হিযবুত তাহরীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ-এর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল: “ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আরাকান – খিলাফতই সমাধান”

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

হিযবুত তাহরীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ-এর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল:

“ফিলিস্তিন, কাশ্মির, আরাকান – খিলাফতই সমাধান”

হিযবুত তাহ্‌রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ, আজ (২৩/০৫/২০২৫) শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে অভিশপ্ত ইহুদীগোষ্ঠী কর্তৃক সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পরিচালিত নতুন আক্রমণের প্রতিবাদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে।

বক্তাগণ গাজার মুসলিমদের বর্তমান অবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন: অভিশপ্ত ইহুদীগোষ্ঠী সম্পূর্ণ গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং জীবিত অবশিষ্ট জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তারা Gideon’s Chariots নামে নতুন বড় ধরণের আক্রমণের প্রথম পর্যায়ের অভিযান শুরু করেছে। সেখানকার অধিবাসীরা তাদের শেষ ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করছেন এবং পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের হাতে নাম লিখে রাখছেন যাতে তাদের খন্ড-বিখন্ড লাশগুলো সনাক্ত করা যায়।  এরপর গাজা উপত্যকা জুড়ে মাত্র ৩৬ ঘন্টার মধ্যে দখলদার ইসরায়েলী হামলায় কমপক্ষে ২৫০ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছে, খান ইউনিসের আল মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুত তাঁবুতে বিমান হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ২৪ জন ফিলিস্তিনী মুসলিমকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত ১১ সপ্তাহ ধরে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেয়ায় ভয়াবহ খাদ্য সংকটে থাকা শিশুদের অবস্থা এতটাই করুণ যে, জাতিসংঘের মানবিক প্রধান গত ১৯ মে, ২০২৫ সতর্ক করে বলেছে, আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গাজায় ১৪০০০ শিশু সাহায্য ছাড়াই মারা যেতে পারে। অবশেষে গত সোমবার গাজা উপত্যকায় পাঁচটি ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করে যার দুটি কাফনের কাপড় দ্বারা ভর্তি ছিল। আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন, মুসলিম উম্মাহ্‌’র ব্যাপক প্রতিবাদ ও ক্ষোভের পরেও মুসলিম ভূমির দালাল শাসকগোষ্ঠী অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের মদদদাতা মার্কিনীদের স্বার্থ রক্ষায় মরিয়া। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো, আরব শাসকগোষ্ঠী সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছে এবং ট্রাম্পকে অত্যাধুনিক প্রমোদ বিমান উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এই অঞ্চলে মার্কিনীদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে তথাকথিত মানবিক করিডর এবং ডি.পি ওয়ার্ল্ডকে সমুদ্র বন্দর প্রদানের মাধ্যমে মার্কিনীদের স্বার্থ রক্ষায় মরিয়া। মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর নতজানু নীতির কারণেই কাফির-মুশরিক-ইহুদী গোষ্ঠী মুসলিমদের উপর এসব বর্বর হামলায় উৎসাহ পাচ্ছে।

বক্তাগণ আরও বলেন: শুধু ফিলিস্তিন নয়, বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উপর আগ্রাসনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে কাফির উপনিবেশবাদীদের চক্রান্তও প্রত্যক্ষ করছি। যেই দুর্বৃত্ত আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করেছে ও এখনও করছে, তাদেরকে মানবিক করিডোর দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং তাদের অনিরাপদ হাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিক্ষেপ করার কথা বলা হচ্ছে। আমরা প্রত্যক্ষ করছি, ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী কাশ্মীরকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কারাগারে পরিণত করেছে। কাশ্মীরে পেহেলগাম হামলার পর থেকে ৬০০০ এরও বেশি মুসলিমকে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের নামে আটক করা হয়েছে। তারা ভারতের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমদের বাড়িঘর এবং মসজিদসমূহ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, এবং মুসলিমদেরকে গণহারে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে।

বক্তাগণ আরও বলেন: হে মুসলিমগণ, আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে মুসলিমদের দুর্বলতা মনে হলেও প্রকৃত সত্য হচ্ছে, কাফির উপনিবেশবাদীরা মুসলিম উম্মাহ্‌’র পুনর্জাগরণকে স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছে, তাই তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে সর্বশক্তি নিয়ে তা রুখতে তাদের শেষ চেষ্টা করছে। রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বলেছেন, “নিশ্চয়ই ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন কমান্ডার, যার অধীনে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদের আত্মরক্ষা করে” [সহীহ্‌ মুসলিম]। যার কারণে, মুসলিম উম্মাহ্‌ দালাল শাসকদের অপসারণ করে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ। কারণ, বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের উপর নির্যাতন নতুন কিছু নয়; মুসলিমরা তাদের আত্মরক্ষার ঢাল ও অভিভাবক-খিলাফত ব্যবস্থার পতনের পর থেকেই এর মুখোমুখি হয়ে আসছে। খিলাফত রাষ্ট্রের অনিবার্য আবির্ভাবের বিষয়ে কাফির উপনিবেশবাদীদের উদ্বেগ ও হতাশা ইতিমধ্যে তাদের নেতৃত্বের মুখ থেকে বের হয়েছে। মুসলিমরা নানা দেশে ইসলামী খিলাফতের আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায়– সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের এই বক্তব্যে ভারত উপমহাদেশে খিলাফতের আগমনের ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে, তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক চৌকিদার হিন্দুত্ববাদী ভারত এই অঞ্চলের মুসলিমদের দমনের মরিয়া হয়ে উঠেছে। এবং ভূমধ্যসাগরের উপকূলে কোনো খিলাফত প্রতিষ্ঠা মেনে নেব না– খুনী নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যেও তা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

পরিশেষে বক্তাগণ দেশবাসী বিশেষ করে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি ও ক্ষমতা অধিকারী ব্যক্তিবর্গকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আল্লাহ্‌ (ﷻ) বলেন, “তোমরা সর্বোত্তম জাতি, তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির জন্য” [আলি ইমরান: ১১০]। সর্বোত্তম এই উম্মাহ্‌-কে কখনোই কাফির-মুশরিক শক্তি অধীনস্ত করতে পারবে না, এটাই প্রমাণিত সত্য। মুসলিম উম্মাহ্‌ নবুয়তের আদলে খিলাফতের শাসনের গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যার সুসংবাদ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ দিয়েছেন, “….তারপর যুলুমের শাসনের অবসান হবে, অতঃপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত নবুয়তের আদলে” [হাদিস: মুসনাদে আহমেদ]। তাই, আপনারা হিযবুত তাহ্‌রীর-এর নেতৃত্বে নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন।

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের সেই আহ্বানে সাড়া দাও, যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহ্বান করা হয় যা তোমাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে [সূরা আল-আনফালঃ ২৪]

 

হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশএর মিডিয়া অফিস