‘জুলাই জাতীয় সনদ হচ্ছে একটি মহা প্রতারণা’: হিযবুত তাহ্‌রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ এই সনদকে প্রত্যাখ্যান করে, ব্যর্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকল্প রাজনৈতিক ব্যবস্থার আহ্বান জানাচ্ছে

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

بسم الله الرحمن الرحيم

জুলাই জাতীয় সনদ হচ্ছে একটি মহা প্রতারণা’: হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ এই সনদকে প্রত্যাখ্যান করে, ব্যর্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকল্প রাজনৈতিক ব্যবস্থার আহ্বান জানাচ্ছে

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং সনদে সংবিধান বিষয়ক সংস্কার প্রস্তাবনার উপর গণভোট অনুষ্ঠান নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুস যে ভাষণ প্রদান করেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় হিযবুত তাহ্‌রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ-এর সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো ও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া একটি অন্তঃসারশুণ্য ও লোকদেখানো পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই না, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণগুলোই অনুসন্ধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে নতুন বাংলাদেশ তৈরির মিথ্যা আশ্বাসের নামে মুলত: মৃত্যুপথযাত্রী ব্যর্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দেহে অক্সিজেন সরবরাহের চেষ্টা করা হয়েছে। এই সনদে প্রস্তাবিত শাসন-মেয়াদের সীমা, শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের (চেক এন্ড ব্যালেন্স) প্রতিশ্রুতিকে বিগত দশকসমূহের স্বৈরাচারী শাসনের সমাধান হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই কাঠামো কেবল নতুন মোড়কে একই ব্যর্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করার পরিকল্পনা মাত্র। এই কাঠামো- যা পশ্চিমাসমর্থিত অভিজাত শ্রেণীকে কখনো বাকশাল, কখনো সামরিক শাসন কিংবা তথাকথিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ছত্রছায়ায় ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে; অথচ তাদের নিকট এটি মেরামতের বিষয়টি টাইটানিক জাহাজের ডেক চেয়ারগুলো পুনর্বিন্যাসের মতোই একটি বিষয়!

জুলাই সনদ, যাতে চেক এন্ড ব্যালেন্স এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার জটিল পরিকল্পনা বিদ্যমান, তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত ত্রুটিকেই উন্মোচিত করে। উদাহরণস্বরূপ, অনির্বাচিত বিচারকগণ কিভাবে সত্যিকার অর্থে রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারবেন, যেখানে তাদের ক্ষমতা এসব নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের তৈরি করা আইন থেকেই উদ্ভূত হয়? বরং এটি জনগণকে প্রহসনের একটি চক্রে ফেলা। এবং, যদি রাষ্ট্রপতি ও সংসদ উভয়ই নির্বাচিত হয় তবে তাদের অনিবার্য স্বার্থের দ্বন্দ্ব একই অচলাবস্থা ও সরকারি কার্যক্রম বন্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির দিকে ধাবিত করবে, যা আমরা সেই মডেলেই (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) দেখতে পাই যেটিকে অনুকরণ করার জন্য আমাদেরকে বলা হচ্ছে।

তাই, হিযবুত তাহ্‌রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ, দেশের নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছে, যেন তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসে এবং সাহসের সাথে একটি প্রকৃত বিকল্প অন্বেষণ করে। যে ব্যবস্থা আমাদেরকে ক্রমাগতভাবে ব্যর্থ করেছে তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস তাদেরকে অর্জন করতে হবে। এই একই ভাঙা কাঠামোর ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত নতুন সনদ থেকে প্রকৃত পরিবর্তন আসবে না, বরং তা আসবে মৌলিক পরিবর্তন সম্বলিত একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে- যা প্রকৃতপক্ষে জনগণের সেবা করবে এবং জোড়াতালি দেয়া গণতান্ত্রিক আদর্শের প্রতারণার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবে। যালিম হাসিনার পতনের পর জনগণ সত্যিকারের পরিবর্তন চেয়েছিল, অথচ সমাধানের জন্য যা প্রস্তাব করা হচ্ছে তা সেই একই ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকেই প্রত্যাবর্তন, যা বারবার তাদেরকে ব্যর্থ করেছে। রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের নিজেদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে: এত ত্যাগের পরে কেন এমন একটি ব্যবস্থার মধ্যে উত্তর খুঁজব যা আমাদের সাথে ক্রমাগত বিশ্বাসঘাতকতা করেছে? পশ্চিমাদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে এত ভয় কেন, তারাই তো সেই শক্তি যারা হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনকে সমর্থন করেছিল? তারা তখন আমাদেরকে সাহায্য করেনি; তাহলে কেন এখন আপনাদের তাদের নীল-নকশা অনুসরণ করতে হবে? এই ব্যর্থ ও ভাঙা মডেলের মধ্যে আলোচনা-বিতর্ককে সীমাবদ্ধ রাখার মাধ্যমে তারা প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য লড়াই করা মানুষের রক্ত ও ঘামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। এখন সময় এসেছে নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করার। এটি কোনো কল্পনাবিলাসী- আবেগপ্রবণ মতাদর্শ নয়, বরং এটি একটি বাস্তবসম্মত এবং এখনই প্রয়োগযোগ্য সমাধান। হিযবুত তাহ্‌রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশ ঘোষণা করছে যে, এটি শারী‘আহ্ হুকুমের ভিত্তিতে খিলাফত ব্যবস্থার জন্য একটি সম্পূর্ণ ও বিস্তারিত সংবিধান নিয়ে পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। এই ব্যবস্থাটি অর্থনীতি, ন্যায়বিচার, সমাজকল্যাণ, জাতীয় নিরাপত্তা, এবং বৈদেশিক সম্পর্কসহ শাসন-ব্যবস্থার সকল বিষয়াদির জন্য সামগ্রিক নীতিমালা প্রদান করে। আসুন, আমরা নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফতের অধীনে প্রকৃত পরিবর্তন আনয়নের উদ্দেশ্যে একত্রিত হই, যার মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এবং তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে, এবং মুসলিম ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত পশ্চিমা বিশ্ব-ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাই, যা আমাদের জন্য কেবল নিপীড়ন এবং দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে।

 

হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্‌ বাংলাদেশএর মিডিয়া অফিস