Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 127

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১২৭ তম সংখ্যা । ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

এই সংখ্যায় থাকছে :

“খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে যা লিখলেন আসিফ ও সারজিস”

“সৌদিতে কাবার আদলে তৈরি মঞ্চে নাচ-গান, বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড়”

“বঙ্গোপসাগরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা”

“অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে যা যা ঘটল”

“আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান”

“ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন ড. ইউনূস”; “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তারেক রহমানের অভিনন্দন”; “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জামায়াতের অভিনন্দন”; “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আ.লীগের অভিনন্দন”

“খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফেসবুকে যা লিখলেন আসিফ ও সারজিস”

খবরঃ 

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দীর্ঘ এক যুগ পর বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে সেনাকুঞ্জে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এছাড়া তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিন বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া সজীব এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনটি ছবি পোস্ট করে আসিফ লিখেন, ‘আপনাকে এই সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা গর্বিত, সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৪।’ আর একটি ছবি পোস্ট করে সারজিস লিখেন, ‘আপনার আপসহীন মনোভাব আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে, সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২৪।’ এদিকে, সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে গর্বিত হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখানে এসেছেন। একযুগ তিনি আসার সুযোগ পাননি। আমরা গর্বিত এই সুযোগ দিতে পেরে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশেষ দিনে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ। আপনার আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।’ আর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানোয় তিন বাহিনীর প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। (https://www.somoynews.tv/news/2024-11-21/L8737Ax8)

মন্তব্যঃ

সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ঘটনাক্রম ও বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, গত সপ্তাহে বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন: নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, এটা আর থামবে না। তবে সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে। (জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ, ১৭/১১/২০২৪)। রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার না চাইলে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেব। (বণিক বার্তা, ২০/১১/২০২৪)। এদিকে বিএনপি সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে: শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু করে নির্বাচন দেওয়া উচিত। সংস্কার শেষে নির্বাচন কোনো যৌক্তিক কথা নয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যাবে না এবং তাদেরকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানও প্রায় অভিন্ন। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা চাই ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মান এবং সমতার মাধ্যমে। পড়শিদের সঙ্গে কার্যকরী এবং বাস্তবোচিত সম্পর্ক উভয় রাষ্ট্রের পক্ষেই সুবিধাজনক। সরকারে এলে সেটাই করতে চাইব। আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে ডা. শফিক বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে খারিজ করা বা সরিয়ে দেওয়ার কোনও ইচ্ছা আমাদের নেই। (আনন্দবাজার, ২২/১১/২০২৪)। বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে থাকছে না। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

এসব ঘটনাক্রম থেকে এটা স্পষ্ট যে, আপাতত কেবল আরেকটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ; জুলাই গণ-আন্দোলন বাংলাদেশকে নতুন কোন রাজনৈতিক পথে নিয়ে যাচ্ছে না। তাই জুলুম, দুর্নীতি ও বিদেশী তাবেদারী মুক্ত রাষ্ট্র গড়ার যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছাত্র-জনতা জুলাই আন্দোলনে জীবন দিয়েছিল, সেই জনআকাঙ্ক্ষা আপাতত আর পূরণ হচ্ছে না। কারণ চেহারা বদলিয়ে পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক শোষণের শাসন ব্যবস্থাই অটুট থাকছে, যা সমস্যার জন্য মুলতঃ দায়ী। এই ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, এটি জনগণকে উপেক্ষা করে শাসকগোষ্ঠীর সহযোগী, দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি এবং তাদের কাফির-মুশরিক প্রভুদের স্বার্থে কাজ করে। ফলে, এই ব্যবস্থা বাস্তবায়নের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হচ্ছে আবারও বৈষম্য, জুলুম ও পরাধীনতার সূত্রপাত হওয়া।

অন্যদিকে, মার্কিন-ভারতের সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডাগুলো পূরণ করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার এবং গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো মুখিয়ে আছে; আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন, ক্রুসেডার মার্কিন ও মুশরিক ভারতের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে তা সুস্পষ্ট। তাই পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক বিশ্ব মোড়লেরা যেভাবে “আরব বসন্ত”-কে ব্যর্থ করে দিয়েছিল, ঠিক একইভাবে তারা “বাংলা বসন্ত”-কেও ব্যর্থ করার পথে। দেশের মৌলিক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার সাথে এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র নেতৃত্ব ও সকল সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এটা স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, রাষ্ট্রের মতাদর্শিক পরিবর্তন ছাড়া কখনই রাষ্ট্রের কোনো মৌলিক পরিবর্তন হবে না।

বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র গড়তে হলে সবার আগে বৈষম্যমুক্ত রাজনৈতিক মতাদর্শকে রাষ্ট্রের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক শোষণের ব্যবস্থাকে অপরিবর্তিত রেখে শোষণমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন কোনদিনও বাস্তবায়িত হবে না। সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক চিন্তা, আবেগ ও ব্যবস্থাকে ইসলামী আদর্শ দ্বারা পরিবর্তন করলেই কেবল প্রকৃত বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন, “আল্লাহ্‌ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের (চিন্তা, আবেগ ও ব্যবস্থা) পরিবর্তন করে” (সূরা আর-রাদ: ১১)।

    –    রাশিদ হাসান মাহাদী

“সৌদিতে কাবার আদলে তৈরি মঞ্চে নাচ-গান, বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড়”

খবরঃ

পবিত্র কাবার আদলে তৈরি হয়েছে স্টেজ আর সেই স্টেজে নাচ-গান করছেন … জেনেফার লোপেজ ও সেলিন ডিওন! এমন কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। … সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ শুধু তেলের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে না। বস্তুত, দেশটিতে সামাজিক সংস্কার, বিশেষ করে নারী অধিকারের জন্যও কাজ চলছে।… বেশ কয়েকজন ইসলামী ব্যক্তিত্ব এই ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন এবং কিছু পর্যবেক্ষকও এই প্রদর্শনীটিকে ‘শয়তানি’ বলে অভিহিত করেছেন।… (https://www.jugantor.com/international/880763)

মন্তব্যঃ

‘মর্ডানাইজেশন ও প্রগ্রেস’ (আধুনিকায়ন ও অগ্রগতি) এর চটকদার ব্যানারের আড়ালে পবিত্র ভূমি আরব ভূমিগুলোতে ‘ফাহিসা’ বা অশ্লীলতার প্রতিযোগিতা মুসলিম উম্মাহ্‌কে ব্যাপকভাবে ব্যথিত করছে। এর পিছনে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ক্রমশ ফুরিয়ে যাওয়ায় তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে সৌদি আরবকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য তা ট্যুরিজমভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তর করা হবে। এই লক্ষ্যে তারা অবিবাহিত নারী-পুরুষদের জন্য হোটেল রুম বুকিং-এর অনুমতি দিয়েছে। নতুন নতুন সিনেমা হল তৈরি করা হচ্ছে এবং সেগুলোতে হলিউড, বলিউড সহ সকল ধরনের অশ্লীলতায় ভরপুর পশ্চিমা মুভিগুলো প্রদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, যেসকল সম্মানিত ইসলামী চিন্তাবিদ ও ব্যক্তিত্বগণ শাসকদের এই দূষিত সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন, তাদেরকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। মসজিদগুলোকে আজানের ভলিউম কমানো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং মাইকে নামাজ ও খুতবার প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। এক কথায় সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এর তথাকথিত ‘ভিশন ২০৩০’ এর নামে সৌদি আরবের পবিত্র ভূমিকে এক টুকরো ‘লাস ভেগাস’ বানানোর পঁয়তারা চলছে।

অবক্ষয়ের ধারাবাহিক মহা আয়োজনের অংশই হচ্ছে এই নিউজে আলোচিত অশ্লীল এই কনসার্ট। যেটাকে কেন্দ্র করে ‘অশ্লীল কনসার্ট করা উচিত কি উচিত নয়’ এর পরিবর্তে ‘অশ্লীল কনসার্টে কাবার আদলে গ্লাস কিউব থাকা উচিত কি উচিত নয়’ এই বিতর্ক-কে উস্কে দেয়া হয়েছে। অথচ ‘ইসলামে কোন পুরুষ ও নারী কর্তৃক এমন কোন কাজ করা অনুমোদিত নয় যা সমাজের মূল্যবোধকে পদদলিত করে কিংবা সমাজে অবক্ষয় সৃষ্টি করে’। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা নারীদের ‘নারীত্ব’কে পুঁজি করে কোন ধরনের বেনিফিট অর্জন করা কিংবা ‘নারীত্ব’কে প্রদর্শন করাকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছেন। সুতরাং ট্যুরিজমের দোহাই দিয়ে অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার করা ইসলামে কখনোই অনুমোদিত নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন, ‘নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে, মু‘মিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর আল্লাহ্‌ জানেন এবং তোমরা জান না’ (সুরা নুরঃ ১৯)।

তাই পশ্চিমা চিন্তাসমূহ দ্বারা তৈরি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বিন সালমানের মত শাসকেরা যতদিন আমাদেরকে শাসন করবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের পবিত্র স্থানসমূহের পবিত্রতা এভাবে পদদলিত হবে। সেই সাথে আমাদের মহামূল্যবান পরিবার ও নতুন প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই এগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের পশ্চিমাদের অনুকরণের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে খিলাফতের শাসনব্যবস্থার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। আমরা দেখেছি, ইতিপূর্বে খিলাফতকালীন সময়ে ওসমানী খলিফা সুলতান সোলায়মান তার শাসনাধীন ভূমিতে তো বটেই, খিলাফতের বাহিরেও ফ্রান্সে যখন তিনি শুনলেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যুবক-যুবতীরা একসাথে নাচ গান করার সংস্কৃতি চালু করেছে, তিনি তৎক্ষণাৎ ফ্রান্স সরকারকে চিঠি লিখলেন, ‘শুনেছি আপনাদের দেশের যুবক যুবতীরা এমনভাবে মেলামেশা করে নাচ-গান করে যা নীতি-নৈতিকতা, লজ্জা-শরম সৎচরিত্রের সাথে সংঘর্ষিক। আর এগুলো হয় আপনাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায়। যেহেতু আপনারা আমাদের প্রতিবেশী, তাই ঐসব অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা আমাদের দেশে আমদানি হবার আশঙ্কা প্রবল। অতএব আপনাদের কাছে আমার এই পত্রটি পৌঁছার সাথে সাথে এসব অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা বন্ধ করে দিতে হবে। অন্যথায় আমি নিজেই তা বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে যাব। উক্ত পত্র প্রাপ্তির পর থেকে ফ্রান্সে ১০০ বছর পর্যন্ত প্রকাশ্যে নাচ-গান বন্ধ ছিল।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“বঙ্গোপসাগরে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা”

খবরঃ

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে। গত আট বছরে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বড় প্রতিবেশীর (ভারতের) কাছ থেকে সহযোগিতা প্রত্যাশার চেয়ে কম, তাদের নিজেদের স্বার্থ আছে বলে আমাদের পাশে এসে সমস্যার সমাধান তারা করেনি।” বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে চীন কেন এগিয়ে আসেনি এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে চীনের কাছে (বাংলাদেশের তুলনায়) মিয়ানমার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” (www.prothomalo.com/bangladesh/bmg0mntky6)

মন্তব্যঃ

এটা এখন সুষ্পষ্ট যে, মুসলিমদের প্রকাশ্য শত্রু আমেরিকা ও ভারত, এবং উইঘুরে মুসলিম নিধনকারী চীন কখনোই আমাদের সমস্যার সমাধান করে দিবে না, বরং তারা আমাদের সমস্যাকে জিইয়ে রেখে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করবে। পতিত হাসিনা সরকারের মত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও বিদেশ নির্ভরশীলতার সেই একই বৃত্তাকার চক্রে আটকা পড়েছে। আমরা যদি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীতে রোহিঙ্গা সংকটকে সমাধানের চেষ্টা করি তাহলে দেখবো, এটি আমাদের সামনে এক বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় চীন-আমেরিকার দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব, আরাকান রাজ্য ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের ইস্যুটিকে ব্যবহার করে আমরা মুসলিমরা এই অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারি। আরাকানকে বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করলে খুলনা-বাগেরহাট থেকে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত (থাইল্যান্ডের সামান্য উপকূল বাদে) বিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের উপর মুসলিমদের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে, চীনের বিকল্প বাণিজ্য রুটের (মধ্যপ্রাচ্য-বঙ্গোপসাগর-মায়ানমার হয়ে চীন) পুরো নিয়ন্ত্রন মুসলিমদের হাতে চলে আসবে; এমনকি, দক্ষিন চীন সাগরে চীন-আমেরিকা বিবাদে মুসলিমরা চালকের আসনে অধিষ্ঠিত হবে। আর, এই মূহুর্তে রাখাইন বা আরাকান মায়ানমার থেকে বিচ্ছিন্ন যেখানে তাদের সামরিক সরকারের কোন নিয়ন্ত্রন নেই, যা ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব সুযোগ।

এর পরবর্তী ধাপ হলো, বঙ্গোপসাগরের উপর আমাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং আন্দামান সাগর থেকে মুশরিক রাষ্ট্র ভারতকে বিতারিত করা। কালাপানি নামে পরিচিত আন্দামান ছিল বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও আলেমদের জন্য এক উন্মুক্ত জেলখানা এবং অসংখ্য মুসলিমকে সেখানে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। ১৮৫৭ সালের মে-জুন মাসে বৃটিশদের বিরুদ্ধে জিহাদ করাকে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয বলে আখ্যায়িত করে জিহাদের ডাক দিয়েছিলেন মাওলানা ফযলে হক্ব, যার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রায় ৩০ হাজার মুজাহিদ ও ১২ হাজার সিপাহী দিল্লীকে বৃটিশদের দখলমুক্ত করে বৃটিশ উপনিবেশবাদের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের মূল সংগঠক হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করে বৃটিশ আদালত মাওলানা ফযলে হক্বকে আমৃত্যু নির্বাসনে পাঠিয়েছিল এই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে। ফলে, অসংখ্য শহীদের স্মৃতিবিজরিত ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপকে মুশরিক রাষ্ট্র ভারতের নিয়ন্ত্রনে দিয়ে রাখার কোনই যৌক্তিকতা নেই। এই বিশাল জলরাশির অফুরন্ত সম্পদ ও বাণিজ্য পথের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন হলো মুসলিম হিসেবে আমাদের স্বার্থ। আমাদের এই ন্যায্য অধিকারকে ভাগবাটোয়ারায় ব্যস্ত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-চীন ও অন্যান্য কাফির রাষ্ট্রসমূহ। এই কাজে তাদেরকে সহায়তা করে যাচ্ছে কাফির সাম্রাজ্যবাদীদের পদলেহী ও ক্রীড়ানক এ-টিম, বি-টিম, সি-টিমের মুখোশধারীরা। মুসলিম হিসেবে নিজেদের এই অধিকার ফিরে পাওয়া এখন আর অতি-কল্পনা বা সুদূর পরাহত কোন বিষয় নয়। ইসলামের পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের মাধ্যমে আমরা এই লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারি। মুসলিম শাসনের অধীনে থাকা যে ভূখণ্ডগুলো কাফিররা দখল করে নিয়েছে, সেগুলো মুক্ত করা খিলাফত তথা ইসলামী রাষ্ট্রের বিদেশনীতির একটি অন্যতম লক্ষ্য। তাই, আসন্ন খিলাফতের দৃঢ় নেতৃত্ব ও সাহসী পদক্ষেপ একদা মুসলিম শাসনের অধীনে থাকা আরাকানকে মিয়ানমারের বৌদ্ধসন্ত্রাসী জান্তা সরকারের কবল থেকে মুক্ত করবে এবং অচিরেই আমাদেরকে সমৃদ্ধি ও সম্মানের সেই গন্তব্যে নিয়ে যাবে, ইনশা’আল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন: “আল্লাহ্‌ তোমাদের যা কিছু (সম্পদ, সামর্থ্য) দিয়েছেন তা দিয়ে তোমরা আখিরাতের আবাসস্থল (জান্নাত) অনুসন্ধান করো এবং দুনিয়ার সম্পদে তোমাদের ন্যায্য অংশ পরিত্যাগ করো না। অত:পর তোমরা (মানবজাতির উপর) সেভাবে অনুগ্রহ করো যেভাবে আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন” (সূরা আল-ক্বাসাস:৭৭)

    –    রিসাত আহমেদ

“অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে যা যা ঘটল”

খবরঃ 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে ৫ আগস্ট। ওই দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় ৮ আগস্ট। এরপর ১০০ দিন পার করেছে এই সরকার। এই ১০০ দিনও ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। এ সময়ে সরকার অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, নেওয়া হয়েছে সংস্কারের উদ্যোগ। আবার অঘটনের সংখ্যাও কম ছিল না। (www.prothomalo.com/bangladesh/cu3qe1q6qj)

মন্তব্যঃ

একাত্তর থেকে চব্বিশ পর্যন্ত এই দীর্ঘসময় জনমানুষ তার আকাঙ্ক্ষার কোন প্রতিফলন দেখতে পায়নি। জনগণের দেখভাল এবং বিদেশী আগ্রাসনের দিক থেকে এই দীর্ঘকালীন সময়ে জনগণ তাদের উপর অত্যাচার, নিপীড়ন ও প্রতারণা এবং বৈদেশিক সম্পর্কের নামে দালালীর সংস্কৃতিই প্রত্যক্ষ করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন ইউনুস সরকার এই ১০০ দিনে এই সংস্কৃতি থেকে কি বের হয়ে আসতে পেরেছে? দুঃখজনকভাবে এর উত্তর হলো – না।

শুধুমাত্র রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে কোনরকমে টিকে থাকা, ছাত্রদের ন্যায়-অন্যায় সকল দাবী-দাওয়া মেনে নেয়া, জনগণের ইসলামী আবেগকে হাসিনার কালো আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দাবিয়ে রাখা এবং বিদেশী শক্তির আধিপত্যকে সমুন্নত রাখা ছাড়া আর কোন কাজই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পালন করেনি। দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া উর্ধ্বগতি, কর্মসংস্থানের অভাব, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়মিত বিশৃংখলা, এমনকি হাসিনা পতনের আন্দোলনের আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় অবহেলা- এগুলোর দিকে দৃষ্টি না দিয়ে ‘পলিথিন’ আর ‘হর্নে’র সমস্যা সমাধানরত সরকার স্পষ্টভাবেই নিজেকে একটা জনবিচ্ছিন্ন সরকার হিসেবে প্রমাণ করেছে। মূলতঃ “জনবিচ্ছিন্নতা” ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর একটা স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা, অনৈক্য এবং বিদেশী শক্তির প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্যের ফলে তারা অতি দ্রুত ‘জনবিচ্ছিন্ন’ খেতাবটি অর্জন করেছে। যার ফলে সরকারকে অনেকে ‘আরবান তথা শহুরে সরকার’ বলে আখ্যা দিচ্ছে। মুলতঃ কাঠামোগতভাবেই, ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থায় জনগণের দেখাশোনা করা ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ না। সাম্রাজ্যবাদীদের স্বার্থ, কতিপয় পুঁজিপতিদের স্বার্থ এবং  কতিপয় ব্যক্তি ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার সাথে জনগণের ভাগ্যে শিকে জুটলেও জুটতে পারে।

এই ১০০ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এটা বোঝা উচিৎ, ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ভারসাম্যের অসম্ভব হিসাবনিকাশের খেলার সমাধান করে জনগণের দেখভাল করা যায় না, যাবেও না। বরং ব্যক্তি ও সরকার হিসেবে প্রত্যেকে তাদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তারা যদি ইসলামকে তাদের শাসনের ভিত হিসেবে নিত তাহলে তাদের সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক সহজ হত। কারণ ইসলামে আল্লাহ্‌’র হুকুমের ভিত্তিতে জনগণের দায়িত্ব নেয়া ও রাষ্ট্রে আল্লাহ্‌’র সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সর্বোচ্চ দায়িত্ব। যখন খলিফা উমর (রাঃ)-এর সময় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন তিনি সরাসরি রাষ্ট্রীয় ভান্ডার (বায়তুল মাল) থেকে প্রত্যেক নাগরিকের খাবার ব্যবস্থা করেছেন। অন্যান্য দুর্ভিক্ষহীন অঞ্চলের গভর্নরদের তাদের অঞ্চল থেকে খাবার পাঠানোর তাগিদ দেন। নাগরিকদের ভূমি কর ও ব্যবসায়ীদের উপর খাবার আমদানি কর মওকুফ করে দেন। ক্ষুধার তাড়নায় চুরি করা ব্যক্তির শাস্তি দুর্ভিক্ষকালীন সময়ে বাতিল করেন, কারণ শাসক হিসেবে তিনি প্রত্যেকের খাবারের ব্যবস্থা করতে বাধ্য। শাসক যদি খাবারের ব্যবস্থা না করতে পারে, তাহলে শাস্তি কিভাবে দিতে পারে? ইসলাম খলিফা ওমর (রাঃ)-কে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাঠিন্যে কোন তাত্ত্বিক অজুহাতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ দেয়নি। ঋণে জর্জরিত খিলাফতের সুলতান দ্বিতীয় হামিদকে ঋণ শোধে সহায়তার বিনিময়ে থিওডর হার্জেল ১৯০১ সালে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের অনুমতি দেয়নি, যার কারণে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা পেশের আগেই সুলতান আব্দুল হামিদ তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমার শরীর থেকে এক টুকরো মাংস কেটে নেওয়া আমি পছন্দ করব, কিন্তু উম্মাহ্‌’র রক্ত দিয়ে অর্জিত ফিলিস্তিন আমি বিক্রি করতে পারবো না”। ইসলাম ঋণগ্রস্ত রাষ্ট্রকে বাস্তবতার অজুহাতে উম্মাহ্‌’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার সুযোগ খলিফা আব্দুল হামিদকে দেয়নি। এটাই সেই খিলাফত শাসনব্যবস্থা যা তার নাগরিকদের ও রাষ্ট্রে আল্লাহ্‌’র সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অভিভাবকত্বের নিশ্চয়তা দেয়। ১০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে মুসলিম উম্মাহ্‌ অপেক্ষা করছে তার অভিভাবকের জন্য! খলিফার জন্য! খিলাফতের জন্য!

    –    জাবির জোহান

“আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান”

খবরঃ 

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের আজীবন বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যেই দাবিদাওয়া পূরণ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয়ে আহতদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও আহতদের চিকিৎসায় অবহেলার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  (https://www.jugantor.com/national/878715)

মন্তব্যঃ

সবার আশা ছিলো অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার আহতদের চিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসনকে অগ্রধিকার দিবে। সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় আহতদের চিকিৎসাকে সরকারের অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করলেও বাস্তবে আহতরা নূন্যতম চিকিৎসা সেবা পায়নি। চিকিৎসা না পেয়ে কষ্ট ভোগ করে আহতদের অনেকের যেমন মৃত্যু হয়েছে, তেমনি আহতদের কেউ কেউ ব্যাক্তিগত সম্পদ বিক্রয় করে বা ঋণ করে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ভালো নেই জুলাই আন্দোলনের আহতরা, মুখোমুখি বক্তব্য স্বাস্থ্য উপকমিটি-রোগীদের, দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস, ১৩ অক্টোবর ২০২৪)। কিন্তু, সরকার কেন তাদের চিকিৎসা এবং পূর্নবাসনের বিষয়ে বেখবর, এমনকি ১৪ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে পঙ্গু হাসপাতালে নজিরবিহীন অবরোধের মত ঘটনার পরেও সরকার পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মত আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বের হতে পারছে না। অবস্থাদৃষ্ট মনে হচ্ছে, আহতদের মধ্যে অনেকে যে গুরুতর আহত যাদের জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন এই বিষয়টি বোঝার মত নূন্যতম অনুভূতি সরকারের উপদেষ্টাদের আছে বলে মনে হচ্ছে না।

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে এরকম অবহেলা কি এই সরকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য নাকি অভ্যুত্থান পরবর্তী সকল সরকারের সাধারণ বৈশিষ্ট্য? পূর্ববর্তী গণ-অভ্যুত্থান বা আন্দোলনগুলো যেমনঃ ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৯১ পরবর্তী সরকারগুলোর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করলেও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। ৭১-এর পর যুদ্ধ পরবর্তী শেখ মুজিব সরকার যুদ্ধাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাষ্ট করে দায়সাড়া দায়িত্ব পালন করেছিলেন যার ফলে অসংখ্য ক্ষতিগ্রস্ত মানবতের জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছিল। ৯১-পরবর্তী সরকারকে নূর হোসন, ডা. মিলন এবং জেহাদদের নিয়ে দিবস পালন করতে দেখা গেলেও তৎকালীন আহতদের পুর্নবাসনের জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তিউনিসিয়া ও মিশরে আরব বসন্তের পরও নিহত ও আহতদেরকে অবহেলার একই চিত্র দেখা গেছে। সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার পরেও রাষ্ট্রের কাছ থেকে এ রকম অবজ্ঞা ও অবহেলা বিপ্লবীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করে, যা তাদেরকে আন্দোলনবিমুখ করে তোলে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের একটি আবেগঘন বক্তব্যে কাঁদতে কাদতে বলেছিল, “ছাত্ররা যেন আর কোনো দিন আন্দোলনে না নামে”। তাই একটি গণ-আন্দোলন বা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে আরেকটি গড়ে উঠতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হয়, ফলে পশ্চিমারা দীর্ঘ সময় নিশ্চিন্তে থাকতে পারে ও তাদের কোন দালালকে ক্ষমতায় বসিয়ে জনগণের উপর পুনরায় দুঃশাসন চালায়। পুরো এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরুণদের আন্দোলন বিমুখ করা একটি পশ্চিমা উপনিবেশবাদী এজেন্ডা। কারণ এরকম গণ-আন্দোলন পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের তৈরি করা সেক্যুলার পুঁজিবাদী রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বা কাঠামোকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।

ছাত্র-জনতাকে হতাশ হয়ে আন্দোলন বিমুখ হলে চলবে না, আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের ত্যাগকে তার সঠিক লক্ষ্য অর্জনে কাজে লাগাতে হবে। আন্দোলনকে শুধু পশ্চিমাদের দালাল সরকার পতন নয়, বরং পশ্চিমা সেক্যুলার পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পতনের দিকে ধাবিত করতে হবে। তখনই কেবল আমাদের এই আত্মত্যাগ তার সফলতার মুখ দেখবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী যুলুমের শাসনের অবসান হবে খিলাফতের শাসনের মধ্য দিয়ে: “……তারপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে, অতঃপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত নব্যুয়তের আদলে” (হাদিস: মুসনাদে আহমেদ)

    –    মো: সিরাজুল ইসলাম

“ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন ড. ইউনূস”। “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তারেক রহমানের অভিনন্দন”। “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জামায়াতের অভিনন্দন”। “ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আ.লীগের অভিনন্দন” 

খবরঃ

বিবৃতিতে ড. ইউনূস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় আমি বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া এটাই বোঝায় যে আপনার নেতৃত্ব ও লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়েছে’। …পোস্টে তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পকে তার নির্বাচনী বিজয়ের জন্য অভিনন্দন। আমরা আমাদের দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক এবং সহযোগিতার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।’… জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আশা প্রকাশ করছি তিনি আমেরিকার পাশাপাশি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ বন্ধের যে ঘোষণা দিয়েছেন, বিশ্ববাসী তার বাস্তবায়ন দেখতে চায়’।… আওয়ামী লীগের অভিনন্দন বার্তায় বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্ব শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন বলে আমরা আশা করি। তার নেতৃত্বেই বিশ্বে সকল যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরে আসবে।’ (www.prothomalo.com/bangladesh/1r63wafgsi)(www.dhakatimes24.com/2024/11/06/371230);(www.jugantor.com/politics/875715); (www.jugantor.com/politics/875279)

মন্তব্যঃ

দেশের শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানোর এই ন্যাক্কারজনক প্রতিযোগিতা দেখে মনে হচ্ছে যেন এটা খুবই একটি স্বাভাবিক বিষয়! কিন্তু, এই শাসকগোষ্ঠী কি ভেবে দেখেছে প্রকৃতপক্ষে তারা কাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে? এই সেই ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কিনা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল, এবং বিশ্বের মানুষ ১৪/০৫/২০১৮ তারিখে ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় অরক্ষিত ফিলিস্তিনিদের উপর গণহত্যা চালানোর কথা চিরকাল স্মরণ রাখবে- আর এই একই দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভানকা ট্রাম্পের নেতৃত্বে নৃশংস ইহুদিবাদীদের একটি প্রতিনিধিদল তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক স্থানান্তর উদযাপন উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছিল। যে ট্রাম্প ২৮ জুন ২০২৪ বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিল যেন ইসরায়েলকে তার “কাজ শেষ করার” সুযোগ দেয়া হয়, সেই ট্রাম্পের নিকট কিভাবে ফিলিস্তিন যুদ্ধ বন্ধের আশা করি! মুসলিমদের প্রতি ট্রাম্পের বিদ্বেষ শুধু ফিলিস্তিনিদের প্রতিই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বই তার বিদ্বেষের শিকার হয়েছিল। ট্রাম্পই আফগানিস্তানে “মাদার অফ অল বম্বস” ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সারাবিশ্বে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধকে চলমান রেখেছিল, এবং ইয়েমেন, সিরিয়া, ও ইরাকে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছিল। অতএব মুসলিমদের দায়িত্ব নেয়া এই শাসকগোষ্ঠী কিভাবে কাফিরদের নেতা এই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নিজেদেরকে সমর্পণ করতে পারে?

এটা সর্বজনবিদিত যে, এই অঞ্চলে আমেরিকা চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং ইসলামের পুনর্জাগরণকে প্রতিহত করতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শাসক পরিবর্তনের ফলে এই উদ্দেশ্যসমূহের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে না। পার্থক্য শুধু রিপাবলিকানরা পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগ্রাসী আচরণ করে আর ডেমোক্র্যাটরা প্রতারণা ও কূটচালের আশ্র্রয় নেয়। উভয় দলই বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর বিষয়ে তাদের মূল নীতিতে ঐক্যবদ্ধ। বরং, রিপাবলিকানরা আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে আরও নতজানু করার চেষ্টা করবে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের তথাকথিত নির্যাতিত নিয়ে ট্রাম্পের টুইট বার্তা, জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পথে নিযুক্ত তুলশী গ্যাবার্ডের সাম্প্রতিক বক্তব্যে যার কিছু নমূণা। ফলে আমরা প্রত্যক্ষ করবো, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য চাপ বাড়বে, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও মানবাধিকারের নামে USAID ও OHCHR-এর মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে LGBTQ+ মতবাদসমূহের প্রচারণা অব্যাহত রাখবে (“জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান আঞ্চলিক অফিস স্থাপনসহ অধিকার ইস্যুতে বিস্তৃত আলোচনা করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও অন্যান্য অংশীদারদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে”, নভেম্বর ১২, ২০২৪, ঢাকা ট্রিবিউন), তারা শেভরন, কনোকোফিলিপস এবং এক্সনমোবিলের মতো পুঁজিবাদী কর্পোরেশনগুলোর মাধ্যমে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে, World Bank ও IMF-এর নীতিসমূহ বাস্তবায়নে বাধ্য করে আমাদের জীবনকে কঠিন করে তুলতে কোন প্রচেষ্টাই বাকি রাখবে না, এমনকি তারা ACSA ও GSOMIA-এর মতো সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনকারী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিতে থাকবে, জাতিসংঘ মিশনের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে আমেরিকার উপনিবেশবাদী উদ্দেশ্যসমূহ হাসিলের জন্য বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা অব্যাহত রাখবে, অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল ও মুশরিক রাষ্ট্র ভারতের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের উপর চাপ বাড়বে, এবং বাংলাদেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্ক্ষা জনগণের রয়েছে তা দমন করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। সর্বোপরী, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যখন বলেন: “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। এবং তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে” [সূরা আল মায়িদাহ: ৫১], তারপরও কি দেশের শাসকগোষ্ঠীর কোনভাবে আমেরিকাকে বন্ধু কিংবা অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আছে?

মুসলিমদের জন্য প্রকৃত অভিনন্দন জানানো ও বিজয় উৎযাপনের দিন হচ্ছে, যখন মুসলিম উম্মাহ্‌’র অভিভাবক খলিফা নিযুক্ত হবেন। তিনি শুধু মুসলিম উম্মাহ্‌’র নয় বরং পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী দেশসমূহের আগ্রাসনে নিষ্পেষিত মানবজাতির উদ্ধারকর্তা হিসেবে আভির্ভূত হবেন। “সেদিন মু‘মিনরা বিজয়ের আনন্দে আনন্দিত হবে; আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বিজয়ে” (সূরা আর-রূম: ৪-৫)

    –    মোহাম্মাদ জুবায়ের