بسم الله الرحمن الرحيم
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বাহাত্তরের সংবিধান ও তার ভিত্তি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বিলুপ্ত করে
ইসলামী সংবিধানের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ
গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর ২০২৪) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনতিবিলম্বে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল এবং জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণার দাবী জানিয়েছে। এই লক্ষ্যে তারা জাতীয় ঐক্য গঠনে নির্দিষ্ট করে গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলসমূহকে আহ্বান জানিয়ে দেশের জনগণের ইসলামী শাসনের দাবী ও আকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাহ্য করেছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে উঠে এসেছিল, বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে ৮২ শতাংশই শারী‘আহ্ আইনের পক্ষে। সমগ্র দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে, দেশের স্বনামধন্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ইসলামী শাসনের দাবী তুলেছে, কলেমার পতাকা হাতে নিয়ে তারা তাদের আবেগের প্রতিফলন ঘটিয়েছে; এমতাবস্থায় ইসলামকে অগ্রাহ্য করে রাজনীতি বন্দোবস্তের চেষ্টা করা আত্মঘাতী পদক্ষেপ। প্রকৃতপক্ষে, মুসলিম ভূখণ্ডে শারী‘আহ্ শাসনের আবির্ভাবকে প্রতিহত করা পশ্চিমাদের “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”-এর নামে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”-এর মূলনীতি। পতিত হাসিনা সরকার পশ্চিমাদের হাতিয়ার হিসেবে “ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” পরিচালনা করতে গিয়ে এদেশের বৃহত্তর জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং ইসলামপ্রিয় জনগণের উপর দমন-নিপীড়ন চালিয়েছিল; আর হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের অভ্যুত্থানের এটাই অন্যতম কারণ। তাই আমাদেরকে বাহাত্তরের সংবিধান এবং এজাতীয় সংবিধানের মূলভিত্তি পশ্চিমাদের স্রষ্টাবিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে বিলুপ্ত করে ইসলামের ভিত্তিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও গণতন্ত্র এদেশের জনগণের ঈমান-আক্বীদা, চিন্তা-চেতনা ও আবেগ-অনুভুতির পরিপন্থী; এবং বৈষম্য, দুর্নীতি ও সকল যুলুমের মূল উৎস।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা বিশ্বমোড়ল আমেরিকার জনগণের আলোড়ন সৃষ্টিকারী স্লোগাণসমূহ ‘we are 99%’ এবং ‘black life matters’ প্রমান করেছে গণতান্ত্রিক-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক এবং ব্যর্থ। আর আরেক উদার গণতান্ত্রিক দেশ ব্রিটেন এমন সামাজিক বিভক্তি ও রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত যে তাদের কোন সরকারই নির্ধারিত মেয়াদ পূরণ করতে পারছে না। তাই আমেরিকা ও ব্রিটেনের আদলে নতুন সংবিধান রচনা করলে কীভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বৈষম্য দূর হবে? এই সংবিধান কীভাবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে? মুসলিমদের মধ্যে যারা ইসলামের মধ্যে সববিষয়ের সমাধান থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমা কাফিরদের দ্বারস্থ হয়, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ ﷻ আমাদেরকে সতর্ক করেন:
﴿أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيدًا﴾
“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা দাবী করে, যা আপনার প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা আপনার পূর্বে নাযিল হয়েছে তারা তাতে ঈমান এনেছে; অথচ তারা আইন–কানুনের জন্য তাগূতের (কুফর ব্যবস্থা-এর) শরণাপন্ন হয়, যদিও সেটাকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়” [সূরা আন–নিসাঃ ৬০]।
জনগণ কেমন বাংলাদেশ চায়? ছাত্র-জনতা যে আকাঙ্খা নিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে, যেই সংবিধান তাদের সেই আশা-আকাঙ্খা পূরণ করবে না, জনগণ সেই সংবিধান মেনে নিবেনা, সে সংবিধানের ভিত্তিতে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে না। সাধারণ জনগণ স্বচ্ছল জীবন, তার ন্যায্য অধিকার, নিরাপত্তা এবং আইন-আদালতে ন্যায়বিচার চায়। তরুণরা কর্মসংস্থান ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ চায়। শ্রমিকরা তার ন্যায্য মজুরি চায়। সচেতন জনগণ বিদেশীদের দালালী ও দুর্নীতিমুক্ত শাসক চায় এবং বিদেশীদের আগ্রাসন ও প্রভাবমুক্ত সার্বভৌম রাষ্ট্র চায়। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে জনগণের এসব দাবীসমূহ প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশে বিগত পাঁচ দশকে বিভিন্ন গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সতেরবার সংবিধান সংস্কার হয়েছে, শাসকগোষ্ঠীর চেহারার পরিবর্তন হয়েছে, কসমেটিক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু জনগণের এসব আকাঙ্ক্ষার কোনটাই পূরণ হয় নাই। ইসলামী সংবিধান ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এবং অধিকারসমূহ শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নিরাপত্তাসহ ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। দেশের তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতকে বেসরকারীকরণ নিষিদ্ধ করেছে এবং এই জ্বালানী খাত হতে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি কোম্পানীসমূহকে উচ্ছেদ করে গণমালিকানাধীন সম্পদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় জনগণের কল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশ দিয়েছে। দেশের উপর মার্কিন–ব্রিটেন–ভারতের মত শত্রুরাষ্ট্রের সাথে সামরিক চুক্তিসহ আমাদের উপর তাদের আধিপত্য বিস্তারকারী সকল চুক্তি হারাম করেছে। প্রতিরক্ষাকেন্দ্রিক ভারীশিল্প স্থাপন করে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছে। তাই একমাত্র ইসলামী সংবিধানই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম। এই বিষয়ে হিযবুত তাহ্রীর কুর‘আন-সুন্নাহ্ এর ভিত্তিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ “খিলাফত রাষ্ট্রের সংবিধান (খসড়া)” জনগণের নিকট উপস্থাপন করেছে। সর্বোপরি, জনগণ ইসলামী সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় ঐক্যবদ্ধ এবং হিযবুত তাহ্রীর এই সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
হে দেশবাসী, বিশেষ করে অভ্যুত্থানকারী ছাত্র–জনতা! সংবিধান সংস্কার কিংবা পুনঃলিখনের নামে কিছু কসমেটিক পরিবর্তন করে পশ্চিমাদের ব্যর্থ ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার অপচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আপনাদেরকে ইসলামী সংবিধান এবং ইসলামী ব্যবস্থার দাবীকে শক্তিশালী করতে হবে। ইসলামী ব্যবস্থা তথা নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-এর সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এবং যাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে তাদেরকে আহ্বান করতে হবে, তারা যেন জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে হিযবুত তাহ্রীর-এর হাতে ক্ষমতা প্রদান করে। ﴿كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ …﴾ “তোমারই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানব জাতির জন্য …” [সূরা আলি-ইমরানঃ ১১০]।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস