بسم الله الرحمن الرحيم
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
গাজার নির্যাতিত মুসলিমদের বাস্তুচ্যুত করার মার্কিন নীতিকে প্রতিহত করা মুসলিম উম্মাহ্’র উপর অর্পিত ঈমানী দায়িত্ব
হিযবুত তাহ্রীর, উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ, আজ (০৭/০২/২০২৫) শুক্রবার বাদ জুমু‘আ ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে, যার বিষয়বস্তু ছিল, “গাজার নির্যাতিত মুসলিমদের বাস্তুচ্যুত করার মার্কিন নীতিকে প্রতিহত করা মুসলিম উম্মাহ্’র উপর অর্পিত ঈমানী দায়িত্ব”। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করবে, সেটির মালিক হবে এবং গাজাকে পুনঃনির্মাণ করবে। সে দম্ভসহকারে আরও বলেছে, এই লক্ষ্যে সে জর্ডান ও মিশরকে গাজার মুসলিমদেরকে ভাগ করে নেয়ার প্রস্তাব করেছে এবং তারা তা করতে বাধ্য হবে। সমাবেশে বক্তাগণ তুলে ধরেন, কেন এত নির্যাতনের পরেও পশ্চিমারা গাজার মুসলিমদের তাদের ভূমি হতে বাস্তুচ্যুত করতে ব্যর্থ হচ্ছে, কেন ট্রাম্প এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলার সাহস পাচ্ছে, মুসলিম ভূমিগুলোতে মার্কিন দালালগোষ্ঠীর অপরাধ, ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করার পথ এবং এ লক্ষ্যে সালাউদ্দীন আইয়ূবীর উত্তরসূরী নিষ্ঠাবান সামরিক অফিসারদের দায়িত্ব। যার সারসংক্ষেপ নিম্নে দেয়া হলো:
হে মুসলিমগণ! ট্রাম্পের এই ঘোষণা তখন আসলো যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল যুদ্ধ ও গণহত্যার মাধ্যমে গাজার মুসলিমদের মনোবলকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। টানা ১৫ মাস ধরে দখলদার ইহুদীগোষ্ঠীর নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলায় হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলসহ গাজার ৬০ শতাংশের বেশি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও গাজার মুসলিমরা তাদের বরকতময় ভূমিতে ফেরত আসতে শুরু করেছে। এত ধ্বংসলীলার পরও ট্রাম্প ও তার অনুসারীরা অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করছে, গাজার বাস্তুচ্যুত মুসলিমরা কী অদম্য সংকল্প নিয়ে তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরছে এবং তারা তাদের ভূমিতে পাহাড়ের মতোই দৃঢ়। তাই, গাজা থেকে তাদের উচ্ছেদে ট্রাম্পের পরিকল্পনা পবিত্র ভূমির অধিবাসীদের বিশ্বাসের দৃঢ়তা ও সংকল্পের কাছে মুখ থুবড়ে পড়বে। কারণ মুসলিম উম্মাহ্’র অংশ গাজার এই অধিবাসীরা তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেও পবিত্র ভূমি ও মুসলিমদের প্রথম কেবলা আল-আকসাকে ঘিরে আছে। যার মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “আল–শাম কত বরকতময়! সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন এটা?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি আল্লাহ্’র ফেরেশতাদেরকে আল–শামের উপর তাদের ডানা ছড়িয়ে দিতে দেখছি।’ ইবনে আব্বাস আরও বলেন, ‘আর নবীগণ সেখানে বসবাস করতেন। আল–কুদসে (জেরুজালেম) এমন একটি ইঞ্চিও নেই যেখানে কোন নবী সালাত আদায় করেননি বা কোন ফেরেশতা দাঁড়াননি” [তিরমিযী, আহমদ]।
হে মুসলিমগণ! যেখানে ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি সামরিকভাবে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ দ্বারা পরিবেষ্টিত, আমরা পৃথিবীতে দুইশত কোটি মুসলিম জীবিত আছি, মুসলিমদের সামরিক বাহিনীর কয়েক কোটি সদস্য রয়েছে, সেখানে ট্রাম্প এই দুঃসাহস কীভাবে দেখাচ্ছে? কারণ সে জানে পশ্চিমা দালাল মুসলিম শাসকরা গত ১৫ মাসের ইসরায়েলি গণহত্যা হতে বাঁচাতে গাজার মুসলিমদের পাশে দাঁড়ায়নি, বরং তারা মুসলিমদেরকে জাতীয়তার ভিত্তিতে ভাগ করে রেখেছে এবং মুসলিম সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে আবদ্ধ করে রেখেছে। এসব দালালগোষ্ঠী প্রকাশ্যে নিন্দা জানালেও মার্কিন নীতি বাস্তবায়নে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই” [সূরা হুজুরাতঃ ১০]।
আপনারা প্রত্যক্ষ করেছেন, বাংলাদেশের একশ্রেণীর রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবিরা উপনিবেশবাদী শক্তি ও মুসলিমদের প্রকাশ্য শত্রু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করেছে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কামনা করে, যারা ট্রাম্পের দাওয়াত পেলে গর্ববোধ করে তাদের কাছ থেকে আমরা কি আশা করতে পারি? আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদ ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ্ যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না [সূরা আল-মা’য়িদাঃ ৫১]। তাই ইহুদিদের মদদদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ত্যাগ করা এবং এদেশের মার্কিন দালালগোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করা মুসলিমদের জন্য ঈমানী দায়িত্ব।
হে মুসলিমগণ, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “ইমাম (খলিফা) হচ্ছেন ঢাল স্বরূপ, যার অধীনে তোমরা যুদ্ধ করো এবং নিজেদের রক্ষা করো” [সহীহ্ বুখারী]। মুসলিমদের একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন খলিফা। আজকে এই অভিভাবকের অনুপস্থিতিরে কারণে বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা নির্যাতিত। এই বিষয়টি এখন প্রকাশ্য দিবালোকের মত পরিষ্কার। তাই আপনারা মুসলিম উম্মাহ্’র প্রকৃত অভিভাবক-খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, অন্যথায় বিচার দিবসে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র মুখামুখি দাঁড়াতে হবে। হিযবুত তাহ্রীর-এর নেতৃত্বে নবুয়তের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফত রাষ্ট্র মুসলিম উম্মাহ্ ও উম্মাহ্’র সামরিক বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করবে। ফলে খিলাফতের অধীনে মুসলিম সামরিক বাহিনীর গর্জনই মুসলিম উম্মাহ্’র উপর সকল যুলুম বন্ধ করতে সক্ষম।
হে সালাউদ্দিন আইয়ূবীর উত্তরসূরি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত নিষ্ঠাবান অফিসারগণ! আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, জেরুজালেমকে মুক্ত করতে সালাউদ্দিন আইয়ূবী কীভাবে তার বাধাসমূহ অপসারণ করেছেন। আপনাদের সামনে বাঁধা হচ্ছে, বর্তমান দালাল শাসকগোষ্ঠী এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আর আপনাদের হাতে এখন মহান সুযোগ বিদ্যমান। তাই দালালগোষ্ঠীদেরকে দেয়া আপনাদের পাহারা প্রত্যাহার করুন এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠায় হিযবুত তাহ্রীর-কে নুসরাহ্ (ক্ষমতা) প্রদান করুন। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, যখন মদিনায় সা’দ বিন মোয়াজের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী কাফির নেতা আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই থেকে সমর্থন ও পাহারা প্রত্যাহার করে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে প্রটোকল দিয়েছিলেন, তখন ক্ষমতাহীন আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই টের পেয়ে সাধারণ দর্শকে পরিণত হয়েছিল। এছাড়া দেশের সর্বোস্তরের জনগণ বর্তমান দালালদের সার্কাসে অতিষ্ট। ইসলামের বিজয়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে এবং প্রকৃত তাক্ববীর ধ্বনি উৎযাপন করবে। এই লক্ষ্য অর্জনে আপনারা উপনিবেশবাদী শক্তি কিংবা হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র ভারতকে ভয় করার কোন কারণ নাই। ইতিপূর্বে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণভাবে ভঙ্গুর ও বিশ্বব্যাপী আদর্শিকভাবে দেউলিয়া, আর ভারত তার দালালগোষ্ঠীকে (হাসিনা গং) ছাড়া কতটা অক্ষম! আপনাদেরকে আরও স্মরণ রাখতে হবে, আপনারা যখন অগ্রগামী হবেন আল্লাহ্ ﷻ আপনাদেরকে সাহায্য করবেন।
﴿إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الأَشْهَادُ﴾
“নিশ্চয়ই আমি সাহায্য করবো রাসূলগণকে এবং মু‘মিনগণকে এই দুনিয়ার জীবনে এবং সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে” [সূরা গাফিরঃ ৫১] ।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস