প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
হাসিনা সরকার কর্তৃক আই.এম.এফ ও বিশ্বব্যাংক নির্দেশিত জ্বালানি নীতি অনুসরণের ফলই হচ্ছে বাধ্যতামূলক এই লোডশেডিং এবং বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি
হাসিনা সরকার দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের উৎপাদন ও দাম নিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করে আসছে। তারা দেশে ১৪,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে ২৫,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাকে গর্বের সাথে প্রচার করেছে, অথচ অতিরিক্ত এই উৎপাদন সক্ষমতার বিনিময়ে সরকারের “কুইক রেন্টাল” গোষ্ঠীকে “ক্যাপাসিটি চার্জ” পরিশোধের কারণে বিদ্যুতের উচ্চমূল্যের বোঝা জনগণকে বহন করতে হচ্ছে। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে বাধ্য হচ্ছি, অথচ আমরা তা ব্যবহারও করিনি। গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দৈনিক ২২,১১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার জন্য তাদেরকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১৬,৭৮৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়, কিন্তু আমরা চাহিদা ঘাটতির কারণে সেসময়ে দিনে ১৪,০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারিনি (“বিদ্যুতের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ: ৯ মাসে ১৬,৭৮৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে”, দ্য ডেইলি স্টার, ২০শে জুলাই, ২০২২)। গত ৩ বছরে সব মিলিয়ে জনগণের প্রায় ৫৪,০০০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ হিসাবে অপচয় হয়েছে (dw.com, ২০শে জুলাই, ২০২২)! স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদেরকে (আই.পি.পি) অব্যবহৃত ক্যাপাসিটির জন্য অর্থ প্রদান বিদ্যুতের উৎপাদন খরচকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে, এবং এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এখন তারা বিশ্বব্যাপী জ্বালানী সংকট এবং তেল ও এল.এন.জি’র মূল্যবৃদ্ধি মোকাবেলার নামে পুরো দেশকে লোডশেডিং-এর আওতায় নিয়ে এসেছে, যার দরুন এই গ্রীষ্ম মৌসুমে জনগণকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এবং শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। তবুও হাসিনা সরকার ক্যাপাসিটি চার্জ প্রত্যাহার না করে কৌশলে তাদের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে।
হে দেশবাসী, আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন যে, বিগত কোন ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী সরকারই বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, যদিও বিদ্যুৎখাত শিল্পায়নের জন্য অত্যাবশ্যক এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় হিসেবে পরিগণিত। বরং, তারা বিদ্যুৎ সংকট বজায় রেখেছে যাতে তাদের লুটপাটের প্রক্রিয়া নিশ্চিত থাকে। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় যে, জনগণের কষ্টার্জিত এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পরেও আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দুষ্প্রাপ্যতা কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে জনগণকে বাধ্যতামূলকভাবে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে।
এছাড়াও, আমরা ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের কাছ থেকে কল্যাণকর কোন কিছু আশা করতে পারি না, কারণ তারা জ্বালানি খাতে আই.এম.এফ-বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রস্তাবিত জনবিরোধী বেসরকারিকরণ নীতি অনুসরণ করে, এবং পি.এস.সি (প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট)-এর নামে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে আমাদের তেল-গ্যাস খনিগুলোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ করে দেয়। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে উন্নতমানের কয়লার মজুদ থাকা সত্ত্বেও তারা কখনই এই খনিজ সম্পদকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অন্যান্য শিল্প কারখানায় ব্যবহারের পরিকল্পনা করে না, অথচ ভারত থেকে চড়ামূল্যে কয়লা ক্রয় করে। এছাড়াও তারা দেশি-বিদেশি পুঁজিপতি ও তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের খুশি করতে উচ্চমূল্যে এল.এন.জি আমদানি করে। অথচ কখনই স্থানীয় উত্স থেকে হাইড্রোকার্বন জ্বালানি অনুসন্ধান ও আহরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে না, যা জ্বালানি উৎপাদন ব্যয় সীমিত ও জনসাধারণের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে প্রাথমিক ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত বিকাশের লক্ষ্যে কখনই সামগ্রিক কোন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয় না। বরং, সরকার সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীদের খুশি করে ক্ষমতায় থাকতে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি ‘এক্সেলারেট এনার্জি’-কে এল.এন.জি সরবরাহকারী হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আই.এম.এফ-নির্দেশিত প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বেসরকারীকরণ কার্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে, যা বিদ্যুৎকে দিন দিন ব্যয়বহুল করে তুলছে। কুইক রেন্টাল প্রকল্পসমূহের বিশাল ব্যয়ভার জনগণকে চরম নিষ্পেষিত করলেও সরকারের সহযোগী স্থানীয় ক্ষুদ্র পুঁজিপতিদের ব্যাপক উপকৃত করেছে। আমাদের দেশীয় গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান কোম্পানি (বাপেক্স)-কে ইচ্ছাকৃতভাবে অকার্যকর রেখে তারা আমাদের কৌশলগত প্রাকৃতিক সম্পদসমূহকে সাম্রাজ্যবাদীগোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছে। এসব ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদগণ স্বভাবগতভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্বৃত্ত প্রকৃতির হবে এটাই স্বাভাবিক, কারণ মানবসৃষ্ট আইনের দৃষ্টিতে তারা জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে এবং তাদের মধ্যে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ও বিচার দিবসের কোন ভয় নেই।
হে মুসলিমগণ! ইসলাম এমন নেতৃত্ব তৈরি করে যারা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা‘কে ভয় করেন এবং পবিত্র শারী‘আহ্ আইন অনুযায়ী জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকেন। তাদের কাছে রাজনীতি হচ্ছে একটি আমানাহ্ (বিশ্বাস), অর্থ-সম্পদ কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে গৃহীত কোন পেশা নয়। সুতরাং, নবুয়্যতের আদলে খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সেই নিষ্ঠাবান নেতৃত্বের অধীনে আপনাদের ফিরে আসতে হবে। খিলাফতের অধীনে শাসকদের মধ্যে জনগণের সেবা করার প্রবল রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকবে। তারা অবিলম্বে জ্বালানি সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে ‘স্বনির্ভরতা অর্জন’ কর্মসূচি গ্রহণ করবে। তারা হুকুম শারী‘য়াহ্ কঠোরভাবে মেনে চলবে, তাই বিশ্বব্যাংক-আই.এম.এফ-এর প্রেসক্রিপশন প্রদানের কোন জায়গা থাকবে না। বিদ্যুতের মতো জ্বালানি সম্পদসমূহ জনগণের মালিকানায় রেখে এবং সরাসরি তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে আসন্ন খিলাফত জ্বালানি সংকট ও ব্যয়বহুল জ্বালানির জন্য দায়ী বেসরকারীকরণ নীতির মত মূল কারণগুলোর অবসান ঘটাবে। ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদের বিপরীতে খিলাফত রাষ্ট্রের শাসকগণ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র ভয় দ্বারা পরিচালিত হবেন। কাফির সাম্রাজ্যবাদী ও ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর অনুগ্রহ লাভে তারা কোন তুচ্ছ বস্তুগত সুবিধা ও স্বার্থের মধ্যে নিজেদেরকে প্রবৃত্ত করবে না। সুতরাং, ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করুন এবং এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করুন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
* اِنَّ اللّٰهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِهِمۡ*
“আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে”
[সূরা আর-রাদ: ১১]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়