Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 50

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

৫০ তম সংখ্যা । ২৯ মার্চ, ২০২২

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

ঢাকার যানজটসমাধান কোন পথে

সরকার পতন’ সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যের আহ্বান ফখরুলের

“দেশে বাড়ছে কোটিপতিধনী-দরিদ্রের বৈষম্যঅর্থ পাচার”

জোড় সংখ্যার গাড়ি জোড় তারিখেবিজোড় বিজোড় তারিখমেয়র আতিক

পণ্যমূল্যে এগিয়ে বাংলাদেশ

“৫ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আরও ২   বছরের জন্য অনুমোদন”

 

 

ঢাকার যানজটসমাধান কোন পথে

খবরঃ

রাজধানীতে যানজট এক নির্মম বাস্তবতা। এতে আটকা পড়ে প্রতিদিন রাস্তায় অপচয় হয় অসংখ্য কর্মঘণ্টা। এতে সাধারণের অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। উন্নতির বদলে দিনের পর দিন পরিস্থিতির অবনতিই হচ্ছে। এমনটা কেন হচ্ছে, প্রতিকারের উপায়ই বা কী তা জানতে পরিবহন বিশেষজ্ঞ, নগর পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে নিউজবাংলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক উপায় উপেক্ষা করে গণপরিবহন কমিয়ে পরিকল্পনাহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এ অবস্থায় রাস্তায় ধারণক্ষমতার বেশি গাড়ি চলছে। ফলে যানজট নিয়ন্ত্রণতো দূরের কথা, সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। (www.newsbangla24.com/news/184372)

মন্তব্যঃ

যানজটের কারণে যাত্রীদের মানসিক চাপ তৈরি, দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হওয়া এবং বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া জ্বালানী নষ্ট, পণ্য পরিবহন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ধীরগতি, এ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে রোগী মারা যাওয়ার মত ঘটনাতো রয়েছেই। অথচ জনগণের এত সমস্যা সত্ত্বেও শাসকশ্রেণীকে এ ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। উপরন্তু যানজট নিরসনের নামে তারা ‘ফ্লাইওভার’, ‘মেট্রোরেল’ কিংবা ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের’ মত ‘মহাপ্রকল্প’ হাতে নিয়েছে যার নির্মাণ কাজ এখন যানজটের আরেক কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এসব ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ ও ‘ফ্লাইওভার’ সম্পন্ন হলেও এর সুবিধা ভোগ করবে শুধুমাত্র ৮ শতাংশ ধনীলোক, কারণ ইতিমধ্যে নির্মিতব্য ফ্লাইওভারগুলোতে গণপরিবহন চলতে দেখা যায় খুব কম।

গণপরিবহন কমিয়ে পরিকল্পনাহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো, উন্নয়ন প্রকল্পের খোঁড়াখুঁড়ি, সংকুচিত রাস্তা, মূল সড়কে রিকশার আধিক্য, ফুটপাত দখল, যত্রতত্র বাস স্টপ, ট্রাফিক সিস্টেম অটোমেশন না করা, রাইড শেয়ারের মাধ্যমে মোটরসাইকেলকে গণপরিবহন হিসেবে বানানোর প্রচেষ্টা, ইত্যাদি আপাত-দৃশ্যমান কারণগুলো নিয়ে আলোচনার মাঝে বেশিরভাগ সময়েই ‘শহরে জনসংখ্যার আধিক্য’ এবং ‘সমান্তরালভাবে ক্রমবর্ধিত যানবাহনের সংখ্যার’ বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়। প্রশ্ন করা হয় না কেন ঢাকা শহরে জনগণের এত আধিক্য যেখানে গ্রামগুলো ক্রমশই শূণ্য হয়ে যাচ্ছে?

ঢাকায় যেভাবে বিভিন্ন রকম নাগরিক সুবিধাগুলো পাওয়া যায় সেভাবে অন্যান্য বিভাগীয় বা জেলা শহরগুলোতেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ভাল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় (সারাদেশের মোট ৮২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০টিই ঢাকায়), ভাল হাসপাতাল ইত্যাদির অপ্রতুলতা মানুষকে বাধ্য করছে ঢাকামুখী করতে। উপরন্তু সারাদেশের তুলনায় ঢাকাতেই প্রায় সকল ইন্ডাস্ট্রি, কর্পোরেট হাউজ, সরকারী-বেসরকারী অফিসগুলোর হেডঅফিস। ফলে কর্মসংস্থানও ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে কৃষিকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষিত হয়ে সরকারী কিংবা বেসরকারী অফিসের কেরানী হওয়ার যে স্বপ্ন আমাদেরকে দেখানো হচ্ছে তা সবাইকে বাধ্য করছে সামর্থ্য থাকলেই ঢাকায় এসে থিতু হওয়ার। উপরন্তু মঙ্গা, নদীভাঙ্গন, বন্যা কিংবা ঘুর্নিঝড়ের পর বাস্তুচ্যুত লোকজনও ঢাকামুখী হচ্ছে কর্মসংস্থানের জন্য। ফলে গার্মেন্টসকর্মী, রিক্সাচালক কিংবা দিনমজুরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্যামিতিক হারে।

