بسم الله الرحمن الرحيم
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
সকল দমনমূলক কালোআইন বাতিল এবং হিযবুত তাহ্রীর–এর উপর অবৈধ ও অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবীতে সমাবেশ ও মিছিল
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ, আজ (১৩/০৯/২০২৪) শুক্রবার বাদ জুমু‘আ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর উত্তরগেটে যালিম হাসিনার রেখে যাওয়া কালো আইন বাতিল এবং হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর অবৈধ ও অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবীতে সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তাগণ যে বক্তব্য রাখেন তার সারাংশ নিম্নে তুলে ধরা হলো:
বক্তাগণ বলেন, হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে কিন্তু যেসকল কালো আইন দ্বারা যালিম হাসিনা জনগণের উপর দমন নিপীড়ন করেছে সেসকল আইনসমুহ এখনো বিদ্যমান রয়েছে। এ সমাবেশ থেকে আমরা বলতে চাই, দমনমূলক বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা, সন্ত্রাস বিরোধী আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালো আইনসমুহ অবিলম্বে বিলুপ্ত করা হোক। প্রকৃতপক্ষে এই অঞ্চলের জনগণকে দমন-নিপীড়ন করার জন্য উপনিবেশবাদীরা কালো আইনসমূহের সূচনা করেছিল, আর পরবর্তীতে তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী দেশের জনগণকে একই কায়দায় দমন-নিপীড়ন করতে ভিন্ন ভিন্ন নামে কালো আইনসমূহ জারি রেখেছে। উদাহরণস্বরূপঃ
বিদ্যমান ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা সম্পর্কে আমরা জানি, ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলনকে দমন করতে ১৮৯৮ সালে ইংরেজরা সর্বপ্রথম এই আইন তৈরি করে। তারা ঔ আইনের ৫৪ ধারা তৈরি করে লাখ লাখ মানুষকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে। এছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইনটি পাস করা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে জনগণকে দমন করতে। এই আইনটির অধীনে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই সন্দেহভাজন যেকোন ব্যক্তিকে আটক করার ক্ষমতা পুলিশকে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে এই দমনমূলক আইনের ধারাবাহিকতায় “বাকশাল” কায়েম করা হয়েছিল।
সন্ত্রাস বিরোধী আইন–২০০৯ প্রণয়ন করা হয়, পশ্চিমাদের বিশ্বব্যাপী ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। হাসিনা সরকার পশ্চিমাদের “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”-এর নামে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” পরিচালনা করেছে এবং মুসলিম উম্মাহ্’র পুনঃজাগরণ ও রাজনৈতিক ইসলামকে মোকাবিলা করেছে। আপনারা জানেন, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে হাসিনা ও ভারতের ষড়যন্ত্রে পিলখানায় মেধাবী সামরিক অফিসারদের হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে হিযবুত তাহ্রীর দৃঢ় ও সাহসী প্রতিবাদ গড়ে তোলে। এই প্রেক্ষাপটে, যালিম হাসিনা নিছক একটি প্রেসনোটের মাধ্যম হিযবুত তাহ্রীর-কে নিষিদ্ধ করে এবং এই আইনকে ব্যবহার করে দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন চালায়। এছাড়া, এই আইনের অধীনে অসংখ্য আলেম-তৌহিদী জনতা, রাজনীতিকসহ সাধারণ জনগণকে গুম, গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়। তাছাড়া জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে কীভাবে নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের উপর যুলুম-নির্যাতন ও কণ্ঠরোধ করা হয়েছে।
বক্তাগণ আরও বলেন, এসকল কালা কানুন ইসলামী শারীআহ্ মোতাবেক নিষিদ্ধ। কারণ শাসকদের জবাবদিহি করা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেন, “অত্যাচারী শাসকদের সামনে সত্য কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ” (আহমদ, তিরমিজি)। এছাড়া সন্দেহমুলক গ্রেফতার ও আটক রাখা শারীআহ্ পরিপন্থী, এক্ষেত্রে ইসলামী শাস্তি বিধান নীতি হচ্ছে, “একজন ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ”।
বক্তাগণ হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর হাসিনার অবৈধ ও অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন: ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরপরই যালিম হাসিনার কালো আইনের প্রথম শিকার ছিল হিযবুত তাহ্রীর। ২০০৯ সালে যখন হাসিনা ও ভারতের ষড়যন্ত্রে নৃশংস পিলখানা হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হলো, তখন বাংলাদেশে একমাত্র দল এই হিযবুত তাহ্রীর নিষ্ঠা ও সাহসীকতার সাথে এই বিষয়টি জাতির কাছে উন্মোচন করে। খুনি হাসিনা সরকার হিযবুত তাহ্রীর-কে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে, এর সত্য ও প্রতিবাদী কণ্ঠকে রুদ্ধ করতে নিছক একটি প্রেস নোটের মাধ্যমে- যেখানে কোন স্মারক নং, এসআরও নং ও আইনের ধারা উল্লেখ ছিলনা- এর কার্যক্রমের উপর অবৈধ ও অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয়। কিন্তু, হিযবুত তাহ্রীর তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে, বিশেষত হাসিনা সরকার কর্তৃক সেনা অফিসারদের গ্রেফতার, গুম, খুন, বরখাস্তের প্রতিবাদ করাসহ তার দেশ-জনগণ-ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে রাজনৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখে। এমন প্রেক্ষাপটে, যালিম হাসিনা ২০১৩ সালে আবারও কোন আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে, গায়ের জোরে নির্বাহী আদেশে হিযবুত তাহ্রীর-কে কুখ্যাত সন্ত্রাসবিরোধী আইন নামক কালো আইনে তফসীলভুক্ত করে। আমরা হিযবুত তাহ্রীর, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারকারী তৎকালীন মন্ত্রী, সচিবসহ নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিচারের জোর দাবী জানাচ্ছি। এবং এই কালো আইন ব্যবহার করে যালিম হাসিনা সরকার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, আলেম-ওলামা, বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক, প্রতিবাদী সাধারণ জনগণের উপর অবর্ণনীয় দমন-নিপীড়ন চালিয়েছে ও কুখ্যাত আয়না ঘরের জন্ম দিয়েছে, আমরা সেসব প্রতিটি অপরাধের বিচারের জোর দাবী জানাচ্ছি।
আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সদুপদেশ দিয়ে বলতে চাই, কালো আইনের কোনপ্রকার সংস্কারের ফাঁদে পা দিবেন না। অনতিবিলম্বে, সময়সীমা বেধে দিয়ে কালো আইন বাতিল ও হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর স্বৈরাচারী হাসিনার অবৈধ ও অন্যায্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিন। জামায়াতে ইসলামী ছিল স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের নিষেধাজ্ঞার সর্বশেষ শিকার, যেখানে আমরা ছিলাম তাদের প্রথম শিকার। ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে যালিম হাসিনা সরকার থেকে নিজেদেরকে আলাদা করুন এবং প্রমাণ করুন আপনারা বৈষম্যবিরোধী।
বক্তাগণ আরো বলেন: আপনারা হিযবুত তাহ্রীর-এর বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী কুচক্রি মহলের কথায় কান দেবেন না। হিযবুত তাহ্রীর, একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক দল যারা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে, এবং এটি কোনভাবেই তার মতাদর্শ প্রচারে সহিংসতার আশ্রয় নেয় না। তাছাড়া, দেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপর হামলা, মাজারে হামলাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের যেসব অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, হিযবুত তাহ্রীর তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে, অতীতেও জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও জানাবে। তাছাড়া, হিযবুত তাহ্রীর ভারতের পানি আগ্রাসন, সীমান্ত হত্যা, ট্রানজিট, করিডোরসহ সকল দেশবিরোধী চুক্তি ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতেও যেকোন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বাগ্রে অবস্থান নিবে।
পরিশেষে, আমরা অন্তর্বর্তী কালীন সরকারকে বলতে চাই, দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাংক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি সহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার তরুন, প্রাক্তন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা, প্রাক্তন সামরিক অফিসার, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবিসহ সমাজের প্রভাবশালী অংশের হিযবুত তাহ্রীর-এর বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের সাথে একাত্ম আছে। এছাড়া, দেশের মেহনতি জনগণও ইসলামকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। সুতরাং, হিযবুত তাহ্রীর-এর বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী হাসিনার রেখে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে আপনারা সমাজের প্রভাবশালী শ্রেনীসহ ইসলামপ্রিয় সাধারণ হতে বিচ্ছিন্ন হবেন না। অবিলম্বে হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুন।
﴿إِنَّ فِي ذَلِكَ لَذِكْرَى لِمَنْ كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ﴾
“নিশ্চয়ই এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্য, যার রয়েছে অনুধাবন করার মত অন্তর, অথবা যে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে”
(সূরা কাফ: ৩৭)
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস