Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 98

 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

৯৮ তম সংখ্যা । ১২ আগস্ট, ২০২৩

এই সংখ্যায় থাকছে: 

 

“ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে বুয়েট ছাত্রদের শপথ” 

“নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো রকমের চুক্তি করবে না বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী”

“ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা”

“জনগণই আওয়ামী লীগের প্রভু: প্রধানমন্ত্রী”

“এস আলমের আলাদিনের চেরাগ” 

“বাংলাদেশে যা-ই ঘটুক, আমরা তাতে যুক্ত থাকিঃ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়”

“অভাবের তাড়নায় গায়ে আগুন দিলেন রিকশাচালক“

 

 

“ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে বুয়েট ছাত্রদের শপথ” 

খবরঃ

সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে শপথগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। …বুয়েট ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মৌলবাদ চর্চা হবে না বলে শিক্ষার্থীরা বলেন, সব ধরণের লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতি ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে আমরা বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে দৃঢ় অবস্থান তা থেকে সরে আসব না। যে কোন ছাত্র রাজনীতি এবং মৌলবাদ চর্চা বুয়েট ক্যাম্পাসে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না, তা সে যে দলেরই হোক না কেন। (https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/704945/ছাত্র-রাজনীতির-বিরুদ্ধে-বুয়েট-ছাত্রদের-শপথ)

মন্তব্যঃ

রাজনীতি একটি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অভ্যন্তরে থেকে কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি শপথ গ্রহণ করলেই রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক বলয়ের বাহিরে যেতে পারেনা। সুতরাং, এই ধরণের শপথ কারো কারো নিকট সময়পোযোগী মনে হলেও বাস্তবে এটি একটি আবেগী সিদ্ধান্ত। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষক ও ছাত্রদের এই সত্য বুঝতে নূন্যতম সময়ের প্রয়োজন নেই যে, আসলে সমস্যা রাজনীতিতে নয়, সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক আদর্শ ও উদ্দেশ্যে, যা এর প্রকৃত অর্থ অর্থাৎ “জনগণের তত্ত্বাবধান করা” হতে বিচ্যুত হয়ে গেছে। মানুষের সমাজবদ্ধ হওয়ার ইতিহাস হচ্ছে, তাকে তার জৈবিক চাহিদা (যেমন ক্ষুধা নিবারণের জন্য খাবার) এবং সহজাত প্রবৃত্তি (যেমন যৌন চাহিদা পূরণের জন্য বিয়ে) পূরণের জন্য আরেকজন মানুষের উপর নির্ভরশীল হতে হয় এবং এই প্রয়োজনের তাগিদ থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ হয়। সমাজবদ্ধ মানুষগুলোর এই চাহিদাসমূহ পূরণ যাতে একটি নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয় তা দেখাশুনা বা তত্ত্বাবধানের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ বা শাসকের প্রয়োজন হয়। এবং এই শাসক যাতে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে তা নিশ্চিতের জন্য সমাজে রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক কার্যক্রমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, এই দেখাশুনা যখন কোন শাসক ও রাজনীতিবিদরা ভুল কিংবা দুর্নীতিগ্রস্থ জীবনাদর্শ দ্বারা পরিচালনা করে তখন রাষ্ট্রে ও এর অভ্যন্তরে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বিশৃংখলা তৈরি হয়। যেমন, আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শাসক-রাজনীতিবিদরা ত্রুটিযুক্ত ও দুর্নীতিগ্রস্ত ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা দ্বারা আমাদের দেখাশুনা করে আসছে কিংবা করতে চায়, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা আকড়ে ধরে রেখে নিজেদের ও ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা এবং সাম্রাজ্যবাদীদের ঘৃণ্য এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। তাদের এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তারা তাদের ছাত্র রাজনীতিকেও সাজিয়েছে। আর এজন্যই, দেশে এবং দেশে অবস্থিত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য বিরাজ করছে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের এই সত্য বুঝা জরুরী যে, আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ড এই কুফর রাজনৈতিক এজেন্ডারই ফল।

আপনাদেরকে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ বিরোধী যে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়েছে তাও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক এজেন্ডা। কারণ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসীরা এই দু’টো শব্দ ব্যবহার করে মূলত ইসলামকে বর্জন করে কুফরকে গ্রহণ করার জন্য। সমাজে সাম্প্রাদায়িক সম্প্রতি বিরাজ করার জন্য নয়। কেননা, ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবনব্যবস্থা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করতে পারেনি। একদিকে এই শাসকগোষ্ঠীর অংশীদাররা আপনাদের রাজনৈতিকশূন্য (রাজনৈতিকভাবে অসচেতন) করতে রাজনীতিকে বর্জন করার শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছে। আর অন্যদিকে আপনাদেরকে দিয়েই তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। কিছুদিন আগেও সমাজে প্রেমের নামে ফ্রিমিক্সিং, বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক করে মেয়েদের প্রেগন্যান্ট করে ডাম্প করা এবং অন্যকেউ এসে সতিত্ত্ব হারানো মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া এমন পশ্চিমা অপ-সংস্কৃতি প্রচার করতে কনজ্যুমার কোম্পানি ইউনিলিভার- ক্লোজআপ “সময় সব জানে” শর্ট ফিল্মে বুয়েটের মেধাবী অঙ্গনকে ব্যবহার করে “এই সময়ের কাছে আসার গল্প ২০২৩” এর আড়ালে ক্যাম্পেইন করে। এই সংস্কৃতি কি বুয়েটের মেধাবী সংস্কৃতি? কিংবা বুয়েটের মেধাবীরা এমন লম্পট কিছু ফেরি করে বেড়ায়? না। এটা ধর্মনিরপেক্ষ (সেক্যুলার) কুফর সংস্কৃতি। কিন্তু, রাজনৈতিকভাবে অসচেতন হওয়ার কারণে ব্যাপারটাকে “ভিন্নধর্মী ভালোবাসার গল্প” মনে করে আমরা অনেকেই পশ্চিমাদের এমন চাল ধরতে পারিনি।

আসলে রাজনীতি বা উম্মাহ্‌’র দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে একজন মানুষ সমাজ এবং রাষ্ট্রের অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন করে। শাসকগোষ্ঠীর দেশ, সমাজ, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের সাক্ষী হয় এবং এর থেকে উম্মাহ্‌কে মুক্ত করার উপায় খুঁজে পায়। কিন্তু, রাজনৈতিক অসচেতনতা মেধাবীকেও নির্বোধ এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন করে তুলে। তাই সত্য হচ্ছে শাসকগোষ্ঠী আপনাদেরকে রাজনৈতিকভাবে নির্বোধ বানিয়ে তাদের কুফর রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যক্তি, সমাজ, প্রতিষ্ঠান কখনোই রাজনৈতিক এজেন্ডা এবং আহ্বান থেকে মুক্ত নয়। সমাজ এবং রাষ্ট্রে সবসময় সত্য কিংবা বাতিলের পক্ষে রাজনৈতিক আহবান বিরাজ থাকে। প্রকৃত মেধাবী তারাই যারা সত্যের আহবানে সাড়া দিয়ে সত্যের পক্ষে অবস্থান নেয় আর বাতিলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। আমরা যদি সূরা বুরুজের ঘটনা স্মরণ করি। তাহলে, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র বর্ণনানুযায়ী দেখবো, সে সময় “আসহাবুল উখদুদ”-এর যালিম শাসক তৎকালীন সবচেয়ে মেধাবী বালককে আহ্বান করে, সে যেনো কুফর-ম্যাজিক শিখে তার জুলুমের সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু, আল্লাহ্‌’র ইচ্ছায় যখন তার কাছে সত্যের আহ্বান আসে তখন সে দৃঢ়-প্রত্যয়ে সত্যের পক্ষে অবস্থান নেয়। মানুষকে হেদায়েতের দিকে আহ্বান করে। যার ফলে, যালিম শাসক আবরার ফাহাদের মত তাকেও হত্যা করে। এই ঘটনা দুনিয়ার চোখে একজন মেধাবীর অকাল ঝরে পড়া মনে হলেও আল্লাহ্‌’র কাছে তা মহাসাফল্য। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেন, “নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং  সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নহরসমূহ। এটাই বিরাট সাফল্য” (সূরা-বুরুজঃ ১১)। প্রকৃতপক্ষে এই উম্মাহ্‌র প্রতিটি মেধাবী সন্তান এক একটা দরজা। যে দরজা দিয়ে হয় সমাজে কুফর অবস্থান নিতে পারে, না হয় ইসলাম। এমতাবস্তায়, আমাদের বুয়েটের মেধাবীরাতো ছাত্ররাজনীতি, মৌলবাদবিরোধী শপথ নিয়ে কাফেরদের দালাল শাসকগোষ্ঠীর সামনে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন কিন্তু, এর ফলে আল্লাহ্‌’র সামনে তাদের যে অবস্থান দাঁড়ালো তা নিয়ে কি মেধাবীদের মত ভেবেছেন?

    –    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

“নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো রকমের চুক্তি করবে না বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী”

খবরঃ

চলতি মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সময় দুই দেশের মধ্যে ‘আকসা (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট)’ ও ‘জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট)’ নামে দুই চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এ সময় ‘আকসা’ ও ‘জিসোমিয়া’ চুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জিসোমিয়া ও আকসা চুক্তি সই হবে না।’ বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নাগরিক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাবিষয়ক ‘আকসা’ ও ‘জিসোমিয়া’ দুটি চুক্তি সই করতে আগ্রহী দেখাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আকসার আওতায় মার্কিন বাহিনী খাদ্য, জ্বালানি, গোলাবারুদ ও সরঞ্জামাদি বিনিময় করে থাকে। অন্যদিকে জিসোমিয়া হচ্ছে মার্কিন সরকার ও মার্কিন সমরাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সইকারী দেশের সরকার ও সমরাস্ত্রবিষয়ক বিশেষায়িত সংস্থার মধ্যে সম্পাদিত গোপন তথ্য বিনিময়ের চুক্তি। (https://www.ittefaq.com.bd/655259)

মন্তব্যঃ

বিশ্বাসঘাতক এই আওয়ামী সরকার ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে দুই হাত ভরে দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরে নির্মিত পলিসি ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’র আদলে বাংলাদেশ ‘ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক’ ঘোষণা করে যা যুক্তরাষ্ট্রের চীন দমন নীতির প্রতি প্রকাশ্য সম্মতি। এর ফলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ এখন পদাতিক সৈন্য হিসেবে কাজ করবে। উপরন্তু গত ৫ আগস্ট সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানা যায় যে, “দেশে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পেতে যাচ্ছে মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল। এ কাজে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় কোম্পানিটি। এরই মধ্যে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি বা পিএসসি অনুমোদন করেছে সরকার। এতে বিদেশি কোম্পানি প্রাপ্ত তেল-গ্যাসের ৫০ শতাংশ পাবে। বাংলাদেশ না কিনলে, থাকছে রফতানির বিধানও। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এক্সন মবিলের সাথে সমঝোতা স্মারক সই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জ্বালানি বিভাগ” (https://jamuna.tv/news/474098)। সুতরাং এখন প্রতিরক্ষাবিষয়ক ‘আকসা’ ও ‘জিসোমিয়া’ চুক্তি দুটি সই করা বা না করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুব জরুরী বিষয় না। এটা তারা আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসলেও করতে পারবে। তখন সেটা হবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উপহারস্বরূপ। কিংবা বিষয়টিকে এভাবেও দেখা যেতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বহাল রাখলে তারা এর প্রতিদানস্বরূপ চুক্তি দুটি সম্পাদন করবে!

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, নির্বাচনের আগে কিংবা নির্বাচনের পরে যখনই এই চুক্তি দুটি সই করা হোক না কেন তা বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন করে ফেলবে এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। মুসলিম সেনাবাহিনীর উপর কাফিরদের এই কর্তৃত্ব নিঃসন্দেহে হারাম। কিন্তু এর পূর্বেও আমরা দেখেছি এই আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন কাফির রাষ্ট্রসমূহ যেমন ভারত কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে যেই মুসলিম সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেই সেনাবাহিনীকে কিনা এই শাসকগোষ্ঠী কাফিরদের হাতে তুলে দিচ্ছে! মূলত এসকল চুক্তি কিংবা সামরিক মহড়ার মাধ্যমে কাফিরদের কাছে আমাদের সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তা ও গোপনীয়তাই শুধু প্রকাশ পায়। অপরদিকে কাফিরদের সাথে যে স্বাভাবিক শত্রুতাপূর্ন দৃষ্টিভংগি থাকে মুসলিম সেনাবাহিনীর সেটিকেও ভোতা করে দেয়া হয় এবং তাদেরকে বন্ধু ভাবতে শিক্ষা দেয়া হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এই দুটি সামরিক চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুই ধরণের উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাচ্ছে- প্রথমত, চীনের উত্থানকে ঠেকানো এবং দ্বিতীয়ত বাংলাদেশে খিলাফতের প্রত্যাবর্তনকে প্রতিহত করা। ঠিক একারণেই ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের আওয়ামী-বিএনপি শাসকগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশসমূহ যে আদর্শ দ্বারা নিজেদেরকে পরিচালিত করে সেই একই আদর্শের অনুসারী, আর তা হল সেক্যুলার-পূজিবাদী জীবনব্যবস্থা। ফলে আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমাদের দাসে পরিণত হয়। ফলে তারা যেকোন প্রকারেই পশ্চিমাদের সন্তুষ্ট করে ক্ষমতায় টিকে থাকাটাকেই স্বার্থকতা মনে করে। ফলে, আমরা যদি এসকল দাস-দাসীদের হাতে নিজেদের ভাগ্যের রেখা আকার দায়িত্ব তুলে দেই তাহলে তারা তাদের প্রভু পশ্চিমাদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যৎ তুলে দিবে। সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদেরকেই রচনা করতে হবে। আমাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিয়ন্ত্রণে আসতে হবে। এবং একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই পারে আমাদেরকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত করে আল্লাহ্‌র দাসত্বে ফিরিয়ে আনতে। তাই আমাদের রাজনীতি হতে হবে শুধুমাত্র খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। খিলাফত রাষ্ট্র একই সংগে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, জ্বালানি সম্পদ, অর্থনীতি- সবকিছু থেকেই কাফিরদের নিয়ন্ত্রনকে বিলুপ্ত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক চুক্তিতো দূরের কথা। উপরন্তু, ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়াসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে তারা যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তার বদলা নেয়া হবে, ইনশা’আল্লাহ। “আল্লাহ্‌ কক্ষনো মু’মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বকে মেনে নিবেন না” [সুরা নিসাঃ ১৪১]।

    –    মো. হাফিজুর রহমান     

“ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা”

খবরঃ

লালমনিরহাটে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সময় মত ট্রেনগুলো চলাচল না করায় হাজার হাজার যাত্রী বি‌ভিন্ন স্টেশনে আটকা প‌ড়ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে আটকা পড়ে ভ্যাপসা গরমে শিশুদের নিয়ে বিপাকে অভিভাবকরা। আর দীর্ঘ অপেক্ষার পর ট্রেন ছাড়লেও গন্তব্যে পৌঁছাতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। ‘লালমনি এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেনটির যাত্রী মোমেনা বেগম জানান, ট্রেনের অপেক্ষায় প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে বসে থাকলেও কোনো খবর নেই। ট্রেনটি কখন আসবে তা স্টেশনমাস্টারও বলতে পারেন না।(https://www.somoynews.tv/news/2023-08-01/vQKCHsQ6)

মন্তব্যঃ

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় বাংলাদেশের জন্য একটি নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা। দুই ঈদে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের আনন্দকে মাটি করে দিয়ে এই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করলেও সারা বছরেই বিভিন্ন অজুহাতে শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। আর এটি যদি হয় লালমনিরহাটের মত একটি প্রত্যন্ত জেলায়, তাহলে তো কোন কথাই নেই, ঠিকমত মিডিয়া কাভারেজও পায়না! মিডিয়া কাভারেজ পেতে হলেও হয় লাইনচুত্য হয়ে ট্রেন উল্টাতে হয়! বা মানুষ মরতে হয়! লালমনিরহাটের কয়েকটি স্টেশন স্টেশনমাস্টারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। অন্য স্টেশনগুলোও মাত্র একজন স্টেশন মাস্টার দিয়েই চলে। তাকে সহায়তা করার কেউ নেই। সুইপার বা ক্লিনার না থাকায় নোংরা দুর্গন্ধে স্টেশনে দাঁড়ানোর পরিবেশ নেই বললেই চলে। আবর্জনার ভাগাড় ওয়েটিং রুমগুলোর অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। যেখানে দুর্গন্ধের কারণে মূল স্টেশনেই দাঁড়ানোর উপায় থাকে না সেখানে স্টেশনের টয়লেটগুলোর যে কী অবস্থা তা সহজেই অনুমান করা যায়! এই অবস্থায়ই প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছেন হাজার হাজার মানুষ। অথচ রেলের বর্তমানে চলমান ৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্পে সরকার ব্যয় করেছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পগুলো সমাপ্ত হতে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে তিনগুণের বেশি (দৈনিক যুগান্তর, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২)। এর বাইরেও রেল মন্ত্রনালয় প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ পায় (গতিহীন রেলে বরাদ্দ ১৯ হাজার কোটি টাকা, কালের কন্ঠ, ২ জুলাই ২০২৩, https://www.kalerkantho.com/print-edition/budget-2023-24/2023/06/02/1285903)। বস্তুত: রেলখাত হল রাজনীতিবিদ ও তাদের চেলাচামুন্ডাদের লুটপাটের আখড়া ও জনগণের সাথে দেশের শাসকগোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকতার একটি বড় উদাহরণ।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রা শুরু করে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। বৃটিশ দখলদার এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলের সেকুলার ও আল্লাহদ্রোহী শাসকরা ১৫০ বছরেও এই খাতের কোন তেমন অগ্রগতি করেনি। জনগণের সেবার কথা বলে ক্ষমতায় বসলেও প্রতিটি সরকারই জনগণের সাথে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ফলে জনগণের করের টাকায় পরিচালিত রেলখাত জনসেবার নামে জনগণের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। সেকুলার ও আল্লাহদ্রোহী হাসিনা সরকার উন্নয়নের গালগল্প শোনালেও রেলস্টেশনের মত সামান্য স্থাপনা রক্ষনাবেক্ষন, পরিচ্ছন্ন ও ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি! অথচ তারা রেলের উন্নয়নের নামে জনগণের ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা নয়ছয় করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। বুলেট ট্রেন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার নামে ১১০ কোটি টাকা খরচ করার পর আল্লাহদ্রোহী এই সরকার নাকি বুঝতে পেরেছে বুলেট ট্রেন বাংলাদেশের জন্য অতি উচ্চাভিলাসী! অথচ রেল স্টেশনের একজন স্টেশনমাস্টার কিংবা ক্লিনার নিয়োগ করার মুরোদও নেই এই সরকারের। (বুলেট ট্রেন প্রকল্প স্থগিত: অপচয় ১১০ কোটি টাকা, দৈনিক জনকন্ঠ)।

উসমানীয় খিলাফতের সময়ে পবিত্র হজ্জ পালনের সুবিধার্থে দামেস্ক-জেরুজালেম ও মদীনাকে সংযোগকারী ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ্য “আল-হিজায রেললাইন” ১৯০৮ ‍সালে চালু হওয়া অল্প কিছুদিনের মধ্যেই যাত্রীদের জন্য নিয়মতান্ত্রীক সেবা প্রদান করার এক বিশ্বস্ত মাধ্যমে পরিণত হয়েছিল। এই রেলের সেবা এতটাই নিয়মতান্ত্রীক ও সময়ানুবর্তী ছিল যে ট্রেন পৌঁছাতে ০৫ মিনিট দেড়ি হলেও তা রেডিও ও পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ শিরোনামে পরিনত হত! (দেখুন: Al Jazeera, 2 Feb 2022, skip to 14:30 minutes, https://www.youtube.com/watch?v=QUCeQt8zg5o)। উসমানীয় খিলাফতের সবচেয়ে দূর্বলতম সময়েও এমন অভাবনীয় যাত্রীসেবা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় কী চমৎকার একটি শাসনব্যবস্থা ছিল খিলাফত! আজ থেকে ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে শত্রুদের নানান ষড়যন্ত্র, নানান সীমাবদ্ধতা ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা থাকার পরও এমন একটি প্রশংসনীয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র খিলাফত শাসনব্যবস্থার দায়িত্বশীল মানসিকতার কারণে। ইনশাআল্লাহ্‌, আসন্ন খিলাফত পূর্বের খিলাফতের এই অর্জনকে ছাড়িয়ে যাবে। জনগণের যাতায়াতের প্রয়োজন পূরণতো বটেই, পুরো উম্মাহ্‌’র মধ্যে সংযোগ স্থাপনে আসন্ন খিলাফত এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবে যা পৃথিবীতে আগে কখনো কেউ দেখেনি! এর জন্য প্রয়োজন খিলাফতকে ফিরিয়ে আনার কাজে সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে সম্পৃক্ত করা যেন আমরা সেই দুর্লভ গৌরবের অংশীদার হতে পারি যা বিচার দিবসে আলো হয়ে আমাদের মুখমন্ডলের জ্যোতিকে হাজার গুণ বাড়িয়ে দিবে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: “সেদিন কিছু মানুষের মুখমন্ডল হবে দ্যুতিময় উজ্জ্বল। তারা (আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে) তাদের সুমহান রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে”! (সূরা কিয়ামাহ: ২২-২৩)

    –    রিসাত আহমেদ

‘জনগণই আওয়ামী লীগের প্রভু: প্রধানমন্ত্রী’

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নেই। জনগণই আওয়ামী লীগের প্রভু। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আজ রোববার তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের বিশেষ বর্ধিত সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন।… প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে আজ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ প্রদত্ত ‘উন্নয়নশীল দেশের’ মর্যাদা পেয়েছে। এজন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/1al5fs8swu)

মন্তব্যঃ

‘শাসকের জন্য মানুষের হৃদয় জয় করার চেয়ে তাদের প্রতারিত করা এবং ভয় দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। এ দুই শক্তিকে জোরদার করা এবং এর চর্চাই সার্বভৌমত্বের পক্ষে বেশি কার্যকর। রাষ্ট্র ও ক্ষমতাকে সংহত করতে যদি মিথ্যা, বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতার দরকার হয়, তা হলে সেটিই ভালো’- ম্যাকিয়াভেলির এই তত্ত্বকথার বাস্তব রূপ হলেন এদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই প্রতারক যখন খুশি তখন জনগণকে মুখ দিয়ে প্রভুর আসনে বসিয়ে দিলেও বাস্তবতা হল ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার স্বার্থে সে দেশের জনগণকে পিষে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, আইন-শৃঙ্খলা, বিচারসহ সর্বক্ষেত্রে সে ও তার আশীর্বাদপুষ্ঠ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীগণের সীমাহীন লুটপাট এবং জুলুমে জনগণ যখন অতিষ্ঠ এবং নিষ্পেষিত, তখন তার এই প্রতারণামূলক কথাবার্তা জনগণের সাথে নির্মম উপহাস ছাড়ার কিছুই না। কারণ শুধুমাত্র খাদ্যের কথাই যদি ধরি, দেশে দুই কোটিরও বেশি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। আর পাঁচ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে আছে। সে তার প্রভুরূপী জনগণকে এই অবস্থায় রেখেছে! ‘জনগণ’ নামক প্রভুর কতইনা নাফরমান বান্দা সে! এই প্রতারক আরো বলে যে, সে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় বাংলাদেশকে উন্নীত করেছে। অথচ পেটে ক্ষুধা নিয়ে মরে গেলে এই মর্যাদা দিয়ে কি হবে? সেটা ভেবে দেশের মানুষ দিশেহারা অনুভব করে। তবে মুখে যাই বলুক, প্রকৃতপক্ষে এ সকল প্রতারকদের প্রভু হল মার্কিন-ব্রিটেন-ভারতের মতো উপনিবেশবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো। এই রাষ্ট্রগুলো তাদের দালাল রাষ্ট্রগুলোতে তাদের স্বার্থের অনুযায়ী কোন জায়গায় পশ্চিমা মডেলের গণতন্ত্র, কোন জায়গায় রাজতন্ত্র (মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো) কিংবা কোন জায়গায় স্বৈরতন্ত্র (আফ্রিকার দেশসমূহে)- সেটা নির্ধারণ করে। আর বাংলাদেশে তারা দিয়েছেন ‘নির্বাচনের গণতন্ত্র’। তাই এখানে নির্বাচন একটা করতেই হবে। সেটা যেকোনোভাবেই হোক না কেন? তাই প্রতি নির্বাচনের আগেই চলে দালালদের সাথে তাদের দরকষাকষি। তারপর দর ঠিকঠাক হলে, তারা ঠিক করে, কোন ভৃত্যকে তারা ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। এরপর নির্বাচন শুধুমাত্র একটা আনুষ্ঠানিকতা, সেটা জনগণের অংশগ্রহণে হোক কিংবা অন্য কোনভাবে। যেমন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সরকার যে সমঝোতার সরকার, সেটা শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছে।

তাই ‘উপনিবেশবাদীদের বান্দা’ ও ‘ম্যাকিয়াভেলির উম্মত’ এ শাসকদের কাছে আমাদের কোনই আশা নেই। তারা কখনোই আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করবে না, বরং আমাদেরকে জুলুম ও উপহাস করে যাবে। আমাদের দরকার এমন শাসনব্যবস্থা যেখানে শাসকগণ একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’কে প্রভু হিসেবে মেনে নেন। তারা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জনগণের প্রকৃত সেবক হিসেবে আবির্ভূত হন। জনগণের অভাব দূর করে সচ্ছলতার ব্যবস্থা করেন। উম্মতকে নেতৃত্বের আসনে বসান। যেমন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর হাদিস এর সত্যায়ন করে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ী মোহাম্মদ আল ফাতিহর শাসন আমলে একবার এক ব্যক্তি যাকাত দেওয়ার জন্য উপযুক্ত কোন লোক খুঁজে না পেয়ে, অবশেষে সে যাকাতের সম্পদ একটা থলের মধ্যে রেখে ওর উপর লিখে দেয়, ‘হে আমার ভাই, এটা আমার যাকাতের সম্পদ, আমি যাকাত দেওয়ার উপযোগী কোন মানুষ পাইনি, যদি তুমি এ সম্পদের হকদার হয়ে থাকো, তবে নির্দ্বিধায় তা নিতে পারো’। এরপর এটিকে শহরের একটি গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখেন। আশ্চর্যের বিষয় হলেও থলেটি সেই গাছের ডালে তিন মাস ধরে ঝুলে ছিল, কিন্তু কেউ সেটা গ্রহণ করেনি।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“এস আলমের আলাদিনের চেরাগ” 

খবরঃ 

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি বলে দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে জানা গেছে। গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছেন এবং সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন অফশোর বিজনেসের যে বিস্তৃত জাল বুনেছেন, তার কিছু অংশ ডেইলি স্টারের কাছে থাকা নথি থেকে জানা গেছে। আমাদের অনুসন্ধানে এস আলম ও তার স্ত্রীর সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এবং সাইপ্রাসে বিনিয়োগের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশে অর্থপাচার দীর্ঘদিন ধরে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক বড় প্রতিষ্ঠান ও হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিরা দেশে উচ্চ কর ফাঁকি দিতে অফশোর ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে যা মেট্রোরেল লাইন-৬ (উত্তরা থেকে মতিঝিল) এর ব্যয়ের প্রায় ৩ গুণ। (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/%20Investigative-report/news-502561)

মন্তব্যঃ  

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম হাসিনা সরকারের সাথে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত একজন ব্যক্তি, পাশাপাশি এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার অংশও বটে। মোহাম্মদ সাইফুল আলম, পিকে হালদার, এমপি পাপুল, আব্দুল হাই বাচ্চুর মত সরকার মদদপুস্ট এসব লুটেরাদের লিস্ট অনেক লম্বা যারা গত ১০-১২ বছরে দেশব্যাপী একের পর এক বিভিন্ন আর্থিক ক্যালেঙ্কারী ঘটিয়েছে। ইতিপূর্বে পানামা পেপারস, প্যরাডাইস পেপারস এবং প্যান্ডোরা পেপারসের মত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা অত্যন্ত নগ্নভাবে উন্মোচন করেছে কিভাবে বর্তমান সেকুলার পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা সহ বিশ্বব্যাপী সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্ম দিয়েছে। বহু দশক ধরে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে যে দুর্নীতিবাজ শাসক ও পুঁজিপতি অভিজাত শ্রেণীর লোকজন জনগণের টাকা দুর্বৃত্তায়ন করে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিদেশে অফশোর কোম্পানি গড়ে তুলছে কিংবা পাচার করা বিপুল অর্থ বিভিন্ন বৈদেশিক বিনিয়োগ ফান্ডের মাধ্যমে আড়াল করছে। মুক্ত বাজারের আবির্ভাবের সাথে অফশোর প্রতিষ্ঠানের উত্থান হওয়ায় তা বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ এবং পুঁজিপতি অভিজাতশ্রেণীর অবৈধ অর্থ পাচার ও সেগুলো গোপন করার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ব্রিটিশ শাসিত ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ, ভারত মহাসাগরের সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের মত অঞ্চলগুলো বিশ্বের বিভিন্ন ধনকুবের ও দুর্নীতিবাজ শাসকদের বিস্ময়কর পরিমাণ অর্থ পাচার ও সুরক্ষার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। বিশ্ব অর্থনীতির ১০% অর্থ পাচার হয়ে বিভিন্ন খোলস সর্বস্ব কাগুজে কোম্পানিতে জমা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

কার্যত, দুর্নীতিবাজদেরকে কখনোই ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। দুর্নীতি ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাসের মধ্যেই প্রোথিত এবং এই লুটেরা অভিজাত শ্রেণী সেক্যুলার রাজনীতির ফসল। ‘স্রষ্টাহীন’ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ শুধুমাত্র সুবিধা এবং প্রতারণার মাধ্যমে বস্তুগত লাভের চারপাশে আবর্তিত হয়। এই জীবনব্যবস্থায় পুঁজি (Capital) হচ্ছে পরম পূজনীয় জিনিস, সেটা বৈধ হোক কিংবা অবৈধ হোক। তাই স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অর্থলিপ্সু ব্যক্তিরা তাদের কায়েমী স্বার্থে এই ব্যবস্থার আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে ও তাদের অশুভ স্বার্থে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অগাধ সম্পত্তি অর্জন এবং সেগুলোকে সুরক্ষিত করতে পারে। অতঃপর দুর্নীতিমূলক আয়ের বৈধতা দেয়ার জন্য দুর্নীতিবাজদেরকে দায়মুক্তি দিয়ে সরকারের ছত্রছায়ায় অস্পৃশ্য করে রাখা হয় এবং কর ফাকি সহ দুর্নীতি ও আত্বসাৎ করা বিপুল অর্থকে সকল প্রকার জবাবদিহিতার বাইরে রেখে নিরাপদে বিদেশে পাচারের সুযোগ দেয়া হয়। এভাবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানি লন্ডারিং এবং দুর্নীতিবাজ অভিজাতদের সুরক্ষার জন্য নিরাপদ স্বর্গ হয়ে ওঠে এবং এটা একটা দুর্নীতিবান্ধব শাসনব্যবস্থায় পরিণত হয়।

বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী সকল পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহে দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থপাচারের যে মহোৎসব চলছে তা হল জীবনব্যবস্থা পরিচালনার ভিত্তি হিসেবে আল্লাহ্‌র আইনকে পরিহার করার অনিবার্য পরিণতি। দুর্নীতি ও লুটপাটের অবসান ঘটাতে হলে এই দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটাতে হবে এবং নবুওয়্যাতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফাহ রাশিদাহ ফিরিয়ে এনে আল্লাহ্‌র আইনের পরিপুর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। খিলাফত রাষ্ট্রে রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তাকওয়া (খোদাভীতি) যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি ও লুটপাটের স্পিরিট গোড়া থেকেই নির্মূল হয়ে যাবে। সমাজের মধ্যে তাকওয়ার ভিত্তি শক্তিশালীভাবে পুনরুত্থিত হওয়ার ফলে আসন্ন খিলাফতের অধীনে মানুষ কোনো বস্তুগত স্বার্থে কোনো পদে অধিষ্ঠিত হতে চাইবে না কিংবা দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধিতে প্রলুব্ধ হবে না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যে ব্যক্তি অবৈধভাবে (সম্পত্তি) উপার্জন করেছে, বিচারের দিন সে যা অর্জন করেছে তা বহন করবে” (আল ইমরান: ১৬১)। এছাড়া, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনের বিপরীতে, খিলাফাহ রাষ্ট্র কোন অভিজাত শ্রেণী তৈরি করবে না এবং তার নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য করবে না। খিলাফত ব্যবস্থা বিশেষ কোন শ্রেণীকে দুর্নীতি করার সুযোগ দেয়া তো দূরে থাক, বরং শাসকদেরকেও কড়া নজরদারিতে রাখবে খলীফা এবং খলীফাকেও জবাবদিহি করবে জনগণ। ওমর বিন খাত্তাব (রা) একদা জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “তোমরা কি মনে করেছ আমি তোমাদের ওপর সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে বসিয়ে এবং তাকে সৎ থাকতে বললেই আমার কাজ শেষ হয়ে যায়?”, তারা বলল, “হ্যাঁ”, ওমর বললেন, “না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার কাজ ভাল করে পর্যবেক্ষণ করি এবং দেখি সে আমার নির্দেশ মেনে চলছে কিনা”। উপরন্তু, ইসলাম এটা নির্ধারণ করেছে যে শাসক হওয়ার পূর্বে এবং ক্ষমতা ত্যাগের সময় শাসকদের সম্পদের হিসাব নেয়া হবে এবং হিসাব বহির্ভুত অর্থ পাওয়া গেলে তা তা বাজেয়াপ্ত করে “মাল আল গুলুল” হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হবে। সর্বোপরি খিলাফত রাষ্ট্র উম্মাহ্‌’র সম্পদ ও ভাগ্য লুণ্ঠনকারী অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাঠামোকে দুর্নীতিমুক্ত রাখবে যার ফলে সমাজ এমনিতেই সঠিকপথে থাকবে।

    –    সিফাত নেওয়াজ

“বাংলাদেশে যা-ই ঘটুক, আমরা তাতে যুক্ত থাকিঃ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়”

খবরঃ

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যা কিছু ঘটছে, তার ওপর নিবিড় নজর রাখছে ভারত। দেশটি চায় এ নির্বাচন পরিকল্পনা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ হোক, সহিংসতামুক্ত থাকুক। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে পারে। কিন্তু ভারত ভারতই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে বিশেষত্ব আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যাই ঘটুক, আমরা তাতে যুক্ত থাকি। কারণ এর প্রভাব আমাদের উপর পড়ে।’ (https://www.ajkerpatrika.com/285526/বাংলাদেশে-যাই-ঘটুক-আমরা-তাতে-যুক্ত-থাকি-ভারতের)

