Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১৩২ তম সংখ্যা । ১০ জানুয়ারী, ২০২৫
এই সংখ্যায় থাকছে :
“আইএমএফের চাপে ৬৫ পণ্য-সেবায় ভ্যাট বৃদ্ধি; সংসার খরচ আরও বাড়বে”
“হতবিহ্বল বাংলাদেশ দেখছে, প্রতিবেশী ‘পাল্টে’ গেছে”
“রাজনীতিতে এখন নানা সন্দেহ, কারণ কী”
“সরকারের থেকেও মানুষের শক্তি বেশি: প্রধান উপদেষ্টা”
“মরুর শহরে বাংলাদেশিদের সম্পদের পাহাড়”
“আমাদের জাতির পিতা’ বাদ, নতুন অধ্যায় ‘আমাদের চার নেতা”
“আইএমএফের চাপে ৬৫ পণ্য-সেবায় ভ্যাট বৃদ্ধি; সংসার খরচ আরও বাড়বে”
খবরঃ
নতুন বছরে সংসার খরচ আরও বাড়বে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে ৬৫ পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এ তালিকায় আছে-জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ/সস, সিগারেট, জুস, টিস্যু পেপার, ফলমূল, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পল (স্যান্ডেল), বিমান টিকিট। এসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়াবে। … আরও জানা গেছে, ঋণ দিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার (৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা) সঙ্গে যোগ হবে। বাজেট প্রণয়নের সময় এনবিআরকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবভিত্তিক নয় বলে এনবিআর থেকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তার ওপর আইএমএফ আরও ১২ হাজার কোটি টাকা আদায়ের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় ভ্যাট হার বাড়ানোর বিকল্প ছিল না। সূত্র আরও জানায়, উপদেষ্টা পরিষদ নতুন ভ্যাট হারের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যেহেতু সংসদ নেই, সেহেতু অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে। (https://www.jugantor.com/tp-firstpage/898000)
মন্তব্যঃ
জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের পরবর্তী গঠিত অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে জনগণ তাদের সরকার মনে করছিল। এই সরকারের কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশা ছিল সরকার জনগণের জীবনকে সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় করার জন্য জনবান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু, বাস্তবতায় সরকারের পদক্ষেপগুলো পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মত বিশেষগোষ্ঠীর (সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ) তোষণ এবং উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফের প্রেসস্ক্রিপশনের অন্ধ অনুসরণ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। সরকার ইতিমধ্যে, বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য সুদমুক্ত ঋণে গাড়ি ক্রয় এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করার নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন বিচারকরা, ইত্তেফাক,ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪)। সরকারি কর্মচারীদের খুশি করতে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ সরকারি কর্মচারীদের জন্য সংশোধিত বাজেটে মহার্ঘ ভাতায় বরাদ্দ রাখার চিন্তা, প্রথম আলো, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪)। আই.এম.এফ-এর পরামর্শে অর্থবছরের মাঝখানে ৬৫ টি পণ্যের উপর ভ্যাট বৃদ্ধি করছে। ভ্যাট বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়ে প্রশ্ন করলে অর্থ উপদেষ্টা অতীতের শাসকগোষ্ঠীর মতই বলেন, ‘মনে হয় না কষ্ট হবে।’ কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে ভ্যাট বৃদ্ধির তালিকায় ঔষুধ, পোশাক, রেস্টুরেন্ট, মোবাইল ফোনসহ আরও অনেক কিছুই নিত্যপণ্য। আর এই পণ্য/সেবাগুলোর মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিবে এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নাই। আই.এম.এফ-এর পরামর্শে এটি করা হচ্ছে কি না, তা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘না, সবদিক চিন্তাভাবনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ আই.এম.এফ-এর পরামর্শে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হলেও অর্থ উপদেষ্টা তা অস্বীকার করে নিজেকে আই.এম.এফ-এর স্বার্থরক্ষার অনুগত কর্মচারী হিসাবে প্রমাণ করলেন। অথচ, দেশের অর্থনীতি নিয়ে খোঁজখবর রাখে এমন যেকোন ব্যক্তিমাত্রই জানে বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক দুর্দশার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর হঠকারী Structural Adjustment Program (SAP), বেসরকারীকরণ নীতি প্রকল্প। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ গণআদালতে বিশ্বব্যাংক–আইএমএফ–এডিবি: যে প্রশ্নের জবাব আজও মেলেনি, প্রথম আলো, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩)। প্রশ্ন হচ্ছে উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের পলিসি এবং তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মচারীদের দেশের অর্থনীতি পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করে জনগণের আকাঙ্খা পূরণ করা সম্ভব কি?
জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য উপনিবেশবাদীদের যুলুমমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং তাদের অনুগত বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদদের প্রত্যাখান করে ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের আয়-ব্যয়ের উপর কর আরোপ এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিশেষগোষ্ঠীকে অনৈতিক সুবিধা প্রদান বৈধ নয়। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের জন্য ন্যায্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে স্বনির্ভর অর্থনীতি তৈরি করাই হচ্ছে ইসলামী অর্থনীতির মূল লক্ষ্য। ইতিহাস স্বাক্ষী ইসলামের অর্থনীতি বাস্তবায়নের ফলে এতটাই সমৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল যে স্বল্প সময়ের মধ্যে খিলাফত রাষ্ট্রে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত একজন নাগরিকও অবশিষ্ট ছিল না। “আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” (সূরা আল-আ‘রাফ: ৯৬)।
– মো: সিরাজুল ইসলাম
“হতবিহ্বল বাংলাদেশ দেখছে, প্রতিবেশী ‘পাল্টে’ গেছে”
খবরঃ
বাংলাদেশে ‘জেলা’ যেধরনের প্রশাসনিক ইউনিট, আরাকানে সেটাই ‘টাউনশিপ’; সেখানে এ রকম টাউনশিপ আছে ১৭টি। টাউনশিপগুলোর মধ্যে আরাকান আর্মির এখন কেবল আকিয়াব, মুনাং ও কাইয়াকফু দখল বাকি। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী ‘টাটমা–দো’ ছোট ও মাঝারি প্রায় ২০টি যুদ্ধজাহাজ দিয়ে এই তিন শহর রক্ষায় নেমেছে। আর আরাকান আর্মি আশপাশের টাউনশিপ থেকে আর্টিলারি দিয়ে প্রতিপক্ষের প্রাণশক্তি কমিয়ে আনছে ধীরে ধীরে। তীব্রভাবে ঐক্যবদ্ধ রাখাইন জাতির মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় আরাকান আর্মিকে থামানো নৈতিকভাবে বিধ্বস্ত ‘টাটমা–দো’র পক্ষে প্রায় অসম্ভব। বলা যায়, বাংলাদেশ প্রস্তুত হওয়ার আগেই তার প্রতিবেশী পাল্টে যাচ্ছে। আরও সরাসরি বললে, মিয়ানমার আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী নেই। (https://www.prothomalo.com/opinion/column/jydmcwjnl2)
মন্তব্যঃ
খবর বলছে প্রতিবেশী পাল্টে গেছে, অথচ ভারতের প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির একটি অন্যমত যুক্তি হলো “আর যাই হোক, আমরাতো আর প্রতিবেশী পাল্টাতে পারব না”! এটি আমাদের শত্রুদের তৈরী করা ঠুনকো বাস্তবতা ও পরিস্থিতির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ যা পরাজিত মানসিকতার পরিচায়ক। এই পরাজিত মানসিকতা ধারণ করে দেশের সেকুলার বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা আমাদেরকে কুয়োর ব্যাঙ্-এর আকাশ দর্শনের মত করে ভূরাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বোঝায়। এই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী ধারণ করার কারণে আমরা প্রত্যক্ষ করছি শত্রু ও শত্রুভাবাপন্ন বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহ আমাদের ভূখন্ড ও কৌশলগত সম্পদ নিয়ন্ত্রণের জন্য নানামুখী পরিকল্পনা ও তত্পরতা চালাচ্ছে এবং আমরা তাদের সেই পরিকল্পনার জালে অপ্রস্তুত অবস্থায় শিকারের মত আটকা পড়ছি। এই সেকুলার রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিরা নিজেদেরকে তথাকথিত ‘প্রগতিশীল’ দাবী করে, আর ভারত ও আমেরিকাকে শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করায় ইসলামী জীবনাদর্শের অনুসারীদেরকে ‘প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী’ বলে তাচ্ছিল্য করে। অথচ এই সেকুলাররাই বরং পশ্চাদপদ ও প্রতিক্রিয়াশীল কারণ তারা এই দেশকে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের পরিকল্পনা ও তত্পরতার বিপরীতে উদ্দেশ্যহীন ও নতজানু অবস্থায় ফেলে রেখেছে।
বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও আন্ত:রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক একটি সদাপরিবর্তনশীল বিষয়; যদিও এই পরিবর্তন আবহাওয়া পরিবর্তনের মত স্বল্পমেয়াদী ও ঘনঘন সংঘটিত হয় না, বরং বিষয়টি জলবায়ু পরিবর্তনের মত চলমান ও মধ্যম-দীর্ঘমেয়াদী একটি বিষয়। বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রসমূহের নিজস্ব লক্ষ্য, পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন সংঘটিত হয়। এবং এই পরিবর্তনকে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে রাখতে তারা তাদের রাষ্ট্রের সকল সামর্থকে ব্যবহার কিংবা নতুন সক্ষমতা/সামর্থ অর্জন করতেও পিছ পা হয় না। এভাবেই কোন রাষ্ট্র নির্দিষ্ট অঞ্চল কিংবা পুরো বিশ্বের মধ্যে নেতৃত্বশীল হিসেবে আবির্ভূত হয়। এটাই হল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী। এই দৃষ্টিভঙ্গী জাতিরাষ্ট্র ধারণা আবির্ভূত হওয়ার পূর্বের ইতিহাস ও জাতিরাষ্ট্র ধারণা আবির্ভূত হওয়ার পরের বা আধুনিক ইতিহাস উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের পতনের পর ইসলামী আদর্শ (ideology) এখনো সেকুলার পুঁজিবাদকে রাষ্ট্রীয়ভাবে চ্যালেঞ্জ না করার কারণে সেকুলার বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা একচ্ছত্রভাবে আন্ত:রাষ্ট্রীয় সম্পর্কের বিদ্যমান অবস্থাকে (status que) মহান (!), অপরিবির্তনীয় ও অলঙ্ঘণীয় হিসেবে উপস্থাপন করে যাচ্ছে, যা মূলত পুঁজিবাদি রাষ্ট্রসমূহের স্বার্থ ও নিয়ন্ত্রনকে কোন প্রশ্ন উত্থাপন না করেই বজায় রাখার অপপ্রয়াস।
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ্ তাঁর রাসূল (সাঃ)–কে সত্য দ্বীন (জীবনাদর্শ) ইসলাম দিয়ে প্রেরণ করেছেন এই ঐশী বিধান দিয়ে পুরো মানবজাতিকে শাসন করার জন্য। এর অংশ হিসেবে পূর্বের খিলাফত প্রায় অর্ধপৃথিবী ইসলাম দিয়ে শাসন করেছিল, বা অন্যভাবে বললে পুরো মানবজাতিকে শাসনের উদ্দেশ্য এখনো অর্জিত হয়নি। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্যই আসন্ন খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে, যা নিয়ে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন দেশের শাসনভার তাদের হাতে সমর্পন করা যারা কুফরের তৈরী করা ঠুনকো বাস্তবতা/পরিস্থিতি ও পরাজিত মানসিকতার কাছে আত্মসমর্পন করেনি এবং কুফরের স্থুল পরিকল্পনা দেখে হতবিহ্বল হয় না, বরং আল্লাহ্’র বিধান অনুসরণ ও সূক্ষ্ম পরিকল্পনার সমন্বয়ে তারা কুফরের ঘুম হারাম করে দিবেন।
– রিসাত আহমেদ
“রাজনীতিতে এখন নানা সন্দেহ, কারণ কী”
খবরঃ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐক্য অসম্ভব নয়; তবে অতি বিরল। কারণ রাজনীতি আর সন্দেহ মাসতুতো ভাই।… যেখানেই রাজনীতি, সেখানেই সর্বগ্রাসী বন্যার মতো পারস্পরিক বিশ্বাসের বাঁধ ভেঙেচুরে সন্দেহ ঢুকে পড়ে। আর সন্দেহ করোনার চেয়ে দ্রুত গতিতে সংক্রমিত হয়ে একটি জাতির সবচেয়ে দামি ঐশ্বর্য জনঐক্যকে উইপোকার মতো ভেতর থেকে কেটে কেটে ঝাঁজরা করে দেয়।… (https://www.prothomalo.com/opinion/column/6owdbs59ck)
মন্তব্যঃ
‘রাজনীতি’ ও ‘সন্দেহ’ মাসতুতো ভাই- এটা সত্য, তবে সেটা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির বেলায় প্রযোজ্য। কারণ, এখানে রাজনীতি মানে হল জনগণকে উপেক্ষা করে শাসক শ্রেণী, কতিপয় পুঁজিপতি ও বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করা। কিন্তু জনগণের নিকটতো তাদের (শাসক) পক্ষে এই নোংরা অবস্থানকে পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তখন তারা জনগণকে বিগত হাসিনা সরকারের আমলের ‘উন্নয়ন’ কিংবা বর্তমান সরকারের আমলের ‘সংস্কার’ এর মতো চটকদার বয়ান দিয়ে ভুলিয়ে রাখে। কিন্তু জনগণের সমস্যাগুলোর সমাধান না করে ‘উন্নয়ন’ বা ‘সংস্কার’ এর বয়ান গেলানোর চেষ্টা বেশিদিন কার্যকর হয় না। তখন শাসকদের প্রতি জনগণের ঘৃণা ও সন্দেহ বাড়তে থাকে, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৮ শতাংশ মানুষের তাদের রাজনীতিবিদদেরকে সন্দেহ করে বা বিশ্বাস করে না। (https://www.pewresearch.org/politics/2024/06/24/public-trust-in-government-1958-2024/)। আর বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও জনগণের সন্দেহের পাঁকে পা ডুবিয়েছে, যেটি ইতিমধ্যে সচিবালয়ে অগ্নিকান্ড, আওয়ামীলীগ নেতাদের বিদেশে পালিয়ে যেতে দেওয়া সহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রমাণিত।
মূলত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ কিংবা শাসকরা স্রষ্টার প্রতি জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে না এবং এই ব্যবস্থায় জনগণের চার-পাঁচ বছর পর পর সরকার পরিবর্তনে ভোট দেওয়া ছাড়া সরকারকে জবাবদিহিতার অন্য কোন পথও থাকেনা। তাই সরকারেরও জনগণের নিকট কোন প্রকার জবাবদিহি হতে হয় না। শাসকদেরকে শুধুমাত্র তাদের উপনিবেশবাদী প্রভু কিংবা পুঁজিপতিদের নিকটই জবাবদিহিতা করতে হয়। ফলত, তারা এই দুই সত্ত্বার প্রতি অর্থাৎ তাদের উপনিবেশবাদী প্রভু ও কতিপয় পুঁজিপতিদের প্রতি আনুগত্য সহকারে দায়িত্ব পালনেই সচেষ্ট থাকে এবং জনগণও এটা বুঝতে পারে বলেই সবসময় তাদেরকে সন্দেহ করতে থাকে।
কিন্তু ইসলামী শাসন অর্থাৎ খিলাফত ব্যবস্থায় শাসকদের ও জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ক কোন একটি পরিবারের দায়িত্বশীল অভিভাবক এবং তার পরিজনদের সম্পর্কের মত, আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই খলিফা হলেন অভিভাবক এবং তার জনগণের জন্য দায়িত্বশীল”। এখানে অভিভাবকরূপী শাসক সবসময় তার পরিজনরূপী জনগণের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মায়া-মমতা সহকারে তাদের কল্যাণের জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকে, আর জনগণও শাসকদের বিশ্বাস করে এবং সম্মান প্রদানের মাধ্যমে শাসকদের আনুগত্য করে থাকে। প্রয়োজনে তার ভুলগুলোকে সংশোধন করে দেয় কিংবা সম্মানের সাথে তাকে জবাবদিহিতা করে। এখানে অবিশ্বাস বা সন্দেহের কোন সুযোগ তো থাকেই না, বরং জনগণ শাসকের জন্য দোয়া করে। আল্লাহ্’রর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে উৎকৃষ্ট শাসক হচ্ছে সেই শাসক, যিনি তার জনগণকে ভালোবাসেন এবং জনগণও তাকে ভালোবাসেন, এবং যিনি তার জনগণের জন্য দোয়া করেন এবং জনগণও তার জন্য দোয়া করেন…”। এই শাসন ব্যবস্থায় জনগণ ও শাসক উভয়েই, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র নিকট তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জবাবদিহিতার ভয় করেন এবং তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তাআলা) নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্বশীল আচরণ করেন। ফলে জনগণ ও শাসকের মধ্যে ভালোবাসা ও দোয়ার সম্পর্ক তৈরি হওয়ার মাধ্যমে একটি সুন্দর ঐক্য তৈরি হয়। যার ফলে আমরা দেখি, আমাদের পূর্ববর্তী খিলাফতকালীন শাসকদের জন্য (যেমন আবুবকর (রাঃ), ওমর (রাঃ) থেকে শুরু করে সকল নিষ্ঠাবান খলিফাদের (শাসক) জন্য সেই সময় থেকে শুরু করে আজও আমাদের মসজিদগুলিতে পবিত্র জুম্মা খুতবায় দোয়া করা হয়।
– মোঃ জহিরুল ইসলাম
“সরকারের থেকেও মানুষের শক্তি বেশি: প্রধান উপদেষ্টা”
খবরঃ
সরকারের শক্তির থেকেও মানুষের শক্তি বেশি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল না হয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পরের স্বার্থে কাজ করার প্রবণতা আছে। সেই ইচ্ছাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। নিজের জন্য কিছু করার তুলনায় পরের কল্যাণে কাজ করায় আনন্দ মেলে বেশি।’ [https://mzamin.com/news.php?news=142372 ]
মন্তব্যঃ
ব্যক্তির সমস্যা পূরণের দায় শুধুমাত্র ব্যক্তির এরকম একটি চিন্তা থেকে ডঃ ইউনুস উপরের বক্তব্য দিয়েছেন। উনি শাসক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির আগে আপাদমস্তক এই চিন্তার মানুষই ছিলেন এবং রাষ্ট্রকে ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা পূরণের দায় থেকে মুক্ত রেখে ব্যক্তিকে সব দায় নেয়ায় উৎসাহিত করতে নানা চটকদার সমাধান প্রচার করতেন। স্বভাবতই রাষ্ট্র ক্ষমতা পেয়েও তিনি একই কাজ করছেন। এই চিন্তার নাম ‘Individualism’ বা ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা’। এই চিন্তার উৎস পশ্চিম। রেনেসাঁ উত্তর মধ্যযুগীয় ইউরোপে চার্চগুলো যখন গডের এজেন্সিশীপের অজুহাতে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে পরিপূর্ণভাবে অস্বীকার করেছিল, এর প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপ তখন ‘ফ্রীডম’ এর উপর ভিত্তি করে চার্চের প্রভাবমুক্ত তথা ধর্মের প্রভাবমুক্ত একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। ‘Individualism’ এর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে সরকার ব্যক্তির দায়িত্বও নেয় না আবার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপও করতে চায় না। এই ধারনা অনুযায়ী সরকারের মূল কাজ হয় শুধুমাত্র ততটুকু করা যাতে ব্যক্তি স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকে।
কিন্তু পশ্চিমা সমাজের দিকে তাকালে স্পষ্টত দেখা যায় যে এই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা মানুষের সমাজকে ‘Survival of the Fittest’-এর একটা জংগলে পরিণত করেছে। এখানে কতিপয় পুঁজিপতির সম্পদ ও ক্ষমতা উভয়েই প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে এবং বাকিরা তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাতে থাকে এবং প্রতিনিয়ত গরিব হতে থাকে, তাদের মৌলিক চাহিদাও পূরণ করতে পারে না। জানুয়ারী ২০২৪ সালের অক্সফামের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪ বছরের মধ্যে যখন বিশ্বের সেরা পাঁচ ধনীর সম্পদ ১১৪% বেড়েছে একই সময়ের মধ্যে ৫০০ কোটি মানুষ আগের থেকে আরও গরিব হয়েছে। খোদ আমেরিকাতেই গড়ে ৮০% নতুন ব্যবসা উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। মৌলিক চাহিদা পূরণের অবস্থা এমন ভয়াবহ যে আমেরিকাতে ২০২৪ সালে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় পৌনে ৮ লাখে যা এর আগের বছরের চেয়ে ১৮.১% বেশি। ডঃ ইউনুসের ক্ষুদ্র ঋণ, সামাজিক ব্যবসা এসব ধারণাও ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা’ প্রসুত। বলাবাহুল্য ‘ক্ষুদ্র ঋণ’ দারিদ্রতাকে জাদুঘরেতো পাঠাতে পারেই নাই বরং বিশেষজ্ঞদের মতে, “৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় ঋণগ্রহীতার অবস্থা উন্নতির পরিবর্তে বরং আরও অবনতি ঘটেছে। প্রায় ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি ঋণগ্রহীতাদের স্বনির্ভর করার পরিবর্তে তাদের ওপর ঋণের বোঝা বাড়িয়ে চলে” [দেখুনঃ দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ, দৈনিক জনকন্ঠ]। অর্থাৎ পশ্চিমের ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার সমাধান ও ব্যক্তি মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি, অধিকার দিতে পারেনি। বরং মানুষ চার্চের যুলুমের স্থলে নতুন একটি ক্ষুদ্র ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর যুলুমে পিষ্ট হচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন” (সহীহ্ বুখারী)। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আরও বলেন, “একজন ব্যক্তির জন্য এটা যথেষ্ট পাপ যে তার অধিনস্ত কাউকে বঞ্চিত করে”। অর্থাৎ একদিকে ইসলাম প্রতিটি ব্যক্তিকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে নিজের ও তার অধীনস্তদের চাহিদা পূরণের দায়িত্ব দেয়, আবার খলিফাকে সবার উপরে দায়িত্বশীল করে দেয়। অর্থাৎ ইসলামী ব্যবস্থায় কোন ব্যক্তি তার সামর্থ থাকুক বা না থাকুক সে কখনই চাহিদা পূরণের বাইরে পড়ে যায় না। খলিফা উম্মাহ্’র শক্তি সামর্থ ও আল্লাহ্ প্রদত্ত সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিটি ব্যক্তির চাহিদাসমূহ একেবারে ব্যক্তি পর্যায়ে পূরণ করার ব্যবস্থা করেন। ব্যক্তির অসামর্থকে ইসলাম একটি সামগ্রিক বা কমিউনিটি সামর্থ দিয়ে সুন্দরভাবে জয় করে। অর্থাৎ ইসলামের সমাধান ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয় বরং ইসলামে ব্যক্তির চাহিদা ও সম্মান উভয় সুরক্ষিত থাকে একটি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের একটি সামগ্রিক বা কমিউনিটি রুপের মাধ্যমে।
– মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“মরুর শহরে বাংলাদেশিদের সম্পদের পাহাড়”
খবরঃ
দুবাইয়ের ব্যস্ততম এলাকা থেকে শুরু করে শান্ত মরুভূমির প্রান্তর—এই ঝকমকে শহরটি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশী ধনীদের ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে ভীষণ প্রিয়। শহরটির দ্রুত বর্ধনশীল আবাসন খাত বাংলাদেশীদের জন্য সম্পদ গচ্ছিত রাখার আকর্ষণীয় জায়গা। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো বারবারই দুবাইকে হুন্ডি লেনদেনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/%20Investigative-report/news-641711)।
মন্তব্যঃ
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্যাক্স অবজারভেটরির ২০২১ সালের প্রাক্কলন অনুযায়ী, দুবাইয়ে বাংলাদেশীদের মালিকানাধীন অফশোর সম্পত্তির মূল্য ২৬ কোটি ডলার বা প্রায় ৩ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে সিঙ্গাপুরের পর দুবাই হচ্ছে বাংলাদেশী ধনীদের পছন্দের গন্তব্য। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর এক জরিপে উঠে আসে, আওয়ামী সরকারের ১৪ বছরে সড়ক ও সেতু খাতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দুর্নীতি করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির অনুসন্ধানকারী গ্লোবাল ডিফেন্স করপোরেশন সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক মালয়েশিয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) থেকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা) লোপাট করেছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যা দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে (যুগান্তর, ১৯ আগস্ট ২০২৪)। অর্থপাচারের এই তালিকা হতে আওয়ামী-বিএনপির নেতা, পুঁজিপতি কিংবা আমলা কেউ বাদ যায়নি; এখানে যেমন রয়েছে আওয়ামী নেতা সাইফুজ্জামান কিংবা এইচবিএম ইকবালসহ বিভিন্ন নাম, তেমনি রয়েছে বিএনপি নেতা ফালু, এম এ হাসেম কিংবা পুঁজিপতি বসুন্ধরা গ্রুপ কিংবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বেনজিরের স্ত্রীর নাম।
বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী সকল পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহে দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থপাচারের যে মহোৎসব চলছে তা হলো জীবনব্যবস্থা পরিচালনার ভিত্তি হিসেবে আল্লাহ্’র আইনকে পরিহার করার অনিবার্য পরিণতি। সেক্যুলার-পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানুষকে জাগতিক বস্তুগত উপকরণের প্রতি লোভী ও স্বার্থপর করে তোলে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে সংসদে আইনপ্রণেতাদের ১৫% ছিল ব্যবসায়ী এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ (ডেইলী স্টার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৪)। এই তথ্য-উপাত্ত থেকে অনুধাবন করা যায় সংসদ সদস্যের পদ দিন দিন ব্যবসায়ীদের জন্য লোভনীয় হয়ে উঠছে। এর কারণ হচ্ছে, এই সেক্যুলার-পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আইন তৈরির সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদান করে শাসকগোষ্ঠীকে আল্লাহ্র আসনে বসায়, ফলে দুর্নীতিবাজ ও অর্থলিপ্সুগোষ্ঠী রাজনীতি ও ক্ষমতার প্রতি আকৃষ্ট হয় যাতে স্বার্থ অনুযায়ী আইনপ্রণয়ন ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অগাধ সম্পদের মালিক হতে এবং সেটিকে সুরক্ষিত করতে পারে। এই সার্বভৌম ক্ষমতাই শাসকগোষ্ঠীকে লুটপাট ও দুর্নীতির বটবৃক্ষে পরিণত করে।
বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের দুর্নীতির মহোৎসব থেকে থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে ইসলামের মধ্যে সমাধান খুঁজতে হবে। কেননা, ইসলাম মানুষের দুর্নীতি করার মূল কারণ “আইন তৈরির ক্ষমতা” মানুষকে দেয় না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “…বিধান দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ্” (সূরা-ইউসুফঃ ৪০)। এজন্য মানুষকে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রদানকারী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে থেকে কোনরুপ সংস্কার কিংবা কসমেটিক পরিবর্তন কিংবা কমিশন গঠন দুর্নীতি বন্ধে কোন ফলাফল বয়ে আনবে না। দুর্নীতির গোড়া যেহেতু খোদ গণতন্ত্র নিজেই, তাই এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিবর্তন তথা এই ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ফিরিয়ে এনে আল্লাহ্’র আইনের পরিপুর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। খিলাফত রাষ্ট্র ইসলামী শরীয়াহ্’র পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শাসনব্যবস্থা যেখানে আইন-কানুন হচ্ছে কুর‘আন-সুন্নাহ্ হতে উদ্ভূত এবং অপরিবর্তনীয়। তাই কোন পুঁজিপতি বা ক্ষমতাশালীর পক্ষে এই শাসনব্যবস্থাকে নিজেদের কায়েমী স্বার্থে ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই কিংবা খলীফাকে প্রভাবিত করে আইন পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। অন্যদিকে খিলাফত রাষ্ট্রে রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তাকওয়া (খোদাভীতি) যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি ও লুটপাটের স্পিরিট গোড়া থেকেই নির্মূল হয়ে যাবে। সমাজের মধ্যে তাকওয়ার ভিত্তি শক্তিশালীভাবে পুনরুত্থিত হওয়ার ফলে আসন্ন খিলাফতের অধীনে মানুষ কোনো বস্তুগত স্বার্থে কোনো পদে অধিষ্ঠিত হতে চাইবে না কিংবা দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধিতে প্রলুব্ধ হবে না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “যে ব্যক্তি অবৈধভাবে (সম্পত্তি) উপার্জন করেছে, বিচারের দিন সে যা অর্জন করেছে তা বহন করবে” (আলি ইমরান: ১৬১)।
– আবি আব্দুল্লাহ্
“আমাদের জাতির পিতা’ বাদ, নতুন অধ্যায় ‘আমাদের চার নেতা”
খবরঃ
নতুন শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে ‘আমাদের চার নেতা’ নামে নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। এই চার নেতা হলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। [‘আমাদের জাতির পিতা’ বাদ, নতুন অধ্যায় ‘আমাদের চার নেতা’]
মন্তব্যঃ
১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধান ও পাঠ্যপুস্তকে জাতির পিতা হিসেবে শেখ মুজিবর রহমানের নাম উল্লেখ করা হত। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সংবিধান ও পাঠ্যপুস্তকে আমরা জাতির পিতার কোন উল্লেখ দেখতে পাই না। ১৯৮১ পর্যন্ত আমরা দেখতে পাই ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে জিয়াউর রহমানকে। এরপর পাই ‘পল্লীবন্ধু’ খ্যাত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। সেই একই ধারাবাহিকতায় এবার পালা আসলো মাওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী, একে ফজলুল হক এবং আবারো শেখ মুজিবর রহমানের। অথচ ১৯৭১ থেকে আজকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোন নেতার তথাকথিত ‘আদর্শ’ই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের এবং এর মানুষের কোন গুণগত উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। ব্রিটিশদের কাছে সে শোষিত ছিল, পাকিস্তান আমলেও সে শোষিত ছিল, এখনো সে শোষিত আছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে কিছু ব্যক্তিকে আমাদের শিশুদের সামনে রোলমডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কেন? এর উত্তর জানতে গেলে আমাদের ১৯২৪ থেকে ঘুরে আসতে হবে। ১৯২৪ সালে মুসলিমদের রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফতকে ধ্বংস করে মুসলিমদের ‘মুসলিম’ পরিচয় থেকে দূরে সরানোর জন্য ৫০টার মত খন্ড খন্ড ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ‘জাতীয়তাবাদী’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাষ্ট্রগুলোকে দেয়া হয় জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং মুসলিমদের বিশ্বাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা একেক জন ‘জাতির পিতা’ খ্যাত নেতাসমূহ। মুস্তাফা কামাল পাশা, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আব্দুল আজিজ ইবন সৌদ, কিং ফয়সাল, কিং আব্দুল্লাহ এবং শেখ মুজিবর রহমান ইত্যাদি নেতাদের কাজই ছিল মুসলিমদের একটা দ্বিধান্বিত পরিচয়ে পরিচিত করা। তাদের ফেলে আসা লিগ্যাসিই বয়ে নিয়ে গেছে পরবর্তী শাসকেরা। বাংলাদেশের নতুন পাঠ্যপুস্তকের উদ্দেশ্যও একই। কিছু ন্যারেটিভ আর ব্যক্তির পরিবর্তন করা। যাতে ঘুরে ফিরে আমাদের তরুণ প্রজন্ম এসব ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের মধ্যেই ঘুরপাক খায় এবং ইসলামী আদর্শের সেসব প্রকৃত নেতৃত্বের সাথে পরিচিত না হতে পারে, যারা মানবজাতিকে যুলুম-নির্যাতন ও অন্ধকার হতে ইসলামী আদর্শের আলো দ্বারা আলোকিত করেছিল।
কিন্তু সারাবিশ্বের মুসলিমদের মতই বাংলাদেশের মুসলিমরাও এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার উপর ত্যক্তবিরক্ত। তারা আর ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ধারক কোন নেতার আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হতে চায় না। তারা চায় না জোর করে আনা ভাসানীকে তাদের নতুন আদর্শ বানাতে। কারণ এদের সবার আদর্শই ধর্মনিরপেক্ষতা তথা ইসলামবিমুখতা। মুসলিম উম্মাহ্ তার রোলমডেল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর আদর্শ ইসলাম সম্পর্কে অবগত। সেই আদর্শের ভিত্তিতেই মুসলিম উম্মাহ্ তার ইসলামী রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তথা খিলাফত চায়। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং সর্বান্তকরণে তা কবুল করে নেবে”। [সূরা নিসাঃ ৬৫]
– জাবির জোহান