بسم الله الرحمن الرحيم
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশ যাতে তার সাফল্য ও সমৃদ্ধির জন্য পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর দিকে না তাকিয়ে থাকে এবং ভারত-মার্কিন ভূ-রাজনীতির শিকার না হয়
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতাদানকালে নতুন বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তৃতার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যদি তাদের দেশের জন্য এতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রেরও আরও বেশি কিছু করা উচিত। ইতিপূর্বে, ড. ইউনূস যখন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী ‘আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান’-এর নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মার্কিন প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকে বসেন তখন তিনি এই সহায়তা চেয়েছিলেন। মার্কিন প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এবং দুই দেশ একটি চুক্তিতে উপনীত হয়, যার অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে ২০২ মিলিয়ন ডলার প্রদান করবে।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিম্নলিখিত পরামর্শসমূহ প্রদান করছে:
প্রথমত: কেন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সবসময় পশ্চিমা উপনিবেশবাদী দেশগুলোর কাছ থেকে তথাকথিত সহায়তা চাইতে হবে! এর আগে অত্যাচারী হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এ ধরনের সহায়তা চাইত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মুহুর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেভাবে সহায়তা করছে, ঠিক একইভাবে অত্যাচারী হাসিনাকেও অনুরূপ সহায়তা প্রদান করত (“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লিখিত চিঠিতে বাইডেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন”, ঢাকা ট্রিবিউন, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪)। এই ম্যাকিয়াভেলিয়ান পশ্চিমা শক্তিগুলোই তাদের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে হাসিনাকে এক ভয়ঙ্কর অত্যাচারী শাসকে পরিনত হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। অতএব, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দ্বারা হাসিনার উৎখাত আসলে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থা ও তাদের আধিপত্যের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। জনগণের আত্মত্যাগ এবং তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা এটা ছিল না যে দেশকে ভারতের কবল থেকে মুক্ত করে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। সুতরাং, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পরামর্শ দেই যে, ‘শাসনের কর্তৃত্ব ও বৈধতা সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে আসতে হবে’- এই বিভ্রম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনাদের শাসনের কর্তৃত্ব জনগণের কাছ থেকে এসেছে এবং আপনাদের কার্যক্রমে অবশ্যই তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। সুতরাং, ভারত-মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক খেলার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে আপনাদেরকে উপনিবেশবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সতর্কভাবে এগোতে হবে। আমরা আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই তার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির (IPS) অংশ হিসাবে ভারতের সাথে তার প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের প্রতিবেশী শত্রুর মধ্যে এ ধরনের কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনবে।
দ্বিতীয়ত: এই সংকটময় সময়ে দেশের জন্য বৈদেশিক সহায়তার চেয়েও সবচেয়ে বেশি যা প্রয়োজন তা হল শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য। ভারতীয় ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি হাসিনা সরকারকে কার্যকর রাখতে সাহায্যকারী ব্যক্তিরাও, যাদেরকে গত ১৫ বছর ধরে সমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিকল্পিতভাবে বসানো হয়েছে, পাল্টা আঘাত হানার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে। অতএব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত সকল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, দেশপন্থী এবং ইসলামপন্থী শক্তিসমূহকে একত্রিত করে আমাদের শত্রুদের এবং তাদের স্থানীয় দালালদের মোকাবেলা করার ব্যবস্থা করা। এবং আমরা এই পরামর্শ দিচ্ছি যে, এই একত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত অবিলম্বে সত্যনিষ্ঠ দল হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর থেকে বেআইনি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মাধ্যমে, যে দলটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, দেশপন্থী এবং ইসলামপন্থী শক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম। তাই প্রক্রিয়ার বাইরে হিযবুত তাহ্রীর-কে রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঐক্যের ধারণার বাস্তবায়ন অকল্পনীয়। আর হাসিনার বৈষম্য এবং স্বৈরাচারী পদক্ষেপসমূহ অটুট রেখে জনগণের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমাদের আন্তরিক পরামর্শগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানাই, কারণ আল্লাহ্ আজ্জা ওয়া জ্বাল সাক্ষী যে আমরা আপনাদের এবং আমাদের জনগণের কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই চাই না। সুতরাং, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সতর্কভাবে অগ্রসর হোন। কারণ আপনাদের নেয়া যেকোন দুর্বল পদক্ষেপ আমাদেরকে আমাদের শত্রুদের সাজানো খেলার ছকে ক্ষতিকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন:
﴿وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنْ الْمُنكَرِ﴾
মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। তারা সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজে নিষেধ করে। [আত-তওবা: ৭১]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস