প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
ধর্মনিরপেক্ষ–পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থার অধীনে গ্যাসের বিরামহীন মূল্যবৃদ্ধি একটি সাধারণ ঘটনা
আসন্ন খিলাফত ব্যবস্থা তেল ও গ্যাস সম্পদের উপর জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করবে
ডিজেল, কেরোসিন এবং তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দামবৃদ্ধির দুই মাস যেতে না যেতেই অত্যাচারী হাসিনা সরকার এখন গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বৃদ্ধির বন্দোবস্ত করছে, যদিও দেশব্যাপী গ্যাস সরবরাহ সংকট চলমান রয়েছে। গ্যাস বিতরণকারি প্রতিষ্ঠানগুলির প্রস্তাবনা অনুযায়ী সিঙ্গেল বার্নারের দাম প্রতি মাসে ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা এবং ডাবল বার্নারের দাম ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করা হবে। সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধি গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনযাত্রার ব্যয়ের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, ফলে তারা ইতিমধ্যেই গভীর দুর্দশায় দিনাতিপাত করছে। আর এখন সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও করুণ হবে, কারণ তারা ইতিমধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সরকারী সংস্থাগুলোর মতে এই মূল্যবৃদ্ধি অপরিহার্য, কারণ অস্থিতিশীল স্পট-মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এল.এন.জি) কেনার কারণে এর বন্টন ব্যয় ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আমরা জানি ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী সরকারসমূহ সর্বদাই মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে, আর দেশের বর্তমান এই অপরাধী সরকারও এর ব্যতিক্রম নয়। তারা স্পট-মার্কেট থেকে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির অজুহাত দিচ্ছে, অথচ প্রতিদিন ৭৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এল.এন.জি সরবরাহের মধ্যে মাত্র ১৫০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এল.এন.জি স্পট-মার্কেট থেকে আসে! এছাড়াও, গত অর্থবছরে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানী ১১৮১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে (sharebiz.net, ১৯শে জানুয়ারী, ২০২২), তবুও তারা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির জন্য চাপ দিচ্ছে! এই ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী সরকারের কোনো রাষ্ট্রযন্ত্রই জনগণের টাকা লুটপাটের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকতে চায় না!
বাস্তবতা হলো যে, আমাদের যদি দায়িত্বশীল নেতৃত্ব থাকত তবে কখনোই এল.এন.জি আমদানির প্রয়োজন পড়তো না, আর ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী জীবনাদর্শ কখনোই দায়িত্বশীল নেতৃত্ব তৈরি করতে পারে না। বাংলাদেশের বিগত সকল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশকে মৌলিক জ্বালানীর জন্য বিদেশী শক্তির উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে, অথচ দেশের মূল ভূখন্ডে ও সমুদ্র উপকূলে গ্যাসের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে। এসব বিশ্বাসঘাতক সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)-কে কয়েক দশক ধরে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামবিহীন অবস্থায় অকার্যকর করে রেখেছে, যাতে তারা এই অজুহাতে বেসরকারি এবং বহুজাতিক কোম্পানিসমূহের হাতে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রন তুলে দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে বহিঃশক্তির উপর নির্ভরতা এড়াতে গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন, এবং দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য কার্যকর ও আন্তরিক কোনো উদ্যোগ কখনোই গ্রহণ করা হয়নি। ২৫টি অগভীর ও গভীর সমুদ্র-ব্লকের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি ব্লক অনুসন্ধানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবং অনুসন্ধান করে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক যে গ্যাস সম্পদই পাওয়া যাচ্ছে তার মালিকানা আগেই বিদেশী কোম্পানিগুলোকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি, এই বিশ্বাসঘাতক সরকার প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্টস্ (PSCs)-এর অধীনে মুশরিক শত্রুরাষ্ট্র ভারতের মালিকানাধীন ও.এন.জি.সি ভিদেশ লিমিটেড এবং ওয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডকে বঙ্গোপসাগরে একটি নতুন ব্লক ড্রিল করার জন্য আরেকটি কাজ দিয়েছে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, বিশ্বাসঘাতক এই ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের হাতে আমাদের জ্বালানী সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা সবসময়ই ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।
হে দেশবাসী! রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “মুসলিমগণ তিনটি বিষয়ে অংশীদার: পানি, চারণভূমি এবং আগুন (জ্বালানী)” (ইবনে মাজাহ্)। শারী‘য়াহ্ বিধান অনুযায়ী তেল ও গ্যাস হচ্ছে গণ-মালিকানাধীন সম্পদ। খিলাফত রাষ্ট্র জনগণের পক্ষে এই সম্পদসমূহ দেখাশোনা করে এবং এগুলো থেকে প্রাপ্ত সুবিধাদি সকল নাগরিকদের মধ্যে বিতরণ করে। সুতরাং, এই সুবিধাগুলোর উপর কোন প্রকার ট্যাক্স আরোপ বা মুনাফা করা যাবে না, মূল্যবৃদ্ধি করাতো দূরের বিষয়। আসন্ন খিলাফত শারী‘য়াহ্ বিধান অনুযায়ী এধরনের সম্পদের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা নিষিদ্ধ করবে এবং নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করবে। সুতরাং, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত সেই বিধানের দিকে ফিরে আসতে নবুয়্যতের আদলে প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করুন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,
* وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ *
“যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব”(সূরা ত্বা-হা: ১২৪)।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়