Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৫৩ তম সংখ্যা । ২৬ এপ্রিল, ২০২২
এই সংখ্যায় থাকছে:
“নিউমার্কেট এলাকার সংঘর্ষ: হেলমেট পরা অস্ত্রধারীসহ ছাত্রলীগের ছয়জন শনাক্ত”
“কোরআন পোড়ানোয় সুইডেনে বিক্ষোভ”
“হাটবাজারের ভাঙাগড়া, কমছে কৃষকের সুযোগ”
“কোভিড ভ্যাকসিন: টিকার খরচ নিয়ে সরকার ও টিআইবির হিসেবে ২২ হাজার কোটি টাকার ফারাক”
“নিউমার্কেট এলাকার সংঘর্ষ: হেলমেট পরা অস্ত্রধারীসহ ছাত্রলীগের ছয়জন শনাক্ত”
খবরঃ
বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করতে দেখা গিয়েছিল হেলমেটধারী এক তরুণকে। শেষ পর্যন্ত তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তার নাম বাশার ইমন। তিনি ঢাকা কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং ক্যম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ইমন ছাড়াও হেলমেটধারী আরেকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তার নাম শাহাদাৎ হোসেন। সেদিন স্টিলের পাইপ হাতে হামলা ও সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল তাকে। শাহাদাৎ ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ছয়জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। তারা সবাই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী। ইমন ও শাহাদাৎ ছাড়া বাকি চারজন হলেন কাইয়ুম, সুজন সরকার, শাহীন সাদেক মীর্জা ও কাউসার হামিদ ওরফে সাদা কাউসার। (www.prothomalo.com/bangladesh/crime/হেলমেট-পরা-অস্ত্রধারীসহ-ছাত্রলীগের-ছয়জন-শনাক্ত)
মন্তব্যঃ
গত ২৪শে মার্চ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বলির শিকার বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরিন প্রীতির রক্ত রাজপথ থেকে মুছে যাওয়ার আগেই ‘ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগ বনাম নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী’- সংঘর্ষে ঝরে গেল দোকান কর্মচারী মুরসালীন আর কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করা নাহিদ হোসেনের তাজা প্রাণ। আপাতদৃষ্টিতে দুই দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা থেকে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হলেও এর পেছনে রয়েছে আরও বড় কারণ। আর তা হচ্ছে নিউমার্কেট ও তার আশেপাশের মার্কেটের বিভিন্ন হকারদের কাছ থেকে তোলা চাঁদার ভাগ-বাটোয়ারা। গত ২৪ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে সময় নিউজের করা এক রিপোর্ট মতে, রাজধানীর নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হয় কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা। একেক জন হকারকে প্রতিদিন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। ফুটপাতে দোকান বসাতে দৈনিক চাঁদার পাশাপাশি গুনতে হয় মাসিক চাঁদা। আর এই চাঁদার ভাগ পায় পুলিশ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ও প্রশাসন। তাই আমরা দেখি নিউমার্কেটের এই সংঘর্ষের সময় পুলিশকে নীরব ভূমিকা পালন করতে।
২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে বছরে এক হাজার ৮২৫ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। প্রতিদিন আদায় হয় ৬০ কোটি টাকারও বেশি। তখন ঢাকায় হকার ছিল ৩ লাখ। এখন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। ফলে এত বিশাল পরিমানের চাঁদার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিভিন্ন সুবিধাভোগী গ্রুপগুলোর মধ্যে মাঝে মাঝে বচসা হবে তাই কি স্বাভাবিক নয়! তবে এই চাদাবাজির শিকার হচ্ছেন সাধারণ দোকানীরা। আর তারা তা উসুল করছে জনগণের কাছ থেকে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে রেখে। ফলে দিনশেষে এসকল সরকারী ও বেসরকারী বাহিনীর চাঁদাবাজির ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা চাদাবাজি করে তারা কেন ধরাছোয়ার বাইরে থাকে? তারা ধরাছোয়ার বাইরে থাকে কারণ তারা হচ্ছে সেই লোকজন যারা এই জনবিচ্ছিন্ন সরকারের ফুট সোলজার হিসেবে কাজ করে সরকারকে টিকিয়ে রাখে। এই ফুটসোলজারদের সর্বাধুনিক ভার্শন হচ্ছে হেলমেট বাহিনী। ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি এই হেলমেট বাহিনীর তাণ্ডব। পুলিশের আশ্রয়ে থেকে এসকল হেলমেটধারীরা রড, পাইপ আর রামদা দিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়। উপরন্তু এসকল হেলমেট বাহিনী স্থানীয়ভাবে এলাকার রাজনীতিতেও ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। (পড়ুন- www.banglatribune.com/country/rajshahi/713878/‘হেলমেট-বাহিনী’র-ভয়ে-তটস্থ-স্বতন্ত্রী-প্রার্থী) ফলে অবধারিতভাবেই এই জনবিচ্ছিন্ন সরকারের নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে একদিকে যেমন প্রয়োজন পড়ে রক্ষীবাহিনীর আদলে গড়ে উঠা RAB-এর মত সরকারী বাহিনী তেমনি প্রয়োজন পড়ে বেসরকারী খাতের হেলমেট বাহিনীর মত বাহিনী। আর বিভিন্ন সেক্টরে অবাধ চাঁদাবাজি করার স্বাধীনতা হচ্ছে এদের কাজের পুরষ্কারস্বরূপ তা হোক সেটি RAB, পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা হালের হেলমেট লীগ!
মূলত যতদিন এই মানবরচিত ব্যবস্থার মধ্যে আমরা বেঁচে থাকব ততদিন আমাদের এসকল চাঁদাবাজি আর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর সম্ভাবনা নিয়েই দিনাতিপাত করতে হবে। কারণ এ ব্যবস্থায় শাসকের উদ্দেশ্যই থাকে যেকোন মূল্যেই নিজের ক্ষমতাকে আকড়ে ধরে ভোগ বিলাসে মত্ত থাকা। ফলে জনগণের ভাল-মন্দ এদের কাছে দূরবর্তী বিষয়। আমাদের প্রয়োজন খলীফা উমরের মত শাসক যিনি হচ্ছেন খিলাফত ব্যবস্থার ফসল, যিনি জনগণের মধ্যে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে ফুট সোলজারতো দূরে থাক তিনি কোনপ্রকার নিরাপত্তা রক্ষী না রেখেই দিনের বেলায় গাছের নিচে শুয়ে থাকতেন আর একজন মাত্র ভৃত্য নিয়ে রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ যেতেন। আর এসবের মূল কারণ ছিল শাসক হিসেবে আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহিতার ভয় যা বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসকদের মধ্যে অনুপস্থিত।
–মো. হাফিজুর রহমান
“কোরআন পোড়ানোয় সুইডেনে বিক্ষোভ”
খবরঃ
পবিত্র কোরান পোড়ানোর ঘটনাকে ঘিরে সুইডেনের অন্তত সাতটি শহরে বিক্ষোভ এবং পরে সেই বিক্ষোভ রূপ নেয় দাঙ্গায়৷ সুইডেনের সংবাদ সংস্থা টিটি-র খবর অনুযায়ী, শুক্রবার রাজধানী স্টকহোমের কাছের শহর রিঙ্কেবিতে উগ্র ডানপন্থি দল হার্ড লাইন-এর নেতা রাসমুস পালুদান পবিত্র কোরানের একটি কপি পুড়িয়ে দিয়েছেন- এমন খবরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে৷ সেদিন সুইডেনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ওরেব্রোয় বিক্ষোভকারীদের হামলায় চার পুলিশ সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়৷ কোরান পোড়ানোর ঘটনায় বিক্ষুব্ধরা পুলিশের চারটি গাড়িও পুড়িয়ে দেয়৷ পরে আরো অন্তত ছয়টি শহরে রাসমুস পালুদান এবং তার দল হার্ড লাইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়৷ আইনজীবী এবং ইউটিউবার পালুদান সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চান৷ (https://amp.dw.com/bn/কোরান-পোড়ানোয়-সুইডেনে-বিক্ষোভ/a-61502641)
মন্তব্যঃ
বিগত দশকগুলোতে ইসলামফোবিয়ার রাজনীতি পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে তাদের পলিটিক্যাল এলিট ও রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় আরোহনের জনপ্রিয় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দল কর্তৃক নয় বরং পবিত্র কুরআনের অবমাননা থেকে শুরু করে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আকা, হেইট ক্রাইম, হিজাব নিষিদ্ধকরণ, বিদেশাতঙ্ক (Xenophobia), এবং ইসলামফোবিয়ার পরিবেশ সৃষ্টি ও মুসলিম বিদ্বেষ গোটা পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ সমাজেই গভীরভাবে বদ্ধমূল। পশ্চিমা দেশগুলোতে সাধারণ জনগণের কাছে মুসলিমদেরকে তাদের অস্তিত্বগত হুমকি ও সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করা হয় যা তাদের সমাজে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘৃণা ও আক্রমনের ন্যায্যতা দান করে। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী পশ্চিমা সমাজে গণহারে মুসলিমবিদ্বেষী উগ্র সন্ত্রাসীদের জন্ম দিচ্ছে যারা দম্ভের সাথে প্রকাশ করে যে, তারা ইসলামিক Holocaust বা ব্যাপক মুসলিম হত্যাকান্ড ঘটাবে, প্রকাশ্যে পবিত্র কুরআন পোড়াবে কিংবা কার্টুন ও ব্যঙ্গচিত্র অংকন করে মুসলিমদের নবী মুহাম্মদ(সাঃ) কে অপমান করবে; নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হামলা করে ৫০ জন মুসলিম হত্যায় যার একটি নমূণা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। পশ্চিমা পলিটিক্যাল এলিট ও রাজনীতিবিদরা মুসলিম বিরোধী হিস্টিরিয়ার (Hysteria) মাধ্যমে একদিকে যেমন তাদের স্থানীয় জনগণকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংস হতে প্ররোচিত করে, অন্যদিকে তাদের দেশের জনগণের কাছ থেকে মুসলিম ভূখণ্ডসমূহে সামরিক অভিযান ও দখদারিত্ব বজায় রাখার বৈধতা অর্জন করে। তাদের রাজনীতি এতটাই দেউলিয়া হয়ে পড়েছে যে, ইসলামফোবিয়ার রাজনীতি ছাড়া জনগনের প্রতি তাদের আকর্ষণীয় কোন অফার নেই। শুধু তাই নয়, ইসলামফোবিয়ার রাজনীতি এখন পশ্চিমে ভোট ব্যাংক অর্জনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। সুইডেনে উগ্র ডানপন্থি এই দুর্বৃত্ত নেতা রাসমুস পালুদান তার নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ হিসেবে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর আয়োজন করে। একইভাবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মারিন লা পেনও সম্প্রতি নির্বাচনে জিতলে হিজাব নিষিদ্ধের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে তার নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই ইসলামফোবিয়ার রাজনীতি এখন পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য (Part & Parcel) অংশ হয়ে উঠেছে।
ইতিহাস সাক্ষী যে, কেবলমাত্র খিলাফতের অধীনে বাস্তবায়িত ইসলামী আদর্শই প্রকৃতঅর্থে বিভিন্ন জাতি, অঞ্চল, ধর্ম, বর্ণের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। খিলাফত রাষ্ট্র উত্তর আফ্রিকা থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল যা মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপের অংশ, মধ্য এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার লোকদেরকে তার শক্তিশালী ব্যানারে একত্রিত করেছিল যেখানে জাতিগত সংখ্যালঘুরা কখনোই কোনো ধরনের জাতিগত সহিংসতা ( Racial Cleansing) ও বৈষম্যের শিকার হয়নি। ইসলামী রাষ্ট্র ধর্মভিত্তিক কোন রাষ্ট্র নয় বরং এটি একটি আদর্শিক রাষ্ট্র। ইসলামী রাষ্ট্র তার অধীনস্ত ব্যক্তিদেরকে তার নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে, তারা মুসলিম বা অমুসলিম যাই হোক না কেন। নাগরিকদের তাদের লিঙ্গ, শ্রেণী, ধর্ম, জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে আলাদা করা হয় না এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেয়া হয় না কিংবা ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তনে বাধ্য করা হয় না। আল্লাহ্ সুবনাহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরজবরদস্তি নেই” (সূরা-আল বাকারাঃ ২৫৬)। ইহুদীরা যখন ইউরোপসহ এবং অন্যান্য দেশে নির্যাতিত হয়েছিল তখন তারা খিলাফতের ভূখণ্ডে আশ্রয় পেয়েছিল যেখানে তারা শতবছর ধরে শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বসবাস করেছিল। খ্রিস্টানরা নিজেদের শাসকদের অত্যাচার ও নিপীড়নের কারণে তাদের নিজেদের শহরগুলো মুসলিমদের কাছে সমর্পণ করেছিল। ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমসহ বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় পটভূমির লোকদের জন্য তৎকালীন স্পেন ছিল গলে যাওয়া পাত্রের মত (Melting Pot)। এই কারণেই ব্রিটিশ লেখক H. G. Wells খিলাফাহ সম্পর্কে লিখেছিলেন: “They established great traditions of just tolerance. They inspire people with a spirit of generosity and tolerance, and are humanitarian and practical. They created a humane community in which it was rare to see cruelty and social injustice, unlike any community that came before it.” তাই আসন্ন খিলাফাহ রাষ্ট্র পৃথিবীর সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষকে এক ছাতার নিচে আবদ্ধ করে সমগ্র বিশ্ববাসীর নিকট ধর্মীয় সহিষ্ণুতার এক অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে ইনশাআল্লাহ্।
–মোহাম্মদ সিফাত
‘র্যাব: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চারমাস পর ফের র্যাব-এর কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’, একজন নিহত’
খবরঃ
বাংলাদেশের কুমিল্লায় একটি হত্যা মামলার আসামী শনিবার গভীর রাতে র্যাবের সাথে কথিত এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে আমেরিকা র্যাব ও এর কয়েকজন কর্মকর্তার উপর একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর র্যাবের এই ধরণের বন্দুকযুদ্ধ বা কেউ নিহত হবার খবর পাওয়া যায়নি।… (https://www.bbc.com/bengali/news-61132025)
মন্তব্যঃ
মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দখলদার রাষ্ট্রগুলো তাদের ঔপনিবেশিক স্বার্থ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে দেশে দেশে যে সকল আধাসামরিক বাহিনী তৈরি করেছে, সেগুলো তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাড়ায় যখন সরকারসমূহ সেই খুনি বাহিনীকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়াতেই ৯/১১ পরবর্তী সময়ে প্রায় চার ডজনের মত এলিট পুলিশ ফোর্স কিংবা প্যারামিলিটারি পুলিশ ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানে ANCOP ও CRU, বাংলাদেশে RAB এবং CTTC এবং পাকিস্তানের CTF এবং SCU উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০০০ জনের বেশী মানুষকে র্যাব বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করলেও সেগুলো পশ্চিমাদের নিকট ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ বলে বিবেচিত হয়নি। তারপর ৫ই মে-এর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ কিংবা আলেম-ওলামাসহ খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার-নির্যাতন তাদের নিকট মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়নি। সেগুলো তখন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ হিসেবে বরং তাদের নিকট প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০ টিরও বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ৬০০র বেশি লোক অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তাদের কাছে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজ বলে বিবেচিত হয়েছে, কারণ সেগুলো তাদের স্বার্থের পরিপন্থী (যেটি এই নিউজে বর্ণিত হয়েছে)। এদেশে একদিকে বিচারব্যবস্থা ভঙ্গুর হওয়ার কারণে, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসীরা দিনে দিনে দুঃধর্ষ হয়ে উঠে। তারপর এদের অত্যাচারে মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে যায়, তখন এদের কয়েকজনকে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে হত্যা করে র্যাব জনপ্রিয়তা অর্জন করে। শাসকগোষ্ঠী তখন এই জনপ্রিয়তাকে বিরোধী মত ও আন্দোলনকে দমনে কাজে লাগায়। এই কর্মকাণ্ড আবার পশ্চিমাদের স্বার্থের পরিপন্থী হওয়ায় তারা চাপও দেয়। আবার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ঘটনার চাপেও সাময়িকভাবে বন্দুকযুদ্ধ বন্ধ হয়। কিন্তু এটাতো ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য কার্যকরী উপায়! তাই কিছুদিন বাদে আবার শুরু হয়। যখন এটা শুরু হয়, চিহ্নিত অপরাধীদের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শুরু হয়। এর আগেও মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন মহলের চাপে বন্দুকযুদ্ধের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা তিন মাসের জন্য বন্ধ ছিল। এরপর যখন আবার শুরু হয়েছিল তখন ১২ মামলার আসামি চিহ্নিত অপরাধী মাদক সম্রাট আব্দুল মান্নানের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল। এবারো আরেকজন চিহ্নিত অপরাধী হত্যাকান্ডের মাধ্যমেই আবার শুরু হল। তাই এই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হল পশ্চিমাদের উপনিবেশবাদী স্বার্থ কিংবা তাদের দালাল শাসকদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার হাতিয়ার। সেক্ষেত্রে এর থেকে মুক্তি এই উপনিবেশবাদী মার্কিন-ব্রিটেন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থায় সম্ভব নয়।
এর জন্য প্রয়োজন এই ব্যবস্থাকে সমূলে উৎপাটন করে একটি নতুন ও সঠিক বিশ্বব্যবস্থা স্থাপন করা। যেটি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত জীবনবিধান ইসলামের শাসনব্যবস্থা খিলাফত ব্যবস্থার মাধ্যমে হতে পারে। এই শাসনব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের প্রভাবমুক্ত। এই ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের প্রতিটি অংশ জনগণের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে। এ ব্যবস্থায় খলীফাদের শারীআহ্ ব্যতীত ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার থাকে না। ফলে তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে কিংবা কোনপ্রকার বিদেশী শক্তিকে খুশি করতে কোন অন্যায় হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে না। এই শাসনব্যবস্থায় শাসক কিংবা সরকারী কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য একটি স্পেশাল আদালত রয়েছে যার নাম ‘কাজী উল মাযালিম’। এই আদালত দোষী সাব্যস্ত হলে প্রয়োজনে শাসকদের অপসারণ করতে পারেন। খিলাফতের ১৪শত বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে নিষ্ঠাবান খলিফাগণ তো বটেই, দুর্বল খলীফাগণও কাজীর নিকট বিচারের মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতেন।
–মো: জহিরুল ইসলাম
“ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উত্থান নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফল, জো বাইডেনের ধর্ম বিষয়ক দূত”
খবরঃ
বাংলাদেশ সফররত জো বাইডেনের বিশেষ দূত রাশাদ হোসেন বলেন, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান প্রতিহত করতে সফল হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এবং বনালাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রশংসা করেছেন। ধর্মভিত্তিক দলের উত্থান ঠেকাতে বর্তমান সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সফল। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তাকে বলেছি। এটি যে একটি চ্যালেঞ্জ, সেটিকে তিনি প্রশংসা (অ্যাপ্রিশিয়েট) করেছেন। (https://sarabangla.net/post/sb-664557/)
মন্তব্যঃ
রাশাদ হোসেন যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের ধর্ম বিষয়ক বিশেষ দূত, তার বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য স্পস্টত ধর্মের ব্যবহার বা ধর্মপালনকে বাধা দেয়া তার উপরের বক্তব্যে সেটিই প্রমাণিত হয়। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইসলামের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে, ধর্মকে রাজনীতি বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতেই তারা এটা করছে। অন্যান্য ধর্মগুলো যেহেতু শুধু কিছু ব্যক্তিগত আচার-অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত, তাই সেগুলোকে সহজেই সমাজ ও রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা যায়। কিন্তু ইসলাম যেহেতু একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ ও রাজনৈতিক আদর্শ, তাই ইসলামের অনুসারীদের স্বাভাবিকভাবেই একটা রাজনৈতিক অবস্থান বা বক্তব্য আছে। এটি ইসলাম পালনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। তাই ধর্মভিত্তিক তথা ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম এজেন্ডা, যে কাজে তাদের দালাল শাসকরা তাদেরকে সহায়তা করে আসছে। জো বাইডেনের বিশেষ দূত কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসংশা তারই প্রতিফলন।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বাস্তবতা হল এটি জন্ম থেকেই প্রতিক্রিয়াশীল। ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সময় ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের আদর্শভিত্তিক যে রাষ্ট্রব্যবস্থার উত্থান ঘটেছিল তা মূলত ঘটেছিলই ধর্মভীতির একটি প্রেক্ষাপটে। তখন যেহেতু খৃস্টিয়ান চার্চ ও রাজারা উভয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে জনগণের উপরে জুলুম করতো সেহেতু তখন তারা সঠিক ধর্ম কোনটি বা ধর্ম আদৌ আছে কি নাই এই বিতর্ক শেষ না করে ধর্মভীতিকে পুঁজি করে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বৈপরীত্যেপূর্ণ চিন্তা “ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের” ভিত্তিতে নতুন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার গোড়াপত্তন করে। সুতরাং এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ গোড়াতেই বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দেউলিয়া। তাই এটিকে সবসময়ই ধর্মভীতি বা ধর্মবিদ্বেষকে ধরে রাখতে হয়। সেই কারণেই প্রকাশ্যে বা মুখোশ পরে সব ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি বা রাজনৈতিক নেতাই ধর্মবিদ্বেষী বিশেষত ইসলাম বিদ্বেষী।
বলাবাহুল্য তৎকালীন খৃস্টিয় ইউরোপের ধর্ম বাস্তবায়নের যে সমস্যা তার সাথে ইসলাম ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। এটি ছিল খৃস্টিয় ধর্মের সমস্যা যেখানে স্বভাবতই মানুষের জীবনের বা রাষ্ট্রের সকল সমস্যার সমাধান ছিল না। কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সেই সমাধান বা পূর্ণাংগ সমাধান হিসেবে ইসলামকে পাঠিয়েছিলেন। ইসলাম বাস্তবায়নের ১৩০০ বছরের বেশি যে ইতিহাস সেখানে কখনও কেউ মানুষের কোন দুর্ভোগ বা কস্টের জন্য ইসলামকে দায়ী করেনি। এটা জেনেও মধ্যযুগীয় কালো অধ্যায়ের ইউরোপের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের গোড়াপত্তনকারী চিন্তাবিদরা ইসলাম সত্য এটি গ্রহণ করলো না। একই রকম আজকের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরাও। তারা যদি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সত্য বা নিষ্ঠাবান হতো তাহলে তারা জোর করে ইসলামভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করতো না বরং তারা এই রাজনৈতিক আদর্শের (ইসলামের) সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক তর্কে জড়িয়ে তাদের আদর্শকে (ধর্মনিরপেক্ষতা) সঠিক বা উত্তম প্রমাণে মনোযোগী হতো। তারা সেটা করেনা কারণ তারা জানে মানুষের দেয়া সমাধান বা ব্যবস্থা মানুষের মতই দুর্বল, সীমাবদ্ধ এবং স্বার্থপরতার দোষে দুস্ট। স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাই সমাধান বা ব্যবস্থা প্রদানে একমাত্র উপযুক্ত সত্ত্বা।
–মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“৫ হাজারের সুদ ৩ লাখ ৮ হাজার, দিতে না পারায় সন্তান বিক্রি”
খবরঃ
অভাবের কারণে দুই বছর আগে ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন রানী আক্তার। তিনি পেশায় ইটভাটার শ্রমিক। ঋণ নেয়ার সময় চুক্তি হয় মাসে ৪ হাজার টাকা সুদ পরিশোধের। ঋণ শোধ না হলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে সেই টাকা। অভাবের কারণে প্রতি মাসে সময়মতো সুদ পরিশোধ করতে পারেননি রানী। দুই বছর ধরে টানছিলেন ঋণের সুদের বোঝা। রানীর অভিযোগ, তার কাছ থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা নেয়ার পরও আরও ১ লাখ ৩ হাজার টাকা দাবি করা হয়। অর্থাৎ ৫ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে তাদের কাছ থেকে দাবি করা হয় মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ সুদ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা।সেই টাকা আদায়ে বিক্রি করে দেয়া হয় তার এক দিনের নবজাতককে। (https://www.newsbangla24.com/news/188070/5-thousand-interest-3-lakh-6-thousand-could-not-pay-the-sale-of-children)
মন্তব্যঃ
রানী আক্তার আমাদের দেশে সুদের ফাঁদে পরা একটি উদাহরণ মাত্র। সুদের মাত্রা আমাদের জনজীবনে ব্যাপক হারে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে সুদের ফাঁদে পরে সর্বস্বান্ত হওয়া বা আত্মাহুতি দেওয়া ব্যক্তির পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। একসময় মহাজনী সুদ, দাদন, বন্ধকী ঋণ, বর্গা এগুলোর কথা শোনা গেলেও এখন এগুলোকেই কাঠামোগত পর্যায়ে আনার জন্য ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, এনজিও, সমবায় সমিতির নামে নতুন ফরম্যাটে সামনে আনা হচ্ছে। International food policy research institute এর ২০১৯ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষেরা “দাদন ব্যবসায়ী, মহাজন, আত্মীয়স্বজন, NGO, বেসরকারি ব্যাংক, ইত্যাদি উৎস থেকে ৮১% ঋণ নেয় আর এসব ঋণের সুদের হার ১৯ থেকে ৬৩ শতাংশ”। এই পরিমাণ সুদের হারে, মূলধন পরিশোধ করাতো দুরের কথা সুদই পরিশোধ করা যায় না। তারপরও বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সুদের এই কারবারে যায়; কারণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলে জমি বা সম্পদ বন্ধক রাখতে হয়, কিন্তু রানী আক্তারের মত বাংলাদেশের সাধারন মানুষের হাতে ব্যাংকে জমা রাখার মত ঐ সম্পদ নেই যার ফলে তারা চক্রবৃদ্ধি হারে উচ্চসুদে মহাজন বা NGO গুলো থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। এরপর, আমরা দেখতে পাই “দাদনের ফাঁদে মানুষ সর্বস্বান্ত” (৫জানুয়ারি, ২০২০ প্রথমআলো), “জয়পুরহাটের আখতার আলমের মত এনজিওর সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা শোধ করতে না পারায় কিডনি বিক্রি”, বা “রানী আক্তারের মত সন্তান বিক্রির ঘটনা”।
বর্তমান পৃথিবীতে সুদভিত্তিক অর্থনীতিতে, সুদ হচ্ছে অন্যতম লাভজনক ব্যবসা। তাই টাকা ধার দেয়ার সাথে সুদের উচ্চহার ব্যবসার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। আর সাথে সাথে পণ্য বা সেবার মূল্যবৃদ্ধি করে এবং ঋণ গ্রহীতাদের সর্বস্বান্ত করতে থাকে ও সমাজে দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, আর কিছু সংখ্যক সুদ দাতারা ধনী হতে থাকে। আমাদের দেশের অর্থনীতিও এই সুদের বাহিরে নয়, ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণী ব্যাংক থেকে স্টুডেন্ট লোন, ম্যারিজ লোন, হোম লোন ইত্যাদি লোন নিয়ে ঋণের চাপে পড়ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদেশী ব্যাংক ও সংস্থাগুলো থেকে উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামী ব্যবস্থায় সুদের মত বিপর্যয়কর কোন অর্থনৈতিক লেনদেন নাই, কারণ আল্লাহ্ বলেন, “তারা বলেঃ ব্যবসাতো সুদের মতই, অথচ আল্লাহ্ ব্যবসাকে করেছেন হালাল এবং সুদকে হারাম” (সুরা আল বাকারাহ: ২৭৫)। তাই ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফতের অধীনে ব্যবসাকে প্রধান্য দিয়ে, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের বিনা সুদে বায়তুল মাল থেকে ঋণ দেয়া হবে। ফলে সমাজের মধ্যে তখন বর্তমানের মত মহাজনী বা দাদন ব্যবসায়ী তৈরি হবে না। কারণ সুদী ব্যবসায়ীদের প্রতি ইসলামের রয়েছে কঠোর মনোভাব: “মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মক্কার তহসীলদারকে লিখে পাঠান, যদি তারা (মক্কার সুদী ব্যবসায়ীরা) সুদ গ্রহণ থেকে বিরত না হয় তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ কর”।
–ইরফান আবিদ
“র্যাবের ২৩৬ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা”
খবরঃ
নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৪ বছরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাবের ২৩৬ জন সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাউকে করা হয়েছে চাকরি থেকে বরখাস্ত, আবার কাউকে দেওয়া হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর। এছাড়াও নানান ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, অপরাধ দমন করতে গিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়া সদস্যদের বিরুদ্ধে র্যাব সবসময় সজাগ রয়েছে। যখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাহিনীর মধ্যে স্বচ্ছতার পাশাপাশি জনগণের আস্থা অর্জন করেছে র্যাব। (www.banglatribune.com/738608)
মন্তব্যঃ
বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ দুই দলই এই কিলিং মেশিনকে জনগণের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে হত্যা, গুম, নাগরিকদের নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেফতার বা আটক, ইত্যাদি এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। উপরন্তু ক্ষমতার ব্যাপক ব্যবহারের লাইসেন্স পাওয়ার পর যেকোন বাহিনীর ক্ষেত্রে যা ঘটে র্যাবের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে, অর্থাৎ সাধারণ জনগনের উপর এরা চড়াও হয়েছে। ব্যবসায়ীদের চাঁদা প্রদানে বাধ্য করা, চাঁদা না দিলে হত্যা করা এখন সাধারণ বিষয়। মূলত এই সংস্কৃতি শুধুমাত্র র্যাবেই নয়। বরং তা পুলিশের মেইনস্ট্রীম শাখার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ওসি প্রদীপদের কার্যকলাপ এর জ্বলন্ত উদাহরণ।
উপরন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর কাজের পুরষ্কার স্বরূপ দায়মুক্তিও স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সম্প্রতি, ২০২১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিপীড়ন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি ভোগ করে আসছে বলে খবর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নিপীড়ন, হত্যা ও দুর্নীতির খুব কম সংখ্যক ঘটনায় তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।” অর্থাৎ সরকার যখন নিজের স্বার্থে নিরাপত্তা বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে তখন তাদেরকে দায়মুক্তি দিচ্ছে, আর যখন সরকারের নিজের ও তার নিরাপত্তা বাহিনীর ইমেজ সংকটে পড়ছে তখনই দুই-একজনকে শাস্তির আওতায় এনে মুখ রক্ষা করছে। কতিপয় র্যাব সদস্য তাদের কৃত অপরাধের জন্য শাস্তি পেলেও তাদেরকে যারা ফিল্ড লেভেলে অপরাধ করতে বাধ্য করছে অর্থাৎ শাসকগোষ্ঠী তার কোন শাস্তি বা জবাবদিহিতা আমরা লক্ষ্য করছি না।
উপরন্তু এই মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্টের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র র্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তারা নিজেরা মানবাধিকারের তোয়াক্কা করে না। উপরন্তু আমরা দেখেছি সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে ‘Vehicle Mounted Mobile Interceptor’ বিক্রয় করেছে যা দিয়ে জনগণের উপর নজরদারী করা হবে। উপরন্তু এই র্যাবকেই যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করেছে তার তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার আদর্শিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে। সুতরাং এই বিষয়টি দিবালোকের মত পরিষ্কার যে এই গণতান্ত্রিক-পূজিবাদী সরকার ও তার প্রভূ যুক্তরাষ্ট্রই র্যাব ও পুলিশের অপরাধসমূহের মূল হোতা। তাই, শুধুমাত্র র্যাবের কতিপয় সদস্যকে শাস্তি প্রদান কিংবা নিষেধাজ্ঞা প্রদান জনগণের সাথে উপহাস করা ছাড়া আর কিছু নয়।
ইসলামে রাজনীতিকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়, ফলে ইসলামী রাষ্ট্রে জনগণের নিরাপত্তা থাকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে খলীফার প্রাধান্যের তালিকায় শীর্ষস্থানে। জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খলীফা নিরাপত্তা বাহিনীকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধানের জন্য নিয়োজিত করবেন। নিরাপত্তা বাহিনীর কাজের মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহ ও ডাকাতি দমন, জনগণের সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান, জনগণের জীবন ও সম্মানের রক্ষা, শত্রুরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের চিহ্নিত করা, ইত্যাদি। উপরন্তু নিরাপত্তা বাহিনী তার কাজকে তার উপর অর্পিত ফরজ দায়িত্ব হিসেবে মনে করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ভয়ে ভীত থেকে তার দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করবে। নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক জনগণের জীবন, সম্পদ ও সম্মান-এর লুন্ঠন হবে অকল্পনীয় বিষয়।
–মো. হাফিজুর রহমান
‘দ্রব্যমূল্য নিয়ে তোপের মুখে মন্ত্রী বললেন, ব্যবসায়ী হওয়া কি তার অপরাধ?’
খবরঃ
দ্রব্যমূল্য নিয়ে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সদস্যদের কঠোর সমালোচনা ও ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিরোধী সাংসদেরা বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।…কিন্তু তিনি ব্যবসা করছেন ৪০ বছর ধরে, আর রাজনীতি করছেন ৫৬ বছর ধরে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ব্যবসায়ী হওয়া কি তাঁর অপরাধ?…তিনি বলেন, একটি টিসিবির ট্রাক থেকে আড়াই শ মানুষকে পণ্য দেওয়া হয়। ছবি দেখানো হয় পণ্যের জন্য মানুষ দৌড়াচ্ছে। ৩০০ জন লাইনে দাঁড়ালে ৫০ জন পাবেন না। বাকি ২৫০ জন যে পণ্য পেয়েছেন, সেটা দেখানো হয় না।… (https://www.prothomalo.com/politics/দ্রব্যমূল্য-নিয়ে-তোপের-মুখে-মন্ত্রী-বললেন-ব্যবসায়ী-হওয়া-কি-তাঁর-অপরাধ)
মন্তব্যঃ
রাজনীতি করে ব্যবসায়ী হওয়া কোন অপরাধ নয়, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দেশের জনগণকে বঞ্চিত করে নিজের কিংবা দলীয় আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিদেরকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে অঢেল সম্পদের উপার্জনের সুযোগ করে দেওয়াটা অবশ্যই খুব বড় পর্যায়ের অপরাধ। যেমন সম্প্রতি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এই সরকার মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ীকে ভোজ্য তেলের বাজার থেকে ১৫ দিনে এক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছে। শুরুতে সরকারের প্রশ্রয়ে এসকল সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পাইকারি বাজারে সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে দাম বৃদ্ধি পেলে তখন সরকারই লোক দেখানো প্রতারণামূলক পদক্ষেপ হিসেবে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেয় যেটা পূর্বের মূল্যের চাইতেও অনেক বেশি হয়। যেমন, গত বছর এপ্রিল মাসে সয়াবিন তেলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ১৪৪ টাকা। এটা কয়েক দফায় বৃদ্ধি পেয়ে যখন ১৭০ টাকা হল, সরকার তখন ১৬৮ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিয়ে জনবান্ধব হওয়ার মিথ্যা নাটকের অবতারণা করল। এই নাটকের আড়ালে সেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদেরকে এই রমজান মাসকে কেন্দ্র করে ফায়দা লুটার সুযোগ করে দিল। অথচ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর স্বীকার করেছে যে, ভোজ্যতেলের বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে আরো দুই মাস দেরি হবে (বিবিসি বাংলা, ৬ মার্চ ২০২২)। প্রকৃতপক্ষে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ আক্বিদার উপর প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতাকে শাসক কিংবা তাদের আশীর্বাদপুষ্টদের লুটপাটের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়। এখানে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার তথা খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান নিশ্চিতে সরকার দায়বদ্ধ নয়। এই কারণে মন্ত্রী টিসিবির লাইনে ৩০০ জন লোক দাঁড়ালে ২৫০ জনকে সুযোগ দিয়েই নিজেকে দায়মুক্ত মনে করেন। বাকি ৫0 জন পণ্য না পেয়ে ট্রাকের পেছনে ঝুললেও সেখানে কোন দায়বদ্ধতা অনুভব করেন না, যদিও লাইনে দাঁড়ানো লোকের সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে আরো অনেক বেশি। তাই এ সকল ধর্মনিরপেক্ষ দায়িত্বহীন শাসক দ্বারা শাসিত হওয়া শুধুমাত্র সর্বক্ষেত্রে জুলুমকেই প্রলম্বিত করবে।
তাই এই জুলুম থেকে মুক্তির জন্য আমাদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে অপসারণ করতে হবে, কারণ তা কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীন, অপদার্থ যালিম শাসকদেরই জন্ম দেয়। আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক অনুমোদিত একমাত্র শাসনব্যবস্থা খিলাফতকে ফিরিয়ে আনতে হবে যেখানে একটি মানুষকেও ক্ষুধার্ত রেখে শাসক তথা খলিফা ঘুমাতে পারবেন না। তিনি সম্পদের সঠিক বন্টনের মাধ্যমে এবং ব্যাপক ভারী শিল্পায়নের মাধ্যমে সকলের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং সিন্ডিকেট প্রথা বিলুপ্তির মাধ্যমে বাজারে সকল প্রকার পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করবেন এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসবেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “কোন জনপদের মানুষ যখন এমন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠে, যাদের মধ্যে একজন ব্যক্তিও অনাহারে থাকবে, তারা যেন আল্লাহ্’র সাথে তাদের চুক্তি (রহমতের) বাতিল করে নিল”। (আহমদ)
–মো: জহিরুল ইসলাম
“হাটবাজারের ভাঙাগড়া, কমছে কৃষকের সুযোগ”
খবরঃ
কৃষিনির্ভর আবহমান বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ছিল হাটবাজার। দিন দিন পুরোনো হাটবাজারের সংখ্যা কমছে। গড়ে উঠছে স্থায়ী দোকান, ব্যবসাকেন্দ্র। প্রতিবছর হাটের খাতে সরকারের রাজস্ব বাড়ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীরা নানাভাবে হাটের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে। এসব কারণে কৃষকের খরচ বাড়ছে ও সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রির সুযোগ কমে যাচ্ছে। উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। কৃষকের সরাসরি পণ্য বিক্রির সুযোগ কমে আসায় ফড়িয়াদের এখন পোয়াবারো। এরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। তাই ২ টাকার লেবু ভোক্তার কাছে হয়ে যায় ১০ টাকা, শসা বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/হাটবাজারের-ভাঙাগড়া-কমছে-কৃষকের-সুযোগ)
মন্তব্যঃ
উৎপাদক কৃষক হতে পণ্য ভোক্তার কাছে পৌছানোর কাজটি হচ্ছে বাজারজাতকরণ। এই দুই পক্ষের মাঝে সরাসরি কেনাবেচা হতে পারে অথবা স্বাভাবিক প্রয়োজনে এদের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যবসায়ী বা ট্রেডার থাকতে পারে। রাষ্ট্রের কাজ হওয়া উচিত ছিল এসব পক্ষগুলোর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দেখভাল ও ব্যবস্থাপনা করা যাতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক লাভ করতে পারে এবং ভোক্তা সঠিক ও সহজ মূল্যে পণ্য কিনতে পারে। কিন্তু বাস্তবতায় আজ এটি স্পষ্ট যে বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাগতভাবে অস্বাভাবিক লাভ করার জন্য নিজেকে এবং আরও কিছু সুবিধাভোগী পক্ষ ঢুকিয়েছে ফলে কৃষকের স্বার্থ ও অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে, পণ্যমূল্য ভোক্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে আর প্রকৃত ব্যবসায়ীরা দিনে দিনে পুঁজি হারাচ্ছে বা ঋণগ্রস্থ হচ্ছে।
কেউ কেউ বলতে পারে ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে নীতি অনুযায়ী যদি সত্যিকারের মুক্ত প্রভাবমুক্ত বাজার নিশ্চিত করা যেত তাহলে এমনটি হতোনা। কিন্তু যে জীবনব্যবস্থার আক্বিদা ধর্মনিরপেক্ষতার বিশ্বাস অনুযায়ী বস্তুগত লাভই শেষ কথা সেখানে কেন সরকার একটি প্রভাবমুক্ত বাজার নিশ্চিত করবে। সরকারের প্রভাব বা ক্ষমতা আছে এবং তার কাজই হচ্ছে প্রভাব ফেলা। এখানে সরকার ও তার আশপাশের প্রভাবশালী মহল প্রভাবমুক্তভাবে বা অনেকটা জবাবদিহিতা ছাড়াই বাজারের উপর প্রভাব বিস্তার করবে এটাই স্বাভাবিক। কৃষিপণ্য বা নিত্যপণ্যের বাজারকে ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী সরকার সহজে টাকা আয় করার একটি সুযোগ হিসেবে দেখে। সরকার হাটের ট্যাক্স বাড়িয়ে, ডিজেলের দাম তথা পরিবহন খরচ বাড়িয়ে এটা করে। আবার সরকারের কাছের প্রভাবশালী মহলকে সরকার সুযোগ করে দেয় হাটে পদে পদে চাঁদা বা ট্যাক্স আদায় করতে। সরকার একদিকে আইন করে কৃষকদের ঋণের জালে আটকে সুদ ব্যবসায়ীদের বাজার বড় করার সুযোগ করে দেয়, অন্যদিকে কৃষকের পণ্যগুলোও দালাল ও ফড়িয়াদের মাধ্যমে বাজারনিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের হাতে যেতে সহায়তা করে।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে” (সূরা হাশর: ৭)। এই জন্যই অতীতে খলিফারা যেমন কৃষি উৎপাদন বাড়ানোতে মনোযোগ দিয়েছিলেন তেমনি নিশ্চিত করেছিলেন যাতে উৎপাদিত পণ্য সঠিকভাবে বিতরণ বা মানুষের হাতে পৌঁছে যায়। ইসলাম সম্পদের বিতরণকে অর্থনীতির মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে। তাই আসন্ন খিলাফত রাস্ট্রের অন্যতম নীতিও হবে পন্যের অবাধ বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা। কুরআন-সুন্নাহ্’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্রীর প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১২৪ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “মূল অর্থনৈতিক সমস্যা হচ্ছে সম্পদের বিতরণ ও সম্পদের সুবিধা রাস্ট্রের সকল নাগরিকের কাছে পৌঁছে দেয়া”। এই নীতির কারণে খিলাফত রাষ্ট্র বিতরণকে প্রভাবান্বিত করতে পারে এমন সববিষয়কে দূর করবেন। ইবনু ‘উমার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “অনেক মানুষ বাজারে আগত খাদ্যদ্রব্য বাজারের সম্মুখে গিয়েই ক্রয় করে ফেলতো। অতঃপর এখানে বসেই আবার এ মাল বিক্রি করতো। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এ শ্রেণীর ক্রেতাদেরকে সেখান থেকে ঐ খাদ্যদ্রব্য নিয়ে সেখানে বসেই বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, (অর্থাৎ যে স্থানে ক্রয় করেছে ঐ স্থানে বিক্রয় না করে অন্য স্থানে বিক্রয় করা) (আবূ দাঊদ)। অর্থাৎ ইসলামের নীতি হচ্ছে বাজার থাকবে ফড়িয়া ও দালাল মুক্ত। এখানে প্রকৃত ব্যবসা বা বাণিজ্য অনুমোদিত কিন্তু মজুতদারি সিন্ডিকেট ইত্যাদি নিষিদ্ধ। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত দামের বিশাল তারতম্য ইসলামে থাকবেনা। আর অন্যায়ভাবে ট্যাক্স বা চাঁদা আরোপতো ইসলামে ভয়ংকর অপরাধ। রাষ্ট্র নিজেতো এটা করার প্রশ্নই আসেনা, অন্য কাউকে এটা করতেও দিবে না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তোমরা পরস্পর পরস্পরের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর সন্তুষ্টচিত্তে ব্যবসা করা বৈধ”- (আন্-নিসাঃ ২৯)
–মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“কোভিড ভ্যাকসিন: টিকার খরচ নিয়ে সরকার ও টিআইবির হিসেবে ২২ হাজার কোটি টাকার ফারাক”
খবরঃ
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের খরচের ক্ষেত্রে সরকারি হিসেব এবং বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি’র এর হিসেবের মধ্যে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার ফারাক দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত মার্চ মাসে বলেছিলেন, কোভিড-১৯ টিকা ক্রয় এবং বিতরণের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হবার কথা নয়। (bbc.com/bengali/news-61078825)
মন্তব্যঃ
বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর রাজনীতির একটি মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে অবাধ আর্থিক সুবিধা অর্জন করা। কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপসমূহ শাসকগোষ্ঠীর আর্থিক সুবিধা লাভের লালসাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করে দেয়। কোভিডের জন্য জরুরি সুরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের নামে তারা চালায় ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট। ৭৫০ টাকার থার্মোমিটার কেনা হয় ১২,৩০০ টাকায়, কেএন-৯৫ মাস্কের বাজার দর ১৫০-২৯৯ হলেও কেনা হয়েছে ৭২৭ টাকায়, ৫-৬ টাকা প্লাস্টিকের হ্যান্ড গ্লাভস কেনা হয় ৩২ টাকায় (সুরক্ষাপণ্য ক্রয়ে বেশুমার চুরি, দৈনিক যুগান্তর, অক্টোবর ১২, ২০২০)। কোভিড টিকা ক্রয় এবং ব্যবস্থাপনার দুর্নীতি নতুন মাত্রায় নতুন উচ্চতায় চলে গিয়েছে। কোভিড-১৯ টিকা ক্রয়ের দুই স্তরে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। প্রথমত, দেশে টিকা উৎপাদনের কোন প্রকল্প গ্রহণ না করে বিদেশ থেকে টিকা ক্রয় করে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী কর্পোরেট এবং সাম্রাজ্যবাদীদের তুষ্ট করা হয়। দ্বিতীয়ত, সরকারের ঘনিষ্ঠ ক্ষুদ্র পুঁজিপতি গোষ্ঠিকে টিকাকেন্দ্রিক ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়। যেমনঃ বেক্সিমকোকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন বাংলাদেশে সরবরাহ করার অনুমতি প্রদান করা হয়। এছাড়াও, শাসকগোষ্ঠী এবং সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তারা বিভিন্ন খাতের নামে ব্যাপক নয়-ছয় করে যার ফলে হিসাবে এতবড় গরমিল দেখা যাচ্ছে। সরকারের প্রকৃত খরচের সাথে প্রদর্শিত হিসাবে এই ধরণের গরমিল বর্তমান মানবরচিত শাসন ব্যবস্থার খুব সাধারণ ঘটনা ও একটি বৈশিষ্ট্য। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর এই সকল দুর্নীতি ও জনগণের অর্থ তছরূপের সংবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলেও শাসকগোষ্ঠীকে জবাবদিহিতা করার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বর্তমান শাসনব্যবস্থায় অনুপস্থিত। তাই জনগণ শাসকগোষ্ঠীর বড় বড় দুর্নীতিগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেও শাসকগোষ্ঠীর দুর্নীতি ও দুঃশাসন বিন্দুমাত্র হ্রাস পাচ্ছে না বরং ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে।
অন্যদিকে খিলাফত শাসনব্যবস্থায় শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা জনগণের অধিকার ক্ষুন্ন হওয়াকে একটি গুরুতর অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। গুরুত্ব বিচার করে এই ধরণের অপরাধের বিচার করার জন্য রয়েছে “মাযালিম আদালত” এর মত প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো। এই আদালত শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় বা যুলুমের কোন ঘটনা সংগঠিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা খতিয়ে দেখে এবং সত্যতা প্রতীয়মান হলে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে দ্রুততার সাথে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ খলিফা থেকে শুরু করে সাধারণ রাষ্ট্রীয় কর্মচারী সকলেই এই আদালতের আওতাধীন। এই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ছাড়াও খিলাফত রাষ্ট্র শিক্ষা, মিডিয়াসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটি তাকওয়া ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে গুরুত্ব দিবেন যার ফলে সমাজের লোকেরা হবে তাকওয়াবান। এই রকম সমাজ ব্যবস্থা থেকে উমর বিন আব্দুল আযীয (র.) মত তাকওয়া সম্পন্ন শাসক তৈরি হয়েছিল যিনি বায়তুল মালের অর্থে কেনা তেলের বাতি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে অস্বীকৃতি জানান।
-মোঃ সিরাজুল ইসলাম