পশ্চিমা দ্বিমুখী নীতি: সিডনি ঘটনার কঠোর নিন্দা আর ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে গণহত্যার বিষয়ে নীরবতা

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

পশ্চিমা দ্বিমুখী নীতি: সিডনি ঘটনার কঠোর নিন্দা আর ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে গণহত্যার বিষয়ে নীরবতা

(অনুবাদকৃত)

এমন কোনো রাষ্ট্রপ্রধান কিংবা পশ্চিমা বা আরব বিশ্বের নেতা বাকি নেই, যিনি সিডনিতে ইহুদিদের হানুক্কাহ উৎসবকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় গুলিবর্ষণে পনেরোজন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানাননি। অথচ, গত দুই বছরে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল কর্তৃক সংঘটিত অপরাধসমূহের নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে আমরা তেমন কোনো জোরালো সংকল্প বা উদ্যোগ দেখতে পাইনি। বরাবরের মতোই জনমতকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে এবং ঘটনার নেপথ্যের উদ্দেশ্যগুলোকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে। সবাই কেবল এই হামলার নিন্দা জানাতেই ব্যস্ত ছিল, কিন্তু যে কারণটি এই দুইজন বন্দুকধারীকে উৎসব পালনকারীদের ওপর গুলি চালাতে প্ররোচিত করেছে সেটির প্রতি কেউ ভ্রুক্ষেপ করেনি। যেহেতু পশ্চিমা বিশ্ব ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের ক্রুসেড জোরদার করছে, সেহেতু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ঘটনাটিকে কাজে লাগিয়ে আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে, এবং গত মঙ্গলবার ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বিশ্বের জাতিসমূহের প্রতি সে তার ভাষায় “উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসবাদের” বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক হানুক্কাহ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প একইভাবে ঘোষণা করে, “উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসবাদের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সকল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এবং আমরা ঠিক সেটিই করছি”। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ উল্লেখ করেছে যে, দুই বন্দুকধারী—এক ব্যক্তি ও তার ছেলে—“ঘৃণার মতাদর্শ” দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় এবং ইহুদি সম্প্রদায়সমূহের সুরক্ষায় তাদের প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে গত মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে বলে: “আমি দাবি করছি যে, ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় এবং বিশ্বব্যাপী ইহুদি সম্প্রদায়সমূহের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে যা যা করা দরকার পশ্চিমা সরকারগুলো তা করার জন্য এগিয়ে আসবে। আমাদের সতর্কবার্তার প্রতি মনোযোগ দেয়াই তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে… আমি অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি”

রাজনীতিবিদদের প্রতারণামূলক ঘোষণার ঊর্ধ্বে উঠে বিষয়গুলো স্পষ্ট করার লক্ষ্যে আমরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করছি:

প্রথমত: ইসলামে সন্ত্রাসবাদ’ বলতে কিছু নেই, যেমনটা পশ্চিমা বিশ্ব এবং ক্রুসেডার জোটের নেতা ট্রাম্প দাবি করে, কারণ ইসলাম হলো একটি ঐশী রিসালাত (বার্তা) এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমত। আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “আমি তো আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না” [সূরা সাবা: ২৮], এবং ‘সন্ত্রাসবাদ’ শব্দমূল (terror) থেকে উদ্ভূত একমাত্র শব্দ (ভীত করা বা আতঙ্কিত করা) যা পবিত্র কুর‘আন-এ এসেছে, তা আল্লাহ্‌ ﷻ-এর  পথে তাঁর শত্রু তথা কাফির ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়েছে, যাতে আল্লাহ্ ﷻ-এর বাণীকে সমুন্নত ও সর্বোচ্চ স্থানে প্রতিষ্ঠা করা যায়, এই আয়াতে আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “আর তাদের সাথে মোকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রস্তুত রাখ শক্তি ও অশ্ব বাহিনী, তা দিয়ে তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে আল্লাহ্’র শক্রকে, তোমাদের শক্রকে এবং তাদের ছাড়াও অন্যদের, যাদেরকে তোমরা জান না, কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে জানেন” [সূরা আল-আনফাল: ৬০]।

তাছাড়া, ইসলামে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করাকে গুরুতর কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম জঘন্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহ্‌ ﷻ বলেন: “এ কারণেই আমি বনী ইসরাঈলের উপর এই বিধান দিলাম যে, নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করল। আর কেউ যদি একজনের প্রাণ রক্ষা করে, তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকেই রক্ষা করল” [সূরা আল-মায়িদাহ্: ৩২]।

সুতরাং, এই অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের ব্যাপারে কী বলা যায়, যেটি ক্রুসেডার জোটের পূর্ণ সমর্থনে দুই বছরেরও কম সময়ে সত্তর হাজারেরও বেশি নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে?!

দ্বিতীয়ত: ট্রাম্প যেটাকে ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদ’ বলে অভিহিত করে, তার সাথে ইসলাম ও মুসলিমদের কোনো সম্পর্ক নেই। ট্রাম্প খুব ভালো করেই জানে, সে যে সন্ত্রাসবাদের কথা বলছে তা তার নিজ দেশ ও এর নিরাপত্তা সংস্থাগুলোরই সৃষ্টি, এবং মুসলিম বিশ্বে তার আজ্ঞাবহ সেইসব দালাল সরকারগুলোর সৃষ্টি, যারা ওই শক্তিসমূহের চাহিদা অনুযায়ী নোংরা কাজগুলো বাস্তবায়ন করে, এবং পরবর্তীতে মিথ্যাভাবে এগুলোর দায়ভার ইসলাম ও মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দেয়। এর উদ্দেশ্য হলো ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা এবং মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা, কারণ তারা এই ভয়ে ভীত যে মানবজাতি হয়তো বস্তুবাদী পশ্চিমা চিন্তাধারা পরিত্যাগ করবে – যা তাদেরকে দুর্দশাগ্রস্ত ও ক্লান্ত করে তুলেছে, এবং এর পরিবর্তে ইসলামের মতো মহান করুণাময় দ্বীনকে গ্রহণ করে নেবে।

তৃতীয়ত: সিডনি ঘটনার জন্য ইসলাম ও মুসলিমদের দায়ী করা এবং বন্দুকধারীদেরকে ইহুদি-বিদ্বেষী হিসেবে অভিযুক্ত করার অর্থ হলো সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া এবং ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণকে উপেক্ষা করা। এর মূল কারণ হচ্ছে পশ্চিমাদের ভণ্ডামি এবং তাদের দ্বিমুখী নীতি। পশ্চিমা বিশ্ব এতে কোনো সমস্যাই দেখে না যে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সত্তর হাজারেরও বেশি নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে, এবং রক্তপাত বন্ধের বাধ্যবাধকতা আরোপকারী বিভিন্ন সনদ ও চুক্তি স্বাক্ষর করার পরেও এই অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এসব চুক্তির গ্যারান্টি খোদ পশ্চিমারাই দিয়েছিল। অতএব, এই ঘটনার জন্য দায়ী স্বয়ং পশ্চিমা বিশ্বই। পশ্চিমা বিশ্বই অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রকে সীমাহীনভাবে সমর্থন দিয়ে চলেছে, গণহত্যা চালানোর জন্য, যা এমনকি সবচেয়ে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ও ধৈর্যশীল ব্যক্তিকেও ক্রোধোন্মত্ত করে তোলে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ হারাতে বাধ্য করে।

২০.১২.২৫

হিযবুত তাহ্‌রীর-এর সেন্ট্রাল মিডিয়া অফিস