Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 129

Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১২৯ তম সংখ্যা । ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

এই সংখ্যায় থাকছে :

“জালিম আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন, সিরিয়া মুক্ত – বলছেন বিদ্রোহীরা”

“২২,৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক”

“জাতীয় ঐক্যের তাগিদ: স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে মতভিন্নতার অবকাশ নেই”

“ভারত-বিরোধিতা কি বাংলাদেশের বড় ক্ষতির কারণ হতে চলেছে?”

“উন্নয়ন সহযোগীদের চাপ, ব্যাপক হারে কমবে কর অব্যাহতি: এনবিআর চেয়ারম্যান”

“দেশের স্বার্থে সব দলের ঐক্য”

“জালিম আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন, সিরিয়া মুক্ত – বলছেন বিদ্রোহীরা”

খবরঃ

সিরিয়ার ‘জালিম’ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। একথা জানিয়ে দেশটির বিদ্রোহীরা ঘোষণা দিয়েছে, সিরিয়া এখন মুক্ত। আজ রোববার এক বিবৃতিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) জানায়, ‘আমরা দামেস্ককে (সিরিয়ার রাজধানী) জালিম বাশার আল-আসাদের হাত থেকে মুক্ত ঘোষণা করছি।’ এর আগে বিবিসির খবরে বলা হয়, বাশার আল-আসাদ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ছেড়েছেন। সিরিয়ার দুজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানায়, বাশার আল-আসাদ একটি ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ করে দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। বাশার আল-আসাদের পালানোর খবর দিয়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহ্‌রীর আল-শামের (এইচটিএস) পক্ষ থেকে সিরিয়াকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এইচটিএস বলেছে, একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। একটি নতুন যুগের সূচনা হলো। (www.prothomalo.com/world/middle-east/xwntcfxilb)

মন্তব্যঃ

সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন গত এক দশকের মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর একটি। সাম্প্রতিক ১১ দিনের মধ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দ্রুত অগ্রগতি আসাদ সরকারের টিকে থাকার ভিত্তি নড়বড়ে করে তুলেছে। আসাদ সরকারের পতনের অন্যতম কারণ রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতার উল্লেখযোগ্য হ্রাস। আসাদ সরকারের দীর্ঘদিনের প্রধান মিত্র রাশিয়া গত দুই বছরে ইউক্রেন যুদ্ধের জটিলতায় জড়িয়ে তার সামরিক সম্পদ এবং মনোযোগের বড় অংশ হারিয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিমান ও সামরিক শক্তির ক্ষয়ক্ষতির ফলে সিরিয়ার মাটিতে তারা কার্যকর সমর্থন দিতে পারছিল না। অন্যদিকে, ইরান ও তার মদদপুষ্ট মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ্‌ আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে এতদিন যে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল সেটা যথেষ্ট পরিমাণ হ্রাস পেয়েছিল, কারণ তারা ইসরায়েলের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সামরিক সাফল্যের পেছনে এই দুই শক্তির দুর্বলতাই অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

আসাদ সরকারের পতনের লক্ষ্যে এই বিপ্লব শুরু থেকে এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এটি প্রায় বিজয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্ত ও তার দালাল মুসলিম শাসকদের বিশ্বাসঘাতকায় সেই গতি লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে ভিন্ন হয়ে পরিচালিত হয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় একটি মার্কিন-বিরোধী শাসন অর্থাৎ ইসলামী খিলাফতভিত্তিক শাসন গঠিত হওয়ার আশঙ্কায় ভীত ছিল। তাই সে বিপ্লবকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্য পূরণে একাধিক ধাপে কাজ করেছে। ২০১৩ সালে মার্কিন মদদে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ্‌ সিরিয়ায় প্রবেশ করে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল “সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা,” কিন্তু কার্যত তারা আসাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন হিজবুল্লাহ্‌ ও ইরান সিরিয়ার সরকারের পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে এই টোপ দিয়ে সিরিয়ায় টেনে আনে যে এর মাধ্যমে রাশিয়া তার হারানো আন্তর্জাতিক শক্তি পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবে। ফলশ্রুতিতে, রাশিয়া ২০১৫ সাল থেকে সিরিয়ায় বিমান হামলা ও সামরিক সহায়তা শুরু করে। রাশিয়ার সামরিক শক্তিও যখন পুরোপুরি বিপ্লব দমন করতে ব্যর্থ হয়, যুক্তরাষ্ট্র তখন তুরস্ককে সিরিয়ায় নিয়ে আসে। তুরস্কের অভিযান যেমন “ইউফ্রেটিস শিল্ড” ও “অলিভ ব্রাঞ্চ” কার্যত বিদ্রোহী শক্তিগুলোর ঐক্যকে ভেঙে দেয় এবং তাদেরকে লক্ষ্য ভ্রষ্ট করে, ফলে আলেপ্পোকে বাশার আল-আসাদের সরকারের কাছে হস্তান্তরের পথ তৈরি করে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক কাফির শক্তিগুলো ও তাদের দালালরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছে এবং সিরিয়ার জনগণের প্রকৃত মুক্তিতে তাদের কোনো আগ্রহ ছিল না।

আসাদ সরকারের পতন অবশ্যই স্বৈরাচারী জালিম শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উম্মাহ্‌’র একটি বড় বিজয়। তবে, এই বিজয় কেবলমাত্র একটি আংশিক সাফল্য। চূড়ান্ত সাফল্য মানে হচ্ছে সামগ্রিক পরিবর্তন সাধন করা- যালিম সরকারকে তার স্তম্ভ, তার অপরাধের সহযোগী, রাষ্ট্র কাঠামো, সংবিধান সহ মূলোৎপাটন করা। চূড়ান্ত সাফল্য মানে হচ্ছে সেকুলার সরকারকে একটি ইসলামী সরকার ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপন করা এবং নবুয়তের আদলে খিলাফত ঘোষণা করা। খিলাফত হচ্ছে এমন একটি রাষ্ট্র যার উপর থেকে নীচ পর্যন্ত সম্পূর্ণ ইসলামী, যার মধ্যে কোন ভেজাল কিংবা অপবিত্রতা নেই এবং যেখানে শাসকরা আল্লাহ্‌’র খলিল (অত্যন্ত প্রিয় বান্দা) ও ধার্মিক বান্দাদের মধ্য থেকে উঠে আসা। সর্বোপরী আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী যুলুমের শাসনের চূড়ান্ত অবসান কেবল নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই ঘটবে। “….তারপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে, অতঃপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত-নবুয়তের আদলে” (হাদিস: মুসনাদে আহমদ)।

    –    রাশিদ হাসান মাহাদী

“২২,৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক”

খবরঃ

টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সাময়িক সরে এসে নতুন টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ৬টি ব্যাংকে ২২,৫০০ কোটি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে এসব টাকা তুলে নেব। এক হাতে টাকা দেব, অন্য হাতে তুলে নেব। এতে বাজারেও অস্থিরতা তৈরি হবে না।” দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২০ আগস্ট গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোকে টাকা ছাপিয়ে আর সহায়তা দেওয়া হবে না। (https://www.kalerkantho.com/online/business/2024/11/28/1451630)

মন্তব্যঃ

জনগণকে মিথ্যা আশার বাণী শুনিয়ে সাময়িক আশার সঞ্চার করে কখনোই সমস্যার সমাধান করা যায় না। মূলত: ব্যর্থ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে টিকেয়ে রাখার অন্যমত হাতিয়ার হল patch-up solution বা ‘আপাত সমাধান’, যার মূল বক্তব্য হল ‘এখন চালিয়ে নাও, পরে কি হবে তা পরে দেখা যাবে’। এই নীতি ব্যবহার করেই আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ঋণ (‘নতুন ডলার ছাপানোর’ কৌশল) বর্তমানে ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০০২ সালেও ছিল ৬.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এই ‘আপাত সমাধান’ আমেরিকাকে এমন ভয়ানক ফাঁদে ফেলেছে যে বিকল্প আদর্শ হিসেবে ইসলামী খিলাফতের উত্থান ঘটে গেলেই এই ফাঁদ আমেরিকার জন্য সরাসরি কফিনে পরিণত হবে। পুঁজিবাদের দীক্ষায় দীক্ষিত এই আহসান এইচ মনসুর টাকা ছাপানোর সিদ্বান্ত নিবেন এটা অনুমেয়ই ছিল, কারণ পুঁজিবাদের মোড়ল আমেরিকাও ডলার ছাপিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

‘বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার’ যুক্তিটিও ‘আর টাকা ছাপিয়ে কোন ব্যাংককে দিবো না’-এর মতই একটি লোকভুলানো উক্তি। এই নতুন বন্ড ও বিদ্যমান পুরানো বন্ডের সুদ সরকার কোথা থেকে পরিশোধ করবে? বন্ডের মেয়াদ শেষে যখন এর মূল্য সরকারকে পরিশোধ করতে হবে সরকার তখন সেই টাকা কোথা থেকে দিবে? উত্তর হল: হয় বাড়তি ভ্যাট-ট্যাক্স-শুল্ক বসিয়ে তা জনগণের পকেট থেকে নিবে, অথবা আবার নতুন করে টাকা ছাপাবে যা জনগণের হাতে বিদ্যমান অর্থের ক্রয়ক্ষমতাকে আবারো লুটে নিবে। ফলে, ভবিষ্যতে আবার টাকা ছাপানোর পর নতুন কোন ইউক্রেন যুদ্ধ, নতুন কোন করোনা মহামারী বা বিশ্ববাজারের বাস্তবতা ও ইউরোপ-আমেরিকার উদাহরণ টানা হবে। ফলে, টাকা ছাপানোর এই আপাত সমাধান বাস্তবায়ন করে এই পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদেরা আমাদেরকে এক চক্রাকার জুলুমের ফাঁদে আটকে ফেলেছে, যেখান থেকে মুক্তির কোন পথ তাদের জানা নেই। কারণ পুঁজিবাদী চিন্তাই হল এই ফাঁদের জন্মদাত্রী।

দেশের আর্থিক খাতে টাকার সংকট অনেকাংশেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর financial statement-এ থাকা একটি ঘাটতি, প্রকৃত ঘাটতি নয়। হাসিনার আমলে ‘ছাপানো টাকা’ বিদেশে পাচার হয়নি, দেশেই আছে। জুন, ২০২৪ শেষে ব্যাংকখাতে আমানত ছিল ১৮ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার আমানত কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীদের, যা মোট আমানতের প্রায় ৪২ শতাংশ। কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বর্তমানে ১ লাখ ১৯ হাজারটি, যা ২০০৯ সালে ছিল ১৯,৬৩৬ টি। কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীদের সংখ্যার এই উত্থানের পেছনে খেলাপী ঋণের একটি বড় অংশ (এক ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে অন্য ব্যাংকে ব্যক্তির/সুবিধাভোগীর নামে জমা) ও বিভিন্ন উন্নয়নমূল প্রকল্পের নয়-ছয় করা অর্থ জড়িত। শক্তিশালী ও ন্যায়নিষ্ঠ audit এর মাধ্যমে এই টাকা উদ্ধার করলেই financial statement-এ থাকা ঘাটতির চিত্র পাল্টে যেত, টাকা না ছাপিয়েই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু, তা না করে, এই অবৈধ অর্থের মালিকদের নিরাপত্তার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে বিশাল অংকের টাকা অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হাতিয়ে নিয়ে একটি পক্ষ তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষুধা নিবারণের পথ বেছে নিয়েছে। তাছাড়া: পুঁজিপতি শ্রেণীর যে রঙ্গীন ক্লাব বাংলাদেশে তৈরী হয়েছে এই সরকারও তা যেকোন মূল্যে অক্ষুন্ন রাখতে মরিয়া। এই দুইয়ের ফলাফল: ঋণখেলাপী ও লুটপাটের সকল ভার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের কাঁধে তুলে দিতে এই সরকার নতুন টাকা ছাপানোর পথ বেছে নিয়েছে।

    –    রিসাত আহমেদ

“জাতীয় ঐক্যের তাগিদ: স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে মতভিন্নতার অবকাশ নেই”

খবরঃ

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। এ বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। অন্যদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে ঐকমত্যের কথা। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধেও চলছে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, দেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে তারা একসঙ্গে আছেন। (www.jugantor.com/national/887449)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের ইতিহাসে জাতীয় ঐক্যের জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আহ্বান কিংবা ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি—প্রতিটি প্রচেষ্টা শুরুতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি করলেও তা দীর্ঘমেয়াদে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে এ প্রশ্ন তুলতেই হয়: পুরনো ধারণাগুলোর উপর নির্ভরশীল থেকে আমরা কি আবারও একই ব্যর্থতার পথে হাঁটব?

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠকে বসা দল ও পক্ষগুলোর কমন শত্রু ভারতের বিরুদ্ধে ঐক্যের প্রচেষ্টা কোনো দৃঢ় ও স্থায়ী ঐক্যের বন্ধন হতে পারে না। কমন শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যটি কেবল শত্রুর সক্রিয় থাকা পর্যন্ত বজায় থাকে। শত্রুপক্ষ পরাজিত/নিষ্ক্রিয় হলে বা অবস্থান পরিবর্তন করলে ওই ঐক্যের বাস্তবতা আর থাকে না এবং ঐক্যটিও বজায় থাকে না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সকল দল-মত একত্রিত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর, পাকিস্তানি শাসকদের প্রস্থান এবং অভ্যন্তরীণ বিভেদ উন্মোচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ঐক্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। একই চিত্র দেখা যায় ১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে। স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একত্রিত হয়েছিল। কিন্তু এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যও টিকে নাই। বর্তমান রাজনীতিতেও ভারতের আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে ঐক্যের চেষ্টাও একটি অস্থায়ী দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এদেশের জনগণের ভারতবিরোধী জনমত চাপ সৃষ্টি করলেও, অনেক রাজনীতিবিদ বা দল এই অবস্থানে আন্তরিক নয়, কারণ তাদের কর্মকাণ্ডে তার কোন প্রতিফলন নাই। তাছাড়া, মার্কিন-ভারতের যেকোনো কৌশলী পদক্ষেপ বাংলাদেশের এই ঐক্যকে বিনষ্ট করে দিবে। বাংলাদেশে দ্রুত একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাও কোনো স্থায়ী ঐক্য সৃষ্টি করবে না। পুঁজিবাদী গণতন্ত্রকে যেই পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন শাসনের মডেল হিসেবে প্রচার করেছে, কিন্তু আজ সেই দেশগুলোতেই অভ্যন্তরীণ বিভেদ ও অস্থিতিশীলতা প্রকট, ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান বেড়েছে বহুগুণ।

জাতীয় ঐক্যের জন্য প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট জীবনাদর্শ, যা দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান ও শাসনকার্য পরিচালনার নীতি এবং বহিঃশক্তি আক্রমণ থেকে সুরক্ষার নীতি সম্বলিত। এই ভিত্তি বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা এবং আবেগ-অনুভুতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের ৯০% হচ্ছে মুসলিম এবং তারা ইসলামপ্রিয়। ইসলাম এদেশের বৃহত্তর জনগণের মৌলিক বিশ্বাস এবং জনগণের আবেগ-অনুভূতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ইসলাম আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মনোনীত একমাত্র জীবনব্যবস্থা। “নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌’র নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম” (সূরা আলি ইমরান: ১৯)। তাই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে ইসলাম, যার ভিত্তিতেই জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে। ইসলাম ছাড়া অন্যকোন জীবনাদর্শ এদেশের জনগণের মৌলিক বিশ্বাস, আবেগ-অনুভুতি ও চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মদিনা রাষ্ট্র এই ধরনের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছিল। সেখানে শুধুমাত্র মুসলিমরাই নয়, বরং ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুশরিকরাও একটি রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। এভাবে ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশৃঙ্খল বহুগোত্রীয় ও বহুধর্মীয় সমাজও একত্রিত হতে পেরেছিল।

    –    রাশিদ হাসান মেহেদি

“ভারত-বিরোধিতা কি বাংলাদেশের বড় ক্ষতির কারণ হতে চলেছে?”

খবরঃ

আমি বারবার বলি, ইসকন বিরোধীতার নামে হিন্দুদের প্রতি ঘৃণা উৎপাদনের পথ পরিহার করতে হবে। ভারতে যাই হোক, আগরতলায় যাই হোক, কথায় কথায় ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করে, তাওহীদী জনতার নামে একদল মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে ‘বাংলাদেশে উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে’ এমন ধারণা প্রচারের সুযোগ যারা তৈরী করে দিচ্ছে তারা ভারতেরই সুবিধা করে দিচ্ছে এবং বাংলাদেশকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার যারা রয়েছে পৃথিবী জুড়ে, বিশেষ করে পশ্চিমারা, তারা কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উগ্রবাদের যে ভারতীয় প্রচারণা সেগুলোই গ্রহণ করবে যা কোনভাবেই বাংলাদেশের পক্ষে যাবে না। (https://www.youtube.com/watch?v=nbgWU0K-oTQ)

মন্তব্যঃ

দেশের জনগণের কাছে ডেভেলপমেন্ট পার্টনার বা উন্নয়ন অংশীদার নামে পরিচয় করিয়ে দেওয়া পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো হলো কাফির শক্তি যারা সুষ্পষ্টভাবে ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রু। আর এই কাফির শত্রুদেরকে খুশি রাখার চিন্তা ও প্রচেষ্টা শুধুমাত্র হীনমন্যতা ও পরাজিত মানসিকতার পরিচায়কই নয়, বরং তা হলো মুসলিমদের জন্য একটি আত্ম-বিধ্বংসী কাজ। কারণ, এই রাষ্ট্রগুলো মুসলিমদের উপর ততক্ষণ পর্যন্ত খুশি হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না মুসলিমরা নিজেদের সর্বোৎকৃষ্ট ও মহান ইসলামী আক্বীদা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ”-কে পরিত্যাগ করে কাফির হয়ে না যায়। পশ্চিমাদেরকে খুশি করার চিন্তাটি হল ‘শয়তানের পদাঙ্ক’ অনুসরণের প্রথম ধাপ যা অবধারিতভাবে এদেশের মুসলিম জনসাধারণকে দুনিয়ার জীবনে অপদস্ত-অপমানিত করবে ও আখিরাতের যন্ত্রনাদায়ক শাস্তিকে সুনিশ্চিত করবে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন: “(হে নবী!) ইহুদী ও খ্রীস্টানরা আপনার উপর কক্ষনোই সন্তুষ্ট হবে না, যদি না আপনি তাদের ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী হয়ে যান। বলুন- ইসলামই একমাত্র সঠিক পথ। আর আপনি যদি জ্ঞানপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাদের (ইহুদী ও খ্রীস্টান) ইচ্ছা ও মতামতকে অনুসরণ করেন, তাহলে (আখিরাতে) আপনি কাউকেই সাহায্যকারী হিসেবে পাবেন না যে আল্লাহ্‌’র শাস্তি থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে!” (সূরাহ আল-বাকারা: ১২০)।

ইসলামের আদর্শিক শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মিথ্যা ও অন্যায্য প্রচারণার জবাব কিভাবে দিতে হয় তা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। মদীনায় আওস ও খাজরায গোত্রের সামরিক সহায়তার (নুসরাহ’র) মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) মুশরিক শত্রুরাষ্ট্র মক্কা ও শত্রুভাবাপন্ন তায়েফের মধ্যবর্তী নাখলা নামক স্থানে আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ (রা.)-এর নেতৃত্বে একটি বাহিনীকে Reconnaissance Operation-এ প্রেরণ করেন। ঘটনাচক্রে এই বাহিনীর হাতে মক্কার এক মুশরিক নিহত হয়, যা ছিল রজব মাসের ২৮/২৯ তারিখে। মুশরিক কুরাইশরা এই ঘটনাকে লুফে নেয় এবং পুরো আবরজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্বে প্রচারণা শুরু করে যে “মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা ‘রক্তপাত-নিষিদ্ধ’ পবিত্র রজব মাসে রক্তপাত ও প্রাণহানী ঘটিয়েছে, এই নতুন ধর্ম ইসলাম আরবের ব্যবসায়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে নষ্ট করছে”। কুরাইশদের এই মোক্ষম প্রচারণায় মদীনার মুসলিমরা অসহায় বোধ করতে থাকেন এবং বারবার রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর নিকট গিয়ে এই প্রচারণার কি উপযুক্ত জবাব দেওয়া যায় তা জিজ্ঞাস করতে থাকেন। আর মক্কায় বসবাসরত মুসলিমরা রক্ষনাত্মক উপায় অবলম্বন করে কুরাইশদেরকে বলতে লাগলেন যে রক্তপাত ও প্রাণহানী প্রকৃতপক্ষে রজব মাসে ঘটেনি বরং ততক্ষনে রজব মাস শেষ হয়ে সাবান মাস শুরু হয়ে গিয়েছিল, বা সাবান মাস শুরু হয়েছে এই ভেবে মুসলিমরা ভুলক্রমে রজব মাসে সংঘাতে জড়িয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ্‌ আল-হাকিম মুসলিমদেরকে এমন কৌশল ও ‍যুক্তি শিখিয়ে দিলেন যে আরবের ভূ-রাজনীতিতে মুশরিক কুরাইশরা কোনঠাসা হয়ে পরে এবং নিষিদ্ধ মাস কেন্দ্রীক অপপ্রচার পরিত্যাগ করে। আল্লাহ্‌ নাযিল করলেন: “(হে নবী!) তারা আপনার কাছে নিষিদ্ধ মাসে রক্তপাত সম্পর্কে জানতে চায়। আপনি বলুন, পবিত্র মাসে রক্তপাত আসলেই একটি অপরাধ; কিন্তু এর চেয়েও জঘন্য ও ঘোরতর অপরাধ হলো মানুষকে আল্লাহ্‌’র পথে (ইসলাম অনুসরণে) বাধা প্রদান, আল্লাহ্‌-কে অস্বীকার করা এবং আল্লাহ্‌’র ঘর (ক্বাবার প্রান্তর) থেকে আল্লাহ্‌’র ইবাদতকারীদেরকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা। (সূরা আল-বাকারা: ২১৭)।

যেকোন আদর্শিক লড়াইয়ে আদর্শিক শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বীরা অপপ্রচার করবেই। ইতিপূর্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধেও পুঁজিবাদী পশ্চিমারা এরূপ প্রচারণা চালিয়েছিল যেন এই আদর্শের অনুসারীরা সমাজতন্ত্রকে পরিত্যাগ করে। তাই উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ শব্দ দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মুসলিমদেরকে কোনঠাঁসা করে রক্ষনাত্মক বানিয়ে ফেলা ও ইসলাম থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার কাফিরদের সাজানো ছককে পাত্তা না দিয়ে, উল্টো তাদের অপরাধ ও অপকর্মকে উন্মোচন, ইসলাম ও খিলাফতের বিরুদ্ধে তাদের চিরন্তন অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। তাদের ভ্রান্ত জীবনাদর্শ ও তার অসারতাকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার মাধ্যমে এই কাফির অপশক্তির বিঁষদাত ভেঙ্গে দিতে হবে। এটা আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যমত স্তম্ভ, যা খলীফা অনুসরণ করবেন। জিল্লুর রহমানদের মত যারা সোশাল ইনফ্লুয়েন্সার ও বক্তা আছেন, তারা যদি সত্যিকার অর্থেই দেশ ও জনগণের কল্যান চান তাহলে তাদের উচিত হিযবুত তাহ্‌রীর-এর সদস্যদের স্মরণাপন্ন হয়ে ইসলামী পররাষ্ট্রনীতি ও সঠিক ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করা এবং তারপর সেই আলোকে জনগণের সামনে বক্তব্য ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা।

    –    রিসাত আহমেদ

“উন্নয়ন সহযোগীদের চাপ, ব্যাপক হারে কমবে কর অব্যাহতি: এনবিআর চেয়ারম্যান”

খবরঃ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের চাপে কর অব্যাহতি ব্যাপক হারে কমানোর পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।… অনেক ঘাটতি বাজেট করা হয়েছে, অনেক ঋণ করতে হয়েছে। এগুলো এখন বোঝা হয়ে গেছে।… আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার আগে চলতি অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ০.৬ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর কঠিন শর্তের মুখে পড়েছে এনবিআর।… (https://bangla.bdnews24.com/business/28955e9d4dc2)

মন্তব্যঃ

উপনিবেশবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান আইএমএফ-এর ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাতের নির্ধারিত সীমা বৃদ্ধি তার ‘SAPS’ (স্ট্রাকচারাল অ্যাটজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম) এর অংশ। এই ‘SAPS’-এর মাধ্যমে আইএমএফ মুসলিম দেশগুলোতে ভারী শিল্প, খনিজ এবং এনার্জি খাতগুলোতে রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে কমায়। সেই সাথে তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে উপনিবেশিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নির্ভরতা বাড়ায়। এর মাধ্যমে স্বনির্ভর অর্থনীতিতে বাধা দিয়ে বিদেশি পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তোলে। এই আইএমএফ তার ‘Austerity measures’-এর মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের উন্নতি বাদ দিয়ে সুদসমেত বিদেশী ঋণ পরিশোধে গুরুত্ব আরোপ করে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সমগ্র মুসলিম দেশগুলোতে সম্পদের বৈষম্য, দরিদ্রতা ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। তথাকথিত নব্য-উদারনৈতিক অর্থনীতির নামে আইএমএফ মুক্তবাণিজ্য, শিল্প-এ সরকারী কর্তৃত্ব অপসারণ, আমদানী কর কমানো, বাণিজ্য বাধা অপসারণ এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বেসরকারীকরণের দিকে জোর দেয়। এটি মুদ্রা বিনিময়ের হারকে বাজারের উপর ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। আর এসকল পদক্ষেপগুলোর সবগুলোই আমরা দেখতে পাই বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়েছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির আজকের এই দুরবস্থার জন্য এগুলোই দায়ী।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বেসরকারীকরণ নীতি অর্থনীতির উপর রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব দুর্বল করেছে। মুক্তবাণিজ্যের মাধ্যমে চিনি শিল্পের মতো শিল্পগুলো ধ্বংস হয়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলোকে আমদানীনির্ভর করা হয়েছে। আমাদের গার্মেন্টস খাত কেমিক্যাল ও মেশিনারিজ এর জন্য বিদেশী শক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। এনার্জি সেক্টরের প্রাইভেটাইজেশনের কারণে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানীর দাম বেড়ে গিয়েছে। এভাবে এদেশের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে।

তাই অর্থনীতির জন্য ‘ক্যান্সার’রুপি এই আইএমএফ-এর প্রভাব মুক্ত হতে হলে এর কর্তৃত্বের বাহিরে গিয়ে বিকল্প অর্থনীতির বাস্তবায়ন করতে হবে। আর যেটা হওয়া উচিত খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইসলামী অর্থনীতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ আর তাকে কিয়ামাতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়” (সূরা ত্ব-হাঃ ১২৪)। এই খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা কাউকেই কোনো ঋণের জন্য সুদ প্রদান করবে না। কারণ ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী সুদ একটি মারাত্মক অপরাধ। জনগণের দেখাশোনা করার জন্য এই রাষ্ট্র শরিয়ার হুকুম অনুযায়ী গবাদি পশু, শস্য ও ফলফলাদি, মুদ্রা এবং সকল ধরনের ব্যবসায়িক পণ্য, কৃষিপন্য-এর উপর খারাজ ও ঊশর, অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম অমুসলিম পুরুষদের নিকট থেকে জিজিয়া এবং নতুন নতুন ভূমি বিজয়ের মাধ্যমে গণিমত থেকে প্রাপ্ত সম্পদের উপর নির্ভর করবে। সেই সাথে গণমালিকানাধীন সম্পদ, যেমন তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খনিজ থেকে প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমেও জনগণের দেখাশোনা করবে। ইসলামে গণমালিকানাধীন সম্পদ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেই সাথে এই রাষ্ট্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভারী শিল্প, যেমন, গাড়ি ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদির মাধ্যমেও রাজস্ব তৈরি করবে। এজাতীয় পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে খিলাফত রাষ্ট্র পূর্বের ন্যায় শক্তিশালী অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হবে, যেখানে দেশের জনগণের জন্য স্বচ্ছলতা তো বটেই বরং নতুন নতুন ভূমি বিজয়ের জন্য শক্তিশালী সামরিক বাহিনীও তৈরি করতে সক্ষম হবে। তখন বর্তমান শাসনব্যবস্থার মতো সামান্য ঋণের জন্য আইএমএফ নামক উপনিবেশিক ক্যান্সারের চাপের মুখোমুখি হতে হবে না।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“দেশের স্বার্থে সব দলের ঐক্য”

খবরঃ 

দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার, হস্তক্ষেপ ও উসকানির বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে দলগুলো। (www.prothomalo.com/politics/i5mm76ynws)

মন্তব্যঃ

হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভারতের বাংলাদেশের উপর করা বহুমাত্রিক অত্যাচার, নিপীড়ন ও অপমান বাংলাদেশের মানুষের মনে তীব্র অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। পিলখানা ও সীমান্ত হত্যাকান্ড, অন্যায় চুক্তিসমূহ, মুসলিমদের উপর অত্যাচার এবং স্বৈরাচারী হাসিনাকে আশ্রয় দেয়া এসবই তার অংশ। সেই তীব্র অসন্তোষ তীব্র ক্ষোভে পরিণত হয় যখন ভারতের সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের কর্মীরা বাংলাদেশের এক আইনজীবিকে প্রকাশ্যে জবাই করে হত্যা করে। পরবর্তীতে, আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে আক্রমণ এবং বাংলাদেশের নামে ‘সংখ্যালঘু’ কার্ড খেলে ভারতের মিডিয়ায় মিথ্যা অপপ্রচার দেশের মানুষকে ভারতবিরোধী অবস্থানে আরো শক্তিশালী করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে বাকি রাজনৈতিক দলগুলো ভারতবিরোধী অবস্থানে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়েছে।

মূলতঃ মুসলিম উম্মাহ্‌ মধ্যে ইসলামের কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণা বরাবরই তীব্রভাবে ছিল। ২০০১ সালে “গুজরাটের কসাই” খ্যাত মোদির বাংলাদেশ আগমনে উম্মাহ জীবন দিয়ে তার প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু বর্তমানে ভারতের অতি-আগ্রাসন বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে এক অভাবনীয় আবেগ এবং একতা তৈরি করেছে। অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এই আবেগ এবং একতা অনেক শক্তিশালী। পশ্চিমারা ও তাদের দালালগোষ্ঠী বরাবরই উম্মাহ্‌’র এই আবেগকে ভয় পায়, যাতে এটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার বাক্স থেকে বের হয়ে বৃহত্তর কোন ইসলামী দাবীতে পরিণত না হয়। ২০০৩ সালে যখন ইরাক যুদ্ধের বিপক্ষে এই অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্যে তীব্র মার্কিনবিরোধী আবেগ তৈরি হয়, তখন তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার জাতীয় স্টেডিয়ামে এক বিশাল প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে দিয়ে উম্মাহ্‌’র আবেগকে ‘ফ্লাশ আউট’ করে দিয়েছিল, যাতে এটি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে বৃহত্তর কোন ইসলামী দাবীতে পরিণত না হয়। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল যখন গাজায় গণহত্যা শুরু করে তখন পতিত হাসিনা সরকারও দেশব্যাপী বিক্ষোভ আয়োজনের সুযোগ করে দিয়েছিল যাতে দেশব্যাপী ইসরাইল ও মার্কিন বিরোধী আবেগ বৃহৎ আকার ধারণ না করতে পারে। তাই এই বৃহত্তর ঐক্য, প্রতিবাদ সমাবেশ কিংবা জনসমাবেশের ঘোষণা উম্মাহ্‌’র আবেগকে প্রশমিত করার অনেক পুরোনো খেলা।

সত্যিই যদি এই ধর্মনিরপেক্ষ সরকার এবং রাজনৈতিক দালালগোষ্ঠী ভারতবিরোধী হতো তাহলে শুধুমাত্র ‘লিপ সার্ভিস’ নয়, বরং অবশ্যই তা তাদের কর্মে দৃশ্যমান হতো। পিলখানা হত্যাকান্ড পুনঃতদন্ত ও বিচার, ভারতের সাথে চুক্তি বাতিল, তিস্তাসহ সকল প্রকার নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, প্রত্যেকটি সীমান্ত হত্যার বিচার, কাশ্মিরে গণহত্যা ও ভারতে মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির নির্মাণের নিন্দা জানানো, খুনী হাসিনাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, প্রতিটি বিষয়ে তাদেরকে আমরা সরব হতে দেখতাম। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি, ৫ আগস্টের পর থেকে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতকে ইলিশ খাওয়ানো থেকে শুরু করে তাদের সাথে ‘ভারসাম্যপূর্ণ’ সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে নিশ্চয়তার পর নিশ্চয়তা দিয়ে যাচ্ছিল। জামাতের আমির গত ২৮ আগস্ট বলেছেন, “বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক চায়”। [ভারত-বাংলাদেশের যে সম্পর্ক চান জামায়াত আমির] গত ২৯ আগস্ট বিএনপি ভারতকে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক তৈরির জন্য পুনঃবিবেচনার অনুরোধ জানান। [Senior BNP leader urges India to take a relook at its relations with Bangladesh sans Sheikh Hasina]। মুলতঃ ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী ও পশ্চিমাদের আনুগত্য তাদেরকে ভূ-রাজনীতির তথাকথিত বাস্তবতা থেকে বের হতে দেয় না, ফলে উম্মাহ্‌’র আকাঙ্খার প্রতিফলনও তাদের কোন কাজকর্মে দেখা যায় না।

অন্যদিকে, মুসলিমদের শাসক খলিফা কখনো বাস্তবতার দোহাই দিয়ে শত্রুর সাথে মিত্রতা করে না। কারণ তার কাছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হল মহান আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত হুকুম। এই বাস্তবতা থেকেই খলিফা শুধু ফাঁকা বুলি না দিয়ে প্রকৃতই ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র ঘোষণা করে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয়ই মুসলিমদের প্রতি তীব্র শত্রুতায় আপনি ইহুদি এবং মুশরিকদেরকে সর্বাধিক অগ্রে পাবেন” (সুরা মায়ি‘দাহ্‌: ৮২)। আসন্ন খিলাফত ভারতীয় আগ্রাসনের ইতি টানতে ভারতকে পুনরায় ‍মুসলিম শাসনের অধীনে নিয়ে আসবে, যেভাবে এটি আটশত বছর ছিল যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে এই অঞ্চলের জনগণ ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেছিল এবং একটি সম্মৃদ্ধশালী ভূখণ্ড গড়ে তুলেছিল।

    –    জাবির জোহান