মন্তব্যঃ

পরাশক্তিগুলোর অন্যতম কাজ হচ্ছে পৃথিবীব্যাপী তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা এবং তা সুসংহত রাখতে তার কৌশলগত মিত্রদের নিয়ে জোট গঠন করা কিংবা অনুগত শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতায় বসানো। সেই প্রেক্ষিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, অর্থাৎ তার প্রভাব বৃদ্ধি ও চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য এবং ইউরেশিয়ায় যাতে কোন প্রভাবশালী শক্তির উদ্ভব না হয় (মুসলিম ভূমিতে শক্তিশালী খিলাফত রাষ্ট্রের পুনরুত্থান বন্ধ করা, বাংলাদেশ যার জন্য একটি উর্বর ভূমি) তা নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় তার ‘Pivot’ হিসাবে ভারতকে তার কৌশলগত মিত্র হিসেবে তৈরী করছে। এই পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়িত করতেই মার্কিন-ভারত সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলিতে লক্ষণীয়ভাবে উন্নীত করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল লক্ষ্যই হল তার বৈশ্বিক আধিপত্যের নির্বিঘ্নতার জন্য যেকোনো আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ন্ত্রন করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে বিশ্বের নিকট যতটা শক্তিশালী অবস্থায় প্রদর্শিত করে/করতে চায়, বাস্তবে সে এখন আর সেই অবস্থায় নেই; তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার স্থানীয় কৌশলগত মিত্রদের দিয়ে অঞ্চলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করছে; যেমনঃ সিরিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে রাশিয়া, তুরস্ক এবং ইসরাঈলকে ব্যবহার করে; ঠিক একইভাবে দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন এবং অন্য কোন প্রভাবশালী শক্তির (খিলাফত) উদ্ভব ঠেকাতে অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারতকে ব্যবহার করতে চায়। তারা তাদের আঞ্চলিক স্বার্থে ভারতকে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব অর্পণ করেছে। পশ্চিমা দালাল ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেমন পূর্ণ আনুগত্য করছে, ঠিক তেমনি এই আনুগত্যের সুযোগ কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে এই অঞ্চলে তার ঘৃণ্য ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি যে, মুশরিক রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই সর্বদা আমাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করেছে। ভারত বিগত কয়েক দশক যাবত একের পর এক ইস্যু তৈরী করে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। আমাদেরকে দূর্বল, নতজানু, মেরুদন্ডহীন, অনুগত দাস রাষ্ট্রে পরিণত করে এই অঞ্চলে ভারত ইতিমধ্যেই নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও তারা আদায় করে নিয়েছে। যেহেতু রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কিংবা আদর্শিকভাবে দেউলিয়া আমাদের শাসক/রাজনীতিবিদদের নিকট জনগণকে দেওয়ার মতো কোনো আকর্ষণীয় প্রস্তাব নেই, তাই এসব (আ.লীগ-বিএনপি) নেতারা বিশ্বাস করেন যে ক্ষমতায় থাকার জন্য তাদের আশীর্বাদের প্রয়োজন। এটা এখন খুবই স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মুশরিক ভারতকে খুশি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, যেভাবে সে পূর্বে (২০০৮, ২০১৪, ২০১৮) ক্ষমতায় আসা এবং টিকে থাকার জন্য পিলখানা হত্যাকান্ডে ভারতকে সহযোগীতা প্রদান, ট্রানজিট-করিডোরের নামে স্থলবন্দর-সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথ সামরিক মহড়া, ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস’ দমনে আঞ্চলিক টাস্কফোর্স গঠন ইত্যাদি বিষয়ে প্রকাশ্য দালালী করেছে। আ.লীগ-বিএনপির পরিবর্তনের রাজনীতির মিথ্যা আশ্বাসে কোন পরিবর্তন আসেনি, বরং জনগণের গলায় গোলামীর শিকল আরো মজবুতভাবে এঁটেছে। নতুন মুখোশের ছদ্মাবরন নিয়ে এরা বারবারই জনগণকে প্রতারিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন-ভারতের আরো অনুগত দালাল হিসেবেই আবির্ভূত হয়। এরা কখনও একটি অপরটির বিকল্প হতে পারেনা; এবং এরা কখনোই জনগণকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন-ভারতের গোলামী থেকে মুক্ত করবে না কিংবা পারবেও না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বৃটেন-ভারতের কর্তৃত্ব শেষ করা কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। খিলাফত রাষ্ট্র মুসলিম ভূ-খন্ড থেকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের আধিপত্যবাদের চির অবসান ঘটাবে। খিলাফত রাষ্ট্র যেহেতু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের মিত্রদের আধিপত্যকে খর্ব করেই প্রতিষ্ঠিত হবে তাই এই রাষ্ট্র আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহের কোন কর্তৃত্ব সহ্য করবে না। কারণ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ “এবং কিছুতেই আল্লাহ্ মু’মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের কোন পথ অবশিষ্ট রাখবেন না” [সূরা আন-নিসাঃ ১৪১]। আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র হবার কারণেই খিলাফত সরকারের থাকবে একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব ও দূরদর্শী চিন্তা। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেনঃ “তিনিই তাঁর রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হিদায়াত ও সত্য দ্বীনসহ সকল দ্বীনের উপর তাকে বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে” [সূরা আস-সফঃ ৯] ফলে খিলাফত রাষ্ট্র সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হিসাবে ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিবে। যার স্বাক্ষী ইতিহাস; ইসলামের বিজয়ী পতাকা সমগ্র পৃথিবীতে উড়ানোর রাজনৈতিক উচ্চাশার ফলেই আরবের অনগ্রসর জাহেল সমাজ থেকে উঠে আসা সাহাবারা (রা.) মদীনার মত ছোট্ট রাষ্ট্রে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাত্র বিশ বছরের মধ্যে একই সাথে দু’টি পরাশক্তিকে (পারস্য ও রোমান) হারিয়ে বিশ্বের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব ইসলামের হাতে তুলে নিয়েছিলেন।