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শুধুমাত্র সড়ক প্রশস্ত করা কিংবা জোড়-বিজোড় গাড়ী চালানো বা মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং কিংবা রিক্সা চালনাকে বন্ধ করে বিপুল সংখ্যক মানুষকে বেকার করাই যথেষ্ট হবে না। বরং যেসকল কারণ মানুষদেরকে শহরমুখী করেছে তা বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ উন্নয়ন, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান, প্রশাসনিক সেবা ইত্যাদির বিকেন্দ্রীকরণ। তবে যেসব শাসকদের পদক্ষেপগুলো কেবল একটি বিশেষ শ্রেণীর স্বার্থকে কেন্দ্র করে আবর্তিত তাদের দেয়া সমাধানের জন্য আর অপেক্ষা না করে আমাদের উচিত এমন ব্যবস্থা আনয়ন করা যার শাসক জনগণের ব্যাপারে উদাসীন হবেন না। বরং তিনি হবেন খলিফা উমরের মত একজন জনকল্যানমুখী মানুষ, যিনি নাগরিকদের সকল সুবিধা যেমন কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসনিক সেবা ইত্যাদিকে সমভাবে সবঅঞ্চলে ছড়িয়ে দিবেন। কারণ, ইসলাম জনগণের সঠিক দেখভালকে শাসকের জন্য শুধু দায়িত্ব হিসেবেই দেয়নি, বরং এটিকে পরকালের আল্লাহ্‌’র নিকট কঠিন জবাবদিহিতার কারণ বানিয়েছে। হযরত উমর (রা.) প্রায়শঃই বলতেন, যদি ইরাকের রাস্তায় একটি পশুও হোঁচট খেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তবে আমি ওমর ভয় করি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসিত করবেনকেন আমি রাস্তাটি পশুটির জন্য মশৃণ রাখিনি খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে ঢাকায় একজন নাগরিক যেসকল সুবিধা ভোগ করবে বান্দরবানের পাহাড়েও একজন নাগরিক একই সুবিধা ভোগ করবে। অতীতে আমরা দেখেছি খিলাফত রাষ্ট্র শুধুমাত্র মদীনা কেন্দ্রীকই ছিল না, বরং কুফা, বাগদাদ, কায়রো, আলেক্সান্দ্রীয়া, মক্কা, মসুল, আলেপ্পো, দামেস্ক, ইস্তাম্বুল ইত্যাদি বড় বড় শহরেও এর সুবিধাসমূহ ছড়িয়ে দিয়েছে। তাই, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশাসন ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সহজেই যানজট সমস্যা থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব।

–       মোহাফিজুর রহমান

 

সরকার পতনে’ সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যের আহ্বান ফখরুলের

খবরঃ

সরকার পতনে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আসুন আমরা দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। সোমবার (২১ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।… (https://www.jagonews24.com/politics/news/748082)

মন্তব্যঃ

বিএনপি মহাসচিব জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার নামে যে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন, সেটাকে ছদ্মবেশী গণতন্ত্র, বহুদলীয় গণতন্ত্র, পারিবারতান্ত্রিক গণতন্ত্র, পশ্চিমা গণতন্ত্র যে নামেই ডাকা হোক না কেন সকল প্রকার গণতন্ত্রেই সার্বভৌম ক্ষমতা শাসকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর মানুষ মাত্রই তার মধ্যে ধন-সম্পদ, খ্যাতি, ক্ষমতা, ভোগের সামগ্রী ইত্যাদি অর্জনের প্রতি প্রবল আসক্তি বিদ্যমান। শাসকরাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। ফলে সার্বভৌম ক্ষমতা হাতে পেলে সে এগুলো অর্জনে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এ কারণে গণতান্ত্রিক শাসনের বিশ্বের রোল মডেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৭৮ বছরে ৩ কোটি মানুষ হত্যা করেছে শুধুমাত্র তার নিজের হীন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। (দৈনিক যুগান্তর; ৫ ডিসেম্বর ২০১৮)। এমনকি তাদের বর্তমান খুনী প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় (বিভিন্ন সময়ে ভাইস-প্রেসিডেন্ট, সিনেটরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন থাকার সময়ে) সার্বিয়া, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়াতে সাত লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে, এই গণতান্ত্রিক শাসনের অধীনে পুরো বিশ্বজুড়ে সম্পদের অসম বন্টন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ক্রমাগত বৃদ্ধি, দুর্নীতি, মানুষে মানুষে হানাহানি, বিভেদ, বৈষম্য, বর্ণবাদ ইত্যাদি চরম আকার ধারণ করেছে। তাই, এখন প্রশ্ন হল যে শাসনব্যবস্থা পুরো বিশ্বজুড়ে অসীম ক্ষতি বয়ে নিয়ে এসেছে, তার রূপ পরিবর্তন করলে (ছদ্মবেশী গণতন্ত্র থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র) তা কিভাবে দেশের মানুষকে সকল প্রকার জুলুম থেকে মুক্তি দিবে? স্বাধীনতার পর থেকেই পশ্চিমা আশীর্বাদপুষ্ট গণতান্ত্রিক শাসকশ্রেণী এদেশে দুঃশাসনের রাজ্য কায়েম করেছে। অন্যদিকে বিরোধী দলসমূহ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের আবেগকে পুঁজি করে ক্ষমতায় গিয়ে পূর্বের সরকারের মতই দুঃশাসন কায়েম করেছে। তাই গণতন্ত্রের বিকল্প কখনোই গণতন্ত্র হতে পারে না, সেটাকে যে পোশাকেই হাজির করা হোকনা কেন। এজন্য এটি প্রতিষ্ঠার নিষ্ফল আন্দোলনে জড়িত হয়ে শ্রম-মেধা-সময়-সম্পদ ব্যয় করার কোন অর্থ হয় না।

তাই একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, একদিকে এসকল অসহ্য জুলুম থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন করা যেমন জরুরি, অন্যদিকে এই আন্দোলনটির ভিত্তিও সঠিক হওয়া জরুরী। এবং সেই সঠিক ভিত্তি কখনোই দুর্বল মানব চিন্তা দ্বারা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এটা অবশ্যই মানুষসহ পুরো মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলার) নিকট থেকে আসতে হবে। তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) নির্দেশ অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তৎকালীন চরম অধঃপতিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে একটি সঠিক ও কার্যকর আন্দোলনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে একটি আলোকিত নেতৃত্বশীল সমাজে পরিণত করেছিলেন। তিনি (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাগণ (রা.) সমাজে ইসলামের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি করে তারপর সমাজে ক্ষমতার অধিকারী অংশের (সেনাবাহিনী) নুসরাহ্‌ তথা সামরিক সহায়তায় রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। তারপর সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছিলেন। এরপর দাওয়াহ্‌ ও জিহাদের মাধ্যমে পুরোবিশ্বে সেই আহবানকে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মিথ্যা আন্দোলন বাদ দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা তথা খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমের আন্দোলনের বিকল্প নেই। ইতিহাসও সাক্ষী যে, ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে বিশ্ব মানবতা খিলাফতের আওতায় ১৪০০ বছর প্রকৃত কল্যাণ ও উন্নতি প্রত্যক্ষ করেছে। তাই আমাদের এমন সমাধান (খিলাফত) নিয়ে কাজ করতে হবে যা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এবং ঐতিহাসিকভাবে সত্য হিসেবে প্রমাণিত। সাথে সাথে এমন যেকোন সমাধানের আহ্বানের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতে হবে যা প্রকৃতপক্ষে আমাদেরকে প্রকৃত সমাধান থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।

–       মোজহিরুল ইসলাম

  

“দেশে বাড়ছে কোটিপতি, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, অর্থ পাচার”

খবরঃ

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, গত এক বছরে কোটিপতি আমানতকারী ৮ হাজারের বেশি বেড়ে ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। সুতরাং, একথা বলা যায় যে, করোনাকালে দেশে দরিদ্র্যের হার বাড়লেও ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন। ধনীরা তাদের সব অর্থ যে, দেশেই রাখেন তা নয়। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার খবর বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে। গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদনের বরাতে মানবজমিন জানায়, কেবল ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ মাত্র ৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। https://mzamin.com/article.php?mzamin=320386&cat=2)
মন্তব্যঃ

যখন বাংলাদেশ কোটিপতি এবং অতি ধনী বৃদ্ধিতে রেকর্ড গড়ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বরেকর্ড করছে; ঠিক তখন অন্যদিকের চিত্র হচ্ছে মধ্যবিত্তদের অনেকে সঞ্চয় ভেঙ্গে বা গহনা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে, বেকারত্ব ও হতাশা জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আত্মহত্যা করছে, দৈনিক উপার্জনকারী জনগোষ্ঠী অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছে এবং ক্রমেই ওএমএস ও টিসিবির লাইন দীর্ঘতর হচ্ছে। এই বিপরীতমুখী অর্থনৈতিক চিত্র পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ফল, যার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য হলো ব্যাপক জনগোষ্ঠী সুবিধাবঞ্চিত ও চরম অর্থনৈতিক বৈষম্যে পিষ্ট হবে এবং অন্যদিকে একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠী বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হবে। কারণ পুঁজিবাদের অন্তর্নিহিত নীতি-“ধনীদেরকে মোটাতাজা করলে তা চুইয়ে গরীবের উপর পড়বে অর্থাৎ ট্রিকেল ডাউন ইকোনমিক্স” তত্ত্ব সর্বদাই পুঁজিপতিদের স্বার্থে গ্রহণ করা হয়। তাদেরকে মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে সম্পদ উৎপাদন ও জিডিপি বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়, আর অন্যদিকে সম্পদের বন্টনকে মুক্তবাজারের তথাকথিত “অদৃশ্য হাত”- এর উপর ছেড়ে দেয়া হয়। মুলতঃ বাস্তবে এই “অদৃশ্য হাতই” বাংলাদেশের একটি বিশেষ শ্রেণীকে আরও বিত্তশালী হতে এবং দরিদ্রদেরকে আরও দরিদ্র হতে সাহায্য করেছে।  ২০১৮ সালে দেশে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা যখন ৬ কোটি ৩০ লাখে (দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ) পৌঁছে, তখন একই সময়ে সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান Wealth-X এর ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে অতি ধনীদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ প্রথম স্থান দখল করে। কোভিড পরিস্থিতিতেও বর্তমান অর্থনীতিতে এই দুমুখো ফলাফল সৃষ্টির ঘটনা থেমে নেই। করোনা এবং করোনা পরবর্তী সময়ে আগের ৬ কোটি ৩০ লাখ দরিদ্রের সাথে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা নতুন করে আরো ৩ কোটি যোগ হয়েছে। অথচ একই সময়ে ২০২১ সালে দেশে ১০,০০০ জন লোক কোটিপতি ক্লাবে প্রবেশ করেছে। শুধু তাই নয়, দেশের বিত্তশালী ও ধনকুবেররা বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার চোখকে ফাকি দিয়ে বিদেশে অফশোর কোম্পানী গড়ে তুলছে কিংবা পাচার করা বিপুল অর্থ বিভিন্ন বৈদেশিক বিনিয়োগ ফান্ডের মাধ্যমে আড়াল করছে। তাই খুব স্বভাবতই প্রশ্ন, ক্রমাগত আয়-বৈষম্যের ইনডেক্সে ভরপুর এই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অধীনে মানুষের অর্থনৈতিক কল্যাণ কি আদৌ সম্ভব? বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একই ফলাফল জন্ম দিচ্ছে। ২০১৭ সালে অক্সফামের রিপোর্টে ১% লোকের হাতে পৃথিবীর ৮২% সম্পদ কুক্ষিগত হওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বের অবশিষ্ট ৯৯% বা ৭ বিলিয়নেরও বেশি লোকের সম্পদ প্রতিবছর মাত্র ৩% এরও কমগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নজিরবিহীন সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ইসলাম বিশ্ববাসীর নিকট উপস্থাপন করছে পুরোপুরি একটি ভিন্ন অর্থনৈতিক মডেল। ইসলামের অনন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সম্পদ সৃষ্টি, ন্যায়সঙ্গত বন্টন ও প্রকৃত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে (বর্তমান ত্রুটিযুক্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে) সঠিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রবর্তন করবে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির মত কল্পিত “অদৃশ্য হাতের” উপর  সম্পদ বিতরণের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি অর্পণ করে কেবল সম্পদ সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করা ইসলামী ব্যবস্থা তথা খিলাফতের কাজ নয়, বরং এই ব্যবস্থা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমস্ত মৌলিক চাহিদা পুরণের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। সম্পদের ন্যায্য বিতরণ নিশ্চিত করতে শারী’আহ্‌ নির্ধারিত অন্যান্য দিক-নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের পাশাপাশি খিলাফতের ‘রাজস্ব নীতি’ সকল ধরনের পুঁজিবাদী কর (যেমন: আয়কর, ভ্যাট, আবগারি শুল্ক, ইত্যাদি) নির্মূল করবে, যা অর্থনীতিকে গতিশীল করবে এবং সত্যিকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে পরিচালিত করবে, কারণ ব্যয় ও বিনিয়োগের জন্য তখন মানুষের হাতে অধিক পরিমাণে খরচযোগ্য আয় থাকবে। এছাড়া সম্পদ পুঞ্জিভূত করে রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম হওয়ায় সম্পদশালীরা বিনিয়োগের উপায় খুঁজতে থাকবে ফলে ব্যাপক বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুফল সমাজের সকল শ্রেণীর কাছে পৌঁছাবে এবং ধনী-গরীবের বৈষম্য দূর হবে। সর্বোপরি ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধনীদের সঞ্চয়ের উপর ২.৫% হারে যাকাত আরোপ করে সম্পদকে ধনীদের হাতে কুক্ষিগত না রেখে পুরো উম্মাহ্‌’র মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া নিশ্চিত করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন: যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তশালী কেবল তাদের মধ্যে পুঞ্জীভূত না হয়” (সূরা আল-হাশর: ৭)।

        -মোহাম্মদ সিফাত   

 জোড় সংখ্যার গাড়ি জোড় তারিখেবিজোড় বিজোড় তারিখেমেয়র আতিক

খবরঃ

গাড়ির নিবন্ধন নম্বর জোড় না বিজোড়—এর ভিত্তিতে রাজধানীর রাস্তায় মালিকেরা গাড়ি নামাতে পারবেন। যেসব গাড়ির নিবন্ধন নম্বর জোড় সংখ্যার, ওই গাড়িগুলো মাসের জোড় তারিখের দিনে এবং যেসব গাড়ির নম্বর বিজোড় সংখ্যার, ওই গাড়িগুলো বিজোড় দিনে চালাতে হবে। সিটি করপোরেশনকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিলে করপোরেশন যানজট নিরসনে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির শেষ প্রান্ত বটমূল এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র এসব কথা বলেন। মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীর কোন রাস্তায় কী পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে, কোথায় বেশি যানজট হয়—এসব বিষয়ে গবেষণা করা হবে। ওই গবেষণার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ট্রাফিকব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের জন্য সুস্থ, সুন্দর ও বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/capital/জোড়-সংখ্যার-গাড়ি-জোড়-তারিখে-বেজোড়-বেজোড়-তারিখে-মেয়র-আতিক)

মন্তব্যঃ

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া গাড়িতে বাস চালকের ঘুমিয়ে যাওয়া বা জ্যামে বসে সিএনজি চালকের নখ কাটার ছবিগুলো আমাদের দেশের যানজট সমস্যার ভয়াবহতার পুরো চিত্র তুলে ধরেছে। ঢাকার যানজট কমানোর নামে একটার পর একটা মেগাপ্রকল্প (ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি) গ্রহণ করা হলেও আদতে যানজট সমস্যা নিরসনতো হয়নি, বরং কিছুদিন যাবত তাদের লোক দেখানো কসমেটিকের নিচের আসল চেহারাটা বেড়িয়ে আসছে। এখন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নিজেদের কাছে ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব নিতে চেয়ে জোড়-বিজোড় থিওরি দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন তারাই পারেন শুধু ঢাকার যানজট কমাতে। কিন্তু তারাই ঢাকার জলাবদ্ধতা কমানোর দায়িত্ব নিয়ে দিনশেষে কিছুই করতে পারেনি। এবং ঢাকা উত্তর সিটিতে তারা ব্যাপক পরিমানে ইউলুপ নির্মান করে শুধু বস্তা বস্তা টাকাই নষ্ট করেছে যানজটের সমাধান করতে পারেনি। এছাড়া মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার ও মহাখালী ফ্লাইওভার ভুল নকশায় নির্মান করে জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ করেছে। তাদের এই সকল কর্মকান্ড শুধুই লোকদেখানো এবং নিজেদের পকেটভারী করাকে বৈধতা দেয়ার পন্থা মাত্র। যেমন ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেট্রোরেল ব্যবহারকারী যাত্রী সংখ্যা হবে ঢাকার মোট যাত্রীর ১৭% (২১ মার্চ ২০২২, প্রথমআলো), তাহলে বাকি ৮৩% যাত্রীর ভাগে কোন পরিবহন? এছাড়া মেগা প্রকল্পের নামে ফ্লাইওভার বাড়লেও ঢাকায় সড়ক আছে মুল ভুমির ৭-৮% যা স্টাণ্ডার্ড সড়কের পরিমান হতে খুবই কম। এছাড়া ঢাকার যানজটের পিছনে অন্যতম সমস্যা হলো বিভিন্ন সংস্থার বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে থাকার প্রবনতা, যেমন রাজউক ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা করে, বিআরটিএ-মেট্রো ঢাকার গাড়ীর নিবন্ধন করে, ট্রাফিক বিভাগ রাস্তায় হাতের ইশারায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে কোন সংস্থার সাথে কারো সহযোগিতা না থাকার কারণে যানজট আরো প্রকট হতে শুরু করেছে। যা মুলতঃ পুঁজিবাদী একটি দৃষ্টিভঙ্গী যেখানে অধিক মুনাফার আশায় যেকোন কাজকে অনেকগুলো কোম্পানীর অধীনে করানো হয়, ফলে কোম্পানীগুলো নিজ নিজ মুনাফা ও সুনামের জন্য জনগণের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য জনবিচ্ছিন্ন প্রকল্প গ্রহন করে; যেমনটি আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি এবং যার ফলস্বরুপ যানজটের মত ছোট একটি বিষয়ের সমাধান এখনো হচ্ছেনা।

অন্যদিকে ইসলামে, নগর পরিকল্পনার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। ইরাকের বাগদাদ, মিশরের কায়রো বা তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মত শহরগুলোতে আজও লক্ষ লক্ষ মানুষ ভ্রমণ করে এই শহরগুলোর সোন্দর্য্য অবলোকন করার জন্য। কারণ এই শহরগুলো খিলাফতের অধীনে পরিচালিত হয়েছিল এবং তৎকালীন সময়ের সবধরনের নাগরিক সুবিধা উপস্থিত ছিল। ইসলামী সভ্যতায় জনগণের জন্য আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব শহর তৈরিতে খলিফা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এবং জনগণের নিকট দায়বদ্ধ কারণ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, ইমাম (খলিফাহলেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল (বুখারী)। তাই নব্যুয়তের আদলে আসন্ন দ্বিতীয় খিলাফত ব্যবস্থায় খলিফা জনগণের জন্য বসবাসযোগ্য শহর নির্মাণ করবেন আর ঢাকার মত শহরগুলোকে সংস্কার করবেন। মফস্বল শহরগুলোতে সব প্রকারের নাগরিক সুবিধা (কর্মক্ষেত্র, মানসম্মত শিক্ষা, হাসপাতাল, যোগাযোগ, বাজার ইত্যাদি) বৃদ্ধি করে ঢাকার উপর মানুষের চাপ কমাবেন, ফলে ঢাকাসহ সারাদেশে সুষম শহরব্যবস্থা তৈরি হবে। যেখানে বর্তমান ঢাকার মত যানজট, বায়ুদূষণ, নদীদূষণ, সরুরাস্তা, অত্যাধিক মানুষের চাপ, অপর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধার মত সমস্যাগুলো থাকবে না, ইনশাআল্লাহ্‌।

–            –ইরফান আবিদ

 

পণ্যমূল্যে এগিয়ে বাংলাদেশ

খবরঃ

সম্প্রতি পলিসি থিঙ্কট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ এক সেমিনারে বলেছে, নিত্যপণ্য মূল্যে প্রতিযোগী এবং উন্নত দেশগুলোকে ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ। তারা বলেছে, ভোজ্যতেল, ডিম ও পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম ইউরোপ-আমেরিকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সিপিডির অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর অন্যতম কারণ সুশাসনের অভাব ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করার পাশাপাশি সিপিডি বলেছে মানুষের কাছে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় পণ্য সরবরাহ বাড়াতে। একই সাথে আগামী দিনের সম্ভাব্য বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা সামলাতে তারা আরও বলেছে আমদানি করে হলেও খাদ্য মজুত বাড়াতে। (https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/533063/পণ্যমূল্যে-এগিয়ে-বাংলাদেশ)

