প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের অব্যাহত মর্টার হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের তথাকথিত সংযম নীতির
প্রতিবাদ করুন
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ আজ (২৩/০৯/২০২২) শুক্রবার বাদ জুম্মা ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের অব্যাহত মর্টার হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারের তথাকথিত সংযম নীতির প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তাগণের বক্তব্যের মূল অংশটুকু নিম্নে দেয়া হলো:
হে দেশবাসী! আপনারা জানেন, গত ৯ই সেপ্টেম্বর রাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে ইকবাল (১৭) নামক এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়। এর আগে একই দিন দুপুর বেলায় তামব্রুর সীমান্তবর্তী ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ মাইন বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি তরুণের পা উড়ে যায়। কিন্তু এটা কতইনা পরিতাপের বিষয় যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমারের মাসব্যাপী আগ্রাসন ও গোলাবর্ষণের ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়লেও বিশ্বাসঘাতক হাসিনা সরকার গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত ও ভঙ্গুর রাষ্ট্র মিয়ানমারকে প্রতিহত করাতো দূরের বিষয় তাদের বিরুদ্ধে জোরালো কোন প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেনি। যা দেখে সমগ্র দেশের মানুষ আজ হতবাক ও ক্ষুব্ধ। সরকার এই ঘটনাকে মিয়ানমার সীমান্তে তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। অতীতেও আমরা দেখেছি সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের ত্যাগ করে নরঘাতক মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সমর্থনের মাধ্যমে তার কুৎসিত চেহারা প্রদর্শন করেছিল। রোহিঙ্গা মুসলিমগণ যখন মিয়ানমারের নরক থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, তখন বিশ্বাসঘাতক হাসিনা সরকার তাদেরকে শরণার্থী শিবির নামক ‘খাঁচায়’ বন্দীর মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে ‘নিরাপত্তা’ প্রদান করে, যাতে এই জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের জন্য কোন হুমকির কারণ না হয়! শুধু তাই নয়, এই সরকার মুসলিম গণহত্যাকারী কাফির মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করতে আমাদের মুসলিম সামরিক বাহিনীকে মিয়ানমারে প্রেরণের মাধ্যমে তাদেরকে অসম্মানিত করেছে। ফলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সীমান্তে যতই আগ্রাসন করুক না কেন, শেখ হাসিনা কখনই তাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করবে না, কারণ শেখ হাসিনা এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তা উভয়েই তাদের ঔপনিবেশিক প্রভু ব্রিটেনের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেছে। অতএব, হাসিনা সরকার তার সেই বৃটিশ প্রভুর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত রয়েছে, যারা সর্বদা মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সমর্থন দিয়ে আসছে, যাতে অং সান সুচি’র মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে যে হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছে তা মোকাবেলা করা যায়। গত শনিবার শেখ হাসিনা লন্ডনে লেবার পার্টির প্রধান ‘কের স্টারমার’–এর সামনে সাক্ষ্য দেয়, কিভাবে সে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সুরক্ষিত রেখে তার বৃটিশ প্রভুর আঞ্চলিক স্বার্থ রক্ষা করে আসছে। শেখ হাসিনা তাকে বলেছে, বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে সংঘাতের সম্প্রসারিত প্রভাব সত্ত্বেও ‘সর্বোচ্চ সংযম’ রক্ষা করছে (“প্রধানমন্ত্রী হাসিনা: মিয়ানমার সীমান্ত উত্তেজনায় বাংলাদেশ সংযম বজায় রেখেছে”, ঢাকা ট্রিবিউন, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২২)। হাসিনা সরকারের তথাকথিত সংযমের দৃষ্টান্ত হলো সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোন কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে না তুলে, বরং সীমান্ত নিকটবর্তী এলাকা থেকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
অন্যদিকে, রোহিঙ্গা গণহত্যা ও তাদের প্রত্যাবাসনে উপনিবেশবাদী আমেরিকার মায়াকান্না তার আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ বহির্ভূত কোন বিষয় নয়। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাসমূহ কখনোই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি তাদের সহানুভূতি থেকে আরোপ করা হয়নি, বরং এটি কেবল রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্দশাকে কাজে লাগিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর চাপ সৃষ্টির একটি চক্রান্ত মাত্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে. ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি বলেছে যে, তার সরকার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এটা পরিষ্কার যে, যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছে, যাতে এটিকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের ব্রিটিশ-সমর্থিত সামরিক জান্তার ওপর চাপ বজায় রাখা যায়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমগণ আজ কাফির-উপনিবেশবাদী বৃটেন ও মার্কিনীদের ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের ঘৃণ্য শিকারে পরিণত হয়েছে। এমনকি বি.এন.পি’র মতো দলেরও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা কিংবা বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক সামরিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার সাহস নেই, কারণ শেখ হাসিনার মতো তারাও পরাধীনতা ও দালালির রাজনীতি করে। তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ ও তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে। এ যেন নেকড়েকে ডেকে ভেড়াকে রক্ষা করার আহ্বান জানানোর মতো! এই বিশ্বাসঘাতক ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ও রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করতে পারি, যারা কেবল নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম এবং দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের ঔপনিবেশিক প্রভু মার্কিন-ব্রিটেনের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় সর্বদা নিবেদিত!
হে দেশবাসী! রোহিঙ্গা মুসলিমগণ আমাদের ভাই-বোন, অতএব দালাল ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের অক্ষমতার কারণে আমরা তাদেরকে ত্যাগ করতে পারি না। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন: “এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই, সে তার প্রতি জুলুম করবে না এবং তাকে (শত্রুর কাছে) সমর্পণ করবে না” (বুখারী ও মুসলিম)। ক্রীতদাসতুল্য ধর্মনিরপেক্ষ এই নেতৃত্বকে আমাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং নবুয়্যতের আদলে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ রাষ্ট্র ফিরিয়ে আনার জন্য সচেষ্ট হতে হবে, যা রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বার্থ রক্ষা করবে এবং আরাকানকে পুনরায় খিলাফতের সাথে সংযুক্ত করে তাদের জন্য সুরক্ষিত ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিত করবে।
হে নিষ্ঠাবান সামরিক অফিসারবৃন্দ! আপনারা হলেন মুসলিমদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল। আপনাদের প্রতি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার নির্দেশ হলো: *يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُمْ مِنْ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ* “হে মু’মিনগণ! যেসব কাফির তোমাদের নিকটবর্তী (সীমান্তবর্তী) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যাতে তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়, আর জেনে রেখ যে, আল্লাহ্ মুত্তাকীদের (ন্যায়নিষ্ঠ) সঙ্গে আছেন” [সূরা তওবা: ১২৩]। এবং মুসলিম উম্মাহ্ জানেন মিয়ানমারের কাপুরুষ সেনাবাহিনীকে উপযুক্ত জবাব দিয়ে আল্লাহ্’র এই আদেশ পালনে আপনারাও প্রস্তুত। অথচ এই দালাল শাসকগোষ্ঠী কাফিরগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষায় আপনাদেরকে ব্যারাকে বন্দি রেখে আল্লাহ্ প্রদত্ত এই নির্দেশ পালনে বাধার সৃষ্টি করছে। তাই আপনাদের উচিত বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ দালাল শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ করে এই বাধা অতিক্রম করা। আপনাদের প্রতি হিযবুত তাহ্রীর-এর আহ্বান, খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ প্রদান করুন; খিলাফত রাষ্ট্র আপনাদেরকে মিয়ানমার সীমান্তে সামরিক অভিযানে প্রেরণের মাধ্যমে আল্লাহ্’র এই নির্দেশ পালনের সুযোগ করে দিবে, যার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হবে।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ-এর মিডিয়া কার্যালয়