প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
তারেক রহমান শো: ভেঙে পড়া ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর রাজনৈতিক কৌশল
বাংলাদেশ যখন নির্বাচন-পূর্ব এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে পদার্পণ করেছে, তখন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দেশজুড়ে ব্যক্তি-কেন্দ্রিক উন্মাদনার জোয়ার সৃষ্টি করেছে, যা আগে থেকেই ধারণা করা যাচ্ছিল। তার দলের পক্ষ থেকে অত্যন্ত জোড়ালোভাবে প্রচারিত বয়ান দ্বারা তাকে দেশের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের অবশ্যই এই বিষয়টির প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে হবে: এটি একটি গভীর রাজনৈতিক বিভ্রম, যা বর্তমান শাসনব্যবস্থা ও ক্ষমতার মৌলিক বাস্তবতাগুলোকে বিপজ্জনকভাবে আড়াল করে রাখে।
“একক ত্রাণকর্তা” মিথের বারংবার ব্যর্থতা: বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশের ইতিহাস বারবার এই ‘মেসিয়ানিক (মাসিহা-সুলভ)’ বা অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন নেতার মিথকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। আরব বসন্তের দিকে তাকালে দেখা যায়: সেসব দেশগুলোতে নেতা বা শাসকদের পতন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পর্দার আড়ালে থাকা পশ্চিমা মদদপুষ্ট শাসনক্ষমতার মূল কাঠামো অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। আমাদের নিজস্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, যা এক সময় ড. ইউনুসের একক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আসা ‘পরিবর্তন’ বলে মনে হয়েছিল, অথচ প্রকৃতপক্ষে তার নেপথ্যে ছিল দেশের সেনাবাহিনী, সুশীল সমাজ, এবং বিদেশী স্বার্থগোষ্ঠীর সমর্থন ও সক্রিয় ভূমিকা। কোনো নেতাই শূন্যতায় বা বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেন না। জনাব রহমানকে একজন ‘ত্রাতা’ হিসেবে তুলে ধরার যে অতি-উচ্ছ্বাস বা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা একটি বিপজ্জনক বিভ্রম। প্রকৃত পরিবর্তন কোনো একক ব্যক্তির হাত ধরে আসবে না, বরং আসবে এমন এক বিস্তৃত আন্দোলনের মাধ্যমে যা বর্তমান শাসনব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা মূল শক্তিকেন্দ্রের (ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিবর্গের) আনুগত্য লাভে সক্ষম হবে।
ব্যক্তি নয়, ব্যবস্থাই শাসন করে: ব্যক্তি জনাব রহমানের ব্যক্তিত্বের উপর এই বিশেষ আলোকপাত মূলত সেই জেঁকে বসা কায়েমী ব্যবস্থাকে আড়াল করার একটি সুচিন্তিত প্রয়াস, যে ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব তিনি নিজেই করেন। ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো বা ফিলিপাইনের মার্কোসের মতো স্বৈরশাসকদের পতন কেবলমাত্র শাসক পরিবর্তনের বীরোচিত সাধারণ ঘটনা ছিল না; বরং সেগুলো ছিল পদ্ধতিগত চাপ, অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা, এবং বিশ্বব্যবস্থা পরিবর্তনের ফলাফল, যা তাদের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। নব্য-উপনিবেশবাদী আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ (বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ) এবং কূটনীতির কর্মপদ্ধতি, অর্থাৎ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এসব কৌশলসমূহ ব্যক্তির তুলনায় অনেক বেশি প্রভাবশালী নিয়ামক। কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচারণা মূলত পশ্চিমা-সমর্থিত বিদ্যমান ব্যর্থ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অপরিবর্তিত রূপকে আড়াল করার একটি কৌশল, যা বিএনপি-সহ যেকোনো বড় দলকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অনুসরণ করতে হয়।
বৈশ্বিক ক্ষমতার সমীকরণ: বাংলাদেশের কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। প্রধান বৈশ্বিক শক্তিগুলোর (মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য) সাথে কোনো প্রকার সমঝোতা বা বোঝাপড়া ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে কোনো বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে না। কারণ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য এবং কৌশলগত প্রভাবের ক্ষেত্রে তাদের কায়েমী স্বার্থ জড়িত রয়েছে। জনাব রহমান কিংবা বিরোধী দলের কোনো নেতা বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সাথে কোন ধরণের সম্পৃক্ততা ছাড়া ক্ষমতায় আরোহন করতে পারবেন— এমন ধারণা পোষণ করা নেহায়েত বোকামি বা অপরিণত চিন্তা। যদি কাউকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করা কিংবা তার গুরুত্ব বাড়িয়ে প্রচার করা হয়, তবে বুঝতে হবে, বিদেশি শক্তিগুলো তার মধ্যে তাদের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো উপযোগিতা খুঁজে পেয়েছে; অতএব এটি তাকে বাংলাদেশের জন্য কোনো স্বাধীন বা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়নকারী শক্তি হিসেবে প্রমাণ করে না।
রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে দৃষ্টি সরানোর সুবিধাজনক কৌশল: তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে যে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, তা মূলত বিএনপির নিজস্ব গভীর রাজনৈতিক ঘাটতিগুলোকে আড়াল করার জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে: দল হিসেবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে আকর্ষণীয় ভিশন (রূপকল্প), কিংবা সুনির্দিষ্ট বিকল্প নীতি প্রস্তাবনাগুলো কোথায়? জনগণ এটিকে কেবল অভিজাত শ্রেণীর পালাবদল ব্যতিরেকে আর কিছুই মনে করে না – যেখানে একই শাসনব্যবস্থার মধ্যে একদল সুবিধাভোগীর পরিবর্তে অন্যদলের আগমন ঘটে, যারা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিলেও, কার্যত একই ধারা বজায় রাখে। “নায়কের প্রত্যাবর্তনের” নাটকটি মূলত একটি জাঁকজমকপূর্ণ প্রতারণা, যা প্রকৃত পরিবর্তনের দাবি থেকে জনগণের শক্তিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার একটি অপচেষ্টা মাত্র।
হে দেশবাসী, বাংলাদেশের জন্য প্রকৃত ও স্থায়ী পরিবর্তন কখনোই লন্ডন থেকে আসা একটি বিমান থেকে অবতরণ করবে না। এবং এটি ব্যক্তি বন্দনার মাধ্যমেও আসবে না, বরং তা আসবে পশ্চিমা সমর্থিত বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার স্তম্ভগুলোকে সাহসের সাথে মোকাবিলা এবং সেগুলোকে সমূলে উৎপাটন করার মাধ্যমে। আর এই মুহূর্তে কোনো ব্যক্তির ওপর অন্ধভাবে মনোনিবেশ করার অর্থ হচ্ছে একটি বিপজ্জনক বিভ্রান্তির ফাঁদে পা দেয়া।
হিযবুত তাহ্রীর-এর নিষ্ঠাবান নেতৃত্ব, বর্তমান পঁচে যাওয়া ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শুধুমাত্র খোলস পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং এই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নবুয়তের আদলে প্রতিশ্রুত খিলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রকৃত সক্ষমতা তৈরির এই কঠিন ও প্রচারবিমুখ কাজই সামনে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র সঠিক পথ। অতএব, আমরা বিশেষ করে নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ এবং আপামর জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা পশ্চিমা রাজনৈতিক সার্কাসের অংশীদার কিংবা নিছক দর্শক হওয়ার পরিবর্তে সামগ্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য হিযবুত তাহ্রীর-এর পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হউন। আল্লাহ্ ﷻ পবিত্র কুর‘আনে বলেন:
﴿…إِنَّ اللَّهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ… ﴾
“…নিশ্চয়ই, আল্লাহ্ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে…” [সূরা আর-রা’দ: ১১]
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস