بسم الله الرحمن الرحيم
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন শাসকের চেহারা পরিবর্তন করে কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করে না; একমাত্র ইসলামী ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে
সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে- এই নিয়ে চলমান অবান্তর বিতর্কের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনঃব্যক্ত করেছে (দৈনিক ইত্তেফাক, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫)। আমরাও পুনঃব্যক্ত করতে চাই, বর্তমান পশ্চিমাদের গণতান্ত্রিক-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অধীনে সংবিধান সংস্কার কিংবা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করবে না; এছাড়া শাসকগোষ্ঠীর চেহারা পরিবর্তনের নির্বাচনী সার্কাসে জনগণ ত্যক্তবিরক্ত এবং অতিষ্ঠ, বরং জনগণ বর্তমান যুলুমের ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিবর্তন চাচ্ছে। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠী আইনপ্রণয়ন করার সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জন করে। তাই, দশকের পর দশক ধরে জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে, শাসকগোষ্ঠীর চেহারা পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু শাসকগোষ্ঠী তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন তৈরি করে নিজেদের স্বার্থ, কিছু পুঁজিপতিদের স্বার্থ ও তাদের বিদেশী প্রভুদের স্বার্থ পূরণ করেছে, কিন্তু জনগণের জন্য স্বচ্ছল জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করাতো দূরের কথা মৌলিক অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে নাই। বরং ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের উপর যুলুম-অত্যাচার করেছে, পদ্ধতিগতভাবে জনগণের সম্পদ লুট করেছে এবং জনগণকে গরীব করে রেখেছে। আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “আর আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই যালিম” [সূরা মায়িদাহ্: ৪৫]। ইসলামী ব্যবস্থায় আইনপ্রণয়ন করার ক্ষমতা একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তার; আর আল্লাহ্’র আইন অনুযায়ী শাসন করার জন্য জনগণ যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে। ফলে আইন প্রণয়নকারী ও আইন বাস্তবায়নকারী মধ্যে প্রকৃত ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরাচার হওয়ার সুযোগ থাকে না। আল্লাহ্ ﷻ বলেন, “সুতরাং আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী আপনি শাসন করুন এবং যে সত্য আপনার নিকট এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়াল–খুশীর অনুসরণ করবেন না” [সূরা মায়িদাহ্: ৪৮] ।
হে মুসলিমগণ, ইসলামী ব্যবস্থা তথা নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফতের অধীনেই সুষ্ঠূ ও অর্থবহ নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। এই ব্যবস্থায় কাফির-উপনিবেশবাদীদের পক্ষে তো দূরের বিষয়, এমনকি দেশীয় কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের সুবিধা অনুযায়ী আইন প্রণয়নেরও সুযোগ নেই। খলিফা, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ সবগুলো বিভাগ একই শারী’আহ্ আইনের অধীন থাকবে, যা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক প্রেরিত ও নির্ধারিত। শাসকের হাতে আইন পাল্টানোর কোন ক্ষমতা নাই, তাই বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ কোন হস্তক্ষেপ ছাড়া তার দায়িত্ব পালন করতে পারবে। অন্যদিকে, শাসন কর্তৃত্ব থাকবে জনগণের হাতে ন্যস্ত। জনগণ নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা ও প্রতিনিধিত্বকে সত্যিকার অর্থে প্রতিফলিত করতে সক্ষম হবে।
খিলাফতের অধীনে থাকা নাগরিকগণ প্রতিটি প্রদেশে (উলাই‘য়াহ্) সরাসরি নির্বাচিত আঞ্চলিক পরিষদের (মাজলিস আল-উলাইয়াহ্) মাধ্যমে প্রকৃত জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার উপভোগ করবে। এই পরিষদ নিজেদের মধ্য থেকে একটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচিত করবে, যা উম্মাহ্ কাউন্সিল (মাজলিস আল-উম্মাহ্ বা শুরা কাউন্সিল) নামে পরিচিত। তারা জাতীয় পর্যায়ে শাসককে জবাবদিহি করবে ও পরামর্শ প্রদান করবে। অমুসলিমগণ (আহলুল দিম্মা) উলাই’য়াহ্ কাউন্সিলে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নির্বাচন করবে এবং তারাই আবার উম্মাহ্’র কাউন্সিলে তাদের নিজস্ব সদস্য নির্বাচন করবেন।
খলিফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে: মাহকামাতুল মাযালিম আদালত খলীফা পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারীদের যোগ্যতা যাচাইয়ের পর যোগ্য প্রার্থীদের ছাড়পত্র দিবেন। তারপর উম্মাহ্ কাউন্সিল তাদের মধ্য হতে প্রার্থীদের তালিকা ছয়জন এবং পরবর্তীতে দুইজনে নামিয়ে আনবেন, যা ইজমায়ে সাহাবা দ্বারা প্রমাণিত। এই প্রক্রিয়ায় অধিকাংশ মুসলিম ভোটারের বাই’আতের মাধ্যমে খলিফা নির্বাচিত হওয়ার যথার্থতা লাভ করবে। কারণ, যদি প্রার্থী দু’য়ের অধিক হত তাহলে হয়ত বিজয়ী প্রার্থী শতকরা ৩০ ভাগ ভোট পেত; যা কিনা অধিকাংশের চাইতে কম। আর যদি প্রার্থী দুইয়ের বেশী না হয় সেক্ষেত্রে বিজয়ী প্রার্থী সবসময়ই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটেই নির্বাচিত হবে।
এভাবেই খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সমাজে সুবিচার, স্থিতিশীলতা ও সমন্বয় আনয়ন করবে। অতএব, খিলাফত ব্যবস্থায় সত্যিকারের জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার বিদ্যমান। সুতরাং, গণতন্ত্রের অধীনে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ নামক মায়াজালের ফাঁদ থেকে জেগে উঠুন এবং খিলাফত রাশিদাহ্’র অধীনে নির্বাচনের আহ্বান জানান।
﴿إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلَّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُوا إِلاَّ إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ﴾
“শাসনের যাবতীয় কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহ্’র। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করবে না; এটাই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না” [সূরা ইউসুফ: ৪০]
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই‘য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া অফিস