প্রেস বিজ্ঞপ্তি
بسم الله الرحمن الرحيم
ক্ষমতা থেকে অচিরেই উৎখাত হওয়ার ভয়ে হাসিনা সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে তুষ্ট করার বিপজ্জনক নীতি গ্রহণ করেছে
অবশেষে বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি খসড়া প্রতিরক্ষা চুক্তি পাস করলো, যার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুবছর ধরে বাংলাদেশের পিছু লেগেছিল; গত রবিবার (২০শে মার্চ) ঢাকায় দু’পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টম অংশীদারিত্ব সংলাপ চলাকালে তা পাশ হয়। ACSA (অ্যাকুইজিশন এন্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্ট) এবং GSOMIA (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট)-এর উপর দুটি চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছে, যা খুব শীঘ্রই চুক্তিতে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেছে, সংলাপে অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা, এবং প্রযুক্তি বিষয়ক আলোচনা হয়েছে, এবং “আমরা এর (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি) মধ্যে বাংলাদেশের আরও বেশী সম্পৃক্ততা দেখতে আগ্রহী, কারণ আপনারা (ঢাকা) আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এতে জড়িত হওয়ার” (টাইমস অব ইন্ডিয়া, ২০শে মার্চ, ২০২২)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দরকষাকষিতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এই প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সুবিধা বিদ্যমান, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এগুলো উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী ও ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত।
হে দেশবাসী, আপনাদের জানা উচিত যে, তথাকথিত এসব সহযোগীতা সংলাপসমূহ হচ্ছে কাফির ঔপনিবেশিকদের হাতিয়ার, যেগুলোকে তারা আমাদের সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে, আমাদের সামরিক বাহিনীকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতে, এবং আমাদের জনগণ ও রাষ্ট্রের উপর তাদের আধিপত্য বজায় রাখতে ব্যবহার করে থাকে। ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড-এর বক্তব্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আমাদের সামরিক বাহিনীকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করবে। পূর্বে তারা কোন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সরাসরি আক্রমণ করত। এবং, আজও তারা একই আধিপত্য বজায় রেখেছে, তবে এই নব্য-ঔপনিবেশিক যুগে তারা বিভিন্ন ধরণের সহায়তা, সামরিক চুক্তি এবং দালাল ধর্মনিরপেক্ষ শাসকদের মাধ্যমে জোট গঠনের নামে এই কর্তৃত্ব বহাল রেখেছে। বাস্তবতা হলো, দুর্নীতিগ্রস্থ হাসিনা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার শঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। সুতরাং, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তুষ্ট করার বিপজ্জনক রাষ্ট্রবিরোধী নীতি আঁকড়ে ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে এধরনের ধারাবাহিক সংলাপে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু হাসিনা সরকারের মনে রাখা উচিত, মার্কিনীদের স্বার্থ একবার হাসিল হয়ে গেলে কোনও পুতুল শাসকের প্রতি তারা কখনও দয়া প্রদর্শন করে না।
হে দেশবাসী, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এমন কোনও সংলাপ এবং চুক্তি নিষিদ্ধ করেছেন যা নিশ্চিতভাবে আমাদের উপর কাফিরদের আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেন:
* إِن يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا۟ لَكُمْ أَعْدَآءًۭ وَيَبْسُطُوٓا۟ إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُم بِٱلسُّوٓءِ وَوَدُّوا۟ لَوْ تَكْفُرُونَ*
“যদি তারা তোমাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারে তবে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে, এবং অনিষ্ট সাধনের উদ্দেশ্যে তাদের হস্ত ও রসনাসমূহ তোমাদের উপর প্রসারিত করবে, এবং চাইবে যে তোমরাও কোনরূপে কাফির হয়ে যা” [আল-মুমতাহিনা: ২]
হে দেশবাসী, আমাদের আহ্বানের প্রতি মনোযোগ দিন! এই ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে থাকবেন না যে, অন্যকোন রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিত্ব এই ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে আপনাদেরকে কাফির-উপনিবেশবাদীদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবে। তারা সকলেই পশ্চিমাদের দালাল, এবং আপনারা যদি পশ্চিমা-সমর্থিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তনের জন্য কাজ না করেন তবে সেটা হবে শুধুমাত্র এক দালালকে পরিবর্তন করে আরেক দালালকে ক্ষমতায় বসানোর কাজ। আপনাদের শুধু একটাই দাবী হওয়া উচিত, আর তা হলো নবুয়্যতের আদলে খিলাফত রাশিদাহ্ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। অন্যথায়, এই মহান দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য আপনাদেরকে এই দুনিয়ার পাশাপাশি আখিরাতেও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আপনাদেরকে অবশ্যই সত্যবাদী দল হিযবুত তাহ্রীর-এর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিলিয়ে কাজ করতে হবে, যাতে বাংলাদেশ উম্মাহ্’র অভিভাবক হিসেবে খিলাফত প্রত্যাবর্তনের সূচনাস্থল হয়ে উঠতে পারে।
হে সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠাবান অফিসারগণ! আপনারা এই উম্মাহ্’র সবচেয়ে যোগ্য সন্তান, আপনারাই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী এবং নতুন যুগ নিয়ে আসতে সক্ষম, যা উম্মাহ্’র অপমান, পরাধীনতা এবং নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটাবে। আপনাদের শিরায় যে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে তা জেনারেল সাদ বিন মু’আয (রা.)-এর রক্ত, যিনি মদিনায় প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এবং তাঁর রাসূলকে (সাঃ) সাহায্য করেছিলেন। আপনারা মহান যোদ্ধা সালাহ্উদ্দিন আল-আইয়্যুবী (রহ.)-এর উত্তরসূরী, যিনি আল্লাহ্’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জিহাদের মাধ্যমে আল-আকসাকে মুক্ত করে এই মহান উম্মাহ্’র মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন। আপনাদের পূর্বসুরিগণ কখনোই ব্যর্থ হননি ইসলাম ও মুসলিমদের উপর অত্যাচার ও অপমানকে ‘ইজ্জাহ্ দিয়ে প্রতিস্থাপনের সুযোগকে কাজে লাগাতে। যেহেতু আপনারা উম্মাহ্’র সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন, সেহেতু আমরা আজ আপনাদেরকে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। কেবল পার্থিব জীবনে উন্নতি লাভে আগ্রহী ব্যক্তিদের মতো জাগতিক বিষয়াদি অন্বেষণ করা আপনাদের জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না, কারণ আল্লাহ্ আজ্জা ওয়া জ্বাল ইসলাম ও মুসলিমদের কর্তৃত্ব নিশ্চিতের জন্য আপনাদের রক্ত এবং ত্যাগ দাবী করেন। আমরা আপনাদেরকে সতর্ক করছি, মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত শত্রুদের সাথে যেকোন ধরনের চুক্তি বা মিত্রতা করা সুস্পষ্ট হারাম, যারা কখনও মহান উম্মাহ্’র ক্ষতি করতে পিছপা হয় না। সুতরাং, আপনারা আপনাদের কাঁধ হতে উপনিবেশবাদীগোষ্ঠী ও তাদের পুতুল শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্যের শৃঙ্খল অপসারণ করুন এবং প্রতিশ্রুত খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য হিযবুত তাহ্রীর -কে নুসরাহ (সামরিক সহায়তা) প্রদান করুন। আমরা আপনাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মহান সাহাবী আবদুল্লাহ্ বিন রাওয়াহা’র (রা.) মহান বাণী স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যা তিনি ইয়াসরিবে প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে আকাবায় ঐতিহাসিক বৈঠকে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রতি নুসরাহ্’র বাই’আত প্রদানের সময় উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে ইসলামী রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য এবং এটির প্রতি যেকোন হুমকি প্রতিহত করতে তাদেরকে কি পুরষ্কার দেয়া হবে, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাদেরকে সেই মহান পুরস্কার সম্পর্কে অবহিত করেন যা আখিরাতে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এটা শুনে আব্দুল্লাহ্ বিন রাওয়াহা (রা.) বলেছিলেন: “এটা একটি লাভজনক ব্যবসা (রি’ব আল-বাই’)! আমরা এটা বাতিল করব না বা বাতিল করতে বলব না”।
হিযবুত তাহ্রীর / উলাই’য়াহ্ বাংলাদেশ–এর মিডিয়া কার্যালয়