    –    সুজন হোসেন

“অভাবের তাড়নায় গায়ে আগুন দিলেন রিকশাচালক“

খবরঃ

অভাবের তাড়নায় ঋণগ্রস্ত এক রিকশাচালক নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহননের চেষ্টা করেছেন।  তার নাম রনি মিয়া। রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।  গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। রনি মিয়ার স্ত্রী সোনিয়ার দাবি, সংসারের অভাব ও ঋণগ্রস্ত হয়ে হতাশা থেকে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন তার স্বামী। রনি মিয়ার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সাহেব নগরে। স্ত্রী ও ছয় বছর বয়সি কন্যা সন্তান নিয়ে থাকেন বাড্ডার ৭ নম্বর রোডের জিএম বাড়ি পানি পাম্পের কাছে আনিছ মিয়ার টিনশেড বাড়িতে। মাসে বাসাভাড়া গুনতে হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। রনির স্ত্রী সোনিয়া একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন।  স্বামী-স্ত্রীর আয়ে আগে ভালোই চলছিল সংসার। সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে রনির পক্ষে সংসারের ভার সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন রনি। রিকশা চালিয়েও উপার্জন হয় না আগের মতো। এ অবস্থায় রনির সুখের সংসারে নেমে আসে বিষাদ। শুরু হয় পারিবারিক কলহ। ঋণের বোঝা, অভাব আর পারিবারিক কলহ সব মিলিয়ে দিশেহারা রনি। উপায়ান্তর না পেয়ে বেছে নেন আত্মহননের পথ।  (jugantor.com/todays-paper/second-edition/705112/অভাবের-তাড়নায়-গায়ে-আগুন-দিলেন-রিকশাচালক)

মন্তব্যঃ

পুঁজিবাদি সরকারের নানবিধ হঠকারি অর্থনৈতিক নীতির ফলে দেশে অর্থনৈতিক সংকট ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প, শাসকগোষ্ঠেীর ঘনিষ্ঠদের তুষ্ট করার খায়-খাতিরের প্রকল্প, এবং সরকারি কর্মচারীদের খুশি রাখার জন্য বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, গাড়ি ক্রয় সুবিধাসহ নানাবিধ কারণে সরকারের পরিচালনা ব্যায় প্রতিনিয়ত বেড়েই যাচ্ছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ www.banglanews24.com/budget/news/bd/1124863.details )। সরকার সাধারণত ব্যাংকিং খাত থেকে টাকা নিয়ে সরকারি আয়-ব্যয় বা বাজেট ঘাটতি পূরণ করে থাকে। কিন্তু, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে পর্যাপ্ত নগদ প্রবাহ না থাকায় সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট থেকে ঋণ নেয়া শুরু করেছে। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মোট ধার করেছিলো ৭৮ হাজার কোটি টাকারও বেশী। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া মানেই হচ্ছে নতুন করে টাকা ছাপানো। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে টাকা ছাপানোর প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র জুলাই মাসের প্রথম আঠারো দিনেই সরকার দশ হাজার কোটি টাকার বেশী নতুন অর্থ ছাপিয়ে নিয়েছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জুলাই ২৩, ২০২৩, বিবিসি বাংলা)। এই নতুন করে ছাপানো টাকা বাজারে মূল্যস্ফীতিকে আশংকাজনকভাবে উসকে দিয়েছে। সরকারি কর্মচারী যাদের তুষ্ট করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে তারা সহ সকলশ্রেণীর মানুষই কিন্তু এই মূল্যস্ফীতির উত্তাপ ভোগ করছে। সরকারি বিশেষ ভাতা পাওয়ার ফলে তাদের উপরে মূল্যস্ফীতির উত্তাপের প্রভাব কিছুটা কম হলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের (যেমনঃ রিক্সা চালক) উপর এই উত্তাপের মাত্র অনেক বেশী। এই শ্রমিকরা পূর্বে ১২-১৪ ঘন্টা পরিশ্রম করে কোন মতে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাতে পারতো। এখন তারা পূর্বের থেকে বেশী পরিশ্রম করেও নূন্যতম জীবন ধারণ করতে পারছে না কারণ নতুন ছাপানো টাকাগুলো তাদের আয়ের মূল্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। অমানুষিক পরিশ্রমের পরেও নূন্যতম খাদ্যের সংস্থান করতে না পারায় অনেকে তীব্র হাতাশায় ভুগছে। জনগণ যখন এই রকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন সরকার ব্যাস্ত নির্বাচন, স্বস্তা জনপ্রিয়তার নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রকল্প, এবং অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে, কারণ এই পুঁজিবাদী রাজনীতিবিদদের কাছে জনগণের ভালভাবে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার থেকে জনগণকে বিভ্রান্ত করে যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় থাকাই মুখ্য। তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে জনগণের দুর্দশা শুধু বাড়তেই থাকে।

অন্যদিকে, ইসলামের মুদ্রা নীতি হচ্ছে স্বর্ণ বা রোপ্য ভিত্তিক, যা শারীয়াহ দ্বারা নির্ধারিত। খলিফা চাইলেই প্রকৃত সম্পদ (স্বর্ণের দিনারে ৪.২৫ গ্রাম এবং রূপার দিরহামের ২.৯৭৫ গ্রাম) জমা রাখা ব্যাতীত টাকা ছাপাতে পারবে না। বরং শুধুমাত্র নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদ বায়তুল মালে (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) জমা স্বাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রা ছাপানো যায়। ফলে খিলাফত রাষ্ট্রে পুঁজিবাদি রাষ্ট্রের মত কাঠামোগতভাবে জনগণের সম্পদ লুটপাট করার কোন সুযোগ নাই। তাই খিলাফত রাষ্ট্রের জনগণের সম্পদ এবং সমৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আমরা জানি ইসলামের রাষ্ট্র ব্যবস্থা মদিনায় শুরু হওয়ার পর মাত্র কিছু বছরের মধ্যে খিলাফত রাষ্ট্রের নাগরিকদের অর্থনীতি এতটাই সমৃদ্ধ হয়েছিল যে খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজের সময় পুরো রাষ্ট্র থেকে খুঁজে যাকাত নেওয়ার মত একজন গরিব নাগরিকও পাওয়া যায়নি! ফলে বাধ্য হয়ে সমস্ত যাকাত একত্রিত করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহে প্রেরণ করতে হয়েছিল! “আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম..” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত ৯৬]

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম