প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
মাইলস্টোন ট্রাজেডি: জনগণের প্রতি যত্মশীল রাষ্ট্রের অনুপস্থিতির নির্মম বলি হতে হলো, এই নিষ্পাপ শিশু–কিশোরদের আর আমাদের বীর পাইলট তৌকিরকে
গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইনস্টোন স্কুল এণ্ড কলেজের জুনিয়র সেকশনের একটি ভবনের উপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধ বিমান এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আঁচড়ে পড়ে। এতে পোড়া ও খণ্ডিত, নিহত ও আহত শিশু-কিশোরদের বীভৎস দৃশ্যে এক মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আমরা হিযবুত তাহ্রীর নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আর আমরা আল্লাহ্ ﷻ-এর কাছে দু‘আ করছি যাতে তিনি ﷻ রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর সুসংবাদ অনুযায়ী নিহতদেরকে জান্নাতে শহীদের মর্যাদা দান করেন; রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর বলেছেন, “—-যে আগুনে পুড়ে মারা যায় সে শহীদ…” (আহমাদ, আবু দাউদ, আন নাসাই)।
হে দেশবাসী, এই মর্মান্তিক ঘটানার মধ্যদিয়ে জনগণের আন্তরিকতা-বীরত্ব যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি স্বার্থপর ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ভণ্ডামি ও দায়িত্বহীনতাও জনগণের নিকট উন্মোচিত হয়েছে। দেখা গেছে, উদ্ধারকাজে ও আহতদের রক্তদানে জনগণের অভাবনীয় অংশগ্রহণ; অন্তঃত ২০জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়া শিক্ষিকার বীরোচিত আত্মত্যাগ। আর অন্যদিকে, সরকার তীব্র যন্ত্রণায় কাতরানো অগ্নিদগ্ধ শিশুদেরকে যন্ত্রণামুক্ত করা ও দ্রুত চিকিৎসা দেয়াতো দূরের কথা হাসপাতালে ভর্তি করতে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা পর্যন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে; অথচ জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে, এসব শাসক ও রাজনৈতিক-অভিজাতরা যখন অসুস্থ হয় তখন তাদেরকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। পুরো জাতি যখন এই মর্মান্তিক ঘটানায় শোকাক্রান্ত তখন ছাত্রছাত্রীদের এইচএসসি (HSC) পরীক্ষা পিছানোর দাবীকে আইনের অজুহাতে স্থগিত করতে মধ্যরাত পর্যন্ত বিলম্ব করেছে, যা সকল অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতালোভী ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য বক্তব্য-বিবৃতি-ফটো সেশনে ব্যস্ত ছিল এবং সরাকারকে জবাবদিহি না করে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজতে খুঁজতে অনলাইন-অফলাইন মিডিয়াতে ঝড় তুলেছে। বন্ধ হয়নি জাতীয় ঐক্যমত কমিশনে ক্ষমতালোভীদের ক্ষমতার ভাগাভাগির বৈঠক এবং নির্বাচনী প্রচারণার দেশ সফর। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বব্যাপী এই বিষয়টি দিবালোকের মত স্পষ্ট, আল্লাহ্দ্রোহী ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা স্বার্থপর-দুর্নীতিগ্রস্থ ও ননসেন্স শাসক তৈরির কারখানা।
হে দেশবাসী, এই ঘটনার মধ্যদিয়ে যে উদ্বেগজনক বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে তা হচ্ছে মানসম্মত অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠনে দশকের পর দশক ধরে ধর্মনিরপেক্ষ শাসকগোষ্ঠীর অনীহা ও অবহেলা। যার কারণে, আমরা শত্রু মোকাবেলা করে নয়, বরং নিজেদের আত্মঘাতী বিমানে আমরা হারিয়েছি একের পর এক বীর সৈনিকদের। এই যুদ্ধ বিমানের দুর্ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম নয়, গত একদশকে এই F-7 একাধিকবার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। রাশিয়ার Mig-21 এর আদলে গড়া চীনের তৈরি এই F-7 বলা হয়, গ্র্যান্ডপা (দাদার আমল) ফাইটার জেট, যা চীন ১৯৬০-এর দশকে তৈরি করেছিল ও ২০১৩ সালে এর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
হে দেশবাসী, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর বলেছেনঃ “জনগণের উপর শাসক একজন রাখাল এবং তার প্রজাদের প্রতি দায়িত্বশীল…” (বুখারী ও মুসলিম)। মুসলিম উম্মাহ্’র গৌরবময় খিলাফতের ইতিহাসে, খলিফা আবু বকর (রাঃ), ওমর (রাঃ) সহ অসংখ্য আল্লাহ্ভীরু শাসকদের মধ্যে যা শত শত বছর ধরে প্রফলিত হয়েছে। ওমর (রাঃ) তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে নাগরিকদের আশ্বস্থ করে বলেছেন, “যদি ফোরাত নদীর কূলে একটি ভেড়ার বাচ্চাও হারানো অবস্থায় মারা যায়, তাতে আমি ভীত হই যে, সেজন্য আমাকে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত করা হবে”। বর্তমান স্রষ্টাবিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা, যা দশকের পর দশক ধরে এমনকি জনগণের লাশের হিসেবটা পর্যন্ত দিতে পারে না; এমন বাস্তবতা আজ আমাদেরকে বিগত শত বছরের বেশী সময় ধরে বিদ্যমান থাকা যত্নশীল রাষ্ট্র খিলাফতের অনুপস্থিতি এবং এর আবশ্যিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বর্তমান স্রষ্টাবিবর্জিত ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের অভাব আমাদেরকে জানান দিচ্ছে আমাদের সার্বভৌমত্ব কতটা অরক্ষিত; এমন বাস্তবতা আমাদেরকে শত বছরের বেশী সময় ধরে বিদ্যমান থাকা খিলাফতের পরাক্রমশালী সামরিক শক্তির অনুপস্থিতি এবং এর আবশ্যিকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আল্লাহ্ ﷻ-এর আদেশ খিলাফত রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করতে সর্বাধিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বাধ্য করেছে। আল্লাহ্ ﷻ বলেন,
﴿قُلْ هَلْ أُنَبِّئُكُمْ بِشَرٍّ مِنْ ذَلِكَ مَثُوبَةً عِنْدَ اللَّهِ مَنْ لَعَنَهُ اللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمْ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ الطَّاغُوتَ أُوْلَئِكَ شَرٌّ مَكَانًا وَأَضَلُّ عَنْ سَوَاءِ السَّبِيلِ﴾
“আর তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও ঘোড়া প্রস্তুত রাখো, যাতে তোমরা আল্লাহ্’র শত্রু, তোমাদের শত্রু এবং তাদের ব্যতীত অন্যদের ভীত-সন্ত্রস্ত করতে পারো, যাদেরকে তোমরা জানো না, কিন্তু আল্লাহ্ যাদেরকে জানেন” (সূরা আল-আনফাল: ৬০)। দেশের সচেতন জনগণ, নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রতি হিযবুত তাহ্রীর-এর পক্ষ থেকে উদাত্ত আহ্বান, অনতিবিলম্বে সেই যত্নশীল ও পরাক্রমশালী খিলাফত ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আগ্রগামী হউন।
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস