প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
ধর্মনিরপেক্ষ–পুঁজিবাদের নোংরা খেলার এক ক্ষুদ্র ঘুঁটি হচ্ছে এই পিকে হালদার; যেখানে কোন কোন ব্যক্তির জন্য কারাবাস হচ্ছে কেবল লুটের টাকা ফেরতের দায়মুক্তি লাভের সুযোগ!
পি. কে. হালদার নামে পরিচিত বাংলাদেশের পলাতক আসামী প্রতারক প্রশান্ত কুমার হালদারকে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট ১৪/০৫/২০২২ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করে। কুখ্যাত পি. কে. হালদার দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার ছিলেন (এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক), যাকে বিভিন্ন নন-ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস্ (NBFIs) থেকে কমপক্ষে ১০,২০০ কোটি টাকা (US$12.36 million) আত্মসাৎ এবং বাংলাদেশে অবৈধ সম্পদ ক্রয় ও অবশিষ্ট অর্থ কানাডা, সিঙ্গাপুর ও ভারতে পাচার করার অপরাধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতারের চেষ্টা করছিল। পি. কে. হালদার শুধু হাসিনা সরকারের মদদপুষ্টই নয়, পাশাপাশি এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার অংশও বটে। হালদার ছিল হাসিনা সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত একজন ব্যক্তি, এবং একারণেই সে ঘুষখোর রাজনীতিবিদদের স্বার্থ পূরণের মাধ্যমে এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। নইলে সে কিভাবে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতে পালাতে সক্ষম হয়! এবং বাংলাদেশে তার প্রত্যার্পণ ও পরবর্তী বিচার কার্যক্রম হবে কেবল লুট করা অর্থ ফেরতের দায় থেকে মুক্তি লাভের সুযোগ হিসেবে, কারণ ইতিমধ্যেই হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ও দুর্নীতি দমন কমিশন স্বীকার করেছে, তাকে গ্রেফতার করলেও জনগণের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই মিডিয়া কর্তৃক চাঞ্চল্যকর খবর পরিবেশন সত্ত্বেও জনগণ সন্তুষ্ট নয়, কারণ তারা জানে ধর্মনিরপেক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পি. কে. হালদার অবশেষে ঠিকই মুক্তি পেয়ে যাবে।
হে দেশবাসী, অনেক পি. কে. হালদার আছে যারা সরকারের হয়ে কাজ করে, এবং গত ১০-১২ বছরের মধ্যেই তারা একের পর এক বিশাল ব্যাংক কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছে। আপনাদেরকে বেসিক ব্যাংকের ৪৫০০ কোটি টাকা লুটপাটের সাক্ষী হতে হয়েছে, যেখানে মূল পরিকল্পনাকারী ছিল ব্যাংকটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু, শেখ হাসিনার সাথে দৃঢ় সম্পর্কের কারণে যাকে আজ পর্যন্ত অস্পৃশ্য রাখা হয়েছে এবং দুদক দ্বারা বিন্দুমাত্রও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয়নি। আপনারা হলমার্ক গ্রুপ কর্তৃক রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৪,৩৫৭ কোটি টাকা লুট, জনতা ব্যাংক থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৩,৪৪৩ কোটি টাকা লুট, এবং চারটি ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ্ গ্রুপের ১,২০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ধারাবাহিক ঘটনাসমূহ জনগণকে এখন আইনী কাঠামোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকা ১০০ বা ২০০ কোটি টাকা কেলেঙ্কারির খবরের প্রতি উদাসীন করে তুলেছে। রক্তচোষা ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী হাসিনা সরকারের কাছেও এখন হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির ঘটনা কোন বড় ব্যাপার নয়। কুখ্যাত হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর হাসিনা সরকারের ‘মেগা ডেভেলপমেন্ট’ পরিকল্পনার স্থপতি দুর্দান্ত(!) সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য ছিল, ৩,০০০ থেকে ৪,০০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি আমাদের অরথনিতির জন্য কিছুই নয়! বাস্তবিকভাবে, এই পদ্ধতিগত ব্যাংক লুটপাটের বিষয়টি তখনই জনগণের নজরে আসে যখন দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ঋণ-খেলাপী সালমান এফ রহমান, যে কিনা ২০০৭-৮ সালে প্রতারণার দায়ে কারাবন্দী ছিল, কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত হয় এবং বর্তমানে ক্যাবিনেট মিনিস্টার পদে বহাল আছে। হাসিনা সরকার দুর্নীতি চালু রাখতে দ্বৈত কৌশল অবলম্বন করছে। তারা বেছে বেছে কেবল ছোট ছোট দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে, কিন্তু বড় বড় দুর্নীতিবাজদের মুক্ত রেখে লুটপাট কার্যক্রম চালিয়ে যায়। এবং, পি. কে. হালদার এবং তার মতো অন্যরা এই খেলায় তাদের মহান আত্মত্যাগের জন্য দুর্নীতির অংশীদার পুঁজিবাদ দ্বারা পুরস্কৃত হয়। তারা জানে, গ্রেফতার কেবল তাদের জন্য একটি দায়মুক্তি মাত্র, যার মাধ্যমে তারা তাদের আত্মসাৎকৃত বিপুল অর্থ বিনা ক্ষতিতে অক্ষত অবস্থায় সাথে নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। কারণ তারা লুট করা টাকা ফেরত দেয়ার কোন দায় ছাড়াই দ্রুত জেল থেকে বেরিয়ে আসবে।
হে দেশবাসী, দুর্নীতির প্রতি তথাকথিত আপোষহীন হাসিনা সরকার ইতিমধ্যেই দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী শাসকগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলও এর ব্যতিক্রম নয়। কারণ, দুর্নীতি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বিশ্বাসের মধ্যেই প্রোথিত। এটি নৈতিকতা বিবর্জিত, এবং এটি কেবল দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাতশ্রেণীর মধ্যেই নয় বরং প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বস্তুগত লোভের জন্ম দেয়। অতএব, শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং সারাবিশ্বের পুঁজিবাদী অভিজাতশ্রেণী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী রাজনীতিবিদদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি আজ লক্ষণীয়।
হে বাংলাদেশের মুসলিমগণ, এই ব্যবস্থাকে আর বরদাস্ত করবেন না, কারণ এটি দুর্নীতিগ্রস্তদেরকে আপনাদের অর্থ ও সম্পদ লুটপাট করার সুযোগ করে দেয়। পি. কে. হালদারের মতো ক্ষুদে ঘুঁটিদের গ্রেফতারের খবরে প্রতারিত হবেন না, কারণ তাদের গ্রেফতার আপনাদের কাছ থেকে লুট করা অর্থ ফেরত পাওয়ার গ্যারান্টি দেয় না। সমস্যা যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাতেই, সেহেতু আপনারা কিভাবে এর মধ্যে সমাধান খুঁজে পাবেন? দুর্নীতির অবসান ঘটাতে হলে আপনাদের অবশ্যই দুর্নীতিগ্রস্ত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটাতে হবে এবং নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত রাশিদাহ্ ফিরিয়ে আনতে হবে। খিলাফত রাষ্ট্রে সমাজের অভিজাত শ্রেণীর জন্য আলাদা কোনো স্থান থাকবে না, কিংবা জালিয়াত ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা উন্নতি লাভের কোন অনুপ্রেরণা খুঁজে পাবে না। ইসলামী শারী‘আহ্ কখনই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অভিজাতদের রেহাই দেয় না, বরং সংকটের সময়ে দরিদ্রদের শাস্তি স্থগিত করে তাদের সান্ত্বনা দেয়। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ চুরির অপরাধে কুরাইশদের একজন অভিজাত মাখজুমি মহিলার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, অথচ তিনি ﷺ দরিদ্র ও অভাবীদের অবকাশ দেয়ার জন্য বলেছিলেন: “বাধ্যকারী দুর্ভিক্ষে কোন হাত কাটা নেই” (আশ-শারখাশি আল-মাবসু‘ত-এ বর্ণনা করেন)। তাই, হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে খিলাফতে রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠার বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামে যোগ দিন, যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায় এবং চুরি বা জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধিতে প্রলুব্ধ হওয়া থেকে জনগণকে রক্ষা করা যায়।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়