ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বিবৃতিটির মাধ্যমে বিশ্বাসঘাতক শাসকগোষ্ঠীর লজ্জার শেষ আবরণটিও খসে পড়ল এবং দেউলিয়া হওয়া ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যকে উন্মোচিত করলো

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

ভারতকে অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বিবৃতিটির মাধ্যমে বিশ্বাসঘাতক শাসকগোষ্ঠীর লজ্জার শেষ আবরণটিও খসে পড়ল এবং দেউলিয়া হওয়া ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যকে উন্মোচিত করলো

তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ হতে সৃষ্ট অবনতিশীল আর্থ-সামাজিক দুর্দশা ঘিরে যখন গণঅসন্তোষ চরমে, তখন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আবদুল মোমেন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের বিধ্বস্ত সরকারকে উদ্ধারে অত্যন্ত খোলামেলাভাবে শত্রুরাষ্ট্র ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। গত শুক্রবার চট্টগ্রামে একটি হিন্দু ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠানে সে বলেছে, হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে এবং দেশে স্থিতিশীলতা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার কাজে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে যা যা করা দরকার তা করতে সে ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো যখন তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে আসন্ন ক্ষমতার দৌড়ে নিজেদেরকে বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, তখন মোমেন ৫ই সেপ্টেম্বরে হাসিনার দিল্লি সফরের পূর্বে ভারতের সমর্থন লাভের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মোমেনের এই বক্তব্য মুলতঃ বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির দেউলিয়াত্ব ও দাসত্বের প্রতীক। দেশের রাজনৈতিক বিষয়াদিতে ভারতের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার মনোবল এমনকি বিএনপিরও নেই। মোমেনের বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের কাছে ‘ব্যাখ্যা দাবি’ করা ছাড়া বিএনপির আর কিছু বলার নেই, কারণ তারাও কাফির-মুশরিকদের করুণা চায়। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের দলের একজন প্রতিনিধি নয়াদিল্লি সফর করে এবং বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাহায্য করতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছে আবেদন জানায় (“বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপি ভারতের সাহায্য চায়, দ্য হিন্দু, ৮ই জুন, ২০১৮)। এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও রাজনীতিকগণ এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে তারা এখন আর জনগণের ক্ষমতা ও গণতন্ত্রের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে চায় না। প্রকৃতপক্ষে, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি এখন ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে এবং জনগণকে দেয়ার মতো এটির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা এখন যা দেখছি তা কেবল কাফির-সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র মার্কিন-বৃটিশ এবং এমনকি ভারতের মত তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতি দাসত্ব।

হে দেশবাসী, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার ফসল এই ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা দাসত্ব ছাড়া আর কিছুই আশা করতে পারি না। কাফির-উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহ আমাদেরকে নামেমাত্র স্বাধীনতা দিয়ে এ অঞ্চল ছেড়ে চলে গেছে, কিন্তু তাদের দালাল ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় বসিয়ে গেছে, যারা উম্মাহ্ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং কেবল অত্যাচার-নিপীড়নের মাধ্যমে জনগণকে শাসন করে। এই প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কই বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির মূলভিত্তি, যা থেকে আমাদের মুক্তি প্রয়োজন। বিএনপি বা অন্যকোন ধর্মনিরপেক্ষ দল আওয়ামী লীগের শাসনের বিকল্প হতে পারে না, কারণ তারা সবাই এই ঔপনিবেশিক পরম্পরা, অর্থাৎ দাসত্বের রাজনীতি থেকে জন্ম নিয়েছে। সুতরাং, আমরা সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকব যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের শাসন-কর্তৃত্বের দায়িত্ব এই আজ্ঞাবহ, নির্লজ্জ এবং মূর্খ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদদের হাতে থাকবে।

হে দেশবাসী, আপনারা জানেন খিলাফত রাষ্ট্র তার গৌরবময় ইতিহাসে মুহাম্মাদ আল-ফাতেহ্’র মতো রাষ্ট্রনায়ক তৈরি করেছে, শৈশবকাল থেকেই কনস্টান্টিনোপল বিজয় ছিল যার সমস্ত কথার কেন্দ্রবিন্দু, কারণ রাসূলুল্লাহ্ ﷺ কনস্টান্টিনোপল বিজয় সম্পর্কে একটি সুসংবাদ দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুত কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পাশাপাশি খিলাফত তার নেতৃত্বে আলবেনিয়া, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, রোমানিয়া এবং সার্বিয়া জয় করেছিল। খিলাফত রাষ্ট্র মহান আন্দালুসীয় সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা তারিক বিন যিয়াদ-এর মতো সাহসী রাষ্ট্রনায়কের জন্ম দিয়েছে। তিনি তার ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে স্পেনে প্রবেশ করেন এবং রাজা রডারিকের ১০০,০০০ যোদ্ধার শক্তিশালী বাহিনীর সম্মুখীন হন। এরপরেও তিনি বিজয়ের স্বপ্ন দেখেন এবং জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রম করার পর তার সেনাবাহিনীকে তাদের বহনকারী নৌকাগুলোকে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন এবং অবশেষে দেশটি জয় করেন। প্রত্যেক যুগেই খিলাফত এরকম দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্ব তৈরি করেছে, যারা কেবল আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র কাছেই সুরক্ষা চেয়েছেন। তারা রাজনীতিকে একটি মহৎ কর্তব্য হিসেবে, একটি ‘ইবাদাহ্ হিসেবে, মানুষকে সকল প্রকার অজ্ঞতা (জাহিলিয়্যাহ্) থেকে মুক্তি দেয়ার উপায় হিসেবে, এবং পৃথিবীতে আল্লাহ্’র দ্বীনকে প্রচার ও বিজয়ী করার পন্থা হিসেবে বিবেচনা করেছেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন:

 

*هُوَ الَّذِىۡۤ اَرۡسَلَ رَسُوۡلَهٗ بِالۡهُدٰى وَدِيۡنِ الۡحَـقِّ لِيُظۡهِرَهٗ عَلَى الدِّيۡنِ كُلِّهٖ وَلَوۡ كَرِهَ الۡمُشۡرِكُوۡنَ*

তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়েত ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে এই দ্বীন (জীবনব্যবস্থা)) সকল দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করে, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।” [আস-সাফ: ৯]

 

অতএব, আমরা দেশবাসীর প্রতি, বিশেষ করে সকল নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা এই মেরুদণ্ডহীন ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ ও তাদের ঘৃণ্য দাসত্বের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করুন। নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে হিযবুত তাহ্‌রীর-এর সাহসী নেতৃত্বের চারপাশে জমায়েত হোন। এই মুশরিক রাষ্ট্রের অধীনস্থ হওয়ার পরিবর্তে, আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র রাসূলুল্লাহ্ ﷺ- এর সুসংবাদ অনুযায়ী ভারতকে ইসলামী শাসনব্যবস্থার ন্যায়বিচারের অধীনে ফিরিয়ে আনবে। তিনি ﷺ বলেছেন: আমার উম্মাহ্ মধ্যে দুটি দল রয়েছে যাদেরকে আল্লাহ্ আগুন থেকে রক্ষা করবেন: একটি দল যারা ভারত জয় করবে, এবং আরেকটি দল যারা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)-এর সাথে থাকবে [আন-নাসাঈ]।

হিযবুত তাহ্‌রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়