বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
হে মুসলিমগণ! “Two-State Solution” প্রত্যাখ্যান করুন;
ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে সামরিক অফিসারদেরকে সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবী’র
পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিযানে বের হতে আহ্বান করুন!
গাজার সাহসী মুসলিমরা অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সামনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে এবং আমাদের এই প্রিয় ভাইবোনরা ফিলিস্তিনের বরকতময় ভূমি ও পবিত্র আল-আকসা মসজিদ সর্বশক্তি দিয়ে আঁকড়ে আছে। কারণ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “পবিত্র ও মহীয়ান তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি বরকতময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” [সূরা বনী ইসরাঈল : ১]। পশ্চিমা ক্রুসেডারদের বিশেষ করে আমেরিকার অস্ত্রশস্ত্র ও আর্থিক সহযোগিতায় ইহুদীগোষ্ঠীর এই নৃশংসতা ও গণহত্যায় শহীদ হয়েছেন ছত্রিশ হাজারেরও বেশী মুসলিম, আহত হয়েছেন লক্ষাধিক। শহীদদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। প্রতি দশ মিনিটে একজন শিশু শহীদ হচ্ছে, অনাহারের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ, ধ্বংস করা হচ্ছে ঘরবাড়ি। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইসরাইলের এই বর্বরতা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে।
আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন, যখন গাজা, পশ্চিম তীর এবং অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের উপর গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে তখন হাসিনা সরকার অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নিয়েছে, যার অংশ হিসেবে ইসরাইল থেকে পর পর দুইদিন দু’টি কার্গো বিমান বাংলাদেশের মাটিতে অবতরণ করে। আপনারা জানেন, হাসিনা সরকার ফিলিস্তিনীদের রক্ষায় সামরিক বাহিনী প্রেরণতো করেই নাই, বরং ইহুদীগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে জাতিসংঘের অধীনে নৌবাহিনীর ৭৫ সদস্যের একটি দল লেবানন সীমান্তে প্রেরণ করেছে। হাসিনাসহ বিশ্বাসঘাতক মুসলিম শাসকরা ফিলিস্তিনের বিষয়ে আমেরিকার অবস্থান গ্রহণ করছে, যা প্রত্যেকবারই যুদ্ধবিরতির আহ্বানের মাধ্যমে শুরু হয় এবং “Two-State Solution”-এর প্রস্তাবনার মাধ্যমে শেষ হয়। “Two-State Solution” হচ্ছে ফিলিস্তিনী মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত পদক্ষেপ। আপনাদের জানা আছে, ১৯১৭ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর “Balfour Declaration”-এ ফিলিস্তিনে ইহুদীদের জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন অন্তর্ভূক্ত ছিল। তখন থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিতাড়িত ইহুদী উদ্বাস্তুরা দলে দলে ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে বসতি স্থাপন শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদী উদ্বাস্তুরা গণহারে ফিলিস্তিনে এসে জড়ো হয় এবং মুসলিমদেরকে ঘর-বাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে জবর-দখল করতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার তত্তাবধানে ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিল রেজ্যুলেশন ১৮১ মোতাবেক ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করে ইহুদীদের এই অবৈধ দখলদারিত্বকে বৈধ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়া হয়। ব্রিটেন-আমেরিকাসহ পশ্চিমা ক্রুসেডারদের মদদে বর্তমানে এই অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের প্রায় ৮৫% ভূমি দখল করে রেখেছে। “Two-State Solution” ফিলিস্তিন ভূমির উপর এই অবৈধ দখলদারিত্বকেই স্বীকৃতি দেয়। এছাড়া সামরিক বাহিনী বিহীন প্রস্তাবিত এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিন মুসলিমদেরকে নিরস্ত্র রাখার নীতির আলোকে প্রণীত যাতে করে ইহুদীগোষ্ঠী আর কখনোই প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়। মুসলিম শাসকরা কীভাবে এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে না?! “আল্লাহ্ তাদের ধ্বংস করুন; তারা কিভাবে বিভ্রান্ত হয়? ” [সূরা মুনাফিকুন : ৪]।
হে মুসলিমগণ! আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আল্লাহ্ শুধু তোমাদেরকে তাদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করতে নিষেধ করেন যারা দ্বীনের কারণে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তোমাদেরকে তোমাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে এবং তোমাদের উচ্ছেদে সহায়তা করে। আর যারা তাদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করবে, তারাই যালিম” [সূরা মুমতাহিনা : ৯]। তাই হাসিনাসহ মুসলিম শাসকগোষ্ঠী আল্লাহ্’র অবাধ্য এবং প্রকৃত যালিম, যারা পশ্চিমা ক্রুসেডারদের মিত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা ফিলিস্তিনীদের রক্ষায় জাতিসংঘের কাছে বার বার আহ্বান জানিয়ে “Two-State Solution” প্রকল্পকে সমর্থন করে মুসলিম উম্মাহ্’র সাথে প্রতারণা করছে।
হে মুসলিমগণ! ফিলিস্তিনী মুসলিমদের জন্য প্রতিনিয়ত আপনাদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই অবস্থায় আপনাদের কর্তব্য হচ্ছে, এই শাসকদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর আদেশ অনুযায়ী ইহুদীদের মদদদাতা আমেরিকা-ব্রিটেনসহ পশ্চিমা ক্রুসেডারদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে মুসলিম সামরিক বাহিনী প্রেরণে বাধ্য করা। তবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন, “তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বধির, বোবা এবং অন্ধ, তাই তারা কখনই সঠিক পথে ফিরে আসবে না” [সূরা আল-বাকারাহ্ : ১৮]। তাই আমাদেরকে মুসলিম সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারদের দিকেই মুখ ফিরাতে হবে এবং ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য সামরিক বাহিনীতে কর্মরত আমাদের পিতা, সন্তান, ভাই ও পরিচিতদেরকে জিহাদে উৎসাহিত করতে হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা যুদ্ধ করছো না আল্লাহ্’র পথে এবং নির্যাতিত নর–নারী ও শিশুদের জন্যে, যারা চিৎকার করে বলছে: হে আমাদের প্রতিপালক! অত্যাচারীদের এই জনপদ থেকে আমাদের মুক্তি দেন! আমাদের জন্য একজন উদ্ধারকারী নিযুক্ত করুন; আপনার অনুগ্রহে আমাদের জন্য একজন সাহায্যকারী নিয়োগ করুন” [সূরা আন-নিসা : ৭৫]। এই লক্ষে¨ যে তাদেরকে সালাহ্উদ্দিন আইয়ুবী’র পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে, যিনি ১১৮৭ সালে খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের দখল থেকে জেরুজালেমকে মুক্ত করে বীর সেনাপতির গৌরব অর্জন করেন। এই লক্ষে¨ যে তিনি মুনাফিক শাসকদের উৎখাত করে মুসলিম ভূমিকে একীভুত করেন এবং মুসলিম সামরিক বাহিনীকে জড়ো করে অভিযান পরিচালনা করেন।
হে মুসলিমগণ! ফিলিস্তিনীদের মুক্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা পশ্চিমাদের দালাল বর্তমান শাসকগোষ্ঠী, যারা আমাদের মুসলিম সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে বন্দি করে রেখেছে। তারা ‘শান্তি মিশন’-এর ব্যানারে আমাদের মুসলিম সামরিক অফিসারদের পশ্চিমাদের উপনিবেশবাদ রক্ষায় ব্যবহার করে কিন্তু মুসলিমদের রক্ষায় কোথাও প্রেরণ করে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছে ঢাল, যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ কর এবং নিজেদেরকে রক্ষা কর” (সহীহ্ মুসলিম)। তাই ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার প্রকৃত উপায় হচ্ছে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক সংগ্রামে হিযবুত Zvn&ixi-এর সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং আমাদের পিতা, সন্তান, ভাই ও পরিচিতদের মধ্যে যারা সামরিক বাহিনীতে কর্মরত তাদেরকে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় হিযবুত Zvn&ixi-কে নুসরাহ্ প্রদানে অনুপ্রাণিত করা, যে খিলাফত রাষ্ট্র সামরিক অভিযানের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করবে, ইনশা’আল্লাহ্।
“আর সেদিন মুমিনগণ (বিজয়ের) আনন্দ উপভোগ করবে, (সে বিজয় অর্জিত হবে) আল্লাহ্’র সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা বিজয় দান করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, বড়ই দয়ালু” [সূরা আর-রুম : ৪-৫]।
শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
০২ জি¦লকদ, ১৪৪৫ হিজরি