বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অবশ্যই জাতিসংঘের তথাকথিত শান্তিরক্ষার নামে উপনিবেশবাদীদের ঘুঁটি হওয়াকে প্রত্যাখ্যান এবং উম্মাহ্’র অভিভাবকত্ব পালনের আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত মহান দায়িত্বকে পুনরুদ্ধার করতে হবে

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অবশ্যই  জাতিসংঘের তথাকথিত শান্তিরক্ষার নামে উপনিবেশবাদীদের ঘুঁটি হওয়াকে প্রত্যাখ্যান এবং  উম্মাহ্’র অভিভাবকত্ব পালনের আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত মহান দায়িত্বকে পুনরুদ্ধার করতে হবে

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, গত ১৩/১২/২০২৫ ইং তারিখে সুদানের আবেয়ি অঞ্চলে অবস্থিত জাতিসংঘের একটি ঘাঁটিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। এই হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত ও আটজন আহত হয়েছেন। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা কেবল শোক প্রকাশের নয়, বরং যে মিশনের জন্য আমাদের বীর সেনাদের প্রাণ বিসর্জন দেয়া হলো, সেই মিশনের গভীর পুনর্মূল্যায়নের দাবী রাখে।

যে সংঘাত মোকাবিলার জন্য তাদেরকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল তা  সাধারণ কোনো স্থানীয় বিরোধ নয়, বরং এটি ‘পশ্চিমা উপনিবেশিক চক্রান্তের’ এক প্রত্যক্ষ ফলাফল, যা মুসলিম বিশ্বকে বিভক্ত ও দুর্বল করতে এবং সেখানে লুটপাট চালানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল । আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আঁকা কৃত্রিম সীমান্তগুলোর মতো সুদানের সীমান্তও লন্ডন ও ব্রাসেলসে বসে আঁকা হয়েছিল, যাতে মুসলিম ভাইদেরকে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিবাদে লিপ্ত করে ফাঁদে ফেলা যায়, এবং সেখানকার জমি ও আবেয়ি অঞ্চলের মাটির নিচে থাকা তেলের মতো সম্পদের দখল নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ চলমান রাখা যায়।

বর্তমান যুগে উপনিবেশিক প্রকল্পটি একটি নতুন নামে চলমান আছে: “ইউ.এন পিসকিপিং” বা জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত শান্তিরক্ষা কার্যক্রম। UNISFA-এর মতো মিশনগুলো মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত নিছক কিছু নিরপেক্ষ প্রয়াস নয়। মূলত, এগুলো হচ্ছে একটি ব্যর্থ ও নিপীড়নমূলক পশ্চিমা বিশ্ব-ব্যবস্থার সশস্ত্র প্রহরী। ন্যায়সঙ্গতভাবে সংঘাতের সমাধান করা এগুলোর উদ্দেশ্য নয়, বরং ‘সংঘাত ব্যবস্থাপনা ও টিকিয়ে রাখাই’ এগুলোর উদ্দেশ্য, যাতে পশ্চিমা শক্তিসমূহ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কৌশলগত ভূমি, সম্পদ ও রাজনীতির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারে। তারা সহিংসতার জন্ম দেয়া সীমান্তগুলোকেই বৈধতা দেয়, এবং দুর্নীতিগ্রস্থ, ধর্মনিরপেক্ষ ও পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট শাসকগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেয় – যারা ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে দেশ শাসন করে। সুদানে আমেরিকার এজেন্ডা সম্পূর্ণ স্পষ্ট। আমেরিকা দক্ষিণ সুদানকে মুসলিম উম্মাহ্’র দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে জন গ্যারাং এবং দশকব্যাপী বিদ্রোহকে ব্যবহার করেছিল। এখন এটি দারফুরকে বলকানাইজ (পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে/রাষ্ট্রে বিভক্ত) করার উদ্দেশ্যে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (Rapid Support Forces)-এর মতো প্রক্সিদের ব্যবহার করছে, যাতে একটি কৌশলগত মুসলিম ভূমিকে দুর্বল ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য রাষ্ট্রে বিভক্ত করা যায়।

আমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতে হবে: কিভাবে বাংলাদেশের মুসলিম সেনাবাহিনী এই নব্য-উপনিবেশবাদী পরিকল্পনার হাতিয়ার হতে পারে? কারণ, মুসলিম সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছে ইসলামের রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য, কাফিরদের স্বার্থ রক্ষায় ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য নয়। এসব মিশনে অংশগ্রহণ আমাদেরকে এমন একটি ব্যবস্থার সহযোগী করে তোলে যা মুসলিমদের সম্পদ লুট করছে এবং উম্মাহ্-কে বিভক্ত রেখেছে। এছাড়াও, আমাদের সরকারের ভণ্ডামি ও প্রতারণা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এটি শত্রুরাষ্ট্র ভারতের আগ্রাসন থেকে আমাদের নিজস্ব সীমান্ত বা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে না, অথচ আমাদের সামরিক বাহিনীর অফিসারদেরকে বিনা দ্বিধায় ভারতে বিজয় কুচকাওয়াজে অংশ নেয়ার জন্য প্রেরণ করে (দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদন, যা ডিসেম্বর ৮, ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে), আর এখন  উপনিবেশবাদীদের স্বার্থে সুদানে আমাদের সৈন্যদের মৃত্যুর মুখে পাঠানো হচ্ছে।

শত্রুর চক্রান্ত থামবে না। মুসলিম উম্মাহ্’র প্রকৃত নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে আমাদেরকে মূল সমস্যা সমাধানের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে- যা হচ্ছে: ওয়েস্টফালিয়ান জাতি-রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙে মুসলিম উম্মাহ্‘কে শারীআহ্’র অধীনে ঐক্যবদ্ধকারী একক ইসলামী নেতৃত্বের অনুপস্থিতি। তাই, আমাদেরকে চূড়ান্ত সমাধানের লক্ষ্যে নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে, কেবলমাত্র তখনই মুসলিম ভূমিগুলোকে রক্ষা, উপনিবেশবাদীদের সৃষ্ট কৃত্রিম সীমান্তগুলোকে বাতিল এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আমাদের ভাইদের রক্ত যেন আমাদেরকে জাগিয়ে তোলে, আমাদেরকে পশ্চিমা ব্যর্থ বিশ্ব-ব্যবস্থার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার অবসান ঘটায়, এবং মুসলিম উম্মাহ্‘কে ঐক্যবদ্ধ রাখার ও রক্ষার মহান দায়িত্বকে আবারও  কাঁধে তুলে নেয়ার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করে।

হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশএর মিডিয়া অফিস