প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
জাতীয় বাজেট (২০২৫–২৬): মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠান আইএমএফ–এর প্রত্যশার প্রতিফলন; আর যালিম হাসিনার অনুসৃত পুঁজিবাদী নীতি ও জনগণের দুর্দশার, ধারাবাহিকতা রক্ষার বাজেট
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নীতির প্রতি নতজানু হয়ে এবং মার্কিন নব্য-ঔপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফ-এর শিল্পধ্বংসাত্মক ও শোষণমূলক কর নীতির বাস্তবায়নের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় বাজেট ২০২৫-’২৬ প্রণয়ন করেছে। সিপিডি’র তথ্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের গত ৯ মাসে ২৭ লাখের বেশী মানুষ নতুন দরিদ্র হয়েছে এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এই বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি থাকলেও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের উপর থেকে আমদানী শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহারের উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নাই; তাই এই জাতীয় প্রতিশ্রুতি প্রতারণামূলক এবং জনগণের অব্যাহত দুর্দশার সাথে উপহাস ছাড়া কিছুই নয়। ট্রাম্পের ট্যারিফ (৩৭%) নীতি মোকাবেলার অজুহাতে অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্জেন্ট এলএনজি কোম্পানীর সঙ্গে বড় ধরনের চুক্তি এবং তুলা আমদানী বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে, এবং এলএনজি-তুলা সহ ১১০ মার্কিন পণ্যে শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে মার্কিনীদের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করেছে। সরকারের এই নতজানু নীতির আরেকটি অজুহাত হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানীতে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখা। অথচ, যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পোশাকের উপর শুল্ক আরোপ করলে তার দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ট্রাম্পের প্রতি মার্কিন জনগণের ক্ষোভ তৈরি হবে। কারণ আমদানীকারকগণ এর চেয়ে সস্তা পন্য পৃথিবীর কোথাও থেকে ক্রয় করতে পারবে না। অন্যদিকে, মার্কিন পন্য বিনাশুল্কে (zero-tariff) ক্রয় করাও আমাদের জন্য ব্যয়বহুল, কারণ এই পন্যের উপর অশুল্ক খরচ (non-tariff costs- যেমন, উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয়) অনেক বেশী।
বিশ্বব্যাপী এটি প্রমাণিত সত্য যে, আইএমএফ হচ্ছে মার্কিনীদের নব্য-ঔপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান, যার মুক্তবাজার এবং কর নীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটি দেশের অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ ও জ্বালানী মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তখন অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর উপর ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নাই। এভাবে দেশীয় শিল্পকে গলা টিপে ধরা হয়েছে, আর বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সুবিধাসহ কর সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। সরকারের ব্যবসা প্রতিকূল বাজেটের বিষয়ে ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী আইএমএফ-এর নীতি অনুসরণ করে পশ্চিমাদের আনুগত্য লাভ করে, আর জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। আল্লাহ্ ﷻ এসব নির্বোধ শাসকদের বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক করেন: “আর যে সম্পদকে আল্লাহ্ তোমাদের জীবিকার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের (ক্ষীন বুদ্ধিসম্পন্ন দুর্বল শাসক) হাতে ন্যস্ত করো না” [সূরা আন-নিসাঃ ৫]।
জনগণের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে যালিম হাসিনার পতনের পরেও অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কতিপয় দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের স্বার্থ এবং উপনিবেশবাদীদের স্বার্থ রক্ষা করছে। উদাহরণস্বরূপ, তারা আদানীর সাথে দেশের স্বার্থবিরোধী বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করে নাই এবং কুইক রেন্টাল কোম্পানীসমূহকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া, জাপানের অপরিকল্পিত ও অনুৎপাদনশীল উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ (যেমন, পাতাল রেল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প) অব্যাহত রেখেছে। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ করতে জনগণের উপর করের বোঝা চাপিয়ে হাসিনার অর্থনৈতিক যুলুমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে। সর্বোপরী, কালো টাকা সাদা করার রীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ‘বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন’-এর উপর প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকার, নিজেরাই বৈষম্য তৈরির কলঙ্ক বহন করছে।
হে দেশবাসী, আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “আর যে আমার স্মরণ (পথ–নির্দেশ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ” [ত্ব-হাঃ ১২৪]। একমাত্র ইসলামী বাজেট জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে। প্রথমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত পর্যায়ে মৌলিক চাহিদা ও অধিকার সমূহ পূরণ করা রাষ্ট্রের ফরজ দায়িত্ব। তাই, খিলাফত এমনভাবে বাজেট প্রণয়ন করবে যাতে সকল সক্ষম ব্যক্তির জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং অক্ষম ব্যক্তির ভরণপোষণের ব্যবস্থার জন্য বাজেটে বরাদ্দ থাকে। দ্বিতীয়ত, দেশের ব্যবসায়ীদের উপর আমদানী শুল্ক ও ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করা ইসলামে নিষিদ্ধ; শুধুমাত্র বিদেশী ব্যবসায়ীদের উপর আমদানী শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে; রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “শুল্ক বা কর (মাক্স) গ্রহণকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (আবু দাউদ: ২৯৩৯)। তৃতীয়ত, তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ খাত ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন কিংবা রাষ্ট্রীয় সম্পদ নয়, বরং সর্বসাধারণের সম্পদ (public property)। এই খাতকে বেসরকারীকরণের নামে দেশী-বিদেশী কোম্পানীর হাতে ছেড়ে দেয়া নিষিদ্ধ। এখাত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে এবং এখান থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব জনকল্যাণে ব্যবহার করা হবে। এবং এখাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব দিয়ে এমন অবকাঠামো (যেমন, রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কার্লবার্ট, ইত্যাদি) তৈরি করতে হবে যার মধ্যে সর্বসাধারনের প্রবেশধিকার রয়েছে, যার ফলে জনকল্যানমূখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ধ্বংসাত্মক বিদেশী ঋণের প্রয়োজন হবে না। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “মুসলিমরা তিনটি জিনিসের অংশীদার: পানি, চারণভূমি এবং আগুন” এবং ইবনে আব্বাস (রা.) বরাত দিয়ে আনাস (রা.) বর্ণনাটিতে আরও যোগ করেন, “এগুলোর মূল্য নির্ধারণ নিষিদ্ধ (হারাম)” [আবু দাউদ]। এখানে আগুন বলতে জ্বালানী সম্পদকে নির্দেশ করা হয়েছে। তাই তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতকে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি কোম্পানী থেকে উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত করা এবং জনকল্যাণে ব্যয় করা, শারী‘আহ্ আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। সর্বোপরী, খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে ইসলামী বাজেট প্রণীত হবে মহান সৃষ্টিকর্তার আইন (divine law) অনুযায়ী, যা জনকল্যান নিশ্চিত করবে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্কার প্রতিফলন ঘটাবে।
﴿وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنْ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ﴾
“আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনতো ও আল্লাহ্ভীতি অবলম্বন করতো, তবে আমি তাদের জন্য আসমান ও জমীনের যাবতীয় নিয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম” [সূরা আল-আ‘রাফ: ৯৬]
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস