প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
হাসিনা সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্রগোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর হাত থেকে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ব্যর্থ হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশের জনগণকে দমনে পিছপা হয়না
গত ২ এপ্রিল, ২০২৪ মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটায় বান্দরবানের উপজেলা রুমায় এবং বুধবার দুপুর একটার দিকে আরেক উপজেলা থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের তিনটি শাখায় ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে সিনেমা স্টাইলে হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্রগোষ্ঠী কেএনএফ-এর অস্ত্রধারীরা। রুমায় তারা অস্ত্রের মুখে মানুষকে জিম্মি করে এবং থানচিতে বাজারে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে। থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শাখায় হামলা করে তারা সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে যায়। রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখা ম্যানেজারকে জিম্মি করে নিয়ে যায়, যিনি পরবর্তীতে RAB (Rapid Action Battalion)-এর মধ্যস্থতায় প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাড়া পান। এছাড়া তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫টি গুলি লুট করে এবং বাজারে উপস্থিত মানুষের মুঠোফোনও নিয়ে যায়। এই ঘটনা জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে, হাসিনা সরকার যেখানে জনগণের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ (ইসরাইল-ভিত্তিক স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে) করতে ব্যর্থ হয়না, এমনকি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনেও অস্ত্র ও গোলা-বারুদ ব্যবহারে পিছপা হয়না, সেখানে ক্ষুদ্র একটি বিচ্ছিন্নতাবাদীগোষ্ঠী কর্তৃক এই ব্যাপক হামলা মোকাবেলায় কেন গোয়েন্দা ব্যর্থতা হলো? কেন প্রথম হামলার ১৭ ঘন্টার পরেও অত্র অঞ্চলের নিরাপত্তাশূন্যতা (security vacuum) বিদ্যমান ছিল যার ফলে এই সশস্ত্রগোষ্ঠী দ্বিতীয় হামলার সুযোগ পেল? তাহলে এই ঘটনাটা কি সরকারের ব্যর্থতা নাকি সাজানো নাটক? ডাকাতির ঘটনার পর কীভাবে কেএনএফ বান্দরবান জেলার রুমা ও থানচি উপজেলার পর এবার আলীকদমে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলার সাহস দেখিয়েছে! আর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সরকার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের পরামর্শ মোতাবেক পর্যাপ্ত সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে দ্রুত জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে এই সশস্ত্রগোষ্ঠীকে শুধুমাত্র পুলিশ-বিজিবি দিয়ে মোকাবিলা করছে! যার ফলে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে, জনগণ তাদের বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
প্রিয় দেশবাসী, বান্দরবনসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম সামরিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক দিক থেকে অন্ততঃ গুরুত্বপূর্ণ। অথচ হাসিনা সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ১৯৯৭-এর নামে ভারতের স্বার্থে আমাদের সামরিক বাহিনীকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করে দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এছাড়া ভূ-রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহের আকর্ষণের জায়গা। ফলে আমরা দেখতে পাই, মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ তাদের উচ্চ পদস্থ কূটনীতিরা ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চলে ভ্রমন করে এবং ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে তাদের বিভিন্ন NGO-তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, “বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। সেখানে তিনি ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত হাস অঞ্চলটিতে নিজ দেশের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা- ইউএসএআইডি, মার্কিন দূতাবাস এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী- ইউএনডিপি’র অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন” [মানবজমিন, ১২ মার্চ, ২০২৩]।
ডাকাতির ঘটনার পর কেএনএফ তাদের ফেসবুকে বেশ কয়েকটি পোস্ট দেয় যার মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, “অভিযান ও সশস্ত্র যুদ্ধ দিয়ে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে আনার প্রচেষ্টা সরকারি উচ্চ মহলের নির্দেশ একটি শিশুসুলভ ও অসমাধানযোগ্য পদক্ষেপ। তারা দাবি করে– ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সৃষ্টি হয়েছিল কুকি বিদ্রোহের কারণে। সেই যুদ্ধে কয়েক হাজার ব্রিটিশ বাহিনী বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আবার ২০২১-২২ সালে কুকি-চিন জনগোষ্ঠী তাদের পূর্বপুরুষের ভূমি রক্ষার্থে বিদ্রোহ শুরু করে এবং এতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়” [সমকাল, ০৫ এপ্রিল ২০২৪]। তাহলে সরকার কার স্বার্থে তাদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদীগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচেনা না করে কেবলমাত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে? সরকার কার স্বার্থে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন না করে তাদের সাথে শান্তি আলোচনায় অবতীর্ণ হলো? প্রকৃতপক্ষে, দেশের দালাল শাসকগোষ্ঠী উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ পূরণ করতে গিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব বিলীন করে সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলতে দ্বিধা করে না।
হে দেশবাসী, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এসব নির্বোধ শাসকদের হাতে আমাদের জান-মালের হেফাজতের দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ্ বলেন, “আর যে সম্পদকে আল্লাহ্ তোমাদের জীবন-যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচিনদের হাতে তুলে দিওনা [সূরা নিসাঃ ০৫]। এছাড়া এসব দালাল শাসকদের হাতে মুসলিম উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব কখনোই নিরাপদ নয়। আমাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢালস্বরূপ যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ কর এবং নিজেদের আত্মরক্ষা কর”। প্রকৃতপক্ষে, খিলাফত ধ্বংসের পর পশ্চিমা উপনবেশবাদী ব্রিটেন-আমেরিকা এসব শাসকগোষ্ঠীকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, যারা মুসলিম ভূ-খণ্ডের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে উপনিবেশবাদীদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত থাকে, তারা জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধানের তোয়াক্কা না করে জনগণকে দমন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সর্বদা তৎপর থাকে। তাই আপনাদেরকে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-এর নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সামরিক বাহিনীতে কর্মরত আমাদের বীর সন্তানদের আহ্বান জানাতে হবে তারা যেন খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ প্রদান করে।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া অফিস