। পরে গত শুক্রবার শিক্ষিকা নিজে উপস্থিত থেকে ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের বিয়ে দেন। (www.prothomalo.com/bangladesh/district/দশম–শ্রেণির–ছাত্রের–সঙ্গে–পঞ্চম–শ্রেণির–ছাত্রীর–বিয়ে–দেওয়া–শিক্ষিকাকে–সাময়িক–বরখাস্ত)
মন্তব্যঃ
তথাকথিত বিভিন্ন নারীবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘বাল্যবিবাহ একটি পশ্চাদপদ সামাজিক রীতি’, ‘বাল্যবিবাহ ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর’, ‘বাল্যবিবাহ মানসিক, স্বাস্থ্যগত ও পারিবারিক সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি শিশু অধিকারকেও হরণ করে’ – ইত্যাদি নানারকম মুখরোচক সংলাপ দ্বারা এধরণের যুক্তিযুক্ত ও ইসলামসম্মত বিয়েকে আক্রমণ করে থাকে। এমনকি সংসদেও আমরা মেয়েদের বিয়ের বয়স বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হতে দেখি এবং এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন আইনও পাশ করা হয়। মুলত আমাদের শাসক ও বুদ্ধিজীবীরা জনগণের কল্যানের কথা ভেবে কিন্তু এসব চিন্তার প্রচার-প্রসার চালায় না, যদি তাই হতো তবে তারা আমাদের দেশে কন্যাশিশুরা যে পর্নোগ্রাফির শিকার হচ্ছে, প্রেমে প্রতারিত হয়ে আত্মহত্যা করছে, যৌন হয়রানি, নির্যাতন, ধর্ষণ আর ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হচ্ছে, এগুলো বন্ধে সমান পরিমান সরব হতো। উপরন্তু দেশে শিশু গৃহকর্মী ও গার্মেন্টসকর্মীদের উপর শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনতো রয়েছেই। বরং তারা তাদের পশ্চিমা প্রভুদের প্রত্যক্ষ মদদে এবং তাদের অন্ধ অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমে এই প্রচারণাগুলো চালিয়ে থাকে। যেমন, The Convention on the Elimination of all Forms of Discrimination Against Women (CEDAW) এর ১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বাল্যবিবাহকে নিষেধ করা হয়েছে এবং এই কনভেনশনের সিগনেটরি দেশসমূহকে বাধ্য করা হয় যাতে তারা নিজেদের দেশে এসকল নীতি বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিয়ে যে আলোচনা তা মূলত CEDAW’র মূলনীতিরই বাস্তবায়ন।
প্রশ্ন হচ্ছে, খোদ পশ্চিমা সমাজ কি নারীর বিয়ের নুন্যতম বয়স নির্ধারণে একমত হতে পেরেছে? জার্মানী, যুক্তরাজ্য, ইটালীতে নারীর বিয়ের বৈধ বয়স ১৬, ফ্রান্স ১৮, এস্টোনিয়া ১৫, স্পেন ১৬ যা কিছুদিন আগে ছিল ১৪। কিংবা তারা কি শিশুদের বিবাহবহির্ভূত যৌনসংস্পর্শ কিংবা সন্তানধারণকে থামাতে পেরেছে? ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যত শিশু জন্মগ্রহণ করেছে তার শতকরা ৪০ শতাংশের মা হচ্ছেন অবিবাহিত কিশোরী। যুক্তরাষ্ট্রে ১৫-১৯ বছরের মধ্যে গর্ভবতী হওয়া মেয়েরা প্রতি বছর দেড় লক্ষেরও বেশি সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এসকল পশ্চিমা দেশসমূহে শিশুদের যৌন নির্যাতন, টিনএজ প্রেগন্যান্সি, শিশু পর্নোগ্রাফি, ধর্ষন ইত্যাদি মহামারী রুপ লাভ করেছে।
তাই, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কেন পশ্চিমারা নারীর পশ্চাদপদতার যে মূল কারণ অর্থাৎ ভোগবাদী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যা নারীর অধিকারকে হরন করে নারীকে এ ব্যবস্থার দাসে পরিনত করেছে, তা ছেড়ে বাল্য বিবাহের মত বিষয়ের পিছনে লাগল? নারীর নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের সুব্যবস্থা না করে বাল্যবিবাহ, হিজাব, পর্দা আর সম্পত্তিতে নারীর অর্ধেক প্রাপ্তির পিছনে লাগল? মুলতঃ পশ্চিমা এবং তাদের স্থানীয় দালাল শাসক ও বুদ্ধিজীবীরা যে প্রচারনা চালাচ্ছে তা ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যুদ্ধের আরেকটি নমুনা মাত্র। তারা চায় যাতে আমরা দ্বীন ইসলামকে ত্যাগ করে পশ্চিমাদের স্রষ্টাবিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ দ্বীনকে গ্রহণ করি। আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন, “তারা আকাঙ্ক্ষা করে যে, তারা নিজেরা যেমন কুফরী করেছে, তোমরাও তেমনি কুফরী কর, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও” [আন-নিসা: ৮৯]।
ইসলাম নারী-পুরুষের বিয়ের বয়সের ব্যাপারে স্পষ্ট ধারনা দিয়েছে। নারী ও পুরুষ বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) হলেই বিয়ে করতে পারবে। এজন্য ১৮ কিংবা ২১ বছর অপেক্ষা করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে সঠিক সময়ে বিয়ে করার কারণে সমাজ থেকে একদিকে যেমন ব্যাভিচার, অশ্লীলতা ও যৌন সহিংসতার ইতি ঘটবে, একইভাবে সমাজ হয়ে উঠবে শান্তিপূর্ন। ইনশা’আল্লাহ, খিলাফত তথা ইসলামী রাষ্ট্রে কোন মাকে তার ছেলেকে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করানোর জন্য শাস্তি পেতে হবে না, বরং তিনি হবে হবেন প্রশংশিত এবং অন্যান্যদের জন্য আদর্শ।
– মো. হাফিজুর রহমান
“পানি না পেয়ে ২ কৃষকের আত্মহত্যা: অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে কমিটি”
খবরঃ
গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘুটু গ্রামের সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি (৩৭) ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি (২৭) বিষপান করেন। এতে অভিনাথ সেদিনই মারা যান। রবি মারা যান ২৫ মার্চ।পরিবারের দাবি, নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত এ দুই কৃষককে বোরো ধানের জমিতে পানি না দিয়ে বিষ খেতে বলেছিলেন। তাই তারা দু’জনে গভীর নলকূপের সামনেই বিষপান করেন। পরবর্তিতে করা তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এর ঈশ্বরীপুর-২ গভীর নলকূপের সেচ ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়ম উঠে এসেছে। পানি দিতে অপারেটরের স্বজনপ্রীতি, দুর্ব্যবহার এবং অতিরিক্ত টাকা আদায়েরও অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তদন্তে। (https://sarabangla.net/post/sb-660001/)
মন্তব্যঃ
একটু সূক্ষভাবে দেখলে আমরা বুঝতে পারবো এই ২ কৃষক এবং পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত অপারেটররা বিচ্ছিন্ন নয়, এরা একটা ব্যবস্থা বা সিস্টেমের দুটি পক্ষ, একদিকে সাধারণ প্রান্তিক জনগণ যার জীবন অস্তিত্বের জন্য রাষ্ট্রের সেবা প্রয়োজন, আর আরেকদিকে রাষ্ট্রীয় সেবা প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌঁছানোর একজন প্রান্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী। প্রান্তিক জনগণ যার কাছে এই কৃষি উৎপাদনই অস্তিত্বে টিকে থাকার শেষ সম্বল এবং এর জন্য অত্যাবশ্যকীয় পানি পেতে তার যে প্রভাব বা অর্থ বা পুঁজিবাদী ভাষায় ‘Bargaining Power’ থাকার দরকার তার কোনটিই নাই, তাই সে সেবাদানকারী থেকে এটি আদায় করে নিতে পারেনি। আর প্রান্তিক নলকূপের অপারেটর যাকে এই পদটি পাওয়ার জন্য ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি হতে হয়েছে এবং যাকে সেই গ্রাম থেকে শুরু করে, ইউনিয়ন, উপজেলা, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কৃষি অধিদপ্তর ইত্যাদিসহ অনেক কর্তৃপক্ষকে এবং ক্ষমতাধরকে প্রতিনিয়ত খুশি করে টিকে থাকতে হয় তার কাছে স্বভাবতই ঐ প্রান্তিক ২ কৃষকের জীবনমরণ আকুতি শোনা এক দূরবর্তী বিষয়। ‘অধিকার প্রাপ্তির জন্য দরকষাকষির যোগ্যতা আবশ্যক’ এবং ‘পদ মানে দায়িত্ব নয় ক্ষমতা পাওয়া’- দুই বাস্তবতা হলো বর্তমান শাসনব্যবস্থার চিত্র।
অতঃপর এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক একটি বিশেষ শ্রেণীতে সুবিধা প্রদানে গৃহিত নীতি বাস্তবায়নেরই ফল। যার ফলে কৃষককে ঋণের জালে বন্দি করা, ডিজেলের দাম বাড়ানো ও বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি দাম প্রতিনিয়ত বাড়ানো হচ্ছে। কৃষকদের জন্য সরকারের ভর্তুকি সহায়তা কমানো, ভর্তুকি অথবা যেকোন সেবা প্রান্তিক কৃষক পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য অনেকগুলো সুবিধাভোগী ধাপ তৈরি করা হচ্ছে। আবার বাজারকে সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয়া, সরকারের ক্রয়নীতির ভ্রান্তির কারণে প্রান্তিক কৃষককে উৎপাদিত পণ্য মধ্যসত্বভোগীদের কাছে কমমূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এজন্যই আমরা দেখতে পাই কৃষকের আত্মহত্যা, নিজের ধান জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা, দুধ রাস্তায় ঢেলে দেয়া, ঋণ না নিয়েও ঋণের বোঝা টানা ইত্যাদি। একই কারণে পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন কৃষক আত্মহত্যা করছে।
ইসলামের কৃষিনীতি ও সেবা প্রদানের পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে প্রতিটি প্রান্তিক কৃষক সুরক্ষিত থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আগুণ, পানি, চারণভূমি এই তিনটি জিনিসের মালিকানা জনগণের”। অর্থাৎ রাষ্ট্র এগুলো থেকে কোন সুবিধা বা লাভ নিতে পারবেননা অথবা অন্যকোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দিতেও পারবেননা। বিনামূল্যে কৃষিজমিতে সেচ প্রদানের সেবা পৌঁছে দিতে খলিফা (ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান) হচ্ছেন দায়িত্বশীল। এই দায়িত্বপালনে খলিফা কোন অযুহাতও দিতে পারবেননা কারণ, ইসলাম অনুযায়ী শাসন হচ্ছে কেন্দ্রীয় আর প্রশাসন বা সেবাপ্রদানের সংগঠন প্রান্তিক পর্যায়ে বিস্তৃত। কারণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেন, “তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল, যার যার পালের ব্যাপারে সে সে দায়িত্বশীল। খলিফা তার জনগণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। …কর্মচারী তার উপর অর্পিত কাজের ব্যাপারে দায়িত্বশীল”। ইসলামে যেকোন ব্যাক্তির প্রাপ্ত অধিকারের ব্যাপারে সরাসরি খলিফাকেই দায়ী করা যাবে। আবার ইসলামে সেবা প্রদানকে প্রান্তিক পর্যায়ে সহজেই নিয়ে যাওয়া যায় কারণ এখানে রাষ্ট্রের প্রান্তিক একজন কর্মচারীও এই জবাবদিহিতার বলয় থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ইসলাম বর্তমান মানবরচিত ব্যবস্থার মত সেবা পাওয়াকে ‘Bargaining Competence’ বা ‘দরকষাকষির যোগ্যতা’ উপর ছেড়ে না দিয়ে স্পষ্ট অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর ফলে প্রতিটি ব্যক্তি এখানে শাসন, জবাবদিহিতা ও অধিকারের চক্রে আবদ্ধ, কেউ এখানে সিস্টেম বা ব্যবস্থার বলয় থেকে ছিটকে পড়ে না।
– মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“টিপ পরা নিয়ে নারীকে হেনস্তায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য বরখাস্ত”
খবরঃ
টিপ পরায় এক নারীকে হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেককে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার ফারুক হোসেন আজ সোমবার কনস্টেবল নাজমুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, নারীকে হেনস্তার ঘটনাটি তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।…টিপ পরায় গত শনিবার ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় হয়রানির শিকার হন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। এ বিষয়ে ওই দিনই শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। এর ভিত্তিতে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে কনস্টেবল নাজমুলকে শনাক্ত করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/টিপ-পরা-নিয়ে-নারীকে-হেনস্তায়-অভিযুক্ত-পুলিশ-সদস্য-বরখাস্ত)
মন্তব্যঃ
রাষ্ট্র চাইলে, গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে দ্রুততম সময়ে অপরাধী সনাক্ত করে তদন্তের পূর্বে শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে শাস্তির আওতায় আনতে পারে “টিপ” কান্ড তারই একটি প্রমাণ। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কাজ শেষ। একজন দাড়িওয়ালা ব্যক্তি কর্তৃক টিপকে কটাক্ষ, আর একজন হিন্দু নারীর অভিযোগ- “আমি একজন হিন্দু, আমিতো টিপ পড়বই”, ধর্মনিরপেক্ষ তথাকথিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাষ্ট্র ও ব্যবস্থার বাহকেরা খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।
ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের মানে কী? এর তাত্ত্বিক মানে হলো সকল ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে তার ধর্ম-কর্ম পালন করতে পারবে। হিজাব বা টিপ অর্থাৎ ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কাউকে খাটো বা উত্তক্ত করা যাবে না। আর প্রায়োগিক মানে হলো, মুসলিমরা ইসলামকে যথাযথভাবে অনুসরণ করা বাদে যা খুশি করতে পারবে। এশিয়ার ভারত থেকে ইউরোপের ফ্রান্স, সর্বত্র একই চর্চা। তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থায় তাই টিপ আর হিজাব ইস্যুতে দ্বৈত আচরণ বোধগম্য। হিজাব নিয়ে কটাক্ষকারী, হিজাব খুলতে বাধ্যকারীরা স্বসম্মানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভিযোগ বা মানববন্ধন করে কোন লাভ হচ্ছে না, বড়জোর কোনরকম একটা নিউজ কভারেজ ছাড়া। অন্যদিকে, টিপ ইস্যুতে তদন্ত ছাড়াই ডাইরেক্ট একশন। অসাম্প্রদায়িকতার নামে টিপ পড়া যাবে না এদেশে যেমন এমন আইন নেই, হিজাব কটাক্ষকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে এমন আইনও নেই। থাকলে পর্দানশীল নারীদের চলমান তাবুর সাথে তুলনা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেত। তবে ‘হিজাব পড়তে বাধ্য করা যাবে না’ এই আইন আছে যা প্রয়োগ করে একব্যক্তিকে ও.এস.ডি. করা হয়েছে। শুধু তাই নয় যেসব প্রতিষ্ঠান পর্দাকে ইউনিফর্ম হিসেবে চালু রাখছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে (https://m.bdnews24.com/en/detail/bangladwsh/202534)। শাখা-সিঁদুর-টিপের ব্যাপারে তা অকল্পনীয়।
তাই লড়াইটা টিপ বনাম হিজাব নয়, বরং স্রষ্টাবিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বনাম ইসলামী জীবনাদর্শের। মুসলিমদের মধ্যে দ্বীনের ব্যাপারে সচেতনতা এবং পালন করার ব্যকুলতা ধর্মনিরপেক্ষশক্তির আসল চেহারা প্রকাশ করছে। এই জীবনব্যস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠিত হবার সম্ভাবনায় সেক্যুলাররা ভীত। টিপ পড়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে বুলিংয়ের শিকার অভিনেতা সাজু খাদেমের ভাষায় এই উদ্বিগ্নতা ধরা পড়ে, “বাঙালির সংস্কৃতিতে নারীদের টিপ পরার রেওয়াজ আছে। বাঙালির সংস্কৃতি ধারণ করা যাবে না, এটা কে বলেছে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালিরা আজ যদি টিপ পরা নিয়ে এ পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে কদিন পর আমরা নাচতে পারব না, গাইতে পারব না, অভিনয় করতে পারব না”। তারা যেমন অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার বন্ধের কারণে কর্মহীন হবার ভয়ে ভীত, একইভাবে শাসকগোষ্ঠী ও দালাল বুদ্ধিজীবীরাও আইনতৈরীর ক্ষমতা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র হাতে চলে যাবার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন, যা তাদের লুটপাটের দরজা বন্ধ করে দিবে। নড়বড়ে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থাও ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফতের আতঙ্কে ভুগছে, যা তাদের নেতৃত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদেশে দালালদের বসিয়ে তারা যে সুবিধা ভোগ করে আসছিল তা শেষ হওয়াও এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
অসাম্প্রদায়িকতার নামে এই সাম্প্রদায়িক ব্যবস্থায় সাধারণভাবে সকলে, বিশেষ করে মুসলিমরা ভালো নেই। বিধর্মীরা পোশাকী সুবিধা ভোগ করলেও দ্রব্যমূল্য, যানজট, আর্থিক বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা মুক্ত নয়। খিলাফতের (ইসলামী রাষ্ট্র) অধীনে তারা মুসলিম নাগরিকদের মতো যেসব রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ভোগ করবে তার মধ্যে একটি হচ্ছে, তাদের ধর্ম চর্চার অধিকার। মিশরের গভর্নর আমর ইবনুল আস নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মুশরিকদের মূর্তির নাক ভঙ্গকারীকে খুঁজে শাস্তির আওতায় না আনতে পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে অভিযোগকারীকে তার নিজ নাক কেটে নেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এঅঞ্চলের মানুষ যখন হিন্দু শ্রেণীবৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল, তখন ইসলাম তাদের সামনে ন্যায়বিচার নিয়ে উপস্থিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের পর সবচেয়ে দ্রুত এঅঞ্চলে ইসলাম প্রসার লাভ করেছে। এদেশের কোনায় কোনায় রয়েছে ইসলামের ন্যায়বিচারের নিদর্শন। আমাদের পূর্বপুরুষরা পৌওলিকতা ত্যাগ করে দৃঢ়ভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলেই আমরা আজ মুসলিম হিসেবে জন্মেছি। শত জবরদস্তি আর ষড়যন্ত্রের পরও সাধারণ মুসলিমরা আজ ইসলামের পক্ষে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। আসুন ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে আমরা আমাদের অবস্থানকেও স্পষ্ট করি।
– আয়েশা হান্নান