Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 44

Weekly

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা

৪৪ তম সংখ্যা ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

 

এই সংখ্যায় থাকছে:

 

সিনহা হত্যার রায়ঃ ওসি প্রদীপ লিয়াকতের ফাঁসির আদেশ

কোনো অজুহাত নয় স্কুলগুলো খোলা রাখুন শিশুরা অপেক্ষায় থাকতে পারে নাইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক

ভারতের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ৩০০ কোটি রুপি

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আসছে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা

“হলুদ জ্যাকেটধারীদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ রাজধানীর মানুষ”

বাতাস বিক্রি করে তিতাস কামাচ্ছে কোটি কোটি টাকা: বিটিএমএ

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষার্থীরা কী খাচ্ছেন, নজর নেই কারও

চুরিছিনতাই বেড়েছে, নিয়ন্ত্রণে টহলে গুরুত্ব ডিএমপির

আত্মহত্যা: পরিবারের সবার কাছে ‘হিরো’ ছিলেন ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করা মহসিন খান

 

 

সিনহা হত্যার রায়ঃ ওসি প্রদীপ লিয়াকতের ফাঁসির আদেশ

খবরঃ

কক্সবাজারের বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল গতকাল বিকালে জনাকীর্ণ আদালতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘প্রথম থেকে আমরা ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের সর্বোচ্চ সাজা দাবী করেছি। সেটি আজকের রায়ে দেখেছি, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে। (https://www.bd-pratidin.com/first-page/2022/02/01/736454)
মন্তব্যঃ

মেজর সিনহা হত্যার রায়কে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করার সুযোগ নেই। এই রায়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর কতিপয় নগণ্য কর্মকর্তাকে বলির পাঠা বানিয়ে গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের উৎসমূলকে কৌশলে আড়াল করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে হাতিয়ার করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুম-খুনের পরিবেশ সৃষ্টি করে যুলুমের সাম্রাজ্য রক্ষা করা ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। কারণ আইন প্রণয়নের সার্বভৌম ক্ষমতাই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীকে একেকটি দানবে পরিণত করে যারা প্রতিনিয়ত জনগণের উপর নিত্যনতুন খড়গহস্ত চাপানোর মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকে। তাই শাসকগোষ্ঠী তাদের কতিপয় বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ডদেরকে নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে জনগণের ক্ষোভ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় এবং নির্দেশেই ওসি প্রদীপদের মত খুনি তৈরি হয়। এরপর শাসকগোষ্ঠী এই খুনি গংদের তাদের খুনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে হাসিনা সরকার ওসি প্রদীপকে তার “ক্রসফায়ার” ও “বন্দুকযুদ্ধে” সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সর্বোচ্চ পুলিশ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বি.পি.এম)”-এ ভূষিত করেছিল, যে তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে টেকনাফে ২০৪ জন মানুষকে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করেছিল। ফলে স্বভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে ক্রসফায়ারের নির্দেশদাতা ওসি প্রদীপের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কি তার খুনের সমান অংশীদার নয়? তাই আমরা লক্ষ্য করলাম মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যার পর ওসি প্রদীপ কিভাবে তৎক্ষণাৎ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক আইনী ভাষায় রিপোর্ট লিখতে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু পরিস্থিতি যখন অনুকূলের বাইরে চলে যায় তখন প্রদীপের মত কতিপয় নগণ্য পুলিশ সদস্যদেরকে বলির পাঠা বানিয়ে শাসকগোষ্ঠী নিজেদের এবং নিরাপত্তা বাহিনীতে তাদের দুর্বৃত্তায়নের সহযোগী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করে নিজেদের যুলুমের সাম্রাজ্য রক্ষায় মোটেও কালক্ষেপণ করে না। কার্যত, নিরাপত্তা বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের উপর সমস্ত দায়ভাড় চাপিয়ে দেয়া, নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কার কিংবা কালেভদ্রে ওসি প্রদীপের মত নগণ্য পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার অর্থ হচ্ছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুম-খুনের উৎসমূল বর্তমান যুলুমের শাসনব্যবস্থা থেকে জনগণের মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা।

অন্যদিকে খিলাফত রাষ্ট্রে বর্তমান পুলিশী রাষ্ট্রের মতো নাগরিকদের পবিত্রতা লঙ্ঘন, কিংবা তাদের মর্যাদা ও সম্মানহানী করা, রিমান্ডের নামে কোন মানুষকে নির্যাতন বা কারো অনিষ্ট করার সুযোগ থাকবে না – গুম, ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডতো দূরের বিষয়। অপরাধ প্রমাণের পূর্বে কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া ইসলামী শারীয়াহ্‌ পরিপন্থী। কুর‘আন-সুন্নাহর আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ১৩ তে বলা হয়েছে, “প্রতিটি ব্যক্তি নিরপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তার অপরাধ প্রমাণিত হয় আদালতের রায় ব্যতীত কোন ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া যাবে না কাউকে নির্যাতন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ; এবং যে নির্যাতন করবে তাকে শাস্তি পেতে হবেখিলাফত রাষ্ট্রের পুলিশসহ সমস্ত আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যগণ যেকোন ধরনের ক্ষতি ও হুমকির হাত থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা এবং তাদের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবেন, যা বর্তমান মুসলিম ভূখন্ডসমূহের নিপীড়নকারী পুলিশ বাহিনীর কর্মকান্ডের সম্পূর্ণ বিপরীত।

মোহাম্মদ সিফাত

কোনো অজুহাত নয় স্কুলগুলো খোলা রাখুন শিশুরা অপেক্ষায় থাকতে পারে নাইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোরে

খবরঃ

করোনাভাইরাস ও এর নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে সবদেশের সরকারকে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিশুদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক প্রধান রবার্ট জেনকিন্স বলেন, ‘বৈশ্বিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিঘ্নের দুই বছর পূর্ণ হবে আগামী মার্চে। খুব সহজভাবে বললে, আমরা শিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রায় অপূরণীয় মাত্রার ক্ষতি প্রত্যক্ষ করছি। (https://www.bdnews24us.com/125286/index.html)

মন্তব্যঃ

          কোভিড ১৯ সংক্রমণ মোকাবেলায় বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠী অন্ধের মতো তাদের পশ্চিমা প্রভুদের অনুসরণ করছে। ওমিক্রন মোকাবেলায় ইউরোপ-আমেরিকার মতো আবারো দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধের ঘোষণার মধ্যেই ইউনিসেফ এই আহ্বান করছে। এছাড়া কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল এডুকেশন ডিরেক্টর বলেছে, স্কুল পুনরায় খোলার ফলে করোনভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে এবং স্কুলগুলো করোনার কারণে “নিরাপদ জায়গা” নয় বলে কোন প্রমাণও নেই (“No relation between opening schools and Covid spike”, .the daily star, Jan 16, 2022)। খোদ পশ্চিমা দেশের স্কুল শিক্ষক এবং অভিভাবকরা তাদের সরকারের সিদ্ধান্তসমুহের বিষয়ে চরম অসন্তুষ্ট এবং আস্থাহীনতায় ভুগছে। Omicron বৃদ্ধির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আবারো দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা কীভাবে দেশের ছাত্র এবং শিক্ষকদের রক্ষা করবে সে সম্পর্কে বিতর্ক আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। মোট কথা, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডের ফলে খোদ পশ্চিমা বিশ্ব আজ আস্থাহীনতায় ভুগছে। আর মুসলিম ভূখণ্ডসমূহের দালাল শাসকেরা তাদের প্রভুদের অন্ধ অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের স্কুলের কোমলমতি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ধ্বংস করে দিচ্ছে।

          মূল বিষয় হল পশ্চিমা সভ্যতায় আজ আমরা যে সার্বিক নৈরাজ্য ও তাদের জনগণের ভেতর আস্থাহীনতা দেখতে পাচ্ছি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত হওয়া স্বত্বেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখছি এর মূল কারণ হল “ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ”, তথা সমাজ পরিচালনায় অসীম সত্তা সৃষ্টিকর্তাকে সরিয়ে সীমাবদ্ধ জীব মানুষ নিজেই সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়া। করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব তথাকথিত উন্নত পশ্চিমা বিশ্বের এই মৌলিক চিন্তার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের “জীবন দর্শন” হল – সব সিদ্ধান্তের ভিত্তি হবে “trial and error”। কারণ যেহেতু মানুষের ক্ষমতা সীমিত এবং তাদের নিজস্ব চাহিদা ও তাদের বিদ্যমান পরিস্থিতির দ্বারা তারা প্রভাবিত হয়, তাই তারা সর্বদাই “experiments of living” এর ভিত্তিতে অগ্রসর হতে চায়। পশ্চিমা সভ্যতার ১৯ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী দার্শনিক John Stuart Mill তাই বলেছিলঃ মানবজাতি যেহেতু ত্রুটিপূর্ণ (imperfect) তাই এটা যেমন উপকারি যে (সমাজে) বিভিন্ন মতামত থাকবে, ঠিক তেমনি সেখানে জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা (experiment) থাকবে (On Liberty, 1859) এখানে ধারণা হচ্ছে, মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি কিভাবে করা যায় তা খুঁজে বের করার জন্য মানুষের জীবনযাত্রার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা (trial and error) করতে হবে আর সীমাবদ্ধ মনের পরীক্ষা নিরিক্ষার পরিণতি সার্বিক নৈরাজ্য পতনের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য, যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি পশ্চিমা সভ্যতায়

সীমিত মানব মন দ্বারা উদ্ভাবিত সিস্টেমের বিপরীতে ইসলামী শারীয়াহ্মানবজাতির স্রষ্টার কাছ থেকে এসেছে, যিনি এই ধরনের সকল সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে ভাষাগতভাবে, শারীয়াহ্শব্দের অর্থ হল পানির অন্তহীন উৎস যেখান থেকে মানুষ তাদের তৃষ্ণা নিবারণ করে শারীয়াহ্মানুষ এবং আল্লাহ্‌’ মধ্যে সম্পর্ক, মানুষ এবং তার নিজের মধ্যকার এবং মানুষ এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে এটি নৈতিকতা, আচারঅনুষ্ঠান, অর্থনীতি বা রাজনীতি সম্পর্কিত হোক না কেন মানব জীবনের প্রতিটি দিককে কভার করে পানি যেমন জীবনের জন্য অত্যাবশ্যক, তেমনি মানবতার পথপ্রদর্শনের জন্য শারীয়াহ্অপরিহার্য এই অর্থটি বর্তমান কোভিড ১৯ প্রেক্ষাপটে শারীয়াহ্শব্দের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ অসীম সত্তা আল্লাহ্সেই ১৪০০ বছর আগেই শারিয়াহ্‌’ দ্বারা সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন কিভাবে মহামারি মোকাবেলা করতে হয়, তাই খিলাফত শাসনব্যবস্থার অধীনে অতীতে কখনই কোন “trial and error” এর মাধ্যমে সংকট মোকাবেলার প্রয়োজন পড়েনি আর ভবিষ্যতেও পরবে না, বিইযনিল্লাহ্‌‌

 

ইমাদুল আমীন

ভারতের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ ৩০০ কোটি রুপি

খবরঃ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের ঘোষিত বাজেটে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য আগের মতো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবছরের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য অর্থ সাহায্যের পরিমাণে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি রুপি করা হয়েছে মঙ্গলবার ভারতের পার্লামেন্টে ২০২২-২৩ সালের বাজেটে পেশ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এই বাজেটে বাংলাদেশের জন্য অর্থ সাহায্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০০ কোটি রুপি। গত বছরের বাজেটে প্রথমে বাংলাদেশের জন্য ২০০ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়। (https://www.banglatribune.com/foreign/india/726457/ভারতেরবাজেটেবাংলাদেশেরজন্যবরাদ্দ৩০০কোটিরুপি)

মন্তব্যঃ

ভারত সরকার ১৯৬৪ সাল থেকে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নেপাল, ভুটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো এবং বিশ্বের আরও কিছু ছোট দেশগুলোকে অর্থ সাহায্য দিয়ে আসছে। অর্থ সাহায্য বা দান গ্রহণকারী দেশে অবস্থিত ভারতীয় দুতাবাসের মাধ্যমে এই অর্থ সাহায্য প্রদান করা হয়। এই দানের মূল উদ্দেশ্য দান গ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোতে ভারতের দালালগোষ্ঠী তৈরি করা যারা ঐ সকল রাষ্ট্রগুলোতে ভারতীয় স্বার্থরক্ষার মুখপাত্র হিসাবে কাজ করবে। এই দেশের শাসকগোষ্ঠী এতটাই নির্লজ্জ ও র্নিবোধ যে তারা মাত্র ২০০-৩০০ কোটি রুপির বিনিময়ে এদেশে ভারতের মত একটি শত্রু রাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। জ্বালানী খাত থেকে শুরু করে বন্দর, হাইওয়েসহ আমাদের কৌশলগত সম্পদসমূহ ভারতের হাতে তুলে দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আমাদের টাকা দিয়ে ভারতকে রেল পরিবহনের সুবিধা দিতে আমাদের শত শত হেক্টর ফসলি জমি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। আমাদের কৌশলগত সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়া হচ্ছে যদিও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের শক্রতা এবং শঠতা দিবালোকের মত পরিষ্কার। (বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত: বাংলাদেশিদের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আরও বেড়েছে ছয় মাসে, বিএসএফ বলছে আক্রান্ত হলে গুলি চলে, বিবিসি বাংলা, জুলাই ১, ২০২০)।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, মুমিনগণ যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে যারা এরূপ করবে আল্লাহ্‌’ সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না (সূরা আলি-ইমরান: আয়াত ২৮)। কাফিরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা, তাদের সাহায্য কামনা করা, তাদের উপর নির্ভর করা, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা, এবং মুমিন ও তাদের মধ্যে ভালবাসা থাকার ক্ষেত্রে এই আয়াত সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা (decisive prohibition) বহন করছে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মুশরিক রাষ্ট্র থেকে এই সকল সাহায্য গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, আমরা মুশরিকদের কাছ থেকে সাহায্য চাইনা[ইবন মাজা] কারণ এই সকল সাহায্য মুশরিকদের মুসলিমদের উপর আধিপত্য বিস্তার করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাসুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মুশরিকদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহন করলেও কোন মুশরিক রাষ্ট্র বা গোত্র থেকে সাহায্য গ্রহন করেননি। তিনি (সাঃ) ‘কুযমান’ নামক মুশরিকের কাছ থেকে উহুদের যুদ্ধে সাহায্য নিয়েছিলেন, কিন্তু গোত্র পর্যায়ে কোন মুশরিক গোত্রের সাহায্য গ্রহন করেননি। মুমিনদের উপর কফিরদের এই আধিপত্য হারাম। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, এবং আল্লাহ্কখনই মুমিনদের উপর কাফিরদের (কর্তৃত্বের) কোন পথ রাখবেন না(সূরা আন-নিসা: ১৪১)।

 

সুতরাং, আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র শত্রুরাষ্ট্র ভারতের সাথে ভিক্ষা/দান গ্রহণসহ সকল প্রকার চুক্তি বাতিল করবে, কারণ প্রকৃতিগতভাবে ভারত একটি ইসলামী ভূমি যা মুশরিকরা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। এই রাষ্ট্রের সাথে ভিক্ষা গ্রহণ বা অন্যায্য বাণিজ্যিক সম্পর্কও থাকতে পারে না। খলিফার প্রধান কর্তব্যই হবে দখলকৃত এই ভূ-খন্ডকে খিলাফত রাষ্ট্রের সাথে একিভূত করা। খলিফা সেই দায়িত্ব পালন করতে মুসলিম সেনাবাহিনীকে প্রেরণ করে ভারতের শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে ইসলামের ন্যায়ভিত্তিক শাসনকে এই অঞ্চলসহ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিবেন।

মো: সিরাজুল ইসলাম

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আসছে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা

খবরঃ

শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে একটি কাঠামোয় ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পর্যবেক্ষণ নিয়ে শিক্ষা আইনের যে খসড়া পুনর্গঠন করা হচ্ছে তাতে কওমি থাকছে গুরুত্বের সঙ্গে। আইন সম্পন্ন হলে কওমি শিক্ষা পুরোপুরি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। (https://www.banglatribune.com/725857)

মন্তব্যঃ

দেশের ইসলামী শিক্ষা বাদে অন্যান্য শিক্ষামাধ্যমকে ইতোমধ্যে পশ্চিমা ধাচে সাজিয়ে বিপথগামী করে ফেলা হয়েছে, যাতে সেখান থেকে এমন এক প্রজন্ম বের হয় যারা পশ্চিমাদের অনুসরণকে জীবনের স্বার্থকতা মনে করে। উপরন্তু যেন তারা ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি অজ্ঞ ও বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠে এবং ইসলাম বলতে বুঝে শুধু চার বিয়ে, পর্দা মানে নারীর অসম্মান, প্রতিক্রিয়াশীলতা, পশ্চাদপদতা, বিজ্ঞানবিরোধিতা, মৌলবাদ, জংগিবাদ ইত্যাদি। ইসলামী শিক্ষার জন্য এরকম প্রতিকূল পরিবেশে শুধুমাত্র কওমি মাদ্রাসাসহ অন্যান্য ইসলামী শিক্ষামাধ্যমগুলোর মাধ্যমে ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে এদেশের মুসলিমদের মাঝে বাচিয়ে রাখার নিরন্তর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ফলে এটি দিবালোকের মত পরিষ্কার যে, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণে এনে সরকার মূলত কওমি শিক্ষাধারাকে ধ্বংসের পায়তারা করছে, যাতে নূন্যতম ইসলামী শিক্ষার যে আলো সমাজে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তার পথও বন্ধ হয়ে যায়। এবং পাশাপাশি সিলেবাসের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হতে উৎসারিত দূষিত চিন্তাসমূহ প্রবেশ করানো যায়।

ইসলামী শিক্ষামাধ্যম নিয়ে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের দুশ্চিন্তার আরেকটি কারণ হচ্ছে, সরকারের যেকোন ইসলামবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে এই ঘরানার আলেম ও ছাত্রদের বিভিন্ন আন্দোলন। উদাহরণস্বরুপ, নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে ইসলাম নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ১৩দফা দাবী তুলে ২০১৩ সালের ৫মে শাপলা চত্বরের আন্দোলন, ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ফলে সরকার ভীত হয়ে ইসলামী ধারার শিক্ষাব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টা এবং আলেমদের রাজনীতিবিমুখ করার পরিকল্পনা করছে। তবে সরকারের এসকল প্রচেষ্টাকে শুধুমাত্র ইসলামী শিক্ষার বিরোধীতা হিসেবে দেখলে আমরা ভুল করব। বরং আমরা যদি বড় ক্যানভাসে চিন্তা করি তাহলে দেখব পশ্চিমাদের তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর আড়ালে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের স্থানীয় বাস্তবায়ন হচ্ছে সরকারের এই ইসলামবিরোধী কার্যক্রম।

বিভিন্ন সময় করা আন্দোলনগুলো ইস্যুভিত্তিক হওয়ায় ইস্যুর সমাপ্তির সাথে আন্দোলনগুলোও স্তিমিত হয়ে গেছে। পরবর্তীতে আলেমদের উপর নেমে এসেছে নানা নির্যাতন, জেল-জুলুমের মত বিষয়গুলো। এমনকি ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করা থেকে শুরু করে ফেসবুক-ইউটিউবেও আলেমদের আলোচনাকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নামে আলেম-ওলামাদেরকে অমুসলিমদের সাথে একই মঞ্চে উপবিষ্ট হতে বাধ্য করা হয়েছে। উপরন্তু আলেমদের বাধ্য করা হয়েছে ‘শোকরানা মাহফিল’ করা এবং শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ আখ্যা দিতে। এরকম বাস্তবতায় আলেম ও ছাত্ররা যদি শুধুমাত্র সরকারের ইসলামী শিক্ষাবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেই ক্ষান্ত হয়ে যান তাহলে এই অবস্থার কোন উন্নতি হবে না। বরং তারা একটার পর একটা ইস্যু নিয়ে এসে আলেম-ওলামাদেরকে বিব্রত করার চেষ্টা করবে। যেমন: আমরা দেখলাম ২০২১ সালের আগস্টে সরকার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধর্মীয় স্থাপনা তৈরীতে সরকারের অনুমতি নেওয়ার নীতিমালা প্রবর্তনের পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে নতুন মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পথও বাধাগ্রস্ত হবে। এখন এই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আবার নতুন করে আরেকটি ধাক্কা দেওয়া হল। মূলত এই সেকুলার ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে যে তারা বিভিন্ন রকম ইস্যু দিয়ে জনগণকে ব্যস্ত রাখবে। বরং এর থেকে মুক্তির চিরস্থায়ী উপায় হচ্ছে এই সেকুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমূলে অপসারণ করা এবং এই উদ্দেশ্যে ইসলাম তথা খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য হিযবুত তাহ্‌রীর-এর সাথে রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগদান করা।

মো. হাফিজুর রহমান

 

 

“হলুদ জ্যাকেটধারীদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ রাজধানীর মানুষ”

খবরঃ

সিটি ট্যাক্সের নামে প্রকাশ্য চাঁদাবাজিতে অস্থির হয়ে উঠেছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। এখন প্রকাশ্যেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে এই চাঁদাবাজি চলছে। এমনকি রিকশা-ভ্যান থামিয়েও পথচারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। সিটি করপোরেশনের সিল লাগানো জ্যাকেট পরে এই চাঁদা আদায় করা হলেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এভাবে চাঁদা আদায় অবৈধ। … (https://www.dailynayadiganta.com/first-page/641209/-হলুদ-জ্যাকেটধারীদের-চাঁদাবাজিতে-অতিষ্ঠ-রাজধানীর-মানুষ)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কে নানা অজুহাতে চাঁদাবাজি নতুন কোনো বিষয় নয়, কিংবা কোনো গোপন বিষয়ও নয়। শুধুমাত্র মহাসড়কগুলোতে সারাদেশে ২১৫ টি সংস্থা ও সংগঠন মিলে বছরে ৮৭ কোটি টাকা চাঁদা তুলছে। আর বিভিন্ন সড়কে, টার্মিনালে, সেতুতে চাঁদা আদায়েরতো কোনো সীমা-পরিসীমাই নেই। সিটি ট্যাক্স, পার্কিং ট্যাক্স, টোল ইত্যাদি বিভিন্ন নামে চলছে এই চাঁদাবাজির মহোৎসব। এইসব চাঁদাবাজির কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে দেখা যায় যে যারা চাঁদা তোলে তাদের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য থাকে যে, নিয়ম মেনেই নাকি তারা চাঁদা আদায় করছে, কেউ অনিয়ম করলে তারা নাকি কঠোর ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে! কিন্তু কেউ কখনওই এর প্রতিকারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না, কারণ এই চাঁদার টাকায় গোপনে পকেট ভারি হয় পুলিশ, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রভাবশালী নেতা ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের। বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলে চাঁদাবাজদের চেহারার পরিবর্তন হয় মাত্র, তারা কখনোই আইনের আওতায় আসে না। এর কারণ হলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারায় ক্ষমতা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য হলো, যা খুশি তাই করার স্বাধীনতা এবং তারপর এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে জিম্মি করে বিভিন্ন উপায়ে লুটপাটে নিমজ্জিত হয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া। দশকের পর দশক ধরে এই চিত্র চলে আসছে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীরা পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় জনগণকে জিম্মি করে এসব করছে। তাদেরকে এই সুযোগ দেওয়া হয় কারণ এই চাঁদাবাজেরাই স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীনদের আধিপত্য বিস্তারে খুঁটি হিসেবে কাজ করে। জনগণের এসকল অনাকাঙ্ক্ষিত ভোগান্তির সাথে আরও যুক্ত হয় সরকারের কথিত উন্নয়ন প্রকল্পের বৈধ(?) ভোগান্তিসমূহ। কথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এগুলো শুরু হয়। তারপর সেগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ না হয়ে মেয়াদ ও বাজেট সমানতালে বাড়তে থাকে। মেগা উন্নয়নের নামে এসকল মেগা দুর্নীতি প্রকল্পগুলো নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে অবশেষে শেষ হয়। যেগুলোর জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপের মাধ্যমে জনগণের পকেট কাটা হয়, মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তারপর বসে টোল। এইসব টোল একবার শুরু হলে আর কখনোই শেষ হয়না। এটা দশকের পর দশক ধরে জনগণকে টোলের বোঝা টানতে হয়।

অন্যদিকে ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূলকথা হলো জনগণকে দেখাশোনা করা। এখানে একমাত্র ন্যায়পরায়ণ ও আল্লাহভীরু ব্যক্তিরাই উম্মাহ্‌ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাই খিলাফতের মধ্যে খলিফাদেরকে আধিপত্য বিস্তারের জন্য সন্ত্রাসী পালতে হয় না। জনগণকে জিম্মি করে চাঁদাবাজিও করতে হয়না। ইসলামী বিধান অনুযায়ী, জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, সেতু এগুলো গণমালিকানাধীন সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। রাষ্ট্র এগুলো তৈরি বা মেরামতের জন্য অন্য গণমালিকানাধীন সম্পদ, যেমন: তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করবে। সেটাতেও সংকুলান না হলে বিত্তশালীদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করে এগুলো নির্মাণ করা হবে, এবং এক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকরা স্বেচ্ছায় আর্থিকভাবে শরিক হতে চাইলে গ্রহণ করা হবে, কিন্তু এসবই হতে হবে সেতু বা রাস্তাঘাট নির্মাণের পূর্বে, পরে নয়। গণমালিকানাধীন সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। এগুলো হতে টোল আদায় করা সম্পূর্ণ হারাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, সকল মানুষ তিনটি বিষয়ে শরিক পানি, বিস্তৃর্ণ চারণভূমি ও আগুন এবং এগুলোর বিনিময় মূল্য গ্রহণ হারাম”। উপরোক্ত হাদীস থেকে আমরা গণমালিকানাধীন সম্পদ যেমন, রাস্তাঘাট, সেতু, রেলপথ, তেল-গ্যাস ইত্যাদির বিনিময় মূল্য নেওয়ার নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাই।

মো: জহিরুল ইসলাম

বাতাস বিক্রি করে তিতাস কামাচ্ছে কোটি কোটি টাকা: বিটিএমএ

খবরঃ

গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবী জানিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) বলেছে, গ্যাসের বদলে বাতাস বিক্রি করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকার বিল আদায় করছে। বিটিএমএ কেপটিভ পাওয়ার জেনারেশন সংশ্লিষ্ট মিলগুলোতে দ্রুত ইভিসি মিটার স্থাপনের দাবী জানিয়েছে। এ ছাড়া গ্যাসের সঙ্কট সমাধানে গণপরিবহনে সিএনজি বন্ধ ও অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সার কারখানায় সরবরাহকৃত গ্যাস টেক্সটাইল খাতের মিলগুলোতে সরবরাহ করার দাবী জানায় সংগঠনটি। (www.dailynayadiganta.com/first-page/640226/বাতাস-বিক্রি-করে-তিতাস-কামাচ্ছে-কোটি-কোটি-টাকা-বিটিএমএ)

মন্তব্যঃ

কৃষি উৎপাদনের একটি অপরিহার্য উপাদান সার উৎপাদন এবং সাধারণ মানুষের গণ-পরিবহনের জ্বালানী গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে পুঁজিপতিদের কল-কারখানায় গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব পুঁজিপতিদের বিশেষ অগ্রাধিকার প্রাপ্তির যে অন্যায্য চর্চা চলছে তারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। বর্তমান ধর্মনিরেপেক্ষ-পুঁজিবাদী সরকারও তাদের দাবী পূরণের জন্য প্রণোদনার নামে জনগণের অর্থ লুটপাটের সুযোগ তৈরি করে দিতে সদা প্রস্তুত থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পুঁজিপতিদের দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার তাদের করোনাকালীন ক্ষতি মোকাবেলার নামে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করে (৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা, প্রথম আলো, ২৭ এপ্রিল ২০২০)। এছাড়াও তারা বিভিন্ন সময় রপ্তানী প্রণোদনা বৃদ্ধি, শুল্ক হার হ্রাসসহ নানা ধরণের বিশেষ প্রণোদনার আবদার করে। সরকারও জনগণের উপর বিভিন্ন প্রকার কর আরোপ বা ঋণের বোঝা চাপিয়ে তাদের এই সকল অন্যায্য আবদার পূরণ করে যাচ্ছে। এই আবদার পূরণের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ফলে পুঁজিপতিদের কাছে এই ধরণের বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তি অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই তারা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণের বিষয়ে আলোচনা না করে জনগণের ঘাড়ে তাদের ক্ষতির দায় চাপাতে অধিক উদগ্রিব। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে সরকারী মালিকানাধীন তিতাস গ্যাস কোম্পানীকে বেসরকারীকরণ করা, যার ফলে বর্তমানে তিতাস অন্য আট-দশটা পুঁজিবাদী কোম্পানীর মত একটি কোম্পানী যার মালিকানার ২৫ শতাংশ শেয়ার দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পুঁজিবাদী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হাতে, যাদের তিতাসে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য হচ্ছে মুনাফা প্রাপ্তি। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে তাই যেকোন মূল্যে শেয়ার হোল্ডারদের মুনাফা বৃদ্ধিই গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির, বাতাস বিক্রয় বা অন্য যেকোন অসৎ পদক্ষেপ তার কাছে সঠিক যদি তার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক মুনাফা বৃদ্ধি পায়। বস্তুত, জ্বালানী সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেসরকারীকরণের ফলে দেশের জ্বালানী খাতে আজ এই নৈরাজ্য।

জ্বালানী খাতের এই নৈরাজ্য থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আদিষ্ট নব্যুয়তের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। খিলাফত রাষ্ট্র ইসলামের মালিকানা এবং জ্বালানী নীতি বাস্তবায়ন করবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, মানুষ তিনটি বিষয়ে শরিক পানি, বিস্তীর্ণ চারণভূমি আগুন সুতরাং, রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের প্রকৃতিক গ্যাস থেকে সুবিধা প্রপ্তির অধিকার রয়েছে। কোনভাবে শুধুমাত্র একটি গোষ্ঠীকে এই সম্পদ থেকে সুবিধা প্রপ্তির সুযোগ দেওয়া যাবে না। তাই, খিলাফত রাষ্ট্র বেসরকারী জ্বালানী কোম্পানীগুলোকে রহিত করার মাধ্যমে এই খাতের উপর থেকে সকল প্রকার দেশী-বিদেশী অবৈধ কর্তৃত্বের পথকে রুদ্ধ করবেন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এই সম্পদগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন যাতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকরা আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিয়ামত প্রকৃতিক গ্যাস থেকে সুবিধা পেতে পারে।

মো: সিরাজুল ইসলাম

 

 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষার্থীরা কী খাচ্ছেন, নজর নেই কারও

খবরঃ

এক কেজি ওজনের একটি মুরগি (ব্রয়লার) রান্না করার সময় সর্বোচ্চ কত টুকরা করা সম্ভব? যে কারও কল্পনাশক্তিও হার মানবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটি আবাসিক হলের ক্যান্টিনে খেতে বসলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের একজন বাবুর্চি তথ্য দিয়েছেন, সাধারণত এক কেজি ওজনের মুরগিকে ২৫ টুকরা পর্যন্ত করেন তারা। আর মাছের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, যত বেশি টুকরা করা যায়। হলগুলোর ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়ার ডাল যেন ‘হলুদ পানি’। ভাত হয় মোটা চালের, সেটিও বাজারের সবচেয়ে নিম্নমানের। এ নিয়ে ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও কোন তৎপরতা ছিল না। উল্টো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ক্যান্টিনের ইজারা থেকে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও নেই। খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসনের কোনো ভর্তুকিও নেই। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/শিক্ষার্থীরা-কী-খাচ্ছেন-নজর-নেই-কারও)
মন্তব্যঃ

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিকে সৌন্দর্য বর্ধন এবং সুউচ্চ ভবন নির্মাণে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাস্টারপ্ল্যান (মেগা প্রকল্প) গ্রহণ করা হচ্ছে, কোটি টাকা খরচ করে শতবর্ষবরণ উৎসব চলছে, কিন্তু অন্যদিকে শিক্ষার্থীদেরকে এখনও হলের ক্যান্টিনের নিম্নমানের খাবার খেয়েই কোনরকম মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজতে হচ্ছে। নিম্নমানের খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে কোনরুপ মাথা গোজার ব্যবস্থা করা এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরাজিত ও দাসত্বের মানসিকতা তৈরির পরিকল্পনা ছাড়া আর কিইবা হতে পারে, যাতে এসব মেধাবীরা উচ্চশিক্ষাকে শুধুমাত্র জীবিকার সংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে দেখে; আর মেধাকে গবেষণা ও নিত্য নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে নেতৃত্বশীল জাতি গঠনে ব্যবহার করাতো অনেক দূরের বিষয়। যে রাষ্ট্র তার মেধাবী শিক্ষার্থীদের মানসম্মত খাবারের অভাব পূরণ করে না, সে রাষ্ট্র কিভাবে মেরুদন্ড সোজা হয়ে দাঁড়াবে, আর বিশ্বনেতৃত্ব সেতো অনেক দূরের কথা! ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার গুণগত মান ও বৈশ্বিক রেঙ্ককিং দিনকে দিন অবনতি হচ্ছে, উচ্চশিক্ষা শুধুমাত্র জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমে পরিণত হওয়ায় ক্যাম্পাসগুলোতে বিসিএস যুদ্ধের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। হতাশা কমছে না বরং বাড়ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষার্থীদের আত্বহত্যায় রেকর্ড গড়ছে (শুধুমাত্র ২০২১ সালেই সর্বমোট ১০১ জন)।

অর্থাভাবে ও খাদ্যাভাবে জরাজীর্ণ ও অনগ্রসরমান এই শিক্ষাব্যবস্থাকে খিলাফত রাষ্ট্র ঠেলে সাজাবে এবং বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষার সাথে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে যুক্ত করবে। খিলাফত রাষ্ট্র তার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিবে এবং উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, খাদ্যোপকরণ, আবাসন সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় মৌলিক অবকাঠামো তৈরি করবে যাতে ধর্ম, বর্ণ, কিংবা লিঙ্গভেদে রাষ্ট্রের কোন নাগরিকের চাহিদা বাধাগ্রস্ত না হয়। প্রত্যেকে নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পুরণের নিশ্চয়তা থাকায় খিলাফত রাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদেরকে জীবিকা নির্বাহের জন্য কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে না। সর্বোচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান অর্জন ও নিত্য নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে মেধার সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে খিলাফত রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার প্রদান করবে। আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই একঝাঁক প্রতিভাবান, দক্ষ, শক্তিশালী বেসামরিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বিশেষ বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিত্ব (Expert) তৈরি করবে যারা রাষ্ট্রের মেরুদন্ড হিসেবে কাজ করবে। শুধু তাই নয়, উম্মাহ্‌’র অভাবনীয় দক্ষতার অধিকারী ও ডিগ্রিধারী তরুণদেরকে রাষ্ট্রের উন্নতিতে কাজে লাগানো হবে, যেন তাদের অমূল্য প্রতিভা অবহেলায় নষ্ট না হয় কিংবা বিদেশী শক্তি কর্তৃক ছিনতাই না হয়ে যায়।

 

মোহাম্মদ সিফাত

 

 

 

 

 

 

চুরিছিনতাই বেড়েছে, নিয়ন্ত্রণে টহলে গুরুত্ব ডিএমপির

খবরঃ

রাজধানীতে চুরি–ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। গত দুই বছরের মামলার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে চুরি–ছিনতাইয়ের মামলা তার আগের বছরকে (২০২০ সাল) ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি রাজধানীতে যাত্রীবাহী পরিবহনে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। চুরি–ছিনতাইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ঢাকার প্রতিটি থানায় টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল রোববার ডিএমপি কমিশনারের সভাপতিত্বে রাজারবাগের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে গত ডিসেম্বরের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ডিএমপির ৫০ থানার ওসি ও আটটি অপরাধ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/capital/চুরিছিনতাইবেড়েছেনিয়ন্ত্রণেটহলেগুরুত্বডিএমপির )

মন্তব্যঃ 

          জনজীবনে উদ্ভুত সমস্যাগুলো বর্তমান শাসনব্যবস্থায় যেভাবে সমাধান করা হয় সেটা দেখলে দেখা যাবে, ধর্ষণ সমস্যার সমাধান হিসাবে যাবজ্জীন কারাদণ্ড থেকে মৃত্যদন্ড করা হয়েছে। একইভাবে করোনা বেড়ে যাওয়াতে লকডাউন নীতি গ্রহণ করেছে; ভেজাল মদ খেয়ে মানুষের মৃত্যু হওয়াতে, মদের শুল্ক কমানোর নীতি; জুয়া বেড়ে যাওয়াতে নিবন্ধিত ক্যাসিনো নীতি; সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে চালকের বেশি বেশি জরিমানা নীতি, যানজট সম্যার সমাধান হিসাবে ফ্লাইওভার নীতি; বেকার বেড়ে গেলে একটি বাড়ী একটি খামার নীতি; আন্দোলন হলে পুলিশ বাহিনী দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো নীতি; আর এখন চুরি বেড়ে যাওয়াতে টহল বাড়ানো নীতি অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চরম বাস্তবতা হচ্ছে কোন সমস্যারই সমাধান হচ্ছে না। সমাজের মানুষকে অভুক্ত রেখে, মৌলিক চাহিদাগুলোকে অপূর্ণ রেখে, যতই টহল বাড়ানো হোক না কেন কখনোই চুড়ি ছিনতাই নির্মুল করা যায় না। যে ব্যক্তিরা বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যা করছে তাদের ঘরে কি টহল বসিয়ে আত্মহত্যা বন্ধ করা যাবে? যে মা অভাবের কারণে হাসপাতালেই নিজ সন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছে সেখানে কিভাবে টহল বসিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে? অভাবের কারণে যারা নিজের কিডিনি বিক্রি করে দিচ্ছে সেখানে টহল বসিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে? বর্তমানে এদেশে দারিদ্রতার হার চরম মাত্রায় গিয়েছে ঠেকেছে, TCB ট্রাকে দাঁড়ানো মানুষের লাইন, আর বগুড়ার আলমগীরদের দুবেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়ার বিজ্ঞাপন দেখলেই তা আঁচ করা যায়।

বর্তমান শাসনব্যবস্থা যেকোন সমস্যাকে (উপরোক্ত ঘটনাগুলোর ন্যায়) একটি বিচ্ছিন্ন সমস্যা হিসাবে বিবেচনা করে শুধু সেই সমস্যাটির সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে; সমস্যার উৎপত্তিস্থলে যাবার চেষ্টা করে না। ফলে সমস্যার সমাধানতো হয়ই না বরং নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়। যেমনঃ ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড করার পর, নারীদেরকে ধর্ষন করে মেরে ফেলার হার বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, ইসলাম সমাজের যেকোন সমস্যাকে মানবীয় সমস্যা হিসাবে দেখে, তাই চুরিকে শুধু চুরি হিসাবে না দেখে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে চুরির সাথে সম্পর্কিত সকল দিক বিবেচনা করে এবং কি কারণে চুরি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তা’আলা প্রদত্ত সমাধান থেকে সমাধান করে। আ’য়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছিলেন, “মুসলিমদের কাছ থেকে যতটা সম্ভব শাস্তি এড়িয়ে চলবে তাই অভিযুক্তের যদি কোন উপায় থাকে তবে তাকে ছেড়ে দাও, কারণ শাস্তি আরোপ করার ভুল করার চেয়ে ক্ষমা করার ভুল করা ইমামের (খলিফা/ওয়ালি) পক্ষে ভাল” তাই খিলাফত রাষ্ট্র সমাজের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করবে, এজন্য real economy (ভারি শিল্প, জাহাজ, সমরাস্ত্র নির্মাণ ইত্যাদি)-তে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করবে ফলে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। ব্যাপক কর্মসংস্থানের ফলে service economy (কম্পিউটার, এসি, গার্মেন্টস, কল সেন্টার ইত্যাদি)-তে গতির সঞ্চার হয়ে মানুষের হাতে টাকার সঞ্চালন বেড়ে দারিদ্র বিমোচন হবে। অন্যদিকে তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে চুরিসহ যেকোন সমস্যাগুলো সমাজের গভীর থেকে নির্মুল হবে, ইনশাআল্লাহ্‌।

 

ইরফান আবিদ

“আত্মহত্যা: পরিবারের সবার কাছে ‘হিরো’ ছিলেন ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করা মহসিন খান”

খবরঃ

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করা ব্যবসায়ী মহসিন খানের ছোট ভাই- লিপু খান বলেন, “আমার ভাই ছিলেন পারিবারিকভাবে হিরো। আমাদের শৈশবে তাকে সবাই অনুসরণ করতো”। মহসিন খানের মরদেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। যেখানে লেখা রয়েছে, “ব্যবসায় ধস নেমে যাওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে অনেকের লেনদেন ছিল। কিন্তু তারা টাকা দেয়নি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়”। তবে ফেসবুক লাইভে নিজের শারীরিক অবস্থা, পরিবারের সদস্য ছাড়াও নিজের একাকিত্ব, ব্যবসায় লোকসান, কাছের মানুষের প্রতারণা শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছিলেন মহসিন খান। (https://www.tbsnews.net/bangla/বাংলাদেশ/news-details-82066)

মন্তব্যঃ

আত্মহত্যা করার আগে মহসিন খান ফেসবুক ব্যবহার করে যাদের জন্য তিনি জীবনযাপন করছিলেন তাদেরকে জানানোর চেষ্টা করছিলেন যে তিনি আর বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বা বেঁচে থাকাটা আর উপভোগ করছেন না। যখন তিনি ব্যবসায় লস খেলেন, ব্যবসা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ে ব্যর্থ হলেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন এবং পরিবারের লোকদের কাছে গুরুত্ব হারালেন তখন তিনি দেখলেন যে বেঁচে থাকার আর কোন অনুপ্রেরণা বিদ্যমান নাই। কারণ এখন আর তিনি প্রবৃত্তিগত সুখ বা সফলতার অনুভূতিতো পাচ্ছেনই না বরং নিজেকে পাচ্ছেন একটি চুড়ান্তভাবে প্রতারিত ও ব্যর্থ অবস্থায়।

শুধু এই মহসিন খান নয় আমাদের সমাজের বেশীরভাগ মানুষের নিকটই জীবনের সুখকে দেখানো হয়েছে মুলত ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির ভিত্তিতে। এই সুখের সন্ধানে মরিয়া হয়ে ছুটতে ছুটতে এক সময় আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছি। সুখ যেন মরিচিকা, সবসময় সামনে দেখা যায়, কাছে আসলে দূরে চলে যায়। সুখ নামক মরীচিকার পেছনে আমরা যত বেশি করে ছুটছি তত বেশি হতাশায় ডুবে যাচ্ছি, বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২০ এর হিসাব মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। সবসময় ইন্দ্রিয়গত সুখে থাকা যখন জীবনের উদ্দেশ্য তখন ইন্দ্রিয়গত সুখের অনুভুতির ক্ষণস্থায়ীত্ব হচ্ছে বাস্তবতা। কারণ ইন্দ্রিয়গত সুখ হচ্ছে একটি মুহূর্ত। এক মুহূর্ত আমি সুখী , আবার পরের মুহূর্ত হতাশ। আবার, মজা বাড়ানো যখন জীবনের উদ্দেশ্য তখন উল্টো মজা কমে যাওয়াই হচ্ছে বাস্তবতা। যেমন- একই কাজ বার বার করলে সমান আনন্দ আসে না, বরং কমতে থাকে। হোক সেটা প্রিয় গানটি বার বার শোনা, বা প্রিয় খাবারটি বার বার খাওয়া, বা প্রিয় ফোনটি বার বার ব্যবহার করা বা একই ট্রাভেল স্পটে বার বার যাওয়া! তাই এই বাস্তবতা একজন মানুষকে ডিপ্রেশনের দিকে ধাবিত করে। কারণ ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তির মাধ্যমেই সে সুখ খোজে। তাই, লাইফকে এনজয় করার সকল উপকরণ (বাড়ি-গাড়ী-নারী-খ্যাতি) থাকা সত্ত্বেও সম্পদশালী ও সেলিব্রেটিরা  আত্মহত্যা করে। আর বাকিরা ‘আজ গরীব বলে’ এনজয় করার উপকরণ নাগালের বাইরে থাকায় হতাশায় ভুগে।

দুনিয়ার বস্তুগুলোর মধ্যে মানুষকে চুড়ান্ত সুখ বা প্রশান্তি দিতে পারে এমন বাস্তবতাই অনুপস্থিত। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, তোমরা জেনে রাখ যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া কৌতুক, শোভাসৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্বঅহঙ্কার এবং ধনসম্পদ সন্তানসন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র এর উপমা হল বৃষ্টির মত, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়কুটায় পরিণত হয়(সুরা হাদিদঃ ২০)। এর সবই ক্ষণস্থায়ী ও অত্যন্ত অল্প। মানুষ সত্যিকার অর্থে ও চুড়ান্তভাবে যা অর্জন করতে পারে তা হচ্ছে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সন্তুষ্টি। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় আয়-রোজগারের চেষ্টা, লেনদেন, পরিবার-পরিজনের সাথে সময় দেয়া এসবের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য প্রবৃত্তিগত সুখ অর্জন হলেও চুড়ান্ত লক্ষ্য হতে হবে আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি অর্জন। সর্বোপরী যেহেতু আমরা এই জীবনে এসেছি আল্লাহ্‌র কাছ থেকে এবং ফিরে যাবো আবার তাঁর কাছেই, সুতরাং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনই হচ্ছে জীবনের একমাত্র উপযুক্ত চুড়ান্ত লক্ষ্য। সেটা না করে চাকুরী, ব্যবসা, পরিবার কিংবা মানুষের কাছে হিরো হয়ে থাকতে চাওয়াটা যদি হয় জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য হয়, তাহলে মহসিন খানের মত পরিণতি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

মোহাম্মদ তালহা হোসেন