মন্তব্যঃ

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নিত্যপণ্যের বাজার অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান, কারণ এখান থেকে পুঁজিপতিরা ও সরকার খুব সহজে টাকা টেনে তুলতে পারে। এই টাকা টানার গ্রীড লাইনটা পশ্চিমাদেশসমূহ পর্যন্ত সংযুক্ত, যার সুবিধাভোগী পশ্চিমা শাসক-পুঁজিপতিরা এবং একাজে তারা ব্যবহার করে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ নানা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। পশ্চিমারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে আমাদের নিত্যপণ্যের বাজারকে ‘আমদানি নির্ভর’ করে রাখতে এবং ‘কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে ভুর্তকি তুলে নিতে’ আমাদের সরকারগুলোর উপর চাপ দেয়। ফলে এই রক্তচোষা ব্যবস্থাকে ধরে রেখে যতই ‘সুশাসন’ প্রতিষ্ঠা, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ’ করা হোক না কেন নিত্যপণ্যের দাম কখনই সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণে আসবে না। অন্যদিকে পশ্চিমারা যেহেতু তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের বাজার থেকে নব্য-উপনিবেশবাদী ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে সহজেই অর্থ তুলে নিতে পারে, সেহেতু তাদের নিত্যপণ্যের বাজারে ভ্যাট ও আমদানি শুল্কসহ সরাসরি ট্যাক্স কম। এছাড়া এসব দেশের সরকার কৃষি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের শিল্প উৎপাদনে ব্যাপক ভর্তুকি প্রদান করে, যদিও তারা আমাদেরকে ভর্তুকি তুলে নিতে বলে। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবে সেখানে নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলক কম। তাছাড়া আমাদের দেশের নিত্যপণ্যের বাজার টাকা লুটের তুলনামূলক সহজ একটি স্থান, ফলে সরকার নিজেদের আয় বাড়াতে, তার সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিবাদীগোষ্ঠী এবং তার অন্তর্জাতিক অংশীদারদের হিস্যা দিতে দিতে আমাদের নিত্যপণ্যের বাজারকে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছে যে তা আজ পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়েছে।

থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলেও মনে হচ্ছে সিপিডি এই বিষয়ে চিন্তার গভীরে না গিয়ে কিছু গৎবাঁধা কথা যেমন সুশাসন, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সুরক্ষা বলয় বাড়ানো ইত্যাদি বলেছে। সমাধানের জন্য দেয়া তাদের পরামর্শগুলো দেখলে মনে হচ্ছে তারা সমস্যাটির কসমেটিক চিকিৎসা করে ইচ্ছাকৃতভাবে নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধির মূল কারণ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আড়ালে রাখতে চাচ্ছে। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হয় যখন আমরা দেখি তারা নিত্যপণ্য উৎপাদনে অত্মনির্ভরশীলতার উপর জোর দেয়ার বদলে আমদানী বাড়াতে বলে! অবশ্য এধরণের অবস্থান নেয়া সিপিডির মত প্রতিষ্ঠানের জন্য অস্বাভাবিক নয়, কারণ তারাও মূলত বিভিন্ন বিদেশী সরকার ও প্রতিষ্ঠানের অর্থে পরিচালিত।

শারীয়াহ্‌গতভাবে রাষ্ট্রের ভিতরে বা বাইরে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান খলিফার উপর ইসলাম বহির্ভুত কোন বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। খলিফা যদি এই ধরণের প্রভাবমুক্ত না থাকেন তাহলে তিনি খলিফা পদেই থাকতে পারবেন না। খলিফার জবাবদিহিতা কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা, নাগরিক ও উম্মাহ্‌’র কাছে। ফলে খলিফা কখনই নিজের বা অন্যকোন প্রভাবশালী দেশী-বিদেশী গোষ্ঠীর জন্য সুবিধা দিতে নিত্যপণ্যের বাজারকে ব্যবহার করবেন না। ফলে তিনি ব্যবসায় মনোপলি, মজুতদারী, সিন্ডিকেট, ভেজাল দেয়া ও অতিরিক্ত মুনাফা করা ইত্যাদি বন্ধ করবেন। তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সকল ধরণের উপনিবেশবাদী আগ্রাসন থেকে জনগণকে মুক্ত রাখবেন ফলে তিনি কারও কোন শর্তযুক্ত ঋণ বা সাহায্য সহযোগিতার মুখাপেক্ষি থাকবেন না। তিনি দ্রুততম সময়ে দেশে নিত্যপণ্যের উৎপাদন বাড়াবেন এবং দেশকে আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। ফলে খিলাফতের নিত্যপণ্যের বাজার হবে আন্তর্জাতিক প্রভাবমুক্ত।

–                   –মোহাম্মদ তালহা হোসেন

 

“৫ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র আরও ২ বছরের জন্য অনুমোদন”

সংবাদঃ

সরকারের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়া পাঁচটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আরও দুই বছরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আরও দুই বছর বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।…. মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, খুলনা পাওয়া কোম্পানি ইউনিট-২, ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড, সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেড থেকে আরও দুই বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৬ টাকা ৪০ পয়সা। যা এর আগের পাঁচ বছর ছিল ১৭ টাকা ৫৩ পয়সা।… জিল্লুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৪৫৭ মেগাওয়াট। এই বিদ্যুতের জন্য সরকারকে ৫ হাজার ২০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। (https://samakal.com/economics/article/2203102878/ -কুইক-রেন্টাল-বিদ্যুৎ-কেন্দ্র-আরও-২-বছরের-জন্য-অনুমোদন)

মন্তব্যঃ

বর্তমান শাসকগোষ্ঠী একদিকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিচ্ছে আর অন্যদিকে জরুরী বিদ্যুৎ ঘাটতি মিটানোর নামে ব্যয়বহুল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সাথে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করে এদেশের জনগণের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। এ সরকারের আমলে যে কয়টি খাতে হরিলুট হয়েছে, তার মধ্যে বিদ্যুৎখাত অন্যতম। পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য হল তারা সংকটের সমাধান করে না বরং তারা সঙ্কটকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করে কিংবা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। বিদ্যুৎ নিয়ে ঠিক এই কাজটিই করেছে সরকার। একদিকে, বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের তুষ্ট করার বৃহৎ প্রকল্পগুলো নামে বৃহৎ দুর্নীতিতো চলছেই, অন্যদিকে দেশীয় পুঁজিপতিগোষ্ঠীকে তুষ্ট করতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যবস্থা করেছে। তারা ভেবেছে, বিদ্যুতের উৎপাদন যদি বাড়ানো যায় তাহলে বিদ্যুতের দাম বা এখাতে কত টাকা কোথায় কিভাবে ব্যয় হল জনগণ হয়তো সে খোঁজ-খবর রাখবে না।

কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে আইনি বৈধতা দেবার জন্য সরকার ২০১০ সালে বিশেষ বিধান রেখে সাময়িক একটি আইন করেছিল। কয়েক দফা আইনের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) বিল-২০২১’ আইনটির মেয়াদ আরও পাঁচ বছর বাড়ানো হয়। (সূত্রঃ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে আরও ৫ বছর, বিল পাস | প্রথম আলো ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১) দেখা যাচ্ছে সরকারের ক্ষমতার মেয়াদের সাথে কুইক রেন্টাল প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির একটা সংযোগ আছে। তারা কেবল তড়িঘড়ি করে উচ্চমূল্যে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছে কিন্তু জনগণের বিদ্যুৎ সঙ্কট সমাধানে তারা মোটেই আন্তরিক নয়। অন্যথায়, তারা চিন্তা করত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কতটা দুর্বিষহ করে তুলবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এবং আরও দুঃখজনক বিষয় যে তারা কেবল পুঁজিপতিদের স্বার্থে কুইক রেন্টালের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির আয়োজন করেছে, কিন্তু সেই বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় বিতরণ নেটওয়ার্ককে প্রসারিত করার কথা তাদের মাথাতেই আনেনি। (দেখুনঃ বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও বিতরণ ব্যবস্থার অভাবে তা সবাই পাচ্ছেন নাবিবিসি বাংলা, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১) তাই বলা যায় বর্তমান পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থায় এদেশে বিদ্যুৎ নিয়ে ব্যবসা হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি হয়েছে কিন্তু জনগণের সংকটের সমাধান আজও হয়নি।

প্রকৃতপক্ষে, পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থা ও শাসকগোষ্ঠী দিয়ে জনগণের সঙ্কটের সমাধান আসবে না। তারা সঙ্কটকে পুঁজি করে ব্যবসা করবে, রাজনীতি করবে। একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই পারবে জনগণকে এসব সঙ্কট থেকে উদ্ধার করতে। কারণ খিলাফত ব্যবস্থায় মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী পুঁজির মালিকদের কোন প্রভাব এবং আধিপত্য থাকবে না। খিলাফত শাসনব্যবস্থা ফিরে আসবে পুঁজিপতিদের স্বার্থে চালিত বর্তমান ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং তা পরিচালিত হবে শুধু তাকওয়ার (আল্লাহ্‌ভীতি) মাধ্যমে। আল্লাহ্‌প্রদত্ত এই ব্যবস্থা প্রকৃতঅর্থেই জনকল্যাণ নিশ্চিত করবে, বিদ্যুৎখাতকে গণমালিকানাধীন সম্পদ বলে বিবেচনা করবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন জনগণ তিনটি বিষয়ে অংশীদার: পানিচারণভূমি ও আগুন” (ইবনে মাজাহ্‌), অর্থাৎ, বিদ্যুৎ জনগণের সম্পদ, খলিফা জনগণের অভিভাবক হিসেবে এটাকে কেবল তদারকি করবেন, বিদ্যুৎ নিয়ে ব্যবসা করবেন না বা এটাকে ব্যক্তি মালিকানায় ছেড়ে দিতে পারবেন না। জনগণকে শুধুমাত্র এর সরবরাহ খরচ বহন করতে হবে, কারো অতিলোভী মুনাফার যোগান দিতে উচ্চমূল্য পরিশোধ করতে হবে না।

       কামাল আবু যায়েদ