হে দেশবাসী!
দেশের অর্থনীতির উপর মার্কিন উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান
আইএমএফ-এর আগ্রাসন প্রতিহত করুন এবং আইএমএফ-এর নীতির
সমর্থনকারী মার্কিন দালালগোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করুন
আমেরিকা তার উপনিবেশবাদ প্রতিষ্ঠায় কোথাও সামরিক আগ্রাসন পরিচালনা করে (যেমন ইরাক), আবার কোথাও তার হাতিয়ার আইএমএফ-কে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক আগ্রাসন চালিয়ে সে দেশকে অধীনস্ত করে (যেমন: সুদান, ইন্দোনেশিয়া)। আমেরিকার পুতুল- অন্তর্বর্তী সরকার আইএমএফ-এর নীতি অনুসারে নজিরবিহীন ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ, দেশের উদীয়মান শিল্প কারখানাকে ধ্বংস করতে অতিরিক্ত কর আরোপ ও জ¦ালানীর মূল্যবৃদ্ধি করেছে, যার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির উপর মার্কিন আগ্রাসনে সহযোগীতার একটি স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। অথচ রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে মাক্স (কর বা শুল্ক) আরোপ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না” (হাদিস : মুসনাদে আহমাদ)। এই হাদিস অনুসারে ভ্যাট-ট্যাক্স ইসলামের দৃষ্টিতে যুলুমমূলক এবং নিষিদ্ধ।
দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পিষ্ট, উপযুক্ত আমিষের অভাবে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে পড়ছে, শিক্ষা-চিকিৎসা খরচ যোগান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। জনগণের এই দুর্দশাকে তোয়াক্কা না করে অন্তর্বর্তী সরকার শতাধিক পণ্যের উপর উচ্চহারে ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করে জনগণের গলা চেপে ধরেছে। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য টিসিবি’র মাধ্যমে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি বন্ধ রেখেছে। সরকারের এসব গণবিরোধী সিদ্ধান্তের কারণ আইএমএফ-এর ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি প্রত্যাহার নীতি, যা অনুসরণ করতে এই সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অথচ আইএমএফ হচ্ছে আমেরিকার নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। আপনারা নিশ্চয়ই প্রত্যক্ষ করেছেন, রিজার্ভ ও জ্বালানী সংকটে দেশের শিল্পোৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে যখন স্থবিরতা বিরাজ করছে, ঠিক তখন অর্থবছরের এই মাঝামাঝি সময়ে এসে বর্তমান সরকার করপোরেট কর ও কাঁচামাল আমদানীতে অগ্রীম আয়কর দ্বিগুণ করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দেশের উদীয়মান ইলেকট্রনিক্স শিল্প এই নীতির অন্যতম শিকারে পরিণত হয়েছে। অথচ আপনারা দেখছেন, আমেরিকার দালাল রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবিরা আইএমএফ-এর এই অত্যাচারী নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে শুধুমাত্র ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির বিরোধীতা করে আমেরিকার অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে আড়াল করছে। পতিত হাসিনার যুলুমের শাসনের অবসান করতে যখন অসংখ্য ছাত্র-জনতা তাদের জীবন দিয়েছে তখন ক্ষমতালোভী এসব দালালগোষ্ঠী জনগণের আশা-আকাঙ্খার তোয়াক্কা না করে সংস্কার বনাম নির্বাচনী সার্কাসে ব্যস্ত এবং ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রতিযোগীতায় লিপ্ত।
দেশের সর্বস্তরের জনগণ যখন অন্তর্বর্তী সরকারের এসব গণবিরোধী সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন প্রধান উপদেষ্টার ননসেন্স প্রেস সচিব বলেছে, “আগের সরকারের রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতিকে স্থিতিশীলতার দিকে ফেরানোর লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে”। সে আরও বলেছে, “আইএমএফ-এর পরামর্শ বিশ্বজুড়ে ম্যাক্রো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে কার্যকর” (দৈনিক সংবাদ, ১২ জানুয়ারী ২০২৫)। অথচ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসরণ করে কোন দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর নজির নাই, বরং এসব দেশসমূহ চরম পরনির্ভরশীল ও দারিদ্র অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সুদানকে একসময় বলা হতো “রুটির ঝুড়ি”, আর আইএমএফ-এর পরামর্শ অনুসরণ করে সুদান বর্তমানে অন্যতম দুর্ভিক্ষ পীড়িত দেশে পরিণত হয়েছে। আপনারা জানেন, দেশের অর্থনীতিতে আমেরিকার নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক এর ঋণের শর্তানুসারে, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে উৎপাদন বন্টন চুক্তি (PCS) এবং ১৯৮০ সালে কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচি (SAPs) গ্রহণ করে দেশের অর্থনীতির কাঠামো পরিবর্তন করা হয়। তখন থেকে দেশের অর্থনীতি পরনির্ভরশীল হতে থাকে, যার ফলশ্রুতিতে দেশের অর্থনীতি এখন ভঙ্গুর ও দেউলিয়াত্বের পথে। উদাহরণস্বরূপ, উৎপাদন বন্টন চুক্তি (PCS)-এর আওতায় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী শেভরন একাই দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন করা গ্যাসের ৬০ শতাংশ সরবরাহ করছে, আরেকটি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী ExxonMobil গভীর সমুদ্রের ১৫ টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ইজারার জন্য অপেক্ষা করছে। এছাড়া, আইএমএফ-এর ঋণের শর্তানুসারে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব পাট, ষ্টীল শিল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ও চিনি শিল্প বন্ধের প্রক্রিয়াধীন। যেখানে উন্নত বিশ্বে কৃষিকে ভর্তুকি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে, অথচ আইএমএফ আমাদের কৃষিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহারে বাধ্য করছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে দেশ একদিকে বিদেশী শিল্প ও পণ্যের হটস্পটে পরিণত হয়েছে, অন্যদিকে অসম প্রতিযোগীতায় পড়ে দেশীয় শিল্প গড়ে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে। এছাড়া আমেরিকার সাথে করা Trade and Investment Framework Agreement (TIFA) বাস্তবায়ন শুরু হলে দেশের অর্থনীতির উপর আমেরিকার আধিপত্য আরও শক্তিশালী হবে।
আপনারা জানেন, পতিত হাসিনা সরকার প্রতিবছর ১৬-বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। এখন যেহেতু সরকার এই অর্থ পাচার বন্ধ হয়েছে বলে দাবী করে তাহলে জনগণ কেন মাত্র ৪.৭-বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য আইএমএফ-এর দ্বারস্থ হবে এবং আইএমএফ-এর গণবিরোধী শর্ত অনুসরণ করবে? এছাড়া আমাদের প্রবাসীরা যেখানে বছরে প্রায় ২০-বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে সেখানে কেন বিদেশী সংস্থার কাছ থেকে আমাদের এই তুচ্ছ ঋণের প্রয়োজন হবে? প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকা আইএমএফ-এর ঋণের শর্তের বেড়াজালে আটক করে একটি দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব কেঁড়ে নেয় এবং বাণিজ্য উদারীকরণ ও বেসরকারীকরণ নীতি বাস্তবায়ন করে সে দেশের অর্থনীতির উপর নব্য-উপনিবেশবাদ কায়েম করে। সবশেষে, আমেরিকা ঐ দেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করে তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, ১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার রিজার্ভ ও মুদ্রা সংকটকে পুঁজি করে আমেরিকা আইএমএফ-এর মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার উপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে। আমেরিকা তার ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত স্বার্থে ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরকে বিচ্ছিন্ন করে ২০০২ সালে খৃষ্টান অধ্যুষিত একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনা আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “তারা যদি তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে, তারা তোমাদের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হবে, এবং তোমাদের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে তারা তাদের হস্ত ও জিহ্বা সমূহকে প্রসারিত করবে” (সূরা আল-মুমতাহিনা : ০২)। তাই, জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উপর আমেরিকার অর্থনৈতিক আগ্রাসন প্রতিহত করতে হবে। জনগণকে স্মরণ রাখতে হবে, যেসব রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী আইএমএফ-এর নীতিকে চ্যালেঞ্জ না করে শুধু ভ্যাট-ট্যাক্সের সমালোচনার মাধ্যমে জনগণের সাথে প্রতারণা করে, তারাই আমেরিকার দালাল। এসব দালাল গোষ্ঠীর বিষয়ে আপনাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
হে দেশবাসী, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন স্বনির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। বাণিজ্য উদারীকরণ ও মুক্তবাজার অর্থনীতির মাধ্যমে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর কাছে দেশের অর্থনীতির যে জিম্মি দশা তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে এবং দেশীয় শিল্পস্থাপন করে সার্বভৌম ও স্বনির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। ইসলামী অর্থনীতির মডেল অনুসারে, তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-জ্বালানী খাতকে দেশী-বিদেশী পুঁজিবাদী কোম্পানীসমূহ থেকে উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আনা হবে। ফলে জ্বালানী সহজলভ্য হবে, ক্যাপাসিটি চার্জ বিলুপ্ত হবে, শিল্পোৎপাদন খরচ এবং জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমে আসবে। আপনারা জানেন, ইতিপূর্বে হিযবুত তাহ্রীর, উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ, জাতির উদ্দেশ্যে স্বনির্ভর অর্থনীতির রূপরেখা উপস্থাপন করেছে যার মাধ্যমে একটি নেতৃত্বশীল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হবে, ইনশা’আল্লাহ্।
হে দেশবাসী, নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রে ইসলামী অর্থনীতির মডেল বাস্তবায়নের জন্য হিযবুত তাহ্রীর সম্পূর্ণ প্রস্তুত, যার মাধ্যমে বর্তমান যুলুমের অবসান হবে এবং আল্লাহ্’র ইচ্ছায় জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “…অতঃপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে; তারপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত – নবুয়তের আদলে” (হাদিস : মুসনাদে আহমদ)। আমেরিকার নব্য-উপনিবেশবাদ থেকে মুক্তি পেতে আপনাদেরকে হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে নবুয়তের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। আপনারা খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবী জোরালো করলে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত আপনাদের সন্তানরা আপনাদের দাবীর পক্ষে অবস্থান নিবে, কারণ তারাও মুসলিম উম্মাহ্’র সাহসী সন্তান এবং ইসলামকে ভালোবাসে। তাই হিযবুত তাহ্রীর-এর পক্ষ থেকে আমাদের আহ্বান, আপনারা খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ প্রদানে সামরিক অফিসারদের নিকট দাবী জানান।
“আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং আল্লাহ্ভীতি অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আসমান এবং জমীনের বরকতসমূহ খুলে দিতাম” [সূরা আল-আ’রাফ : ৯৬]।
মঙ্গলবার, ২১ রজব, ১৪৪৬ হিজরী
২১ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