Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 107

Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১০৭ তম সংখ্যা । ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

এই সংখ্যায় থাকছে :

 

“নির্বাচনের পর বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী”

“১১ দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ভারত, তারপরে বাংলাদেশ”

”ভারতের সঙ্গে নির্বাচনের আলাপ হয়ে গেছে” 

“বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ঘিরে ‘বয়কট বাংলাদেশ’ ডাক পশ্চিমবঙ্গে”

“ইসরাইলি অজুহাত প্রত্যাখ্যান, নিন্দা”

“৫৬.২৫% বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ”

“প্রতিদিন প্রার্থনা করতাম, ঘুম থেকে জেগেই যেন নিজেকে মেয়ে হিসেবে দেখতে পাই” 

 

“নির্বাচনের পর বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী”

খবরঃ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে সমর্থন দেবে। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা খুবই বাস্তববাদী সরকার। ১৯৭১ সালে আমেরিকা আমাদের সঙ্গে ছিল না, কিন্তু বিজয় অর্জনের পর জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আমাদের সমর্থন করেছিল। আমরা আশা করি তারা অতীতের মতো সরকার গঠনের পরও বাংলাদেশকে সমর্থন করে যাবে। ‘আজ শুক্রবার দুপুরে হযরত শাহজালাল মাজারে নামাজ আদায় শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদেশিরা যদি ভালো পরামর্শ দেয়, আমরা তা গ্রহণ করব। তারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে যায়, আমরা জানি কীভাবে তা মোকাবিলা করতে হয়।(https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-535741)

মন্তব্যঃ

ক্ষমতাসীনরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নাকি স্বৈরশাসক হিসাবে ক্ষমতায় টিকে আছে তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মাথা ঘামায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি দেশে তাদের স্বার্থ রক্ষা করে এমন একটি সরকার থাকে। যার ফলে আমরা দেখি আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হাসিনা সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ব্যাপক ভোট কারচুপির নির্বাচনকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মনে করেনি বরং সমর্থন করেছে। যেমন আমরা দেখেছি, ২০১৮ সালের তথাকথিত নির্বাচনের পরপরই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাসিনা সরকারের সাথে এলএনজি রপ্তানী নিয়ে কথা বলে। কার্যত, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমেরিকার কাছে ফাকা বুলি ছাড়া কিছুই নয়, তাদের উপনিবেশবাদী স্বার্থই এখানে মুখ্য। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে রাজতন্ত্র এবং স্বৈরশাসকদের মতো কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সিরিজ সামরিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের অনুগত দালাল শাসকদেরকে নিয়োগ দিয়েছে। মিশর এমন অনেক দেশগুলোর মধ্যে একটি যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মুরশির সরকারকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতকারী জেনারেল সিসি-কে সমর্থন দিয়ে আসছে, যাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রিয় ডিকটেটর (Favourite Dictator) হিসেবে অভিহিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা হরণকারী স্বৈরশাসকদের শুধু সমর্থনই করে না বরং তাদের সাথে বন্ধুত্বও করে যদিও তারা নিজেদেরকে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে দাবি করে! মুলত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম দেশগুলোতে যেসব শাসকরা ব্রিটেন কিংবা ফ্রান্সের দালাল ঐসব রাষ্ট্রগুলোতে ব্রিটিশ-ফ্রেঞ্চ দালালদেরকে সরিয়ে নিজের দালাল নিয়োগের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্লোগান ব্যবহার করে এবং নিজেদেরকে তথাকথিত গণতন্ত্র উদ্ধারকারী হিসেবে উপস্থাপন করে।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্লোগাণ এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ খোদ পশ্চিমারাই বিশ্বাস করে না। সুতরাং তথাকথিত যেসব বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদরা সরকার পরিবর্তনের জন্য মার্কিনীদের প্রতি জনগণকে ভরসা রাখার যে আহ্বান জানাচ্ছে, তা সুস্পষ্ট প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না। শাসকদের চেহারা পরিবর্তনের জন্য গণতন্ত্রের স্লোগান ব্যবহার করা কিংবা বিভিন্ন দেশে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহারের পেছনে পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের উপনিবেশিক আধিপত্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। প্রকৃত পরিবর্তন আসবে যখন সামরিক বাহিনী উম্মাহ্‌’র পাশে দাঁড়াবে এবং খিলাফতে রাশিদাহ্‌ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নুসরাহ্‌ প্রদান করবে। তাই দেশের জনগণ এবং নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবিদের অবশ্যই তথাকথিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মায়াজাল থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং নিষ্ঠাবান সেনাঅফিসারদের নিকট খিলাফত প্রতিষ্ঠায় সত্যনিষ্ঠ দল হিযবুত তাহ্‌রীর-কে নুসরাহ্‌ প্রদানের দাবী তুলতে হবে। খিলাফত রাষ্ট্রই হবে আমাদের প্রকৃত ত্রাণকর্তা যা আমাদেরকে শুধুমাত্র হাসিনা সরকারের যুলুমের শাসন থেকেই মুক্তি দিবে না, বরং মার্কিন ঔপনিবেশিকতাকে সমূলে উৎপাটন করবে, বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বে আমেরিকার কর্তৃত্বকে উপড়ে ফেলবে এবং মুসলিম উম্মাহ্‌’র জন্য প্রকৃত রাজনৈতিক মুক্তি এবং বিজয় নিয়ে আসবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, …. “তারপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে, অতঃপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত নব্যুয়তের আদলে” (মুসনাদে আহমদ)

    –    সিফাত নেওয়াজ

“১১ দেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ভারত, তারপরে বাংলাদেশ”

খবরঃ

মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে ১১টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসিবি)। মোট ৪৪ স্কোরের মধ্যে মানবাধিকার কমিশন পেয়েছে ১৭ দশমিক ২৫। সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ভারত। মঙ্গোলিয়া রয়েছে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে। দ্য এশিয়ান এনজিও নেটওয়ার্ক অন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশনস (এএনএনআই) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিন্নমত দমন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য সরকারকে জবাবদিহি করার ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের সাহসের অভাব রয়েছে।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/9x7qxs9t4e)

মন্তব্যঃ

যেকোনো রাষ্ট্রের প্রধান হলো জনগণের সর্বোচ্চ অভিভাবক। সে যদি অত্যাচারী হয় তাহলে জনগণের আর যাওয়ার কোন জায়গা থাকে না। আর ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হল অত্যাচারী শাসক তৈরীর কারখানা। এই ব্যবস্থায় বর্তমান পৃথিবীতে পূর্ব থেকে শুরু করে পশ্চিম পর্যন্ত একজন শাসকও নেই যে ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে পারে। এর কারণ হলো, এই ব্যবস্থা শাসকদেরকে আইন তৈরি করার ক্ষমতা দেয়। কোন মানুষের পক্ষেই সকল মানুষ তো দূরে থাক, তার নিজের জন্যই বিধি-বিধান তৈরি করা সম্ভব নয়। তারপরও এই অযোগ্য ব্যবস্থা যখন জোর করে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তখন জনগণ এর উপর চরম বিরক্তি অনুভব করে এবং এর পতনে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। উপায়ান্তর না দেখে এর ধারক ও বাহকেরা তখন জনগণকে সান্ত্বনা দিতে নিত্য নতুন ফন্দি আঁটে। যেমন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি। এগুলো আবার সরকারের কর্তৃত্বের অধীনে থাকে। সরকারের কর্তৃত্বের অধীনে থেকে কোন প্রতিষ্ঠান কিভাবে সরকারকে জবাবদিহিতা করবে, যেখানে শাসকরা তাদের পরিচালনার জন্য বিধিবিধান প্রণয়ন করে এবং তা প্রয়োগ করে! তারপরও পাতানো জবাবদিহিতার আয়োজন করা হয় এবং এর ভিত্তিতে আবার র‍্যাংকিংও করা হয়! এভাবে অত্যাচারিত ও অসহায় জনগণের সাথে নিত্য নতুন প্রতারণা করেই মূলত এই ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জোড়াতালি দিয়ে টিকে রয়েছে।

তাই এই প্রতারণামূলক ব্যবস্থা অবশ্যই প্রতিস্থাপন জরুরী এবং এটা অবশ্যই এমন ব্যবস্থা হতে হবে যেখানে কোন মানুষই বিধি-বিধান প্রণয়ন করতে পারবে না। আইন প্রণয়ন অবশ্যই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক হতে হবে, কারণ তিনি সকল মানুষের সৃষ্টিকর্তা। তিনি সবার বাস্তবতা বুঝেন। তাঁর প্রদত্ত খিলাফত শাসন ব্যবস্থার সঠিক বাস্তবায়ন শাসকদেরকে ন্যায়পরায়ণ হতে বাধ্য করে। একটি অনন্য বিচার প্রক্রিয়া যার নাম ‘মাহকামাতুল মাজালিম’ এ ব্যবস্থায় শাসকদেরকে দায়িত্ব পালনে অবহেলায় প্রয়োজনে শাস্তি প্রদান করে। এখানে মানবাধিকার কমিশনের মত প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই।

    –    মোঃ জহিরুল ইসলাম

“ভারতের সঙ্গে নির্বাচনের আলাপ হয়ে গেছে” 

খবরঃ

ভারতের সঙ্গে নির্বাচনের আলাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আসন্ন বৈঠকে রাজনৈতিক বিষয় নয়, বরং দ্বিপক্ষীয় খুঁটিনাটি বিষয়ের আলোচনা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের ওটাতে (বৈঠক) নির্বাচন নিয়ে আলাপ হবে না। অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলাপ হবে। ওদের (ভারত) সঙ্গে নির্বাচনের আলাপতো হয়েই গেছে। এটাতো আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী তারা আলাপ করেছেন। (ittefaq.com.bd/667504/‘ভারতের-সঙ্গে-নির্বাচনের-আলাপ-হয়ে-গেছে’)

মন্তব্যঃ

আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমেকে জানিয়েছেন। ভারতও বাংলাদেশের ভোটের বিষয়ে তার অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে খোলাখুলিভাবে জানিয়েছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুন: বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত, নভেম্বর ১০, ২০২৩, সংবাদ প্রতিদিন)। এর প্রেক্ষিতে আওয়ামী শিবিরে বেশ চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মধ্যে দেখা যাচ্ছে তীব্র শঙ্কা। এতদিন তারা আশা করছিল আমেরিকা যেকোন উপায়ে ব্যাপক অজনপ্রিয় আওয়ামী লীগকে হটিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। কিন্তু তারা এ ভেবে শঙ্কিত যে, না জানি ভারত আমেরিকাকেও প্রভাবিত করতে সক্ষম হল কিনা।

আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের দুঃশাসন প্রত্যক্ষ করে নতুন এক শ্রেণীর অনলাইন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং activist এর জন্ম লাভ করেছে যারা সরকারের বিভিন্ন ন্যারেটিভ বা বয়ানকে খন্ডন করে জনসাধারণের কাছে মুক্তির দূত হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারাও কিছুটা শঙ্কিত এবং বিভ্রান্ত। উপনিবেশবাদীদের রাজনৈতিক কাঠামোর আলোকে তাদের প্রদত্ত তথাকথিত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, ভবিষ্যতবাণী, এবং রাজনৈতিক সমাধান (যেমনঃ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যম ক্ষমতার পরিবর্তন, আমেরিকার মানবাধিকার রক্ষার প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি ভ্রান্ত হিসাবে প্রমাণিত। কিন্তু, তারপরেও তারা উপনিবেশবাদীদের বাতলে দেয়া রাজনৈতিক সমাধানের বিকল্প সঠিক সমাধানের আলোচনাকে অবাস্তব প্রকল্প বানিয়ে রেখেছে। বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হচ্ছে নূসরাহ’র (তথা নিষ্ঠাবান সামরিক অফিসারগণ পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের দালাল-তাবেদার রাজনৈতিক শক্তিকে অপসারণ করে সত্যনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তিকে সমর্থন প্রদান করা) মাধ্যমে বর্তমান যুলুমের ব্যবস্থার পতন। এটাই হচ্ছে, পশ্চিমা উপনিবেশবাদী এবং তাদের অনুগত দালাল রাজনৈতিক দলগুলোর যুলুমের শৃঙ্খল থেকে জনগণের মুক্তির একমাত্র বাস্তবসম্মত এবং শারীয়াহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি। সামরিক বাহিনীর সমর্থন ব্যতীত কোন আন্দোলন রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরির্তন করেছে এমন কোন উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বলশেভিক বিপ্লব যার মাধ্যমে রাশিয়ায় কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থার সূচনা এবং মিশরের বিপুল ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ মুরসীর ক্ষমতা থেকে পতনের পিছনেও কাজ করেছিল সামরিক বাহিনীর সমর্থন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) মদিনায় প্রথম ইসলামী রাষ্ট্রও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই সময়ের মদিনার সামরিক নেতৃত্ব আনসারদের সহায়তায়। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) যে পদ্ধতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে যুলুম থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, মুসলিমদের সেই পদ্ধতির বাহিরে গিয়ে সমাধান খোঁজার কোন সুযোগ নাই। ইতিমধ্যে, আমরা প্রত্যক্ষ করছি পশ্চিমা উপনিবেশবাদী এবং তাদের দালালদের প্রস্তাবিত সমাধান আমাদেরকে “যুলুমের দুষ্ট চক্র” থেকে বের হতে দিচ্ছে না। সুতরাং, আমাদের উচিত উপনিবেশবাদীদের প্রস্তাবিত সমাধানগুলো ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করে উপনিবেশবাদীদের যুলুমের দুষ্ট চক্রের অবসান ঘটানো এবং সঠিক পরিবর্তনের একমাত্র বাস্তবসম্মত ও ইসলামী সমাধান নূসরাহর আলোচনাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ”মুমিন একই গর্তে দু’বার দংশিত হয় না।”

(বুখারী ও মুসলিম)।

    –    মোঃ সিরাজুল ইসলাম  

“বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারে সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ঘিরে ‘বয়কট বাংলাদেশ’ ডাক পশ্চিমবঙ্গে”

খবরঃ 

বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ছয়দিন কেটে গেলেও ওই খেলার ফলাফল নিয়ে বাংলাদেশের একাংশের উচ্ছাস প্রকাশ যেমন বন্ধ হয়নি সামাজিক মাধ্যমে, তা নিয়ে আবার উল্টোদিকে ভারতীয় বাঙালীদের একাংশও পাল্টা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ আবার সামাজিক মাধ্যমে ‘বয়কট বাংলাদেশ’ ডাক দিচ্ছেন।……. “অথচ ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যপণ্য তারা আমদানি করেন, ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা তারা ব্যবহার করেন, কলকাতায় এসে মার্কেটিং করেন, আবার সেই ভারতকেই সবসময়ে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেন। (https://thenewse.com/বিশ্বকাপ-ফাইনালে-ভারতের/)

মন্তব্যঃ 

দাস কখনো মালিকের সাথে বেয়াদবি করলে মালিক কখনোই তা মেনে নেয় না। বাংলাদেশের জনগণ ভারতবিরোধী হলেও এদেশে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতায় থাকা দালাল শাসকগোষ্ঠীর কারণে ভারত বাংলাদেশের প্রতি মনিব-দাস মনোবৃত্তি ধারণ করে। এর প্রমাণ আমরা পাই ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ এ বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের কথায়। তিনি বলছেন, “বাংলাদেশে ভারতবিরোধী গ্রুপ আছে। পাকিস্তানেও আছে। তাদের কাজই হল ভারত বিরোধিতা করা। বাংলাদেশে যে সরকার আছে, তাদের সঙ্গে ভারত সরকারের সম্পর্ক ভালো। তাই বাংলাদেশের ভারত বিরোধীরা এখন দাঙ্গা হাঙ্গামা করতে পারছে না”। বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সবদিক থেকেই আমাদেরকে ভারতীয় বলয় দ্বারা আচ্ছাদিত করে ফেলেছে। চাল, ডাল, ডিম থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবার জন্যও বাংলাদেশিদের ভারতে ছুটতে হয়। এমনকি পানিটা (তিস্তার পানি) পর্যন্ত ভারতের ইচ্ছামত পায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতের সমর্থন অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। (পড়ুনঃ এ কে আব্দুল মোমেন: ‘শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারতকে অনুরোধ’ – পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে তোলপাড় – BBC News বাংলা) ভারতের গান, টিভি সিরিয়াল, চলচ্চিত্র সবকিছুর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশকে একটা সার্বভৌম রাষ্ট্রের চেয়ে বরং ভারতের একটা প্রদেশ হিসেবেই বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়। তাদের এ মনোভাব আরো স্পষ্ট হয় যখন ভারত অখন্ড ভারতের মানচিত্রে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মত মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে তার অধীনস্ত হিসেবে প্রচার করে।

বরাবরই উম্মাহ্‌ সময়ে সময়ে নানাভাবে তাদের ঘৃণা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে ও দিচ্ছে। উম্মাহ্‌’র এই সচেতনতা আমরা দেখতে পাই ইসরায়েলের বিপক্ষে, ভারতের বিপক্ষে, চীনের বিপক্ষে এবং মায়ানমারের বিপক্ষে। কিন্তু এরপরেও মুসলিমদের অপমানজনক অবস্থানের কোন শেষ আমরা দেখতে পাই না। কেন? কারণ মুসলিম উম্মাহ্‌’র দাবি ও তার প্রাপ্তির মাঝখানে অবস্থান করছে পশ্চিমা কাফিরদের স্থাপন করা দালাল শাসকরা। তারা উর্বর, খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ও ভৌগলিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে পঙ্গু করে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর অথবা তাদের মনোনীত চৌকিদারদের স্বার্থ উদ্ধার করছে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্‌’র প্রয়োজন সেই শাসক যে আল্লাহ্‌’র ভয়ে উম্মাহ্‌’র স্বার্থ উদ্ধার করবে। মুসলিম উম্মাহ্‌’র প্রয়োজন সেই শাসক তার সক্ষমতার পরিপূর্ণ ব্যবহার করে উম্মাহ্‌-কে সকল প্রকার অপমানজনক পরনির্ভরশীল অবস্থা থেকে মুক্তি দেবে এবং তাকে পৌঁছে দেবে নেতৃত্বশীল অবস্থানে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্‌’র অনুধাবন করতে হবে যে সেই শাসক পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা থেকে কখনোই আসবে না। দালালের চেহারা পরিবর্তন হবে, কাজ একই রয়ে যাবে। প্রকৃত সমাধান পেতে হলে পশ্চিমাদের ধার করা জীবনাদর্শকে বাদ দিয়ে আমাদের স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনাদর্শ তথা খিলাফত ব্যবস্থাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। যেই ব্যবস্থার শাসকেরা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই বাণীকে শুধু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসই করবেন না বরং এটি বাস্তবায়নের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন: “…আল্লাহ্‌ কখনোই মুমিনদের বিপক্ষে কাফিরদের আধিপত্য মেনে নেবেন না” [সূরা নিসাঃ ১৪১]।

    –    জীবন চৌধুরী

“ইসরাইলি অজুহাত প্রত্যাখ্যান, নিন্দা”

খবরঃ

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামী শীর্ষ সম্মেলনে মুসলিম দেশের নেতারা ইসরাইলের আত্মরক্ষার অজুহাত প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাশাপাশি গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেছেন। আরব লিগ এবং অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) যৌথ শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফল যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আঞ্চলিক বিভক্তিগুলো তুলে ধরেছে। …, সম্মেলনে নেতারা ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে একটি সিদ্ধান্তমূলক এবং বাধ্যতামূলক প্রস্তাব গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যুদ্ধের আগে ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা ভেবেছিলেন। (https://dailyinqilab.com/international/article/616831)

মন্তব্যঃ

গত ৭ই অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত অভিশপ্ত দখলদার ইহুদীগোষ্ঠী গাজায় নিরীহ মুসলিমদের উপর প্রায় ৩২০০০ টনের মত বিস্ফোরক নিক্ষেপ করে। ছোট্র এই গাজা ‍উপত্যকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৭টন (৮৭০০০ কেজি) বিষ্ফোরক। ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস্‌ মনিটরের মতে যা ২টা নিউক্লিয়ার বোমার সমান। এর সাথে তারা নিষিদ্ধ ফসফরাস বোমাও নিক্ষেপ করে যা অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসা মাত্রই ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নিরীহ মুসলিমদেরকে জীবন্ত জ্বালিয়ে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয় অবৈধ এই ইহুদী রাষ্ট্র আয়রনব্লেড বোম, খাবার-পানিয়-জ্বালানি-ইলেক্ট্রিক-ঔষুধ-চিকিৎসা সাপ্লাই বন্ধসহ এমন কোন নৃশংস পন্থা নেই যা অবশিষ্ট রাখেনি। এর বিপরীতে, এই নৃশংসতা অতিবাহিত হওয়ার এতদিন পরে মুসলিম বিশ্বের শাসকগুলো একজোট হয়ে কিছু শব্দবোমা নিক্ষেপ করছে! এরদোগান, মোহাম্মদ বিন সালমান, ইব্রাহীম রইসির মত শাসকগুলো কুফর রাষ্ট্রগুলোর মোড়ল আমেরিকা ও কুফর সংস্থা জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে ইসরাইলের আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য। অথচ, এরা ভালো করেই জানে জাতিসংঘ কাফিরগোষ্ঠীর অপরাধসমূহের বৈধতাদানের রাবার স্ট্যাম্প হিসেবে কাজ করে এবং আমেরিকাসহ পশ্চিমাগোষ্ঠী প্রত্যক্ষভাবে এই হত্যাকান্ডের মদদদাতা। কাফিররা যখনই একজোট হয়ে মুসলিমদের হত্যা করে তখন এরদোগান মুসলিমদের ধোঁকা দিতে সবসময় নিত্যনতুন শব্দবোমা নিয়ে আসে। অথচ, বাস্তবে সে কাফেরদের সহযোগিতায় লিপ্ত থাকে। এরদোগানের তুরস্কের সরকার ইসরায়েলের এয়ার ফোর্সকে ট্রেইন আপ থেকে শুরু করে জ্বালানি দিয়ে সহায়তা পর্যন্ত সবকিছু করে যাতে তারা মুসলিমদের হত্যায় তাদের বিমান এবং যুদ্ধাশস্ত্রগুলোকে সচল রাখতে পারে। মোহাম্মদ বিন সালমান কিছুদিন আগেও উঠে পড়ে লেগেছে সস্পর্ক স্বাভাবিককরণ করে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে। বাশার আল-আসাদ, রইসি সরকারতো দশক ধরে সিরিয়ায় মুসলিমদের হত্যা চালিয়ে আসছে।

মূলত, কাপুরুষত্ব এবং বিশ্বাসঘাতকতায় অলংকৃত মুসলিমদেশগুলোর বর্তমান শাসকদের চরিত্র। এরা একজোট হয় মূলত এদের প্রভু পশ্চিমা কাফের আমেরিক-ব্রিটেনের স্বার্থে আর বিছিন্নও থাকে তাদের স্বার্থে। এদের কাছে কখনোই মুসলিমদের জান-মাল এবং স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ নয়। এরা একজোট হয়নি মুসলিমদের রক্ষায় বরং একজোট হয়েছে এদের প্রভুদের কথায় নিজেদের পিঠ এবং সিংহাসন বাঁচাতে। অথচ, কিছুদিন আগেও এরা নিজেদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্ধে লিপ্ত ছিলো। কারণ, এদের আশ্চর্যরকমের বিশ্বাসঘাতকতায় মুসলিম উম্মাহ্‌ যখন বিশ্বব্যাপী বিস্ফোরণের অপেক্ষায় জ্বলন্ত আগ্নিয়গিরির মত ফুঁসছে তখন এটিকে থামাতে তারা মুসলিমদের স্বার্থে কিছু একটা করছে এই নাটক সাঁজাতে এই সম্মেলন করেছে। কিন্তু, উম্মাহ এদের বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত। উম্মাহ্‌ জানে এদের দিয়ে কিছুই হবেনা। কারণ, এরা কেউই উম্মাহ্‌’র খলিফার মত অভিভাবক না। উম্মাহ্‌ তাই এদের উপর কোন ভরসাও রাখেনা। বরঞ্চ, উম্মাহ্‌ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে এদেরকে অপসারণ করে সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত খলিফা তথা অভিভাবকের আগমণের, যার পিছনে থেকে উম্মাহ্‌ নিজেকে রক্ষা করবে এবং লড়াই করবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “একমাত্র ইমাম (খলিফ) হচ্ছে সে ঢাল, যার পেছনে তোমরা যুদ্ধ কর এবং তোমরা নিজেকে রক্ষা কর, অতএব যদি সে তাকওয়ার মাধ্যমে আদেশ করে এবং ন্যায়পরায়ণ হয় তবে তা হবে তার জন্য সওয়াবের কারণ এবং যদি সে এ ব্যতীত অন্যকোন আদেশ করে তবে তা তার বিরুদ্ধে (মুসলিম)।

    –    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম

“৫৬.২৫% বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ”

খবরঃ

মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করেছে সরকার…. মালিকপক্ষ এদিন তাদের আগের প্রস্তাব ১০ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। মজুরি বোর্ডের বৈঠকে সেই প্রস্তাবই গৃহীত হয়। পরে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি বলেন, এই মজুরি তারা মেনে নিয়েছেন। সবশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পাঁচ বছরের জন্য পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করে সরকার। সে অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরি ঘোষণা করার দাবি ছিল শ্রমিকদের। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার। গত ২২ অক্টোবর এই বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেন। আর মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে– এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে আন্দোলন শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। পরে তা আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় শ্রমিকরা ভাংচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘাতে এবং এক কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় প্রাণ যায় অন্তত দুইজনের। পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্যায়ক্রমে পাঁচ শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। (https://bangla.bdnews24.com/economy/0tr38dwmx0)

মন্তব্যঃ

রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, বিশ্বের তৈরি পোশাকশিল্পের বড় কারখানার পাঁচ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) চার দিনে যে আয় করেন, তা বাংলাদেশের একজন নারী পোশাকশ্রমিকের সারা জীবনের আয়ের সমান। আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা অক্সফাম ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বিশ্বের সাত প্রধান তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম। শোভন জীবনযাপনের জন্য যে অর্থ দরকার, তার চেয়ে অনেক কম অর্থ পান বাংলাদেশের শ্রমিকেরা। বাংলাদেশে বসবাসের জন্য শোভন মজুরি প্রয়োজন ২৫২ মার্কিন ডলারের সমান অর্থ। এর বিপরীতে বাংলাদেশের একজন শ্রমিক পান ৫০ ডলার। তাছাড়া, কাজের চাপে শৌচাগারে যেতে না পারায় অনেক অল্পবয়সী নারী শ্রমিক মূত্রনালির সংক্রমণে ভোগেন। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে পুরুষ সহকর্মীদের দ্বারা যৌন হয়রানিতো রয়েছেই। পাশাপাশি কোনমতে বেঁচে থাকার জন্য নারী শ্রমিকরা ওভারটাইম করতে বাধ্য হন। কিন্তু ওভারটাইম করেও ভালোভাবে বেঁচে থাকার মতো অর্থ তাঁরা পান না।

বাংলাদেশের মত মুসলিমদেশসমূহের অর্থনীতিকে ধারাবাহিকভাবে পরনির্ভরশীল করার উপনিবেশবাদী প্রকল্পের অংশই হচ্ছে তথাকথিত এই শিল্প। ব্যাপারটা কখনোই এমন ছিল না যে, এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পশ্চিমারা এখানে পোশাক শিল্পের দ্বার উন্মোচন করেছে। এদেশের তথাকথিত পোশাক শিল্প মূলত সম্পূর্ণভাবেই পশ্চিমাদের কাছে রপ্তানি নির্ভর শিল্প। যদি পশ্চিমারা পোশাক আমদানি বন্ধ করে দেয় তাহলেই এ শিল্পে ধ্বস নামবে। তাছাড়া বিষয়টি এমনও নয় যে পশ্চিমারা তাদের তথাকথিত নারীর ক্ষমতায়নের বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের দ্বার উন্মোচন করেছে, বরং সস্তা শ্রমের বাজার তৈরি করাই এখানে মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীদের সস্তা শ্রমের শ্রমিক হিসেবে নব্যদাসে পরিণত করা হয়েছে।

আজকে যদি এই পশ্চিমা উপনিবেশবাদী থাবা না থাকত এবং বাংলাদেশের মুসলিমরা যদি খলীফা উমরের মত শাসকের রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থাৎ খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে বসবাস করত তাহলে তাদেরকে মাত্র ১২ হাজার টাকার জন্য জীবন দিতে হত না আর নারীদেরকেও এভাবে সাম্রাজ্যবাদীদের নব্য দাসপ্রথার শিকার হতে হত না। বরং খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিটি নাগরিকদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করত। এবং নারীদেরকে পোশাক শিল্পের মত কঠিন কর্মসংস্থান থেকে দূরে সরিয়ে প্রথাগত কর্মসংস্থানের দিকে মনোনিবেশ করাতো। যেমন, গবাদি পশুপালন, কৃষিকাজ যেমন উদ্যান চাষ, ঘরোয়া পোশাক শিল্প যেমন সেলাইয়ের কাজ, বুটিক শিল্প ইত্যাদি, ফুড প্রসেসিং, নতুন উদ্যোক্তা তৈরিকরণ ইত্যাদি। তাছাড়া খিলাফত রাষ্ট্র নারী উদ্যোক্তাদেরকে বায়তুল মাল থেকে সুদবিহীন ঋণ প্রদান করে তাদেরকে অনুপ্রাণীত করবে। সুতরাং সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে খিলাফত ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই শুধুমাত্র পোশাকশিল্প সহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে আমাদের দুরবস্থার অবসান ঘটতে পারে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম।” [সূরাঃ আল-আ’রাফ-৯৬]

    –    মো. হাফিজুর রহমান

“প্রতিদিন প্রার্থনা করতাম, ঘুম থেকে জেগেই যেন নিজেকে মেয়ে হিসেবে দেখতে পাই” 

খবরঃ

প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক এক প্রতিবেদনে ট্রান্সজেন্ডার জারার বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে ঠিক এই ভাবে, ” ছোটবেলায় সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিদিন প্রার্থনা করতাম, ঘুম থেকে জেগেই যাতে নিজেকে মেয়ে হিসেবে দেখতে পাই। ছোটবেলায় প্রায় সময়ই ভাবতাম, আমার আশেপাশে আর কারও সঙ্গে তো এমন হয়নি। তারা হয় নারী না হয় পুরুষ। অথচ আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি নিজেকে তো মেয়ে ভাবি।” (https://www.prothomalo.com/bangladesh/61dxb96kvh)

মন্তব্যঃ

সরকার বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক, সরকারী চাকুরি, অফিস আদালত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রেই তথাকথিত তৃতীয় লিঙ্গ নামক বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেন সমাজের মানুষ এটাকে নতুন স্বাভাবিক’ (new normal) হিসাবে মেনে নেয়। এক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন চাপ ও প্রলোভনের মাধ্যমে সেক্যুলার মিডিয়া ও সরকারকে এসব বিষয়ে সরব হতে উৎসাহিত করছে। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে অন্যদেশে সমকামীদের অধিকার রক্ষায় তারা বৈদেশিক উন্নয়ন সাহায্য এবং কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাবে”। ২০২১ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব এন্টনি ব্লিকেন বলেন, ”And we’re advancing LGBTQI rights worldwide as part of our foreign policy”। আমাদের দেশে এই ধরনের চিন্তার প্রসারের কারণ হচ্ছে, প্রথমত আমাদের উপর পশ্চিমাদের আদর্শিক নেতৃত্ব বজায় রাখা; যেন চিন্তা, মনন ও আচরণে আমরা তাদের মত হয়ে যাই। দ্বিতীয়ত পশ্চিমারা চিন্তার স্বাধীনতার নামে উদার নৈতিক (liberalism), স্বাধীনতা (freedom), সুখবাদ (hedonism) নামক চিন্তা সমূহ গ্রহণ করা যা মূলত বিকৃত সমকামী, রূপান্তরকামী ধারণা সমূহ সমাজে ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী।

আমরা যদি একটা যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে রূপান্তরকামিতার দিকে তাকাই, তাহলে প্রথমেই বোঝা প্রয়োজন এটা কি একজন মানুষের দেহের স্বাভাবিক কোন বহিঃপ্রকাশ নাকি দেহের অভ্যন্তরে শরীর তত্ত্বীয় কোন অসামঞ্জস্যতার বহিঃপ্রকাশ। প্রথম আলোয় প্রকাশিত জারার বক্তব্য বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তার বক্তব্য অনুযায়ী বোঝায় যাচ্ছে সে ছেলে হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও, শরীরের অভ্যন্তরে কোন অসামঞ্জস্যতার কারণে মেয়েদের মত আচরণ করত। আর ঐ মুহুর্তে তার দরকার ছিল সঠিক চিকিৎসা। কিন্তু সমাজ তার সঠিক চিকিৎসা না করে তাকে একটা পরিচয় সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সীমাবদ্ধ জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের কাছ থেকে সমাধান নিলে এর চেয়ে আর ভাল কিছু আশা করা সম্ভব না। তাই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা হচ্ছেন মানুষের যাবতীয় সমস্যার সমাধানের উৎস, কারণ তিনি সকল সীমাবদ্ধতার উর্দ্ধে। ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফত লিঙ্গ সংক্রান্ত পরিচয় সংকটে ভোগা মানুষদেরকে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থার করবে, সমাজের মূলশ্রোতে ফিরিয়ে আনবেন এবং তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পশ্চিমাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা নামক ধ্বংসাত্মক চিন্তার ভ্রান্তি উন্মোচিত করে তাদের বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক আধিপত্যকে বিনষ্ট করবে। সাথে সাথে নারী ও পুরুষে বিভক্ত করে, তাদের দায়িত্ব ও অধিকারসমূহ অর্পণ করে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মানবজাতির মধ্যে যে ভারসাম্য তৈরী করেছেন সেই ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ রাখবেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন, আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী” [সূরা নিসা-১]।

    –    আনসার উদ্দিন