প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
‘ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ’ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় হাসিনা সরকার এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীজোটের মধ্যে একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে চায় যাতে সে তার উপনিবেশিক প্রকল্প ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি-কে বৈধতা দিতে পারে
অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ‘সমর্থন’ দেয়ার উদ্দেশ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত বুধবার একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। জবরদস্তিমূলক এই নীতির মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারী যেকোন বাংলাদেশী নাগরিককে ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপে সক্ষম হবে। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, জনগণের সমবেত হওয়ার ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার ক্ষুন্ন করতে সহিংস পন্থার ব্যবহার, এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা মিডিয়ার মতামত প্রচারে বাধা প্রদানের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত পদক্ষেপসমূহের মতো কর্মকাণ্ড। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু পরিষ্কারভাবে বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচনকে দুর্বল করার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও ভিসা বিধিনিষেধের আওতাভুক্ত হবে। এই ঘোষণাটি বাংলাদেশের বিরোধী দল ও তথাকথিত সুশীল সমাজের সদস্যদের আনন্দিত করেছে, কারণ তাদের আশা এবার আঙ্কেল স্যাম বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার নির্মম শাসন থেকে উদ্ধার করবে এবং জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। হাসিনা সরকার এ ঘোষণায় বিব্রত, কারণ তাদের বিশ্বাস ক্ষমতায় থাকার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে ইতিমধ্যে তারা অনেক কিছু করেছে। শেষপর্যন্ত মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকারও করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নব্য-উপনিবেশিক প্রকল্প ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’-কে গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য যে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলোও মার্কিন এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছে। তারা জনগণের হাসিনাবিরোধী মনোভাবকে পুঁজি করে দেশবাসীকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের’ দাবীতে ব্যস্ত রেখেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জনগণের ত্রাণকর্তা হিসাবে চিত্রায়িত করেছে কিন্তু এটির উপনিবেশিক এজেন্ডাকে গোপন করেছে। একদিকে, হাসিনা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নির্বাচনের সাথে সহমত নয়, কারণ তাদের আশঙ্কা জনগণকে ভোট দেয়ার সুযোগ দিলে তার সরকারের অবশ্যম্ভাবী পতন হবে। অন্যদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলসমূহের ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবী হতে বের হবার একটি রাস্তা প্রয়োজন, যে কারণে তারা জনসমর্থন পেয়েছিল। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবিষয়ে সচেতন যে, যেহেতু হাসিনা সরকারের পক্ষে জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই, সেহেতু এই সরকার যেসব মার্কিন নীতি গ্রহণ করবে তা জনগণ কর্তৃক স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে। একারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাসিনা সরকার এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করতে জবরদস্তিমূলক ভিসা নীতি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আমেরিকা আওয়ামী লীগ-বিএনপি শাসকগোষ্ঠীকে একত্রিত করে একটি গণতান্ত্রিক সার্কাস প্রদর্শনীর আয়োজন করতে চায়। কারণ শুধুমাত্র ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারই ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি সহ অন্যান্য মার্কিন উপনিবেশিক প্রকল্পগুলোকে বৈধতা দিতে পারে।
হে দেশবাসী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে বাংলাদেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করছে, যেন মনে হয় কাফির-উপনিবেশবাদীদের এই মোড়ল প্রকৃত অর্থেই উম্মাহ্’র অধিকার ও কল্যাণ নিয়ে চিন্তিত! এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই স্বৈরাচারী সরকারকে সমর্থন দেয়ার পর এখন হঠাৎ করে তারা ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে মাথা ঘামানো শুরু করেছে! বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কুমিরের কান্না শুরু করেছে তা না বোঝার মতো বোকা আপনারা নন।
হে দেশবাসী, হাসিনা সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপনাদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ উপলব্ধি করে আমেরিকা এটিকে তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ব্যবহার করতে চায়। গণতন্ত্রের নাটক মঞ্চস্থ করে আমেরিকা আপনাদের পক্ষ থেকে তার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির জন্য বৈধতা লাভের আশা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রকৃত বিপদ হচ্ছে আপনাদের সচেতনতা ও তার অশুভ পরিকল্পনার প্রতি আপনাদের অস্বীকৃতি জ্ঞাপন, এবং তার স্বার্থ হাসিলের পথে যেকোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি। সুতরাং, এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য স্থায়ী করার জন্য প্রয়োজনীয় একটি কল্পকথা ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমান এই বিশ্বব্যবস্থায় তথাকথিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে সক্ষম হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আনুগত্যের বিষয়ে সরকার কিংবা বিরোধী দল কোনটাই ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র, অবাধ নির্বাচন, প্রতিবাদ জানানোর সুযোগ, কিংবা তথাকথিত বাকস্বাধীনতা আমাদের জন্য কোনো বাস্তব পরিবর্তন বয়ে আনবে না; কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা নিশ্চিত করে যে, গণতন্ত্রের মধ্যে থাকা সকল পক্ষ তার বেধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী কাজ করবে। শাসক হিসেবে আমাদের উপর চেপে বসা পশ্চিমা-সমর্থিত এসব হায়েনাদের অস্তিত্ব এবং পশ্চিমা শক্তিসমূহের আধিপত্যের ধারাবাহিকতার একমাত্র কারণ হচ্ছে মহিমান্বিত খিলাফত রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি। কাফির-উপনিবেশবাদীদের এই সন্ত্রাসের অবসান ঘটাতে এবং আমাদের ভূমি থেকে তাদের শক্তিসমূহকে বিতাড়িত করতে আপনাদেরকে অবশ্যই নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে, কারণ এই খিলাফতই মুসলিম ও মানবজাতির প্রকৃত ত্রাণকর্তা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:
* يُرِيْدُوْنَ لِيُطْفِـُٔوْا نُوْرَ اللّٰهِ بِاَفْوَاهِهِمْۗ وَاللّٰهُ مُتِمُّ نُوْرِهٖ وَلَوْ كَرِهَ الْكٰفِرُوْنَ*
“তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহ্’র নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।” [সূরা আস-সফ: ৮]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়